#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_২_৩
সূর্যের এক চিলতে কিরণ এসে মুনের মুখে পরতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় মুনের। মুন আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসে। হামি দিতে দিতে চোখ কচলে তাকায়। প্রথমে রুমটা দেখে অচেনা অচেনা লাগে। মুনের মাথা থেকে একদম বেরিয়েই গেছে যে কাল তার বিয়ে হয়েছে আর সে এখন শশুরবাড়িতে আছে। মুন চোখ ঘুরিয়ে রুমটা দেখতে লাগলো। হঠাৎ ওর চোখে পরলো দেয়ালে টাঙ্গানো আঁধারের বিশাল এক ফোটো ফ্রেম। ফোটো ফ্রেমটায় মুনের চোখ দুটো আঁটকে গেল। এখন পর্যন্ত মুন আঁধারকে হাসতে দেখেনি। আঁধারের এতো সুন্দর হাসি দেখে মুনের কয়েকটা হার্ট বিট মিস হয়ে গেল। ফোটোতে আঁধার হাস্যউজ্জ্বল মুখে অ্যাটিটিউড নিয়ে পকেটে দুই হাত দিয়ে বিএমডাব্লিউ কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পরনের প্যান্ট,টিশার্ট,জ্যাকেট, ওয়াচ,সানগ্লাস,কেডস্ সব কিছুই কালো রঙের। মনে হচ্ছে লোকটার কালো রং টা একটু বেশিই পছন্দের। আঁধারের এমন কিলার লুক দেখে যে কোনো মেয়েই ফিদা হয়ে যাবে। কিন্তু মুন ওতটা পাত্তা দিল না। কালকে তার সাথে করা খারাপ ব্যবহার আর তার বাবাকে বলা বাজে কথা গুলো মনে পরতেই মুন রাগে চোখ মুখ শক্ত করে নেয়। মুনের সাথে কেউ অন্যায় করলে মুন তাকে কখনো ছেড়ে দেয় না। আর আঁধার তো তার বাবাকে ও অপমান করেছে তাই আঁধারকে ছেড়ে দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। এর বদলা তো মুন নিবেই। আঁধারকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায় মুন সেটা ভাবছে। মুন খেয়াল করে ট্রাউজার আর পোলো টিশার্ট পরে আঁধার ওয়াশরুমে থেকে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছে। হালকা বাদামী রেশমী চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পরছে। মুন কয়েক সেকেন্ড হা করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু দ্রুত’ই ইবার নিজেকে সংযত করে নেয়। আঁধার খেয়াল করার আগেই মুন আবার আগের মতো করে শুয়ে পরে। আঁধার তাকিয়ে দেখে মুন এখনো ঘুমাচ্ছে। আঁধার ড্রেসিং টেবিলের কাছে যেতে নেয় এমন সময় আঁধারের ফোন বেজে ওঠে। আঁধার ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। এদিকে মুন ভাবে আঁধারের চুল থেকে পানি পরছে তার মানে সে গোসল করেছে। এখন সে নিশ্চয়ই হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকাবে। হঠাৎ মুনের মাথায় একটা আইডিয়া আসে। মুন সাবধানে বেড থেকে নেমে দৌড়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে যায়। মুন হেয়ার ড্রায়ার টা হাতে নিয়ে তার ভেতরে পাউডার ভরে দেয়। মুন মনে মনে বলে,
—“আমাকে বেড থেকে ফেলে দেওয়া? আমার আব্বুকে অপমান করা? এবার মজা বুঝবেন মি. আঁধার রেজওয়ান।”
তারপর সেটা তার জায়গায় মতো রেখে আঁধার আসার আগেই বেডে গিয়ে এক’ই ভঙ্গিতে শুয়ে পরে মুন। ফোনে কথা শেষ করে কিছুক্ষণ পর আঁধার রুমে আসে। আজ তাকে খুব জরুরি একটা কাজে যেতে হবে। মুনের দিকে একবার তাকিয়ে আঁধার সোজা ড্রেসিং টেবিলের কাছে চলে যায়। তারপর মুনের পরিকল্পনা মোতাবেক আঁধার হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকাতে হেয়ার ড্রায়ার অন করতেই ভেতরের সব পাউডার গুলো ছিটকে পরে আঁধারের চোখ,মুখে, চুল সব সাদা বানিয়ে দেয়। আঁধার কে এখন একদম ভুত ভুত লাগছে। আঁধার কিছু বুঝে উঠতে পারেছে না। মুন অনেক চেষ্টা করেও আর নিজের হাসি চাপিয়ে রাখতে পারলো না। শব্দ করে হেসে দিলো। মুন হাসতে হাসতে বেডের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। আঁধারের আর বুঝতে বাকি রইলো না এসব কে করেছে। নিজেকে আয়নায় দেখে আঁধারের সচ্ছ নীল চোখ মূহুর্তে’ই লাল বর্ন ধারন করে। রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছে। আঁধার নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রনে আনতে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জোড়ে জোড়ে কয়েক টা শ্বাস নেয়। তারপর শান্ত কন্ঠে বলল,
—“কেন করেছ এসব?”
মুন অ্যাটিটিউড নিয়ে জবাব দেয়,
—“কারণ মুন কারো ঋণ রাখে না। তাই আপনার পাওনা সুদে আসলে আপনাকে ফেরত দিয়ে দিলাম। লেনদেন ক্লিয়ার। বাই দা ওয়ে আপনাকে না সেই লাগছে।”
বলেই মুন মিষ্টি একটা হাসি দেয়। যা দেখে আঁধার আরো জ্বলে ওঠে। আঁধার কিছু না বলে রেগে হনহনিয়ে আবার ওয়াশরুমে চলে গেল। মুন হাসতে হাসতে শেষ। আঁধারের এই অবস্থা দেখে তার খুব মজা লাগছে। হঠাৎ মুনের ফোন বেজে ওঠে। ওর বেস্টফ্রেন্ড ঊর্মি’র ফোন। মুন রিসিভ করে কানে ধরে বলল,
—“হ্যা বল।”
—“মুন তোর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে? কিভাবে হলো? জিজু কি করে? নাম কি? কেমন দেখতে? তুই আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজনও মনে করলি না? তুই খুব খারাপ মুন। খুব খুব খারাপ।”
শেষের কথা গুলো ঊর্মি অভিমানের সুরে বলল। মুন ঊর্মি’র কথা শুনে হতেই মুন বলল,
—“তোর বলা শেষ? আমি কি এবার কিছু বলতে পারি?”
—“বল।”
মুন ঊর্মি কে বিয়ে হওয়া থেকে শুরু করে বাসর রাতের সব কথা খুলে বলল। সব শুনে ঊর্মি’র মুখ হা হয়ে গেছে। ঊর্মি বিষ্ময়ের গলায় বলল,
—“মুন আমার মনে হচ্ছে তুই আমাকে কোনো বাংলা ফিল্মের স্টোরি শুনাচ্ছিস। আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না। আচ্ছা তুই এখন কি করবি? উনি যদি তোকে মেনে না নেয়? তোকে যদি ডিভোর্স দিয়ে দেয়?”
–“এহ এতো সহজ নাকি? তাহলে ওর পুরো চৌদ্দ গুষ্টিকে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো। আমাকে তো চিনে না আমি কি চিজ। নিজের অধিকার কিভাবে আদায় করতে হয় তা আমার ভালো করেই জানা আছে।”
ঊর্মি উৎসাহিত কন্ঠে বলল,
—“এই না হলো আমাদের সেরনী!”
______________________
মুনকে সাজানো হচ্ছে। কারণ আজ ওর রিসেপশন। রিসেপশনে মুনের পুরো ফ্যামেলি আসবে শুনেও মুনের তেমন কোনো হেলদোল নেই। কারণ টা হলো অভিমান। এক আকাশ অভিমান জমেছে যে মুনের মনে তার পরিবারের প্রতি। মুন মনে মনে সপথ করেছে ও আজ কারো সাথে কথা বলবে না। সবাই স্বার্থপর কেউ ওকে ভালোবাসে না। মুনের কাজল কালো হরিনী চোখে জল টলমল করছে। মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষণ পর বাঁধ ভেঙে ঝর্না ধারা বইতে শুরু করবে। যে জলে ভেসে যাবে পুরো পৃথিবী। হঠাৎ কারো মমতাময়ী কন্ঠ স্বর শুনে ধ্যান ভাঙ্গে মুনে,
—“মুন মামনী তুমি কাঁদছ?”
মুন মহিলাটির দিকে অবুঝ দৃষ্টিতে তাকায়। কিন্তু চিনতে ব্যার্থ হয়। মহিলাটি মুনের চোখের ভাষা বুঝে ফেলে আর হেসে বলল,
—“তুমি চিনতে পারছ না আমাকে? আমি আরিফা রেজওয়ান। তোমার আরেক মা।”
মুন বুঝতে পারে মহিলাটি আঁধারের মা। আরিফা রেজওয়ান মুনের চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলে,
—-“মা-বাবার কথা মনে পরছে?”
মুন নিশ্চুপ। মুন কে কিছু না বলতে দেখে আরিফা রেজওয়ান নিজেই বললেন,
—“পাগলী মেয়ে এর জন্য কাঁদতে হয়? ওনারা তো আর কিছুক্ষণ পর’ই চলে আসবে।”
মুনের কি হলো মুন নিজেও জানেনা ও হঠাৎ করেই আরিফা রেজওয়ান কে জরিয়ে ধরলো। আরিফা রেজওয়ান প্রথমে অবাক হলেও পরে হেসে মুনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তারপর মুন কে নিজের আনা অর্নামেন্টস গুলো পরিয়ে দিতে লাগলো।
.
আঁধার তার বন্ধু অয়ন আহমেদ আর আসিক হোসাইনের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। মুখে সিরিয়াস ভাব। হয়তো কাজের কথা বলছে। আঁধারের পরনে কালো রঙ্গের উপর সাদা পাথরের কাজ করা ডিজাইনার শেরোয়ানি। হালকা সোনালী রেশমী চুলগুলো বারবার নীল চোখের উপর এসে পরছে আর আঁধার বিরক্তি হয়ে সেগুলো হাত দিয়ে পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আঁধার খেয়াল করে হঠাৎ করে সবাই হা করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আঁধার তাদের অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই থমকে গেল। মুন আলিয়ার সাথে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। তার পরনে শুভ্র রঙ্গের ডিজাইনার লেহেঙ্গা আর ওর্নামেন্টস। লম্বা কালো চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। মুখে হালকা মেকআপ। হরিনী চোখে গাঢ় কাজল।
এটুকুতেই মুনকে অসাধারণ লাগছে মুনকে। একদম মনমুগ্ধকর। আঁধার এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। তার দুনিয়ার কোনো খেয়াল নেই। মুন অনেক আগেই সিঁড়ি থেকে নেমে গেছে। আর আঁধারের ফ্রেন্ড অয়ন কখন থেকে আঁধার কে ডেকেই যাচ্ছে কিন্তু আঁধারের সে দিকে কোনো হুশ নেই। সে সিঁড়ি দিকেই তাকিয়ে আছে। যখন অয়ন আঁধার কে ধাক্কা দেয় তখন আঁধারের হুঁশ ফিরে। আঁধার নিজের কাজে নিজেই হতভম্ব। সে এতক্ষন কি করছিল? মাথা কি তার খারাপ হয়ে গেছে? আসিক আঁধার কে পিঞ্চ মেরে বলে,
—“ভাই মুখটা বন্ধ কর নাহলে মাছি ঢুকে যাবে তো মুখে।”
বলেই শব্দ করে হাসতে লাগলো। আঁধার নিজের মুখ বন্ধ করে নিল। আসিকের কথার রেশ টেনে অয়ন ও বলল,
—“এভাবে দেখছিস না নজর লেগে যাবে তো ভাবির। আর দেখার জন্য তো সারা জীবন পরে আছে। আচ্ছা রাতে ভালো করে দেখে নিস।”
আসিক অয়ন দু’জনেই এক সাথে হেসে উঠলো। আঁধার চোখ রাঙিয়ে তাকালো ওদের দ
িকে। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। ওরা নিজেদের মতো হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। আঁধার টপিক চেন্জ করতে মুখে গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে বলল,
—“আপন আর ইসি কোথায়?”
আসিক বলল,
—“আমাদের নেক্সট টার্গেটের পেছনে গেছে।”
—“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের ওদের সম্পর্কে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করতে হবে। কিন্তু তা খুব সাবধানে।”
অয়ন ভীত কন্ঠে বলল,
—“আঁধার এতোটা রিক্স নেওয়া কি ঠিক হবে? ওরা খুব ডেন্জারেস।”
আঁধার বাঁকা হেসে বলল,
—“আমার থেকেও বেশী ডেন্জারেস?””
.
মুন আঁধারের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মুন আঁধার কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। ওর কথা বলার স্টাইল, ভ্রু কুঁচকানো, দাঁড়ানোর ভঙ্গি, মুখের এক একটা রিয়েকশন সব মুন ভালো করে দেখছে। আঁধারের সব কিছুতেই মুন একটা আলাদা অ্যাটিটিউড খুঁজে পাচ্ছে। মুনের মনে হচ্ছে আজ পর্যন্ত তার দেখা সব থেকে সুদর্শন পুরুষ হলো আঁধার। আঁধারের ফর্সা শরীরে কালো শেরোয়ানি টা খুব বেশি মানিয়েছে। মনে হচ্ছে এই কালো রং টা শুধুমাত্র আঁধারের জন্য’ই তৈরি। মুন যখন আঁধারের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিল তখন হঠাৎ করে আঁধার ও মুনের দিকে তাকায়। আর দু’জনের চোখাচোখি হয়ে যায়। মুন যেন আঁধারের তলোয়ারের মতো দৃষ্টিতে ঘায়েল হয়ে গেছে। মুন এখন খেয়াল করলো আঁধারের চোখের মনি একদম নীল। যেন কোনো অতল সমুদ্র। যেই সমুদ্রের গহিনে মুন তলিয়ে যাচ্ছে। আঁধার মুনকে নিজের দিকে এভাবে তাকাতে দেখে ভ্রু জুগল কুঁচকে তাকায়। আঁধারের ভ্রু কুঁচকানো দেখে মুনের হুঁশ ফিরে। মুন এতক্ষন আঁধারের দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিল ভাবতেই মুন লজ্জায় মিইয়ে যায়। তার এখন আঁধারের দিকে তাকাতেও লজ্জা লাগতে। মুন আড়চোখে একবার আঁধারের দিকে তাকায় আর দেখে আঁধার এখনো তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। যা দেখে মুন তাড়াতাড়ি দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকায়। মুনের দৃষ্টি যায় যেন ডোরের দিকে। আর মুনের চোখে ভেসে ওঠে একটা চির চেনা হাস্যউজ্জ্বল মুখ। তার সুপার হিরো তার বাবা। চোখ দুটো জলে ভরে ওঠে তার। মুহুর্তেই সব রাগ অভিমান পানি হয়ে যায়। মুন ভুলে যায় তার কথা না বলার সপথ। আর দৌড়ে গিয়ে কবির খানের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে। কবির খান পরম মমতায় জড়িয়ে নেয় তার আদরের কন্যা কে। তার চোখ দুটো ও বাঁধ ভাঙ্গে দেয়। গলিয়ে পরে কয়েক ফোঁটা অশ্রু। মুনের কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে যায়। সবাই অবাক চোখে দেখছে বাবা মেয়ের ভালোবাসা।
_________________
অয়ন ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। ওকে দেখে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। অয়ন ফোন কেটে আঁধারের কাছে এসে কিছু বলল। অয়নের কথা শুনে আঁধারের চোখ দুটো আগ্নিয় গিরির মতো জ্বলে ওঠে। ফর্সা মখে লাল আভা ধারণ করে। রাগে কপালের রগ গুলো ফুলে ওঠে। আঁধার কে দেখতে খুব ভয়ংকর লাগছে। আঁধার হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তার পিছে পিছে অয়ন আর আসিক ও বেরিয়ে যায়। আঁধার যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন আরমান রেজওয়ান জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছে। আঁধার তখন হসপিটালে ইমার্জেন্সি আছে বলে চলে যায়। আরমান রেজওয়ান পিছন থেকে অনেক ডাকাডাকি করে কিন্তু আঁধার না শুনে বেরিয়ে যায়।
চলবে,
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৩
কান ধরে ঠোঁট উল্টে এক’পায়ে দাঁড়িয়ে আছে মুন। আর ওর ঠিক সামনেই চিকন একটা ব্যাত আর খাতা হাতে বসে আছে। আঁধার এক দৃষ্টিতে খাতাটার দিকে তাকিয়ে আছে। মুন কিছুক্ষণ পর পর ঘুমে ঝিমচ্ছে। আঁধার ধমক দিতেই আবার সোজা হয়ে অসহায় মুখ করে আঁধারের দিকে তাকিয়ে রইছে।
.
আঁধার সেই যে গেছে আর এসেছে এখন রাত বারোটা বাজে। আঁধারের হাতে কিছু বই আর খাতা। আঁধার রুমে গিয়ে দেখে মুন কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে ল্যাপটপে টম অ্যান্ড জেরি কার্টুন দেখে খিলখিল করে হাসছে আর চিপস খাচ্ছে। আঁধার সোজা গিয়ে মুনের কাছে থেকে ইয়ারফোন, ল্যাপটপ আর চিপসের প্যাকেট নিয়ে নিল। মুন এতক্ষন শুয়ে ছিল এবার উঠে বসল। আঁধার নিজের হাতে বই গুলো মুনের সামনে রাখল। মুন কিছুই বুঝতে পারলো না। তাই একবার বই গুলোর দিকে তাকাচ্ছে আঁধারের দিকে। আঁধার কঠিন গলায় বলল,
—“বিয়ে হয়ে গেছে তাই পড়াশোনার কথা একবারে ভুলেই গেছ দেখছি। বিয়ে হয়েছে বলে ভেবো না যে বেঁচে গেছো। তোমাকে কাল আলিয়ার কলেজে এডমিশন করিয়ে দেব। দুজনকেই ড্রাইভার গাড়ি করে দিয়ে আসবে আবার নিয়ে ও আসবে। এখন আমি কিছু ম্যাথ দিচ্ছি সে গুলো করো।”
আঁধার মুনকে কিছু অংক করতে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। আর মুন বোকার মতো আঁধারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আঁধার শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে মুন মনোযোগ দিয়ে লিখছে। আঁধার মুনের কাছে গিয়ে বলল,
—“আমি যে ম্যাথ গুলো দিয়ে ছিলাম সেগুলো করেছ? দেখি খাতা টা এদিকে দেও।”
—“মুন খাতা টা হাতে নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করছে।”
আঁধার এক টানে মুনের হাত থেকে খাতা টা নিয়ে দেখতে লাগলো। আঁধার যে ম্যাথ গুলো মুন কে করতে দিয়ে গেছিল মুন সেগুলো একটাও করেনি। তার বদলে মুন এতক্ষন ঘোড়া রুপি গাধা আঁকছিল। আঁধার রেগে মুনকে পানিশমেন্ট হিসেবে কান ধরে এক’পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে। তখন থেকেই মুন ওভাবে কান ধরে এক’পায়ে দাঁড়িয়ে একবার এদিকে হেলে পরছে তো আরেকবার ওদিকে হেলে পরছে। আঁধার খাতাটার দিকে ডানপাশের কাটা ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে আছে। মুখে গম্ভীর ভাব। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। যার কারণে এখন আঁধার কে দেখে কলেজের প্রফেসর বলে মনে হচ্ছে। আঁধার উঠে মুনের সামনে গিয়ে খাতা দেখিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
—“কি এঁকেছো এটা?”
—“ঘোড়া।”
কুঁচকানো ভ্রু আরো কিছুটা কুঁচকে আঁধার বলল,
—“এটা ঘোড়া?”
আঁধারের এমন প্রশ্নে মুন রেগে জবাব দিল,
—“তাহলে কি গাধা মনে হচ্ছে আপনার?”
—“এটাকে দেখে তাই মনে হচ্ছে। যাকে বলে ঘোড়া রুপি গাধা। তুমি আমার দেওয়া ম্যাথ গুলো না করে এই ফালতু উদ্ভট জিনিস আর্ট করে সময় নষ্ট করছিলে?”
শেষের কথা গুলো বেশ জোড়ে আর ধরক দিয়ে বলল আঁধার। মুন ধমক শুনেই ভয়ে সিটিয়ে গেছে। আঁধার কড়া গলায় বলল,
—“যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি আমাকে এই ম্যাথ গুলো করে দেখাচ্ছ ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি ঘুমোতে পারবে না। যাও এখন গিয়ে ম্যাথ গুলো করে।”
একথা শুনার পর মুনের মুখ দেখার মতো ছিল। আঁধার ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে কাজ করতে লাগলো। ২:৩০ মিনিটে আঁধার নিজের কাজ শেষ ল্যাপটপ বন্ধ করে সামনে তাকাতেই থমকে যায়। মুন বেডে এলোমেলো ভাবে ঘুমোচ্ছে। হাতে কলম ধরে রাখা। ছোট ছোট চুল গুলো মুখের উপরে পরে আছে। ঘুমের মধ্যে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে রেখেছে। আঁধার উঠে ধীর পায়ে বেডে’র কাছে যায়। আঁধার মুনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে ওর মুখের উপর পরে থাকা চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে দিল।। তারপর ঠিক করে মুন কে শুইয়ে দেয়। বই খাতা গুলো জায়গা মতো গুছিয়ে রেখে। তারপর আঁধার সোফায় গিয়ে শুয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে মুনের মায়ায় ভরা মুখের দিকে। চেহারায় বাচ্চা বাচ্চা ভাব এখনো রয়ে গেছে মুনের। আঁধার কতক্ষন এভাবে তাকিয়ে থাকে তার ঠিক নেই।
__________________
মুন ঘুম থেকে উঠে দেখে আঁধার সোফায় গুটিসুটি মেরে ঘুমোচ্ছে। মুন ভাবে এতো লম্বা আর সুঠামদেহী একজন মানুষ কি সোফায় ঠিক করে ঘুমোতে পারে। মুন বুঝতে পারে আঁধারের সোফায় ঘুমোতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তাতে মুনের কি করার? মুন তো আঁধার কে বেডে শুতে না করেনি। মুন তো আঁধার কে আরো বলেছিল সে চাইলে বেডে ঘুমোতে পারে এতে মুনের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু আঁধার ভাব দেখিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরল। এতে তার দোষ কোথায়। মুন বিরবির করে বলল,
—” যা ইচ্ছে করুক তাতে আমার আব্বুর কি?”
বলেই মুন ওয়াশরুমে চলে গেল। মুন বেসিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে চোখে মুখে পানি দিচ্ছিল। মনের কাল রাতের কথা মনে পরে আঁধার ও কে কিভাবে কান ধরে রেখে ছিল। মুনের চোখ যায় আঁধারের ব্রাশের দিকে। মুনের মাথায় সয়তানি বুদ্ধি কড়া নাড়ে। মুন তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে। আঁধারের ব্রাশটা হাতে নিয়ে সয়তানি হাসি দেয়। তারপর মুন আফসোস করে বলে,
—“ইশশ্ বেসিংটা কি নোংরা পরিস্কার করার মতো কোনো মানুষ নাই। ওই রাক্ষসটার ব্রাশ দিয়েই আজ আমি বেসিংটা ভালো করে পরিষ্কার করবো। আমাকে বেটা রাক্ষস আমাকে আধা ঘন্টা কান ধরিয়ে দায় করিয়ে রেখেছে। এতো সহজে কি করে ভুলে যাব?”
মুন আঁধারে ব্রাশ দিয়ে বেসিং, হেয়ার ব্রাশ আরো অনেক কিছু পরিস্কার করে ব্রাশটা তার জায়গা মতো রেখে দেয়। তারপর আবার বেডে গিয়ে শুয়ে পরে। সকাল ১১টায় আঁধারের ঘুম ভাঙ্গে। কাল রাতে দেরী করে ঘুমানোর কারণে সকালে দেরীতে ঘুম ভেঙ্গেছে। আঁধার বেডের দিকে তাকিয়ে দেখে মুন ঘুমিয়ে আছে। জানালার কাঁচ ভেদ করে রোদ এসে পরছে মুনের মুখে। এতে মুনের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। আঁধার জানালার পর্দা টা ভালো করে টেনে দিল। তারপর ওয়াশরুমে চলে গেল। ব্রাশে টুথপেস্ট লাগাবে এমন সময় ব্রাশের অবস্থা দেখে আঁধারের মুখের রং পাল্টে যায়। আঁধার রেগে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মুনকে শোয়া থেকে এক টানে উঠে বসায়। মুন আধো আধো চোখে আঁধারের দিকে তাকায়। আঁধার অগ্নিমূর্তি ধারণ করে মুনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে মুন যে কান্ড করেছে তা ওর মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। আঁধার ব্রাশ মুনের মুখের সামনে ধরে মুন নাক ছিটকে বল,
—“ছিঃ কি নোংরা।”
মুহুর্তেই মুনের মনে পরে তার করা কর্যকলাপের কথা। মুন ঢোক গিলে। আঁধার রুক্ষ কন্ঠে বলল,
—“এটা কি?”
মুন হাসার চেষ্টা করে জবাব দিল,
—“ব্রাশ। কেন আপনি জানেন না?”
আঁধার মুনের জবাব শুনে কটমট করে বলল?
—“সেটা আমিও জানি। কিন্তু আমার ব্রাশের এই অবস্থা হলো কি করছে?”
মুন না জানার ভান করে বলল,
—“আমি জানবো কি করে আমি তো ঘুমাচ ছিলাম।”
—“তোমাকে আমি…….”
এটুকু বলে আঁধার হনহনিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে। মাথা ক্রমশ’ই গরম হয়ে যাচ্ছে। না জানি কি করে বসে। তাই এখন মাথা ঠান্ডা করা জরুরি। এর জন্য শাওয়ার নিতে হবে। এদিকে মুন হাসছে। ওর আঁধার কে বিরক্ত বেশ মজা লাগছে। আঁধার শাওয়ার নিয়ে বেরোতেই মুন ঢুকে পরে ওয়াশরুমে। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে দেখে আঁধার রুমে নেই। সে হসপিটালে চলে গেছে।
__________________
মুন আলিয়ার সাথে ওর রুমে বসে গল্প করছে। আলিয়া মিশুক স্বভাবের খুব সহজেই মুনের সাথে তার বন্ধুক্ত হয়ে গেছে। আলিয়ার মুনকে অনেক পছন্দ হয়েছে। আলিয়া মুনের গাল টেনে বলে,
—“ওহ ভাবী তুমি এতো মিষ্টি কেন? ইচ্ছে করে টুপ করে খেয়ে ফেলি। তোমাকে আমার ভাবী বলতে ভালো লাগে না। আচ্ছা তোমাকে কি বলে ডাকা যায় বলতো?”
—“তোমার যা খুশী ডাকো।”
—“উম্ মিষ্টি। হ্যা আমি তোমাকে মিষ্টি বলে ডাকব। তুমি আসলেই খুব মিষ্টি।”
মুন আলিয়ার প্রসংসা শুনে হাসে। ওকে কেউ সুন্দর বললে ওর তখন খুব হাসি পায়। এটা কেমন রোগ মুন জানে না।
#চলবে