#My_First_Crush
#পর্ব-১৬
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
বাসার পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে আছে। প্রতিদিনকার মতো হৃদির উচ্ছ্বসিত কোন কথা বা মিঁয়োর সাথে দৌঁড়ঝাপের কোন শব্দই শোনা যাচ্ছে না। সবকিছুই নিঝুম, নিস্তব্ধ। বিছানা ছেড়ে উঠে রুমের বাইরে চলে এলো রাইয়ান। লিভিং এরিয়ার এসে দেখলো সোফার কুশন কভার উঠিয়ে অস্থির ভাবে কি যেন খুঁজে চলেছে হৃদি। রাইয়ান গিয়ে ডাকলো,
‘হৃদি, হৃদি।’
হৃদি শুনতে পেলো না। একইভাবে সোফার উপরে নিচে খোঁজ চালাতে লাগলো সে। এবার রাইয়ান জোরে ডেকে উঠলো, ‘হৃদি!’
হৃদি সম্বিৎ ফিরে পাবার মতো বলল, ‘হুম?’
রাইয়ান বলল, ‘কি খুঁজছো?’
হৃদি চিন্তিত কন্ঠে বলল, ‘আমার আংটি খুঁজে পাচ্ছি না রাইয়ান।’
‘কিসের আংটি?’
‘যেটা তুমি আমাকে দিয়েছিলে। আমাদের বিয়ের।’
রাইয়ান হৃদির দিকে তাকিয়ে রইলো। হৃদির চোখে মুখে স্পষ্ট দুশ্চিন্তার ছাপ। কিছু সময়ের মধ্যে চেহারাই পাল্টে গেছে যেন। হৃদি আবারো ব্যগ্র হয়ে বাসার এদিক সেদিক, সকল কোণা, ড্রয়ার সব কিছু তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলো। হৃদিকে দেখে মনে হচ্ছিল শুধু একটা আংটি নয় হৃদির জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু হৃদি খুঁজে পাচ্ছে না। রাইয়ানও হৃদির সাথে হাত লাগালো। বেডরুম, বাথরুম, ক্লজেট, কিচেন সবকিছু ভালো ভাবে সার্চ করেও কিছু পেলো না তারা। রাইয়ান ক্লান্ত হয়ে পরলো। কিন্তু হৃদির মধ্যে কোন ক্লান্তি নেই। উদ্বিগ্ন হয়ে সে শুধু খুঁজেই যেতে লাগলো তার আংটি। বিছানার চাদর উল্টে কিছু না পেয়ে হৃদি শঙ্কিত হয়ে মাথায় হাত দিল। রাইয়ান বুঝতে পারছিল না সামান্য একটা সোনার আংটির জন্য হৃদি এমন অস্থির হয়ে কেন উঠেছে। তবুও হৃদির এমন অবস্থা দেখে সে কাছে গিয়ে বলল, ‘হৃদি রিল্যাক্স।’
হৃদি বলে উঠলো, ‘আমি বুঝতে পারছি না আংটিটা আমার থেকে হারালো কিভাবে? আমি কখনো আংটি টা আমার আঙ্গুল থেকে খুলতামও না। সবসময় কাছে রাখতাম। কিন্তু আজ ওটা একেবারে হারিয়েই গেলো! এত বড় ভুল আমি কিভাবে করে ফেললাম!’
পরক্ষণেই বলল, ‘আচ্ছা রাইয়ান, চলো না আমরা পুলিশের কাছে যাই। হারিয়ে যাওয়া জিনিস পাওয়া নিয়ে তারা তো আমাদের হেল্প করতে পারে!’
রাইয়ান বলল, ‘হৃদি কি বলছো এসব! সামান্য একটা সোনার আংটির জন্য কে পুলিশের কাছে যায়? আচ্ছা ঠিকাছে, আমি তোমাকে এরকম আরেকটা আংটি এনে দেবো। ইনফ্যাক্ট আরো বেটার এক্সপেন্সিভ দেখে কিনে দেবো।’
হৃদি ব্যথিত কন্ঠে বলল, ‘রাইয়ান তুমি এসব কি বলছো! ওটা আমাদের বিয়ের আংটি ছিল। মোটেও সামান্য না। ওটা আমার কাছে সবথেকে দামী। আরো অনেক এক্সপেন্সিভ কিছুও ওটার কখনো রিপ্লেসমেন্ট হতে পারবে না।’
রাইয়ান বলার মতো কিছু খুঁজে না পেয়ে হৃদির মুখপানে তাকিয়ে রইলো। হৃদি কিছু ভেবে বিড়বিড় করে বলে উঠলো, ‘আমি বরং কফিশপে গিয়েও একবার দেখে আসি। সেখানেও থাকতে পারে।’
এই বলে হৃদি ড্রয়ারের উপর থেকে ব্যাগ নিয়েই দ্রুত বাইরে চলে গেলো। রাইয়ান কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না।
কফিশপে গিয়েও আংটি খুঁজে পেলো না হৃদি। তার মন খুবই খারাপ লাগতে লাগলো। মুখের হাসি আজ পুরোপুরিই গায়েব হয়ে গেছে তার। কোনকিছুই ভালো লাগছে না। জেরিনেরও আজ আগে থেকেই কফিশপে আসার কথা ছিল না। হৃদি আর সেদিন কফিশপ খুললোই না। ‘Closed’ লেখা কার্ড ঝুলানো দরজা বন্ধ করে কফিশপেই চুপচাপ বসে রইলো। দুপুর গড়িয়ে গেলে রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটতে হাঁটতে একটা পার্কে চলে এলো। সেখানে কিছু বাচ্চারা নিজেদের আনন্দে খেলাধুলো করছে। একটা বেঞ্চ দেখে সেখানেই উদাস মনে বসে রইলো হৃদি। পার্কে থাকা টেডি মাসকটের সাথে বাচ্চারা খেলছিল। সেটি একসময় দুলতে দুলতে উদাসমুখের হৃদিকে দেখে থেমে গেলো। মজাদার অদ্ভুত অঙ্গিভঙ্গি করে হৃদির হাতে একটা হলুদ বেলুন দিলো। হৃদি দেখলো বেলুনটিতে একটা স্মাইলি ফেস আঁকা। টেডি বিয়ার তাকে হাত দিয়ে হাসার ইশারা করলো। টেডির দিকে তাকিয়ে মন খারাপের মধ্যেই স্মিত হাসলো হৃদি।
___________________________________________________
জেরিন আর জিশানের বারান্দাটা একদম পাশাপাশি। শুধু মাঝখানে একটা দেয়াল। সামনে খোলা। জেরিন এই মুহুর্তে দেয়ালের কাছে ঘেঁষে রেলিংয়ের উপর উবু হয়ে ওপাশের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করছে। তার হাতে একটা ফোন। ফোনের ক্যামেরা অন করে সে জুম করে ভেতরে জিশানকে খুঁজে চলেছে। একটু আগে জিশানকে রাইয়ানের সাথে ফোনে কথা বলতে শুনেছে সে। কি কথা বলছে সেটাই শোনার চেষ্টায় আছে জেরিন। জেরিন ক্যামেরা জুম করে দেখলো জিশানকে দেখা যাচ্ছে না। হাতটা আর ওদিকে যাচ্ছেও না। জেরিন ফোনটা পকেটে ঢুকালো। দেয়াল আগলে ধরে ওপাশের বারান্দার রেলিংয়ে পা তুলে দিয়ে আরো একটু আগাতে চেষ্টা করলো সে। হঠাৎ পা ফসকে গিয়ে পরে গেলো বাইরে। সময়মতো দু হাত দিয়ে রেলিংয়ের গ্রিল ধরে ফেলায় সেখানেই ঝুলতে লাগলো আর ভয়ে চেঁচাতে লাগলো। জিশান তাড়াতাড়ি রুম থেকে ছুটে আসে। চারপাশে তাকিয়ে কিছু না দেখে জিশান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘এমন শব্দ আসছে কোথা থেকে?’
জেরিন বলল, ‘আরে ও স্টুপিড, নিচে তাকাও নিচে।’
জিশান রেলিংয়ে হাত রেখে নিচে তাকিয়ে দেখলো জেরিন তার বারান্দার রেলিং ধরে ঝুলছে। জিশান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
‘সবসময় সবার মাথায় উঠে নাচতে থাকা মিস জেরিন আজ হঠাৎ নিচে ঝুলছে কেন?’
‘মনের সুখে। ইডিয়ট, এটাও বুঝতে পারছো না। আমি পরে গেছি।’
জিশান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
‘এক মিনিট, তুমি আমার বারান্দার এদিকে আসলে কিভাবে?’
জেরিন থতমত খেলো। কথা কাটাতে বলল,
‘এখন কি এই প্রশ্নের সময়! তোমার মাথায় কি কোন বুদ্ধি নেই। আমাকে উঠাও আগে এখান থেকে।’
‘আমি কি তোমাকে উঠানোর সার্ভিসে আছি নাকি?’
‘তোমার মধ্যে কি মানবতা বলতে কিছু নেই?’
‘আগে ভালো করে ‘প্লিজ!’ বলো।’
জেরিন মুখটা ভোঁতা করে বলল, ‘প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ!’
জিশান ওর হাত বাড়িয়ে দিয়ে জেরিনের হাত ধরলো। টেনে উঠাতেই যাবে তার আগে কিছু মনে পরার নাটক করে থেমে বলল,
‘একটু আগে যেন কি বলছিলে….স্টুপিড, ইডিয়ট, মাথায় বুদ্ধি নেই।’
জেরিন বিগলিত হয়ে বলল,
‘আরে ওটা তো আমি এমনি এমনিই বলে ফেলেছি। সিরিয়াসলি না।’
‘সরি বল!’
জেরিন মুখটা পেঁচার মতো করে আস্তে আস্তে বলল, ‘সরি!’
‘কি? কিছুই তো শুনতে পেলাম না।’
জেরিন এবার জোরে বলল, ‘সরি!’
জিশান হাত দিয়ে টেনে উঠালো জেরিনকে। বারান্দায় উঠে জেরিন খানিক হাঁপিয়ে নিলো। নিজের ঠাট বজায় রেখে আড়চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘দরজা কোনদিকে?’
জিশান ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কেন?’
‘আমি যাবো কোনদিক দিয়ে?’
‘যেদিক দিয়ে এসেছিলে সেদিক দিয়েই চলে যাও।’
কথাটা বলেই জিশান ভেতরে চলে গেলো আর জেরিন আরেকবার রেলিং দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখে জিশানের পেছন পেছন ডাকতে লাগলো।
___________________________________________________
আমি রাইয়ান৷ লেখার শুরুটা বোধ হয় একটু নাটকীয় হয়ে গেলো। হৃদির মতো আমি অতো ভালো শব্দগুচ্ছ গুছিয়ে লিখতে পারি না। আসলে, আমি এসব কেন লিখছি আমি তাও জানি না। হয়তো মনকে শান্ত করতে। হয়তো হৃদির কথা রাখতেই! হৃদি বলেছিল যেসব কথা মনকে বিচলিত করে, হয়রানি করে সেসব অপ্রকাশিত শব্দ একটি সাদা পৃষ্ঠায় লিখে ফেলতে। আচ্ছা, একটা মানুষের জীবনে কি সবসময় সবকিছুই একদম পরিষ্কার, স্পষ্ট থাকে? নাকি মাঝে মাঝে চেনা দৃশ্যই দৃষ্টিকোণের সামনে আপনার আড়ালেই আস্তে আস্তে হয়ে উঠে অস্পষ্ট! কখনো কখনো আমরা নিজেদের নিয়ে বড্ড বেশিই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। নিজেকে চেনার মিথ্যে বিশ্বাসে নিজের কাছেই হয়ে উঠি অপরিচিত। মাঝে মাঝে একটি ক্ষুদ্র ঘটনার আবির্ভাব আমাদের সামনে সেই সত্য হয়ে ধরা দেয়। আর আমরা সেই মুহুর্তে শুধু অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকি।
হৃদি আমার স্ত্রী। যে নিজের বিয়ের আংটির জন্য রাতের গভীরতার কোন হিসেব না করে অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে এখনও খুঁজে চলেছে। আজ সারাদিনের এই একটাই লক্ষ্য হয়ে আছে তার। খুবই উচ্ছ্বসিত স্বভাবের মেয়ে হৃদি। ওঁর মন খারাপ ভাব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায়। মুখে ভেসে উঠে চিরাচরিত তার নম্র হাসি। ব্যতিক্রম হলো শুধু আজ। আজ সারাদিন হৃদিকে আমি হাসতে দেখিনি৷ আংটি হারানোর ফলে মেঘরাজ্যের যেই সুদৈর্ঘ্যের ভেলা তার মুখের পানে পাড়ি জমিয়েছে তা এখনো নিশ্চল। আজ আমার এই অ্যাপার্টমেন্টেও কোন হাসি ঝংকারের শব্দ শোনা যায়নি। ঠিক যেমন সেই দিনটার মতো, যেদিন সূর্যের আলো ফিকে হয়ে সানশাইন সরে গিয়ে দিনটা হয়ে উঠে মেঘলাটে, বিষন্ন। হৃদি বাইরের গার্ডেনে আংটি খুঁজছে। আরো অনেকক্ষণ আগেই বাসায় ফিরেছে সে। ফিরে বসতে না বসতেই তার মনে পরেছে গতকাল বিকেলে সে একবার অ্যাপার্টমেন্টের সামনের গার্ডেনেও গিয়েছিল৷ তৎক্ষনাৎ পুনরায় বাইরে চলে যায় হৃদি। তার উদ্বিগ্নতাই বলে দিলো গতকাল পা রাখা কোন স্থানই বাদ রাখেনি সে। আমি ডাইনিং টেবিলে সাদা টিশার্ট আর কালো জিন্স পরে একাকি বসে ছিলাম। হঠাৎ বাইরে থেকে আসা বিকট বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দে সজাগ হলো ইন্দ্রিয়। খানিক পর পর আকাশের গর্জে উঠা ধ্বনি বৃষ্টির জানান দিয়ে চলেছে। ডাইনিং টেবিল ছেড়ে উঠে আমি বাইরে চলে এলাম। উদ্দেশ্য ছিল হৃদিকে ডাকতে যাওয়া। হৃদিকে পেলাম টেনিস কোর্টের ওখানে। তার গায়ে একটা ক্রিম কালারের টপস আর জিন্স। মাথার চুলগুলো খোলা। যা দু হাত দিয়ে কানের দু পাশে গুঁজে টেনিস কোর্টের চারপাশে একমনে আংটি খুঁজে চলেছে সে। হৃদিকে ডাকতে এসেও আর ডাকলাম না আমি। কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে তার সাথে সাথে আশেপাশে আমিও খুঁজলাম। আকাশের অবস্থা খারাপ হতে লাগলো। একটু পরপর আলোকিত হয়ে কাঁপিয়ে তুলছে অন্ধকারকে। টেনিস কোর্টের পাশে একটা বেঞ্চ দেখে হৃদি স্থির হয়ে দাঁড়ালো। স্মৃতিতে ঝাপ দিয়ে ঠাওর করলো গতকালের ঘটনা। যখন মিঁয়োকে নিয়ে বাইরে এসে সে ঠিক এখানটাতেই থমকে দাঁড়িয়েছিল। ওঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কাঁদা পানিতে পরে যাওয়ায় সেখানে হাত দেওয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পরেছিল হৃদির। আংটিতে নোংরা লেগে যাবে ভেবে হৃদি হাত থেকে আংটি খুলে এই বেঞ্চির উপরই রাখে। পাশে বসায় মিঁয়োকে। হাত ধুয়ে এসে মিঁয়োকে আবিষ্কার করে টেনিস কোর্টের পাশেরই এক গাছের কোটরের বড় গর্তে। তা দেখে হন্তদন্ত হয়ে হৃদি গাছের কোটর থেকে মিঁয়োকে শাসিয়ে তাড়াতাড়ি নামায়। মিঁয়োকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বেমালুম ভুলে যায় আংটির প্রসঙ্গ।
হৃদি তাড়াতাড়ি বেঞ্চের আশেপাশে চোখ বুলিয়ে খুঁজে দেখে। বাকি জায়গাগুলো আগেই খুঁজে রাখা। এমন সময় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। যাকে বলে একদম ঝুম বৃষ্টি। ঝিরিঝিরি শব্দে মুহুর্তেই জেগে উঠে অন্ধকার। ল্যাম্পপোস্টের উজ্জ্বল আলোতে বৃষ্টির বড় বড় ফোটা ক্ষণিকের মধ্যেই ভিজিয়ে তোলে আমাদের। আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। সেখানেও কিছু না পেয়ে আশাহত হয় হৃদি। চোখ পরে সেই বৃহৎ গাছের কোটরে। ভ্রু সংকুচিত হয়। হৃদি গাছের নিচে এসে দাঁড়ায়। গাছের কোটর অব্দি দৃষ্টি নাগাল পায় না। হৃদির ইতস্তত নেত্র আমার থেকে বারবার গাছের কোটরের দিকে যেতে থাকে। তার মুখের ভাব বুঝতে পারি আমি। আস্তে করে গিয়ে তার সামনে বসি। ইশারা করি কাঁধের দিকে। আমার গলা পেঁচিয়ে কাঁধে উঠে হৃদি। আমি উঠে দাঁড়াই। এবারে দৃষ্টির নাগালে আসলেও অন্ধকারে কিছু বোঝা কঠিন। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে গাছের কোটরের ভেতরে সোনালি কিছুর ঝিলিক চোখে পরে হৃদির। তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে হৃদি তুলে নেয় সেটি। অবশেষে পুনরায় হৃদির হাতে এসে ধরাই দেয় আমাদেরই বিয়ের আমার নিছক হেয়ালিতে দেওয়া সেই নগন্য সোনার আংটি। হৃদির ঠোঁট প্রশস্ত হয়ে উঠে। চোখে মুখে এক অনাবিল নির্মল হাসি। আমি একদৃষ্টিতে হৃদির মুখপানে তাকিয়ে থাকি। হৃদি ঠোঁট মেলে চোখে উথলে পরা সিক্ত আনন্দের সাথে হাত উঁচু করে আংটি টি বৃষ্টির পানির মধ্যে তুলে ধরে নাড়াতে থাকে। আমি এক ধরণের অস্থিরতা অনুভব করে দৃষ্টি নামিয়ে ফেলি। আমি সবসময় জানতাম আমি যেমনটা ভেবে রাখি তাই করি। কখনো আমার ভাবনার বাইরে আমি যাই না। এটাই আমি। কিন্তু সেদিনের সেই ঝুম বর্ষনের রাতে বৃষ্টি চরম অপছন্দ করা আমি হৃদিকে কাঁধে নিয়ে জবজবে ভিজে ঠিক সেই মুহুর্তেই প্রথম উপলব্ধি করি কিছু একটা পরিবর্তন আমার ভেতরে হয়েছে। সবকিছু অবিকল আগের মতো নেই। আমারই অলক্ষ্যে সর্বদা জাগ্রত মস্তিষ্কের অগোচরে খুবই নিঃশব্দের সাথে ভেতর গহ্বরের কিছু পূর্ব স্থান থেকে…….. সরে গেছে!
চলবে,