#My_First_Crush
#পর্ব-০৪
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
ঘুমের ঘোরেই কিছুটা সুড়সুড়ি বোধ হতে লাগলো রাইয়ানের। মনে হলো তার শরীরের উপর কিছু একটা নড়াচড়া করছে এবং সেটি পেট থেকে ক্রমশ উপরের দিকে উঠে আসছে। মুখের কাছে চলে আসতেই রাইয়ান ঝট করে সেটিকে তুলে উঠে বসলো। দেখলো সেটি একটি বিড়াল। রাইয়ানের ঘুমু ঘুমু বিস্ফোরিত মুখ পানে বিড়ালটি ডেকে উঠলো, ‘মিঁয়াও!’
দ্রুত সেটিকে সোফায় রেখে দিলো রাইয়ান। সোফায় বসে বিড়ালটি রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে লেজ নাড়তে লাগলো। বিড়ালটির পুরো শরীর একদম ধবধবে সাদা। গলায় জড়ানো একটা লাল রঙের ফিতা। খুবই কিউট।
তবে যতই কিউট হোক না কেন বিড়াল খুব একটা পছন্দ নয় রাইয়ানের। রাইয়ান ওর শার্ট ধরে দেখে সেখানে বিড়ালের লোমে ভরে গেছে। একটু নাক কুঁচকে বিড়ালের দিকে তাকালো রাইয়ান। দেখলো সে আয়েশি ভঙ্গিতে তার দিকে তাকিয়ে শুধু লেজ নেড়ে চলেছে। একটু ঝুঁকে বিড়ালকে উদ্দেশ্য করে রাইয়ান গলার স্বর নামিয়ে বলতে লাগলো,
‘এই, তুমি ভেতরে আসলে কিভাবে? এভাবে যে কারো বাসায় চলে আসা ভেরি ব্যাড ম্যানার। আমার সোফায় লোম ভরাবে না। নিচে নামো।’
এরপর বিড়ালটিকে তাড়ানোর জন্য রাইয়ান দূর থেকেই হাত নাড়িয়ে হুশ হুশ করে শব্দ করতে লাগলো। বিড়ালটির মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না। নিজের শাসন চালিয়ে যেতে লাগলো রাইয়ান। এমন সময় হালকা আকাশি রঙের টপস আর ব্লু জিন্স গায়ে রুমে দৌড়ে এলো হৃদি। বাসার মধ্যে হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখে রাইয়ান চকিত স্বরে বলল, ‘তুমি!’
হৃদি অবাক হয়ে তাকালো। পরক্ষণেই রাইয়ানের মনে পড়লো এই বাসায় সে আর এখন সিঙ্গেল নেই। গতকালই তার বিয়ে হয়েছে। এই মেয়েটি তার বউ। মনে পড়তেই নিজেকে ধাতস্থ করলো রাইয়ান। রাইয়ানকে স্বাভাবিক হতে দেখে হৃদিও ঠিক হয়ে সোফার কাছে গিয়ে বিড়ালকে কোলে নিয়ে নরম গলায় বলল, ‘সরি! এটা আমার পোষা বিড়াল।’
রাইয়ান বলল, ‘তোমার বিড়াল?’
হৃদি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ‘হুম। সকালে আমার একটা ফ্রেন্ড ড্রপ করে গেছে।’
রাইয়ান সন্দিহান গলায় আস্তে আস্তে প্রশ্ন করলো,
‘ও কি এখন থেকে এখানেই থাকবে?’
হৃদি কাঁচুমাচু স্বরে বলল,
‘আসলে ও আমার সাথেই সবসময় থাকে তাই….
বুঝতে পেরে রাইয়ান জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘আচ্ছা! তাহলে একটু আমার থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করো। আমার আসলে বিড়ালের লোমে একটু সমস্যা বোধ হয়।’
হৃদি প্রফুল্লিত হয়ে ঝটপট মাথা নেড়ে সায় দিলো। রাইয়ান একটা হাই তুলে এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে বলল, ‘নাম কি ওর?’
হৃদি হাসিমুখে বলল, ‘মিঁয়ো।’
রাইয়ান অবাক স্বরে বলল, ‘মিঁয়ো?’
ভাবতে লাগলো মিঁয়াও…. মিঁয়ো! তারপর নকল হেসে বলল, ‘খুবই অদ্ভুত নাম।’
হৃদির মুখে আগের মতোই হাসি ফুটেই রইলো। ওদের দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো রাইয়ান। হৃদি মিঁয়োর গায়ে হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বলল,
‘পারমিশন পেয়ে গেছো মিঁয়ো। চলো তোমাকে আমাদের নতুন বাসা ঘুরে দেখাই।’
________________________________________________
রাইয়ানের বাসায় আজ আমার প্রথমদিন। আমি খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে বাসা ঘুরে ঘুরে দেখে ফেলেছি। অনেক বড় অ্যাপার্টমেন্ট। তিনটা বেডরুম। একটা স্টাডিরুম। মাঝখানে বড় লিভিং এরিয়া। তার পাশেই কিচেন। কিচেনের সামনের অংশে চারকোনা আকৃতির ছোট ডাইনিং টেবিল বসানো। দুটো বড় বড় বারান্দাও আছে। মেঝের টাইলস থেকে শুরু করে দেয়ালের রং দুটোই ধবধবে সাদা। বাসার ইন্টেরিয়র ডিজাইনে হোয়াইট এবং চারকোল কালারের কম্বিনেশন দেওয়া হয়েছে। ফার্নিচার গুলোর রংও সেই অনুসারেই সিলেক্ট করা। আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। মিঁয়োকেও একবার আমি ঘুরিয়ে দেখালাম। মিঁয়োর কথা যদি বলা হয় তা হলো মিঁয়ো আমার সবথেকে কাছের। চার বছর ধরে সে আমার কাছে আছে। বাবা মায়ের মৃত্যুর পর ফাঁকা বাড়িতে আমার একাকীত্বের জীবনে মিঁয়োই আমাকে সবথেকে বেশি সঙ্গ দিয়েছে। আমি ওকে খুব আদর করি। এ বাড়িতে মিঁয়োকে রাখা নিয়ে রাইয়ান আপত্তি করবে কিনা এ নিয়ে আমি কিঞ্চিৎ শঙ্কায় ছিলাম। তবে আমার শঙ্কা দূর করে রাইয়ানও সম্মতি দিয়ে আমার মনকে আরো একবার প্রসন্ন করেছে।
কিছুক্ষণ বাদে রাইয়ান ঘাড় টিপতে টিপতে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো। অলক্ষ্যে দৃষ্টি ডাইনিং টেবিলের উপর পড়তেই খানিক অবাক হলো সে। এর কারণ হয়তো টেবিলে পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা বহু পদের সকালের নাস্তা। এ সব কিছু আমি নিজের হাতে বানিয়েছি। দাদীমার থেকে শুনেছিলাম রাইয়ান নাকি বাইরে থেকেই খাবার এনে খায়। এখন যখন আমি আছি রাইয়ানকে আর বাইরের খাবার খেতে দেবো না। এতোদিন আমি তাকে শুধু দূর থেকেই ভালোবেসে গিয়েছি। কাছে গিয়ে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাইনি। এখন যখন পাচ্ছি সেই সুযোগ আমি হাতছাড়া করবো না।
দু হাতে ইশারা করে রাইয়ানকে নাস্তার টেবিলে আমন্ত্রণ জানালাম আমি। রাইয়ান টেবিলের কাছে আসতেই আমি আগে গিয়ে হাসিমুখে তার সামনে চেয়ার টেনে দিলাম। রাইয়ান খেতে বসলো। বিপরীত পাশে গিয়ে তার মুখোমুখি আমিও বসে পড়লাম। রাইয়ান খাওয়া শুরু করলো। আর আমি একটা ব্রেডে বাটার মাখাতে মাখাতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। খাওয়ায় মগ্ন তাকে দেখতেও কি সুন্দর লাগছে! গায়ে তার সাদা টি শার্ট। ফর্সা মুখটিতে একধরনের সতেজতার আভাস ছড়িয়ে আছে। বোধ হয় এই মাত্রই গোসল সেরে বেরিয়েছে সে। এলোমেলো ভেজা চুল থেকে একটু পর পর টপ টপ করে পানি পরছে। আমি অপলক গভীর নিরীক্ষণের দৃষ্টিতে তার চেহারার প্রতিটা কোণা কোণা দেখতে লাগলাম। ঘন মোটা ভ্রু জোড়া বিশিষ্ট চোখগুলো নামিয়ে সে যখন একটু একটু করে চিকেন রোল খাওয়ায় নিমগ্ন তখন আমি আস্তে করে আমার হাতের বাটার মাখা ব্রেডটি তার দিকে বাড়িয়ে ধরলাম। সে চোখ তুলে আমার দিকে তাকালো। ব্রেড ধরে রাখা আমার হাতটি হঠাৎ ধরে বসলো সে। মিষ্টি করে হেসে উঠলো। বুকের মধ্যে ধকধক করতে লাগলো আমার। সে খানিক উঠে নিজের মুখটি এগিয়ে নিয়ে এসে আমার হাত থেকেই ব্রেড কামড় দিয়ে খেলো। আমি বিগলিত হয়ে তাকিয়ে রইলাম। তারপর সে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমার পাশের চেয়ারটি টেনে একদম আমার কাছে ঘেঁষে বসলো। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার প্লেট থেকে একটা ব্রেড তুলে আমাকে খাইয়ে দিতে এগিয়ে আসতেই হঠাৎ জোরে জোরে ডাকতে লাগলো, ‘হৃদি! হৃদি!’
কল্পনা ভাঙতেই দেখতে পেলাম রাইয়ান অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আমি একটা স্টুপিডের মতো এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে মুখ হা করেছিলাম। সম্বিৎ ফিরে পেতেই চরম বিব্রত হয়ে আমি ভীষণ চমকে উঠলাম। যার দরুন আমার হাতে লেগে প্লেটের পাশে থাকা স্টিলের চামচটি ঝনঝন শব্দ তুলে টেবিলের নিচে পরে গেলো। নিচু হয়ে বসে সেটিকে দ্রুত তুলে উঠতে গিয়েই টেবিলের সাথে মাথার জোরে একটা বারি খেলাম আমি। রাইয়ানের অবাকের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। মাথা হাত দিয়ে ডলতে ডলতে উঠতেই রাইয়ান বিভ্রান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কি ঠিক আছো?’
আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘হ্যাঁ, একদম।’
রাইয়ান আবারো জিজ্ঞেস করলো, ‘শিওর?’
আমি হাসির রেখা আরো বাড়িয়ে মাথা নাড়ালাম। খাওয়া শেষ হওয়ায় রাইয়ান বিভ্রান্ত মুখেই টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো। আর আমি চেয়ারে বসে মাথা ডলতে থাকা অবস্থাতেই হাত দিয়ে আবারো দুটো বারি দিয়ে নিজেকে শাসালাম। কখন থেকে কি স্টুপিডের মতো বিহেভ করে যাচ্ছি। না জানি রাইয়ান আমাকে নিয়ে কি ভাবছে!
এই দিনটির কথা যদি খুব বিশেষ ভাবে সংজ্ঞায়িত করতে চাই তাহলে বলতে হয় আমার জীবনের যতগুলো ভালো দিনের সংখ্যা আছে তার মধ্যে আজকের দিনটি একটি। আজ আমি এই প্রথম সকালে ঘুম থেকে উঠে রাইয়ানকে দেখতে পেয়েছি। নিঃসন্দেহে সেই সকালটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সকাল। আজই আমি প্রথম রাইয়ানের সাথে একসাথে বসে খাবার খেয়েছি। স্নান শেষে রাইয়ানের স্নিগ্ধ মুখ দেখেছি। নিজের উদ্ভট কর্মকাণ্ড দিয়ে তাকে শুধু বিভ্রান্ত করেছি। অনেকগুলো প্রথম জিনিসের অভিজ্ঞতালব্ধ হয়ে মনে মনে আনন্দিত হয়েছি। এই সবকিছুর অনুভূতিই অন্যরকম। আমার সুখানুভূতির ধারায় এভাবেই আমার সম্পূর্ণ দিনটা কাটে।
এরপর রাত হয়। ডিনার শেষ হবার পর রাইয়ান সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো আর আমি বিছানায় হেলান দিয়ে বসে একটা ইংরেজি উপন্যাসের বই পড়ছিলাম। বই হাতে নিয়েছি নামে। আসলে পুরোটা সময় অগোচরে আমার সমস্ত দৃষ্টি রাইয়ানের দিকেই ছিলো। এরপর দেখলাম রাইয়ান ল্যাপটপ রেখে উঠে বাথরুমে গেলো। খানিকবাদে বের হয়ে একটা হাই তুলে আমার পাশ থেকে একটা বালিশ নিয়ে সোফার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো সে। আমি দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে তার কাছে গিয়ে বললাম, ‘তুমি বিছানায় গিয়ে ঘুমাও রাইয়ান। আমি এখানে ঘুমাচ্ছি।’
রাইয়ান ঘুম ঘুম চোখে বলল, ‘না ঠিক আছে। আমিই ঘুমাচ্ছি।’
আমি তার হাত থেকে বালিশ টেনে ধরে বললাম,
‘না আমিই ঘুমাবো। আমার সোফায় ঘুমাতেই ভালো লাগে। ইনফ্যাক্ট আমি তো সোফাতেই বেশি ঘুমাই।’
রাইয়ান অবাক স্বরে বলল, ‘সোফায় ঘুমাতে ভালো লাগে?’
আমি বালিশটি পুরোপুরি টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে হেসে মাথা নাড়ালাম। রাইয়ান আবারো হাই তুলে পেছনে যেতে যেতে বলল, ‘ওকে।’
বিছানায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো সে। খানিক বাদে আমি নিঃশব্দে পা টিপে টিপে গিয়ে রুমের লাইট বন্ধ করে দিলাম। এরপর আস্তে আস্তে সাবধানে সোফায় বালিশ রেখে শুয়ে পড়লাম। রাইয়ান নিশ্চয়ই এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। তার ঘুমটা শান্তিময় হোক। সকালেই দেখলাম গতরাতে সোফায় ঘুমানোর জন্য তার ঘাড়ে খারাপ লাগছে। এখন নিশ্চয়ই তার একটু ভালো বোধ হচ্ছে!
___________________________________________________
ফ্রোরিডার সকাল ঝলমলে, উজ্জ্বল। বেলা খানিক বাড়তেই ঝকঝকে পিচ ঢালা রাস্তায় শুরু হয়ে গেছে লোকজনের আনাগোনা। উইকেন্ড ছাড়া প্রতিটা সকালই তাদের কাছে ব্যস্তমুখর। এমনই এক ব্যস্তমুখর দিনে গরম ধোঁয়া ওঠা কফির মগ সামনে নিয়ে জেরিন বসে আছে তাদের কফিশপে উদাস মুখে। খানিক বাদে বাদে তার মুখ থেকে গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরোচ্ছে। কফিশপ এখন নির্জন। সকালে তাদের খুব একটা তেমন কাস্টমার আসে না। যাই আসে বেশিরভাগ সন্ধ্যের পর। জেরিনের উদাস হওয়ার কারণটা ঠিক সেটা নয়। পুরো কফিশপে শুধুমাত্র একজন যেই কাস্টমারটি আছেন কারণটা আসলে তিনিই। তিনি বলতে তার বৃহদাকার দেহে পরিধিত টি-শার্টটি। যার পেছনে লেখা “ইউ উইল বি অলওয়েজ সিংগেল।” লোকটি বসেছে পেছনে ঘুরে। একদম জেরিনের দিকেই পিঠ বরাবর করে। জেরিনের মনে হলো লেখাটা যেন তাকে উদ্দেশ্য করেই ফুটে আছে। তা নয়তো কি, হৃদিরও বিয়ে হয়ে গেলো। শুধুমাত্র সেই একমাত্র সিঙ্গেলের ট্যাগ ধারণ করে বসে আছে। এমন নয় যে সে কখনো রিলেশনশিপে যায় নি। কিছুদিন আগেই তার ব্রেকআপ হয়েছে। এক্সের কথা মনে পড়তেই জেরিন বিড়বিড় করে একটা গালি আওড়ালো। ঐ লম্পটটার জন্য মন খারাপের কোন মানেই হয় না। একসাথে দু নৌকায় পা রাখতে চেয়েছিল। ব্রেকআপের দিন জেরিন ব্যাগে করে একটা ডিম নিয়ে গিয়ে লম্পটটার মুখে ছুঁড়ে মেরে এসেছে। জেরিনের সাথে চালাকি একদমই চলবে না।
জেরিন যখন মনে মনে তার এক্সের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করতে ব্যস্ত, এমন সময় হৃদি এলো কফিশপে। ঘাড়ে এক হাত রেখে ডলতে ডলতে জেরিনের পাশের চেয়ারে বসে বলল,
‘একটা কফি বানিয়ে খাওয়াতে পারবি জেরিন। ঘাড়টা এমন ব্যাথা করছে না!’
জেরিন নিজের কফির মগটা হৃদির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘এটা খা। একটু আগেই বানিয়েছি। চুমুকও দেইনি। তোর ঘাড়ে আবার কি হয়েছে?’
প্রশ্নটা করেই জেরিন মুচকি হেসে যখনই একটা দুষ্ট বাক্য যোগ করতে যাবে তার আগেই অন্যমনষ্ক হৃদি কফির মগে চুমুক দিয়েই বলে উঠলো, ‘আর বলিস না, গতরাতে সোফায় ঘুমিয়ে…..
হৃদি থেমে গেলো। তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠলো জেরিন,
‘কি! হাজবেন্ড থাকতে তুই সোফায় ঘুমাস?’
জেরিনের জোরালো গলার আওয়াজে কফিশপের সেই কাস্টমারটিও পর্যন্ত ঘুরে তাকালো। হৃদি তাড়াতাড়ি জেরিনকে বসিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘আস্তে!’
জেরিন বলল, ‘আগে খুলে বল।’
নিতান্তই কথায় কথায় হৃদির মুখ ফসকে বেরিয়ে এসেছিল। তবুও হৃদি আর কিছু বলতে চাইলো না। কিন্তু জেরিনের জেরার মুখে পরে আর না বলে পারলো না। সবটা শুনে জেরিন বলল,
‘এটা কোন কথা! অভ্যেস নেই বলে এক বিছানায় ঘুমাতে পারবে না। তাই বলে তুই কষ্ট করে সোফায় ঘুমাবি?’
হৃদি মুখে ঈষৎ ‘চ’ সূচক শব্দ করে বলল, ‘রাইয়ান তো আর আমাকে বলেনি সোফায় ঘুমাতে! আমি নিজ ইচ্ছায় ঘুমিয়েছি। তুই একটা জিনিস বুঝতে পারছিস না। রাইয়ান একটু চাপা স্বভাবের। আমি না হয় রাইয়ানকে অনেকদিন ধরে ভালোবাসি, সে তো আর বাসতো না। সে তো হয়তো চিনতোও না আমাকে ঠিকমতো। এখন একদিনেই তো আর নিশ্চয়ই একজনের জন্য ভালোবাসা হয়ে যাবে না! একটু সময় লাগবে। সেই সময়টা দিতে ক্ষতি কি? রাইয়ান তো আর আমার থেকে পালিয়ে যাচ্ছে না। আমরা এখন ম্যারিড। অন্তত, আমার তো কোন সমস্যা নেই।’
জেরিন নিরস গলায় বলল, ‘কি জানি ভাই, আমি অতো বুঝি না।’
জেরিনের মুখের দিকে তাকিয়ে হৃদি স্মিত হেসে উঠলো।
চলবে,