#My_First_Crush
#পর্ব-১৭
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
ওক গাছের চূড়ায় বসে একটা নাম না জানা হলদিয়া পাখি মিষ্টি সুরে ডেকে যাচ্ছে। বাতাসের মৃদু স্পর্শে তালমাতাল হয়ে উঠেছে গাছের হলুদ সবুজ পাতা। অ্যালেন গাড়ি নিয়ে বসে আছে রাইয়ানদের অ্যাপার্টমেন্টের বিল্ডিংয়ের সামনে। দৃষ্টি প্রবেশপথের দিকে নিবদ্ধ। আরো একবার গাড়ির আয়নায় তাকিয়ে নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে নিলো অ্যালেন। গাড়ির কাঁচে ঝপ করে একটা শব্দ হলো। সেই মিষ্টি সুরেলা হলদিয়া পাখিটি তার গাড়ির কাঁচে মূত্র ফেলেছে। গাড়ি থেকে বের হয়ে এলো অ্যালেন। মুখে বিরক্তিসূচক শব্দ করলো। পেছন থেকে একটা পানির বোতল নিয়ে ঢেলে দিলো সেখানে। এমন সময় রাইয়ান এলো বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে। অ্যালেনকে সেখানে এমন অবস্থায় দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলো। পেছন থেকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুই এখানে কি করছিস?’
অ্যালেন পেছনে ঘুরে দেখলো রাইয়ান। স্মিত হেসে অ্যালেন বলল,
‘হৃদির এখন কফিশপে যাবার সময় না! তাই ভাবলাম ওঁকে নিয়েই যাই।’
রাইয়ানের চোখ কিঞ্চিৎ ছোট হয়ে এলো। অ্যালেনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সে পেছনে বিল্ডিংয়ের প্রবেশপথের দিকে তাকালো। এরপর কোন কথা না বলে নিজের গাড়িতে গিয়ে বসলো। তথাপি গাড়ি স্টার্ট দিলো না। বসেই রইলো। অ্যালেনও গিয়ে বসলো নিজ গাড়িতে। কিছুক্ষণ বাদে ব্যাগের ভেতরে কিছু নাড়তে চাড়তে হৃদি এলো বাইরে। তার দৃষ্টি ছিল ব্যাগের ভেতরেই। হঠাৎ সামনে চোখ পরতেই থমকে গেলো। রাইয়ানের কালো আর অ্যালেনের সাদা গাড়ি দুটো নির্দিষ্ট দূরত্বে মুখোমুখি করে দাঁড় করা। হৃদির ভ্র ঈষৎ কুঞ্চিত হলো। অ্যালেন মৃদু হেসে বলল, ‘হৃদি আমিও তোমার কফিশপের দিকেই যাচ্ছি। তোমাকে না আরেকটা টপিক বোঝানোর কথা ছিল? তুমি আমার গাড়িতে করে যেতে পারো।’
হৃদি জোর করে একটা ফ্যাকাসে হাসি টানলো। এমন সময় জোরে জোরে রাইয়ান গাড়ির হর্ন বাজাতে লাগলো। হৃদি বুঝতে পারলো না রাইয়ান কি বোঝাতে চাইছে৷ তাকে গাড়িতে নিয়ে যাবার কথা তো আগে বলেনি। হৃদি বিভ্রান্ত বোধ করলো। একবার তাকালো সাদা গাড়ির দিকে। একবার তাকালো কালো গাড়ির দিকে। দুজনেই পলকহীন চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। পরিস্থিতি সুবিধার ঠেকলো না হৃদির কাছে। এমন সময় একটা ক্যাব এসে দাঁড়াল দু গাড়ির সামনে। হৃদি দুজনের দিকে তাকিয়েই একটা সৌজন্যতামূলক হাসি দিয়ে হাতের ফোন দেখিয়ে ইশারা করলো। সে উবারে আগে থেকেই ক্যাব ডেকে রেখেছে। তারপর কাঁচুমাচু করে দুই গাড়ির মাঝখান দিয়ে গিয়ে ক্যাবে বসলো হৃদি। ক্যাব চলে গেলো। রাইয়ান আর অ্যালেন দুজনেই একসাথে গাড়ি থেকে নেমে এলো। ক্যাবের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার তাকালো একে অপরের দিকে।
___________________________________________________
(হৃদি)
একটা মারাত্মক ব্যাপার ঘটে গেছে। আমাকে আর রাইয়ানকে ধরে বেঁধে দাদীমা দু দিনের জন্য মিনি হানিমুনে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আচ্ছা, ব্যাপারটা একটু খোলাসা করেই বলি। এবারে উইকেন্ডের আগেই দাদীমার থেকে একটা বার্তা এলো। যেখানে আমাদের দুজনকে এবার উইকেন্ডে তার ওখানে যেতে বারণ করেছেন তিনি। নির্ধারণ করেছেন ফ্লোরিডার বিখ্যাত স্থান ‘কি ওয়েস্ট’ (Key west) এ আমাদের গন্তব্য। একটা হোটেল বুকিং করে সব বন্দোবস্ত দাদীমাই করে দিয়েছেন। যার ফলে রাইয়ান আর মানা করার কোন বাহানাই খুঁজে পায়নি। যেতে আমাদের হবেই। দাদীমার আদেশ। সেই অনুসরণেরই আমরা ছুটছি ফ্লোরিডার বিখ্যাত কি ওয়েস্টের পথে। অনিন্দ্য সুন্দরের আস্তানা। যাত্রাপথ থেকেই যার শুরু। আমরা যাচ্ছি রাইয়ানের গাড়ি দিয়ে। ফ্লোরিডার মায়ামি থেকে কি ওয়েস্ট ১৫৯ মাইলের পথ। গাড়িতে ড্রাইভ করে যেতে সময় লাগে তিন ঘন্টা। আর সবথেকে চমৎকার বিষয়টি হলো এই সবটুকু পথ সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে। মাঝখানে রাস্তা আর দুই পাশে সমুদ্র। পরিষ্কার প্রশস্ত রাস্তার দুপাশে সমুদ্রের নীল সবুজ পানির সৌন্দর্যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। আকাশটাও দারুণ নীল। দু দিকে তাকালে মনে হয় নীল আকাশটা যেন দূরে গিয়ে সমুদ্রের পানির সাথে মিশে গেছে। রাস্তার পাশে সারি সারি নারকেল গাছ। সবকিছু মিলিয়ে দারুণ একটা লং ড্রাইভ। আমার গায়ে হালকা গোলাপি রঙের স্কার্ট। আমি বসেছি রাইয়ানের পাশের সিটে। গাড়ি ড্রাইভ করছে রাইয়ান। তার গায়ে বাদামি রঙের ক্যাসুয়াল শার্ট। আমি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে মুখ বাড়িয়ে দিলাম। বাতাসে আমার চুলগুলো উড়তে লাগলো। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। দারুণ একটা অনুভূতি। রাইয়ান আমাকে বারণ করলো এভাবে মাথা বের করে রাখতে। আমি কিঞ্চিৎ ঠোঁট ফুলিয়ে সোজা হয়ে বসলাম। পরক্ষণেই জানালা দিয়ে বাইরেটা দেখতে দেখতে আবারও উপভোগ করতে লাগলাম। মাঝখানে অনেক ছোট ছোট দ্বীপের মতো শহর। সবকিছুই অনেক সুন্দর। আমি তো কি ওয়েস্ট পৌঁছাবার পূর্বেই বিমোহিত হয়ে গেলাম।
অবশেষে রাস্তায় সমুদ্রের মাঝখানে বিয়াল্লিশটা ব্রিজ পেড়িয়ে আমরা কি ওয়েস্ট নামক শহরটায় এসে পৌঁছালাম। ড্রাইভ করতে করতে রাইয়ান ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তাই হোটেলে চেক ইন করেই সে প্রথমে বিশ্রাম নিয়ে নিল। আমি চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শুধু হোটেলটা দেখতে লাগলাম। হোটেলটা বীচের কাছেই। বারান্দা থেকে বীচের ভিউ উপভোগ করা যায়। হোটেলের রুমটা অনেক পরিপাটি, গোছানো। বিছানার চাদর থেকে শুরু করে জানালার পর্দা সবকিছুই একদম ধবধবে সাদা। সাথে অনেক এক্সপেন্সিভ। দাদীমার মাথায় হঠাৎ এতো টাকা খরচের চিন্তা কেন এলো কে জানে! বিশ্রাম নিয়ে, ফ্রেশ হয়ে আমরা বেরোলাম বিকেলের দিকে। বীচের কাছে আসতেই দেখলাম অনেক পর্যটক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার মধ্যে কিছু সাদা চামড়ার ইংরেজ মেয়েদের দেখলাম ছোট ছোট পোশাক পরে শুয়ে শুয়ে রোদ পোহাচ্ছে। আমার চোখ কুঁচকে গেলো। রাইয়ানের চোখ সেদিকে পরার আগেই আমি তাড়াতাড়ি তাকে নিয়ে অন্য সাইডে চলে গেলাম। এদিকটায় লোকজনের সংখ্যাও একটু কম। বীচে দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো। বালুর উপর আমাদের পায়ে এসে ছুঁয়ে গেলো নীল সমুদ্রের ঢেউ। আসলে, মনটাই ছুঁয়ে গেলো একদম। আমি রাইয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ‘রাইয়ান, চলো তোমার কয়েকটা ছবি তুলে দেই।’
রাইয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকালো আমার দিকে। আমি হেসে বললাম, ‘চিন্তা করো না। আজকে একটাও দুষ্টমি করবো না। সব তোমার ছবিই তুলবো। এই বলে ফোন নিয়ে ঝটপট সমুদ্রের সাথে রাইয়ানের কয়েকটা ছবি তুলে দিলাম। তুললাম প্রকৃতিরও। রাইয়ান ছবিগুলো দেখে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ দিয়ে ইশারা করে বলল ‘নট বেড।’
আমিও নাটকীয় ভঙ্গিতে তার প্রশংসা গ্রহণ করলাম। সবশেষে চুপচাপ দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখতে লাগলাম আমি।
আমার বাম পাশে দাঁড়ানো রাইয়ান। তার দৃষ্টি অনতিদূরে সমুদ্রে নামা কিছু পর্যটকদের উপর। রাইয়ান ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘এই অসময়ে কিভাবে এই ঠান্ডা পানিতে নেমে আছে? আমি তো এখন নামবোই না একদম।’
আমি পর্যটক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাইয়ানের দিকে তাকালাম। চোখে মুখে দুষ্ট হাসি খেলা করতে লাগলো আমার। রাইয়ানের কথা শেষ হতেই নিঃশব্দে তার পেছনে চলে গেলাম আমি। ঠোঁটে হাসি চেপে হাত দিয়ে তাকে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম সমুদ্রের পানিতে। পানিতে পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়েও আধো ভিজে গেলো সে। হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি মুখে হাত দিয়ে অট্টহাসিতে ভেঙে পড়লাম। রাইয়ান দাঁত চেপে মাথা নেড়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই হঠাৎ দৌড়াতে শুরু করলো। তার থেকে বাঁচতে সমুদ্রের পানি ধরে ছুট লাগালাম আমিও। শেষ রক্ষা আর হলো না। আমাকে পেছনে থেকে ধরে ফেললো সে। আমার কোমরে হাত দিয়ে মাটি থেকে তুলে ফেলে চারদিকে ঘোরাতে শুরু করলো। সেই অবস্থায় হাসতে হাসতে দুজনেই একসময় ধপাস করে পরে গেলাম সমুদ্রের পানিতে। আর একদম জবজবে হয়ে ভিজে গেলাম আমি আর সে।
সন্ধ্যার পর পুনরায় ড্রেস চেঞ্জ করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম কি ওয়েস্টের নামকরা ডুভাল স্ট্রিট (Duval street) এ। রাতে হাঁটার জন্য একটি বেস্ট প্লেস। এটি কি ওয়েস্ট এর একটি ডাউন টাউন এরিয়া৷ যাকে কি ওয়েস্ট এর নাইটলাইফ ক্যাপিটালও বলা যায়। অনেক মানুষের আনাগোনা। এখানে অনেক অনেক বার এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে। প্রত্যেকটি রেস্টুরেন্টের সামনেই রয়েছে মানুষের সমাগম। রং বেরঙের লাইটের আলোয় রাস্তা ঝকমক করছে। হেঁটে হেঁটে রাতের ডুভাল স্ট্রিট দেখতে লাগলাম আমরা। আমি অনেকগুলো ছবি তুলে নিলাম। পুরোটা সময় জুড়েই আমি ছিলাম এক্সাইটেড। আর রাইয়ান পাশে থেকে আমার বকবক শুনতে লাগলো। কি ওয়েস্টে এর আগে কখনো আশা হয়নি আমার। তাই আসার আগে এখানকার সবকিছু নিয়েই খুব ভালোভাবে রিসার্চ করে এসেছি আমি। যাতে কোন বিখ্যাত স্থান আর একটিভিটি কিছুই বাদ না পড়ে। সেখান থেকেই জানতে পেরেছি এখানকার বিখ্যাত ‘কি লাইম পাই’ এর কথা। দেখতে অনেকটা পেস্ট্রির মতোই। কিন্তু খুবই স্পেশাল। যেটা ট্রাই করার জন্য একেবারে মুখিয়ে ছিলাম আমি। একেবারেই আমি দুটো খেয়ে খেলাম। খুবই টেস্টি। রাইয়ান খেলো একটা। রাতের খাবারটাও আমরা সেখানকার একটা রেস্টুরেন্ট থেকেই খেয়ে নিলাম। পেট ভরে সেখানকার বিখ্যাত বিখ্যাত খাবারগুলো দিয়ে সেড়ে নিলাম ডিনার।
___________________________________________________
(রাইয়ান)
কি ওয়েস্ট এর ডুভাল স্ট্রিটে ঘোরাঘুরির পর ডিনার সেড়ে হোটেলে চলে এলাম আমরা। ম্যানেজারের সাথে কিছু ব্যাপার নিয়ে আলোচনার জন্য আমি থেকে গেলাম রিসিপশনিস্টের ওখানেই। হৃদি চলে গেলো রুমে। খানিকবাদে কথা শেষে আমি রুমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। কার্ড স্ক্যান করে দরজা খুলতেই অন্ধকার রুমে দরজার পাশ থেকে জোরে একটা ‘ভো’ আওয়াজ এলো। আমি পাশে তাকাতেই বাইরে থেকে আসা আবছা আলোয় দেখলাম হৃদি। কিশোরীদের মতো খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে। বাচ্চাদের মতো আমাকে ভয় দেখাবার প্রয়াস ছিল তার। আমার মুখ আটকে না রাখতে পারার মতো হাসিতে প্রশস্ত হয়ে গেলো। কাঁধে হাত উঠিয়ে ওর গলা পেঁচিয়ে ধরে মাথায় একটা টোকা দিলাম ওঁকে। সবসময় এমন কিছু করবে মন না হেসে পারবে না। হাসি মজা শেষ হলে আমি এবার রুমের লাইট অন করার জন্য সুইচ টিপলাম। সঙ্গে সঙ্গে রুম আলোকিত হয়ে এবার সত্যি সত্যিই চমকে যাবার মতো ব্যাপার হলো। কারণ আমাদের পুরো রুম হানিমুন স্যুটের মতো করে সাজানো। মোমবাতি, ফুল, আর সেই চাদর দিয়ে বানানো দুটো রাজহাঁস। সবই আছে। হৃদিকে দেখে যা বুঝলাম সেও এগুলো দেখে অবাক হয়েছে। তার মানে সেও এই প্রথম দেখলো। এর আগে আর লাইট অন করেনি। আমি আর হৃদি দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। ইতস্তত ভঙ্গিতে একে অপরের দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ায় দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম দুজনেই। আমার দাদীমাকে আমি খুব ভালো করেই চিনি। ম্যানেজারকে দিয়ে তিনিই যে এই কাজ করিয়েছেন তা বুঝতে অসুবিধা হলো না আমার। হৃদির সামনে সেই অপ্রীতিকর মুহুর্ত থেকে বাঁচতেই আমি থেমে থেমে বললাম, ‘আমি শাওয়ার নিয়ে আসি। সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরেছি।’
হৃদিও একটা ফ্যাকাসে হাসি দিয়ে কোনমতে মাথা নাড়ালো। আমি তাড়াতাড়ি একটা তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। শাওয়ার নিয়ে একটা অ্যাশ কালারের টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে দেখলাম হৃদি বিছানা থেকে সব পরিষ্কার করে ফেলেছে। মোমবাতিগুলোও সরিয়ে ফেলেছে সে। আমি বিছানার ওপাশে যেতে চাইলে হৃদি সরার জন্য এপাশে আসতে চাইলো। পড়ে গেলাম দুজনে মুখোমুখি। আবারো সরতে চাইলে দুজনে একই পাশে যাওয়ায় আবারো মুখোমুখি হলাম। বেশ কয়েকবার এমনই হওয়ায় এবার একপাশে দাঁড়িয়েই পড়লো হৃদি। আমি আস্তে করে অপরপাশে চলে গেলাম। হৃদি ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। খানিকবাদে বের হয়ে এলো নীল রঙের নাইট পাজামা পরে। এবার দুজনে টের পেলাম আরেকটি বিষয়। রুমে সোফা তো আছে কিন্তু তা এতো ছোট যে নেহাৎ বাচ্চা না হলে কারো পক্ষে সেখানে শোয়া সম্ভব নয়। হৃদি অপ্রস্তুত হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমিও হৃদির দিকে তাকালাম। সময় নিয়ে কাঁচুমাচু করে বললাম,
‘হৃদি, এই বিছানাটা অনেক বড়। তুমি এখানে ঘুমাতে পারো।’
হৃদির চোখেমুখে ঈষৎ খেলে গেলো। আস্তে করে মাথা নেড়ে বিছানার অপর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো সে। আমরা দুজনেই বিছানার দুপাশ দিয়ে বসলাম। চাদর টেনে ইতস্ততার সাথে দুজনে দুই দিকে মুখ করে বিছানার দু প্রান্তে শুয়ে পড়লাম। লাইট বন্ধ করে দিলাম আমি। অপ্রস্তুত হবার মাত্রাটা এবার যেন আরো বেড়ে গেলো। শীত লাগছিল। এদিকে চাদরে না হওয়ায় আরো একটু কাছাকাছি চেপে আসতো হলো দুজনকে। চোখে নেই ঘুম। এই প্রথম কোন মেয়ের এতো কাছাকাছি শুয়ে আছি। কেমন যেন লাগছিল! ইতস্তত লাগছিল, আবার লজ্জা লজ্জাও করছিল। ভেতরে ভেতরে কাঁচুমাচু করতে লাগলাম দুজনে। এই অদ্ভুত সব অনুভূতিগুলোর সাথে ডিল করতে করতেই কখন যেন চোখ লেগে গেলো আমার। খুব ভালো একটা ঘুম হলো। ঘুমের ঘোরেই খুব শান্তি লাগছিল। এই ঠান্ডা ঠান্ডা সকালে হালকা উষ্ণতাবোধের সাথে চোখ যেন মেলতেই ইচ্ছে করছিল না আর। কিন্তু হঠাৎ ই মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে উঠলো আমার। এক ধাপেই পূর্ণ চোখ মেলে দেখলাম হৃদি সদ্য জেগে মাথা ঘুরিয়ে অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনের দৃষ্টির দূরত্ব মাত্র কয়েক ইঞ্চি। নড়তে চাইলেও সে নড়তে পারছে না কারণ আমার পা তার উপরে তুলে দেওয়া আর হাতও। হাত পা দিয়ে তাকে একদম শক্ত করে জাপটে ধরে শুয়ে আছি আমি। নিজের কান্ডে আমি নিজেই হতভম্ব। এই দৃশ্য উপলব্ধির এক সেকেন্ডের মধ্যেই চরম চমকে উঠে ছিটকে সরতে যেতেই একদম বিছানা ছেড়েই পড়ে গেলাম আমি। হৃদির সেই প্রথমদিককার হুটহাট ছিটকে পড়ার ভূতই চাপলো বোধহয় আমার মাথায়। কারণ পড়ে গিয়ে পেছনের কবাটের সাথে আমিও মাথায় বারি খেলাম। আর হৃদি বিছানার উপর থেকে ঝুঁকে সেই অবিকল আমার মতোই বিভ্রান্ত মুখে প্রশ্ন করলো,
‘তুমি কি ঠিক আছো?’
চলবে,