#My_First_Crush
#পর্ব-১০
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
অফিসের সবাই রাইয়ানের উদ্দেশ্য হাত তালি দিয়ে উঠলো। কোম্পানির প্রধান এগিয়ে এসে রাইয়ানের কাঁধে হাত রেখে বললেন,
‘অসাধারণ! রাইয়ান তুমি আজকে একটা অসম্ভব কাজ করেছো। আমরা সবাই তো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এই প্রজেক্টটা আমরা বোধহয় পাবো না। কিন্তু তুমি যেভাবে দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি সামলে ফেললে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ইনভেস্টররা সবাই তোমার কথায় ইমপ্রেসড হয়েই তো ডিল ফাইনালাইজড করলো। কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররাও পুরো শান্ত হয়ে গেছে। আজকের ক্রেডিট সব তোমার।’
রাইয়ান স্মিত হেসে তার বসকে বলল,
‘থ্যাংক ইউ স্যার। এটা আমার ডিউটি।’
‘না না এটার একটা সেলিব্রেশন করা দরকার।’
তারপর তিনি সবার উদ্দেশ্য বললেন,
‘কেমন হয় আগামীকাল রাতে কোম্পানির পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য একটা সেলিব্রেশন পার্টির আয়োজন করা হবে। ইনজয়!’
কোম্পানির সকল স্টাফ একসাথে শব্দ করে নিজেদের উল্লাস প্রকাশ করলেন। বস সরে যেতেই রাইয়ানের এক কলিগ বেন্থা রাইয়ানের কাঁধে হাত উঠিয়ে দিয়ে বলল, ‘ব্রো, তুমি তো পুরো ফাটিয়ে দিয়েছো। বস কতো খুশি হয়েছে দেখেছো? আমরা প্রমোশনের পেছনে লাগি, আর প্রমোশন হলো উল্টো তোমার পেছনে লাগে। চালিয়ে যাও বস।’
বেন্থার কথায় রাইয়ান মৃদু হাসলো। বেন্থা বলল,
‘কালকের পার্টির জন্য কি প্লান? তুমিই তো পার্টির মধ্যমণি।’
রাইয়ান বলল, ‘বিশেষ কিছুই না। এটা আমার জন্য জাস্ট আরেকটা পার্টি। তুমি তো জানোই আমি এসব বিজনেস পার্টিতে তেমন একটা ইন্টারেস্টেড না। এটেন্ড করতে হয় তাই করি।’
পরদিন সকাল, হৃদি দরজার সামনে বসে বসে মিঁয়োকে আদর করতে লাগলো। মিঁয়োর গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে বোঝানোর গলায় বলল, ‘আমি বাইরে গেলে বেশি দুষ্টুমি করবে না মিঁয়ো। একদম শান্ত হয়ে থাকবে। সোফার উপর ছোটাছুটি করবে না। আর কিচেনে কিন্তু একদমই ঢুকবে না বুঝেছো?’
এমন সময় রাইয়ান এসে হৃদির মাথায় হাত রেখে হৃদির মতো করেই বলল, ‘তুমিও একটু শান্তভাবে থেকো বিগ মিঁয়ো। আবার কোন গাছের উপর উঠে পড়ো না।’
হৃদি ভ্রু সংকুচিত করে মাথার উপরে রাইয়ানের দিকে তাকালো। স্মিত হেসে বাইরে যেতে উদ্যত হলো রাইয়ান। হৃদি ডেকে বলল, ‘রাইয়ান, তুমি কি এখন তোমার অফিসে যাবে?’
রাইয়ান বলল, ‘হুম।’
‘আমিও এখন কফিশপে যাবো। আমাকে একটু নামিয়ে দিতে পারবে?’
মাথা নেড়ে সায় দিলো রাইয়ান। হৃদি খুশি হয়ে গেলো। বলল, ‘আমি ব্যাগ নিয়ে আসি।’
সোফার উপর থেকে ব্যাগ আনতে গেলো হৃদি। ব্যাগটা তুলতে গিয়ে একটু পাশে চোখ পড়তেই দেখলো সেখানে একটা পার্টির ইনভিটেশন কার্ড। যেখানে স্পাউস সহ রাইয়ানকে ইনভাইট করা হয়েছে। হৃদি কার্ডটা হাতে নিয়ে নাড়তে চাড়তে বলল,
‘এটা….’
রাইয়ান দেখে এগিয়ে আসলো। বলল, ‘আমাদের কোম্পানি থেকে দিয়েছে। আজকে রাতেই। আমি ম্যারিড শুনে স্পাউস সহ দিয়েছে। তুমি…..কি যেতে চাও?’
এভাবে হুট করে হৃদির সম্মতি জিজ্ঞেস করায় হৃদি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। রাইয়ানের কোম্পানি থেকে পার্টি! হৃদি আমতা আমতা করতে লাগলো। সে ভালো মন্দ কিছু বলতে যাবে তার আগে রাইয়ানই বলে দিলো,
‘আমার মনে হয় না গেলেও চলবে। বিজনেস পার্টি, সব বিজনেস রিলেটেড লোক। তুমি বোর হয়ে যাবে।’
হৃদিও মাথা নাড়তে নাড়তে সায় মিলাতে বলল, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ।’
রাইয়ান বাইরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ কার্ডটির দিকে তাকিয়ে রইলো হৃদি। তারপর কার্ডটি ব্যাগে ভরে রাইয়ানের পেছন পেছন গেলো।
___________________________________________________
অনেকক্ষণ ধরে বসে বসে কার্ডাটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি আরো একবার দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। কোনটা ঠিক হতো না হতো এসব ভাবতে ভাবতে মাথায় মধ্যে ভাবনার একশো একটা প্যাচ সৃষ্টি করে ফেললাম আমি। রাইয়ান যখন আমাকে জিজ্ঞেস করলো ‘আমি যেতে চাই কিনা?’ তখন আমার আসলে কি বলা উচিত ছিলো? আর আমি কিছু বলতেই বা পারলাম না কেন? ছাগলের মতো শুধু অ্যাঁ অ্যাঁ করছিলাম। না জানি রাইয়ান কি ভাবলো! আমার এরকম ভাব দেখেই কি সে মানা করে দিলো? নিজের বোকা সুলভ ভঙ্গিমার কথা মনে পড়তেই আমি টেবিলের উপর দু হাত টান করে মাথা গুঁজে ফেললাম। পেছন থেকে জেরিন এসে আমার হাত থেকে কার্ডটা টান দিয়ে নিয়ে গেলো। আমি সাথে সাথে মাথা তুলে তাকালাম। জেরিন বলল,
‘এটা কি?’
আমি মিনমিন করে তারপর ওঁকে সব কিছু খুলে বললাম। সব শুনে জেরিন কিছুটা শাসনের সুরে বলল,
‘রাইয়ান তোকে জিজ্ঞেস করলো আর তুই কিছুই বললি না!’
‘আমার কি হ্যাঁ বলা উচিত ছিলো?’
‘অবশ্যই। স্পাউস সহ যখন ইনভাইট করেছে তখন তুই যাবি না কেন? আর রাইয়ানই বা না করে দিলো কেন? যাক গে, তুই পার্টিতে যাবি। আরে এটাই তো সুযোগ আরো একটু দুজন দুজনের সাথে মেলামেশার। তবেই তো তুই রাইয়ানের পৃথিবীর সাথে এডজাস্ট হতে পারবি।’
জেরিনের কথা শুনে আমারও মনে হলো আমার আসলেই পার্টিতে যাওয়া উচিত। আর অন্য কিছুর জন্য না হলেও রাইয়ানের জন্য।
পার্টিতে যাবার সিদ্ধান্ত তো নিয়ে নিলাম, কিন্তু পার্টিতে যাবো টা কিভাবে সেটাই সবথেকে দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে গেলো। জেরিন আমাকে নিয়ে একটা শপিংমলে চলে এলো। একটা ছোটোখাটো ড্রেস ধরিয়ে দিয়ে বলল পরে আসতে। আমি বললাম,
‘নতুন ড্রেস কেনার দরকার কি? আমার যেগুলো আছে সেগুলো দিয়েই তো চালানো যায়।’
জেরিন মুখ নিরস করে বলল,
‘তোর ড্রেস!’
তারপর আমার গায়ের দিয়ে ইশারা করে বলল,
‘এগুলো পরে যাবি এতো বড় পার্টিতে? আচ্ছা, তুই সবসময় এমন ঢিলাঢালা পোশাক পরোস কেন? ঢিলাঢালা জামা, প্যান্ট আর এক জোড়া স্নেকার্স, এই তো তোর গেটআপ! স্টাইলের ‘এস’ ও জানোস না তুই।’
‘কিন্তু এই ড্রেসটা তো অনেক ছোট।’
‘এরকম হাই ক্লাস পার্টিতে না এরকম ড্রেসই চলে।’
এই বলে জেরিন আমাকে ঠেলে ড্রেসিং রুমে পাঠিয়ে দিলো। আমি ড্রেসটি পরে অস্বস্তির সাথে বের হলাম। জেরিন বলল, ‘বাহ! ভালোই তো মানিয়েছে তোকে।’
আমি কাঁচুমাচু করতে লাগলাম। হাঁটুর দিকে জামা টানতে টানতে বললাম, ‘এটা আমি পরবো না। এটা অনেক ছোট।’
জেরিন আমাকে আরেকটা ড্রেস ধরিয়ে ভেতরে পাঠালো। এবারো আমি বের হয় খুঁত খুত করতে লাগলাম। এমন করে করে বেশ কয়েকটা ড্রেস টাই করা হয়ে গেলো আমার। যা বুঝলাম জেরিনের হাত থেকে আজ আর নিস্তার নেই আমার। শেষমেশ ওর জোরাজুরি আর আমার আপত্তির প্যাঁচফিরে একটা ড্রেস সিলেক্ট হলো। আমি ড্রেসটি পরে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। কালো রঙের একটি সুন্দর ফ্রক। সিম্পল ডিজাইন। লম্বায় হাঁটুর খানিক নিচ অব্দি। কিন্তু সমস্যা হলো হাতা কাটা। আমি উসখুশ করতে লাগলাম। জেরিন বলল,
‘এবার আর না করতে পারবি না। আমি আর চেঞ্জ করতে দিবো না। এটাই ফাইনাল।’
এরপর জেরিন আমাকে ওর বাসায় নিয়ে গেলো। আয়নার সামনে আমাকে বসিয়ে বের করলো ওর মেকআপ ব্যাগ। মেকআপ আর তুলির ঝাড়ায় আমি হাঁচির পর হাঁচি দিতে লাগলাম। হেয়ার স্ট্রেইট মেশিন দিয়ে জেরিন আমার সোজা চুলগুলো নিচের দিকে হালকা কার্লি করে দিলো। সেগুলো দু পাশে সামনে দিয়ে দিলো। এরপর মানানসই হালকা মেকআপ, লিপস্টিক আর চোখের নিচে হালকা কাজল লাগালো। প্রস্তুতির সব পর্ব শেষ হয়ে গেলে আমাকে একটা বড় আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে মুগ্ধ গলায় বলল,
‘বাহ, তোকে তো আজ দারুণ লাগছে রে হৃদি। রাইয়ান আজকে ইমপ্রেসড না হয়ে যেতেই পারবে না।’
আমি আয়নার দিকে ভালোভাবে তাকালাম। সত্যি বলতে দেখতে ভালোই লাগছে কিন্তু তবুও আমি কোমরে হাত রেখে খুঁত খুত করে বললাম,
‘ড্রেসটা একটু বেশিই টাইট জেরিন।’
জেরিন বলল, ‘এটাকে টাইট বলে না, ফিট বলে।’
এরপর জেরিন আমার সামনে ওর এক জোড়া উঁচু হাই হিল রাখলো। আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
‘এটাও পরতে হবে?’
‘তাহলে কি তুই এই ড্রেসের সাথে তোর স্নেকার্স পরার কথা ভাবছিস?’
‘এতো উঁচু পেনসিল হিল পরে আমি হাঁটবো কিভাবে?’
‘আরে হয়ে যাবে, টেনশন নিস না।’
জেরিনের হাতে পুরো রেডি হয়ে আমি পার্টির উদ্দেশ্য বের হলাম। হাই হিল পায়ে সাবধানে ক্যাব থেকে নেমে আস্তে আস্তে গেটের দিকে আগাতে লাগলাম আমি। হাতের সুন্দর কারুকার্য খচিত পার্স থেকে একটা ছোট আয়না বের করে আরেকবারের মতো দেখে নিলাম নিজেকে। তারপর জোরে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে রিল্যাক্স ফিল করালাম। কনফিডেন্সের সাথে গেটে থাকা গার্ডদেরকে ইনভিটেশন কার্ড দেখিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। একটা বড় ফাইভ স্টার হোটেলে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। ভেতরে গিয়ে দেখলাম সব বড় বড় নামীদামী গোছের লোক। মেয়েগুলোও এত স্টাইলিশ আর সুন্দর। দেখতেই কত কুল লাগছে! খানিক মুহুর্তের জন্য ঘাবড়ে গেলাম কিছুটা। তারপর আবারো জোরে শ্বাস টেনে স্বাভাবিক হয়ে হাসিমুখে এগিয়ে গেলাম। এমন সময় রাইয়ানকেও দেখতে পেলাম সেখানে। তিন চারটে লোকের সাথে স্মিত হাসির সাথে আলাপ করে যাচ্ছে। সাদা স্যুট পরনে দারুণ লাগছে তাকে। সেই মুহুর্তে রাইয়ানের সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে গেলো। রাইয়ান কিঞ্চিৎ অবাক চোখে তাকালো আমার দিকে। পাশের লোকটি ডাক দেওয়ায় আবারো তাকে হাসিমুখ করে ফেলতে হলো। তাদের কথার মাঝে রেখে বেচারা আসতেও পারছে না। আমি ঠোঁট টিপে হেসে সেখানে দাঁড়ানো কিছু মেয়েদের সাথে কথা বলতে লাগলাম। এমন সময় একজন ওয়েটার এসে আমাকে গ্লাসে সাজানো বিয়ার সাধলো। আমি তাড়াতাড়ি মানা করে দিলাম। সে এগুলো আমার পাশ থেকে নিয়ে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম আমি। কি সাংঘাতিক জিনিস! এর একটুপর একজন স্যুট প্যান্ট পড়া লোক এসে আমাকে ডাকলো,
‘বিউটিফুল লেডি!’
আমি পাশে তাকাতেই সে আমাকে ডান্সের জন্য অফার করলো। আমিও প্রত্যাখান করে দিলাম। সে চলে গেলে মনে মনে বললাম, ‘আমি ডান্স করবো আমার হাসবেন্ডের সাথে। তোমার সাথে কেন করবো? হুহ!’
মনে হচ্ছে রাইয়ান দূর থেকে শুধু আমার দিকেই নজর রাখছে। এই সব বিষয়ও দেখলো সে। সেই লোকগুলোর কথা শেষ হলে সে আবারো আমার দিকে আসতে নিলো। কিন্তু মাঝপথে তার বস এসে একজন ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে আবারো তাকে আটকে ফেললো। আমি আবারো মৃদু হাসলাম। ব্যাপারটা বেশ মজারই লাগছে আমার কাছে। প্রথমত এখানে এসে আমি তাকে অবাক করে দিলাম। আবার সে তার কৌতূহল মেটানোরও সুযোগ পাচ্ছে না। ব্যাপারটাকে চলতে দিয়ে আমিও সেখান থেকে সরে ঘুরে ঘুরে আলাপ করতে লাগলাম। যতটা অস্বস্তিকর লাগবে বলে মনে হয়েছিল আমার মতো মিশুক মেয়ের কাছে এদের সাথে কমিউনেট করাটা অতোটাও কঠিন বলে মনে হলো না। শুধু হাঁটতেই আমার একটু সমস্যা লাগছে। পা ব্যাথা হয়ে আসছে। এমন সময় স্টেজে উঠে রাইয়ানের বস কিছু বলার জন্য সবাইকে এটেনশন দিতে বলল। সবাই স্টেজের কাছাকাছি যেতে লাগলো। সেই উদ্দেশ্যে আমিও কাছে যাবার জন্য খানিক এগোতেই হঠাৎ হাই হিল বাঁকা হয়ে গিয়ে পার্টির মাঝখানে পাশের টেবিল নিয়ে লজ্জাজনক ভাবে পরে গেলাম। মুখ থেকে মৃদু চিৎকারও বের হয়ে গেলো আমার। পার্টির মধ্যে এতো এতো মানুষ! সবার নজর আমার দিকে চলে এলো। রাইয়ান তাড়াতাড়ি চলে এলো আমার কাছে। আমাকে ধরে বলল,
‘তুমি ঠিক আছো?’
কেউ কেউ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে আবার কিছু কিছু মেয়েরা মুখ টিপে হাসতে লাগলো। রাইয়ানের এক কলিগ আস্তে করে বলে উঠলো,
‘ইনি না রাইয়ানের স্ত্রী।’
লজ্জায় আমার মুখ পাথর হয়ে গেলো। মাথার মধ্যে থেকে ঝাঁজ বের হতে লাগলো যেন। রাইয়ান আমাকে ধরে উঠালো। গা থেকে নিজের ব্লেজারটা খুলে আমাকে পরিয়ে দিলো। এরপর আমাকে নিয়ে এলো বাইরে। সারা রাস্তা গাড়িতে আমরা দুজন কেউ আর কোন কথা বললাম না। রাইয়ান একমনে ড্রাইভ করে গেলো, আর আমি তাকিয়ে রইলাম বাইরে। বাসার মধ্যে ঢুকে ভাবলেশহীন অবস্থায় এগিয়ে যেতেই আবারো কার্পেটের সাথে পা বেজে হালকা হোঁচটের মতো খেলাম আমি। রাইয়ান দাঁড়িয়ে ছিল দরজার ওখানেই। সেখান থেকেই মৃদু জোরে বলে উঠলো,
‘হৃদি আস্তে।’
এগিয়ে আসতে আসতে আমার পায়ের দিকে খেয়াল রেখে বলল, ‘কি যে কর।’
নিজের প্রতি নিজের ক্ষোভে আর লজ্জায় আমি পুরো জর্জরিত হয়ে ছিলাম। কিছু একটা চেপে ছিল বুকের ভেতর। যেটা খুব করে বের হয়ে আসতে চাইলো। আমি অফিসের সবার সামনে রাইয়ানের নাক কেটে ফেলেছি।
আমার মনে হচ্ছিল রাইয়ান আমাকে নিয়ে লজ্জিত বোধ করছে তবুও রাইয়ান আমাকে কিছু বলছে না এই ব্যাপারটা যেন আমার মধ্যে চাপা সেই অদ্ভুত অনুভূতিটাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছিল। যার দরুনই আমি রাইয়ানকে শক্ত মুখে বলে উঠলাম,
‘ইট’স ওকে রাইয়ান। তুমি আমাকে কথা শোনাতে পারো। আমি আজ তোমাকে এমবারেসড করেছি।’
কথা বলতে বলতে আমার চোখ ফেটে পানি বের হয়ে আসতে চাইলো। রাইয়ান বলল,
‘আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি?’
‘তাহলে বলছো না কেন? তুমি নিশ্চয়ই ভাবছো তোমার ওয়াইফ কতোটা ইউসলেস। সামান্য বিজনেস পার্টিও ঠিকভাবে এটেন্ড করতে পারে না। তোমাকে এমবারেসড করে।’
‘হৃদি আমি এমন কিছুই ভাবছি না। তুমিই নিজে নিজে একেকটা অনুমান করে নিচ্ছো।’
আমি অভিমানী সুরে গলার জোর বাড়িয়ে বললাম,
‘তুমি এমনটাই ভাবছো। এর জন্যই সকালে তুমি আমাকে ঠিকমতো কিছু ভাবার সুযোগ না দিয়েই নিজ থেকে না করে দিয়েছো। কারণ তুমি আমাকে এমনটাই ভেবেছিলে। তুমি আমাকে নিয়ে এমবারেসড ফিল করো। একারণেই তুমি আমাকে নিয়ে পার্টিতে যেতে চাওনি।’
রাইয়ান এবার রুক্ষ হয়ে উঠলো। আঙ্গুল উঠিয়ে বলল,
‘এই, এবার কিন্তু তুমি বেশি বেশি বলে ফেলছো। আমি ‘না’ তোমার জন্য করেছিলাম। আমি চাইনি ওখানে অপরিচিত মানুষদের মধ্যে গিয়ে তোমার কোন ধরণের অস্বস্তি বোধ হোক। কোন রকম খারাপ লাগুক। তোমার কথা ভেবেই আমি বলেছিলাম হৃদি।’
আমি গা থেকে রাইয়ানের ব্লেজার খুলে ওর দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে অভিমানী স্বরে বললাম,
‘থাক, আর কিছু বলতে হবে না তোমাকে।’
রাইয়ানের হাতে ব্লেজার ধরিয়ে দিয়ে ধপধপ পা ফেলে দ্রুত চলে যেতে লাগলাম। রাইয়ান পেছন থেকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো,
‘হৃদি, হৃদি!’
আমি পেছনে ফিরে অশ্রু ভরা চোখে তাকিয়ে কাতর স্বরে বললাম,
‘তুমি আমাকে একটুও বোঝো না রাইয়ান।’
রাইয়ান অস্ফুট স্বরে আবারো ডাকতে গেলো, ‘হৃদ…..
কিন্তু তার আগেই পাশের আরেকটা রুমে গিয়ে আমি দরজা বন্ধ করে ফেললাম। এই রুমগুলো এখনো ঠিকভাবে সাজানো হয়নি। কোন বেড নেই। শুধু একটা ডিভান রাখা। আমি সেখানেই বসে পরে হাঁটুতে ক্লান্ত ভঙ্গিতে আমার অশ্রু মাখা মুখটি গুঁজলাম। প্রায় অনেকক্ষণ পর অনলাইন থেকে খাবার অর্ডার করে আমাকে ডাকতে এলো রাইয়ান। পার্টি থেকে তো কিছুই খেয়ে আসিনি আমরা। রাইয়ানের ডাকার উত্তরে আমি কিছুই বললাম না। চুপ করে রইলাম। দরজার খটখটানি বাড়তেই থাকলে মাথা তুলে বিরক্তি স্বরে বললাম, ‘আমি খাবো না রাইয়ান, তুমি চলে যাও।’
খানিকপর নিজে খেয়ে এসে আমাকে আবারো খাওয়ার জন্য ডাকতে লাগলো রাইয়ান। আমি আর কিছুই বললাম না। একসময় কাঁদতে কাঁদতে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধলো মাঝরাতে।
চলবে,