October Darkness পর্ব তিন

0
1890

October Darkness
পর্ব তিন
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

🍁

দুপুরের খাবার সেরে আয়রা নিজের ঘরে এসে শুয়ে ছিলো যেহেতু সিম কার্ড নেয় তাই নেট ও নেয়,এমনিতে শুয়ে গান শুনছিলো..মিলি দৌড়ে তার কাছে আসে।।

“আপু এক জায়গা যাবা??” দৌড়ে আসার কারনে মিলি হাপিয়ে হাপিয়ে বলছে কথাগুলো।।

আয়রা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে মিলির দিকে,কে বলবে এই মেয়ে ঘুমের ফেস দিয়ে দুপুরে খেতে বসেছিলো।।

“কোথায়??” আয়রা শ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করলো।।

“এখানে একটা পার্ক আছে,একদম নিরিবিলি তোমার পছন্দমতো” মিলি বেডে চিত হয়ে শুয়ে বললো।।

“নানী রাজি হবে?” আয়রা বললো।।

“আই উইল ম্যানেজ,ইউ গো এন্ড গেট রেডি ফর বিউটিফুল ভাইব” মিলি উঠে বললো।।

“ওকে” আয়রার উত্তর,মিলি চলে গেলো।।

আয়রা বুঝতে পারছে না অচেনা শহরে কিভাবে তাল মিলিয়ে চলবে,সবকিছুই যে তার কাছে নতুন..লেগিন্সের সাথে হালকা হাটু অব্দি নেভিব্লু টপ,উপরে জ্যাকেট সাথে স্কার্ফ পেচানো..যে ওয়েদার এখানে এইসব না পরলে তার ফেভার হয়ে যাবে নির্ঘাত,আর স্লিপার পরে জুতা সিস্টেম,অপেক্ষা করতে লাগলো মিলি কখন আসবে..আয়রা ঘড়ি দেখলো বিকাল সাড়ে ৫টা বাজছে।।

“আপু চলো” মিলি ঘরে এসে দ্রুতভাবে তাড়া দিলো।।

“বাসায় কি এক্সকিউজ দিয়েছিস?” আয়রা জিজ্ঞেস করছে।।

“বাসায় কেও থাকলে ত এক্সকিউজ দিব?” মিলি হেসে বললো।।

“কেন?কই গেলো সবাই?” আয়রা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।।

“বাবার ফ্রেন্ডের আজকে বিবাহবার্ষিকী সেখানে গেছে,দাদীও গেছে!!উফফ,এইবার চলো দেরী হয়ে যাচ্ছে” মিলি আয়রার হাত ধরে টানতে টানতে বললো।।

“কিন্তু এইভাবে কাওকে না জানিয়ে যাওয়াটা কি ঠিক?”সিড়ি থেকে আয়রা নামতে নামতে বললো।।

” আরে প্রশ্নের আম্মা!!আমি জানিয়ে দিয়েছি বাবাকে?সো বি কুল!!”মিলি নাক মুখ উল্টে বললো।।

আয়রা আর প্রশ্ন করলো না,মিলির সাথে বেরিয়ে গেলো..যেহেতু পাশেই নাকি পার্ক মিলির ভাষ্যমতে, হেটে যাচ্ছে তারা..আবহাওয়া কি শীতল,ঠান্ডা বাতাস ছুয়ে দিচ্ছে জ্যাকেটের ভিতর দিয়েও..মিলি এটা সেটা নানান কথা বলছে,তার পরনে জিন্স আর টিশার্ট এর উপর জ্যাকেট.. অবশ্য কলেজ পড়ুয়া মেয়ে হিসেবে এখানকার পরিবেশের সাথে যথেষ্ট মার্জিত সে!!আয়রা চারপাশ দেখতে লাগলো বিশাল সারি সারি গাছ দুই পাশে,মাঝখানে কেমন এই টের‍্যাবেকা রাস্তা দিয়ে তারা হাটছে..এক সময় তারা পৌছে গেলো সেই মিলির কথামতো পার্কে..আয়রা জায়গাটা দেখে ভ্রু কুচকালো কারন সেখানে তিনটা অথবা চারটা কাঠের তৈরি সিট বেঞ্চ আছে শুধু।।

“হোয়াটা কাইন্ড অফ দিস পার্ক” আয়রা ভ্রু কুচকে মিলিকে জিজ্ঞেস করলো।।

“আরে আপু দেখো সুন্দর গাছের মধ্যে নিরিবিলি পার্ক” মিলি একটু ভয়ে ভয়ে হেসে বললো।।

আয়রা চারপাশ দেখলো তিনটা চারটা বাচ্চা খেলছে,আর তার দূরে কয়েকটা অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে দাড়িয়ে গল্প করছে..মিলি তাদের হাতের ইশারায় হায় জানালো।।

“আপু তুমি এদিক সেদিক ঘুরো,ছবি তুলো প্রকৃতির আমি ওদের সাথে মিট করে আসি?” আয়রা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিলি চলে গেলো।।

আয়রা একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে হাটতে লাগলো এই পার্ক নামক জায়গাটাতে,সে বিভিন্ন গাছগুলোকে ছুয়ে দেখছে..এরকম করে প্রতি গাছ গুলোকে ঘুরে ঘুরে দেখছে আয়রা,আর গাছগুলাতে বৃষ্টির পানি লেগে থাকার কারনে কেমন সজীবতা বৃদ্ধি পেয়েছে তার..এইভাবে সে নিজের অজান্তে অনেক ভিতরে চলে যায়,তার ফোনে একটা টিউন বাজলো..এই টিউনটা তখন বাজে যখন সে তার জায়গা যদি কিছুটা দূরে অবস্থান করে বা হারিয়ে ফেলে পথ তখন,অনবরত সেই টিউনটা বেজেই চলেছে..টিউন বাজার শব্দে তার ধ্যান ভাঙলো..আশপাশে তাকিয়ে দেখলো মনে হচ্ছে এই একটা জায়গাতে রাত হয়ে আছে অন্যান্য জায়গার থেকে..বৃষ্টির পানিতে ভরপুর চারিদিক..এরকম উদ্ভট পরিবেশ দেখে আয়রা কিছুটা দমে গেলো,পা বাড়ালে একটা অদ্ভুত কিছুর শব্দ আয়রার কানে আসে..ভিতর কেপে উঠলো তার পিছন ফিরে তাকানোর সাহস হচ্ছে না তার কপালের চারপাশ বিন্দু বিন্দু ঘামে ছেয়ে গেছে।।

নিজেকে একটু কন্ট্রোল করে পিছন ফিরে একটু তাকালে সে দেখতে পেলো একটা অদ্ভুত ডিজাইনের গাড়ি,গাড়ি আশেপাশে কি বিবর্ন ময়লা লেগে আছে,বৃষ্টির পানি গুলো বেয়ে বেয়ে পরছে..এরকম গাড়ি দেখে আয়রা বেশ অবাক হলো এই ভেবে যে এই গভীর জঙলের ভেতর এমন ভুতুড়ে অবস্থায় গাড়িটি এইভাবে আছে কেন??সেই ভাবলো হয়তো কেও আটকা পরে আছে ভিতরে প্রশ্ন জাগলো তার মনে,ধীর ধীর পায়ে গাড়ির কাছে এগোলো..গাড়ির কাছে যেয়ে তখন সে পৌছালো তখন গাড়ির নিচে নেমপ্লেটে লিখা Metro 1920

নিচের ১৯২০লেখাটা আয়রা বেশ কয়েকবার পড়লো..হুট করে খুব জোরে খুব দমকা বাতাস হতে লাগলো মনে হচ্ছে আস্ত মানুষ উড়িয়ে নিয়ে যাবে এতো বাতাসের প্রবল ক্ষমতা,এই বাতাসে জমিনে আয়রার পা টিকছে না মনে হচ্ছে স্কার্ফ টা খুলে গেলো,বাতাসে মিলিয়ে গেলো কোথাও..আয়রা থরথর করে কাপছে,বাতাস থেমে গেলো..আয়রার ঘাড়ের কাছে মনে হচ্ছে কেও দাড়িয়ে ঠান্ডা মানে খুব শীতল নিঃশ্বাস ফেলছে,পিছনের তাকানোর আর সাহস জুটিয়ে উঠছে না তার..পিছনে থাকা একজন তার চোয়ালের দাঁত শক্ত করে নিজের দাঁত বের করে আয়রার মুখে যেই না কামড় দিবে ওমনিতে আওয়াজ”আয়রা আপু”।।

এই আওয়াজে মনে হচ্ছে আয়রা প্রান ফিরে পেলো,সে তাৎক্ষনিক ভাবে পিছনে ঘুরলে,সেই ব্যক্তিটা এতো জোরে বাতাসের বেগে সরে গেলো যে আয়রা ঠিক বুঝতে পারলো কি না এখানে কারো উপস্থিতি আছে কিনা,কিন্তু আর পারলো না ভাবতে ভয়ংকর পরিবেশে..মিলির আওয়াজ কাছে আসছে ধীরেধীরে, আয়রা আর না থেমে পা বাড়িয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো।।

আর গাড়ির উপর দাড়িয়ে সেই ব্যক্তিটি আয়রার স্কার্ফ হাতে নিয়ে রক্তিম চোখে নিয়ে তাকিয়ে আছে।।

চলবে🍁

গল্প কেমন লাগছে আপনারা না জানালে আমি বুঝতে পারবো না..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here