# Real_Love♥
# Oniya_Chowdhury
Part:19
.
.
ইফাজ উপর থেকে ব্যাগটা নামিয়ে একটা টিশার্ট বের করলো।আমার সামনেই পান্জাবি খুলে পান্জাবিটা ভাঁজ করে ব্যাগে রেখে দিলো।কিছুক্ষণ হাত উপর নিচ করে এ্যাক্সারসাইজ করে টিশার্ট পরে নিলো।আমি এতক্ষণ গভীরভাবে উনাকে পর্যবেক্ষণ করছিলাম!উনার শরীরের প্রতিটা অংশেই নিখুঁতভাবে চোখ বুলিয়ে দেখছিলাম হঠাৎ উনি আমার দিকে তাকাতেই আমি চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
.
উনি আমার কাছে এসে আমার পা দুটো সিটের উপর তুলে দিয়ে আমাকে এমনভাবে বসালেন মনে হচ্ছে এখন আমি সাধনা শুরু করবো।ব্যাগ থেকে ল্যাপটপটা বের করে ব্যাগটা উপরে রেখে আমার কোলে শুয়ে পরলেন।ল্যাপটপটা বুকের উপর রেখে ল্যাপটপ চালাচ্ছেন আর চোখ উল্টো করে আমার দিকে তাকাচ্ছেন!উনি যতবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন আমি ততবার উনার থেকে চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকাচ্ছি!
.
– টিয়াপাখি!
উনি ল্যাপটপে কাজ করতে করতে হঠাৎ করে ডাকলেন!আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– হুম!
– কয়টা বেবি নিতে চাও?
– কিহ্!
হঠাৎ উনার এরকম প্রশ্নে মুখ ফসকে”কিহ্” বের হয়েছে!কোনোরকমে নিজেকে সামলিয়ে বললাম,
– কি বললেন?শুনতে পাই নি!
– বলো!
– প্রশ্নটা কি ছিলো?
– আজ কত তারিখ?
প্রশ্নটা করেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন!
আমি রেগে অন্যদিকে তাকালাম।
.
– তোমার সব লুকের পিক ই সুন্দর আসে!আই লাইক ইট!
উনি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বললেন!আমি উনার দিকে তাকিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি আমার পিক তোলায় ব্যস্ত!আমি রেগে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম সেই পিকটাও তুলেছেন!পিকটা দেখামাত্রই আমি ল্যাপটপটা দ্রুত বন্ধ করলাম!উনিও খুললেন না!নিচে নামিয়ে রাখলেন।
.
ইফাজ আমার একহাত টেনে উনার বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন,
– বললে নাতো!বেবি নিবে কয়টা?তখন তো পাচঁ ছয়টার কথা বললে!পাচঁ ছয়টাই নিবে নাকি তারও বেশি?
.
ইশ্!ভাবলাম উনি কথাটা ভুলে গেছেন!
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে মনে নেই টাইপের ভাব নিয়ে বললাম,
– কখন পাচঁ ছয়টার কথা বললাম?
– টিয়াপাখি!দিজ ইজ নট ফেয়ার!নো চালাকি!
– আমার সত্যি মনে নেই!
উনি আমার হাতের পাচঁটা আঙ্গুল সোজা করে উনার বামহাতের পাচঁটা আঙ্গুল আমার আঙ্গুলের পাশে রেখে বললেন,
– দেখো তো!এখানে কয়টা আঙ্গুল?
– দশটা।
– কি বুঝলা?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
– কিছুই না।
– সিরিয়াসলি বুঝো নি!
– না!
– বুঝিয়ে বলি?
– নাহ্!
– ইশ্!বুঝেও না বোঝার এক্টিং করা হচ্ছে, হুম!
কথাটা বলেই উনি উঠে আমার কপালে চুমো খেয়ে আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন!
.
আমি উনার বুকে মাথা রেখে লজ্জায় হাসলাম!উনি আমাকে উনার কোলে শুইয়ে দিয়ে বললেন,
– কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নাও।
– উহুম!
আমি উনার কোল থেকে উঠে বসে হাতের ইশারায় উনাকে আমার কোলে শুতে বললাম।তারপর আস্তে করে বললাম,
– পাচঁমিনিট আপনি ঘুমিয়ে নেন!অনেক রাস্তা!আমি এখন শুয়ে পড়লে পুরো ঘুমিয়ে যাবো!আপনার আর রেস্ট নেওয়া হবে না!
– আগেই বলেছি বিয়ের আগে নো চান্স!……..কথাটা বলেই উনি আমার হাত টেনে নিজের কোলে শুইয়ে দিলেন।আমার গলা থেকে ওড়নাটা ছাড়িয়ে আমার পুরো শরীরের উপর ছড়িয়ে দিলেন।আমি উনার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম।উনি বামহাত দিয়ে আমার চুলের মধ্যে হাত বুলাতে লাগলেন আর ডানহাতে ফোন নিয়ে কাকে যেনো কল করছেন!
.
কিছুক্ষণ পরই উনি আমাকে ডেকে দিলেন!আমি ঘুম ঘুম চোখে উঠে যখন উনার হাতের ঘড়ির দিকে তাকালাম আমার চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেলো!রাত সাড়ে তিনটা বাজে!তিনঘন্টার বেশি সময় ধরে ঘুমিয়ে ছিলাম!আর আমার মনে হচ্ছে একটু আগেই তো চোখ বন্ধ করলাম!একটাবার ও ডাকেন নি!সবসময় কেনো উনি এরকম করেন?
.
আমি অসহায়ত্ব নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– ডাকেন নি কেনো এতক্ষণ?
– ডেকেছি তো!
– কই?শুনতে তো পেলাম না!
– আস্তে আস্তে ডেকেছিলাম!তাই শুনতে পাও নি।
আমি ওড়নাটা ঠিক করে গায়ে জড়িয়ে সামনে তাকাতেই দেখলাম মুরুব্বি দুজন বসে বসে খাচ্ছেন!আমাকে দেখে দাদুটা হেসে হেসে”গুড মর্নিং”বললেন!ইফাজ সাথে সাথেই হেসে দিলো!
.
ইফাজ খাবার আমার সামনে দিয়ে বললো,
– খেয়ে নাও!উনারা তোমার সাথে খাবেন বলে এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন।বাট অনেক ডাকার পরও তুমি উঠছিলে না দেখে আমি উনাদের শুরু করতে বললাম!আমারও কিন্তু খুব ক্ষুধা লেগেছে!
.
উনার কথাগুলো শুনে আমি কিছুক্ষণ উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে খাবারের প্যাকেট থেকে খাবারগুলো বের করে উনার সামনে ধরে বললাম,
– নিন!
– আমার খাবার আমার হাতেই আছে!ওটা তোমার!
– ওহ্!সরি!
আমি খেতে শুরু করলাম।উনিও খাচ্ছেন।সামনের দুজনের খাওয়া কমপ্লিট।একজন খাওয়া শেষ করেই আবার আগের মতো শুয়ে পরলেন।এইবার উনি দাদুটার কোলের মধ্যে শুয়েছেন।আরেকজন সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন।দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যাবেন!
.
প্রায় অনেক্ষণ পর আমার খাওয়া শেষ হলো।ইফাজের অনেক আগেই শেষ হয়েছে!ও বসে বসে এতক্ষণ ফোন দেখছিলো।
টাওয়াল দিয়ে হাত মুছে জানালার সাথে হেলান দিয়ে বাহিরে তাকালাম।
রেললাইনের দুইধারের বাড়িগুলো সব অন্ধকার!সবাই হয়তোবা নিরালায় ঘুমাচ্ছে!
.
ইফাজ একদম আমার গা ঘেষে বসে দুইহাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে থুতনিটা আমার ঘাড়ে রেখে বললেন,
– কি দেখো?
– কিছু না!বাড়িগুলো দেখছিলাম!
– ওগুলো বাড়ি না।ওগুলো বস্তি!
– এক ই!
– তোমার কাছে সবই এক!
আমি উনার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে বাহিরে তাকালাম।উনি এতক্ষণ হালকাভাবে জড়িয়ে ধরে ছিলেন।এখন একেবারে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন!
.
.
ছয়টা চল্লিশের দিকে আমরা ট্রেন থেকে নামলাম।প্লাটফর্ম পেরুতেই দেখলাম আব্বু গাড়ি নিয়ে হাজির।ইফাজ দাদুদের একটা বাসে তুলে দিয়ে আমাকে নিয়ে গাড়িতে বসলেন।আব্বু ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছে।আমি আর ইফাজ পেছনের সিটে।আব্বু সামনের দিকে তাকিয়েই ইফাজের সাথে টুকটাক কথা বলছেন।ড্রাইভার আঙ্কেল আর আমি শ্রোতা হয়ে বসে বসে শুনছি।উনি গাড়িতে উঠেই সেই যে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেছেন ছাড়ার নাম নেই।
.
বাসায় এসেই প্রথমে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ ওভাবেই দাড়িয়ে ছিলাম।আম্মু আমার রুমটা উনার জন্য ঠিকঠাক করে গুছিয়ে রেখেছিলেন।আমি আমার রুমে শুধু পড়ার জন্যই ঢুকি।বাকি সময়ে আমার বোনটার সাথেই ওর রুমে থাকি।
.
উনি আম্মুকে সালাম দিলেন।আম্মু সালামের উত্তর নিয়ে এক সেকেন্ড ও অপেক্ষা না করে উনাকে রুমে নিয়ে গেলেন।আমি আমাদের রুমে মানে নাফিসার রুমে চলে এলাম।নাফিসাকে দেখলাম ও এখনো ঘুমোচ্ছে। আমি আস্তে করে ওর কাছে যেয়ে ওর কানের কাছে বিকট জোরে একটা চিৎকার দিলাম।নাফিসা ভয়ে ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে লাফ দিয়ে নিচে নামলো।ওর কান্ড দেখে আমি হাসতে হাসতে পুরো রুম মাথায় তুললাম!
“উফ্!আপু ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি!” কথাটা বলেই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আব্বুর সাথে যেতে চেয়েছিলাম!কিন্তু দেখ আব্বু আমাকে ঘুম থেকে ডাকলোই না।ভাইয়া কই?
– রুমে!
– ওহ্!দেখা করে আসি!
– এই না!এখন না!ফ্রেশ হচ্ছে মনে হয়।পরে যেয়ে দেখা করিস!
– ওকে!তো এখন বল কি কি করলি!এইদুইদিন কত্ত মিস করছি তোকে!
– আগে বল বার্থডে উইশ করিস নি কেনো?
– ভাইয়া ই তো আমাকে মানা করলো ফোন দিয়ে।তোকে সারপ্রাইজ দিবে তারজন্য।
– কিহ্!
– হুম!আচ্ছা বাদ দে!ভাইয়ার গিফ্ট দেখা!
– ওটা তো ঢাকায় রেখে এসেছি!আনতে পারলে আনতাম!
– মানে?
– পুরো একটা ফ্লাট গিফ্ট করেছে!
কথাটা বলেই আলমারি থেকে ড্রেস বের করে আমি হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলাম।
.
প্রায় পনেরো মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি নাফিসা সেই আগের জায়গায়ই বসে আছে।আমি ওর কাছে যেয়ে সামান্য ধাক্কা দিয়ে বললাম,
– কিরে?এখনো এভাবে বসে আছিস কেনো?
– কথাটা নিতে পারি নি!
– উফ্!যা ফ্রেশ হয়ে আয়!
নাফিসা চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে গেলো।আমি কিচেনে আম্মুর কাছে চলে আসলাম।আম্মু আমাকে দেখেই কিচেন থেকে বের করে দিলো আর বলে দিলো একটু রেস্ট করতে!আমি কিচেন থেকে চুপচাপ রুমে চলে আসলাম।নাফিসা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ পর আবার রুমে ঢুকে বললো,
– গেস্টরুমে তো ভাইয়াকে দেখলাম না!কই উনি?
– আমার রুমে!
– ওহ্!
বলেই নাফিসা চলে গেলো ।
.
কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে উঠে পরলাম।বিশমিনিটের মতো হয়ে গেলো কিন্তু নাফিসার রুমে আসার কোনো নাম নেই।সে নিশ্চয় তার রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে ইফাজের সাথে।কাল থেকে এমনিই এক ফোটাও ঘুমায় নি!
আমি বিছানা ছেড়ে উঠে আমার রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
.
রুমের ভেতর ঢুকে দেখলাম ইফাজ আর নাফিসা ল্যাপটপ সামনে রেখে কি যেনো দেখছে।আমি কাছে যেতেই ইফাজ আমার হাত টেনে ওর পাশে বসিয়ে বললো,
– তুমি তো দেখো নি এই পিকগুলো!এসো একসাথে দেখি!
আমি ল্যাপটপটা ঠাস্ করে বন্ধ করে নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– পিকগুলো পরেও তো দেখতে পারতিস!আজ সারারাত উনি জেগে ছিলেন!কমনসেন্স বলে তো একটা কথা আছে,নাকি!
– আপু আমি তো দেখতে চাই নি!ভাইয়া নিজে আমাকে বের করে দেখাচ্ছেন!
আমি উনার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকাতেই উনি নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– শালি!তুমি ই তো দেখতে চেয়েছিলে তখন!সত্যি টা বলো!
ইফাজের কথা শুনে নাফিসা অসহায়ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে বললো,
– ভাইয়া!আপনিও?
– কি আমি?যাও যাও!আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে!আমি ঘুমাবো।
.
.
(চলবে)