real love পর্ব ৭০

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
#Part: 70
.
.
আন্টি-আঙ্কেল আমাকে ফ্লাট থেকে সরাসরি বাড়িতে নিয়ে গেলেন।মলি আপুকে উনি বাসায় পৌছে দিতে গেলেন।বাড়িতে পা দিতেই আন্টি চিৎকার করে মনিকে ডেকে বিভিন্ন আইটেমের খাবার রাঁধতে বললেন।আমাকে নিচের একটা রুমে শিফট্ করে বেডে বসিয়ে আন্টি কিচেনের দিকে পা বাড়ালেন।ইয়াশ আমার পাশে বসে বললো,
– ভাবি?
– হুম!
– তোমার বাবু হবে?
ইয়াশের কথা শুনে হেসে বললাম,
– হুম!মাহিনের মতো নতুন বাবু আসবে।
– তুমি যে বলেছিলে তোমার পেটে বল ঢুকে গিয়ে পেট ফুলেছে?
– হুম,ঠিকই তো বলেছি।কিছুদিন পর ওই বল ফেটে বাবু বের হবে।সেই বাবু তোমাকে চাচ্চু বলে ডাকবে।তার সাথে সারাদিন খেলবে তুমি,অনেক মজা করবে।
– চাচ্চু তো বড় আঙ্কেলদের বলে।আমাকে কেনো চাচ্চু বলবে?
আন্টি রুমে ঢুকে আমার কথা কেড়ে নিয়ে বললেন,
– ভাইয়ের বাবুরা অলওয়েজ ভাইয়ের ভাইকে চাচ্চু ডাকে।বুঝলে?
ইয়াশ মাথা নেড়ে বললো “না।”
আন্টি আমার হাতে স্যুপ দিয়ে ইয়াশের চুল ঝাঁকিয়ে বললেন “আর বুঝতে হবে না।”
আঙ্কেল রুমে ঢুকে আমার পাশে বসে বললেন,
– এতো কেনো খুশি খুশি লাগছে আমার?দেখি দাও।আমি একটু খাঁইয়ে দেই আমার মা’কে।
আমার চোখ ছলছল করে উঠলো!আব্বুর কথা মনে পড়ছে খুব!আঙ্কেল আমার হাত থেকে স্যুপের বাটিটা নিয়ে খাওয়ানো শুরু করলেন।এরমধ্যেই ইফাজ রুমে ঢুকে এরকম একটা দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন।চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন,
– আগে যদি জানতাম যে তোমরা এতো আদর-যত্ন করবে তাহলে তো সেই কবেই তোমাদের জানিয়ে দিতাম।
আঙ্কেল হেসে বললেন,
– তোর মাকে না জানাতি।আমাকে তো একবার জানাতে পারতি?
– হুহ্!এখন আসছে!
– আয়,তোকেও খাঁইয়ে দেই।
– ফাযলামি রাখো।
আন্টি ধঁমক দিলেন।ইফাজের কাছে যেয়ে বললেন,
– তোর আপুকে জানিয়েছিস?
– দরকার নেই।আপু তুলকালাম বাধিঁয়ে দিবে।
– এই সাবধানে কথা বলিস!আমার মেয়ে কিন্তু!
– এ্যাহ্ আসছে!
– ফোন দে!এক্ষুণি জানাবি।
উনি ফোন বের করে আপুকে কল দিলেন।আপু রিসিভ করতেই উনি বলবেন,
– কি অবস্থা, আপু?কেমন আছো?
– …..
– আলহামদুলিল্লাহ্, আমরাও ভালো আছি।
আন্টি ইফাজকে খোঁচাচ্ছে “তাড়াতাড়ি বল।বলছিস না কেনো?” কিন্তু উনি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মনের সুখে এলোমেলো কথা বলে সময় নষ্ট করছেন।উনি হাসতে হাসতে আপুকে বললেন,
– হুম।হিয়াও ভালো আছে।তুমি আসবে কবে?
– ….
– ওহ্।মাহিনকে একদিন ভাইয়ার সাথে পাঠিয়ে দাও।এই রাস্তা ক্রস করেই তো ভাইয়া অফিসে যায়।
– …..
– মাহিন কি এখন অনেক বড় হয়ে গেছে?
– …
– আপু,সামনের ২৮তারিখে একটা সারপ্রাইজ আছে তুমি কি ওইদিন বা তার আগের যেকোনো দিন আসতে পারবে?
– …..
– না..না!এই ২৮ তারিখ না।সামনের মাসের ২৮ তারিখ।
– ….
– এতো কিসের ব্যস্ততা তোমার?আর যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেনো ওইদিন তোমাকে আসতেই হবে।
– …
– নাহ্!
আন্টি রাগে ফুলে ফেঁপে উঠছেন।আন্টি উনার হাত থেকে ফোনটা নেওয়ার অনেক চেষ্টা করেও পারছেন না।লম্বা মানুষ,আন্টি একটু উঁচু হয়ে নিতে নিলে উনি আর একটু উঁচু হয়ে আন্টিকে ব্যর্থ বানিয়ে দিচ্ছেন।উনাদের কান্ড দেখে আঙ্কেল,আমি আর ইয়াশ বসে বসে হাসছি।
উনি বললেন,
– আপু,আম্মু তোর সাথে কথা বলার জন্য খাঁমচাখাঁমচি শুরু করে দিয়েছে।নে তো একটু কথা বল খাঁমচিওয়ালার সাথে।
উনি আন্টির হাতে ফোনটা দিতেই আন্টি ফোনটা নিয়ে সোফায় ধঁপাস করে বসে পড়লেন।হাঁপিয়ে উঠেছেন একেবারে।আপুকে বললেন,
– কেমন আছিস?
– …
– ভালো।ইফাজটা যে দিনদিন এতো অসভ্য হচ্ছে।উফ্!হাপিয়ে উঠেছি।
– ….
– আচ্ছা,বাদ দে ওর কথা।একটা জরুরি কথা বলি,শোন।
– …
– তোর ভাই মানে আমার বড় ছেলে যার নাম ইফাজ সে বাবা হতে চলেছে!
– …..
– চুপ হয়ে গেলি কেনো।
– ….
– ইয়েস!তোমার সেই পিচ্চি ভাই ইফাজ।
– ….
আন্টি ফ্লাটে যাওয়ার পর যা যা ঘটেছে,একে একে সব আপুকে বলে দিলেন।
– ওয়েট,দিচ্ছি।
আন্টি আমার কাছে এসে ফোন আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– নাও।কথা বলো।
আমি ফোনটা নিয়ে আপুকে সালাম দিয়ে বললাম,
– কেমন আছো,আপু?
– এটা আমি কি শুনলাম?
আমি চুপ হয়ে গেলাম।কিছু বললাম না।আপু বললো,
– কি হলো?চুপ হয়ে গেলে কেনো?
– সরি আপু!
– সরি বলে এখন কি লাভ?এতোদিন জানাও নি কেনো?
– ভয় পাচ্ছিলাম!
– তাহলে এখন কেনো জানালে?
– আমরা তো জানাই নি। মা হুট্ করে আজ ফ্লাটে যেয়ে দেখে ফেলেছেন।
– যদি না যেতো তাহলে কি বেবি না হওয়ার আগপর্যন্ত এভাবেই লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াতে?
– ওরকমই!
আপু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
– তোমার যদি কিছু একটা হয়ে যেতো তখন আমরা তোমার ফ্যামিলিকে কি জবাব দিতাম?
– সেই ভয়েই আমরা অলওয়েজ ডক্টর আঙ্কেলের সাথে কানেক্ট থাকতাম।
– হিয়া,এটা শুধু ডক্টরের ব্যাপার না।এখানে ফ্যামিলিও অনেক কিছু।প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে ডক্টরের থেকে ফ্যামিলির ইম্পরট্যান্স সবথেকে বেশি।
– সরি আপু!
– সরি বলে কোনো লাভ নেই।আন্টি-আঙ্কেল জানেন কিছু?
– উহুম।
– ওয়াও!গ্রেট!
আপু কিছুক্ষণ চুঁপ থেকে আবার বললেন,
– এটলিষ্ট ওয়ান ইয়ার ওয়েট করতে পারতে।এতো বাচ্চা বয়সে….কেমনে কি?আর ইফাজটা এরকম কিছু….ধুর!
আপুর কথা শুনে মনে হচ্ছে আপু ভীষন রেগে আছেন।কথাগুলো খুব ভারী শোনাচ্ছে।
আমি আস্তে করে বললাম,
– আপু,এখানে উনার কোনো দোষ নেই।উনি নিজেও ব্যাপারটা জানতো না।আমি একা একাই…..
আন্টি-আঙ্কেলের সামনে কথাটা আর বাড়ালাম না।শুধু বললাম,
– তুমি বাড়ি আসো।তারপর সব বলছি।
– আমি অলরেডি গাড়িতে উঠে পরেছি।আম্মু জানানোর সাথে সাথেই ড্রেস চেঞ্জ না করেই বেরিয়ে এসেছি।
– মাহিন?
– সাথেই আছে।যেই অবস্থায় ছিলো সেই অবস্থায়-ই উঠিয়ে এনেছি।
– ওহ্!
– ইফাজকে দাও।বেয়াদবটার সাথে একটু কথা বলি।
আমি হেসে ফেললাম।আপু বললেন,
– খুব হাসি পাচ্ছে,তাইনা?
– দিচ্ছি।
আমি ফোনটা উনার দিকে এগিয়ে দিলাম।উনি কানে ধরে বললেন,
– বলো।
– …..
– আমার কোনো দোষ নেই আপু।সব হিয়ার প্ল্যান।বলতে পারো একা একা সব করেছে লাইক লুকিয়ে লুকিয়ে টাইপ!
ছিঃ!আন্টি-আঙ্কেলের সামনেও উনি লাগামহীনভাবে কথা বলছেন!মুখে কিছু আটকায় না নাকি?লজ্জা বলতে কিচ্ছু নেই!আঙ্কেল মুখটিঁপে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আন্টিও চলে গেলেন।কিছুক্ষণের মধ্যে আমিও ইয়াশকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলাম।
.
.
প্রায় বিশমিনিট পর আপু এসে হাজির।আমি ইয়াশের সাথে সোফার উপর বসে খেলছিলাম।আপু আমাকে দেখেই হাত দিয়ে মুখ চেঁপে ধরে বললেন “হিয়া!!”
আমি মাথানিচু করে সামনের চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজলাম।।আপু কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– কি মিষ্টি হয়েছো দেখতে!স্বাস্থ্যও বেড়েছি দেখছি,গুলুগুলু একটা!ভাবলাম এসেই খুব করে দুজনকে বকবো!এইঅবস্থায় তোমাকে দেখেই তো সব উঁবে গেলো।
আমি বললাম,
– বকা দাও!রাগ করবো না।
আপু হাসলেন।মাহিন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।আমি আপুকে ছেড়ে মাহিনের কাছে গেলাম।আদর করার জন্য ঝুঁকতে যাবো সেইমুহূর্তে আপু ধঁমক দিলেন।মাহিনকে কোলে নিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে বললেন,
– নাও!এখন আদর করো!
আমি আদর করতে যাবো সেইমুহূর্তে ইফাজ এসে টুপ করে আপুর কোল থেকে মাহিনকে নিয়ে নিলো।মাহিন উনার গলা জড়িয়ে ধরে সুইট করে ডাকলো,”মামা!”
উনি মাহিনের কপালে গালে চুঁমু খেয়ে বললেন,”মামা!কেমন আছো!”
মাহিন হেসে বললো,”ভালো।”
ইয়াশ চিৎকার করে বলে উঠলো,”মাহিননন।”
ইয়াশের ডাকে মাহিন উনার কোল থেকে নেমে দৌড়ে ইয়াশের কাছে ছুঁটে গেলো।
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here