#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part:25
.
.
ইফাজ ওদের বাড়ীর সামনে গাড়ি থামাতেই দেখলাম আন্টি, আপু,আপুর হাজবেন্ড,আঙ্কেল সবাই দুইটা গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে!আমাদের জন্যই হয়তোবা অপেক্ষা করছে!
মাহিন ভাইয়ার কোলে ছিলো!
.
ইফাজ গাড়ির দরজা খোলার সাথে সাথেই ইয়াশ লাফ দিয়ে নেমে আমার হাত ধরে আমাকে নামালো!এইবার ইফাজকে সুযোগ দিলো না।
.
আন্টি আর আপু আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলেন।তিনজনের মধ্যে কোনটা কে একটু ভেবে চিন্তে না বললে পারা যাবে না।তিনজনের চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না!
.
আমি নেকাপটা খুলে আঙ্কেলকে সালাম দিতেই আঙ্কেল আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– এইতো আমার আরেকটা মা এসে গেছে!এটাই বোধহয় আমাদের বাপ মেয়ের প্রথম দেখা!তাই না রে মা?
– জ্বী আঙ্কেল!
– নো আঙ্কেল!বাপ বলবি…বাপ!মনে থাকবে?
– জ্বী আ….সরি বাবা!
আমার কান্ড দেখে আঙ্কেল হাসলেন!আঙ্কেলের পাশেই ভাইয়া দাড়িয়ে ছিলেন।ভাইয়াকে সালাম দিয়ে ভাইয়ার কোল থেকে মাহিনকে কোলে নিয়ে ভাইয়ার সাথে টুকটাক কথা বললাম!
মাহিন এখন অনেকটাই বড় হয়ে গেছে!
.
আঙ্কেল সবাইকে তাড়া দিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠতে বললেন!আঙ্কেল আর আন্টি এক গাড়িতে উঠলো!ইয়াশ আমার সাথে যাবে!ইফাজ ইয়াশকে আন্টি আঙ্কেলের গাড়িতে পাঠানোর অনেক চেষ্টা করেও পারলো না।আমিই চোখ রাঙ্গিয়ে নিষেধ করেছি আর ইয়াশের জেদ তো সাথে আছেই!আপু আর ভাইয়া অন্য গাড়িতে!
.
ইয়াশ আমার হাত ধরেই গাড়ি পর্যন্ত আসলো!ইফাজকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমার আর ইয়াশের উপর সে খুব রেগে আছে!আমি আর ইয়াশ চুপচাপ সিটে বসলাম।ইফাজও যেয়ে সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।আমি আড়চোখে উনার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
.
ইয়াশ ইফাজের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ভাইয়া তোমার ফোনটা দাও।
ইফাজ ইয়াশের দিকে না তাকিয়েই বললেন,
– কেনো!
– দাও না!
– গাড়িতে কোনো গেইম খেলা চলবে না।
– একটু দাও না!বেশি খেলবো না!প্রমিজ!
– বেশি না খেললেও উর্ধ্বে একঘন্টা লাগে তোমার!
ইয়াশ আগে থেকেই আমার হাত ধরে ছিলো!হাতটা আরো শক্ত করে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় উনাকে কিছু বলতে বললো!
.
আমি উনার দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে বললাম,
– একটু দিলে কি হয়?
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– বিয়ের পর তোমাদের দুজনকে তো একসাথে ওই বাড়িতে রাখা ইম্পসিবল!সারাদিন তো পাবোই না সিওর!রাতেও পাবো কিনা সন্দেহ!
.
উনার কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে উনার হাতে একটা চিমটি দিয়ে বললাম,
– সবসময়ই উল্টাপাল্টা কথা,না?আমি আপনাকে যাস্ট ফোনটা দিতে বলেছি!ওইটার সাথে এইকথাটা না বললেই কি চলছিলো না?ফোন দিন!
ইফাজ পকেট থেকে ফোনটা বের করে আমার হাতে দিলো!ইয়াশ আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ওপেন করতেই আমার পিক স্ক্রিনে ভেসে উঠলো!সাথে সাথেই ইয়াশ একটা কিস করলো স্ক্রিনে!
.
ইয়াশের কান্ড দেখে আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– কি হলো এটা!
– ও এইকাজটা সবসময়ই করে!ফোনটা নিবে!ওপেন করবে!তোমার পিকটা ভেসে উঠবে!পিকে একটা কিস করবে!then গেইম খেলা শুরু করবে!
পাশ থেকে কথাগুলো ইফাজ বলে উঠলেন!
.
আমি দুইহাত পেঁচিয়ে ইয়াশের কোমড় জড়িয়ে ধরে সিটের সাথে হেলান দিলাম।ইয়াশ একটু নিচু হয়ে আমার ঘাড়ে মাথার পেছনের সাইড রেখে শুয়ে পরলো।ফোনটা উপরের দিকে উঠিয়ে গেইম খেলছে।
.
হঠাৎ ইফাজ খুব সাবধানে আমার ডানহাতটা টান দিয়ে কিছুক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রেখে একটা চুমো দিয়ে ছেড়ে দিলো।আমি উনার কান্ড দেখে ভয়ে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ইয়াশ গেইম খেলায় ব্যস্ত!
.
প্রায় আধাঘন্টা পর আমরা মাদ্রাসায় পৌছালাম!ইয়াশ ইফাজকে ফোনটা দিয়ে আমাকে নিয়ে নেমে পরলো।আন্টি আঙ্কেলকে দেখতে পেলাম!আপুদের গাড়ি এখনো আসে নি।
.
আমি আর আন্টি টুকটাক কথা বলছিলাম!আপুদের গাড়ি পৌছাতেই ইফাজ গাড়ির কাছে যেয়ে আপুর সাইডের দরজাটা খুলে মাহিনকে কোলে নিয়ে আপুর হাত ধরে আপুকে নামালো!আপু আমাদের কাছে এসে আমার হাত ধরে বললো,
– চলো!
– হুম!
ভাইয়া গাড়ি লক করে চলে আসলো!
.
ভবনটা তিনতলার!নিচতলায় বিশাল মসজিদ!আমরা দ্বিতীয়তলায় উঠে দেখলাম বিশাল বড় একটা রুমের চারপাশে সারিবদ্ধভাবে ছোট ছোট বাচ্চারা বসে জোরে জোরে শব্দ করে কোরআন তেলাওয়াত করছে!বড় বড় ছেলেও ছিলো!পুরো রুমটাতে কেমন একটা শান্তি বিরাজ করছে!যেখানে কোনো দুঃখ-কষ্ট,লোভ-ল
ালসা কিছুই নেই!সেখানে শুধু আল্লাহ তা’আলার রহমতের ই একমাত্র জায়গা আছে!
.
একজন হুজুর আমাদের দিকে এগিয়ে এসে আঙ্কেলের সাথে কোলাকুলি করলেন!তারপর কিছু কথা বলে তিনতালায় যাওয়ার কথা বললেন!
উনার সাথে আমাদের সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেন!
.
উপরের তালায় উঠে দেখলাম বিশাল রুম বাট কোনো কক্ষ নেই।কয়েকজন বিশাল দাড়িওয়ালা হুজুর নিচে মাদুরের উপর বসে সামনে থাকা ছোট পায়াওয়ালা টেবিলের উপর রাখা কাগজপত্র নেড়ে চেড়ে দেখছেন!আর টুকটাক কথা বলছেন।আমরা তিনজন নেকাপ খুলে ফেললাম!সবাই জুতো খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই সবার নজর আমাদের দিকে পড়লো!
আমাদেরকে দেখতে পেয়েই সবাই উঠে এসে আঙ্কেলের সাথে হাতমিলিয়ে কোলাকুলি করলেন!আন্টিকে ভালোমন্দ জিঙ্গেস করছেন!ইয়াশ আমার হাত ধরেছিলো।একজন ইয়াশের কাছে এসে ইয়াশকে কোলে তুলে নিলেন।ইফাজের কোল থেকে অন্য একজন হুজুর মাহিনকে কোলে নিয়ে কপালে চুমো দিয়ে বললেন “মাশাআল্লাহ্!মাশাআল্লাহ্!খুব সুন্দর হয়েছে দেখতে!”
.
ইফাজ আমার পাশে এসে আঙ্গুল দিয়ে একটা হুজুরকে দেখিয়ে আস্তে করে বললেন “উনিই আজ চলে যাচ্ছেন!”
.
আঙ্কেল হুজুরটাকে আমাদের দিকে এগিয়ে এনে সব হুজুরকে উদ্দেশ্য করে আমাকে দেখিয়ে বললেন,
– এই যে!আমার বড় ছেলে ইফাজের বউ!খুব লক্ষী একটা মেয়ে!
আমি আর ইফাজ হুজুরকে সালাম দিলাম।উনি সালামের উত্তর নিয়ে আমার আর ইফাজের মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন!
.
প্রায় একঘন্টার মতো সবাই ফ্লোরে মাদুরের উপর বসে বসে গল্প করলেন!ইফাজ আমার পাশেই বসেছিলো!ইয়াশকে হাজীহুজুরটা কোলে নিয়ে বসে বসে গল্প করছিলেন!ইয়াশ হুজুরের বড় বড় দাড়িতে আঙ্গুল দিয়ে আচঁড়িয়ে দিচ্ছিলো!হুজুরের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।চুপচাপ বসে বসে গল্প করছিলেন!
.
পুরো মাদ্রাসা মসজিদ সব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হুজুরদেরকে সাথে নিয়ে আঙ্কেল আমাদের দেখাচ্ছিলেন!আমি আপুর কাছ থেকে মাহিনকে কিছুক্ষণের জন্য কোলে নিলাম!ইয়াশ ইফাজের হাত ধরে হাটছে!
কিছুক্ষণ পর ইয়াশ ইফাজকে বলে উঠলো,
– ভাইয়া!হাটতে ইচ্ছে করছে না।কোলে নাও!
ইফাজ সাথে সাথেই কোলে তুলে নিলো!ইয়াশ ইফাজের কাধে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে পরলো!
.
.
সবকিছু দেখে ফেরার সময় আঙ্কেল গাড়ি থেকে অনেকগুলো উপহার বের করে মাদ্রাসার সব পিচ্চিদের দিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যে যার গাড়িতে উঠলো।ইয়াশ ইফাজের কাধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরেছে!
আন্টি আঙ্কেলের কাছে ইয়াশকে রেখে এসে ইফাজ আমাকে নিয়ে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।
.
আমরা যেই রাস্তা দিয়ে এসেছিলাম সেই রাস্তা দিয়ে উনি না যেয়ে অন্য একটা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন!আমি উনার দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– এই রাস্তা দিয়ে কেনো?
আমার কথা শুনে ইফাজ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– এমনি!
– কোথায় যাচ্ছি আমরা?
– গেলেই দেখতে পাবে!
আমি আর কিছু জিঙ্গেস না করে সিটের সাথে হেলান দিয়ে বাহিরে তাকালাম!
.
পনেরো মিনিট পর উনি একটা ফাস্টফুড দোকানের সামনে গাড়ি থামালেন।গাড়ি থেকে নেমে দোকানে ঢুকে খাবার কিনে আনলেন!আমার সাইডের দরজা খুলে খাবারগুলো আমার কোলের মধ্যে রেখে দরজা লাগিয়ে দিলেন।নিজে সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– এগুলো কার জন্য?
– তোমার জন্য!
– মানে?আমি খাবো না!
কথাটা বলেই আমি খাবারগুলো সামনে রাখতেই উনি আমার হাত খোপ করে ধরে বললেন,
– লজ্জা পাওয়ার কি আছে?আমিই তো!
– আমি লজ্জা পাচ্ছি না!আমার এখন ক্ষিধে নেই তাই রেখে দিচ্ছিলাম!
– কাল সেহরী খেয়েছিলে?
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
– নাহ্!
– তাহলে?সকালে নিশ্চয় একটু কিছু মুখে দিয়ে চলে এসেছো!বেশি কথা না বলে শেষ করো!
– প্লিজ!খাবো না আমি!
– হিয়া….. মাইর দিবো কিন্তু এখন!
আমি আর কিছু বললাম না!রোজাদারের সামনে খেতে হয় না,পাপ হয়!উনার সামনে এভাবে খেতে নিজের মধ্যে একটা জড়তা কাজ করছিলো! তবুও বাধ্য হয়ে খাওয়া শুরু করলাম!
.
.
(চলবে)