#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 36
.
.
সকাল সাতটা থেকে একঘন্টা যাবৎ এভাবেই জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন!এখন বাঁজে আটটা দশ!আমার কোনো কথাই শুনছেন না!জোর করে সরানোর উপায়ও নেই…শরীরে একেবারেই শক্তি নেই!হাত পা প্রচুর ব্যাথা!ঠোঁটে অসম্ভব জ্বালা করছে!ফুলে গেছে…কিছু জায়গায় কেটেও গেছে!
.
– ভাবী….দরজা খুলো!
হঠাৎ ইয়াশের চিৎকারে আমি কোনো কূলকিনারা না পেয়ে দ্রুত উনাকে ধাক্কাতে লাগলাম!উনি একটু নড়েচড়ে উঠে চোখ বন্ধ রেখেই বললেন,
– হুম…..
– ইয়াশ এসেছে!ছাড়ুন….
আমার কথাটা শুনে উনি ধড়ফড় করে উঠে বললেন,
– ওহ্ মাই গড!
– আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি!আপনি তাড়াতাড়ি উঠে দরজাটা খুলে দিন!
.
উনি দ্রুত উঠে বেডের উপরের সবকিছু ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে দরজা খুলতে চলে গেলেন!
আমি দ্রুত একটা টাওয়াল,একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম!
.
ইয়াশ রুমে ঢুকেই ভাবী ভাবী বলে জোরে জোরে ডাকছে!ওয়াশরুম থেকে সব শোনা যাচ্ছে!
হঠাৎ ইফাজ বলে উঠলো,
– এই রুমে কারোর ভাবী নেই!
– লায়ার….ফুপ্পি বলেছে ভাবী তোমার রুমে!
কথাটা বলেই ইয়াশ আবার জোরে জোরে ভাবী ভাবী বলে ডাকতে লাগলো!
ইফাজ বললো,
– আপনার ভাবী ওয়াশরুমে!একটু আস্তে ডাকুন!
– তুমি আসলেই একটা লায়ার!
কথাটা বলেই ইয়াশ ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কাতে লাগলো!
.
আমি দরজার কাছ ঘেষে দাড়িয়ে বললাম,
– কে?
– আমি…
– ওহ্….একটু ওয়েট করো সোনা!আমি পাচঁমিনিটে বের হচ্ছি!
– আচ্ছা!
.
আমি দ্রুত শাওয়ার নিয়ে পনেরো মিনিট পর বের হলাম!উনি আধশোয়া অবস্থায় বেডের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে ছিলেন!ইয়াশ আঙ্কেলের ফোনে শুয়ে শুয়ে গেইম খেলছিলো!আমাকে বের হতে দেখেই ইয়াশ লাফ দিয়ে বেড থেকে নেমে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো!মাথা উচুঁ করে বললো,
– তুমি নাকি রাতে ভাইয়ার সাথে ঘুমিয়েছিলে?
ইয়াশের কথা শুনে আমি হতভম্ভ হয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি চোখ বড় বড় করে এদিকে তাকিয়ে আছেন!
আমি ইয়াশের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম,
– রাতে তোমার সাথেই থাকতে চেয়েছিলাম!কিন্তু তোমার ফ্রেন্ডরা তোমার রুমে ছিলো বলে আর তোমার কাছে যাওয়া হয়নি!কোনো রুম খালি ছিলো না দেখে তোমার ভাইয়ার রুমে এসে ঘুমিয়েছিলাম!
– ওরা সবাই চলে গেছে!আজ রাতে কিন্তু আমার কাছে থাকবে!
ইয়াশের কথাটা শুনে আমি হেসে বললাম,
– ওকে!
– তোমার ঠোঁটে কি হয়েছে?
আমি দ্রুত ঠোঁটে হাত দিয়ে বললাম,
– কালরাতে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি!
– অনেক ফুলে গেছে!
কথাটা বলেই ইয়াশ আমার হাত টেনে রুমের বাহিরে নিয়ে যেতে নিলেই ইফাজ ইয়াশের হাত ধরে থামিয়ে বললো,
– কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
– নিচে!
উনি একটু কেশে বললেন,
– তোমার ভাবির শরীর খারাপ!জ্বর এসেছে!ভাবি এখন একটু রেষ্ট নিবে!চলো আমি তোমার সাথে নিচে যাচ্ছি!
– নাহ্!তুমি একাই যাও!আমিও ভাবির সাথে এখন রেষ্ট করবো!
ইয়াশের কথাটা শুনে আমি মুখটিপে হাসলাম!উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি চোখমুখ কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন!
.
আমি চুপচাপ ইয়াশকে নিয়ে বেডে যেয়ে শুয়ে পরলাম!ইয়াশ আমার পাশে শুয়ে আঙ্কেলের ফোনটা নিয়ে গেইম খেলা শুরু করলো!
উনি বেডসাইড টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে কাকে যেনো কল করলেন!কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলেন!
.
আমি চুপচাপ ইয়াশের উপর হাত রেখে জড়িয়ে ধরে ওর খেলা দেখছি!কিছুক্ষণ পর হঠাৎ আপু রুমে ঢুকে-ই ইয়াশের কাছে এসে দ্রুত বলতে লাগলেন,
– ইয়াশ…তাড়াতাড়ি চলো!দেখো কে এসেছে?
কথা বলতে বলতেই আপু একপ্রকার জোর করে ইয়াশকে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো!ইয়াশকে কিছুই বলার সুযোগ দিলো না!
.
উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের দরজা লক করলেন!আমি উঠে বসে বললাম,
– তখন আপুকেই ফোন করা হয়েছিলো,তাইনা?
– হুম!
– আপনি আসলেই একটা….!আপু কি ভাবলো…ছিঃ!
– যা ভাবার ভাবুক!
কথাটা বলেই উনি লেপ টেনে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলেন!
.
.
সাড়ে নয়টার দিকে আমি রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে এলাম!ড্রইংরুমে ইফাজের সব আত্নীয়স্বজনকে দেখেই আমি দ্রুত মাথায় কাপড় দিলাম!আপু আমাকে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে কাছে এসে বললেন,
– উফ্!শেষ পর্যন্ত ছাড়লো তোমাকে!এদিকে তো ফুপ্পি,খালামনি সবাই ইফাজকে ইচ্ছামতো পঁচাচ্ছে!চলো…
আপুর কথাগুলো শুনে লজ্জায় নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে!যেতেও ইচ্ছে করছে না ফুপ্পি খালামনিদের সামনে!নির্ঘাত লজ্জা দিয়ে আমাকে অনেক অনেক কথা শোনাবে!
আমি আপুর হাত টেনে ধরে বললাম,
– আপু…যাবো না উনাদের সামনে!লজ্জা লাগছে এতো লেইট-এ নিচে নামলাম!
– ধুর বোকা!লজ্জা পাওয়ার কি আছে!একটু তো মজা করবেই!আমাকে নিয়েও তো কত মজা করেছিলো!তুমি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকবে!চলো…
– ইয়াশ কোথায়?
– মামার সাথে বাহিরে পাঠিয়েছি!
– ওহ্!
.
.
আপুর জড়াজড়িতে উনাদের সামনে যেতেই একজন আমার হাত টেনে পাশে বসিয়ে বললেন,
– এতো পিচ্চি!!!
উনার কথা শুনে আরেকজন বললেন,
– ইফাজকে ধরে আনো!বাল্যবিবাহ করেছে ছেলে আমাদের!ও কই….এখনো নিচে নামার নাম নেই!
সামনের সোফায় বসে থাকা একজন বললেন,
– নির্ঘাত ঘুমাচ্ছে!সারারাত না ঘুমালে যা হয়!
উনাদের এক একজনের কথা শুনে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে!
পাশ থেকে আপু বললেন,
– হিয়া…ও কি আবার ঘুমিয়ে পরেছে নাকি উঠেছে?
– ফ্রেশ হচ্ছে!আমাকে পাঠিয়ে দিয়ে বললো উনি একটু পর আসছে!
– আচ্ছা!
আমি আপুর হাত সামান্য টান দিয়ে আপুকে ইশারায় বললাম “এখান থেকে নিয়ে যেতে!”
আপু হেসে ঠোঁটের ইশারায় বললেন “কুল”
আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ উনাদের কথাগুলো গিলতে লাগলাম!
.
কিছুক্ষণ পর উনাকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম!এতক্ষণ দম বন্ধ হয়ে আসছিলো!উনি শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে এদিকে এগিয়ে আসলেন!সবার নজর উনার দিকে পরলো!উনি সবার দিকে তাকিয়ে কিউট একটা হাসি দিয়ে সোফায় বসতেই পাশে বসা ফুপ্পি উনার পেটে গুঁতো দিয়ে বললেন,
– বউটারে তো একদম ত্যানা ত্যানা বানিয়ে ছেড়েছিস রে!তোর এই জিমওয়ালা বডি যে সারারাত তোর বউ সহ্য…
– ফুপ্পি….কিসব বলছো?চুপ করো তো!
– বাব্বাহ্!লজ্জা পাচ্ছিস নাকি…দেখি!
লজ্জাশরম বলতে তো আজ পর্যন্ত তোর মধ্যে কিছু দেখলাম না!
– আমি তো নিজের জন্য চুপ করতে বলছি না!তোমাদের নতুন বউয়ের জন্য চুপ করতে বললাম আরকি!
.
উনাদের এক একজনের এরকম লজ্জাবিহীন কথা শুনে আমার সারাশরীর লজ্জায় গলে যাচ্ছিলো!আমি আপুকে আস্তে করে বললাম,
– আপু!এখান থেকে প্লিজ নিয়ে চলো!
.
.
(চলবে)