real love পর্ব ৩৪, ৩৫

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 34+35
.
.
আমি আর ইয়াশ দ্রুত ছাঁদে চলে গেলাম।ছাঁদে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গেটের দিকে তাকিয়ে আছি।
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো তবুও কোনো গাড়ি ঢোকার নাম নেই।আমি আর ইয়াশ রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে আছি।ইয়াশ আমার ফোনে গেইম খেলছে।আমি ওর গেইম খেলা দেখছি।
.
হঠাৎ গাড়ি ঢোকার আওয়াজ শোনার সাথে সাথেই আমরা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে দ্রুত উঠে দাড়ালাম!নিচে তাকিয়ে দেখলাম উনি গাড়ি থেকে নামছেন!ইয়াশ উনাকে দেখতে পেয়েই আমার হাত শক্ত করে ধরে বললো,
– ভাবি….
– হুম!
– কি হবে এখন?
আমি ইয়াশকে নিয়ে দশতালায় চলে এলাম।প্রতিটা লিফ্টের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে রেখেছি।একটা লিফ্ট মাত্র চালু হলো।
লিফ্টটা পাঁচ নাম্বার ফ্লোরে থামতেই ইয়াশ আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো,
– ভাইয়া বের হলো মাত্র!
আমি ইয়াশের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে বললাম,
– হুম!
.
আমরা চুপচাপ হাঁটাহাঁটি করছিলাম।হঠাৎ আমার ফোনে কল আসতেই স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম উনি ফোন করেছেন।আমি ধরলাম না।
ইয়াশ একবার সিঁড়ি দিয়ে ছাদের দিকে উঠছে আবার নামছে।আমার দৃষ্টি ওই লিফ্টটা থেকে সড়ছেই না।
.
হঠাৎ ইয়াশ চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
– ভাবী…..ভাইয়া পেছনে!
বলেই ইয়াশ দৌড়ে ছাদে চলে গেলো!
আমি পেছনে তাকাতেই দেখলাম উনি প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছেন।উনাকে দেখা মাত্রই আমি দুইকদম পেছনে চলে গেলাম!
.
– ভালো আছো?
উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন!আমি দুইসিঁড়ি উপরে উঠে বললাম,
– হুম!
– এখানে দাড়িয়ে কি করছিলে?
– খে…খেলছিলাম!
– নতুন খেলা নাকি?
– হু…
– নাম কি?
– ….
– নাম নেই?
– হু!লুকোচুরি…..লুকোচুরি খেলছিলাম!
– একা একাই?
– উহু….ইয়াশ আর আমি!
– স্টপ….এভাবে পিছিয়ে যাচ্ছো কেনো?
উনার ধমক শুনে আমি সাথে সাথেই দাড়িয়ে গেলাম!উনি আমার একদম কাছে এসে আমার সামনের চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বললেন,
– তোমার সঙ্গীটা কই গেলো,হুম?
– ….
– তুমিও পালানোর প্লান করছো নাকি?কাজটা করলে কিন্তু একেবারে ফেঁসে যাবে,বলে দিচ্ছি!
উনার এরকম রাগী কন্ঠস্বর শুনে আমার ভয়গুলো নিজের ভেতরে আরো ভালোভাবে জেঁকে বসলো!
.
আমি ছাঁদের সিঁড়িঘরে একবার তাকিয়ে দেখলাম ইয়াশ আছে নাকি!নাহ্,নেই ইয়াশ!
আমি দ্রুত উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– সরি….আর কখনো ওরকম মিথ্যা বলবো না!এই যে আপনাকে জড়িয়ে ধরেছি নিজের ইচ্ছায়!প্লিজ….
আমার কান্ড দেখে উনি শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন!হাসতে হাসতে বললেন,
– উহু…এভাবে হবে না!শক্ত করে ধরো!
আমি শক্ত করে ধরে বললাম,
– এই যে ধরেছি!
– এটাকে শক্ত করে ধরা বলে না!
কথাটা বলেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে একদম চেঁপে ধরে বললেন,
– এটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরা বলে!
উনার কান্ড দেখে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার চোখের উপর ফুঁ দিলেন!সাথে সাথেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম!
.
অনেক শক্ত করে ধরেছেন!প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছি!আমি উনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম,
– ব্যাথা পাচ্ছি…ছাড়ুন!
– তো….
– আহ্…..প্লিজ!
– ছিঃ!এসব কোন ধরণের আওয়াজ?
– ব্যাথা পাচ্ছি খুব!ছাড়ুন…
– উহুম!
– ফ্লাটের কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ!আর ইয়াশ আমাকে আপনার সাথে এই অবস্থায় দেখলে আমাকে খারাপ ভাববে!ছাড়ুন…
– উফ্!কোথাও শান্তি নেই!
বলেই উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালেন!আমি কিছুক্ষণ হাত পা ঝাঁকিয়ে নিলাম!এমনভাবে ধরেছিলেন…উফ্!হাড়গুড় সব ফাটিয়ে দিয়েছেন!
.
উনার পেছন পেছন আমিও ছাঁদে উঠলাম।ইয়াশ ছাঁদের কোণায় একটা ফুটবল রাখা ছিলো সেটা নিয়ে খেলছিলো!ইফাজকে দেখামাত্রই ভয়ে ফুটবলটা ফেলে দিয়ে আমার পাশে এসে ওড়নার নিচে নিজেকে লুকিয়ে ফেললো।আমি উনার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে ইশারায় ইয়াশকে বোকা দিতে মানা করলাম!উনি সাথে সাথেই হেসে বললেন,
– এক ভীতুর কাছে অন্য ভীতু লুকিয়েছে…গুড!!!
কথাটা বলেই উনি ফুটবলটা উঠিয়ে হাতে ঘুরাতে ঘুরাতে ছাদের চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন!আমি ইয়াশকে নিয়ে ছাদের অন্যপাশে চলে এলাম!
.
উনি ঘুরতে ঘুরতে সেই আমাদের কাছেই এসে থামলেন।ইয়াশ আমার হাত টেনে ছাদের পশ্চিমসাইডের কর্ণারে নিয়ে দাড় করালো।ইয়াশ আমার আঙ্গুল টানতে টানতে বললো,
– ভাবি!বাসায় চলো।ভাইয়া দেখো কেমন লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে এদিকে!
ইয়াশের কথা শুনে উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি সত্যিই উনি অদ্ভূতভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।
.
আমি ইয়াশের হাত ধরে চুপচাপ নিচে নেমে এলাম।পেছন পেছন উনিও এলেন।লিফ্টে উনি প্রথমে ঢুকে then আমাদের ঢুকতে দিলো।ইয়াশ আমাকে মাঝখানে দাড় করিয়ে নিজে আমার পাশে দাড়ালো।
.
আমি আড়চোখে উনার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।উনি পকেটে হাত দিয়ে হিরো লুক নিয়ে স্ট্রেইট সামনে তাকিয়ে আছেন।এরকম লুক দেওয়ার মানে কি?এখানে তো আমি ছাড়া আর কোনো মেয়ে নেই যে তারা দেখেই ক্রাশ খাবে!ঢং…..
আমি উনার থেকে ইয়াশের দিকে একটু সড়ে আসতেই উনি হাত টান দিয়ে উনার সাথে একদম লাগিয়ে দাড় করালেন!
.
লিফ্ট খোলার সাথে সাথেই আমরা দুজন আগে বের হলাম!ইয়াশ আমার হাত টেনে দ্রুত বাসায় নিয়ে এলো।ইয়াশ যে এখনো ভয় পাচ্ছে সেটা ও’কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
আম্মু আমাকে দেখামাত্রই জিঙ্গেস করলো,
– ইফাজ কোথায়?
– আসছেন!আঙ্কেল কই?
– ইয়াশকে ইফাজ নিয়ে যাবে!তাই উনাকে ইফাজ পাঠিয়ে দিয়েছেন!
– ওহ্!
.
আমি ইয়াশকে নিয়ে রুমে এসে দুজন বারান্দায় দাড়িয়ে নিচে আপুদের হ্যান্ডবল খেলা দেখতে লাগলাম।হঠাৎ ইয়াশকে পেছন থেকে কেউ কোলে তুলে নিতেই ইয়াশ ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো!
ইয়াশের চিৎকারে ভয়ে আমি লাফ দিয়ে উঠে পেছনে তাকাতেই দেখলাম উনি দাড়িয়ে আছেন!
উনি ইয়াশকে রুমের ভেতর নিয়ে যেতে যেতে বললেন,
– কাউকে কিছু না জানিয়ে এসেছো!এতো সাহস কোথায় পেয়েছো?
ইয়াশ কোনো উত্তর না দিয়ে আমাকে ডাকছে আর ছটফট করে কোল থেকে নামার চেষ্টা করছে!নামতে পারবে কিনা সন্দেহ!যেভাবে উনি চেঁপে ধরেন…বাপরে বাপ!দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম!
.
আমি পেছন থেকে উনার শার্ট টেনে ধরে বললাম,
– না বলে এসেছে তো কি হয়েছে?
উনি আমার দিকে ফিরে বললেন,
– সাহসগুলো তারমানে তোমার থেকেই পাচ্ছে!
– না….আমি তো যাস্ট বললাম ভাবির কাছে আসতে আবার কারোর পারমিশন লাগে নাকি?যখন মন চাইবে তখনই আসবে!
– তোমার এই কথাতেই তো ও আরো বেশি সাহস পাবে একা একা আসার!
– উফ্…..এসেছে তো কি হয়েছে?
– আবার ঘুরেফিরে এক প্রশ্ন!
– অসহ্য…..
– উদ্ধার করো দু’জন আমাকে….
বলেই উনি ইয়াশকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন!আমি দ্রুত উনার পেছন পেছন যেতেই হঠাৎ আম্মু আমার হাত টেনে ধরে বললো,
– একটা কিচ্ছু মুখে দিলো না!ডাইনিং এ সব রেডি…তুই একটু বলে দেখ বসাতে পারিস কিনা!
আম্মুর কথা শুনে আমি দ্রুত উনার সামনে দাড়িয়ে পথ আটকিয়ে বললাম,
– কোথায় যাচ্ছেন?না খেয়ে বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ!ডাইনিং এ চলুন….
– আমি রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে এসেছি!এখন প্লিজ জেদ করো না!
– কোনো কথা হবে না….চলুন!
– হিয়া….
আমি ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললাম,
– ইয়াশ….আসো তো আমার কাছে!
– ভাইয়া অনেক শক্ত করে ধরেছে!
অসহায়ভাবে ইয়াশ কথাটা বললো!আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– কি হলো….চলুন!
– ওকে…..
বলেই উনি আমার হাত ধরে বললেন,
– চলো….তুমিও খাবে আমার সাথে!
– মানে?আমি একটু আগে খেয়েছি।
– তো….আবার খাবে!
– পেট ভরা আমার!
– কোনো কথা হবে না…চলো!
– আমার কথা উল্টো আমাকেই রিপিট করে শোনাচ্ছেন?
– আর বলবে খেতে?
– নাহ্…
– আন্টি কোথায়?আন্টিকে ডাকো।
.
আমি দ্রুত কিচেনে আম্মুর কাছে এসে বললাম,
– পারলাম না!তোমাকে ডাকছে…যাও!
আমার কথা শুনে আম্মু হতাশ হয়ে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো!আমিও আম্মুর পেছন পেছন গেলাম।
.
উনি আম্মুকে সালাম দিয়ে আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতে বললেন!আমি চুপচাপ উনার সাথে গাড়ি পর্যন্ত আসলাম।ইয়াশকে সিটে বসাতেই আমি ইয়াশের কাছে যেয়ে ইয়াশের গাল ধরে গভীরভাবে একটা চুমো দিয়ে কানে কানে বললাম,
– লুকিয়ে লুকিয়ে আবার আসবে কিন্তু!
ইয়াশ মাথা নেড়ে বললো,
– আচ্ছা।
.
হঠাৎ উনি বলে উঠলেন,
– হিয়া!আমার ওয়াচটা বোধহয় লিফ্টের ভেতর পড়ে গিয়েছে!তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো তো!
– মানে?
– কুইক!
আমি আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত লিফ্টের সামনে যেতেই হঠাৎ পেছন থেকে কেউ মুখ চেঁপে ধরে আড়ালে নিয়ে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো,
– যাওয়ার আগে একবার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিলো!সরি…..মুখ চেঁপে ধরে এভাবে ভয় দেখানোর জন্য!আসছি…..

Part: 35
.
রুটিনমাফিক আমার দিনগুলো চলতে লাগলো!প্রতিদিন রাতে মাষ্ট তিনঘন্টা উনাকে ফোনে সময় দিতেই হবে!আমি কথা বলি আর না বলি!একটাই আদেশ ফোন কাটা যাবে না!এমনও দিন গিয়েছে একতরফা উনি পুরো তিনঘন্টা কথা বলেছেন এদিকে আমি চুপচাপ উনার ভালোবাসামিশ্রিত আবেগীয় প্রেমালাপ নিরবতায় শুধু শুনেই গিয়েছি!দিনের বেশিরভাগ সময়ই উনি ব্যস্ত থাকেন যারজন্য রাতে এই নিয়মটা আমার জন্য বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন।
সপ্তাহের তিনদিন মাষ্ট আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবেন!দিনে সময় না পেলে রাতে!
.
দিনগুলো আস্তে আস্তে কমে বিয়ের দিনটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে!পুরোদমে শীত পড়ে গিয়েছে!শীতের রাতে লেপের ভেতর জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার মজাই আলাদা!অন্যরকম একটা ফিলিংস কাজ করে!
.
আজ তিনঘন্টার কাছে মাত্র আধাঘন্টা কথা বলে রেখে দিয়েছে!কাল সকাল সকাল উঠতে হবে সেই কারনে।কাল যে এনগেইজমেন্ট!কাজিনগুলো বিভিন্নভাবে আমাকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করেও লাষ্ট পর্যন্ত পারে নি।আমি সোজা রুমে এসে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পরলাম!
.
শীতের সকালের মিষ্টি রোদ জানালা দিয়ে এসে আমার মুখের উপর পরতেই মিটমিট করে চোখ খুলে আবার বন্ধ করে কিছুক্ষণ মিষ্টি সকালটা উপভোগ করলাম!হঠাৎ ফোনের ভাইব্রেশনে চোখ খুললাম!পাশফিরে ফোনটা নিতেই দেখলাম ইফাজ কল দিয়েছে!আমি দ্রুত রিসিভ করেই বললাম,
– হুম…
– ঘুম ভেঙ্গেছে?
– মাত্র!
– আসছো কখন?
– জানিনা!
– কন্ঠটা এমন লাগছে কেনো?
– ঘুম এখনো কাটেনি!আবার ঘুমোতে ইচ্ছে করছে!
– ঘুমাও ঘুমাও….এই দুদিন বেশি বেশি ঘুমিয়ে নাও!আমার কাছে আসলে তো আর…..
– আম্মু ডাকছে!বাই….
– পালাচ্ছো?পালাও…..আর তো মাত্র কয়েকদিন!
– পালাচ্ছি কোথায়!সত্যি ডাকছে!
আমার কথা শুনে উনি শব্দ করে হাসলেন!আমি দ্রুত ফোন কেটে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম।মিনিট পাঁচেক পর সবগুলো কাজিন আমার উপর হামলা করলো!আজ আমার এনগেইজমেন্ট অথচ আমি আজ এতো বেলা করে ঘুমোচ্ছি?সবগুলো আমাকে টেনে বেড থেকে নামিয়ে কোনোরকমে ফ্রেশ হওয়ার সময়টুকু দিলো!
.
.
পার্লার থেকে সাজিয়ে সরাসরি ভেন্যুতে নিয়ে যাওয়া হলো!এনগেইজমেন্ট প্রোগ্রামের আগে গাড়িতে বসে ইফাজকে কল দিলাম!উনি রিসিভ করেই বললেন,
– টিয়াপাখি, একটু ব্যস্ত আছি!পরে কথা বলছি…
ইদানিং বেশি ব্যস্ত হয়ে পরেছেন…অসহ্য!
.
.
সন্ধ্যের দিকে আসল অনুষ্ঠান শুরু হলো!এনগেইজমেন্টের পুরো অনুষ্ঠানে উনার ফ্রেন্ডদের পিড়াপিড়িতে দুজনের কেউ কারোর দিকে ঠিকভাবে তাকানোর সুযোগটাও পেলাম না!একটু তাকানোর সুযোগ পেয়ে যেই একটু তাকাই সেই মুহূর্তে উনার ফ্রেন্ডরাসহ আমার কাজিনরা উল্টাপাল্টা কথা শুনিয়ে নিজেরা হাসাহাসি করে আমাদের লজ্জায় ফেলতো!আমি চুপটি মেরে নিচের দিকে তাকাতাম!
.
.
আংটি বদলের সময় উনি শক্ত করে আমার হাতটা ধরে অনেক সময় লাগিয়ে আংটি পরিয়ে দিলেন!আংটি পরানোর সময় আমি বারবার শুধু উনার দিকে তাকাচ্ছিলাম!
.
উনাকে আংটি পরানোর জন্য আমি আংটিটা হাতে নিতেই উনার ফ্রেন্ডগুলো দ্রুত আমার হাতের একটা ছবি তুলে নিলেন!যেই হাতে আমি সুন্দর করে আংটিটা ধরে ছিলাম!ভাইয়াগুলোর নাকি আমার আংটি ধরার ধরণটা ভীষণ ভালো লেগেছে!উনার হাত ধরতেই উনি কিছুটা নড়েচড়ে বসে কিউট একটা হাসি দিয়ে আমার আরো কাছ ঘেষে বসলেন!উনার কান্ড দেখে আমি উনার ফ্রেন্ডসহ আশেপাশের সবার দিকে তাকাতেই সবাই হেসে উঠলেন!
অনুষ্ঠানের ফার্স্ট থেকে লাষ্ট সবগুলো ক্লিকই নেওয়া হলো!
আংটি বদলের পর ফটেসেশানের সময় ইফাজের ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী এক একটা পিক তোলা হলো!
খেতে বসার সময় উনি নিজের চেয়ারটা আমার দিকে একটু টেনে পায়ের সাথে পা লাগিয়ে বসলেন!
.
.
কয়েকদিন ধরে ঠিকমতো রেস্টও করতে পারছি না!হলুদ সন্ধ্যেয় সকাল থেকেই মেহেদী লাগানোর আয়োজন শুরু হলো!শেষ হলো বিকেলের দিকে!পার্লার থেকে সরাসরি ভেন্যুতে নিয়ে যাওয়া হলো!
হলুদের অনুষ্ঠানে পুরো সময় আব্বু আম্মু আমার পাশেই ছিলো!দুজনের চোখেই একগাদা জল টলমল করছিলো!আমার থেকে সেটা লুকানোর জন্য বারবার টিস্যু পেপার দিয়ে সেটা মুছছিলো!আমি চুপচাপ বসে ছিলাম আর আব্বু আম্মুর কান্ড দেখছিলাম!সবাই এক এক করে এসে হাতে গালে হলুদ মেখে দিলো!
ফটোসেশানের সময় এক এক করে সবার সাথেই প্রায় হাজারটার বেশি পিক তোলা হলো!এত্ত এত্ত ফ্লাশের আলোয় চোখ পুরো জ্বলছে!
.
হলুদের রাতে একফোটাও ঘুম হলো না!উনার সাথে কথা শেষ করে শেষরাতের দিকে একটু চোখ লেগে এসেছিলো!
.
পরেরদিন সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে সোজা পার্লারে নিয়ে যাওয়া হলো!রেড কালার বেনারসী পরানো হলো!সাজঁগোজের ওখানেই কয়েকঘন্টা লেগে গেলো!
বিয়ের সাঁজগোজের পর ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হলো!ক্লাবগেইটে গাড়ি থামতেই কয়েকসেকেন্ডের মধ্যেই কনের গাড়ির চারপাশে ভীড় জমে গেলো!
.
গাড়ির দরজা খুলে আপু আমার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামালেন!ক্লাবে ঢুকতেই দেখলাম ইফাজ শেরওয়ানী পড়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে উনার কোনো এক ফ্রেন্ডের সাথে হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছেন!
“কনে এসেছে!কনে এসেছে”সবার হৈচৈ শুনে ইফাজ পেছন ফিরে এদিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় করে ঠাঁই দাড়িয়ে রইলো!
পার্লারের ওখানেই আমার টাইম নষ্ট হয়েছে!ইফাজ অনেক আগেই এসেছে!সবার বিয়েতে বর পরে আসে!আমার বিয়েতে হলো উল্টো!বর আগে এসে বসে আছে!
আমি মিষ্টি হেসে উনার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বেনারসীর কুঁচিগুলো ধরে উনার দিকে এগুতে লাগলাম!উনার সামনে যেতেই উনি হাত বাড়িয়ে আমার হাত ধরলেন!সাথে সাথেই ক্যামেরার ফ্লাশ চারদিকে ঝলমল করে উঠলো!
.
.
বরকনের স্টেজ খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে!অফহোয়াইট,সোনালি,লাল,হলুদ রঙের কম্বিনেশনে স্টেজ সাজানো হয়েছে!হ্যালোজেন আলো,ঝাড়বাতি দিয়ে স্টেজ ডেকোরেশন করা!
.
দুজন পাশাপাশি বসে আছি!উনি কিছুক্ষণ পর পরই অদ্ভুত সব কথা বলে আমার চেহারার বারোটা বাঁজিয়ে দিচ্ছেন!হঠাৎ বলে উঠলেন,
– ইয়াশের জন্য আজ রাতের প্লানটা জানো?
উনার কথাটা শুনে আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– প্লান মানে?
উনি ফিসফিস করে বললেন,
– বাসর রাতের প্লান!
– কিহ্!!!
– হুম….আজ ইয়াশের সব ফ্রেন্ডকে ইনভাইট করা হয়েছে!ওরা আজ রাতে ইয়াশের সাথেই থাকবে!ফ্রেন্ডদের পেলে ইয়াশ দুনিয়ার সব ভুলে যায়!বুঝলে….টিয়াপাখি!
কথাটা বলেই উনি আমার হাত শক্ত করে ধরলেন!গেস্টরা উনার কান্ড দেখে মুখটিপে হাসছেন!সেদিকে উনার কোনো ভ্রুক্ষেপ-ই নেই!
.
.
এই কয়েকদিন ধরে আম্মু আমাকে নিয়ে এতোই টেনশনে ছিলো যে কালরাতে কাজ করতে করতে হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলো!আজ বিয়েতে এটেন্ড করতে পারে নি!আব্বু এসেছে!
.
হাজারটা ফর্মালিটিজ পালন করে বিয়ে পড়ানোর সময় আমি অনেকটা সময় নিয়ে কবুল বললাম!যেটা দেখে আমার ফেমিলি মেম্বার্সরা একটু হলেও অবাক হয়েছে!বিশেষ করে কাজিনগুলো!
.
গেস্টদের খাওয়া কমপ্লিট হতে হতে প্রায় ন’টা দশটা বেঁজে গেলো!বিদায়ের সময় আব্বু আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না!আব্বুর কান্না দেখে আমি আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম!এমন অবস্থা হলো দুজনের কান্নার আওয়াজ আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেলো!আমাদের অবস্থা দেখে অনেকে চোখ মুছছে!অনেকে এসে আমাদের আলাদা করার চেষ্টা করছে!
.
.
ইফাজ চুপচাপ দাড়িয়ে আছে!আব্বুকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো!আমি চোখ মুছে আত্নীয়স্বজন সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে নিতে আধাঘন্টা ওখানেই শেষ হলো!
.
ইফাজ গাড়ির দরজা খুলে আমাকে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।উনি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে এসে বসলেন!গাড়ি স্টার্ট দিতেই উনি আমার একদম কাছ ঘেষে বসে একহাত দিয়ে আমার একটা হাত ধরে অন্যহাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন!আমি কিছুটা নড়ে বসে আড়চোখে উনার দিকে তাকিয়ে নিচুস্বরে বললাম,
– সামনে ড্রাইভার কিন্তু…
– হুশ্….
– প্লিজ!
– …..
উনি কোনো কথা না বলে ফোনটা বের করে টাইম দেখে বললেন,
– এখানেই এগারোটা বেঁজে গেছে!শিট….
উনার এরকম কান্ড দেখে আমি উনার হাতে চিমটি দিয়ে বললাম,
– হচ্ছে কি?আস্তে….
উনি হেসে ফোনটা পকেটে রেখে আগের থেকেও আরো বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন!
.
বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই দেখলাম পুরো বাড়িতে লাইটিং এর এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যেটা দেখে মনে হচ্ছে না এখন রাত এগারোটা বাঁজে না দুপুর বারোটা বাঁজে!
.
.
বাড়ির ভেতর ঢুকতেই দেখলাম পুরো বাড়িতে মেহমান গিজগিজ করছে!আমাদের দেখামাত্রই সবাই এসে আমাদের জেঁকে ধরলো!
.
সাড়ে বারোটার দিকে আপু সবার কাছে থেকে আমাকে উদ্ধার করে বাসরঘরে বসিয়ে রেখে অনেককিছু বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলেন!বাসরঘরটা খুব সুন্দর করে ডেকোরেট করা!হোয়াইট কালার চাদরের উপর মাঝখানের দিকে লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বড় শেইপের একটা হার্ট আঁকা!আর চার কোর্ণারে চারটা ছোট শেইপের হার্ট!পুরো রুমটায় অদ্ভুত একটা সুবাসে ছেয়ে গেছে!ভীষন সুন্দর ঘ্রাণ!
.
হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে সেদিকে তাকাতেই দেখলাম উনি দরজা লাগিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুহাসি দিচ্ছেন!
আমি বেড থেকে নেমে কদমবুসি করতেই উনি আমাকে ধরে বললেন,
– এইসব করতে কে বলেছে?
আমি কেনো উত্তর দিলাম না!আপু তখন সব শিখিয়ে দিয়েছিলো!
উনি আবার বললেন,
– শাড়িটা চেঞ্জ করে এসো!আলমারিতে তোমার জন্য একটা শাড়ি রাখা আছে চেঞ্জ করে ওটা পরবে!
.
আমি চুপচাপ উনার কথামতো আলমারি থেকে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম!সাথে একটা টাওয়ালও নিয়ে এলাম!ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েই বুকে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ জোরে জোরে নিশ্বাস নিলাম। এতক্ষণ উনার সামনে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো!উফ্….কি ভয়ঙ্কর রাত!!!ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আবার উনার সামনে দাড়াবো কিভাবে?আজ তো উনি কেনো কথাই বলবেন না!এমনিতেই এক’টা বেঁজে গেছে!ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে!
.
.
একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হলাম!পুরো রুম অন্ধকার দেখেই ভয়ে বুক কেঁপে উঠলো!বেডে যে একজন শুয়ে আছেন সেটা হালকা আলোতে দেখতে পেলাম!
– লাইট অফ কেনো?
– লজ্জা যাতে না পাও!
উনার কথাটা শুনেই আমার হাতের টাওয়ালটা পড়ে গেলো!
উনি বেড ছেড়ে উঠে আমার দিকে আসতেই ভয়ে আমি হাতমুঠো করে শাড়ি আঁকড়ে ধরলাম!
.
উনি আমার একদম কাছে এসে বললেন,
– বড্ড গরম পরেছে…তাই না?
বলেই শেরওয়ানী আমার সামনেই খোলা শুরু করলেন!
ডিসেম্বরের কনকনে শীতে কিনা উনার গরম লাগছে!
আমি কিছুটা পিছুতেই উনি আমার কোমড় ধরে টান দিয়ে কোলে তুলে নিলেন!আমার পুরো শরীর অবশ হয়ে এলো!
উনি অন্ধকারেও কিছুক্ষণ আমার দিকে ঠোটেঁ দুষ্টুমি ভাব ফুটিয়ে তুলে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বেডের দিকে এগুতে লাগলেন!
.
.
সমাপ্ত♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here