#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 44
.
.
সকাল দশটার দিকে ভাইয়া এসে আপুকে নিয়ে গেলেন!মাহিনকে কোলে নিয়ে সবার আড়ালে অনেকক্ষণ আদর করেছি!মাহিনও আমার গলা জড়িয়ে ধরে গালে কপালে তুলতুলে নরম ঠোঁটদুটো দিয়ে কিউট করে অনেকগুলো চুমু খেয়েছে!
.
আঙ্কেল আর ইফাজ আপুদের সাথেই বেরিয়ে গেলেন।আন্টি উপরে চলে গেলেন।আমি ইয়াশকে নিয়ে কিঁচেনে ঢুকলাম।ইয়াশ নাঁচতে নাঁচতে আমার সাথে আসলো!আমি ইয়াশের গালে একটা চুমু দিয়ে বললাম,
– বলো তো সোনা!আমরা কেনো কিচেনে আসলাম?
ইয়াশ অনেক ভেবেও যখন কোনোকিছু খুঁজে না পেলো তখন ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,
– কেনো?
– আমরা এখন চিনির পানি দিয়ে মুড়ি খাবো!তোমার ভাইয়া বাসায় নেই!
আমার কথা শুনে ইয়াশ লাফ দিয়ে উঠে বললো,
– সত্যিই!!
– হুম!বাট মুড়ি কোথায় রেখেছে?
– মনি জানে!
– মনি টিভির রুমে জিজ্ঞেস করে আসো তো!
আমার কথা শুনে ইয়াশ দৌড়ে মনির কাছ থেকে জেনে নিয়ে একদৌড়ে আমার কাছে এসে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো,
– ওই যে উপরে রাখা!
.
আমি পানির ভেতর চিনি মিক্সড করে তার ভেতর মুড়ি ঢেলে চামচ দিয়ে নাড়তে লাগলাম!বাটি-টা নিয়ে সোজা ইয়াশের রুমে চলে এলাম!ইয়াশ দরজা লাগিয়ে দিয়ে বললো,
– ভাবি, এতো সহজ বানানো?
– হুম!
দুজন বেডের উপর বসে আমি ইয়াশকে খাওয়াতে লাগলাম আর ইয়াশ আমাকে!ইয়াশ খুব মজা করে খাচ্ছিলো!মনে হচ্ছিলো কোনো একটা দামী রেস্টুরেন্টের খাবার!ইয়াশ হেসে হেসে কথা বলতে বলতে খাচ্ছিলো!যারজন্য ঠোঁটের কোনা দিয়ে পানি পরছিলো!আমি খুব যত্ন করে শাড়ির আঁচল দিয়ে সেই পানি মুঁছে দিচ্ছিলাম!
খাওয়া শেষে ইয়াশ আমার কোলে চুঁপটি মেরে শুঁয়ে পরলো!আমি ইয়াশের কপালে চুমু দিয়ে বললাম,
– ঘুমানোর প্লান হচ্ছে নাকি?
– একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও!অনেক ভালো লাগে তোমার হাত বুলানোটা!
ইয়াশের কথা শুনে আমি হেসে মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম!দুইভাই একদম একরকম!সেইম সবকিছু!বড় হলে একদম উনার মতো হবে!ইয়াশ চোখ বন্ধ করতেই আমি বললাম,
– একদম ঘুমানো চলবে না! এই যে হাত সড়িয়ে নিচ্ছি!
ইয়াশ আমার হাত টেনে ধরে বললো,
– সরি…সরি!দেখো চোখ খুলেছি!
– গুড!একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছো আবার ঘুমিয়ে পরলে শরীর খারাপ করবে!
ইয়াশ আর চোখ বন্ধ করলো না!ঘুম যাতে না আসে তার জন্য আমার সাথে গল্প জুড়ে দিলো!
.
একটার দিকে ইয়াশকে গোসল করিয়ে দিয়ে আমরা একদম লাঞ্চের টাইমে রুম থেকে বের হলাম!ইয়াশের ইচ্ছা ছিলো আজ যেনো আমি ও’কে গোসল করিয়ে দেই!ডাইনিং-এ সবাইকে দেখতে পেয়ে ভ্যাঁবাচ্যাঁকা খেয়ে খেলাম!আমি দ্রুত বাটিটা শাড়ির আঁচলের নিচে লুকিয়ে ফেললাম!চারজন-ই হা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে!আমি আর ইয়াশ কারোর দিকে নজর না দিয়ে চুপচাপ দুজন পাশাপাশি দু’টো চেয়ার টেনে বসে পরলাম!আমি বাটিটা কোলের উপর রেখে দিলাম!ইফাজ আমাদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– কি করছিলে দু’জন এতক্ষণ?
ইয়াশ বললো,
– খেলছিলাম!
– আর কিছু করো নি?
– নাহ্!
– মুড়িও খাও নি?
উনার কথা শুনে ইয়াশ চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো!সাথে সাথেই আমার হেঁচকি উঠলো!উনি জানলো কিভাবে আমরা মুড়ি খাচ্ছিলাম!মনি বলে দিলো নাকি!আমি মনির দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই মনি বলে উঠলো,
– আমি কিছু করি নাই কা!কিচেনে মুড়ি দেইখা খালা চিল্লায়া কইলো এইসময় মুড়ি খাইসে কেডা?বড়ভাইজান তহন কিচেনে ঢুইকা কইলো আপনি আর ইয়াশ নাকি খাইতেসেন!
আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন,
– বাটিটা টেবিলে উঠিয়ে রাখো!
আমি বাটিটা টেবিলে রেখে আন্টি-আঙ্কেলের দিকে তাকাতেই দেখলাম উনারা মুখটিঁপে হাসছেন।ইশ্!উনারা কি ভাবছেন!তাদের পুত্রবধূ মুড়ি খায়!ছিঃ!
.
.
আমি রুমে ঢুকে উনার ভয়ে সরাসরি ওয়াশরুমে ঢুকে পরলাম!দরজা লাগানোর আগেই উনি ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে আমাকে ওয়াশরুম থেকে বের করে এনে বললেন,
– লজ্জা নিবারন করতে যাচ্ছিলে নাকি ভয়?
– …..
– এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে মুড়ি না খেয়ে প্লেটভর্তি ভাত খেলেও তো পারো!
– একটু মুড়ি খেলে কি হয়?
উনি হাসতে হাসতে বললেন,
– গ্যাস বের হয়!প্রচুর গ্যাস….
– ছিঃ!অসভ্য কোথাকার!
বলেই আমি উনার বুকে কয়েকটা কিল-ঘুষি মেরে রুমের বাহিরে বের হওয়ার জন্য দরজা খোলার আগেই উনি দরজা বরাবর দাড়িয়ে দরজা লক করে দিলেন!আমি সামনে থেকে উনাকে সরানোর চেষ্টা করতেই উনি আমার দু’হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে বললেন,
– বাহিরে বের হওয়া নিষেধ!
– আমি ইয়াশের কাছে যাবো!
– আম্মু ইয়াশের কাছে আছে!ইয়াশকে এখন ঘুম পাড়াবে!
– ইয়াশ আমাকে ছাড়া ঘুমাবে না!সরুন…
– আম্মুকে একটা টেকনিক শিখিয়ে দিয়ে এসেছি!আম্মু এখন থেকে সেই টেকনিক-ই ইউজ করবে!
আমি ভ্রু কুচঁকে জিজ্ঞেস করলাম,
– কি টেকনিক?
– নো…বলা যাবে না!চলো….আগে আমার সাথে রোম্যান্স করবে!
– কিহ্!এই ভর-দুপুর বেলা রোম্যান্স!!
– এ্যাহ্ আসছে!রোম্যান্স কেউ টাইম দেখে করে নাকি!
বলেই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে স্টাডি-রুম থেকে একটা বই এনে আমাকে বেডের মাঝখানে বসিয়ে নিজে এসে আমার কোলে মাথা রেখে শুঁয়ে পরলেন!বইটা খুলতে খুলতে বললেন,
– টিয়াপাখি!ফ্লাটে উঠবে কবে?
– চারমাস পর!
– এমনভাবে উত্তর দিলে মনে হলো আগে থেকেই উত্তরটা ঠিক করে রেখেছিলে!
– ওরকমই!
– এতো লেইট করার রিজন-টা কি জানতে পারি?
– উহুম!আগে সময় আসুক!পরে এমনিতেই জানতে পারবেন!
আমার উত্তরটা শুনে উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালেন!দেখে মনে হচ্ছে উত্তরটা হঁজম করতে পারেন নি!হয়তোবা ভেবেছিলেন আমি বলবো “এমনি,এখন যাবো না।আর কয়েকদিন পর যাবো।এখন যেতে ইচ্ছে করছে না।একা একা ফ্লাটে ভালো লাগবে না।”
.
আমি টপিক চেঞ্জ করে বললাম,
– আচ্ছা, আমি মরে গেলে কি আপনি অন্য কাউকে বিয়ে করবেন?
আমার কথাটা শুনে উনি ধঁড়ফঁড় করে উঠে একটানে আমাকে বুকে চেঁপে ধরে বললেন,
– থাপ্পড় দিয়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দেবো!ফাযিল মেয়ে কোথাকার!
– আরে….আমি তো জাস্ট কথার….
– এখন কিন্তু সত্যিই আমার হাতের থাপ্পড় খাবে!থাপ্পড় খেতে না চাইলে চুপ থাকো!নেক্সট টাইম যদি এই টাইপের কোনো কথা শুনি আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না!বলে দিলাম…
বলেই উনি আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে আমাকে নিয়ে শুয়ে পরলেন!উনার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম চোখ বন্ধ করে আছেন!আমি উনার পিঠে কিছুক্ষণ স্লাইড করে আঙ্গুল দিয়ে একজনের নাম লিখে বললাম,
– বলুন তো কার নাম লিখেছি?
উনি চোখ বন্ধ করেই বললেন,
– খেয়াল করি নি!
আমি আবার লিখলাম!উনি বললেন,
– ইফায়া!!
আমি হেসে বললাম,
– কারেক্ট!
উনি আমার মুখ উপরে তুলে ভ্রু কুচঁকে জিজ্ঞেস করলেন,
– ইফায়া-টা কে?
– আমাদের ফার্স্ট বাবুর নাম!আমাদের মিলনে যেমন আমাদের বাবু হবে,তেমনি আমাদের নামের মিলনে আমাদের বাবুর নাম হবে!ফার্স্ট আমাদের ছেলে হোক আর মেয়ে!নাম রাখবো ইফায়া!
আমার কথা শুনে উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকাতেই আমি উনার বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললাম!কিছুক্ষণ পর আমি আবার আঙ্গুল দিয়ে উনার পিঠে আরেকটা নাম লিখলাম,
– বলুন!
– হিয়াজ!!
বলেই উনি আমাকে আগের থেকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন!উনি এমনভাবে বললেন মনে হলো ডিভলি মনোযোগ দিয়েছিলেন লেখার সময়!উনি বললেন,
– এটা কার নাম,শুনি?
– এটা হচ্ছে আমাদের ছেলে বাবুর নাম!এই নামটাতেও কিন্তু আপনার আমার নামের অংশ আছে!
উনি আমার কঁপালে গভীরভাবে একটা চুমু খেয়ে বললেন,
– মেঘ না চাইতেই জল!বেবিদের নিয়ে কথা বলছে আমার টিয়াপাখি!
– এই যে….এইসব কথা বলে একদম লজ্জায় ফেলবেন না আমায়!
আমার কথা শুনে উনি শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন!হাসতে হাসতে বললেন,
– ওকে…ওকে…সরি!আর বলবো না এসব কথা!
উনার কথায় আমি মিষ্টি হেসে একইভাবে আরেকটা নাম লিখলাম!আমি বলার আগেই উনি উচ্ছ্বোসিত কন্ঠে বলে উঠলেন,
– ফাহিয়া!!!
উনি ভ্রু নাঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– এটা কার নাম?
– এটা আমাদের মেয়েবাবুর নাম!
– আই লাভ ইউ টিয়াপাখি!
আমি উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উনার বুঁকে চুমু খেয়ে বললাম,
– আমিও আপনাকে ভালোবাসি! আপনার থেকে অনেক অনেক বেশি!
– হুম,সেটা তো প্রমান করেই দিলে আজ!বাট আমাদের যে এখনো আরো দু’টো বাবুর নাম বাকি!
– ওদের নাম আপনি রাখবেন!
উনি আমার থুঁতনী ধরে উপরে তুলে আমার চোখে চোখ রেখে বললেন,
– আমার টুন-টুনি বাবুদের মা!
আমি ভ্রু কুচঁকে জিজ্ঞেস করলাম,
– টুন-টুনি?
– হুম!আমার টুইন্স বেবির নাম!মনে নেই তোমার?একদিন বলেছিলাম,আমার টুইন্স বেবি ভীষন পছন্দ!টুন-টুনি ওদেরই নাম!একটার নাম টুন,আরেকটার নাম টুনি!
– এটা আবার কেমন নাম!টুনি নামটা নাহয় মানলাম!কিন্তু টুন?আমি ফিউচারে যখন টুন বলে ডাকবো তখন টুন তো রাগ করে বলবে “আম্মু,বাবাই এটা কি নাম রেখেছে?একদম পঁচা!”
আমার কান্ড দেখে উনি হাসতে হাসতে বললেন,
– টিয়াপাখি!তুমি তো খুব ভালো এক্টিং পারো!
– কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই!অন্য নাম রাখুন!
– উহুম!হবে না!এই দুটো নামই রাখবো!টুন একটুও রাগ করবে না!দেখে নিও….
.
.
(চলবে)