real love পর্ব ৪৫

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
part: 45
.
.
বিকালের দিকে ইফাজ ইয়াশ আর আমাকে নিয়ে শপিংমলে ঘুরতে গেলো!শপিং করতে না,জাস্ট শপিংমলে ঘুরতে!আমাদের দুজনের হাতে দু’টো আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে আমাদের নিয়ে পুরো শপিংমল ঘুরতে লাগলো!উনি ঢং করে আমাদের বিভিন্ন শো-রুম দেখিয়ে বলছেন- এটা শাড়ির শো-রুম!এটা ডায়পার এর শো-রুম!এটা আন্ডারওয়ারের শো-রুম!অনেক কিউট আন্ডারওয়ারগুলো,তাই না?
উনার প্রতিটা কথার প্রতিত্ত্যুরে আমরা দু’জন শুধু “হুম!ওহ্!আচ্ছা!ওয়াও!”এগুলো বলছি!আসলে ওখানে না ছিলো কেনো ডায়পারের শো-রুম আর না ছিলো কেনো আন্ডারওয়ারের শো-রুম!জাস্ট মজা করার জন্য কথাগুলো বলছিলেন!
.
হঠাৎ উনি আমাদের দু’জনকে বললেন,
– তোমরা আগাও!আমি আসছি!
উনার কথামতো আমরা সামনে হাঁটতে লাগলাম!কিছুক্ষণ পর ফোন রিং হওয়াতে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম ইফাজ ফোন দিয়েছেন!আমি আশেপাশে তাকিয়ে উনাকে খুঁজতেই একটা শো-রুমের সামনে দেখতে পেলাম!উনি হাতের ইশারায় আমাকে অন্যদিকে তাকাতে বলছেন আর ফোনটা রিসিভ করতে বলছেন!আমি অন্যদিকে তাকিয়ে ফোনে জিজ্ঞেস করলাম,
– কি হয়েছে?এরকম কেনো করছেন?
– অনেকক্ষণ ধরে তোমাকে একটা ছেলে আর একটা আন্টি ফলো করছিলো!তোমার পেছনে উনারা দাড়িয়ে আছে!আমার সন্দেহ হচ্ছে মা-ছেলে শপিংমলে শপিং করতে আসে নি!পাত্রী দেখতে এসেছে!
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে পেছনে তাকাতেই দেখলাম একটা আধবয়সী আন্টি সাথে 26/27 বছরের একটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!আমার তাকানোতে উনারা মনে হলো একটু সাহস পেলেন যারজন্য আমার দিকে এগিয়ে আসছেন!আমি ইয়াশের হাত শক্ত করে ধরে উনাকে বললাম,
– উনারা এদিকেই আসছেন!কি করবো এখন?
– কিচ্ছু করতে হবে না!চুপচাপ থাকবে!আর কিছু জিজ্ঞেস করলে নরমালি আন্সার দিবে!ইয়াশের পরিচয় দিবে ও তোমার ছোট ভাই!ওকে?
– মানে?কি করতে চাচ্ছেন আপনি?
– টিয়াপাখি!বেশি কথা না বলে যেটা বললাম সেটা করো!দেখতে চাই কতদূর যায়!
বলেই ফোন কেটে দিলেন।
.
উনারা একহাত দুরত্ব বজায় রেখে আমার সামনে দাড়ালেন!ইয়াশ আমার হাত ধরে টানতে টানতে বললো,
– চলো ভা…
আমি সাথে সাথেই ইয়াশের মুখ চেঁপে ধরে বললাম,
– ভাত এখানে পাওয়া যায় না তো!আমরা বাসায় যেয়ে খাবো!
আঁচমোকা সামনে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটা কাছে এসে ইয়াশকে কোলে তুলে নিলো!আন্টি-টা ইয়াশকে ইশারা করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– কে হয় তোমার?
আমি হেসে বললাম,
– আমার ছোট ভাই!
সাথে সাথেই ইয়াশ বলে উঠলো,
– ছাড়ো!আমি ভাবির কাছে যাবো!
ইয়াশের কথা শুনে আন্টি-টা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,
– ভাবি কে?
– আমি!আমার নাম ভাবি!
আমি দ্রুত উত্তর দিলাম!আমার নামটা শুনে দুজনের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো!নিশ্চয় ভাবছেন “এরকম নামও মানুষের হয় নাকি!”
.
আমি ছেলেটার কোল থেকে ইয়াশকে নামিয়ে বললাম,
– আপনারা কি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছেন?
আন্টি-টা আমার একদম কাছে এসে বললেন,
– তোমার বাবার নাম কি?
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– কেনো আন্টি?
– বলতে কোনো প্রবলেম?
– না আন্টি!প্রবলেম কেনো হবে?আব্বুর নাম এনামুল হক!
আমি আসল নামটা বললাম না!আন্টি পার্স থেকে ফোন বের করে বললেন,
– তোমার বাবার নাম্বারটা দাও তো!
আন্টি-টার সাহস দেখে আমি রীতিমতো অবাক হয়ে যাচ্ছি!আমি জিজ্ঞেস করলাম,
– আব্বুর নাম্বার দিয়ে কি করবেন?
– একটু কথা বলতাম!ছেলে আমার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে এদিকে মেয়ে পছন্দ করতে পারছে না!শোপিং করতেই এসেছিলাম!হুট করে তনয়ের নজর তোমার দিকে পরলো!পছন্দ….
আমি আন্টিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে “এক্সকিউজ মি” বলে উনাদের থেকে একটু দূরে এসে ইফাজকে ফোন দিলাম!উনি সাথে সাথেই রিসিভ করলেন!আমি রাগান্বিত স্বরে বললাম,
– আপনি আসবেন নাকি আমি কান্না করে দিবো?
– ওহ্ নো!ওয়েট এ মিনিট….আমি আসছি!
আমি চোখ রাঙ্গিয়ে ইফাজের দিকে তাকাতেই উনি মাফ চাওয়ার ভঙ্গি করে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন!
.
ইফাজ আমাদের কাছে এসে আমার পাশে দাড়িয়ে ব্লেজার-টা টান দিয়ে বললেন,
– এখনো এখানে দাড়িয়ে কেনো?চলো….
এতক্ষণ আন্টির পাশে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটা চুপচাপ ছিলো!উনাকে দেখে মুখ খুললেন!আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– ইনি কে?
ইফাজ চোখের পলকে আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– সী ইজ মাই ওয়াইফ!মিসেস ইফাজ চৌধূরী!
উনার কথা শুনে সামনের দুজনের চেহারা বিস্ফোরিত হয়ে গেলো!চারটা চোখ মনে হচ্ছে এইমুহূর্তে বেরিয়ে আসবে!আন্টি ফোনটা পার্স-এ ঢুকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– আর ইউ মেরিড?
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম!আমার উত্তর শুনে মা-ছেলে দুজন দুজনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন!আমি নিচুস্বরে আন্টিকে সালাম দিয়ে দুইভাইকে টেনে উনাদের সামনে থেকে নিয়ে আসলাম!
.
.
অনেক শপিং করে ছয়টার দিকে আমরা বাসায় ব্যাক করলাম!আমি ভেবেছিলাম সত্যি সত্যিই উনি শপিংমলে ঘুরতে গিয়েছেন!
.
আন্টি-আঙ্কেল ড্রইংরুমেই বসে ছিলেন!আমাদের দেখে মনি এগিয়ে এসে শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে সেন্টার টেবিলে রাখলো!উনি আঙ্কেলের পাশে বসতে বসতে শপিংমলের ঘটনাটা বলে দিলেন!ঘটনাটা শুনে আন্টি কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলেন,
– সাহস কতবড় বেয়াদব মহিলার?এইসব মহিলাদের উল্টো ঝুলিয়ে পিটানো উচিৎ!যত্তসব ফালতু পাবলিক!!!
আন্টির কান্ড দেখে আমি উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম!মনি শপিং-ব্যাগ থেকে সবকিছু বের করে দেখা শুরু করে দিয়েছে।ইয়াশকে অনেকগুলো খেলনা কিনে দিয়েছেন।ইয়াশ ফ্লোরে বসে খেলনাগুলো নিয়ে খেলছে।আন্টি-আঙ্কেল দুজনের জন্য শাড়ি-পাঞ্জাবি কিনেছি।শাড়ি-পাঞ্জাবি দুটোই আমি নিজে পছন্দ করে কিনেছি।মনির জন্যও সুন্দর দেখে একটা শাড়ি কিনেছি।মনির শাড়িটা ভীষন পছন্দ হয়েছে।ড্রইংরুমে সবার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করে উপরে চলে এলাম।রুমে ঢুকেই আমি বেডের উপর ধপাস করে শুয়ে পরলাম।প্রচুর টায়ার্ড লাগছে।
.
উনি একহাতে তিনটা শপিংব্যাগ নিয়ে রুমে ঢুকে ব্যাগগুলো সোফার উপর রেখে দরজা লক করে দিলেন।আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম।উনি ব্লেজার খুলতে খুলতে বললেন,
– তখন আমি না গেলে সত্যি কান্না করে দিতে?
আমি রাগান্বিত স্বরে বললাম,
– আর কোনোদিন যদি এরকম করতে দেখি,সেদিন আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।বলে দিলাম।
– কি করবে সেদিন?
আমি কোনো উত্তর দিলাম না।
.
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি আমার একদম গা ঘেঁষে বসে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।আমার কাধে থুঁতনী রেখে বললেন,
– আমি তো জাস্ট একটু মজা নিতে চেয়েছিলাম।
– এটাকে মোটেও মজা বলে না।
– এই রে…..আর হবে এমন!সরি!
– ….
– রাগ করেছো?
– উহুম!
– সত্যি তো?
– হুম!
উনি আমার ঘাঁড়ে চুমু খেয়ে বললেন,
– ওকে…একটা ইম্পরট্যান্ট কথা ছিলো,বলি?
– পারমিশন নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন কবে থেকে?
– বিয়ে হওয়ার পর থেকে।তোমার কাছ থেকে শিখেছি।
আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার গালে একটা চুমু খেয়ে বললেন,
– বলবো?
– বলুন….
উনি একটু কেঁশে বললেন,
– আমরা হানিমুন যাচ্ছি কবে?
হঠাৎ উনার এরকম কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।উনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বললেন,
– তুমি যেদিন বলবে,আমরা সেদিন-ই যাবো।
আমি না বোঝার ভাব ধরে বললাম,
– হানিমুন কি?
আমার কথা শুনে উনি ভ্রু কুচঁকে আমার দিকে তাকাতেই আমি অন্যদিকে তাকালাম।হঠাৎ উনি কোমড়ে চাঁপ দিয়ে বললেন,
– বুঝিয়ে বলবো নাকি প্র্যাকটিকেলি এখনই দেখিয়ে দিবো?
– এই না……
বলেই আমি লাফ দিয়ে বেডের অন্যসাইডে চলে আসলাম।উনি কিছু একটা বলতে যাবেন আমি সেই সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বলে উঠলাম,
– এক…এক বছর পর।
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here