#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 59
.
.
ইফাজের কথার প্রতিত্ত্যুরে আমি কিছুই বললাম না।ইফাজ বললেন,
– ওকে!কিছু বলতে হবে না।তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নাও।
– আমি এটা পরেই যাবো।শাড়িটা একেবারে নতুন।একদিন মাত্র পরেছি।
আমার এইমুহূর্তে খুড়িয়ে খুড়িয়ে উনার সামনে দিয়ে হেঁটে আলমারি থেকে শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে যেয়ে চেঞ্জ করে আসার কোনো ইচ্ছে নেই।উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন,
– নামো।
– উহু….আমাকে গাড়ি পর্যন্ত কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।
আমার কথা শুনে উনার চেহারা ঝলমল করে উঠলো!মনে হলো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন!ঝট করে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে কিউট একটা হাসি দিয়ে বললেন,
– এতো মিষ্টি কেনো তুমি!!!
আমি উনার বুকে মুখ লুকিয়ে বললাম,
– বাবুদের বাবা মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করেন তো,তাই!
কথাটা বলেই আমি শক্ত করে চোখ বন্ধ করলাম!উনি প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলেন,
– ইয়া খোদা!!!এটা কি বললে টিয়াপাখি!
আমি লজ্জায় কিছু বললাম না।উনি আমাকে অনেকটা উপরে তুলে সকালের কামড়ের জায়গায় আরেকটা কামড় লাগিয়ে বললেন,
– আমার ডায়াবেটিকস কেনো হচ্ছে না!আমি তো নিয়ম করে প্রতিদিন খাটি মিষ্টি খাই!
উনার কথা শুনে আমি উনার ব্লেজারের কলার টেনে ধরে বললাম,
– দেরি হয়ে যাচ্ছে তো!একটু পর ইয়াশ চলে আসবে।
উনি আমার পুরো মুখ চুমোয় ভরিয়ে দিয়ে
বেরিয়ে পরলেন!
.
চেকআপ করিয়ে ডক্টর দেখাতে দেখাতে প্রায় তিনঘন্টার মতো লেগে গেলো।রিপোর্ট নরমাল!তেমন কিছুই হয়নি!ভীষন টেনশনে ছিলাম এই কয়েকঘন্টা!নিজের কেয়ারলেসের জন্য ওদের কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে সেইমুহূর্তেই শেষ করে ফেলতাম!বাসায় যেয়ে যোহরের সাথে কয়েক রাকায়াত নফল নামাযও পড়তে হবে!উফ্ এই টেনশনে মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে!
উনি আমাকে গাড়িতে বসিয়ে সিটবেল্ট লাগিয়ে দিয়ে নিজে যেয়ে সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।ইয়াশটা ফ্লাটের সামনে গাড়িতে বসে ওয়েট করছে আমাদের জন্য।একটু আগে ইয়াশের ড্রাইভার ফোন করে জানালেন ইফাজকে।
পনেরো মিনিটে ফ্লাটে পৌছে গেলাম।ইয়াশের গাড়ি ফ্লাটের সামনে রাখা ছিলো।আমি গাড়ি থেকে নেমে ইয়াশের সাইডের জানালার কাঁচে টোকা দিলাম।সাথে সাথেই ইয়াশ দরজা খুলে লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ভাবি!
– সরি সোনা!
– ফ্লাটে যেয়ে যখন মেইনডোর লক করা দেখলাম জানো কত ভয় পেয়েছিলাম?
ডক্টরের কাছে কেনো গিয়েছিলে?
আমি হেসে ইয়াশের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
– গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম,সেজন্য!
এই একই কথা উনাকে বলে এইযাত্রায় বেঁচে গিয়েছি!খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে দেখে যেভাবে জেরা শুরু করেছিলেন,উফ্!আর একটু হলে ধরা পড়ে যেতাম!আমি ইয়াশকে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
.
.
রাতে সবার ডিনার শেষে রাত সাড়ে নয়টার দিকে নাফিসার কল এলো।ইফাজ অফিসের কাজে ব্যস্ত আর ইয়াশ স্কুলের পড়ায়।আমি উঠে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রইংরুমে চলে এলাম।কল রিসিভ করে বললাম,
– কেমন আছিস?
– আছি ভালো।তোমার কি অবস্থা?
– ভালো।নাম্বার পেলি কোথায়?
– ভাইয়ার কাছ থেকে নিলাম।বাবু কেমন আছে?
– আর বলিস না বোন।আজ সকালের দিকে পড়ে গিয়েছিলাম।দুপুরের দিকে ডক্টর দেখিয়ে এলাম।পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছিলাম বাট মন মানছিলো না তাই ডক্টর দেখিয়ে শিওর হয়ে এলাম।
নাফিসা অবাক কন্ঠে বললো,
– মাই গড!!একটু তো দেখেশুনে হাটবে,নাকি?ভাইয়া কিছু বলেনি?
– ইফাজ জানে না।উনাকে যাস্ট চেকআপ করানোর কথা বলে নিয়ে গিয়েছি।
– কি বলো?টেরও পেলো না?
– হসপিটালে যাওয়ার সময় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে একবার জিজ্ঞেস করেছিলো এভাবে কেনো হাটছি,আমি কোনোরকমে বলে দিয়েছি গাড়ি থেকে নামতে নিয়ে একটু ব্যাথা পেয়েছি।আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি,আমাকে ধরে ধরে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো।
– তুই এমন চাঁপা স্বভাবের কেনো আপু?ভাইয়াকে বলে দেওয়াই কি বেটার ছিলো না?যা সত্যিটা বলে আয়।
– নো ওয়ে!আমাকে খতম করে দিবে।আর এইমুহূর্তে আমিও সুস্থ আছি,বাবুও সুস্থ।শুধু শুধু এখন কথা উঠিয়ে লাভ নেই।
– ফোন রাখ তুই।
– আরে রাগ করছিস কেনো?
– বাই।
নাফিসা কেটে দিলো।আমি কিছুক্ষণ হা হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
রুমে ঢুকতেই দেখলাম ইফাজ ফোনে কাউকে জিজ্ঞেস করছেন “তুমি কেমন আছো?”
আমাকে হাতের ইশারায় উনি কাছে ডাকলেন।আমি ইয়াশের পাশে গিয়ে বসলাম।ইফাজ হঠাৎ বলে উঠলো “আজ চেকআপ করাতে তোমার বোনকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম!দুজনই সুস্থ আছে!”
কথাটা শোনামাত্রই আমি উনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কে ফোন করেছে?উনি ঠোঁটের ইশারায় বললেন “নাফিসা”
সাথে সাথেই আমার গলা শুঁকিয়ে এলো!নাফিসা নিশ্চিত উনাকে বলে দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছে!
আমি আর একমুহূর্তও অপেক্ষা না করে ইয়াশের বই,খাতা,ব্যাগসহ ইয়াশকে নিয়ে অন্যরুমে এসে দরজা লক করে দিলাম।উনি আজ আমাকে শেষ করে ফেলবেন!ভয়ে হাত-পা কাঁপছে!ফাযিল মেয়ে একটা!
আমি ইয়াশকে পড়ানোতে মন দিলাম।ইয়াশ হোমওয়ার্ক শেষ করে সব পড়া কমপ্লিট করে শুঁয়ে পরলো।আমি ইয়াশের বই-খাতা গুঁছিয়ে রেখে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে শুঁতেই ইয়াশ বললো,
– ভাবি!
– ঘুমোয় নি এখনো?
– উহু।মাথায় বিলি কেটে দাও।
আমি ইয়াশের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে উনার কথা ভাবছি।উনি নিশ্চয় রেগে আছেন।কি করছেন কে জানে!
.
সাড়ে এগারোটায় দরজায় নক করার শব্দে লাফ দিয়ে উঠলাম!ইয়াশ অঘোরে ঘুমোচ্ছে!আমি বেড থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে পরলাম।উনি একের পর এক নক করেই যাচ্ছেন,কোনো ডাকাডাকি করছেন না!আমি বুকে হাত দিয়ে দরজার সাথে মাথা ঢেকিয়ে দাড়ালাম!এখন বকা খাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই!
– দরজা ভেঙ্গে ফেলবো নাকি খুলবে?
আমি কয়েক কদম পিছিয়ে বুকে থুঁথুঁ দিলাম!হঠাৎ কথা বলাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!
উনার কন্ঠ খুব গম্ভীর শোনালো!খুব রেগে আছেন মনে হচ্ছে!আমি পেটে হাত রেখে বললাম,
– তোদের বাবা-টা না বড্ড রাগী!
হঠাৎ দরজায় ভীষন জোরে আওয়াজ হলো!পা দিয়ে লাথি দিলেন মনে হলো!আমি আর একমুহূর্তও দাড়িয়ে না থেকে দরজা খুললাম!বেশি দেরি করলে সর্বনাশ!
দরজা খোলার সাথে সাথেই উনি একঝটকায় আমাকে কোলে তুলে অন্যরুমে নিয়ে গিয়ে বেডের উপর বসিয়ে হাতদুটো মুষ্টিবদ্ধ করে আমার সামনে দাড়ালেন!উনার হাতের রগ ফুঁলে উঠেছে!ভয়ে উনার দিকে তাকাচ্ছি না পর্যন্ত!আমার বুকের ভেতর ঢিঁপঢিঁপ শব্দ হচ্ছে!
আমি বুকে আনলিমিটেড সাহস এনে মাথানিচু করে উনার মুষ্টিবদ্ধ হাত শক্ত করে ধরে বললাম,
– সরি!
উনি চুপচাপ!কোনো কথা বলছেন না!এদিকে আমার আত্মার পানি শুঁকিয়ে যাচ্ছে!আমি গুঁটিশুঁটি মেরে হাটুর উপর মাথা ঠেকিয়ে বললাম,
– অ্যা’ম স্যরি!প্লিজজজ….
– ডক্টরের কাছে এইজন্য গিয়েছিলে?
আমি ভয়ে উত্তর দিলাম না!উনি ধঁমকে উঠলেন!সাথে সাথেই আমি মাথা নেড়ে “হ্যা” সূচক উত্তর দিলাম!উনি প্রায় চিৎকার দিয়ে বললেন,
– সমস্যা কি তোমার,হুম?
উনার চিৎকারে আমার হাত-পা ন্যানো-গতিতে কাঁপছে!আমি দাতে দাত চেঁপে শক্ত করে চোখ বন্ধ করে একপায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে অন্যপায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে খোঁচাচ্ছি!
.
অনেকক্ষণ হলো উনি কোনো কথা বলছেন না!আমি হাঁটু থেকে মাথা একবারও তুলি নি!উনি কি আদৌও রুমে আছেন?থাকলে চেঁচাচ্ছেন না কেনো?ইফাজের নিরবতা বড্ড ভয়ঙ্কর!বুকের ভেতর ধুঁকধুঁক করছে!আমি হালকা মাথা উপরে উঠিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম কি করছেন উনি?সেই একই অবস্থায় দাড়িয়ে আছে,হাতের রগ মনে হচ্ছে আরো ফুঁলে উঠেছে!আমি একসেকেন্ডও অপেক্ষা না করে দ্রুত বেড থেকে নেমে উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– স্যরি আমার একশো-সন্তানের জনক!প্লিজ মাফ করে দাও,প্লিজ!আর কখনো হবে না এরকম!প্লিজ….একটু জড়িয়ে ধরো,ভয় পাচ্ছি খুব!আমি এখন থেকে দেখেশুনে হাঁটবো!কোনো প্রবলেম হলে জানাবো!আমি ভয়ে-ই কিছু জানায়নি!সব তো ঠিকঠাক আছে,আমারও কিছু হয়নি তোমার সন্তানেরও কিছু হয়নি!তুমি দুপুরে বলছিলে না এতক্ষণ ধরে কিসের নামায পড়ছি আমি,ওদের জন্য নফল নামায পড়ছিলাম।প্লিজ…..জড়িয়ে ধরো নাহলে এখনই ভয়ের চঁটে অজ্ঞান হয়ে যাবো!
ইফাজ সাথে সাথেই জড়িয়ে ধরে বললেন,
– ধরেছি টিয়াপাখি!প্লিজ শান্ত হও!এভাবে কাঁপছো কেনো?রিলেক্স….প্রবলেম হবে তো!উফ্, তোমাকে দেখছি দোষ করলেও বকা দেওয়ার সাধ্য নেই আমার!এতো ভয় মানুষ পায়?তাও আবার হাজবেন্ডকে!
.
আমি ঘাঁমছি!হাত-পা কাঁপুনি আরো বেড়েছে!উনি আমাকে বেডে বসিয়ে পানির গ্লাস এনে আমাকে পানি খাঁইয়ে দিয়ে বললেন,
– এরকম ভয় আর কোনোদিন দেখাবো না,প্রমিজ!কাঁপাকাঁপি বন্ধ করো,প্লিজ!তোমার প্রবলেম হবে তো,রিলেক্স হও!দেখো আমি একদম নরমাল!
আমি কাঁপাকাঁপা ঠোঁটে ছলছল চোঁখে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুঁয়ে পরলেন!
.
.
(চলবে)