#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 60
.
.
ভয়ের চঁটে জ্বর এসে গিয়েছিলো।সকালে উঠে ব্রেকফাস্টের পর মেডিসিন খেয়ে শুঁয়ে ছিলাম।সারাদিন ইফাজ আমার সাথেই ছিলো।
.
দুদিন পর আঙ্কেল আর আন্টি এসে ইয়াশকে নিয়ে গেলেন।সকালের দিকে আন্টি-আঙ্কেল এসে কিছুক্ষণ আমার সাথে সময় কাটিয়ে বিকেলের দিকে ইয়াশকে নিয়ে চলে গেলেন।আন্টি-আঙ্কেল যতক্ষণ বাসায় ছিলেন ততক্ষণই আমি গায়ে একটা শাল জড়িয়ে ছিলাম।এই গরমে শাল নেওয়াতে আন্টি অবশ্য জিজ্ঞেস করেছিলেন শাল কেনো পরে আছি?আমি ঠান্ডা লাগার বাহানা দিয়ে কেটে পরেছি।
আন্টি-আঙ্কেলকে ফ্লাটে ঢুকতে দেখে ইয়াশের সেকি কান্না।আমাকে নিয়ে রুমে দরজা লক করে বসে ছিলো কতক্ষণ।আমি তো আন্টিকে সাফ্ জানিয়ে দিয়েছিলাম আপনারা একাই ঘুরে আসুন,ইয়াশকে অন্য কোনোদিন নিয়ে যাবেন।কিন্তু আঙ্কেলের ছেলেকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো না।যারজন্য আঙ্কেল নেটে সার্চ দিয়ে ইয়াশকে বিশাল বড় বড় ঝরনা,পাহাড়,চা বাগান,সমুদ্র আরো অনেক অনেক চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় প্লেস দেখিয়ে ইয়াশের উইক পয়েন্টে আঘাত করে ছলেবলে কৌশলে আমার কাছ থেকে নিয়ে গেলেন।
.
আজ সন্ধ্যেয় তুলি আসে নি।রাতের কোনো আইটেম এখনো করা হয়নি।কিচেনে রান্না করার জন্য ঢুকতেই পেছন পেছন ইফাজও এলেন আমাকে পাহারা দিতে।আমি রাইসকুকারে ভাত বসিয়ে দিয়ে তরকারী রাঁধার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করছিলাম!ইফাজ হঠাৎ শাড়ির আঁচল টান দিয়ে বললেন,
– টিয়াপাখি!
– হুম!
– মাঝেমধ্যে তোমার মুখ থেকে “তুমি” ডাক শুনতে ভীষন মিষ্টি লাগে।
সেইমুহূর্তে তোমাকে যাস্ট খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে!এখন একটু লক্ষী বউয়ের মতো “তুমি” করে ডাকো তো!
আমি উনার হাত থেকে শাড়ির আঁচল টান দিয়ে বললাম,
– সম্ভব না!ছাড়ুন!
বলেই আমি রান্নায় মন দিলাম!উনার দিকে তাকালাম না পর্যন্ত!এইমুহূর্তে উনার দিকে তাকালেই বিপদ!উনি শাড়ির আঁচল জোরে টান দিয়ে বললেন,
– এ্যাই বউ!
আমি হাতের নাইফটা উনার দিকে তাক করে বললাম,
– গেট আউট!
উনি নিজের বুকে হাত রেখে ভয় পেয়েছে এমন ভঙ্গিমা করে এককদম পিছিয়ে গেলেন।সাথে সাথেই কাছে এসে আমার পেছনে গা ঘেঁষে দাড়িয়ে গাল টেনে বললেন,
– এতো বড় সাহস তোমার?
– উফ্!দেখি ছাড়ুন!বারোটা বাঁজাচ্ছেন কিন্তু রান্নার!
উনি আমার কথার পাত্তা না দিয়ে আঁচল কোমড়ে গুঁজে দিয়ে বললেন,
– রান্নার সময় এভাবে কোমড়ে শাড়ি গুঁজে রান্না করতে হয়,জানো না?
– নাতো!কোন বইয়ে লেখা আছে?
– তোমার বাবুদের বাবার বইয়ে লেখা আছে!সেখানে আরো অনেককিছু লেখা আছে যেমন ধরো ইফাজের বউকে পিন ছাড়া শাড়ি পরতে হবে,রাস্তায় বের হওয়ার আগে বউয়ের পেটিকোটের নাড় টাইট করে বেঁধে…..
উনার কথা শেষ করতে দিলাম না!কঁনুই দিয়ে পেটে গুঁতো দিয়ে বললাম,
– অসভ্য একটা!আপনার এখানে থাকার কোনো রাইট নেই!বের হোন কিচেন থেকে!ডাইনিং-এ গিয়ে বসুন নয়তো টিভি দেখুন!
– বাকিগুলো শুনবে না?
কথাটা বলেই উনি আমার গাল চেঁপে ধরে যাস্ট আমার মাথা উনার দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁটে একটা চুঁমু খেয়ে বসলেন,সাথে কামড় ফ্রি!আমি “আহ্” বলে চিৎকার দিতেই ইফাজ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটে মালিশ করে দিয়ে বললেন “স্যরি,টিয়াপাখি!”
আমি উনাকে জোর করে কিচেন থেকে বের করে দিলাম!এতক্ষণে অর্ধেক রান্না হয়ে যেতো!কিচেনের দরজা লাগিয়ে রান্নায় মনোযোগ দিলাম।
.
আধাঘন্টার মধ্যে রান্না শেষ করে ডাইনিং-এ খাবার পরিবেশন করে উনাকে ডাকলাম!উনি টিভি দেখছিলেন ড্রইংরুমে!ডাইনিং-এ এসে একটা চেয়ার টেনে আমাকে বসিয়ে প্লেটে ভাত-তরকারি মাখিয়ে এক লোকমা আমার মুখের সামনে ধরে বললেন,
– হাঁ করো!
– আমি একাই খেতে পারবো।আপনি আগে শুরু করুন।
– অনেক করেছো,আর না।রান্নাটা আমি পারলে এইটুকুও করতে দিতাম না।নাও,হাঁ করো।
আমি পাশের চেয়ারটা টেনে বললাম,
– বসুন আগে!
উনি চেয়ারে বসে আমাকে খাওয়াতে শুরু করলেন।উনিও খাচ্ছেন,আমাকেও খাঁইয়ে দিচ্ছেন।এভাবে আরো একপ্লেট ভাত নিয়ে সেটাও খাঁইয়ে দিলেন!উনার ভাষ্যমতে “এতক্ষণ আমরা খেয়েছি,এখন বাবুরা খাবে!”
একপ্লেট ভাত-ই এতোদিন খেতাম না,ওদের জন্য এখন নিয়ম করে দুইপ্লেট খেতে হয়!
.
ঘুমানোর সময় হঠাৎ আম্মুর ফোন আসলো।এতোরাতে কেনো?আমি রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললাম,
– কেমন আছো?
– ভালো আছি।একটা কথা বলতে ফোন দিলাম।
– হুম,বলো।
– পরশু তো তোর আব্বু চলে যাচ্ছে,তো কাল যদি সময় করে ইফাজকে নিয়ে আসতি ভালো হতো।
– কালই?
– হুম।
– আচ্ছা,দেখি।
– আচ্ছা তাহলে রাখি,খোদা হাফেজ!
– খোদা হাফেজ!
ফোনটা ঢিল মেরে বিছানার মাঝখানে ফেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবলাম।যাওয়াটা কি ঠিক হবে নাকি না?পেটের দিকে একবার তাকালাম।বোঝা যায় কি?হুম,যাচ্ছেই তো বোঝা!আমি দ্রুত বেড থেকে নেমে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়ালাম!এপাশ-ওপাশ ঘুরে ঘুরে দেখলাম!যাচ্ছে বোঝা!একটা শাল ইউজ করতে হবে!তাহলে আর কেউ টের পাবে না!আর নাফিসা তো আছেই….ম্যানেজ করতে পারবে!
উনি রুমে ঢুকে আমার কান্ড দেখে বললেন,
– ঘুরে ঘুরে কি দেখছো?
আমি মিররের ভেতর দিয়ে উনাকে কাছে ডাকলাম!উনি কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
– কি?
– দেখুন তো আমাকে বোঝা যায় নাকি?
উনি ভ্রুঁ কুচঁকে জিজ্ঞেস করলেন,
– মানে?
– আব্বু পরশু চলে যাবে।একটু আগে আম্মু কল করে কাল আপনাকে নিয়ে আব্বুর সাথে দেখা করার জন্য বাসায় যেতে বললো।সেটাই দেখছিলাম বোঝা যায় নাকি?
আচঁমোকা উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– আজ সকালে আব্বু-আম্মুকে যেভাবে বোকা বানালে সেভাবে নাফিসা বাদে অন্য সবাইকে বোকা বানাবে!
ইফাজ পেটে হাত রেখে বললো,
– কিন্তু ম্যাডাম,আমার সোনামনিরা অলরেডি অনেকটাই বড় হয়ে গেছে!এখন কাউকে বোকা বানানো সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না!
– তাহলে?
– কালকের কথা কাল দেখা যাবে।অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে চলো।
বলেই কোলে তুলে নিলেন!বেডের অপজিট সাইডে এসে আমাকে বেডে নামানোর আগেই আমি বলে উঠলাম,
– প্লিজ,এখনই না!কিছুক্ষণ কোলে নিয়ে হাটুন!ভালো লাগে খুব!
ইফাজ আমার নাকের সাথে নাক ঘষে বললেন,
– ওরে আমার দুষ্টু মহারাণী রে!
উনার কথা-টা শুনে আমি হেসে ইফাজের পরনের শার্ট আঁকড়ে ধরে উনার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম!
ইফাজ আমাকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন!কিছুক্ষণ পরপর সামান্য উপরে তুলে ঠোঁটে চুঁমু খাচ্ছেন!এটা নাকি উনার ফি!আমি কিছুই বলছি না!যতবার উনি কাজটা করছেন ততবারই আমার ঠোঁট প্রসারিত হচ্ছে!
.
কলিংবেলের শব্দে সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই পাশে তাকিয়ে ইফাজকে দেখতে পেলাম না।ওয়াশরুমে মনে হয়!আমি বেড থেকে নেমে মেইনডোরের দিকে পা বাড়ালাম।তুলি কলিংবেল বাঁজাচ্ছে।মেইনডোর খুলতেই তুলি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সালাম দিলো।প্রতিত্ত্যুরে আমিও হেসে সালামের উত্তর নিলাম।তুলি কিচেনে চলে গেলো।আমি রুমে এসে ওয়াশরুমে নক করে ইফাজকে তাড়াতাড়ি বের হতে বললাম।ভেতর থেকে উনি জবাব দিলেন,
– খোলা আছে!ঢুকে পড়ো!
আমি দরজা হালকা খুলে দেখলাম ইফাজ হাই কমোডের ঢাকনার উপর বসে বসে ব্রাশ করছেন।ছিঃ!কি বিচ্ছিরি অবস্থা!
আমি চোখ রাঙ্গিয়ে বললাম,
– এটা কি ব্রাশ করার জায়গা?
উনি হেসে বললেন,
– আমি তো প্রতিদিন এই স্টাইলেই ব্রাশ করি।
আমি ওয়াশরুমের ভেতরে ঢুকে ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে বললাম,
– দেখি সরুন!বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয়!
আমার কথা শুনে ইফাজ হাসতে হাসতে ফ্লাশের সাথে হেলান দিয়ে আমাকে একটানে কোলে বসিয়ে বললেন,
– নাও বসো!সবজায়গায় রোম্যান্স চলবে!
আমি বিরক্ত নিয়ে বললাম,
– ছিঃ!কমোড ভেঙ্গে নিচে পড়ে যাবো!আপনি উঠুন,আমি একাই বসবো!
– কি যে বলো না…তোমার আর কি ওজন!তোমার থেকে এই হাই কমোডের ওজনই বেশি!নিতে পারবে,বসো বসো!
আমি উঠে চলে আসলাম!যতোই হোক কম ওজন!ভেঙ্গে গেলেই কেলেঙ্কারি! নিউজে আসবে এক দম্পতি হাই কমোডে বসে ব্রাশ-রোম্যান্সের সময় কমোড ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে গেছে!ইয়াক!!!
.
.
(চলবে)