real love পর্ব ৬৭

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 67
.
.
আমি উনাকে যতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরা যায় ততটাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকে কয়েকটা চুঁমু খেয়ে বুকে নাক ঘষে বললাম,
– সরি!আমি জেগে থাকার চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু আপু এমনভাবে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছিলেন কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল করিনি।
উনি আমার পেছনে চুলের ভেতর একহাত ঢুকিয়ে আমার মাথা উনার বুকে চেঁপে ধরে বললেন,
– জেগে থাকলে কি লাভ হতো?কিছুই না!মলি একদম ঠিক কাজ করেছে!
– কখন এসেছেন?
– চারটার সময়!
উনার কথা শুনে আমি হাঁ হয়ে গেলাম!এতো আগে এসেছেন অথচ একটাবারের জন্যও আমি টের পেলাম না!এখন কয়টা বাঁজে?
আমি দেয়ালে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম!ঘড়িতে সাড়ে আটটা বাঁজে!উনার বুক থেকে মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– খেয়েছেন কিছু?
– নাহ্!আসার সময় রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়েদেয়ে একেবারে রওনা দিয়েছি!
– কিহ্!দেখি ছাড়ুন….আমি এখনই কিছু বানিয়ে আনছি!
– একদম না!উঠলেই মাইর লাগাবো!আমার পেট ভরা!আর এখন ব্রেকফাস্টটা সেড়ে ফেললে বিকেল পর্যন্ত থাকতে পারবো!
কথাটা বলে উনি আমার থুতনী উচুঁ করে ধরলেন!হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটে কিছুক্ষণ স্লাইড করে বিকেল পর্যন্ত যাতে না খেতে হয় সেইকাজটা সেড়ে ফেললেন!ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে মনে হলো একযুগ পেরিয়ে গেছে!ঠোঁটের কোণায় কামড়ের আঘাতে একটু কেটে গেছে!যেখানে উনি কিছুক্ষণ মালিশ করে ব্যাথাটা কমিয়ে দিলেন!কঁপালে কঁপাল ঠেকিয়ে বললেন,
– মলির কাছে শুনলাম বাবুরা নাকি এখন কিক মারে?
আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে মাথা নেড়ে “হ্যা” সূচক উত্তর দিলাম!উনি আমাকে ছেড়ে পেটে মাথা রেখে ফিসফিস করে বললেন,
– আস্তে কিক মারবি!মা’যে ব্যাথা পায়!
উনি আঙ্গুল দিয়ে পেটের উপর বড় করে একটা লাভ আঁকলেন!তারপর লাভের মধ্যে পাশাপাশি সাতটা দাঁগ দিলেন!মাঝের পাঁচটা ছোট দাঁগ আর দুইপাশের দুইটা বড় দাঁগ দিলেন!আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না!তবুও উনি বুঝিয়ে দিলেন কোন দাঁগটা কে?আমি উঠে বসতেই উনি দ্রুত আমাকে ধরে বললেন,
– উঠলে কেনো?শুঁয়ে পড়ো!
– আপনাকে দেখবো!প্লিজ…
আমি বেডের সাথে হেলান দিয়ে হাতের ইশারায় উনাকে আমার কোলের মধ্যে শুঁতে বললাম!উনি হেসে সাবধানে শুঁয়ে বাবুদের আদর করা শুরু করলেন!সেই সুযোগে আমি একধ্যানে উনার দিকে তাকিয়ে উনাকে স্ক্যান করতে শুরু করলাম আর চুলের ভেতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে টেনে দিতে লাগলাম।উনি কোমড় জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে বললেন,
– যতই চুল নিয়ে টানাটানি করো,আজ আমার ঘুম আসবে না!
– ফ্লাইটে ঘুমিয়ে ছিলেন?
– উহুম!
– তাহলে?
– টিয়াপাখি,বুঝো না কেনো?কতদিন পর আমার এই জানটাকে কাছে পেলাম,বলো তো!
কেউ কলিংবেল বাঁজালো!বেলের শব্দ শুনে উনি বললেন,
– এই অসময়ে আবার কে এলো?
– তুলি এসেছে,মনে হয়।
– এতো লেইট-এ কেনো?
– কয়েকদিন আগেই তো বিয়ে হলো।এখন এরকম একটু-আধটু লেইট হবেই।দেখি….উঠুন!খুলে দিয়ে আসি।
– তোমাকে যেতে হবে না।আমি যাচ্ছি।
– একদম না!ঢং…..সবসময় মেয়েদের বডি দেখানোর ইচ্ছা!
উনি চোখ বড় বড় করে বললেন,
– নাউযুবিল্লাহ্!কি যে বলো তুমি!তোমার ভালোর জন্যই বললাম!ওয়েট…আমি এখনই চেঞ্জ করছি!
উনি উঠে আলমারি থেকে একটা টি-শার্ট বের করে পড়ে নিলেন।একটানে বেড থেকে কম্বলটা নিয়ে হাফ-প্যান্টের উপর লুঙ্গি স্টাইলে পড়ে মেইনডোর খুলতে চলে গেলেন!উনার কান্ড দেখে আমি অবাক!এভাবে উদ্ভট সেঁজে চলে গেলেন?মানুষটা এমন কেনো?
আমি ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলাম।কিছুক্ষণ পর উনি লুঙ্গি খুলতে খুলতে রুমে ঢুকে বললেন,
– কনগ্রেস জানিয়ে আসলাম!
– আপনাকে দেখে লজ্জা পেলো না?
– লজ্জা পাওয়ার কি আছে?
– হুট করে আজ আপনাকে দেখলো,তাও আবার এরকম উদ্ভট বেঁশে!সেই সাথে বিয়ের শুভেচ্ছা,তাই বললাম আরকি!
– নাহ্!ও তোমার মতো লাজুক না!
উনি টি-শার্ট খুলে বেডের উপর ফেলে রেখে আলমারি খুলে একটা প্যাকেট বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।আমি বললাম,
– কি এতে?
– খুলে দেখো!
আমি প্যাকেটটা খুলে ভেতরে বাচ্চাদের সেইম ডিজাইন,সেইম কালারের দুটো ওয়েস্টার্ন ড্রেস দেখলাম!ভীষন গর্জিয়াস!আমি অসহায়ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– যদি একটা হয়,তখন?
– সো হোয়াট!নেক্সট ইয়ার আরেকজনকে নিয়ে আসবো!
– আর যদি ছেলে হয়?
– ওয়েট!
উনি আলমারি থেকে আরেকটা শপিংব্যাগ বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন!আমি ব্যাগটা খুলে দেখলাম ছেলেবাবুর ড্রেস!উনার দিকে ভ্রুঁ কুচঁকে তাকিয়ে বললাম,
– আলমারির ভেতর আর কি কি আছে?দেখি বের করুন!
– ইফায়া,ফাহিয়া আর তোমার জন্য কিছু আনি নি।সরি…
– কেনো?আমরা আপনার কেউ না?
– ওহ্ হো!আমার টিয়াপাখিটা দেখছি রাগ করেছে!সরি…পরেরবার তোমাদের জন্য আনবো!
আমি উঠে আলমারির কাছে গেলাম।তন্নতন্ন করে আলমারি খুঁজলাম।আমাদের তিনজনের জন্য কিছুই পেলাম না।উনি সত্যি করে কিছুই আনেন নি!
ম্যাজাজটা চরম রকমের খারাপ হয়ে গেলো!আমি প্রচন্ড পরিমানে রেগে গিয়ে ক্লিপ দিয়ে চুল আটকাতে আটকাতে হেলেদুলে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।মানুষ যে এতটা খারাপ হতে পারে,সেটা উনাকে না দেখলে বোঝা যেতো না!
পেছন পেছন উনিও আসছেন।আমি উনাকে দেখেও না দেখার ভাঁন করে ড্রইংরুমে বসে টিভি অন করলাম।উনি আমার গাঁ ঘেষে বসলেন।হাত থেকে রিমোটটা নিয়ে নিউজ চ্যানেল দিলেন।আমি কিছুই বললাম না!উঠে ডাইনিং-এ চলে এলাম।চেয়ার টেনে বসে গ্লাসে পানি ঢেলে পানি খেতে শুরু করলাম।চেয়ার টেনে পাশে বসে সেইম কাজটা উনিও করলেন।আমি উঠে আসতেই উনি পেছন থেকে আস্তে করে আমার চুলের ক্লিপটা খুলে দিলেন।কিছুই বললাম না।রুমে পা দেওয়ার আগে বিসমিল্লাহ্ বলে নিলাম।চোখ বন্ধ করে রুমে ঢুকে চোখ খুলে প্রথমেই বেডের দিকে তাকালাম।আলহামদুলিল্লাহ্ বেডের ঠিক মাঝখানটায় দুটো শাড়ি আর দুটো ড্রেস রাখা!
উনি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– খুশি তো?
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে একটু উঁচু হয়ে উনার থুঁতনীতে চুঁমু খেয়ে বললাম,
– মন বলছিলো সারপ্রাইজ আছে!
তুলি কিচেন থেকে ডাক দিয়ে জানান দিলো ব্রেকফাস্ট রেডী।
আমি বেডের দিকে পা বাড়ালাম!উনি যেতে দিলেন না!পেছন থেকে টেনে ধরে খুবই সাবধানে কোলে তুলে নিলেন!বললেন,
– এখন না।আগে ব্রেকফাস্ট।
আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরে মাথা হেলিয়ে উনার কাধের উপর রাখলাম।
.
চেয়ার টেনে আমাকে বসিয়ে দিয়ে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– এটা আগে শেষ করো!
আমি তিন নিশ্বাসে পানিটুকু শেষ করলাম।উনি মাত্রই আমার মুখের সামনে খাবার ধরেছেন সেইমুহূর্তে উনার ফোন বেঁজে উঠলো।দ্রুত বেডরুম থেকে ফোন নিয়ে আবার ব্যাক করলেন।লাউডে দিয়ে রিসিভ করে টেবিলের উপর ফোনটা রাখলেন।উনি আমাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বললেন,
– বলো আম্মু।
– কেমন আছিস?
– ভালো,তুমি কেমন আছো?
– ভালো।বেয়াইয়ের কাছ থেকে হিয়াকে নিয়ে এসেছিস?
আন্টির কথাটা শোনামাত্রই আমি বেশম্ খেলাম!উনি দ্রুত পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে আন্টিকে বললেন,
– হ্যা আম্মু!এইতো ও আমার সামনেই বসে আছে।
– আহারে!কতদিন পর মনে হয় শান্তি পেলো মেয়েটা!ও’কে একটু দে’তো,কথা বলি!
আমি বেশম্ খাওয়ার উপরেই আছি!উনি ইশারায় আমাকে বললেন “কথা বলো!”
আমি আরেকগ্লাস পানি খেয়ে প্রথমেই সালাম দিলাম।আন্টি সালামের উত্তর নিয়ে বললেন,
– কি?আমার মা’টা কি শান্তি পেলো নাকি এখনো মনখারাপ?
ইশ্!আন্টির এরকম প্রশ্ন শুনে আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছি!তাও আবার উনার সামনে!উনি মিটিমিটি হাসছেন!মাঝেমাঝে পরিস্থিতি এতোটা নির্মম কেনো হয়?
আমি বললাম,
– মা…
– কি মা,হুম?
আমি আস্তে করে বললাম,
– লজ্জা পাচ্ছি মা!
– ওরে আমার লজ্জাবতী মেয়েরে!এখন লজ্জা পাওয়া হচ্ছে,না?তা…এখানে আসছো কবে?
আমি কেঁশে বললাম,
– আপনার ছেলেকে বলুন!উনি যেদিন নিয়ে যাবে,সেদিনই যাবো।
– দেখি,দাও তো ইফাজকে।
উনি আমাকে খাঁইয়ে দিতে দিতে বললেন,
– বলো আম্মু!
– আসছিস কবে?
– কোথায়?
– কোথায় মানে?বাড়িতে!
– ওহ্ আম্মু,আজই তো হিয়াকে নিয়ে আসলাম!আর কিছুদিন যাক…তারপরই নাহয় একেবারে বাড়িতে নিয়ে যাবো।আর ফ্লাটে থাকবো না ভাবছি।
– আমার ছেলেটাকে আমি ভালোভাবে কাছে পাচ্ছিই না।মাঝে মাঝে যা একটু মলি নিয়ে আসে কিছুক্ষণ থাকতে না থাকতেই চলে যায়।
উনি মাথা চুঁলকে বললেন,
– কোন ছেলে মা?
– ভাবিস না তোর কথা বলছি।আমার ছোট ছেলে ইয়াশের কথা বলছি।
– ওহ্!
উনি আন্টির সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিলেন।আমাকে বললেন,
– মা’র সাথে কথা হয়?
– হুম!
– কিছু বলে না?
– কি বলবে?
– এই যে আম্মুর মতো লাইক “আসছিস কবে?যাবি কবে?”
– হুম হয়!
– কি বলো তখন?
– এভাবেই ম্যানেজ করি!বলি যে বাবা বাড়িতে নেই,আপুও থাকে শ্বশুরবাড়ি!মা একা একা থাকবে,মা’কে একা রেখে যাওয়া সম্ভব না।আম্মুও বুঝে যায়,তখন আর কিছু বলে না।
– ডেলিভারি ডেটেরও তো বেশিদিন নেই।ঠান্ডা মাথায় কিছু প্ল্যান সাঁজাতে হবে।আম্মুর হুটহাট আগমন ঘটতে পারে।
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here