Unexpected_lover
part_08
#Rimy_Islam
আমি মনে মনে বলি, আপনি তো আমার শরীর বিগড়াতেই এই পরিকল্পনা করেছেন। নতুন কি ফন্দি মাথায় এঁটেছেন কে জানে! কি চমক ওখানে অপেক্ষা করছে জানি না।
গাড়ি থেকে নেমে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। পুরো রাস্তা গাড়ি এতো ঝাঁকি দিয়ে উঠছিল যে মাথা থেকে পা অব্দি সমস্ত শরীর ব্যথা হয়ে গেছে। আমার ধারণা অনিব ইচ্ছে করেই গাড়িতে ব্রেক কষছিলেন। একটু তো মায়া করা দরকার! কি বাজে অবস্থা আমার কোমরের! এমন অবস্থায় যেখানে জার্নিতে ঘোর নিষেধ, সেখানে ঝাঁকুনি কিভাবে দিতে পারেন উনি!
যাই হোক, অনেক কষ্টে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই দেখি সামনে একটা পাঁচ তারা হোটেল। মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। কোথায় ভেবেছি সুন্দর সবুজে ঘেরা পাহাড় কিংবা চা বাগানের মাঝে সুন্দর একটা রিসোর্ট বুক করবেন।
গোমড়া মুখে বলি,
” এইটাই থাকবো আমরা?”
অনিব ভ্রূ কুঁচকালো। এরপর বললো,
” ফাইভ স্টার হোটেল তুমি এমনভাবে বলছ মনে হচ্ছে স্বস্তা মানের কোনো হোটেলে এনেছি। যদি না থাকতে চাও, তবে রাস্তায় থাকতে পারো। আমি তো চললাম।”
কোনো উপায় না দেখে উনাকে অনুসরণ করি। দু’জনের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা দুটো কামরা। আমি দেখেই বলি,
” দুইটা আলাদা রুম নিলেন কেন? ”
” তুমি সারারাত ব্যাথায় যে প্যান প্যান করো। আমার ঘুম হবে না। বাড়িতে অন্য ঘরে রাখতে পারি না। তাই বলে এখানে এসেও সহ্য করবো ভাবলে কি করে?”
” আপনি খুব খারাপ?।”
” জানি।”
নতুন নতুন সারপ্রাইজ পেয়ে আমি আবিভূত। আর কত! রুমে ঢুকতেই হোচট খেয়ে পড়ে যায়। অনেক খুঁজে লাইটের সুইচ অন করেই দেখি পুরো ঘর এলোমেলো অবস্থায়। যেন কেউ ইচ্ছে করে এমনটা করেছে। কে করবে এমন? অনিব? কিন্তু উনি তো আমার সাথেই এসেছেন।
এদিকে অনিব রুমে ঢুকে আরামে বিছানায় শুয়ে বর্ষার করুন দশার কথা ভাবছে। ওর রুমের নাজেহাল অবস্থা দেখে নিশ্চয়ই খুব টেনশনে পড়ে গেছে। তার উপর ব্যাথা নিয়ে রুম গোছানো সম্ভব না। হোটেল বয়কে ডাকতে না পারে সে জন্য টেলিফোন লাইন ডেড করে রাখতে বলেছে। উপায় না পেয়ে আমার কাছেই আসতে হবে। মনে মনে ভেবে হাসলো অনিব।
” এই যে শুনুন, দরজাটা খুলে দেন না? প্লিজ?”
অনিব বাঁকা হেসে দরজা খুলে সামান্য ফাঁক করতেই আমি ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ি। অনিব রেগে বললেন,
” সিরিয়াসলি! থাকতে পারছ না একটা রাতও আমাকে ছাড়া? নটি গার্ল!”
আমি তেড়ে এসে শার্টের কলার ধরে বললাম,
” না পারছি না থাকতে। কোমর ব্যাথায় আপনি পাশে না থাকলে হয়। পাশে একটা শক্ত পক্ত সাপোর্ট দরকার। এখানে তো কোলবালিশ নাই। আপনার গায়ের উপর পা তুলে ঘুমাবো।”
” কিহ! খুব সাহস বেড়েছে না? আমাকে রাগালে এই ব্যাথার মধ্যেও ছাড় পাবে না বর্ষা। সাবধান হয়ে যাও।”
” আমার রুমটার যা অবস্থা, তাতে থাকা সম্ভব না। ”
” ঠিকাছে। কিন্তু খবরদার গায়ে পা তুলবে না।”
” দেখা যাবে।”
আমি অনিবকে জব্দ করতে উঠে পড়ে লেগেছি। পুরো রাত অনিবের গায়ের উপর দুই পা তুলে মরার মতো ঘুমের ভান করে গেলাম। বেচারা যতবার সরিয়ে দেয় আমি ততবার তুলে দেই। এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিলেন। আমি মটকা মেরে পড়ে রইলাম।
সকালে উঠে দেখি উনি যোগব্যায়াম করছেন। মেঝেতে মাদুর পেতে যোগ আসনে বসেছেন। একটা কালো রঙের ঢিলে প্যান্ট। গা খালি। চুলগুলো এলোমেলো। আমি মুগ্ধ না হয়ে পারছি না। শুধু ছেলেরাই পারে! মেয়েরাও ছেলেদের চোখ দিয়ে গিলে খেতে পারে। আমি উনার সৌন্দর্য গিলে খাচ্ছি।
অনিব কিছু একটা টের পেয়ে বললো,
” চোখ নামাও নাহলে নজর লেগে যাবে। ”
চোখ বন্ধ রেখেই টের পেল কিভাবে আমি তাকিয়ে আছি? বললাম,
” বরই তো হন। আমি না দেখলে কে দেখবে?”
” আমার দ্বিতীয় বউ দেখবে। তোমাকে পারমানেন্ট রাখবো কে বলেছে? যাকে সহ্যই হয় না, তাকে ছাঁটাই করতে এক মিনিট সময় লাগবে না আমার, বুঝেছ?”
” আমিও দেখছি কেমন করে দ্বিতীয় বউ আনেন। ”
অনিব কটকট করে বললো,
” দিলে তো মনোযোগটা নষ্ট করে! এই ব্যায়ামে মনকে স্থির রাখতে হয়। অথচ তুমি এসে অস্থির করে তুলেছ। কি একটা অকর্মা মেয়ে!”
আমি উনার সামনে বসে রেগে বললাম,
” দেবো না ব্যায়াম করতে। এতকিছু শুনার পর আর ছাড় দেয়া চলে না আপনাকে।”
অনিব এবার একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আমাকে এক ঝটকায় হাত ধরে টেনে নিলো। আমি সোজা গিয়ে উনার কোলের উপর বসে পড়ি। উনি শক্ত হাতে আমাকে ধরে রেখেই বললেন,
” আচ্ছা, আমি তোমাকে কোলে নিয়েই ব্যায়াম করবো। যত পারো বকে যাও।”
ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলি,
” আপনি খারাপের সাথে সাথে একটা বেহাদব ছেলেও বটে।”
বলেই দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। তারপর উঁকি মেরে দেখি অনিব মুচকি হাসছে। তার মানে আমার কথায় উনি মজা পেয়েছেন। রাগ করেননি। আমি হেসে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দেই।
দু’জন ফ্রেশ হয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। অনিব ড্রাইভ করছে আর আমি গম্ভীর হয়ে বসে আছি। কেউ কারো সাথে কথা বলছি না। হঠাৎ অনিব ব্রেক করতে আমি অনিবের গায়ে পড়ি। অন্য সময় হলে অনিব বকতো আমায়। কিন্তু সেদিকে তাঁর কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। তিনি এক দৃষ্টি তাকিয়ে রয়েছেন সামনে।
এরপর অস্ফুট গলায় উচ্চারণ করলেন,
” শিলা!”
আমি থমকে গেলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি শিলা আপু তার হাজবেন্ড নিয়ে হেঁটে আসছে এদিকেই।
চলবে……….