Unexpected_lover part_07

0
2067

Unexpected_lover
part_07
#Rimy_Islam

তিনি ঘরে ঢুকে গেলেন। আমার মাথা এলোমেলো হয়ে গেলো। আপুর যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আজ সেই মানুষটা আমার হাজবেন্ড! প্রথমেই বোঝা উচিত ছিল, এক দেখায় কেউ কাউকে অযথা বিয়ে করতে চাইবে না। নিতান্তই আমার মতো বোকা মেয়েরাই বোঝে না। মুহূর্তে খারাপ আচরণ, আবার পরমুহূর্তেই ভালো আচরণ। সব তাহলে উনার জেনে বুঝে করা? কেন? এত প্রশ্ন, দ্বিধা নিয়ে পুরো জীবন পার করতে পারবো কি? কি চলছে তাঁর মনে?

আমাদের পরিবার শুরু থেকেই অনেক রক্ষণশীল ধরনের। বাড়িতে প্রেম করতে ঘোর বারণ। কড়া শাষনের গন্ডি পেরিয়ে প্রেমে পড়া ছিল এক অসাধ্য সাধনের মতো ব্যাপার। তাই ছোট থেকেই খুব সাবধানে চলতাম আমি আর শিলা আপু। তবে শিলা আপুর একটা রিলেশন ছিল। কেবল আমি টের পেতাম। অনেকবার আকারে ইঙ্গিতে আপুকে সাবধানও করেছিলাম,
‘ আপু ভালো হয়ে যা। বাবা জানলে তোকে প্রেমে পড়ার দায়ে আর আমি জেনেও কাউকে কিছু না বলার অপরাধে বাড়ি ছাড়া হতে হবে।’
আপু কথায় কান দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল । ওইযে বলে না, প্রেম অন্ধ!

কিন্তু আপুকে বারণ করা মেয়েটা নিজেই সেই প্রেমের মায়ায় আটকে পড়ে। জানিনা কিভাবে এক অজানা ছেলের প্রেমে পড়ি আমি। ফোনে আলাপ। অধিকাংশ সময় মেসেজে কথা হতো।
আমি প্রথম যেদিন কথা বলি, সেদিন থেকেই কেমন আপন আপন মনে হতো। ছেলেটার কথা বলার ভঙ্গি এমন ছিল যেনো কত বছরের চেনা জানা! আমি খুব আশ্চর্য হতাম। অদ্ভুত বিষয় শেষ পর্যন্ত টানা ছ’মাস কথা বলেও ছেলেটার নাম পর্যন্ত জানা হয়নি। ও নিজেও কখনো আমার নাম জিজ্ঞেস করেনি। শুরু থেকেই আমাকে ‘পাখি’ বলে সম্বোধন করতো। ওই পাখি ডাকটা শুনে নিজের নামটা বলতেই ইচ্ছে করেনি। ওটাকেই নিজের নাম করে নিয়েছিলাম।
কিন্তু হঠাৎ আসা মানুষটা হঠাৎই আবার হারিয়ে যায়। কোনো কারণ ছাড়ায় ফোন দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ দু’ বছর তাঁর সাথে কোনো সংযোগ নেই। যেখানে নামটা পর্যন্ত জানি না, সেখানে কোথায় খুঁজতাম ওকে! না জানতাম নাম পরিচয়, না ঠিকানা। এক অসম্পূর্ণ সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলাম।

শিলা আপুর বিয়ের পর আমার বিয়ের কথা চলে। এদিকে আমি তখনো সেই মানুষটার জন্য অপেক্ষারত। বিয়ে করবো না জানিয়ে দেই বাবাকে। আগেই বলেছি, বাবা ভীষণ কড়া নিয়মের অধীনে থাকা মানুষ। সোজা বললেন,
‘ তোর পথ তুই বেছে নে। এ বাড়িমুখো হবি না।’

আমি বাবার জেদি মেয়ে কি-না! ব্যাগ পেটরা বেঁধে বেরিয়ে পড়ি বাড়ি থেকে। উদ্দেশ্য জানি না। ভেবেছিলাম, ক’ দিন বাড়ি ছাড়া থাকলে বাবা হন্যে হয়ে খুঁজবেন মেয়েকে, নিজের আচরণে অনুতপ্ত হবেন। কিছুদিন বাদে নিজের থেকে বাড়ি ফিরে গেলে সব ঠিক হয়ে যেতো। অন্তত বিয়ের চাপাচাপি থেকে লম্বা রেহায় মিলতো।
অথচ ভাগ্য রচনা করলো অন্য অধ্যায়। চিরস্থায়ী দুঃখের অধ্যায়।
.
.
.
.
.
.
.
.
বিয়ের পর প্রথম দিন। সকালে গোসল সেরে সবেমাত্র নিচে নামতে যাচ্ছি। কোথা হতে অনিব এসে আমাকে পাশ কাটিয়ে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে নেমে গেলেন। ফলস্বরূপ আমি পা ফসকে পড়ে গেলাম। সিঁড়ির আঘাতে কোমরে গুরুতর আঘাত পেলাম। মনে মনে ভেবে নিয়েছি, আজীবন বোধহয় হুইল চেয়ার কাটাতে হবে।
চিৎকার করে কেঁদে উঠতেই শাশুড়ী আম্মা, দুই ননদ ছুটে এলো। অনিব কেটে পড়েছে। এমন না যে দেখতে পায়নি। আমি পড়ে যাচ্ছি দেখেও সোজা হনহন করে চলে গেছেন।খুব কষ্ট হচ্ছে। শরীরের ব্যাথার চেয়ে প্রতিনিয়ত মনের ব্যাথা জোরালো হয়ে পড়ছে।

ডাক্তার এসে একটা ভালো খবর দিলেন, অন্তত কোমরের হাঁড়ে কোনো ইঞ্জুরি হয়নি। তবে হাঁড়ে আঘাত পেয়ে ব্যাথাটা দিগুণ বাড়তে পারে। পেইন কিলার নিলাম না। প্রচন্ড ক্ষতিকর কিনা!
অন্তত পনেরো দিন বেডরেস্ট। বেশি নড়াচড়ায় পেইন বেশি হবে।

রাত বাড়ছে। ঘড়িতে রাত ১০ টা। আমি বিছানায় হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছি। অনিব হুড়মুড় করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। আমি চোখ বন্ধ রেখেই শুয়ে আছি। দেখতে চাই উনি কি করেন। এর মাঝে মা এসে সকালে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা রিভার্স করলেন। অনিব খুব চিন্তিত ভাব নিয়ে কথা বলে মাকে বিদায় করলেন।

” আজ ঘুম ভালো হবে তো? আমি কষ্টে কাতরাবো এটাই দেখতে চেয়েছিলেন?”

অনিব কুৎসিত হেসে বললেন,
” ভীষণ ভালো ঘুম হবে। ”

” ফেলে দিলেন কেন? যদি আমার হাড় ভেঙে যেতো?”

” তবে কি! ট্রিটমেন্ট করাতাম। হাড় ভাঙলে মরে তো যেতে না। কষ্ট পেতে অনেকদিন, ভুগতে খুব। এটাই তো চেয়েছি। কিন্তু এত অল্পে বেঁচে গেলে কিভাবে?”

” কি বিশ্রি মানুষ আপনি! আপনাকে দিনে দিনে সহ্য করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।”

” সহ্য না করে যাবে কোথায়? এখন তুমি আমার সম্পত্তি। অন্য কেউ তোমাকে গ্রহণ করবে না।”

” ছিঃ আপনাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম, আপনি তার চেয়েও খারাপ। ”
আমি বিছানা ছেড়ে উঠলাম ঘর ছেড়ে বের হবার জন্য। কিন্তু কোমরের ব্যাথা আমার অক্ষমতার জানান দিতেই কুকঁড়ে উঠে ফ্লোরে বসে পড়ি।
অনিব দ্রুত এসে আমায় পাঁজোকোলে তুলে নেয়।এরপর বিছানায় খুব জোরে ছেড়ে দিতেই প্রচন্ড আঘাত পাই।
ঝাঁঝাঁ করে বলি,
” ইশ! কি করছেন অনিব? ”

অনিব সোজা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল। কোথায় গেলো জানি না। কখন ফিরবে তাও বলতে পারি না। এত কষ্টের মাঝেও চোখে জল এলো না। সহজে কেঁদে ভাসানো আমার স্বভাব নয়। ভাবতে ভাবতে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে এক প্রকার হৈচৈ এর মধ্যে ঘুম ভাঙে। উঠে বসতেই দেখি পায়ের কাছে দুটো বড় আকারের লাগেজ পড়ে রয়েছে। দিতি একটাতে আমার কাপড় গোছাচ্ছে, অপরটায় মিতি অনিবের কাপড় রাখছে।

কৌতুহল আটকে রাখতে পারি না। বলে ফেলি,
” এসব কি মিতি, দিতি? কোথাও যাচ্ছি আমরা?”

” হুম ভাবি, হানিমুনে।”
বলেই ফিক করে হেসে ওঠে ওরা।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। এ শরীরে এক ধাপ নড়ার যার ক্ষমতা নেই সে যাবে হানিমুনে!
বললাম,
” শরীরের অবস্থা দেখেছ আমার? কিভাবে জার্নি করবো? ”

” তোমার শরীরের কন্ডিশন দেখেই তো দেশের বাইরে যাওয়া বাতিল করেছে ভাইয়া। তোমরা বেশি দূরে না। এই সিলেট যাচ্ছো।”

” আমি এক পাও নড়তে পারবো না।”

” তোমাকে নড়তে হবে না। কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসাবো। তোমার অবস্থা দেখেই নিজে ড্রাইভ করে নিয়ে যাবো। এতদিন ঘর বন্দী হয়ে থাকলে নির্ঘাত শরীর নষ্ট হয়ে পড়বে। “- কথাগুলো বলতে বলতে অনিব ঘরে ঢুকলেন।

আমি মনে মনে বলি, আপনি তো আমার শরীর বিগড়াতেই এই পরিকল্পনা করেছেন। নতুন কি ফন্দি মাথায় এঁটেছেন কে জানে! কি চমক ওখানে অপেক্ষা করছে জানি না।

চলবে………..
( যারা বলছেন শিলার সাথে অনিব বিয়ে ভাঙার প্রতিশোধ নিচ্ছে বর্ষার উপর। কিন্তু এখনো জট পেকেই আছে। বর্ষার একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল। ছেলেটা কে🤔 আর শিলা বিয়ে ভেঙেছিল কিনা আর ভাঙলেও কেন সেটা আদৌ স্পষ্ট না🙄🙄তাই ভাবতে থাকুন আপনারা কি হতে পারে🙂🙂🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here