হঠাৎ ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব ৭+৮

#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-7

সকালটা স্নিগ্ধ আর মিস্টি আলোয় সমৃদ্ধ।

নিলগিরির সেই হিল রিসোর্টের আশেপাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড় আর তারউপরে হরেকরকমের গাছপালা। খুব সুন্দর করে রিসোর্টের চারিপাশ টা সাজানো।বসার জায়গা করা তার উপর ছাউনি।এই পাশে রেলিং দেওয়া সেখান থেকে দূরদূরান্ত পর্যন্ত শুধু পাহাড় দেখা যায়।

কিছু পাহাড় উচু আবার কিছু পাহাড় নিচু।তাতে ধোয়ার মতো মেঘ উড়ছে।এটা কি আসলে মেঘ না কি কুয়াশা তা নিয়ে প্রীতি কনফিউশান এ আছে।

আজ খুব সকালে উঠেছে ও।সকালের এই মিস্টি স্নিগ্ধ প্রকৃতি শান্তিতে দেখবে বলে।

প্রীতি একবার চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে নিলো নীলাভকে। নাহ..সে এখনো উঠে নি।সোফায় সে ঘুমাচ্ছে।ঠিক মতো ঘুমাতেও পারছে না।এতো বড় মানুষ কি আর এই ছোটো সোফায় আরাম করে ঘুমাতে পারে না কি।অর্ধেক পা তার সোফা থেকে বের হয়ে আছে। শীত শীত লাগছে নীলাভের।প্রীতির মায়া হয়।উঠে সে বিছানা থেকে কম্বল টা নিয়ে নীলাভের গায়ে জড়িয়ে দিলো।নীলাভ ও কম্বল টাকে নিজের সাথে পেচিয়ে নিলো।প্রীতি ভাবলো,

-এই ছেলেটা এতো কম কথা বলে যে,দুইদিন নিজেই সোফায় থাকলো।তাও একবারো বলল না, আমি আজ সোফায় থাকবো না তুমি থাকো।একটা মানুষ এতো কম কথা কি করে বলতে পারে?গোমড়ামুখো একটা।

প্রীতি চুপচাপ বসে থাকে।একবার বেডে বসছে তো একবার গিয়ে ডিভানের উপর বসছে আবার গিয়ে নীলাভের সামনে বসছে।একবার ডাকতে যাচ্ছে আবার ফিরে আসছে।একা একা চুপচাপ বসে থাকতে কতোক্ষন আর ভালো লাগে?গালে হাত দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।

কিছুক্ষনপর নীলাভ উঠলো।ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসলো।প্রীতিকে এমন আনমনা ভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

-এভাবে বসে আছো কেনো?

প্রীতি -এতোক্ষনে কেউ ঘুম থেকে উঠে?

নীলাভ একবার টাইম দেখে নিয়ে বলল,

-কেবল ৬ টা বাজে।

প্রীতি -আমি সেই ৫ টায় উঠছি।

নীলাভ-ভালো।রেডি হও শৈলপ্রপাতে যাবো।

প্রীতি -সত্যি, চলেন আমি রেডি।

নীলাভ প্রীতির পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার স্কেন করে নিলো। একটা সাদা জিন্স,নেভি ব্লু কালার শার্ট সাথে সাদা নেভি ব্লু কম্বিনেশনে স্কাপ গলায় ঝুলানো।মুখে কোনো লিপস্টিক কাজল মেকাপ কিচ্ছু নেই।ঠোঁট তার এমনেতেই লাল।লিপস্টিক দেওয়ার প্রয়োজনই নেই। মাথার চুল গুলো উপরে একটু পাফ করে বেধে ছেড়ে দিয়েছে।খুব সুন্দর লাগছে দেখতে।

নীলাভ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,

-দাড়াও তাহলে আমি রেডি হই।

নীলাভ রেডি হয়ে আসলো।ও নিজেও সাদা কালার ডেনিম পেন্ট আর নেভি ব্লু কালার গেঞ্জি পড়েছে।চুল গুলো গুছানো।চোখে সানগ্লাস। ও প্রীতির সাথে ইচ্ছাকৃত ভাবে ম্যাচিং করে পড়ে নি।হয়ে গেছে।

ওরা বেরিয়ে পড়লো শৈলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে সেখান থেকেই ওরা নিলাচল যাবে।

শৈলপ্রপাতে যাওয়ার রাস্তায় প্রীতি নিলাভ কে একটু গুতা দিয়ে বলল,

-আমরা না এই রাস্তা দিয়েই আসলাম?

নীলাভ -হমম।তখন নামে নি।কারন তখন নামলে গাড়ি থামিয়ে নামতে হতো। দেখার টাইম কম পেতাম।

প্রীতি -ওওও….

ওরা এসে নামলো শৈলপ্রপাতে।

শৈলপ্রপাতের পানি বয়ে যাচ্ছে অনেক নিচে দিয়ে।উপর থেকে দেখা যাচ্ছে পানি।প্রীতি দেখে সেখানেই লাফালাফি শুরু করে দিলো।

ওয়াও এতো সুন্দর এতো সুন্দর…..

নীলাভ -হমম আসো আমার হাত ধরো।আর সাবধানে আসো।আর ওইখানে গিয়ে কিন্তু লাফালাফি করবা না।পাথর অনেক পিচ্ছিল একবার পিছলে গেলে সর্বনাশ।আর পাথর অনেক ধারালো।কেটে যাবে কিন্তু।সাবধানে পা ফেলবা।

প্রীতি পাত্তা না দেওয়ার মতো বলল,

-আচ্ছা আচ্ছা।চলেন তো এখন।সেই কখন থেকে দূর থেকে দেখতাছি।তর সইতাছে না তো আর।

নীলাভ আর কোনো কথা না বলে প্রীতির হাত ধরে আস্তে আস্তে শৈলপ্রপাতের কাছে নিয়ে গেলো।

ওখানে গিয়ে প্রীতি হা হয়ে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইল।
কি সুন্দর করে পানি একটার পর একটা পাথর বেয়ে বেয়ে যাচ্ছে।কি স্বচ্ছ সে পানি।আশেপাশে একটু উচু উচু পাহাড়, গাছ আর মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে এই শৈলপ্রপাত।প্রীতি ক্যামেরা টা বের করে ছবি তুলতে লাগলো।ও নিজের ছবি তুলে না বললেই চলে।

ছবি তুলতে তুলতেই প্রীতি বলল,

-আচ্ছা এ পানি কি খাওয়া যায়? এতো স্বচ্ছ…..

নীলাভ-হমম…এর পানি খায়।এমনকি এই শৈলপ্রপাতের জন্যই এখানে আশেপাশে তিন চারটি গ্রাম হয়েছে তারা এখান থেকেই পানি খায় এই পানি দিয়েই যাবতীয় সবকাজ করে।

প্রীতি -ওহ…

নীলাভ ও নিজের ক্যামেরা বের করে ছবি তুলতে লাগলো।কিন্তু এবার আর প্রীতির ছবি তুলল না।

প্রীতি ছবি তুলা শেষ করে ছবি গুলো দেখতে দেখতে বলল,

-আপনি একটু সুন্দর করে দাঁড়ান তো আপনার একটা ছবি তুলি।

নীলাভ -কেনো?

প্রীতি -কেনো মানে?স্মৃতি হিসেবে রেখে দিবো আমাকে এতো সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরাচ্ছেন।আর গিয়ে মাকে দেখাবো তাই।এখন সুন্দর হয়ে দাঁড়ান। আরে দাঁড়ান না বাবা….

নীলাভ তাও প্রীতির কথা শুনলো না।ও গিয়ে চুপচাপ একটা পাথরের উপর বসলো হাত একটা হাটুর উপরে আর মুখ আরেক দিকে ঘুরে তাকিয়ে আছে।চোখে সানগ্লাস।ফর্সা মুখে খোচা খোচা কালো দাড়ি।এতো সুন্দর লাগছে।প্রীতি আর এক সেকেন্ড অপেক্ষা না করে ঝটপট ছবি তুলে ফেলল আর বলল,

-পার্ফেক্ট…

প্রীতি ক্যামেরাটা রেখে বলল,

-জানো আমার যখন মন খারাপ হবে আমি এই সব ছবি দেখবো।আর আমাদের কাটানো মুহুর্তের কথা গুলো ভেবে হাসবো।

নীলাভ প্রীতির দিকে তাকালো।
প্রীতি হাত দিয়ে পানি ছিটাচ্ছে কিছু পানি নীলাভের মুখে ছিটিয়ে দিলো।আর খিলখিল করে হেসে উঠলো।নীলাভ মুগ্ধ নয়নে সেই হাসির দিকে এক মনে তাকিয়ে থাকলো।

পানির ছলছল শব্দে নীলাভের ধ্যান ভাঙলো।প্রীতি পা দিয়ে পানি কে ছিটাচ্ছে।

নীলাভ হালকা আওয়াজে বলল,

-ওমন করো না পড়ে যাবা।

এদিকে প্রীতি কোনো কথাই শুনছে না ও ওর মতো পা দিয়ে পানি নাড়াচ্ছে।

নীলাভ উঠে এগিয়ে আসলো।

এরই মাঝে প্রীতির পা পিছলে গেলো।নীলাভ তাড়াতাড়ি প্রীতির হাতের কব্জি টেনে ধরে নিজের কাছে এনে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলো।প্রীতির মুখের উপর সব চুল হুমড়ি খেয়ে পড়লো।এক মিনিটের জন্য নীলাভের আত্মা উড়ে গেছিলো।নীলাভ শক্ত চোখে প্রীতির দিকে তাকালো।কিছু বলতে যাবে তখনি প্রীতি কেদে উঠলো।

ব্যাথা পেয়েছে ভেবে নীলাভ তাড়াতাড়ি প্রীতিকে কোলে তুলে নিলো।পানি এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে নীলাভের পা আর সেখানে ও প্রীতিকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।খুব সকাল তাই বেশি মানুষ নেই।দু তিন জন মানুষ।তারা ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। দূর থেকে এক লোক এ মুহুর্ত টাকে ক্যামেরা বন্দী করলো লোভ সামলাতে না পেরে।এতো সুন্দর লাগছে ওদের দু জন কে একসাথে।

আশেপাশের সবাই বলছে,’কিউট কাপল।একদম ম্যাচ ফর ইচ আদার।খুব সুন্দর মানিয়েছে।’

আশেপাশের সবার কথা কানে যেতেই নীলাভের ধ্যান ভাঙলো। ও প্রীতিকে একটা পাথরের উপর বসিয়ে দিলো।বসিয়ে দিতেই প্রীতি বলে উঠলো,

-হাতে ব্যাথা পেয়েছি আপনি ওভাবে ধরাতে।

নীলাভ -স্যরি।ওহ শিট..আমি তো তোমার হাতের ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে দেই নাই।আগে বলবা না ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে দিতাম।

হাত টা দেখতে লাগলো নীলাভ।প্রীতি এখনো কাদতেই আছে।নীলাভ বলল,

-খুব ব্যাথা করছে?

প্রীতি এবার ভ্যা করে কেদে উঠলো। নীলাভ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো এমন কাদায়।ওর মনে একটাই প্রশ্ন আসছে,মেয়েটাকে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি কে করালো?একটা প্লের বাচ্চাও তো এমন না।

প্রীতি নাক টেনে টেনে কিউট করে বলল,

-আমার পায়ে খুব ব্যাথা করছে।

প্রীতির নাক লাল হয়ে গেছে।এই মুহুর্তে নীলাভের ইচ্ছে করছে সেখানে একটু ছুয়ে দিতে।পরক্ষনেই বরাবরের মতো নিজেকে নিজেই গালি দিচ্ছে নিজেকে নির্লজ্জ পদে আখ্যায়িত করছে আর বলছে,তোর কি হইছে নীলাভ?এমন উদ্ভট উদ্ভট জিনিস কেনো ভাবছিস?

নীলাভের ভাবনার মাঝেই প্রীতি আবার শব্দ করে কেদে উঠলো।

নীলাভ প্রীতির পা নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো।পায়ে ছাল উঠে গেছে পাথরের সাথে লেগে।

নীলাভ আসার সময় নিজের ব্যাগ এনিছিলো।সেটা থেকে স্যাভলন, তুলো মলম আর ব্যান্ডেজ বের করে প্রীতিকে ব্যান্ডেজ করে দিলো।

স্যাভলন দেওয়ার সময় প্রীতি খামচে নীলাভের কলার ধরলো।প্রীতির বড় বড় নখের আচড় গিয়ে লাগছে নীলাভের ঘাড়ে। সেখানে মনে হয় চিড়ে ফেলছে এই মেয়ে।জ্বলছে ওর ঘাড় ভিষণ ভাবে।

নীলাভ হঠাৎ বলে উঠলো,

-এই মেয়ে তুমি সেন্ডেল কেনো পড়ে এসেছো?তাও আবার উচু।

প্রীতি -তো আমি বাড়ি থেকে পালায় আসছি আমি কি আর এক্সট্রা জুতা নিয়ে আসছি না কি?আর এটা ওতোটাও উচু না।

নীলাভ-তা তুমি আমাকে বলবা না আমার কাছে এক্সট্রা সু ছিলো। ওটা পড়ে আসলে আজকে আর পা কাটতো না।ইরেস্পন্সিবল মেয়ে একটা।

প্রীতি -তা আপনি কি আমারে বলছিলেন যে সু পড়ে যাওয়া লাগবো।সেন্ডেল পড়া যাবে না।

নীলাভ-তোমাকে সব কিছু শুধু বলেই দেওয়ার লাগে।তুমি তো কচি খুকি।

প্রীতি মুখ ভেঙচি দিয়ে বলল,

-হ্যা তাই।আর আপনি তো বড় খোকা।

নীলাভ – আর একটা কথা বলবা তো এখনি ধাক্কা দিয়ে এই পানিতে ফেলে দিবো তারপর যেখানে ভেসে যাবা যায়ো।তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমিও বাচাল হয়ে গেলাম।

প্রীতি -হুহ……..নিজের দোষ খালি অন্যের উপর চাপায়।

নীলাভ -ফালতু।

প্রীতি চোখ বড় বড় করে তাকালো।সাথে সাথে নীলাভ জোরে একটু চাপ দিলো সেই স্যাভলন মিশানো তুলা দিয়ে প্রীতির কাটা স্থানে।প্রীতি আরো জোরে খামচে ধরলো নীলাভের ঘাড়। নীলাভ চোখ মুখ খিচে ফেলল।

নীলাভ প্রীতির ব্যান্ডেজ শেষ করে বলল,

-তুমি আসলেই মহা এক ঝামেলা। আগেই বলছিলাম।ওমন করো না, করো না।তাও ওমন কেন করছিলা?দুনিয়ায় মানুষ সবাই আসে কারোর কিছু হয় না আর তুমি দুই মিনিটের মধ্যে এসেই হাত পা কেটে বসে থাকো।কেয়ারলেস মেয়ে একটা।

প্রীতি গাল ফুলিয়ে বসে থাকলো।

নীলাভ -একদম গাল ফুলাবা না।এই গাল ফুলানো ছাড়া আর কি পারো তুমি হ্যা?

প্রীতি ছলছল চোখে নীলাভের দিকে তাকালো।

নীলাভ আবার ঝাড়ি দিতে যাবে তখনি একটা লোক এসে বলল,

-excuse me.

নীলাভ-yes.

লোকটা-আসলে আপনাদের পারমিশন না নিয়েই আমি আপনাদের একটা ছবি তুলে ফেলছি।

নীলাভ -ওহ থ্যাংকিউ…দেখতে পারি?

লোকটা -হ্যা অবশ্যই আমি তো ছবিটি দিতেই এলাম।

নীলাভ-ওহ আচ্ছা।

নীলাভ ছবিটা নিলো।তখন প্রীতি বলে উঠলো,

-ভাইয়া আমার ক্যামেরাটাতেও দিয়েন।

নীলাভ-তুমি চুপ থাকো।

প্রীতি -আমাকে ছবি না দিলে আমি কিন্তু আপনার ক্যামেরা থেকে ডিলিট করে দিবো।😈

নীলাভ-আরে ভাই,থাম একটু।আমি দিতাছি রে…

প্রীতি মুখ ঘুরিয়ে নিলো😒
#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_Unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-8

শৈলপ্রপাতের কাছেই একটা ছোটো খাটো বাজার আছে।ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা নানান ধরনের জিনিস সেখানে বিক্রি করে।পাহাড়ি ফল, শাল, জামা কাপড় এছাড়াও আরো অনেক কিছু।প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই এখানে আছে।যারা ট্রেকিং করবে তাদের যাবতীয় জিনিস ও এখানে পাওয়া যাবে।

নীলাভ আর প্রীতি কিছু টুকটাক শপিং করলো সেখান থেকে।প্রীতি শপিং করার চেয়ে ছবি ই তুলছে বেশি। ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর ছবি তুলছে।তার মতে এদের তো আমি সব সময় সব জায়গায় পাবো না দেখবোও না।তাই ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে বসে বসে নিজের অবসর সময়ে দেখবে বলে।

২ মিনিটে এসেই প্রীতি ভাব জমিয়ে দিয়েছে সবার সাথে। ও সবার সাথে হেসে খেলে কথা বলছে এমন ভাবে যেনো কত জনম জনমের আপনজন ওরা ওর।

নীলাভ প্রীতিকে ডাক দিয়ে বলল,

-চলো,দেরি হয়ে যাচ্ছে তো আমাদের।

প্রীতি -ও হ্যা চলুন।

সবাইকে বিদায় দিয়ে ওরা বেরিয়ে এলো।

প্রীতি -এখন তো আমরা নীলাচল যাচ্ছি তাই না?

নীলাভ -হমম

প্রীতি -তারপর?

নীলাভ-তারপর আজকে নিলাচল নীলাম্বরী রিসোর্টে থাকবো।আগেই বুক করেছি।

প্রীতি -ওয়াও…ভালো করেছেন। তারপর?

নীলাভ -তারপর কাল মেঘলা,স্বর্ণমন্দির দিয়ে ঘুরে আবার নীলাচল ব্যাক করবো।সেখান থেকে চট্টগ্রামের বাসে উঠবো।তারপর সেখান থেকে একদম ঢাকার বাসে উঠবো আর কোনো ট্রেন ম্রেন এ উঠবো না।

প্রীতি -ওওও…..শৈলপ্রপাত টা অনেক সুন্দর ছিলো।পুরোই অস্থির!খুব খুব খুব ভালো লেগেছে।আমার তো মন চাচ্ছে এখানে একটা কাচের ঘর বানিয়ে থাকি।

নীলাভ-কাচের ঘর কেনো?

প্রীতি -ও মা….যখন ইচ্ছে করবে তখন যেনো ছুটে এসে দেখতে পারি কাচের ওপাড় থেকেই।বুঝেন না কেনো।ঝর্ণা আমার ব্যাপক পছন্দ।

নীলাভ -ও তার মানে তোমার পাহাড় পছন্দ।

প্রীতি -হমম।

নীলাভ -কেনো?

প্রীতি একটু নড়েচড়ে ভালো ভাবে বসলো।তারপর বিজ্ঞদের মতো বলা শুরু করলো,

-দেখুন পাহাড়ে আসলে আমি একটা না বরং শত শত পাহাড় দেখতে পারবো। মেঘ দেখতে পারবো ঝর্ণা দেখতে পারবো।পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী দেখতে পারবো। কিন্তু সমুদ্রে তো তেমন কিছুই নেই।শুধু সমুদ্রই আর মাঝে মাঝে দ্বীপ এগুলাই।আর তার চেয়েও বড় কথা আমার সবুজ পছন্দ। গাছপালা সবুজ অরন্যের মধ্যে থাকতেই আমি বেশি পছন্দ করি প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেই।…হাহ….

প্রীতি দু হাত মেলে দিয়ে একটা নিশ্বাস নিলো।

নীলাভ একটু হাসলো প্রীতির এমন যুক্তি শুনে।প্রীতি আবার বলে উঠলো,

-আর আপনার কি পছন্দ ?

নীলাভ -আমার সব ই পছন্দ কারন সবই সুন্দর আল্লাহর অশেষ রহমতের দান।

প্রীতি-দেট’স রাইট।পুরো বান্দরবন টাই সুবহানাল্লাহ….

নীলাভ-হমম….

___________________________________

ওরা এসে পড়লো নিলাচল।

প্রীতি এসেই আশেপাশে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকলো।উৎফুল্ল হয়ে বলল,

-এসে গেছি আমরা মেঘের রাজ্যে।

নীলাভ -হমম…এসে গেছি।

প্রীতি লাফাচ্ছে বাচ্চাদের মতো।

নীলাভ তা দেখে বলল,

-তোমার আচরণ দেখে কেউ বলবে না যে তুমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ো।কেমন বাচ্চাদের মতো লাফাচ্ছো।

প্রীতি -হিহিহি….

নীলাভ-চলো রিসোর্টে গিয়ে আগে ফ্রেশ হই দেন ঘুরতে বের হবো।

প্রীতি -আচ্ছা বান্দরবানে এতো শীত শীত কেনো লাগে?কেমন চারপাশে কুয়াশা।

নীলাভ-পাহাড়ি এলাকা যে তাই।আর এগুলা কুয়াশা না।এই যে আশেপাশে যা দেখছো এগুলো হচ্ছে মেঘ।ধোয়ার মতো উড়ছে।মনে হচ্ছে একটু পর বৃষ্টি নামবে।

প্রীতি -আপনি কি আবহাওয়াবিদ গবেষক?🤨

নীলাভ-হ্যা তাই এবার চলো তো।আমি আরো ২-৩ বার আসছিলাম বলছি না?

প্রীতি -ওও..ভুলে গেছিলাম স্যরি।

নীলাভ-হমম…একটু পর আমরা রোয়েদা রং ভিউ পয়েন্টে যাবো ওখান থেকে মনে হবে তুমি পুরো বান্দরবান টাই দেছো।আর অনেক মেঘ।নিলগিরিতে আর কি মেঘ দেখেছো?এখানে দেখতে পারবা।কথায় বলে,মেঘের আড়ালে যেতে চাইলে নীলাচল যাও।প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যের হাতছানি।

প্রীতি চোখ মুখ চকচক করতাছে।ও বলল,

-তাড়াতাড়ি চলেন,তাহলে তাড়াতাড়ি বের হতে পারবো।

নীলাভ -চলো।

,
,

ফ্রেস হয়ে এসে প্রীতি তারাহুরো বাজিয়ে দিয়েছে বাইরে যাবে বলে।শেষে ও একাই বের হয়ে রিসোর্ট টা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো রিসোর্টটার সামনে দিয়ে কাচা রাস্তা। রিসোর্ট টা নিল রঙের।আশেপাশে শুধু পাহাড়। বান্দরবান মানেই পুরোটা পাহাড়।

এরই মাঝে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।সবাই দৌড়াদৌড়ি করে চলে যেতে লাগলো।নীলাভ বার বার প্রীতিকে যেতে বলছে।কিন্তু প্রীতি নাছোড়বান্দা ও এই বৃষ্টিতেই পাহাড় দেখবে মেঘ দেখবে।

শেষে নীলাভ একটা ছাতা নিয়ে আসলো।ওর ব্যাগে একটা ছাতাই ছিলো।

সেটা নিয়ে প্রীতির মাথায় ধরে বলল,

-এই মেয়ে বৃষ্টিতে যে ভিজতাছো পরে ঠান্ডা জ্বর লাগলে তোমার সেবা যত্ন কে করবে?সাথে কইরে কি বডিগার্ড আনছো?যে চব্বিশ ঘণ্টা তোমারে দেখেশুনে রাখবে?

প্রীতি -হ্যা আনছি তো।আপনি আছেন না।আপনার সাথে কি আমি এমনি এমনি আসছি আর।

নীলাভ চোখ বড় বড় করে বলল,

-কি??বেয়াদব মেয়ে।

প্রীতি দাত কেলিয়ে বলল,

-হ্যা বেয়াদপ তো কিছে।আর সবাই এটাই বলে😁

নীলাভ-পাগল।

প্রীতি -একদম পাগল বলে ডাকবেন না আমার মতো এতো সুন্দর ইনোসেন্ট একটা মেয়েকে আপনার পাগল বলে মনে হয়?

নীলাভ -ধ্যাত, আসো তো।

নীলাভ প্রীতিকে নিয়ে রোয়েদা রং ভিউ পয়েন্টে নিয়ে আসলো।চারপাশে রেলিং দেওয়া এতো সুন্দর। পুরো নিলাচল টাকে যেনো দেখা যাচ্ছে।

প্রীতি তো হা করে চারপাশ দেখছে।ও কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।

এদিকে নীলাভ ওর আর প্রীতির মাথায় ছাতা ধরে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে আছে।যেনো পারলে প্রীতিকে ধাক্কা দিয়ে এই পাহাড়ে ফেলে দিতো।আবার ভাবছে,

-এই মেয়েটা আমার মতো শান্ত শিষ্ট ভদ্র ছেলেকে কি থেকে কি বানিয়ে ফেলল?এতো কথা বলতাছি আমি?ধ্যাত, পুরো এই মেয়েটার মতো হয়ে গেছি।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হওয়ার কারণে প্রকৃতি এতো সতেজ, সবুজ আর সুন্দর লাগছে যা প্রীতির বাদামী চোখে ভেসে উঠছে। নীলাভ এর চোখ হঠাৎ আটকে গেলো প্রীতির সেই চোখে। মনে হচ্ছে আস্তো এক মুক্তো। হিরার খনি।এতো স্বচ্ছ চকচকে কি কারো চোখ হতে পারে?

বৃষ্টির ফলে মনে হচ্ছে আকাশের মেঘ গুলো সাদা তুলো হয়ে ভাসছে।নীচে শত শত পাহাড় দেখা যাচ্ছে।কিন্তু উপরে তাকালে শুধুই মেঘ আর মেঘ।প্রীতির হঠাৎ করে ইচ্ছে জাগলো,ইসস….এতো এতো মেঘ আর আমি যদি একটু এই মেঘে ভাসতে পারতাম একটু যদি মেঘগুলোর সাথে আলিঙ্গন কর‍তে পারতাম ছুতে পারতাম।

উপরে নীল আকাশ আবার দূরের পাহাড় গুলোও নীল। দূরে দৃষ্টি রাখলে মনে হচ্ছে পাহাড় গুলো সেই আকাশকে ছুয়েছে।কাছে তাকালে মনে হচ্ছে সব সবুযে আচ্ছন্ন। আর দূরে তাকালে সব নীল সব।এর জন্যই হয়তো এর নাম নীলাচল।

নীলাভ প্রীতির মুগ্ধতার মাঝেই বলে উঠলো,

-এখান থেকে অনেক সুন্দর সূর্যোদয় আর সুর্যাস্ত দেখা যায়।যদি মেঘ একটু কম থাকে।

প্রীতি -আমিও দেখবো।

নীলাভ একটু হেসে বলল,

-কাল তাহলে সকালে উঠো।

প্রীতি কিছু বলল না ও তো এই পাহাড় দেখায় ব্যাস্ত। হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,

-আচ্ছা এই পাহাড়ের মাঝখানে এগুলা বাড়ি কেনো?এখানে কি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীরা থাকে?

নীলাভ -হমম।মেঘ যদি না থাকতো তাহলে তোমাকে একটা জিনিস দেখাতে পারতাম।

প্রীতি এবার চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,

-কি?

নীলাভ-মেঘ যদি না থাকতো বা কম থাকতো লাইক গ্রীষ্মকালের মতো।তাহলে এখান থেকে তুমি কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত দেখতে পারতা।

প্রীতি -সত্যি?😱

নীলাভ -হমম।আমি একবার গ্রীষ্মের সময় আসছিলাম অনেক সুন্দর দেখা যায়।দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে ভালো দেখা যাবে।

প্রীতি -ওহ মাই গড…আমিও দেখবো।আপনি দেখছেন আমিও দেখবো।

নীলাভ-আমি কেমনে দেখাব?অনেক মেঘ যে তারউপর আবার বৃষ্টি।

প্রীতি -জানি না।আপনি দেখছেন আমিও দেখবো।

প্রীতি জেদ করতে লাগলো।

আর না পেরে নীলাভ এক ধমক দিয়ে বলল,

-এটা কি আমার হাতের মোয়া না কি?যে দেখবা বললেই দেখাইতে পারবো?আসো তাইলে তোমাকে এক ঢিল দেই। এমন ভাবে ঢিল দিবো যাতে তুমি গিয়ে ওই কক্সবাজার সমুদ্রে পড়ো।তখন ডুবে ডুবে জল খাইয়ো আর ভালো মতো দেইখো।

প্রীতি ঠাস করে নিজের ক্যামেরা টা নীলাভের হাতে দিয়ে দিলো। গাল ফুলিয়ে উলটো ঘুরে রেলিং এর উপর এক হাত আর আরেক হাত গালে দিয়ে দাড়ালো।

নীলাভ গিয়ে প্রীতির ক্যামেরা দিয়ে প্রীতির কয়েকটা গাল ফুলানো ছবি তুলল।এক পাশে প্রীতির গাল ফুলানি মুখ আর আরেক পাশে পাহার আর মেঘ দেখা যাচ্ছে ছবি গুলা খুব সাধারণ তার মধ্যেও অসাধারণ হইছে।মনে হচ্ছে এক অভীমানী রাজকন্যা।

প্রীতি নীলাভের দিকে তাকালো তারপর আবার ভেঙচি কেটে মুখ ঘুরালো।

নীলাভ কিছু বলল না ও নিজেও তাকিয়ে থাকলো প্রকৃতির দিকে।এর মাঝেই দমকা এতো জোরে হাওয়া বইলো যে নীলাভ হালকা করে যে হাতে ছাতা ধরে ছিলো সেটা উড়ে গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে নিচে পড়লো।একদম পাহাড়ে।

আচমকা এমন হওয়ায় নীলাভ থ খেয়ে গেলো।প্রীতি ও হা করে তাকিয়ে আছে।সব কিছু বুঝতে দু মিনিট সময় লাগলো।বুঝে উঠার সাথে সাথে প্রীতি খিলখিল করে হেসে উঠলো। বাতাসে ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দিলো।অবাধ্যের মতো চুলগুলো উড়ছে।একবার সব চুল প্রীতির মুখে আসছে তো আবার সব চুল পেছন দিকে যাচ্ছে।

নীলাভ কিছুক্ষণ সেই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকলো।রমনী যে নজরকাড়া।এই ঠান্ডার মধ্যে প্রীতিকে যেনো আরো ফর্সা ধবধবে লাগছে।সাথে লাল ঠোঁট।এতো সুন্দর!

নীলাভ মুচকি হেসে বলল,

-পাগল…

প্রীতির কানে কথাটা যেতেই প্রীতি এবার রাগী ভাবে তাকালো কিন্তু নীলাভের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই ও প্রকৃতি দেখতে ব্যাস্ত এবার।

প্রীতি নিজের চুল গুলো বাধতে গিয়েও ছেড়ে দিলো।ও নীলাভের দিকে তাকালো।নীলাভ বেকে দাঁড়িয়ে আছে রেলিং এ ভর দিয়ে। লম্বায় প্রায় নীলাভ ৬.২। নীলাভের নেভি ব্লু টি শার্ট ভিজে শরীরে সাথে লেগে যাচ্ছে।তার সুঠাম দেহ বুঝা যাচ্ছে।গোলাপি ঠোঁট।ফর্সা মুখ তাতে খোচাখোচা কালো কুচকুচে দাড়ি।চোখে সানগ্লাস দিয়ে সে প্রকৃতি দেখছে।প্রীতি কিছু না বলে টাস করে সানগ্লাস টা খুলে নিলো।নীলাভ কিছু বলল না।

প্রীতি মনে মনে বলল,

-এখন ঠিক আছে।নীল আকাশ নীল পাহাড় পড়নেও নীল টি শার্ট আর নীল চোখ।

এক সেকেন্ডের জন্য প্রীতির মনে হচ্ছে,এই মানুষটার নীল চোখ হওয়াটা সত্যি খুব দরকার ছিলো এই পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে হলেও এই চোখজোড়া খুব দরকার ছিলো।এই মানুষটাকে নীল চোখ ছাড়া একটু ও মানাতো না।একটু ও সুন্দর লাগতো না।

আচ্ছা, একটা মানুষ এতোটা পার্ফেক্ট কি করে হতে পারে?এতোটা সুন্দর কি করে হয়?

চলবে🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here