Unexpected_lover part_12

0
1747

Unexpected_lover
part_12
#Rimy_Islam

পুরো মাথা অচল হয়ে যাচ্ছে। আর নিজের হোটেল রেখে উনি আমাকে নিয়ে অন্য হোটেল, রিসোর্টে কেন উঠে বেড়াচ্ছেন? কি আশ্চর্য কুচক্রী লোক!

অনিব হাতের দু’আঙুল জোড় করে সিগারেট টানার ভঙ্গি করে বললেন,
” আজ সিগারেট খেতে মন চাচ্ছে। আছে নাকি ওটা তোমার ব্যাগে?”

একগাঁদা কৌতুহলী প্রশ্নে আমার মাথা এলোমেলো হয়ে আছে। এর মাঝে এমন উদ্ভট কথায় প্রচন্ড রেগে গিয়ে আবার নিজেকে সামলে নিলাম। এ অবস্থায় রেগে গেলে উদ্ধার হওয়া যাবে না।
আমি বললাম,
” দেখেছেন কখনো আমায় সিগারেট টানতে? ওই জিনিস আমার ব্যাগে থাকবে কি করে আশা করেন?”

” রাগ করছো কেন বর্ষা? লুকিয়ে লুকিয়ে আজকাল অনেক মেয়েই সিগারেট খায়।”

” খেতে পারে, তবে আমি খাই না। এবার প্লিজ বলুন শিলা আপুরা কোথায়?”

অনিব খুব শান্ত গলায় বললো,
” কোথায় আর যাবে! এখানেই আছে। এখানে বলতে আমার হোটেলে আছে। ওইযে যে হোটেলে আমরা প্রথম উঠেছিলাম, ওটাই আমার হোটেল। ”

এবার মাথার জট খুলে গেল। এজন্যই শুরু থেকে হোটেল স্টাফরা আমাদের এতো আপ্যায়ণ করছিলো। আমি বিড়বিড় করি,
” ধন্য হয়েছি আপনার হোটেলে থেকে।”

” কিছু বললে?”- তীক্ষ্ণ প্রশ্ন অনিবের।

” নাতো। এবার বলবেন ঘটনা কি ঘটিয়েছেন?আমার টেনশনে পুরো গা ঘামে ভিজে উঠেছে,আর আপনি যেনো-তেনো কথায় আঁটকে রয়েছেন। ”

অনিব উচ্চ স্বরে হেসে বললো,
” সবুর হয় না বুঝি? আচ্ছা, শিলারা হোটেলে আরামে ঘুমোচ্ছে। তুমি কি ভেবেছ ওদের কিডন্যাপ করবো? ওইসব ছবিতে দেখা যায়। বাস্তবে ক’জন পারে এমন করতে? হয়তো কেউ কেউ পারে। আমি আবার ওসব পারি না। আমি ভাবি উঁচু লেবেলে বুঝলে?”

রাগে কটকট করে বলি,
” তা আপনার উঁচু লেবেলটা কতদূর শুনি?”

অনিব তার ল্যাপটপটা অন করে। তারপর ঘেঁটে ঘেঁটে কিছু একটা বের করলো। এরপর ল্যাপটপের স্ক্রিন আমার দিকে ঘুরিয়ে একটা ফোল্ডারে ক্লিক করতে বলে। ফোল্ডারে বেশ কয়েকটা ভিডিও। প্রথমটায় চাপ দিতে অন হয়।
আমার হাত- পা থরথর করে কাঁপছে। এতদিন এমন কিছুর ব্যাপারে কেবল শুনেই এসেছি। আজ নিজ চোখে দেখলাম।
শিলা আপু আর তার হাজবেন্ডের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ভিডিও আকারে ক্যামেরায় বন্দি করা হয়েছে। লজ্জায় কিছুটা দেখেই বাকিটা বুঝতে সময় লাগে না। ল্যাপটপ অফ করে স্তব্ধ বসে পড়ি। আর কত নিচে নামবে মানুষটা? কিভাবে পারে এসব করতে? চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে লাগলো।
কান্নারত অবস্থায় বলি,
” কেন করলেন এমন?”

অনিব হেসে বললেন,
” বোকার মতো প্রশ্ন। তোমাকে আঁটকে রাখতে আর জব্দ করতে। এর চেয়ে ভালো কোনো বুদ্ধি মাথায় এলো না। এখন যদি আমাকে ছাড়ার চিন্তাও করো,তাহলে এই ভিডিও কি হবে আশা করি বোঝানো লাগবে না। ”

” এটা অন্যায় অনিব। ”

” তুমি যা করেছ তা কি ন্যায়? রেখে চলে গিয়েছিলে?”

” আমি নিরুপায় ছিলাম। আপনি বিনা কারণে আমার উপর টর্চার করছিলেন আর করছেন। হয়তো অনেক মেয়ে এসব মুখ বুজে সহ্য করতে পারে। কিন্তু আমি তাদের দলে নই।”

” জানি তুমি তাদের দলে নও। আবার যেনো পালাতে না পারো সেজন্যই এই ব্যবস্থা।”

হঠাৎ আমার মাথায় একটা গভীর প্রশ্ন এলো। আমরাও তো ওই হোটেলে ছিলাম।তাহলে আমাদের কিছু কি…… ভাবতেই ভয়ে জড়সড় হয়ে উঠি।
কাঁপা গলায় বলি,
” আমাদের কিছু কি এমন করেছেন? আপনার হোটেলে সব রুমে ক্যামেরা লাগানো থাকে? ছিঃ ভাবতেই ঘেন্না হয়।”

” তুমি খুব বোকা। আমি এতটাও খারাপ না যে নিজের বউকে পাবলিকের সম্পত্তি করবো। আর সব রুমে ক্যামেরা নেই। ওটা কেবল শিলাদের রুমে। ইচ্ছে করে ওই রুমটা তাদের দেওয়া হয়েছে। ”

” তাহলে অন্যের সম্মান নিয়ে কেন খেলছেন?”

” বর্ষা আমি এত শত বুঝি না। আমার যা মনে হয়েছে করেছি। তুমি এখন ভেবে দেখো, আমার সাথে সংসারে মন দিবে নাকি চলে যাবে।”

অনিব ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। বর্ষার জন্য যে তার মনে বিশাল জায়গা রয়েছে তা কেউ জানে না। শিলার ভিডিওটা করার ইচ্ছে ওর ছিলো না। শুধুমাত্র বর্ষাকে হারানোর তীব্র ভয় ওকে এমন কাজ করতে বাধ্য করেছে। শুধু হারানোর ভয় নয়। তীব্র ঘৃণাবোধ থেকেও এমন কাজে সে উদ্যত হয়েছে। শুরু থেকে বর্ষার উপর সমস্ত অত্যাচারের পেছনে মূল কারণ তীব্র ঘৃণা। আবার একই সাথে ভালোবাসাও। আচ্ছা একই মানুষের জন্য ঘৃণা আর ভালোবাসা একসাথে কি থাকতে পারে? তা জানা নেই অনিবের। কোনো একটার ঘাটতি তেকেই অন্যটা বেড়ে চলে।
.
.
.
.
.
.
.
আমরা ঢাকা ফিরে এলাম। সিলেট থেকে ফেরা ইতোমধ্যে দু’দিন হয়ে গেছে। অনিবের সাথে কথা চলে না। তিনিও বলেন না, আর আমি তো বলিই না। উনার মুখদর্শনেও আমার তীব্র অরুচি। আমাদের ঘর আলাদা হয়েছে। বলা ভালো, আমরা অনিবের নিজস্ব বাড়িতে শিফট হয়েছি। এখানে পরিবারের বাকি তিনজন সদস্য নেই। লোক বলতে আমি আর অনিব। গেটের একজন দারোয়ান। সর্বদা পাহারার মতো লেগে থাকা এক কাজের মেয়ে, এইতো। কাজের মেয়েটি নাম ঝুমি। মাঝবয়সী একজন মহিলা। ঘরের কাজ কম, সারাদিন আমি কি করি,কোথায় যায় সমস্ত খবর অনিবকে পৌঁছানো তার মূল কর্ম।

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here