What a হাসবেন্ড পর্ব -০৮

#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-৮
.
❝ আসমা মে যেসে বাদাল হো রাহে হে
হাম ধিরে ধিরে ধিরে পাগাল হো রাহে হে
মে তো মারজানা হায়য়য়য়য়য়……. ❞

দরজা লাগায় আয়নার সামনে দাঁড়ায় নাচতেছি আর গাইতেছি। মনটা কেন জানি খালি নাচি নাচি করতেছে। মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই পাগ’ল হয়ে যাবো। আম্মু আইসা একটু পর পর দরজা ধাক্কায় যাচ্ছে। আমি আমার মতো নাচতেছি। এইতো একটু আগেও ধাক্কায় গেসে সাথে থ্রেড ও দিয়ে গেছে। তাতে কী আমি আমার মতো নাচতেছি, এখন আমি বড় হইছি আমার বিয়ে হইছে আম্মু এখনো আমাকে থ্রেড দিতেছে ভাবা যায়? তাও আমারই জামাইয়ের সামনে। শ্বশুর বাড়ি গেলে সে যদি আম্মুর এইগুলো কপি করে আমাকে থ্রেড তখন! তখন কী করবো আমি?

-‘ মুন তুই দরজা খুলবি? নাকি আমি জামাইকে বলবো তোকে এখনি নিয়ে যেতে ‘

-‘🙂’

শেষ পর্যন্ত দরজা খুলে দিলাম। রুমে ঢুকেই আম্মু বলল, ‘ কী করিস?’
-‘ পাগলু ডান্স দেখবা?’
-‘ বেশি কথা না বলে আমাকে সাহায্য কর। আয় ‘
কথাটা বলেই চলে গেলো। আমি চুল বেধে রান্নাঘরে গেলাম। আসার সময় দেখলাম উনি খুবই সিরিয়াস হয়ে আব্বুর সাথে কথা বলতেছে। আব্বুও শুনতেছে।
.
আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম,’ কী কাজ করবো বলো?’
আম্মু বলল, ‘ কিছু করা লাগবে না। আমার কাছে দাড়াঁয় থাক। আগে তো হু’দাই এসে আম্মু আম্মু করতি এখন রুমে ঘাপটি মে’রে বসে আছিস কেন?’
আমি কিছু বললাম না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।

___________________________

সোফার মধ্যে থম মে’রে বসে আছি। আম্মু রান্নাঘরে কী জানি করতেছে৷ আব্বু ঘুমায়, আর উনি আমার পাশে বসে আছে। সবকিছু কেমন যেন শান্ত। আমি একটার পর একটা টিভির চ্যানেল পালটাচ্ছি, কোনো চ্যানেলে ভালো কিছু হচ্ছে না। সব মিলিয়ে খুব বিরক্ত লাগতেছে। শেষে টিভি বন্ধ করে দিলাম।
উনি মোবাইলে কী যেন করতেছে। উঁকি দিয়ে দেখি ছবি ইডিট করতেছে। আমাদের বিয়ের ছবি।
আমি ভদ্র বাচ্চার মতো দাড়াঁয় আছি আর উনি কোন এক ছেলে সাথে যেন কথা বলতেছে। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো, ছবিটাও সুন্দর ছিলো, শুধু উনি যদি একটু আমার মতো ভদ্রতা বজায় রাখতো তাহলে আর ছবির বারোটা বাজতো না। আমি বললাম, ‘আমাকে রেখে আশেপাশের সবকিছু কে’টে দেন, আপনাকেও সরিয়ে দেন ‘
উনি মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ভাবছি আমাদের নতুন বাসার দরজা থেকে শুরু করে বাথরুমের জানালা পর্যন্ত সবকিছুতে শুধু তেলাপোকার ছবি থাকবে। বালিশের কভারে তেলাপোকা, চাদরে তেলাপোকা, পর্দায় তেলাপোকা, এমনকি ঘরের ফার্নিচারগুলোতেও তেলাপোকা ডিজাইন করবো। কেমন হবে? ‘

-‘ থাক! 😒, কাউকে সরানো লাগবে না। আপনাকে রেখে আমাকেই বরং সরিয়ে দিন। ‘
কথাটা বলে সোজা হয়ে বসে পড়লাম। ছবি দেখার শখ আমার মিটে গেছে, আর দেখতে চাই না।
হঠাৎ ই উনি ফিসফিস করে বললেন, ‘ ওই বয়াম টা যে চু’রি করছো এইটা তোমার আম্মুকে বলি?’
-‘ আমি মোটেও চু’রি করিনি ‘
-‘ ওকে, তাহলে তো আম্মু কে বলতেই পারি। ‘
কথাটা বলেই উনি দাড়ালেন। আমি ওনার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলাম। বললাম, ‘ সমস্যা কী?’
উনি একটু নড়েচড়ে বসলেন। এরপর বললেন, ‘ আছে একটা বড় সমস্যা। ‘
-‘ সেটা কী?’
উনি কিছু বলল না। মোবাইল রেখে চোখ বন্ধ করে বসে রইলেন। আমি তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। এরপর উনি আমার দিকে ফিরে বললেন, ‘ মুন তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাওনি কেন?’
-‘ নিরামিষ, গুরুগম্ভীর, রসকষ ছাড়া একটা মানুষকে কে বিয়ে করতে চাইবে?’
-‘ আমি মোটেও নিরামিষ না ‘
-‘ হুম, জানি। আপনি ঝগড়া’ইট্টা ‘
-‘ ভাবছিলাম তোমার আম্মুকে কিছু বলবো না এখন দেখছি বলতেই হচ্ছে ‘
-‘ না থাক। বসেন। আপনি ঝগড়াই”ট্টা না আমিই ঝগড়াই”ট্টা ‘
-‘ গুড ‘
-‘ যত্তসব ‘
-‘ আচ্ছা, শোনো আমার কাছে না একটা দারুণ প্ল্যান আছে ‘
-‘ কী প্ল্যান? তেলাপোকা ডিজাইনের প্লেট বাটি কিনবেন? 😒’
-‘ আরে না।’
-‘ তাহলে? ‘
-‘ তোমার ওই বয়ামের সকল রহস্য আমি জেনে গেছি ‘
-‘ জানি, এখন ওইগুলো কী সবাইকে শোনাবেন?’
-‘ না। ভাবছি এইগুলো সত্যি সত্যিই করবো ‘
-‘ কীভাবে?’
-‘ লিখেছো তো তুমি তাহলে তুমিই বলো ‘
-‘ আমি তো ওইগুলো আমার ভবিষ্যৎ বয়ফ্রেন্ডের কথা ভেবে লিখেছিলাম, এখন ওইগুলো দিয়ে কী হবে? আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে ‘
-‘ তাতে কী? আমরা নিজেরা কিন্তু বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড হতে পারি। যেমন ধরো তুমি লিখেছো প্রতিদিন বাহিরে যাওয়ার সময় একটা ছেলে তোমাদের বাসার সামনে দাঁড়ায় থাকবে, তোমার দিকে তাকায় থাকবে, এরপর একদিন প্রোপোজ করে মনের কথা বলবে। বাস্তবে এমন হলে কেমন হয়? ‘
-‘ একদম ফাটাফাটি ‘
-‘ আমার সাথে তাহলে বাসায় চলো কাল থেকেই মিশন শুরু হবে ‘
-‘ কেন? আমি এখানেই থাকবো। আপনি আমাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ায় থাকবেন ‘
-‘ আচ্ছা ঠিকাছে, আমি তাহলে চলে যাই ‘
-‘ হুম, যান ‘
-‘ গিয়ে তোমার বয়ামের সবগুলো কাগজ পড়বো ‘
-‘ আরেএ আরেএএ বয়াম বলবেন না? ডিব্বা বলেন ডিব্বা 😊’
-‘ আচ্ছা ডিব্বাই ‘
.
.
.
সকালবেলা,,,,,,
ফোন হাতে নিয়ে হাটতেছি আর ওনার জন্য অপেক্ষা করতেছি। কে জানতো এই ডিব্বা আমার জামাই কে প্রেমিক পুরুষ বানিয়ে দিবে। ভাবা যায়? সে হবে আমার বয়ফ্রেন্ড 🤭।
বারান্দায় গিয়ে দেখলাম উনি দাঁড়িয়ে আছে। তারাতাড়ি করে গলায় ওরনা পেছিয়ে বের হয়ে গেলাম। বের হওয়ার সময় শুনলাম আম্মু জিজ্ঞেস করছিলো কোথায় যাচ্ছি। আমি শুধু সময় নাই বলে দৌড়ে বেরিয়ে পড়লাম। নিচে এসে দেখি উনি দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে আসতে দেখে ফোনে কী যেন করলো, এরপর আমাকে ইশারায় ফোন চেক করতে বলল। দেখলাম উনি লিখেছেন, ‘ কী করবো এখন?’
আমি লিখলাম, ‘ আমি এখন ভাব নিয়ে বের হবো আপনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন। আমি আপনার দিকে একবার তাকাবো এরপর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যাবো ‘
উনি লিখলেন, ‘ ওকে ‘
আমি এরপর কাধে ব্যাগ নিয়ে ভাব নিয়ে বের হলাম। দেখলাম উনি তাকায় আছে। আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে আসলাম। কিছুদূর এসে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম উনি আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। আমি তারাতাড়ি করে মেসেজ পাঠালাম, ‘ এই আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আমার পেছন পেছন আসুন। আপনি জানেন না?পছন্দ করলে পেছন পেছন আসতে হয় ‘
উনি লিখলেন, ‘ ওহ আচ্ছা আচ্ছা৷ আসতেছি দাঁড়াও। ‘
এরপর আমি হাটতে লাগলাম। কোথায় যাচ্ছি? কিছুই জানি না। আন্তাজে খালি হাটতেছি। হঠাৎ মনে হলো আমার পাশে কেউ হাটছে। তাকিয়ে দেখলাম উনি। আমি রাগ হয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনি অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো এখন কী করা উচিৎ বুঝতেছে না। আমি মেসেজ পাঠালাম।

-‘ আমার এতো কাছে কেন হাটছেন? দূরে হাটেন। ছেলেরা কোনো মেয়েকে পছন্দ করলে পাশাপাশি রাস্তা দিয়ে কখনো হাটে না। দূরে থাকে। পেছন পেছন আসে’

উনি লিখলেন, ‘ ওও আচ্ছা! সরি আমি বুঝতে পারিনি। দাড়াও পেছনে যাচ্ছি ‘
.
.
চলবে 🙂
( রি-চেক দেই নাই। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here