What a হাসবেন্ড পর্ব -১৩

#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-১৩
আম্মু আব্বুর সামনে আমরা দু’জন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আম্মু ডালঘুটনি হাতে নিয়ে আমার দিকে এমনভাবে তাকায় আছে যেন এক্ষুনি হাতের ডালঘুটনি দিয়ে আমাকে ঘুটে ফেলবে পাশে শুধু আব্বু দেখে পারছে না। আর উনি আমার সাথে ভদ্রছেলের মতো দাঁড়ায় আছে। আড়চোখে তাকালাম ওনার দিকে, আহা! কী সহজ সরল মানুষ ভাজা মাছটা যেন উলটে খেতে পারেন না, ওদিকে রাস্তায় আমার সাথে কতই না ত্যাড়ামি করলো। আমি ওনাকে কনুই দিয়ে একটা ধাক্কা দিলাম। উনি ‘ আউ’ বলে সরে গেলো। আম্মু আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, ‘তুই ওকে ধাক্কা দিলি কেন? আমি জানি তুই-ই এমন করেছিস, পুলিশ ওই ছেলেকে ধরে নিয়ে আসুক এরপর তোর হা’ল আমি কী করি দেখিস ‘
আমি বড় বড় চোখ করে আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মি কোন ছেলের কথা বলছে?
-‘ আম্মু তুমি কোন ছেলের কথা বলছো? ‘
আম্মু আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো। বলল, ‘ন্যাকা সাজবি না, একদম ন্যাকা সাজবি না। ‘
আব্বু দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমার লাই পেয়ে পেয়ে মেয়েটার এমন অবস্থা হয়েছে, একেবারে বান্দ’র হয়েছে। ‘
আব্বু স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কোনো কথা বলছে না। আম্মু বকবক করেই যাচ্ছে। আমাকে ইচ্ছামত যা পারছে তাই বলছে। আমি ওনার দিকে তাকালাম, ভেবেছিলাম উনি কিছু বলবে কিন্তু উনি কিছুই বললেন না। উনিও স্ট্যাচু হয়ে গেছে। মাঝখানে আমি আর আম্মুই আছি। পরিস্থিতি ভয়ং’কর হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আমি চিল্লায় বললাম, ‘ আরেএ তুমি এমন করছো কেন? বলেই তো পালিয়েছি। রাতে তোমাকে ডাক দেইনি? দিয়েছিলাম তো এরপরই তো পালিয়েছি। আমি চিঠিও লিখেছিলাম। বুঝতে যেন পারো তাই চিঠির হেডলাইন ও লিখেছিলাম। এখন তাহলে এভাবে চিল্লাচ্ছো কেন? আর পুলিশকে তুমি কেন ডেকেছো?
আম্মু আমার দিকে তেড়ে আসলো, আমি আব্বুর পিছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম। বললাম
বিয়েটাও শান্তি মতো করতে দাও নি ‘
আমার কথা শুনে আম্মু ডালঘুটনি একদিকে ফেলে কাঁদতে লাগলেন। আম্মুকে দেখে আমি অবাক হলাম। আরে ভাই এদের হয়েছে টা কী?
-‘ তুমি কাঁদছ কেন আম্মু? বিয়ে করেছি তো কী হয়েছে? দেখো আমি ওনার থেকে দেনমোহরের টাকাও নিয়েছি। ‘
আম্মু আগের মতোই বিলাপ করতেছে। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘ আরেএ ভাই এতো কানতেছো কেন হ্যাঁ? নিজের জামাইকেই তো বিয়ে করছি! এতে অপ’রাধ কী? ‘
আমার কথা শুনে আব্বু আমার কাছে এসে বলল,, -‘ মানে? ‘
আমি বললাম, ‘মানে টা খুব সহজ! আমি ওনার সাথে পালিয়ে ওনাকেই বিয়ে করেছি। আসলে পালিয়ে বিয়ে করার অনেক শখ ছিলো। জীবনে তো কেউ নেই তাই ওনাকেই করলাম আবার ‘
আম্মু আব্বু দুজনেই অবাক! এতো অবাক হওয়ার কী আছে? ওনারা কী বাংলা কথা বুঝে না?
.
আমি রুমে এসে শাড়ী চেঞ্জ করে বসে আছি। ওনাকে আব্বু ডেকেছেন তাই উনি নাই। আয়নার কাছে গিয়ে নিজেকে একটু দেখলাম। চুলগুলো উড়াইলাম। গুনগুন করে গান গাইলাম, এরইমধ্যে উনি আসলো। এসেই আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো। আমি পাত্তা না দিয়ে আগের মতো চুল উড়াচ্ছি। উনি ধুপধাপ করে আমার সামনে আসলেন, হঠাৎ-ই ওনার দিকে ফিরিয়ে নিলেন। বললেন, ‘ তোমার মাথায় আবল তাবল বুদ্ধি ছাড়া আর কিছু কী নাই মুন? ‘
-‘ কী বলছেন আপনি? ‘
-‘ কী বলছি বোঝো না? কাল ওভাবে বাসা থেকে কেন বের হয়েছিলে, তোমার মা কতো চিন্তা করেছে জানো? ‘
-‘ আমি তো বলেই বের হয়েছি! ‘
-‘ বলে বের হতে কে বলেছে? ‘
-‘ খালি খালি লাগছিলো তাই আম্মু বলে চিল্লান দিসিলাম ‘
-‘ বে’ক্কেল ‘
-‘ 😒’
-‘ পাগ’ল ‘
-‘ 😒’
-‘ অপ”দার্থ ‘
-‘ 😒’
-‘ হা’ম্বা ‘
-‘ এই আপনি থামবেন! আমি সত্যি সত্যিই মানে মাম’লা দিবো। মা’নহা’নীর মামলা! ‘
-‘ হাত-পা ভে’ঙে দিবো ‘
-‘ নারী নির্যা’তন মামলা দিবো ‘
-‘ চুপ!
বলেই খাটে শুয়ে পড়লো। আমি বললাম, ‘আপনাকে দেখলে আমার কী মনে হয় জানেন? ‘
-‘ কী? ‘
-‘ মনে হয় আমার কপা’লটা খারা’প! ‘
-‘ 😒 ‘
-‘ আর কী মনে হয় জানেন? ইচ্ছা করে চিল্লায় বলি What a হাসব্যান্ড! ‘
-‘ আমার তোমাকে দেখলে কী মনে হয় জানো?’
-‘ কী ‘
-‘ পাগ/ল, বে/ক্কেল,হা/ম্বা ‘
-‘ 😒 ‘
-‘ আর কী ইচ্ছে করে জানো? ইচ্ছে করে লোকজন ডেকে চিল্লায় বলি, তুমি একটা পাগ’ল ‘
-‘ আমাকে আপনি এভাবে অপ’মান করতে পারেন না ‘
-‘ চাইলে সবই করতে পারি ‘
-‘ জানি তো! তেলা’পোকার প্লেট বাটি কিনবেন, দরজা থেকে শুরু করে বালিশের চাদর পর্যন্ত তেলা’পোকা ডিজাইন করবেন, কবে না যেন নিজেক তেলা’পোকা হয়ে যান। তখন আপনার নাম হবে ইচ্ছাধারি তেলা’পোকা ‘
বলেই শুয়ে পড়লাম। এই লোকের সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার নেই। সুযোগ পেলেই আমার মানসম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। কাল রাতে দৌড়াতে দৌড়াতে যখন আমি ক্লান্ত তখন বলেছিলাম উনি গাড়ি এনেছেন কিনা। উনি বললেন না আনেন নি। বললাম একটা রিক্সা ডাকতে। উনি বলল রিক্সা নাকি এখন পাওয়া যাবে না। সাথে আরও বললেন, “তোমার মতো পাগ’ল সবাই না। এতো রাতে কেউ রিক্সা নিয়ে বসে নাই। সবাই ঘুমায় একমাত্র চো/র, ডা/কাত ছাড়া কেউ রাস্তায় নাই ”
উনি ইন্ডাইরেক্টলি আমাকে চো’র বলেছেন, আবার ডা’কা’তও। রাগ করে সারা রাস্তা কথা বলিনি৷
.
.
.

হঠাৎ-ই পিঠে ব্যাথা পেলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি উনি শ্যাম্পুর বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-‘ কী ব্যাপার? কী সমস্যা? ‘
-‘ বিয়ের রাতে আমাকে শ্যাম্পুর বোতল দিয়ে মার’ছি’লা মনে আছে? ‘
-‘ হ্যাঁ, আছে। ‘
-‘ এবার তোমার পালা। আমি বিয়ের পরেরদিন মা’রছি। ‘
আমি উঠে বসলাম। খাট থেকে নামতে নামতে বললাম,
-‘ এই না থামেন ‘
উনি আমার কাছে আসতে আসতে বলল, না কেন? ঋ’ণ পরিশোধ করার সময় হয়েছে, আসো! কাছে আসো।
-‘ আ…আরে আমি তো ভালোবার মাই’র দিয়েছিলাম। ‘
-‘ আমিও ভালোবাসার মা’ই’র ফেরত দিচ্ছি। পিলিস নাও ‘
-‘ না ছেড়ে দেন ‘
আমি দৌড়াতে শুরু করলাম। উনি আমার পেছনে আমি সামনে জান নিয়ে দৌড়াচ্ছি। আল্লাহ! এইবারের মতো বাচায় দাও। শান্তশিষ্ট মানুষটা এতো ভয়ং’কর কেন হয়ে গেলো? একটু শান্ত বানিয়ে দাও। ফ্রিজ থেকে একটা টুকরা বরফ ওনার মাথায় ঢেলে দাও। উনি আমার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে বললেন, কোথায় যাচ্ছো? দাঁড়াও!
-‘ না, থামেন পিলিস 😬’
-‘ আসো বউ ‘
-‘ না ভাই 😬’
.
.
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ☺️। আজকে একটু ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ 😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here