What a হাসবেন্ড পর্ব -১২

#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-১২
ডিম লাইট জ্বালায় বসে আছি। উনি বলছে রাতে আসবেন কিন্তু এখনো আসে নাই। আমার আবার সন্দেহ হচ্ছে উনি আমাকে অপেক্ষা করায় অন্য কোনো মেয়ের সাথে পালিয়ে যাবেন নাতো? ধুর ধুর কীসব ভাবছি!
জানালায় বার বার উঁকি দিচ্ছি, রুমের এই কোণা থেকে ওই কোণা যাচ্ছি। কেমন যেন এক ভ’য়ংক’র অনুভূতি হচ্ছে। আমি ওনাকে ফোন দিলাম। কয়েকবার রিং হয়ে কেটে গেলো। আবার দিলাম, এবার রিসিভ করলেন,
-‘ হ্যাঁ মুন বলো’
-‘ কী বলবো? আপনি কই? আমাকে বলে বিয়ে করবেন? ‘
-‘ করবো তো! ‘
-‘ কখন করবেন? আমি বসে আছি। কচু ভালো লাগে না ‘
-‘ এইতো বন্ধুদের সাথে কথা বলতেছিলাম সবকিছু ঠিকঠাক করে বের হবো ‘
-‘ কীসের বন্ধু? আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করতেছি আর আপনি আড্ডা দিতেছেন! ছিঃ আমি আপনার থেকে এটা আশা করিনি। বিয়ে ক্যান্সেল! আমি করবো না আপনাকে বিয়ে ‘
-‘ থাপ্পড় খাবা বেয়া’দপ মেয়ে, কাজী অফিসে সবাইকে পাঠিয়েছি ‘
-‘ কেন? ওনারা কী বিয়ে করবে নাকি?’
-‘ ওরা বিয়ে করে ফেলছে আবার কেন করবে? ‘
-‘ আপনিও তো করছেন তাইনা? ‘
-‘ ওদের বউ তোমার মতো না😒’
-‘ ওওও, বুঝতে পারছি আমি এখন খা’রাপ হয়ে গেছি। আমাকে আর এখন ভালো লাগে না তাইনা? আমি পুরোনো হয়ে গেছি তো! বুঝতে পারছি। ঠিকাছে ভালো থাকবেন। সুখে থাকবেন। ‘
-‘ আরেএএ আজ…….’
আমি ফোন কে’টে দিলাম। উনি সুখে থাকুক। আমি তো এখন পুরোনো হয়ে গেছি 🙂 । থাক! 🙂
উনি কল দিয়েই যাচ্ছেন। আমি ধরছি না৷ মনে হচ্ছে কানের কাছে কেউ জোরে জোরে গাইছে,,
“‘ জোর কা ঝাটকা হায় জোরোসে লাগা হা লাগা “‘
“‘ পে পে পেপে পে পে “‘
ওহহ কী ফিলিংস। অনেকক্ষণ রিংটোন বাজার পর অবশেষে আমি রিসিভ করলাম।
-‘ হ্যালো’
-‘ তুমি কী পাগ’ল মুন?’
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তো এখন পাগ’ল , পাগ’লই মনে হবে আমাকে, ভালো তো। সুখে থাকবেন৷ ‘
-‘ আমি তো…..
ফোন কে’টে দিলাম। উনি আবার দিলেন আমি ধরলাম,
-‘ তুমি কী এমনই করবা? ‘
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তো এমন করি, ঠিকাছে সুখে থাকব…..
-‘ চুপ৷ একদম চুপ। থাপ্প’ড় এইবার সত্যি সত্যিই দিবো। ফোন কাট’লে হাত ভে’ঙ্গে দিবো ‘
-‘ আসেন! ভাঙ্গে’ন। আমি আপনার নামে নারী নি’র্যা’তন মামলা দিবো ‘
-‘ ঘর থেকে বের হতে পারবা না, পা ভে’ঙ্গে দিবো’
-‘ ডাবল মাম’লা দিবো ‘
-‘ হাত পা ভে’ঙ্গে দিলে মাম’লা দিবা কীভাবে?’
-‘ উড়ে উড়ে চলে যাবো ‘
-‘ ডানা কে’টে দিবো ‘
-‘ বিয়ে করবো না আপনাকে ‘
-‘ কইরো না আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি বিবাহিত পুরুষ ‘
-‘ আহা গো! কী পুরুষ! ‘
আমি ফোন আবারও কে’টে দিলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১২.৩০ বাজে। আম্মু আব্বু সেই কখন ঘুমিয়ে গেছে, এখনি পালাতে হবে। আমি একটা ছোট ব্যাগে কিছু প্রয়োজনীয় জীনিস নিলাম। পালাচ্ছি সাথে যদি ব্যাগ না থাকে তাহলে সেটা কী পালানো হয়? হয় না। তাই একটু অল্প সল্প গুরুত্বপূর্ণ জীনিস নিয়ে নিলাম। ওনাকে ফোন করে বললাম,
-‘ শুনেন! আমি বের হচ্ছি। আপনি আসেন ‘
-‘ কোথায় আসবো?’
-‘ বাড়ির সামনে ‘
-‘ কেন? ‘
-‘ আরেএ আমাকে নিতে আসবেন না? ‘
-‘ আরেএ আমরা পালাচ্ছি, শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাচ্ছি না। জীবনে দেখছো? কোনো বয়ফ্রেন্ড তার গার্লফ্রেন্ডকে পালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসার সামনে আসে? একটা নির্দিষ্ট জায়গায় যায় এরপর সেখান থেকে ট্রেনে বা বাসে করে পালায় ‘
-‘ ও হ্যাঁ হ্যাঁ! ‘
-‘ হুম এবার আসো। সবাই ঘুমায় গেছে তো? ‘
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ ঘুমায় গেছে ‘
-‘ সাবধানে বের হও, আমি রামপুরাতেই আছি ‘
-‘ আচ্ছা! ‘
ফোন রেখে রুম থেকে বের হলাম। ডাইনিং রুমের লাইট জ্বালানোর। দরজা খুলতেই মনে হলো পালানোর সময় মানুষ চিঠি লিখে বাবা-মায়ের কাছে। আমি তো লিখি নাই! তাই তারাতাড়ি রুমে এসে কাগজ কলম নিয়া বসে পড়লাম। লিখা শুরু করলাম। চিঠিতে তো ইমোশনাল কথা থাকে আমাকেও ইমোশনাল কথা লিখতে হবে।

❝ প্রিয় বাবা-মা,,
আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আমি তোমাদের এতো এতো ভালোবাসার পরও পালিয়ে যাচ্ছি শুধুমাত্র ওনার ভালোবাসার জন্য। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তোমাদের মেয়ে হওয়ার যোগ্য আমি না, আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিয়ো। তোমাদের মান-সম্মান ধুলায়, মাটিতে, পানিতে, বালিতে এবং বায়ু দূষণ জাতীয় যতো কিছু আছে সবকিছুর সাথে মিশিয়ে দিলাম, সরি। ভালো থেকো তোমরা, আসি।
ইতি,
তোমাদের আদরের মেয়ে
মুন ❞

কাগজটা ভাজ করে জগের নিচে রেখে দরজা খুললাম। জুতো পরার সময় মনে হলো চিঠির উপরে হেডলাইন দেই নাই। তারাতাড়ি জুতো খুলে জগের নিচ থেকে কাগজ টা নিয়ে ভাজের উপর ❝ইমোশনাল চিঠি❞ লিখলাম। এরপর আবার জুতো পড়লাম। লিফটে ওঠার সময় মনে হলো কেমন জানি খালি খালি লাগে তাই আবার বাসায় আসলাম। জোরে জোরে কয়েকবার আম্মু আম্মু বলে চিল্লায় দাঁড়ায় থাকলাম। আম্মু ঘুম ঘুম চোখে আসলো। আমাকে দরজার সামনে দেখে বড় বড় চোখ করে বলল, ‘কোথায় যাচ্ছিস? ‘
-‘ পালিয়ে যাচ্ছি জগের উপর তোমাদের চিঠি! ইমোশনাল চিঠি! পড়ে নিয়ো ‘
বলেই দিলাম দৌড়। একেবারে নিচে এসে দেখলাম দারোয়ান চাচা বসে বসে ঘোড়ার মতো ঘুমুচ্ছে। আমি আসতে করে চাবি নিয়ে গেইট খুললাম। পেছনে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনছিলাম। তাকিয়ে দেখি আম্মু জু’তা হাতে নিয়া আসতেছে। আমি শুধু একটু দৌড়ানি খাইতে চাইছিলাম, কিন্তু এমন দৌড়ানি খাইতেছি যে আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো। এখনি বোধহয় বের হয়ে আসবে। এখনই তো পালানোর আসল ফিলিংস আসতেছে।
আম্মু দারোয়ানকে ধাক্কা দিয়ে বলল, ঘুমান ক্যা? ওরে ধরেন! যাইতাছে গা, আয় হায়! ‘
আমি তো দৌড়েই যাচ্ছি৷ কোনদিকে যাবো জানি না। উড়াধুরা দৌড়াইতে দৌড়াইতে সামনে লম্বা একটা ছায়া দেখলাম। সেদিকে দৌড়ে গেলাম। কাছে গিয়ে দেখলাম উনি দাঁড়িয়ে আছে। আমি গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। উনি স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ওনাকে ছেড়ে বললাম,
-‘ তারাতাড়ি পালান, আমাদের ধরে ফেলবে ‘
উনি তখনই আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। আমি এক হাত দিয়ে শাড়ী উঁচু করে ধরলাম, আরেকহাত দিয়ে ওনার হাত ধরে দিলাম দৌড়। উনি আমি নির্জন রাস্তায় দৌড়াচ্ছি। আমি ভাবতে পারি নাই আমার ইচ্ছেগুলো এইভাবে পূরণ হবে। খুশি লাগতেছে প্রচন্ড! না দৌড়ায় একটু নাচতে পারলে ভালো লাগতো। যাই হোক আমাদের পালাতে হবে। পালিয়ে বিয়ে করতেই হবে। কাজী অফিসে গিয়ে অনেক গুলো সেলফি তুলবো আমি। ওনার সাথে তুলবো। ওনার ফ্রেন্ডদের সাথে তুলবো। ওয়াও! কী ফিলিংস!!
চলবে……….
( রি-চেক দেই নাই 😐, ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন আর গল্প কিন্তু প্রায় শেষের দিকে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here