#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-১১
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আম্মু ঝা’ড়ু হাতে নিয়া দাঁড়ায় আছে। আমি উঠে বসতেই বলতে আড়ম্ভ করলো,
-‘ বিয়ে হয়েছে বলে কী সারাদিন ঘুমাবি? উঠ, নাস্তা বানাতে সাহায্য কর আমাকে। ‘
-‘ আসতেছি ‘
-‘ আসেন, এসে আমাকে উদ্ধার করেন। ‘
.
আমি না বুঝি না। আম্মু খালি উদ্ধার করতে কেন বলে? সে কী বিপ’দে আছে? একটা মানুষ যে কত ত্যাড়া কথা বলতে পারে আম্মুকে না দেখলে জানতামই না। আম্মুকে দেখি আর খালি চমকে যাই।
.
.
আমি রেডি হয়ে বসে আছি। বারবার ফোনের দিকে তাকিয়ে চেক করতেছি উনি কোনো মেসেজ দেয় কিনা। আম্মু আইসা আমার এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে বলল, ‘ কী রে? এতো সাজুগুজু করছিস যে! কোথাও যাবি নাকি? ‘
-‘ হ্যাঁ, একটু কাজ আছে ‘
-‘ কী কাজ? ‘
-‘ বিয়ে করবো! ‘
-‘ কীহহহ 😒’
-‘ কিছু না, তুমি যাও তো! ‘
বলেই দরজা আটকিয়ে দিলাম। উনি বলেছিলো আজ আমাকে বিয়ে করবে। আমি সেজেগুজে বসে আছি আর ওনারই খবর নাই। সকাল থেকে এতো কল এতো মেসেজ দিলাম উনি পাত্তাই দিচ্ছেন না, What a হাসব্যান্ড! নিজের বউকে পাত্তা দেয় না। 😒 কী করতেছে আল্লাই জানে। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর শাড়ি টাড়ি পালটিয়ে শুয়ে পড়লাম। উনি কী করলেন এইটা? আমাকে আশা দিয়ে কই চলে গেলেন? কী হইছে ওনার? মুভির মতো আবার উনি একা একা পালিয়ে যাবেন নাতো? পাচঁবছর পর কী আমাদের দেখা হবে? এরপর সে তার বাচ্চা বউ নিয়া আমার কাছে ক্ষমা চাইতে আসবেন? আমি কী এরপর ভালো থেকো বলে চোখের জল লুকাবো? এরপর সারাজীবন সিঙ্গেল থাকবো? আমার চোখের নিচ কালো হয়ে যাবে? আমি শুকিয়ে যাবো? পাতলু হয়ে যাবো? মানে কী! কীসব ভাবতেছি আমি? ধুর! ধুর! বাই চান্স উনি যদি এমন করে তাইলে আমি ওনার চুল টে’নে ছি’ড়ে ফেলবো। হাতুরা দিয়ে মাথা ফাটায় দিবো। এরপর নিজের মাথাও ফা’টাবো। এরপর ম’রে ভূ’ত পে’ত্নী হয়ে বাশ বাগানে ঘুরে বেড়াবো। আমি সবকিছু আগে থেকেই ভেবে রাখি, সবসময়! আর এখনো ভেবে রাখছি। পে’ত্নী হয়ে ওনার পেছনে দৌড়াবো। ম’রে সবার প্রথমে বাশ বাগানের সকল তেলাপোকাকে ধ্বং’স করে দিবো। বাতাসের সাথে উড়ে বেড়াবো 😇, কিন্তু আমি তো অনেক মোটা কীভাবে উড়বো? ফোন নিয়ে সার্চ দিলাম , ‘ কীভাবে চিকন হয়ে উড়ে বেড়ায়?’ দেখলাম ” সুইট স্লিম বেল্ট ” এসে পড়ছে। একটা ভিডিও ওপেন করে দেখলাম মানুষ এইটা পরে চিকন হয়ে যাচ্ছে। পেট একেবারে নাই হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এইটা যেমনে চাইপা ধরছে 😐আমাকে এইভাবে ধরলে আমি তো এক্ষুনি ম’রে যাবো। ওমাগো বলে চিল্লায় বাড়ির সব মানুষকে ডেকে নিয়ে আসবো৷ থাক এই পদ্ধতি বাদ! আমি বরং ব্যায়াম করি। এটা শরীরের জন্য অনেক ভালো আমি জানি, আপনারাও জেনে নিন। বাড়িতে করবেন প্রতিদিন।
আয়নার সামনে দাঁড়ায় লাফালাফি করলাম কতক্ষণ। ওমা এখন দেখি আমার মাথা প্রচন্ড ঘুরাইতেছে, থাক এইটাও বাদ!
পেটে যেনো চা’প পড়ে তাই কানে ধরে উঠবস করতে লাগতে লাগলাম। ওমা এখন দেখি আমার পুরা শরীর ব্যাথা করতাছে। ওমা গোওওওও!
থাক আমি আর ব্যায়াম করবো না, জীবনেও না। প্রত্যেকটা কাজ প্রথমে করেই মনটা মিলিয়ে যায় 😐, আর ইচ্ছে করে না।
.
হঠাৎ ফোনে টুংটাং শব্দ হতেই আমি তারাতাড়ি ফোনের কাছে গেলাম। দেখলাম মোর জামাইয়ের কল! রিসিভ করে বললাম,
-‘ কে? ‘
-‘ আমি ‘
-‘ আমি কে? ‘
-‘ আমি তোমার হবু বর ‘
-‘ বর কেডা?’
-‘ আমি ‘
-‘ আমি কেডা?’
-‘ কাল রাতে এসে পড়লা কেন?’
ওনার কথা শুনতেই আমি তারাতাড়ি চাদরের নিচে চলে গেলাম। নাক-মুখ ঢেকে ফিসফিস করে বললাম, ‘ কাল আপনার কী হয়ে গেছিলো?’
-‘ কোথায়? কিছুই তো হয় নি ‘
-‘ পাগলের মতো কাল কী সব করলেন, আমার সে কথা মনে পড়লে এখনো ভ’য় লাগে। আমি ভেবেছিলাম আপনি পাগল হয়ে গেছেন।’
-‘ আর?’
-‘ মনে হয়েছিলো আপনাকে জ্বীনে ধরেছে ‘
-‘ আমি বলি? ‘
-‘ কী?’
-‘ তুমি কাল লজ্জা পেয়ে চলে গিয়েছিলে, আমি জানি ‘
ফোন দূরে সরিয়ে কতক্ষণ থম মে’রে শুয়ে থাকলাম। আমার হাসি পাচ্ছে নাকি লজ্জা লাগছে সত্যিই বুঝতেছি না। উনি এখনো কথা বলতেছেন। আমি শুনতে পাচ্ছি,,,
-‘ আমাকে নিরামিষ বলেছিলে ‘
-‘ আমাকে গম্ভীর ও বলেছিলে ‘
-‘ তাহলে কাল চলে কেন……..
আমি ফোন কে’টে দিলাম। ভাগ্যিস উনি আমার সামনে নাই, নাহলে আমি সত্যি সত্যিই ম’রে যেতাম।
.
.
.
বিকেলবেলা,,,,,
কমলা কালার একটা শাড়ি হাতে নিয়া বসে আছি। এটা পড়েই বিয়ে করবো। আমার অনেক ইচ্ছা ছিলো একটা কমলা কালার শাড়ি পড়ে বিয়ে করার। কিন্তু আম্মুর জন্য পারি নাই। এখন সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করবো না। শাড়ি ধরে দৌড় দিয়ে বয়ফ্রেন্ডের কাছে যাবো, তার সামনে জোরে জোরে নিশ্বাস নিবো। মানে হচ্ছে তাকে বোঝাবো যে আমি খুব ক্লান্ত, তার কাছে আমি এসেছি৷ তাকে আমি ভালোবাসি 🤭। এরপর হাত ধরে দৌড় দিবো৷ পেছনে কেউ একটু দৌড়ানি দিলে ভালো লাগতো। ফিল্মি ফিল্মি ফিলিংস আসতো। যাই হোক আজ তাহলে কোনো একটা উলটা পালটা কাজ করতে হবে। এরপর দৌড় দিবো। ওনার হাত ধরতে হবে, এটা মাস্ট বি করতেই হবে নাহলে আমার জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই শাড়ি রেখে ওনাকে ফোন করলাম। সকালে একবার সাজুগুজু বসে ছিলাম ওনার খবর ছিলো না। আমি তো কতকিছু ভেবে নিয়েছিলাম। পৃথিবীতে সব থেকে বেশি চিন্তা আমিই করি! আমি বুঝতে পারছি 😐।
.
উনি কল ধরতেই আমি চিল্লায় বললাম, ‘ এই আপনি আমাকে বিয়ে কবে করবেন? ‘
-‘ এইতো আজই ‘
-‘ আমি রেডি হচ্ছি, আপনি আসেন ‘
-‘ আরে এখন কেন?’
-‘ আমাকে বিয়ে করবেন না? আপনি কী অন্য কাউকে বিয়ে করার চিন্তাভাবনা করছেন? এই কাজ যদি করেন তো আপনার হাড্ডি একটাও আস্তা থাকবে না বলে দিলাম। আমাকেই করবেন, শুধু আমাকে, জাস্ট আমাকে, একমাত্র আমাকে, পুরা পৃথিবীতে আমাকে…….
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ তোমাকেই করবো। কিন্তু এখন কেন? তুমি না বলছো পালিয়ে বিয়ে করবা? ‘
-‘ হ্যাঁ! ‘
-‘ পালাবো তো রাতে, দিনে দুপুরে কেউ পালায়?’
-‘ ও সরি সরি আমি বুঝতে পারিনাই ‘
-‘ কী পড়ে আসবা? ‘
-‘ কমলা কালার একটা শাড়ি পরে আসবো ‘
-‘ কমলা?’
-‘ হ্যাঁ 🤗’
-‘ লাল, সবুজ থাকতে কমলা!’
-‘ লাল সবুজ পরবো? আপনার সাথে একা দেখা করতে রেস্টুরেন্টে যেভাব্র গেছিলাম আপনি কী আমাকে সেভাবে যেতে বলছেন? ‘
-‘ না না,, ছিঃ ছিঃ একদমই না ‘
-‘ তাহলে?’
-‘ কিছু না ঠিকাছে রাতে আসবো আমি, বাই ‘
-‘ বাই’
কল কেটে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতেছি। আহ! কী সুন্দর লাগতেছে আমাকে। মাঝেমধ্যে নিজেকে দেখে নিজেই অজ্ঞা’ন হয়ে যাই৷ আহা! কী সুন্দর আমি
চলবে
( ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। রি-চেক দেই নাই। দেরি করে পর্বটা দেওয়ার জন্য সরি। ভেবেছিলাম আজই গল্পটা শেষ করে দিবো, কিন্তু শেষ করতে পারলাম 😐 না৷ যাই হোক কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ 😴😴😴)