#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-২৮
দমকা হাওয়া বইছে চারিদিকে। সেখান থেকে কিছু বাতাস ছুঁয়ে দিচ্ছে মুনের মলিন মুখশ্রী। পাশেই মুনকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে হৃদয়। মা বউ মিলে তাকে আজ অনেক কাজ করিয়েছে। সকালে উঠে ঘর ঝা’ড়ু দিয়েছে। থালাবাসন ধুয়েছে। মুনের কাপড়চোপড় ধুয়েছে, এতো কাজ করে সে খুবই ক্লান্ত। এখন বারান্দায় মুনকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। মুন সরে যেতেই হৃদয় নড়েচড়ে বসলো। মুন হৃদয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আরেকটু সরে বসলো। হৃদয় সোজা হয়ে বসে দু’হাতে চোখ ডলতে ডলতে বললেন, ‘ এতো তিড়িং বিরিং কেন করো? চুপচাপ বসে থাকতে পারো না? ‘
-‘ ওয়াশরুমে যাবো ‘
-‘ কেন?’
মুন আশ্চর্য দৃষ্টিতে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো৷ হৃদয় মুনের কোলে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘ দিনদিন তুলতুলে রসগোল্লা হয়ে যাচ্ছো মুন। এটা কী ঠিক? কবে না যেন রসগোল্লা ভেবে খেয়ে ফেলি। ‘
-‘ আচ্ছা, এখন সরেন। আমাকে যেতে দিন ‘
বলেই হৃদয়কে সরিয়ে দিলো। বারান্দা থেকে এসে আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলো। হৃদয় মুনের পেছনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ দেখেছো কত তুলতুলে তুমি। ‘
মুন পেট ধরে দাঁড়িয়ে থাকল। এরপর ক্যালেন্ডারের কাছে গিয়ে বলল, ‘ কবে সেইদিনটা আসবে? ছোট ছোট হাত পা, ছোট্ট মুখ, পিচ্চি শরীর টাকে কোলে নিবো। ইসস! এইসময়টাকে ভিডিওর মতো টেনে দেওয়া যেতো যদি, তাহলে কত ভালো হতো। ‘
-‘ সেই সময়টাও এসে যাবে। ইনশাআল্লাহ ‘
-‘ হুম ‘
-‘ ৬ মাসেই কত গুলুমুলু কিউট হয়ে গেছো ‘
-‘ ন্যাকামি করবেন না। আমি কোথায় গুলুমুলু হয়েছি? পেটটা একটু বড় হয়েছে। গালগুলোও একটু ফুলে গেছে। আজ থেকে নক্সা করা শুরু করবো তাহলে আবার চিকন হয়ে যাবো। ‘
-‘ গুলুমুলুই সুন্দর ‘
-‘ কীভাবে? ‘
-‘ এইযে গাল গুলো গুলুমুলু হয়ে গেছে, আগের থেকে বেশি গুলুগুলু হয়ে গেছো। দূর থেকে তোমাকে দেখলে মাঝেমধ্যে মনে হয় ছানার গুলুগুলু মিষ্টি! ইচ্ছে করে একেবারে খেয়ে ফেলি। আবার কখনো লাল শালগম মনে হয় ইচ্ছে করে আম্মু কে বলি কে’টে কু’চি কু’চি করে ভাজি করতে। আবার কখনো গোলগাল ফুটবল মনে হয়, ইচ্ছে করে এক কি’ক মে’রে গোল দিয়ে ফেলি। ‘
কথাটা বলেই হৃদয় মুনের দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকালো। মুন বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে৷ মুনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হৃদয় সোজা হয়ে বসলো। আমতা আমতা করে বলল, ‘ আসলে আমি এটা বলতে চাই নি। আমার আবেগ বোঝানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই এইগুলো মুখ ফসকে বলে ফেলেছি। আর….
-‘ থাক আর বলতে হবে না, আমি বুঝে গেছি 😒’
-‘ 😐’
-‘ আমাকে কে’টে কু’চি কু’চি করবেন তাই না? কু’চি কু’চি করেই থামবেন না আবার সেটাকে ভাজিও করবেন। বাহ! আবার আমাকে ফুটবলের মতো কি’ক মে’রে গোল করবেন। আবার ইংরেজি বলছেন আমার সামনে। কী ভেবেছেন? আপনার ইংরেজি আমি বুঝবো না? সবই বুঝি। লা’ত্থি দিয়ে গোল করবেন, কতবড় সাহ’স। শ্বাশুড়িকে গিয়ে এক্ষুনি বলতেছি দাঁড়ান। এরপর আপনার ইচ্ছে চিরতরে ঘু চি য়ে দিবে ‘
-‘ আরেএ আমি তো…
মুন ততক্ষণে রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে। অন্যরুম থেকে ‘ শ্বাশুড়ি শ্বাশুড়ি ‘ চিৎকার শোনা যাচ্ছে। হৃদয় দৌড়ে সেদিকে গেলো।
-‘ শ্বাশুড়ি উনি বলে আমাকে লা’ত্থি দিবেন। আমাকে দেখে বলে ওনার লা’ত্থি দিতে মন চায়। আবার বলছে কে’টে কু’চি কু’চি করে ভাজি করবে ‘
মা রেগে হৃদয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তুই সত্যিই ওকে এইগুলো বলেছিস?’
-‘ হ্যাঁ, বলেছি। কিন্তু….
-‘ তোর থেকে আমি এটা একদম আশা করি নি। ‘
বলেই মুনকে নিয়ে চলে গেলো। হৃদয় কেবল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের যাওয়া দেখলো৷
______________________
মুনের জন্য অনেকগুলো মেক্সি বানিয়ে এনেছেন মা। মুন এখন সেগুলোই পড়ে থাকে। হৃদয় ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে মুনের দিকে। তার কাছে এখন মুনকে মিষ্টি, শালগম, ফুটবলের মতো লাগে না। মুনকে এখন পুরাই মিষ্টিকুমড়ার মতো লাগে। এ কথা ভেবে হৃদয় মুখ লুকিয়ে হাসে। সেদিনের পর থেকে হৃদয় মুনকে কোনো কিছুর সাথে তুলনা করে না। মজার ছলে বা মুখ ফসকেও কিছু বলে না। কেননা মুন এখন খুব সাধারণ কথায়ও মাইন্ড করে বসে, আগের চেয়ে অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে।
হৃদয়ও বুঝে গেছে ‘ আবেগে জীবন চলে না ‘। সেদিন বউকে ভালোবেসে মিষ্টি, শালগম, ফুটবল বলায় কী কী হয়েছিলো তার মনে আছে। মাকে দেখলেও এখন ভয় লাগে। সময়মতো ঘরের সব কাজ করিয়ে নিচ্ছে অথচ বউয়ের কাছে একটু আবেগ নিয়া কথা বলতে পারতেছে না, তারসাথে কতটা অ’মান’বিক আচরণ করা হচ্ছে ভাবা যায়!!
হৃদয়ের এইসব ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসে৷
হঠাৎ মুন হৃদয়ের পাশে এসে বসলো। মুন একহাত দিয়ে বাটি ধরে রাখছে আরেক হাতে আলুরচপ। হৃদয় দেখতে দেখতে মুনের ৩ টা চপ খাওয়া শেষ। ৪ নাম্বার চপটা মুখে দিতে নিবে তখনই হৃদয় ছো মে’রে নিয়ে গেলো। মুন রেগে হৃদয়ের দিকে তাকালো। হৃদয় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চপে একটা কামড় দিলো।
-‘ এইভাবে নিলেন কেন?’
-‘ ইচ্ছা করেছে তাই। ‘
-‘ পেট খা রা প হবে ‘
-‘ মিষ্টিকুমড়ার দোয়ায় বরবটি মোটা হয় না ‘
মুন রেগে চিৎকার দিয়ে বলল, ‘ আপনার উপর আমার অভি’শাপ, আমার বাচ্চাদের অভি……
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই হৃদয় চপটা মুনের হাতে ধরিয়ে দিলো। মুখে যতটুকু ছিলো সেটুকুও দিয়ে দিলো। দৌড়ে বেসিনের কাছে গেলো। তিনবার কুলি করলো। এরপর মুনের সামনে এসে দাঁড়ালো৷ মুন হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো। মুনকে হাসতে দেখে হৃদয় হনহন করে রান্নাঘরে গেলো। একটা ছোট বাটিতে কতগুলো আলুরচপ নিয়ে মুনের পাশে এসে বসলো। চোখ বন্ধ করে বিরবির করলো। এরপর বাটিতে ফু দিয়ে মুনকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেতে লাগলো।
-‘ কী বিরবির করলেন? ‘
-‘ দোয়াদরুদ পড়ে নিলাম, দেশের অবস্থা তো তেমন ভালো না। ‘
মুন হাসতে হাসতে বলল, ‘ দেশের অবস্থা? নাকি আপনার?
হৃদয় কিছু বলল না। টিভি দেখায় মনোযোগ দিলো। মুন আগের মতোই হাসছে।
চলবে…..
( ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)