What a হাসবেন্ড পর্ব -২৭

#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-২৭
ওইদিনের পর থেকে মুন হৃদয় অতিরিক্ত কেয়ার করা শুরু করেছে। তার ধারণা মুনের কেয়ার দেখে হৃদয় গলে যাবে আর মুনের কথা মেনে নিবে। হৃদয় সকালে রেডি হচ্ছে মুন এমন সময় রুমে আসলো। হাতে চায়ের কাপ।
-‘ কী ব্যাপার? আজ না ডাকতেই উঠে গেলে এখন আবার চা নিয়ে আসলে! তোমার মাথায় কী চলছে বলো তো৷ ‘
-‘ সেদিনই তো বললাম জানেন না 😌’

হৃদয় মুনের দিকে হতাশ চোখে তাকালো। চশমা পড়তে পড়তে বলল, ‘ সাতসকালে মাতলা মাতলি কেন করতেছো হুম? এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যাও ‘
-‘ আমি ভালোই আছি। আপনি ভালো হয়ে যান, এখনো সময় আছে। বাবা হওয়ার পর ভালো হওয়ার সুযোগ আর থাকবে না ‘

হৃদয় মুনকে পাত্তা না দিয়ে রুম থেকে চলে গেলো৷ মুন হৃদয়ের পেছন পেছন যাচ্ছে আর বলছে ‘ কবে বাবু নিবে, কী চিন্তা ভাবনা করেছে এতদিনে ‘
হৃদয় কিছু না বলে হেঁটে যাচ্ছে। মুন বিরক্ত হয়ে একটা সময় চিৎকার করে উঠলো।

-‘ আপনি সিরিয়াস কেন হচ্ছেন না? কেন বুঝতে চাইছেন না? আমার বাবু লাগবে। টুইনস বাবু। বাবু নিয়ে অন্তত সিরিয়াস হওয়া উচিৎ আপনার। বাবুটা তারাতাড়ি নেওয়ার পরই তো আমি আপনাকে তুমি করে বলতে পারবো নাকি? ‘
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে সামনে তাকালো। সামনে তাকিয়ে মুন ভরকে গেলো। মা বাবা মুনের দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা অবাক হয়েছেন৷ মা অবাক হয়েছেন। মুন অবাক হয়েছে তাদের দেখে। মুন সবার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলালো। মা ল জ্জা পেয়ে দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেলো৷ বাবা ল জ্জা পেয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। হৃদয় সবাইকে এইভাবে চলে যেতে দেখে মুনের দিকে রাগী চোখে তাকালো। মুন হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে নিষ্পাপ হাসি দিলো৷ যার মানে কী কিছু করিনি, ওনাদের ব্লাড সুগার হঠাৎ করে বেড়ে গেছিলো তাই দৌড়াদৌড়ি করছে, ডোন্ট ওয়ারি!
-‘ তোমার লাগামছাড়া কথায় বাবা মা ল জ্জা পেয়েছে আর তুমি নতুন বউ হয়ে ল জ্জা পাও না। নির্ল’জ্জ বউ কোথাকার ‘
-‘ আপনি যে লজ্জাবতী লতা! যেখানে প্রত্যেক ঘরের জামাইদের বউরা নির্ল জ্জ উপাধি দেয় সেখানে আমাকে দিতে হচ্ছে লজ্জাবতী লতা! এই বিষয় টা কতোটা লজ্জাজনক আপনি জানেন?’
-‘ আবারও এইসব বলছো! শ্বশুর শ্বাশুড়ির সামনে এভাবে অপদস্ত হলে এরপরও এতো সোজা কথা কী করে বলছো? তোমার তো আসলেই ল জ্জা নেই ‘
-‘ ল জ্জা কেন করবে? ওনাদের এমনিতেই জানাতে হতো এখন শুনে ফেলেছে, আমার কী দোষ। আপনি রুম থেকে বের না হলে ওনারা কী শুনতে পারতো? ‘
হৃদয় কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। মুন মুখ ফুলিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলো। তার ভবিষ্যৎ এতোটা অন্ধকার হবে সে ভাবতেও পারে নি। বন্ধুবিদের কাছে আগে বুক ফুলিয়ে বলতো বিয়ের পর ফুটবল টিম বানাবে। কিন্তু এখন জামাইয়ের ভাবসাব সুবিধার লাগছে না। রাতে হৃদয় আসলে সিরিয়াস হয়ে আবারও কথা বলবে।

——-

-‘ আপনার কী কোনো সমস্যা আছে? থাকলে বলতে পারেন আমি আপনাকে কলিকাতা হারবালের……….
-‘ চুপ! একদম চুপ! বাবু চাইতো? ঠিক আছে নিবো। এ নিয়ে আর একটা কথাও বলবা না। ‘
মুন লাফিয়ে উঠলো। বলল, ‘ তাহলে আপনি এক বছরের ছুটি নিয়ে নিন ‘
-‘ আশ্চর্য! এখন আমি কেন ছুটি নিবো? ‘
-‘ ওমা! বাবু নিবেন মাত্রই তো বললেন ‘
-‘ এটার সাথে ছুটির কী সম্পর্ক? ‘
-‘ আমার দেখভাল করতে হবে না? আপনি জানেন না গর্ভকালীন সময়ে জামাইদের কতো দায়িত্ব পালন করতে হয়। ‘

হৃদয় নিজের মাথার চুল নিজে কতক্ষণ টানলো। এরপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘ তুমি কী এখন প্রেগন্যান্ট? ‘
-‘ না, এখনো হতে পারিনি 😐’
-‘ তো আগে হও। এরপর আমি ছুটি নিবো। আর আমি কীসের ছুটি নিবো হ্যাঁ? বাবু নেওয়ার চিন্তায় জামাই কী করে ভুলে গেছো নাকি?’

মুন দাঁত কেলিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। হৃদয় ধাম করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

মুন এখন আর হৃদয়ের কান ঝালাপালা করে না বাবু বাবু করে। শান্তশিষ্ট হয়েই থাকে৷ কিন্তু মাঝেমধ্যে আগের সেই প্রেতা’ত্মা ভর করে বসে মুনের মাথায়। হৃদয় বলেছে এমন করলে তাকে কবি’রাজের কাছে নিয়ে ঝা’ড়ুর বা’রি খাওয়াবে। মুন তাই এখন ভদ্র!

———-

মা অসুস্থ তাই মুন আজ রান্না করছে। মা বলে দিয়েছেন কী কী করতে হবে। মুন মায়ের কথামতো রান্না করলো। এরপর সবশেষে আলুরদম বসালো৷ কতদিন আলুর দম খায় না। মুড়ি দিয়ে মেখে আলুর দম খাবে। একটা প্লেটে ভাত বেড়ে জোরে জোরে ‘ শ্বাশুড়ি’ ‘ শ্বাশুড়ি ‘ বলে চিৎকার করতে লাগলো। মা অসুস্থ শরীর নিয়েই দৌড়ে আসলেন। জিজ্ঞেস করলেন কী হয়েছে এভাবে চিৎকার কেন করছো। মুন বলল রান্না শেষ খেয়ে নিন নাহলে শরীর আরও খা রা প হয়ে যাবে। মা মুনের দিকে হতাশ চোখে তাকালো। এতো জোরে চিৎকার করে এমনিতেই হার্ট অ্যাটা ক করিয়ে দিয়েছে এখন আবার শরীর খা রা পের চিন্তা করছে। মুন একটা বাটিতে আলুরদম নিয়ে খেতে খেতে চলে গেলো। মা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

বারান্দায় একটা চেয়ার নিয়ে আলুরদম খাচ্ছে আর গান গাইছে।
❝ আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচিইইইইইই
তোমার দ্বিধায় পু’ড়ে যাইইইই
এমন দ্বিধার পৃথিবীতে তোমায় চেয়েছি পুরোটাই ❞

কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রেখে দাঁড়িয়ে গেলো। হঠাৎ করে চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা দেখতে লাগলো। দেয়াল ধরে বারান্দা থেকে রুমের ভিতরে গেলো৷ চোখেমুখে অন্ধকার দেখতে পেলো। টেবিলের উপর বাটিটা রাখতেই মাটিতে পড়ে গেলো৷

যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে অপরিচিত কোথাও আবিষ্কার করলো। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কোথায় আছে। এমন সময় হৃদয় আসলো। মুখে চিন্তার ছাপ। হৃদয়কে দেখে মুন অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো ও কোথায়৷

-‘ হাসপাতালে আছো। অজ্ঞা’ন হয়ে পড়ে ছিলে বাড়িতে। ‘
-‘ আমার কী হয়েছিলো? জীবনে একবারও অ’জ্ঞান হই নাই। অনেক ইচ্ছা ছিলো নায়িকাদের মতো অজ্ঞান হবো, এরপর নায়ক ধরবে আমাকে। আপনি তো বাসায় ছিলেনই না। আমাকে ধরলেনও না। ( একটু থেমে) আশ্চর্য! অ’জ্ঞান হলাম অথচ কোনো ফিলিংস পেলাম না , এটা কী কী ধরনের অজ্ঞা’ন? ‘
হৃদয় চুপ করে কিছু একটা ভাবছে। মুন বকবক করেই যাচ্ছে। হঠাৎ চোখ বন্ধ জোরে জোরে কতগুলো শ্বাস নিলো। এরপর মুনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ মুন তুমি প্রেগন্যান্ট ‘

মুনের পুরো দুনিয়া থমকে গেলো। হৃদয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চিৎকার করে উঠলো৷
-‘ আপনি বাবা হচ্ছেন হৃদয়! ‘
-‘ হু’
মুন মুন খাট থেকে নেমে লাফানো শুরু করে দিলো। ওর চোখমুখ খুশিতে জ্বলজ্বল করছে। হৃদয় ওকে দেখে মুচকি হাসলো। জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। মুন হৃদয় কে ধরে বলল, ‘ আপনি প্রেগন্যান্ট! সে কথা সবাইকে বলেন হৃদয়! তারাতাড়ি জানান ‘
হৃদয় হেসে বলল, ‘ আমি না তুমি ‘
-‘ ওই একই তো। আম্মু আব্বু কই? সবাইকে ডাকেন। এক্ষুনি ‘
-‘ বাসায় গিয়ে বলবো। ‘

বাড়িতে আসতেই মুন রুমের মধ্যে নাচানাচি করছে। উড়াধুরা লাফালাফি করতেছে। হৃদয় এসে ওকে থামিয়ে বলল এই সময়ে সাবধানে চলাফেরা করতে হবে এমন লাফালাফি করা যাবে না। মুন শান্ত হয়ে বসলো। ফোন হাতে নিয়ে কাউকে কল দিয়ে বলল, ‘আব্বু আমি প্রেগন্যান্ট! তুমি নানা হতে চলেছো ‘

ফোনের ওপাশ থেকে কিছু শোনা গেলো না। ফোন কেটে গেলো৷ মুন অবাক হয়ে ব্যালেন্স চেক করলো। দেখলো এখনো ৩০ টাকা আছে। তাহলে ফোন কে’টে গেলো কেন? মায়ের নাম্বারে ফোন দিতেই ওপাশ থেকে কর্কশ গলায় শোনা গেলো, ‘ বে’য়াদপ মেয়ে, জীবনে ভদ্র হবি না। বাপকে ফোন দিয়ে কেউ এইসব বলে? ‘
-‘ আরেএ তুমি জেনে গেছো? আব্বু বলেছে? আব্বুকে ফোন করে বললাম আব্বু কিছু বলল না। ‘
-‘ থা’প্পড় খাবি মুন। কী সব কথা বলিস হ্যাঁ? বে’ক্কেল কোথাকার ‘
-‘ আমাকে জীবনেও তুমি ব’কা দিবা না। রেস্পেক্ট মি আমি প্রেগন্যান্ট 😌 ‘
-‘ হো তুই কচু! ‘
বলেই ফোন কে’টে দিলো। মুন খারা প করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সবাইকে এ কথা জানাতে হবে যে। হাতে কত কাজ!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here