#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-৩০
হৃদয় এতিম একটা বাচ্চার মতো মুনের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর মুন ভ্রু কুঁচকে হৃদয়কে দেখছে। বউ প্রেগন্যান্ট হলে জামাইয়ের হাল এমন হয় আগে জানলে হৃদয় এতো তারাতাড়ি বাবু নেওয়ার কথা চিন্তাও করতো না জীবনে। প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে মুড সুইং হয়। রাত ৩টা বাজে ঘুম থেকে উঠে বলে ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। ভাত এনে দিলে বলে পাউরুটি খাবে, পাউরুটি এনে দিলে বলে ভাত খাবে। গভীর রাতে আইসক্রিম খাবে বলে বায়না করে। মাঝেমধ্যে খাটে জায়গা পায় না ঘুমানোর জন্য। সারাদিন কাজ করার পর বাড়ি ফিরে বউয়ের সাথে কথা বলতে নিলে বউ বসে বসে ঝিমায়, মাঝেমধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর কোলে করে খাটে শুইয়ে দিতে হয়। হৃদয়ের সকল ভাবনায় পানি ঢেলে মুন চিৎকার করে বলল,
-‘ কী হলো বলছেন না কেন? ‘
-‘ কী বলবো? ‘
-‘ আমার কথা আপনি শুনেন নি?’
-‘ শুনেছি ‘
-‘ তাহলে কিছু বলছেন না কেন? ‘
-‘ আস্তেধীরে কথা বলো। এতো চিল্লাও কেন? আমি শুনছি তো। ‘
-‘ আমি চিল্লাই? ‘
-‘ মিথ্যা বলবো না, তুমি সত্যিই অনেক চিল্লাফাল্লা করো। ‘
মুন কিছুক্ষন চুপ করে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
-‘ আমার আচরণে বি’রক্ত হন আপনি ‘
-‘ না, একদমই না। প্রত্যেক হাসবেন্ডকেই এই সিচুয়েশনে পড়তে হয় আমিও পড়েছি। ‘
-‘ আমি হয়তো একটু বেশিই করি ‘
-‘ হু, ন্যাকামি চ্যাকামি একটু বেশি করো। ইটস ওকে আমার অভ্যাভ হয়ে গেছে 🥲 এখন এইসব ছাড়া আমার চলে না। ‘
মুন খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। বলল, ‘ আচ্ছা! তাহলে চলেন দুইজন মিলে পার্টি করি ‘
-‘ পার্টি? কীসের জন্য? ‘
-‘ এমনিই খাওয়ার জন্য করবো ‘
-‘ তুমি তো এমনিতেই খাও সারাদিন খাও ‘
-‘ সেটা তো নরমাল খাওয়া, এখন পার্টি উপলক্ষে জমপেশ খাওয়া হবে। ‘
-‘ লাফালাফি করার দরকার নেই আসো আমরা বসে বসে খাই ‘
-‘ না আমি পার্টি করবো। খাওয়ার পার্টি। এই পার্টিতে কোনো লাফালাফি থাকবে না। ‘
-‘ কী খাবে বলো। আলু জাতীয় যেকোনো কিছু ‘
-‘ 😒 আলু খেতে খেতে আলুর মতো হয়ে যাচ্ছো৷ ‘
-‘ আমি আগেও আলু খেতাম। ‘
-‘ এখন একটু বেশিই খাও ‘
-‘ হ্যাঁ, খাই। আবার খাবো। বারবার খাবো। পৃথিবীতে আমার কয়েকটা জীনিস খুবই প্রিয়, যেমন: আমার মা যদি প্রচুর চিল্লায়, ব’কা দেয় তাও আমার প্রিয়। আমার বাবা, ইনি তো মা’রাত্নক, ভয় ংকর রকমের প্রিয়। এরপর আলু, এটা আমার অনেক প্রিয়। আর সবশেষে আপনি। ‘
-‘ সবার শেষে আমি 🥲? আমি তোমার জামাই নাকি আলু তোমার জামাই ‘
-‘ আপনি আমার ওয়ান এন অনলি হাসবেন্ড, কিন্তু আপনি যখন ছিলেন না তখন আলু ছিলো এরপর আপনি এলেন। কিন্তু আপনি আসার পরও আলু আমার সাথে আছে, আমি কী আলুকে শেষে রাখতে পারি? ‘
-‘ ন্যাকামি, যত্তসব 😒 ‘
_____________________________
গায়েনী ডক্টর আয়েশার চেম্বারের সামনে বসে আছে মুন আর হৃদয়। মুন লা লা লা করে গান করছে আর হৃদয় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। হঠাৎ হৃদয়ের দিকে ফিরে মুন ব্যস্ত কণ্ঠে বলল, ‘ আমার জন্য কী আপনার চিন্তা হয় না? ‘
হৃদয়ের ভ্রু হাল্কা কুঁচকানো ছিলো মুনের এমন কথায় পুরো কুঁচকে গেলো। বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ প্রচুর টেনসনে আছি মুন, তুমি এখন এইসব কথা বলো না। ‘
-‘ কেন? কী হয়েছে? ‘
-‘ আমার বউ প্রেগন্যান্ট তাই 😒’
-‘ এভাবে তাকাবেন না। আপনার হাবভাবে কিছু বোঝা যায় না। আপনি আসলেই চিন্তা করেন আমাকে নিয়ে? আমার জন্য কোনো পাগলামো দেখলাম না এই পর্যন্ত। ‘
-‘ আমার কোনো কিছু তুমি কখনো দেখবে পারবে না৷ বুঝলে! ‘
-‘ শোনেন! আমাকে একটুয়াকটু পাগ’লামি করা উচিৎ আপনার। আপনি জানেন একজন আদর্শ স্বামীর প্রথম কাজ কী? ‘
মুন আপন মনে বকবক করে যাচ্ছে আর হৃদয় চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। অনেকক্ষণ পর মুনকে থামিয়ে হৃদয় মুনের দুইহাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল, মুন আমার অনেক ভ’য় করছে ‘
-‘ কেন? খা’রাপ স্বপ্ন দেখেছেন? ‘
-‘ আরে ধুর, এইসব কিছু না। ‘
-‘ তাহলে? ‘
-‘ তোমার ডেলিভারির তো বেশিদিন নেই ‘
-‘ হুম, আমার ছেলে 🥹 আসবে ‘
-‘ মুন আমি সিরিয়াস। আমার দিকে তাকাও। তুমি কী বুঝতে পারো না আমার অবস্থা? সবসময় ফাজ’লামি করো। তুমি জানো ফাহিমের ওয়াইফ কীভাবে মা’রা গিয়েছিলো? শুধু বাচ্চাটার জন্য। ওর সাথে যখন কথা হয় তখন জানো আমার তোমার কথা মনে পড়ে। ওর মতো যদি আমার অবস্থা হয় তখন কী হবে? আমি ম’রে যাবো। ‘
হৃদয়কে জড়িয়ে ধরে মুন বলল, ‘ এইরকম কিচ্ছু হবে না। এতো ভাববেন না। আর কে বলল আমি আপনাকে বুঝি না? আমি আপনাকে বুঝি, বুঝলেন! এতো প্যারা নিচ্ছেন কেন হুম? এতো প্যারা নিয়ে লাভ নাই, আপনি স্ট্রং থাকবেন তাহলে আমিও স্ট্রং থাকবো। আপনি জানেন না….
-‘ মুন ‘
-‘ হুম ‘
-‘ ভালোবাসি ‘
-‘ আমিও ‘
__________________________
-‘ এই এই শুনেন’
-‘ কী? ‘
-‘ আইসক্রিম খাবো, খুব আইসক্রিম খেতে মন চাচ্ছে, মনে হচ্ছে আমার কানের কাছে কেউ ফিসফিস করে বলেছে আইসক্রিম খাও আইসক্রিম খাও ‘
-‘ থাক আর ভণিতা করতে হবে না। আমি এনে দিচ্ছি। ফ্রিজেই আছে হয়তো ‘
বলেই ঢুলতে ঢুলতে চলে গেলো। মুন পেটে হাত বুলিয়ে একা একা বকবক করছে। হঠাৎ পেটে ব্যাথা শুরু হলো। বেবি কি’ক দিলে তো এমন লাগে না। এই ব্যাথাটা একটু অন্যরকম। ব্যাথাটা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। মুনের হঠাৎ ভ’য় হলো। শরীর ঘেমে একাকার। দরজার দিকে তাকিয়ে হৃদয়কে ডাকার চেষ্টা করলো। ব্যাথায় চোখমুখ খিঁচে রেখেছে। হৃদয়কে ডাকার চেষ্টা করতে করতে খাট থেকে নামলো। হাত বাড়িয়ে দেয়ালে ভর দিলো। অনেক কষ্টে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে গেলো। জোরে হৃদয়কে ডেকে মুন মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
চলবে………
( ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। ৩১ নম্বর পর্বতে মানে হচ্ছে কাল গল্পটা শেষ করে দিবো, এরপর নতুন গল্প শুরু করবো 😊)