#অগোচরে_তুমি
লেখনীতেঃ স্বর্ণালী তালুকদার
২৪.
এয়ারপোর্টে দু’জোড়া কাপলকে বিদায় দিয়ে ফিরতি পথে মেহেনূর,তনিমা,অর্ক আর অয়ন।রাওনাফরা এবং দিহাদরা একসাথেই কক্সবাজার যাচ্ছে,হানিমুনে।এয়ারপোর্টে আসার পর আরেক দফায় সারপ্রাইজড হয় দিহাদ কলি সাথে রাওনাফ রোশনিও।ওদের একসাথে কক্সবাজার যাওয়ার বিষয়টা একে অপরের কেউই জানতো না।রাওনাফ আর রোশনিকে মেহেনূরই কক্সবাজার পাঠাচ্ছে।ওদের এই ট্রিপে রাওনাফ দিহাদ দুজনেই খুব খুশিই হয়।দুই বন্ধু একসাথে হানিমুনে যাচ্ছে ব্যাপারটা বেশ ভালোই লাগছে ওদের কাছে।ওদেরকে বিদায় দিয়ে মেহেনূর আর তনিমা মেহেনূরদের গাড়ি করে আসছে।অর্ক আর অয়ন ওদের গাড়ি করে চলে যায়।
মেহেনূর ড্রাইভ করছে আর তনিমা ওর পাশে বসে রাজ্যের আলাপ করে।আগে ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে কি হতো,এখনো কি হয় এই বিষয় গুলোই ওর আলাপের মূল টপিক।মেহেনূর চুপচাপ তনিমার কথা শুনছে।মাঝে মধ্যে শব্দ করে হেসে উঠছে।তনিমাকে ওর খুব ভালো লাগে।মেয়েটা একটু ছটফটে স্বভাবের হলেও মনের দিক থেকে একদম খাঁটি।মন খোলা, কোনো কিছু চেপে রাখতে পারে না।সব বলে ফেলে।
মেহেনূরের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তনিমা।মেয়েটা কি সুন্দর!একদম সাদামাটা।ছোটবেলা থেকে বিদেশী আবহাওয়ায় বেড়ে উঠলেও ওর মধ্যে বিদেশীদের আদব কায়দার ছিটেফোঁটা নেই।নেই কোনো অহংকার।সবার সাথে অনায়াসেই মিশে যায়,কার্পণ্য করে না।মেয়েটার চতুর দিকে দৃষ্টি।সবদিক কত সুন্দর করে সামলে ফেলে মুহূর্তেই।মেহেনূর বয়সে ওর থেকে কত ছোট।তাও তনিমার মনে হয়, মেহেনূরের কাছ থেকে ওর কত কিছু শেখার আছে।মুখে কি সুন্দর মিষ্টি একটা হাসি বরাবর লেগেই থাকে।
হঠাৎ করেই তনিমা কথা বলা বন্ধ করে দিতেই মেহেনূর এক পলক তাকায় তনিমার দিকে।পলকহীনভাবে তনিমা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মেহেনূর স্মিত হেসে বললো,
– কি হয়েছে তনিমা আপু?
ঘোর কাটে তনিমার।মৃদু হেসে চোখ সড়িয়ে নিয়ে মাথা নেড়ে বুঝালো” কিছু হয় নি।”সামনে দৃষ্টি স্থির রেখে মেহেনূর ফের বললো,
– তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?
চকিত দৃষ্টিতে তাকায় তনিমা।অবাক স্বরে বললো,
– তুমি কি করে বুঝলে?
– তোমাকে দেখে মনে হলো।সকাল থেকেই দেখছি তুমি অন্যমনস্ক হয়ে আছো।বলো কি বলতে চাও।
– এখানে না।চলো না কোথাও গিয়ে বসে কথা বলি।
– কোথায় যাবো?
মুহূর্তেই তনিমার চোখ চকচক করে উঠলো।খুশিতে আপ্লুত হয়ে বলল,
– গাঙিনীপাড়!
_______________________
শনশন বাতাসে ঢেউয়ের তালে তালে দুলতে থাকা জলরাশিতে মনে হচ্ছে অজস্র মুক্তা ছড়ানো।নদীর পানিতে সূর্যের কিরণ পড়তেই ঢেউয়ের ভাঁজে বার বার চিলিক দিয়ে উঠছে।বাতাসের তোড়ে পানিতে তীব্র কলকল আওয়াজ তুলছে।মাঝে মধ্যেই দমকা হাওয়ায় কিছু পানি আঁচড়ে পড়ছে পাড়ে।অদূরেই হয়তো স্টিমারঘাট।ক্ষনে ক্ষনেই লঞ্চ স্টিমারের হুইসেলের শব্দ শুনা যাচ্ছে।নদীর শীতল হওয়ায় শরীরে গাঢ়তর শিহরণ জাগাচ্ছে।গাঙিনীর তীর ঘেঁষে পেতে রাখা কাঠের সারি সারি বেঞ্চগুলোয় বসে থাকা মানুষগুলো নদীর এই অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করছে খুব আগ্রহের সহিত।নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতাও চলছে বিরামহীনভাবে।তবে কলরর হচ্ছে না।মৃদুস্বরে কথা বলছে তাঁরা।হাওয়ায় মুড়িয়ে আসা গুনগুন শব্দ শোনা যাচ্ছে শুধু।মেহেনূর আর তনিমাও তাঁদেরই দলে।তবে ওদের মধ্যে এখনো কোনো কথপোকথন শুরু হয় নি।এতক্ষণ মেহেনূরের দৃষ্টি স্থির ছিল গাঙিনীর জলে। তনিমাও চুপচাপ বসে আছে।গাঙিনীপাড় জায়গাটাই এমন।নিঃসঙ্গতায়ও এখানে বসে কাটিয়ে দেওয়া যাবে অনেকটা সময়।কোনো সঙ্গের প্রয়োজনই হবে না।এইবার মেহেনূর তনিমার দিকে তাকিয়েছে।তনিমা উদাস হয়ে বসে আছে।হয়তো ও কোনো কিছু নিয়ে ভীষণভাবে চিন্তিত।মেহেনূর ক্ষুদ্র একটা নিঃশ্বাস ফেলে ধীর কন্ঠে বললো,
– কি হয়েছে তোমার?
– আমি প্রেমে পড়ে গিয়েছি।
মেহেনূর ভ্রুকুটি করে তাকায় তনিমার দিকে।তনিমার দৃষ্টি স্থির সামনে থাকা গাঙিনীর উন্মুক্ত বুকে।মেয়ের হাবভাব দেখে বুঝা যাচ্ছে এই চিন্তায় সে বিরহিত, নিঃস্ব।মেহেনূর মুখ টিপে হেসে তনিমাকে কয়েক সেকেন্ড পর্যবেক্ষণ করে শীতল কণ্ঠে বললো,
– মানুষ প্রেমে পড়ে।কারণে অকারণে যখন তখন প্রেমে পড়ে।হয়তো প্রকৃতির নয়তো প্রাণীর।তুমি কোনটির প্রেমে পড়েছো?
মেহেনূরের কথাটায় যেমন গভীরতা আছে ঠিক শেষের কথাটায় হালকা রসিকতাও রয়েছে।মেহেনূরের প্রশ্নে তনিমার মস্তিষ্ক সচল হয়।চট করে বেঞ্চের উপর পা তুলে আসন পেতে বসলো।আহ্লাদে আটখানা হয়ে বললো,
– প্রাণীর!আই মিন মানুষের।
এক মুহূর্তেই তনিমার আচারণের এত দ্রুত পরিবর্তন দেখে মেহেনূর হা হয়ে আছে।পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে প্রশ্ন করলো,
– তা কার প্রেমে পড়লে শুনি?
– কাজীর!
তনিমার মুখটা এমন করে কথাটা বললো যে,চোর চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে।মেহেনূর তনিমার কথা শুনে একটু অবাক হয়।বললো,
– ভালোবাসা বলেকয়ে আসে না।যেকোনো সময় যে কাউকে ভালো লেগে যেতেই পারে।কিন্তু ভালো লাগা আর ভালোবাসার মধ্যে একটু ফারাক আছে।কাজী অফিসে আমরা কতক্ষণ ছিলাম?এই ঘন্টা দেড়েক হবে।ওইটুকু সময়ের মধ্যে ভালোবাসা হয়ে যায় না।যেটা হয় সেটা মোহ,ভালো লাগা।
– প্রথম দেখাতেই আমি তাঁর প্রেমে পড়ে গিয়েছি।কাল সারাটা রাত আমি ঘুমাতে পারি নি।কাজীর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই আমার বুকের ভেতরটায় কেমন যেনো ধুকপুক ধুকপুক করে।সারারাত ভেবেছি আমি,এটা হয়তো আমার ক্ষনিকের ভালো লাগা।কিন্তু না,তাঁর কথা ভাবতেই নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।মনে হয় সে যেন আমার খুব কাছেই আছে।এটা মোহ বা ভালো লাগা নয় মেহেনূর।এটাই ভালোবাসা।আমি ওইটুকু সময়ের মধ্যেই ওই কাজীকে ভালোবেসে ফেলেছি।
তনিমা থমথমে মুখ করে একদমে কথাগুলো বলে শেষ করে।মেহেনূর হতভম্ব হয়ে গেছে তনিমার কথা শুনে।কেসটা জটিল মনে হচ্ছে মেহেনূরের কাছে।তনিমা ফের বললো,
– আমার প্রথম প্রেম যদি একজন কাজী হয় তাহলে আমার কি করার থাকতে পারে বলো তো?
মেহেনূর স্মিত হেসে বললো,
– কোনো ব্যাপার না।উনি কাজী বলে তাকে কেউ পছন্দ করবে না এটা কোনো কথা।এটা তো উনার পেশা।
– উনি পেশায় কাজী না।
– তুমি কি করে জানলে?
মেহেনূর প্রশ্নটা করে সন্দিহান চোখে তাকায় তনিমার দিকে।তনিমা মেকি হেসে বললো,
– ফেইসবুক,ফেইসবুক থেকে জেনেছি।উনার নাম রবিউল ইসলাম শান্ত।পেশায় একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।কালকে কাজী অফিসে কেন উনি ছিলেন সেটা তো উনার মুখ থেকেই শুনতে হবে।
মেহেনূর পূর্বের ভঙ্গিমায় বললো,
– উনার নাম তুমি কি করে জানলে?
– আসলে কালকে আমি উনাকে ইচ্ছা করেই বিরক্ত করছিলাম।ইচ্ছা করেই আবোলতাবোল প্রশ্ন করছিলাম।তখন উনার নামটাও জিজ্ঞাস করেছিলাম।মেহেনূর তুমি কিছু একটা করো না প্লীজ।আমি কিন্তু কলির মতো না যে,বুক ফাটবে তবু মুখ খুলবে না।আমি মনের কথা চেপে রাখতে পারি না।মনে যা থাকে মুখেও তাই বলি।আমার অশান্ত মনকে শান্ত করতে ওই শান্তকেই চাই হু।
মেহেনূর অবাক হয়ে শুধু তাকিয়েই আছে।এই মেয়ে তো শুধু প্রেমেই পড়ে নি।এমন পড়াই পড়েছে যে আর উঠতেই পারছে না।মেহেনূর ধীর কন্ঠে বলল,
– এইভাবে বললেই তো আর হয় না।উনারও তো পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে বা কোনো রিলেশন…..
– উনি সিঙ্গেল।ফেইসবুকে দেখেছি।
মেহেনূরের কথার মাঝেই তনিমা ফোকলা হেসে বললো কথাটা।মেহেনূর তনিমার এহেন কান্ডে ফিক করে হেসে দেয়।তনিমা একটু লজ্জা পায়।মেহেনূর মুখে হাসি রেখেই বললো,
– আচ্ছা দেখি কি করা যায়।এখন বাসায় চলো।
___________________
মেহেনূরের বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে।ঠিক সাতটায় বাসায় ঢুকে ও।গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে বাসায় ঢুকতেই চমকে উঠলো মেহেনূর।কয়েক জোড়া চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।থতমত খেয়ে যায় মেহেনূর।সবাইকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু বিব্রতবোধও করলো।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সবার উদ্দেশ্যে সালাম দিলো মেহেনূর।সালামের জবাবে অপরিচিত পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে মেহেনূর মুখ তোলে তাকায়।আগন্তুকের বয়স ষাটোর্ধ হবে।স্বাস্থ্য স্বাভাবিক,গায়ের উজ্জ্বল শ্যামলা।উচ্চতা পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি হবে। দু’গাল ভর্তি ধবধবে সাদা চাপ দাঁড়িতে।পরনে সাদা ফতোয়া আর লুঙ্গি।হাতে মোটা চেইনের সোনালী ঘড়ি।জাবর খাটছেন,মুখে হয়তো পান আছে।মেহেনূর উনাকে চিনতে না পেরে কপাল কুঁচকে মায়ের দিকে তাকায়।রেনুফা বেগম এক গাল হেসে বললেন,
– উনি রাশেদ সাহেব,অর্কের মামা।
মায়ের কথা শুনে মেহেনূর আবার রাশেদ সাহেবের দিকে তাকায়।ভাবে,নির্ঘাত মায়ের কাছ থেকেই এই পান খাওয়ার গুণ আয়ত্ত্ব করেছেন।পর পরেই মেহেনূর স্মিত হেসে বললো,
– কেমন আছেন মামা?
– আমি ভালো আছি মা।তুমি কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ্ আমিও ভালো আছি মামা।আপনারা কথা বলুন আমি আসছি।
– ঠিক আছে।
মেহেনূর ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে।সাড়ে সাতটায় ওর ক্লাস আছে।ওয়াই-ফাই কানেক্ট করতেই টুংটাং শব্দে নোটিফিকেশন আসতে শুরু করে।ওই গুলো চেক করতে করতেই ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।ক্লাস প্রায় শেষের দিকে এমন সময় মেহেনূর ঘরে আসেন মেহরাব সাহেব।মেয়েকে ক্লাস করতে দেখে উনি একটু বসলেন।মেহেনূর ক্লাস শেষ করে ল্যাপটপ সাইডে রেখে বললো,
– কিছু বলবে বাবা?
মেহরাব সাহেব উঠে এসে মেয়ের কাছে বসেন।ধীর কন্ঠে বললেন,
– তখন নিচে তোর বিয়ের কথা হচ্ছিলো।কিন্তু আমি তোর মতামত না নিয়ে কোনো কিছু করবো না।তবে আমি এবার তোর বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই।তুই কি বিয়ের জন্য রাজি?
মেহেনূর বাবার দিকে নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।বিয়ে?বিয়ে করা তো দূর বিয়ের কথা কখনো চিন্তাও করে নি।পড়াশোনা শেষ করে নিজের একটা আলাদা সত্তা তৈরী করতে চাওয়া প্রত্যেকটা মানুষেরই স্বপ্ন থাকে।ওরো ছিল,এখনো আছে।নিজের একটা প্লাটফর্ম তৈরী করেছেও।তবে সেটা শখের বশে।ছেলে মেয়ে বড় হলে তাদেরকে বিয়ে দিতে হবে।এটা বাবা মায়ের বহুমুখী দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি।পড়াশোনা তো বিয়ের পরেও করা যাবে।ওর বাবা ওর উপরে কোনোদিনও জোর খাটায় নি,আজও খাটাবে না।মেহেনূর যদি একবার বলে ও বিয়ে করবে না, তাহলে ওর কথাই শেষ কথা।সেটাও জানে মেহেনূর।তবে ও এটা করতে চায় না।একদিন না একদিন বিয়ে তো করতেই হবে।হয়তো দুইদিন আগে নয়তো পরে।
মেহেনূরকে চুপ থাকতে দেখে মেহেনূর সাহেব ফের বললেন,
– তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?পছন্দ থাকলে বলতে পারিস।
অভিভাবক হিসেবে এই প্রশ্নগুলো করাটা খুবই স্বাভাবিক।মেহেনূর স্মিত হেসে বললো,
– আমার কোনো পছন্দ নেই বাবা।তোমরা যা বলবে তাই হবে।
চলবে……
বি.দ্র. ঃগাঙিনী(নদীর নাম)আমার কল্পনার নদী।বাস্তবে এই নামে কোনো নদী আছে কিনা আমার জানা নেই।কারো জানা থাকতে বলিয়েন।#অগোচরে_তুমি
লেখনীতেঃ স্বর্ণালী তালুকদার
২৫.
প্রথম প্রথম প্রেমে পড়লে একটু আধটু পাগলামি না করলে চলে?অবশ্য সেটা নিজের ইচ্ছায় করতে হয় না।প্রেমের ভূত মাথায় চাপলে এমনিতেই তাদেরকে দেখে পাগলই মনে হয়।যেমনটা এখন তনিমাকে দেখে মনে হচ্ছে।সন্ধ্যার পর থেকে অন্তত পনেরো বার আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।মুখে আঙুল দিয়ে নখ খুঁটছে আর সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।কখনো পড়নের জামাটা পিছনে টেনে টাইট করে ধরে দেখে নিচ্ছে পেটে মেদ বেড়ে গেলো কিনা।আবার কখনো কখনো পেট ফুলিয়ে দেখছে মোটা হলে ওকে কেমন লাগে।যদিও তনিমা খুব একটা স্বাস্থ্যবান না,রোগা-সোগাই।
তনিমার এইসব কান্ড দেখে বিছানায় বসে মিটিমিটি হাসছে ওর ছোট বোন তিন্নি।টিনএজের তিন্নি বোনের রোগটা কিছুটা হলেও ঠাওর করতে পারছে।তনিমা তিন্নিকে হাসতে দেখে আয়নার দিকেই তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বললো,
– তুই হাসছিস কেন?
তিন্নি আবার তনিমাকে খুব ভয় পায়।বাসার ছোট সদস্য গুলোই নাকি সবচেয়ে বেশি দুষ্টু হয়?কে বলেছে?অনেক সময় বড়গুলোও হয়।তনিমার প্রশ্নে তিন্নি হাসি থামিয়ে ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নিলো।কখনও কথার হেরফের হলেই ঠাশঠাশ শব্দ পাশের বাসা অবধি শোনা যায়।এখন তিন্নি যেটা আন্দাজ করছে সেটা যদি সত্যি না হয় তাহলে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে বেশিক্ষণ লাগবে না।তিন্নি মেকি হেসে বললো,
– তোকে খুব সুন্দর লাগছে আপু।
তনিমার প্রশংসা শুনতে ভালোই লাগে।কেউ যদি ওর প্রশংসা করে তাহলে তাকে মাথায় করে রাখবে।কিন্তু তনিমার কাছে তিন্নির কথাটা যুক্তিসঙ্গত মনে হলো না।ওকে সুন্দর লাগছে,তারিফ করবে।হাসবে কেন?তনিমা এগিয়ে যায় তিন্নির দিকে।সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললো,
– কাউকে সুন্দর লাগলে তার প্রশংসা করতে হয় জানতাম।কিন্তু কেউ যে হাসে এটা তো জানতাম না।সত্যি কথা বল তিন্নি নইলে মার একটাও মাটিতে পড়বে না কিন্তু।
তনিমা কথাটা বলে হাত উঁচিয়ে তিন্নিকে মারার জন্য উদ্যত হতেই তিন্নি আঁতকে উঠে বললো,
– বলছি বলছি।
– বল।
– আসলে আমার কাছে তোকে আজকে একটু অন্যরকম লাগছে আপু।আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে তুই প্রেমে পড়েছিস।তাই তোর কান্ড দেখে আমার হাসি পাচ্ছিলো।
তনিমা আবার মারের ভঙ্গিমায় হাত তুলতেই তিন্নি চোখ বন্ধ করে মুখের সামনে দুই হাত তুলে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
– আমি সত্যি বলছি,বিশ্বাস কর।
নিজের উপর কোনো হামলা হয় নি বুঝে পিটপিট করে চোখ খুলে তিন্নি।তনিমা বোনের গাল টিপে আদুরে গলায় বললো,
– তুই আমাকে এতো ভয় পাস?
– হু।
ক্ষীণ স্বরে জবাব দিলো তিন্নি।তনিমা বোনকে জড়িয়ে ধরে পূর্বের ভঙ্গিমায় বললো,
– তুই ঠিকই ভেবেছিস তনু।আমি সত্যিই প্রেমে পড়েছি রে।
– সত্যি?
– হুম।
কথাটা বলতে বলতে শান্তর কথা ভাবতেই তনিমা লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো।তিন্নিকে আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে দৌড়ে ব্যালকনিতে চলে যায়।
_____________________________
মেহেনূরের আজ খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায়।আলসেমি না করে বিছানা ছেড়ে উঠে চট করে ফজরের নামাজটা পড়ে নিলো।অনেকদিন হলো কুরআন তিলাওয়াতও করা হয় না।তাই আজ একটু কুরআন তিলাওয়াতও করেছে।জায়নামাজটা ভাঁজ করে আলমারিতে রেখে এক পলক তাকায় দেয়াল ঘড়িটার দিকে।সাড়ে ছয়টা বাজে।ঘর থেকে বেড়িয়ে মায়ের ঘরে উঁকি দিলো মেহেনূর।রেনুফা বেগম ঘুমাচ্ছেন।হয়তো ফজরের নামাজ পড়ে আবার একটু শুয়েছেন।মেহরাব সাহেব বাসায় নেই।ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছেন।মাকে ঘুমাতে দেখে মেহেনূর আর ডেকে উনাকে আর সজাগ করলো না।ঘুমাক,এই কয়েকদিন ধরে ছেলের বিয়ের ঝামেলায় উনার অবস্থা একেবারে কাহিল।সকালের নাস্তাটা না হয় ওই তৈরী করুক।মেহেনূর স্মিত হেসে পা বাড়ায় রান্নাঘরের দিকে।
রেনুফা বেগমের যখন ঘুম ভাঙে তখন সকাল দশটা।ঘুম থেকে উঠে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকেন রান্নাঘরে।কতটা দেরি হয়ে গেছে।এখনো সবার নাস্তা রেডি করা বাকি।রেনুফা বেগম নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হচ্ছেন।বাসায় মেহমানদের অনাহারে রেখে তিনি কিনা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলেন।মেহেনূর ড্রয়িং রুমে বসে জীমকে পড়াচ্ছিল।মাকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে মেহেনূরও দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে গিয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো,
– কি করছো মা?
– এতো বেলা হয়ে গেছে আমাকে ডাকলি না কেন?সবাই না খেয়ে আ……
– আমাদের পেট পুরে খাওয়া হয়েছে আপা।শুধু তুমিই বাকি আছো।
রেনুফা বেগমের কথার মাঝেই জেনুফা বেগম কথাটা বলে উঠলেন।রেনুফা বেগম বোনের কথায় ভ্রুকুটি করে তাকান।জেনুফা বেগম হেসে বললো,
– তোমার মেয়ে তো পাক্কা গৃহিণী হয়েছে গো।যা ভালো রান্না করেছে না,তুমি না খেলে বিশ্বাসই করতে পারবে না।
– মেহেনূর রান্না করেছে?
অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন রেনুফা বেগম।বোনের কথায় সায় দিয়ে জেনুফা বেগম বলেন,
– হ্যাঁ।পরোটার সাথে চিকেন ঝুড়ি।খেতে খুবই সুস্বাদু হয়েছে।মেহেনূর যে এতো ভালো রান্না করতে পারে জানতাম না তো।ওর রান্নাটা সত্যিই খুব ভালো হয়েছে।
– তুমি খেতে আসো তো মা।খালা মনি বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছে।
মেহেনূর কথাটা বলেই রেনুফা বেগমকে ধরে নিয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিলো।নিজের হাতে মায়ের প্লেট সাজিয়ে দিলো মেহেনূর।রেনুফা বেগম মেয়েকে দেখে শুধু অবাকই হচ্ছেন।কানাডায় থাকলে মেহেনূরের যখনই মায়ের হাতের রান্না খেতে মন চাইতো তখনই মাকে ভিডিও কল করতো।মোবাইল সামনে রেখে রান্না করতো।রেনুফা বেগম বলে বলে দিতেন আর মেহেনূর রান্না করতো।অনেকেই বলে,আর যাই হোক ভিডিও কলে রান্না শেখা যায় না।কিন্তু তাঁরা হয়তো এটা জানে না যে,রান্নাটাও একটা শিল্প।প্রবল ইচ্ছা, অদম্য আগ্রহ,চেষ্টা আর পরিশ্রম করার সামর্থ্য থাকলে যে কোনো কাজ অনায়াসেই করে ফেলা যায়।মেহেনূরই আর দৃষ্টান্ত প্রমাণ।রেনুফা বেগম চুপচাপ খাচ্ছেন।রান্না আসলেই খুব ভালো হয়েছে।
____________________
কলি আর দিহাদের অনুপস্থিতিতে এনজিওটা সামলানো কঠিন হয়ে যাবে অর্কের জন্য।সেটা আজকে বাচ্চাদের ক্লাস নিতে গিয়ে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে অর্ক।দিহাদ কলিকে নিয়ে ওর আব্বু আম্মু কাছে চলে গেলে অর্কের এনজিওর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটা বড্ড কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে যাবে।অয়ন আর তনিমাকে দিয়ে ভরসা নেই।এরা দুটোই বেখেয়ালি,সারাক্ষণ একজন আরেকজনকে খোঁচাচ্ছে।কাজের প্রতি একদম কোনো মনোযোগ নেই।আজ এনজিওতে অয়ন আসলেও তনিমা আসে নি।রাওনাফের বিয়ের জন্য এমনিতেই তিন দিন কোনো কাজ করতে পারে নি,এখন আবার একসাথে তিনজন গায়েব।যদিও দিহাদ কলি হানিমুনে গেছে।তাও ওদের বিয়েটা তো আর শিডিউলে ছিল না!আর না ছিল হানিমুনে যাওয়ার শিডিউল!সব হয়েছে ওই পাকনা মেয়েটার জন্য!কাউকে কিছু না জানিয়ে হুট করে বিয়ে পড়িয়ে দিলো আর ওরাও নাচতে নাচতে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়লো?অর্ক তপ্ত একটা নিঃশ্বাস ফেলে হাতে থাকা কলমটা কলমদানিতে রেখে উঠে দাঁড়ায়।মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।সকাল থেকে পেটে কিছু পড়ে নি।এই মুহূর্তে কিছু খাবার খাওয়া দরকার।নয়তো শেষে মাথা ঘুরে পড়বে।অর্ক ঘর থেকে বেরুনোর জন্য পা বাড়াতে নিয়েই হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলো অয়ন।ওর হাতে টিফিনবক্স।হাসি ফুটে উঠলো অর্কের মুখে।নিশ্চিত ওর মায়েরই কাজ এটা।অর্ক অয়নের হাত থেকে চটজলদি টিফিন বক্সটা নিয়ে বললো,
– তাড়াতাড়ি দে ভাই বড্ড খিদে পেয়েছে।
অয়ন স্মিত হেসে বললো,
– আন্টি ফোন করেছিলেন।আজকেও ফোনটা বাসায় ফেলে এসেছিস।আন্টি বললেন,সকালে নাকি কিছুই খেয়ে আছিস নি।এখন ড্রাইভারকে দিয়ে খাবার পাঠিয়েছেন।আচ্ছা তুই খাবারটা শেষ কর,আমি একটু আসছি।
– ওকে।
অয়ন চলে যেতেই অর্ক তাড়াতাড়ি খাবারটা শেষ করে নিলো।ওদেরকে আবার একটু আর্কিটেক্ট এর সাথে কথা বলার জন্য যেতে হবে।অনাথ আশ্রমের হাফ বিল্ডিংটা ভেঙে ফাউন্ডেশন দিয়ে তিন তলা করার কথা চিন্তা করছে অর্ক।প্রতিবছরের ঝড় তুফান শিলাবৃষ্টির জন্য চালের টিনের অবস্থা এখন করুণ।টিন ছিদ্র হয়ে গেছে।ভারী বৃষ্টি হলেই টিনের চালের ছিদ্র দিয়ে বিছানায়,ফ্লোরে,বাচ্চাদের পড়ার টেবিলে পানি পড়ে।বাচ্চারা এইরূপ অবস্থায় ঠিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না।পড়ায় মন বসে না।আর ওদের থাকতেও খুব অসুবিধা হয়।এখানে অনাথ আশ্রমের পাশাপাশি বৃদ্ধাশ্রম করার পরিকল্পনা করছে অর্ক।তাই হাফ বিল্ডিংটা ভেঙে তিন তলা করবে।নিচ তলায় থাকবে বৃদ্ধাশ্রম আর উপরে দুই তিন তলায় থাকবে অনাথ আশ্রম।
– তুই নাকি বিয়ে করছিস?এই কথাটা আমাকে একবারও বললি না?
অয়নের অভিমানী স্বরে বলা কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই ঠায় ব্রেক কষে অর্ক।অবাক হয়ে তাকায় অয়নের দিকে।অয়নের অবুঝ চাহনি।হঠাৎ অর্ক গাড়ি থামালো কেন?অর্ক আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলো,
– কি বললি তুই?
– এমনভাবে জিজ্ঞাস করছিস মনে হচ্ছে তুই জানিসই না।
– তুই কোথায় শুনলি এই কথা?
অর্ক উৎকন্ঠিত স্বরে বললো।অয়ন ক্ষুদ্র একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
– আমরা যখন আর্কিটেক্ট এর সাথে কথা বলছিলাম তখন আঙ্কেল ফোন করেছিলেন।বললেন,তোর বিয়ের কথা হচ্ছে বাসায়।তোকে যাতে বিকালের আগে বাসায় নিয়ে যাই।
অর্ক বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে।বাসায় ওর বিয়ের কথা চলছে আর ওই জানে না?স্ট্রেইঞ্জ!অর্ক পরমুহূর্তেই নিজেকে স্বাভাবিক করে মৃদু স্বরে উচ্চারণ করলো,”ওহ্”।অয়নকে আর কোনো কিছু বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
_________________
সারা ড্রয়িংরুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা।মেহরাব সাহেবের বাঁ পাশে বসে আছে অর্ক।অর্কের ঠিক পাশেই অয়ন।অর্ক বাসায় আসার পর থেকে এইখানেই বসে আছে।আয়েশা বেগম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন,এখান থেকে এক পা-ও নড়া যাবে না।অর্ক বাসায় আসার পর থেকেই দেখছে মেহরাব সাহেব চশমাটা নাকের ঠিক আগায় দিয়ে মনোযোগ দিয়ে খবরের কাগজ দেখছেন।টু শব্দটাও করছেন না।অয়নও ফোন নিয়ে ব্যস্ত।এইভাবে দুইজনের মাঝখানে বসে থাকতে অর্কের খুব বিরক্ত লাগছে।আজকে এমনিতেই ও অনেক ক্লান্ত আবার এখানে কতক্ষণ ধরে বসে আছে।ওর মোটেও ভালো লাগছে না।তারউপর ওর বিয়ের কথা চলছে সেই টেনশনে মাথার নিউরন গুলোও কাজ করছে না।অর্ক বসে বসে প্রহর গুনছে আর এদিক সেদিক চোখ বুলাচ্ছে।কিন্তু এখনো আকাশ সাহেবের আসার কোনো নাম-গন্ধও নেই।
অর্কের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মিনিট দুয়েক পরেই আগমন ঘটে আকাশ সাহেবের।সাথে আসেন আমেনা বেগম ও রাশেদ সাহেব।তাঁদের আলোচনার মূল টপিক ছিল অর্কের বিয়ে উপলক্ষে যাবতীয় আয়োজন কিভাবে কি করবে।বড়দের আলাপচারিতা চলাকালীন সময়ে চুপ বসে ছিল অর্ক,সাথে অয়নও।অয়ন এমনিতে একটু ফাজিল হলেও বড়দের খুব সম্মান আর শ্রদ্ধা করে।সেই সুবাদে অয়ন শুধু প্রত্যেকটা কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছে।উল্টো কোনো প্রশ্ন করে নি।তা সে বুঝোক আর নাই বুঝোক।তবে অর্কের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।সব কথা যেহেতু উনারাই বলবেন তাহলে ওকে কেন এখানে বসিয়ে রাখা হয়েছে? অর্ক বসে ছটফট করছে।ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?এ কথাটা ও বিশ্বাসই করতে পারছে না।ওর পক্ষে আর বসে থাকা সম্ভব না। অর্ক হুট করেই বসা থেকে দাঁড়ায়।আমেনা বেগমের হাত ধরে ধীর কন্ঠে বলল,
– বিবিজান আমার সাথে একটু আসো তো।
অর্ক আমেনা বেগমের হাত ধরে নিয়ে সোজা ওর ব্যালকনিতে চলে আসে।অর্কের এহেন কান্ডে অবাক হয়ে ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছেন আমেনা বেগম।অর্ক ক্ষুদ্র তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে চাপা স্বরে বললো,
– এইসব কি হচ্ছে বিবিজান?
– তুই যা চাস!
– মানে?আমি কি চাই?
– মানে তুই মেহেনূরকে বিয়ে করতে চাস।মেহেনূরও এই বিয়েতে রাজি।আমরাও চাই তোঁদের দুজনের বিয়েটা হোক। এখন আমরা সেই ব্যবস্থাই করছি।ওইখানেই দেখলি না মেহরাবও এসেছে।কেন এসেছে ও?তুই বুঝিস নি কিছু?আর এতক্ষণ যে তোর বিয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছিলো তুই কি সেটাও বুঝিস নি?অদ্ভুত! এমন ভাবে আমাকে টেনে আনলি না জানি কি না কি হয়ে গেছে।পথ ছাড় আমার,যেতে যে আমাকে।
আমেনা বেগম একদমে কথাগুলো বলে চলে আসার জন্য উদ্যত হতেই অর্ক অবাক স্বরে প্রশ্ন করলো,
– আমি মেহেনূরকে বিয়ে করতে চাই মানে?তোমাদেরকে আমি কখন বললাম আমি ওকে বিয়ে করতে চাই?
আমেনা বেগম ঠোঁট টিপে হেসে বললো,
– যদিও সরাসরি বলিস নি।কিন্তু তাঁর বর্ণনা দিয়ে বুঝিয়েছিস!
– কখন?
– ওইদিন রাতে।তুই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মনে কর ভাই।আমার অনেক কাজ আছে।
– বিবি….
অর্কের কথা না শুনেই আমেনা বেগম চলে যান।অর্ক হতভম্ব হয়ে ভাবতে লাগলো, ও কখন মেহেনূরের বর্ণনা দিয়ে বুঝিয়েছে ও মেহেনূরকে বিয়ে করতে চায়?আমেনা বেগমের বলা “ওইদিন রাতে” কথাটা মনে পড়তেই অর্কের মনে পড়ে যায় সেদিন রাতে ও কি বলেছিল।কথাটা ভাবতেই অর্কের বুক চিড়ে একটা হতাশার নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে।ছোট একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছে।এক্ষুনি সবার ভুলটা ভাঙানো উচিত।নয়তো পরে দুই পরিবারের মধ্যে অনেক বড়সড় একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়ে যাবে।
চলবে……..