#অতঃপর_সন্ধি (২৬)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)
স্তম্ভিত হয়ে গেলো তানজিফ। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। মন বলছে সে ভুল শুনেছে। সম্পূর্ণটা মনের ভ্রম। নির্বোধের মতো চেয়ে রইলো।
উত্তর না পেয়ে পিছন ফিরে চাইলো পুষ্পিতা। গুটি গুটি পায়ে তানজিফের সম্মুখে এসে দাঁড়ায়। তানজিফের কোমরের কাছে শার্ট খামচে আরো একটু কাছে নিয়ে আসলো। দূরত্ব মিটলো দুজনের মধ্যকার। তানজিফের মুখপানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।
‘শুধু কাগজে কলমে না প্রকৃত অর্থে এই একজনাতে আসক্ত মানুষটাকে চাইছি।’
শিরদাঁড়া বেয়ে তরল স্রোত প্রবাহিত হলো তানজিফের। গা, হাত, পা ছেড়ে দিলো তার। অসাড় হয়ে এলো সমস্ত কায়া। শিরা উপশিরা যেন বন্ধ করে দিলো র’ক্তের প্রবাহ। স্বপ্ন মনে হচ্ছে সবকিছু। পুষ্পিতাকে আজ এতো কাছে দেখে অস্বস্তি হচ্ছে। হাসফাস লাগছে ভীষণ। ফাঁকা ঢুক গিলল।
‘দূরে যা প্লিজ।’ অনুরোধের স্বরে বলল তানজিফ।
পুষ্পিতা একরোখা, আপসবিমুখ কন্ঠে জবাব দিলো,
‘যাবো না।’
‘আমার গায়ে ধূলো বালি, ঘামের গন্ধ।’
খামচে ধরে রাখা শার্টের কোণা ছেড়ে দিলো পুষ্পিতা। তানজিফের বুকে মাথা রেখে কোমর জড়িয়ে ধরলো দৃঢ়নিষ্ঠ হাতে।
‘আমি সহ্য করতে পারলে তোর সমস্যা? তুই শুধু উত্তর দে, উইল বি মাইন ফরএভার?’
নির্বাক, নিরুত্তর তানজিফ। কন্ঠনালী গলিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। গলাতেই দলা পাকিয়ে আটকে আছে। নিরবতার চাদরে জড়িয়ে নিয়েছে সে নিজেকে। মিনিট দুয়েক বোলশূন্য থেকে বহুকষ্টে কন্ঠনালী দিয়ে উচ্চারণ করলো,
‘এটা কি আদৌও ভালোবাসা নাকি অভ্যাস?’
তানজিফের বক্ষে লেপটে ছিলো পুষ্পিতা। প্রশ্ন শুনে শির উঁচিয়ে চাইলো। তানজিফের চোখের দিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসলো সে।
‘অভ্যাস না ভালোবাসা জানি না। শুধু জানি, আমার শুধু এই মানুষটাকে চাই। এই মানুষটার উপর আমি ব্যতীত আর কারো অধিকার থাকবে না। তার আর আমার মনের মধ্যে যে দূরত্ব সেই দূরত্ব মিটিয়ে দিতে চাই। সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে এই মানুষ বলিষ্ঠ হাতের আলিঙ্গনে মিশে যেতে চাই তার বুকের সাথে। দিন শুরু করতে চাই আমার কপালে তাট দেওয়া দীর্ঘ চুম্বন দিয়ে। কিছু কিছু অভ্যাস থাকে যা র’ক্তে’র সাথে মিশে যায়। চাইলেও ছাড়ানো যায়। যদি নিজেকে তুই আমার অভ্যাস বলিস, তবে তুই আমার র’ক্তে’র সাথে মিশে যাওয়া সেই অভ্যাস। তুই মিশে গিয়েছিস আমাতে। নিবিড়, অভেদ্যভাবে। এই অভ্যাস যে আ’মৃ’ত্যু ছাড়াতে পারবো না। বাকি রইলো ভালোবাসা? ভালোবাসা আছে বলেই আমি তোর এতোটা কাছে। যে মানুষটা শত অবহেলা, অপমানের পরেও পিছু ছাড়েনি তাকে ফিরিয়ে দেওয়া কিংবা তার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার সাধ্য আমার নেই।’
‘ভেবে বলছিস তো? এরপর কিন্তু চাইলেও নিজেকে আমার থেকে দূরে নিতে পারবি না।’
‘ভালোবাসা ভেবে হয়? আর দূরত্ব কি বলেকয়ে তৈরি হয়? ভালোবাসা তৈরি হয় মানুষের পাগলামি দেখে। অনুভূতির জোয়ারে ভেসে। আর দূরত্ব বাড়ে অবহেলায়।’
‘তুই তো মায়ানকে ভালোবাসিস?’
মিষ্টি, আবেগি মুহুর্তে মায়ানের নাম শুনে তেতে উঠলো পুষ্পিতা। ধপাধপ করে মাথায় র’ক্ত চড়ে গেলো তার। দাঁত কিড়মিড় করে ছিটকে সরে তানজিফের কাছ থেকে। আঙুল উঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল,
‘হ্যা, মায়ানকে ভালোবাসি। কোনো সমস্যা? আমি তোকেও ভালোবাসি। তোর সাথে সারাটা জীবন পার করতে চাই। হাতে হাত রেখে। যে মানুষটা আমাকে পাওয়ার জন্য শেষ অবদি যেতে পারে তাকে রেখে কই যাবো? মায়ানের কাছে? যদি কখনো প্রয়োজন পড়ে সারা জীবন একা কাটিয়ে দিবো। আমার কাছে যদি লাস্ট অপশন মায়ান হয় তারপরও আমি ফিরবো না। মায়ান নাম শুনলে আমার কানে বাজে “ব্রাইট ফিউচার” শব্দটা। আমি নাকি ব্রাইট ফিউচার দেখে ছাড়তে চাইছি না। আমার জন্য কথাটা কত অপমানজনক শুধু আমি জানি। অথচ আমি যখন তার হাত ধরেছিলাম তখন তার ব্রাইট ফিউচার ছিলো না। একজন সাদামাটা মানুষ ছিলো।’
অবস্থা বেগতিক দেখে কাছে পুষ্পিতাকে বলিষ্ঠ হাতের বাহুডোর আবদ্ধ করে নিলো তানজিফ।
‘বেঁচে থাকতে কখনো একা থাকার প্রয়োজন পড়বে না তোর।’
পুষ্পিতা ফুঁপিয়ে উঠে জবাব দিলো,
‘আল্লাহর কাছে না চাইতেই মুঠো ভর্তি সুখ পেয়েছি। সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছি। হাতে হাত রেখে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়ার জন্য চমৎকার একজন মানুষ পেয়েছি জীবনসঙ্গী রূপে। তাই কে আমাকে ছেড়ে গেলো, কে আমার অনুভূতির মূল্য দিলো না, কে মাঝপথে আমার স্বপ্ন ভেঙেছে এসব নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমি শুধু জানি আমার সুখ তুই। আমার শান্তি তুই। না চাইতে যেই সুখ আমি পেয়েছি হেলায় হারাতে চাই না।’
অশ্রুসিক্ত লোচনে মুখ তুলে তানজিফের দিকে চাইলো। আলতো করে হাত রাখলো তানজিফের দুগালে।
‘আমি উপরওয়ালার নিকট একটু সুখ চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে সুখের পুরো খনিটাই দিয়ে দিলেন।’
বলে আবারও তানজিফের বলিষ্ঠ বুকে মাথা ঠেকালো সে। আস্তে করে বলল,
‘ভালোবাসার চেয়ে বেশি প্রয়োজন ভালো থাকা। আর আমি তোর সাথে ভালো আছি।’
এভাবেই কেটে গেলো কয়েক মুহুর্ত। নিস্তব্ধ রজনীতে দু’জন দু’জনকে অনুভব করতে ব্যস্ত। গা ছুঁয়ে দিচ্ছে নির্মল পবন।
পুষ্পিতার মুখটা হাতের আঁজলিতে নিলো তানজিফ। ললাটে দীর্ঘ চুম্বন এঁকে দিলো।
‘বেশ তবে, তোর মাঝে সপে দিলাম নিজেকে।আমি আর আমার নই।সম্পূর্ণ টাই তোর।’
____________________
রাত্রি শেষভাগ! কিছুক্ষণ পরেই হয়তো ফজরের আজানের ধ্বনিতে মুখরিত হবে চারপাশ। একটা রাত পুরো নিদ্রাহীন কাটিয়ে দিলো এই দম্পতি।
পুষ্পিতা তানজিফের এক বাহুর উপর রেখে অন্য হাতের আঙুলের ভাঁজে আঙুল গলিয়ে দিচ্ছে। আবার হাত ছেড়ে দিচ্ছে। ঘাড় কাত করে পুষ্পিতাকে ব্যস্ত তানজিফ।
মাথা কিঞ্চিৎ উঁচু করে তানজিফের মুখপানে চাইলো পুষ্পিতা।
‘একটু পরেই তো আজান পড়বে। ঘুমোবি না?’
পুষ্পিতাকে আরো একটু নিয়ে আসলো তানজিফ। বদ্ধ করে নিলো দু’হাতের দৃঢ় বন্ধনে। এইবারে পুষ্পিতা মাথা ঠেকেছে তানজিফের বুকে।
‘আমার জীবনের বহুল প্রতীক্ষিত রাত। এসে ধরা দিয়েছে কোনো আগমনী বার্তা ছাড়াই। ঘুমিয়ে গেলেই তো শেষ। তার চেয়ে ভালো জেগে অনুভব করি। আমার ভালোবাসার মানুষটা আমার খুব কাছে। ঘনিষ্ঠ হয়ে মিশে আছে আমাতেই৷ ঘুমোনোর জন্য হাজারো রাত আসবে জীবনে। বাট এই রাতটা স্পেশাল।’
পুষ্পিতা মিইয়ে যাওয়া গলায় অপরাধীর সুর টানলো।
‘তোকে যে আমার থেকে দূরে দূরে রেখেছি এতোদিন। তুই কি রেগে আছিস আমার উপর?’
পুষ্পিতার এলোমেলো চুলের ভাঁজে ঠোঁট ছুঁয়ালো তানজিফ। দূর্ভেদ্য হেসে জবাব দিলো,
‘আজকের রাতের কাছে পুরোনো সকল রাগ, অভিমান পানসে হয়ে গিয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের নিঃশ্বাস আটকে যাওয়ার উপক্রম হলেও সারপ্রাইজটা বেস্ট ছিলো। যা ইমোশনাল ড্রামা করলি আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’
তানজিফের উন্মুক্ত বুকে আঁকিবুঁকি করছিলো পুষ্পিতা। কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠলো। তানজিফ পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
‘মাকে বেড়াতে যাওয়ার জন্য রাজি করালি কি করে?’
______________________
মুখ ফসকে বেফাঁস কথা বলে জিভে কামড় দিয়ে চুপচাপ রইলো।
সুমনা এহমাদ পুষ্পিতার কাঁধে হালকা চাপড় মে’রে বলল,
‘বেয়াদব মেয়ে শ্বাশুড়ির সাথে কিভাবে কথা বলতে জানিস না? লজ্জা করলো না তোর?’
বুকে সাহস সঞ্চয় করে সে জবাব দিলো।
‘তুমি তো শ্বাশুড়ি কম বান্ধবী বেশি। তোমার সাথে লজ্জা কিসের?’
পুষ্পিতার কান টেনে ধরলেন তিনি।
‘তোর মায়ের বান্ধবী আমি। তোর না।’
‘কোন শাস্ত্রে লেখা আছে মায়ের বান্ধবী হলে তার মেয়ের বান্ধবী হওয়া যাবে না?’
উঠে বসে পুষ্পিতা। সুমনা এহমাদের হাতটা নিজের মুঠোয় নিলো।
‘শুনো মামনি, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলেই জীবন নামক উপন্যাসের সমাপ্তি। ক্ষুদ্র জীবনের বয়সের প্রতিটা ধাপকে উপভোগ করতে হবে। বয়স হয়েছে, লোকে কি বলবে? এসব অজুহাতের বেড়াজালে নিজেকে জড়িয়ে নিলে তো চলবে না । দু’হাত মেলে অনুভব করতে হবে নিজেকে।’
নিমেষহীন পুষ্পিতার দিকে তাকিয়ে আছেন সুমনা এহমাদ। উনার চোখের দিকে তাকিয়ে পুষ্পিতা হাসলো।
‘তোমরা মা জাতির কাছে জীবন মানে হেঁসেল আর স্বামী সন্তানের দেখাশোনা করা, তাদের যত্ন করা। পারিবারিক কূটনীতিতে জর্জরিত হওয়া। তোমাদের চারজনের জন্য ট্যূরের একটা প্যাকেজ সিলেক্ট করেছি। তিনদিনের জন্য। নিজেদের মতো করে সময় কাটিয়ে আসো।’
‘টাকা কোথায় পেলি তুই?’
কানের পাশের চুলগুলো ফু দিয়ে উড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালালো পুষ্পিতা। একটু ভাব নিয়ে বলল,
‘আমার শ্বশুরের কম আছে না আমার স্বামীর। স্বামীর পকেট কেটেছি। শ্বশুর শ্বাশুড়িকে হানিমুনে পাঠাবো বলে।’
‘ঢং না করে বল যে রাগ, অভিমান ভাঙানোর একটা স্পেস চাইছিস। আমাদের দূরে সরানো তো অজুহাত মাত্র।’
‘মোটেও না। আমাদের দাম্পত্য জীবন তো মাত্র শুরু। হাজারো সুযোগ আসবে আমাদের। স্পেস তৈরি হবে। এটা তোমাদের জন্য।’
‘তানজিফের বাবা কি রাজি হবে?’
বিরক্তিতে “চ” উচ্চারণ করলো পুষ্পিতা।
‘কেমন স্ত্রী তুমি? স্বামীকে রাজি করাতে পারবে না। স্বামী থাকবে স্ত্রীর হাতে মুঠোয়। যা বলবে তা শুনবে। আমাকে দেখো। দেখে কিছু শেখো।’
সুমনা এহমাদ আবারও পুষ্পিতার কান টেনে বললেন,
‘তাই দেখছি করতে হবে।’
_______________________
খুঁক খু্ঁক করে কাশতে লাগলো তানজিফ।
‘কিরে তোর গলায় কি কথা আটকে গেলো নাকি?’
কাশি থামিয়ে তানজিফ জবাব দিলো,
‘মানুষকে কিভাবে হাত করতে হয় এটা তোর থেকে ভালো কেউ জানে না।’
‘এটার জলজ্যান্ত প্রমাণ তো তুই।’
শব্দ করে হেসে উঠলো তানজিফ।
সোনালী রোদে ঝলমল করছে চারপাশ। পর্দার ফাঁক গলিয়ে এক চিলতে সোনালী রোদের রশ্মি এসে পড়েছে বিছানায়।
উবু হয়ে ঘুমিয়ে আছে তানজিফ। গোসল শেষ করে মাত্রই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো পুষ্পিতা।চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে পেঁচানো। তানজিফের উন্মুক্ত পিঠ নজরে আসতেই প্রগাঢ় ত্রপায় আড়ষ্ট হলো সে। দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো তৎক্ষনাৎ। গুটি গুটি পায়ে আরশীর সামনে দাঁড়ায়। নিজের প্রতিবিম্বের দিকে চাইলো।
‘অবশেষে জেদটা ভালোবাসায় রূপান্তর হয়েই গেলো।’
______________________
ফেসবুকের নিউজফিড একজোড়া দম্পতির কালো গাউন আর ক্যাপ পড়া ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছেলেটা মেয়ের ললাটে চুমু এঁকে দিয়েছে। সেই আবেগময় মুহূর্তটাকে ক্যামেরাবন্দি করেছে কেউ একজন। হাজার রিয়েক্ট, কমেন্টস আর শেয়ারের ছড়াছড়ি। কমেন্ট বক্সের সবাই আবেগের জোয়ারে ভাসছে।
যে ছেলেটা মেয়ের কপালে চুমু এঁকে দিয়েছে তাকে চিনে মায়ান। মেয়েটাকেও চিনে। দু’জনের হাস্যোজ্জল মুখ বলে দিচ্ছে কতটা সুখী তারা। বক্ষঃস্থলে ছ্যাৎ করে উঠলো মায়ানের। চিনচিন ব্যথা শুরু হলো সেখানে। না পাওয়ার ব্যথা।ছেড়ে চলে আসার কষ্ট। মনের হাজারো কষ্ট চাপা পড়ে আছে। অব্যক্ত কথাগুলো হয়তো কখনো পুষ্পিতাকে বলা হবে না। বেদনার্ত মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে পড়া শুরু করলো উপরের আবেগময়ী বার্তা।
‘শিক্ষাজীবনের অর্জনের স্বীকৃতি প্রাপ্তির দিনে আমি শুধু সনদই অর্জন করিনি, এই মেয়েটাকেও অর্জন করেছি। আমি অর্জন করেছি আমার অর্ধাঙ্গিনী কে। আমার প্রাপ্তির খাতা পূর্ণ করেছে সে। আমার বহুল প্রতীক্ষার ফল এই মেয়েটা। শত অবহেলার পরও আমি তার পিছু ছাড়িনি। আর সে ধরেছিল এক বেকার ছেলের হাত। প্রণয়ের সূচনা হয়েছিল বিয়ের বহুদিন পরে। পবিত্র প্রণয়।যেখানে নেই কোনো পাপ। যদি কাউকে ভালোবাসেন পিছু ছাড়বেন না। আপনার চাওয়া যদি পবিত্র হয় আর মানুষটা যদি আপনার জন্য কল্যানকর হয় তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে আপনার করে দিবে। হারিয়ে ফেলতে ফেলতেও পেয়ে যাবেন তাকে। যেমনটা আমি পেয়েছি। স্পেশালি থ্যাংক্স টু দিস ম্যান, যে ছেড়ে গিয়ে এই চমৎকার মেয়েটাকে আমার করে দিয়েছে। সারাজীবনের জন্য। আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ। ছোট্ট পরিসরের এই জীবনে যা চেয়েছি তাই দিয়েছে উপরওয়ালা। হয়তো বা অপেক্ষা আর ধৈর্য্যের পরে। আলহামদুলিল্লাহ সবকিছুর জন্য।’
লেখাটা পড়তে পড়তে ঘোলাটে হলো মায়ানের চোখ। ঝাপসা চোখে শেষের লেখাগুলো পড়তে ভীষণ কষ্ট হলো তার।বুকটা হাহাকার করছে। অন্তঃস্থলে প্রবলবেগে শুরু হলো র’ক্ত ক্ষরণ। দু-চোখের কপাটের মিলন ঘটতেই গাল স্পর্শ করলো বারিবিন্দু। ঠোঁট নাড়িয়ে বিড়বিড় করে আওড়াল,
‘আপনাকে দেখি না সহস্রাব্দ বছর, ফুলবানু।’
#চলবে#অতঃপর_সন্ধি (২৭)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)
শিমুলের বিয়ের উদ্দেশ্যে গ্রামে পা রেখেছে মায়ান। বড় বোনের বিয়ের সময় কিছু না বুঝলেও মেঝবোনের বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব তার কাঁধে। ব্যাগ পত্তর নিয়ে অটোতে উঠে বসল সে। টিউশনি করিয়ে জমানো টাকার ছোট্ট ব্যাগটা সাবধানে রাখল। হারিয়ে গেলেই বিপত্তি।
বাড়ির উঠোনে পা রাখতেই আছরের আজান পড়লো। ওজু করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলেন খায়রুল আলম। ছেলেকে উঠোনে দেখে দৌড়ে এলেন তার কাছে। মায়ানের কাঁধ থেকে ভারি ব্যাগটা নিলেন।
‘তুমি আইছো বাজান?’ অতঃপর হাঁক ছেড়ে ডাকলেন মায়ানের মাকে।
‘আফিয়া’র মা তাড়াতাড়ি বাইরে আহো। তোমার পোলা বাইত আইছে।’
মাটির ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন দিলারা বানু। ছেলেকে দেখে অশ্রুসিক্ত হলো চক্ষু জোড়া। চোখেমুখে হাত বুলিয়ে দিলেন পরম মমতায়।
‘শিমুল তোর ভাই আইছে। তাড়াতাড়ি পানি তোল। তোর ভাই গোসল দিবো।’
ছেলের দিকে দৃষ্টি ফিরালেন। পুনরায় মায়াভরা গলায় বললেন,
‘তোমার অনেক খিদা লাগছে না বাজান?’
মায়ের কথায় হাসলো মায়ান।
‘আম্মা বুবু আসে নাই।’
‘আইবো বাবা কাইল। সংসার সামাল দিয়া আওন লাগে তো। এহন তুমি ঘরে আহো। কাপড়চোপড় ছাইড়া গোসল দেও।’
_______________
চারিদিকে ঝিঁঝি পোকা ডাকছে। দূরদূরান্ত থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে কুকুরের হাঁক ডাক। কিছুক্ষন আগেই বাবুর্চি সবকিছুর লিস্ট দিয়ে গেলো। কোনটা কি পরিমাণে লাগবে।
মায়ান নতুন ঘরে গিয়ে ছোট্ট টাকার ব্যাগ নিয়ে আসলো। খায়রুল আলমের হাতে দিয়ে বলল,
‘আপনার ছেলে যতটুকু পেরেছে ততটুকু আপনার হাতে তুলে দিছে আব্বা। আমারে সময় দিলে বাকি যা ধারদেনা থাকবে সেগুলোও ধীরে ধীরে শোধ করে দিবো।’
তিনি টাকা গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলেন অপলক। কিয়ৎকাল বাদে চাইলেন ছেলের মুখের দিকে। নেত্রপল্লব ভেজা। হয়তো কান্না লুকাতে গিয়েও পারেননি।
‘দেখলা আফিয়ার মা? গেমারে বেবাক মানুষ কইছে আমার পোলা শহরে গিয়া আমাগোরে ভুইল্লা যাইবো। আমাগোর কতা হুনবো না। পড়ালেহার দরকার নাই। আমি কি আমার পোলারে এমন শিক্ষা দিছি কও? এহন কেউ কিছু কইলে আমি বুক ফুলাইয়া কইবার পারুম আমার পোলা বদলায় নাই। শহরে পড়তে গেলে হগ্গলে খারাপ হয় না।’
বাবা মায়ের চোখের উচ্ছ্বাস দেখে টানাটানি করে চলার দিনগুলোর কষ্ট যেন মুহূর্তেই উবে গেলো।
‘আপনাদের আরো একটা খুশির খবর দেওয়ার আছে আব্বা।’
চোখ মুছলেন দু’জনই। খায়রুল আলম জিজ্ঞেস করলেন,
‘কি খবর আব্বা?’
‘শিমুল আর বৃষ্টিরে ডাকেন।’
দিলারা বেগম ডাকতেই দু’জন ছুটে এলো।বৃষ্টি সামনে এলেও আড়ালে এসে দাঁড়াল শিমুল। ভাইয়ের সামনে আসতে তার ভীষণ লজ্জা লাগছে।
‘আমি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেছিলাম আব্বা। আমি সিলেক্টেড হয়েছি।’
এবার সামনে এলো শিমুল। মৃদু চিৎকার করে বলল,
‘তুমি সত্যি বলতেছো ভাইয়া?’
একগাল হেসে মাথা দুলায় মায়ান।
দিলারা বেগম বুঝলেন না কথার মানে।
‘এইডা আবার কি বাজান?’
‘আরে আম্মা আমি যে ক্লাস এইটে বৃত্তি পাইছিলাম তোমার মনে আছে?’ চঞ্চল বৃষ্টি তাড়াতাড়ি করে চটপটে গলায় বলল।
বোনের চঞ্চলতা দেখে হাসলো মায়ান। আফিয়া আর শিমুল শান্তশিষ্ট হলেও বেশ চটপটে বৃষ্টি। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন। কোনো কিছু তেমন একটা ব্যাখ্যা করতে হয় না। চট করে বুঝে ফেলে।
‘তোমারেও টেকা দিবো বাজান?’
কোনো জবাব দিলো না মায়ান। মায়ের কাছে এসে মাটিতে বসে পড়লো।
‘করো কি বাজান? নিচে বইয়ো না। উপ্রে আইয়ো।’
দিলারা বানুর কথা শুনলো না মায়ান। মাটিতেই বসে বসে রইলো ঠায়। মাথা রাখলো উনার কোলে। সুস্থির গলায় বলল,
‘আমি দেশের বাইরে পড়তে যাবো আম্মা।’
আঁতকে উঠলেন দিলারা বানু সহ খায়রুল আলম।
‘কি কও তুমি? শহরে থাহো এরপরেও তোমার লাইগ্গা পরানপুড়ে। তুমি বিদ্যাশ গেলে থাকুম কেমনে?’
মায়ের কর্মঠ হাতে চুমু এঁকে দিলো সে।
‘তোমাদের এই কষ্ট আর থাকবো না। জীবনে তো অভাব ছাড়া কিছু দেখলে না।’
চুপচাপ কেউ কোনো কথা বলছে না। নিরবতা ভাঙলেন খায়রুল আলম।
‘যাওয়ার লাইগ্গা টেকা পাইবা কই?’
‘ওসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। উনারাই সকল খরচ বহন করবে।’
‘আমাগোর অভাব থাকুক তোমার বিদ্যাশ যাওয়ার দরকার নাই।’
‘নিষেদ কইরো না আফিয়ার মা। আমার পোলা পড়ুক। আমার পোলা অনেক বড় হইবো।’
স্বামীর দিকে অসহায় চোখে চাইলেন দিলারা বানু। উনার চোখেও একরাশ অসহায়ত্ব।
আনন্দের মাঝে হঠাৎই মায়ান বলে উঠলো,
‘তোরা দু’জন ওইঘরে যা। আমার আব্বা আম্মার সাথে দরকারী কথা আছে।’
বৃষ্টি ত্বরিত গতিতে বলল,
‘কি দরকারী কথা?’
‘সময় হলে তোরাও জানতে পারবি। এখন যা।’
‘যাইতে কইছে যা।’
শিমুল বৃষ্টির হাতট ধরে বাইরে নিয়ে এলো। ঘর থেকে বের হওয়ার পর বৃষ্টিকে আর একচুল নড়াতে পারলো না শিমুল। ফিসফিস করে বলল,
‘চল, দাঁড়িয়ে না থেকে।’
বৃষ্টি একরোখা হয়ে জবাব দিলো,
‘তুই যা আমি শুনবো কি বলে ভাইয়া।’
‘ভাইয়া দেখলে কিন্তু রেগে যাবে।’
‘এই ভিতুর ডিম তুই যা তো।’
বোনের সাথে না পেরে অগত্যা একাই চলে গেলো শিমুল। দরজার আড়ালে কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো বৃষ্টি।
____________________
‘মায়ান আমতা আমতা করছে। প্রণয়ের কথা বাবা মায়ের সামনে বলতে অস্বস্তি হচ্ছে তার। কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। ফাঁকা ঢুক গিলে সে।
‘একটা আবদার আছে আমার।’
দিলারা বানু মায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
‘কি আবদার?’
চোখ বুঁজে নিঃশ্বাসে মায়ান বলল,
‘আমি ঢাকায় একটা মেয়েরে খুব পছন্দ করি আম্মা। মেয়েটাও আমারে করে।’
হাত থেমে গেলো দিলারা বানুর। স্বামীর মুখপানে নেত্রপাত করলো।
‘তোমরা চাইলে,,,,,,
‘তোমার আবদার রাখতে পারমু না বাজান।’
স্থির হয়ে গেলো মায়ান। এমন উত্তর সে আশা করেনি। ঘাড় বাঁকিয়ে বাবার দিকে চাইতেই তিনিও মাথা নিচু করে ফেলেন।
‘ও অনেক ভালো মেয়ে।’
‘শহরের মাইয়ারা ভালা হয় না। ওই মাইয়া তোমারে আমগো থাইকা আলাদা কইরা দিবো।’
‘আম্মা তুমি জানো না,,,,
‘আমার আর জানন লাগবো না। আমি জানি।’
‘আম্মা আমি ওরে অনেক পছন্দ করি। আব্বা আপনি কিছু বলেন না।’
‘তোমার বাপে কি কইবো।
খায়রুল আলমের আসলেই কিছু বলার নেই। নির্বাক শ্রোতার মতো সব শুনে যাচ্ছেন।
‘আম্মা সব মেয়ে খারাপ হয় না।’
‘আমি তোমার মামুরে কথা দিছি।’
ভ্রু যুগল কুঁচকে গেলো মায়ানের। কপালে ভাসমান হয় চিন্তার বলিরেখা।
‘কি কথা?’
‘আমি সুইটিরে তোমার বউ করুম।’
ছিটকে দূরে সরে এলো মায়ান। চোখ জোড়ায় বিস্ময়।
‘আমারে না বলে কিভাবে কথা দিলা আম্মা। সুইটি আমার কত ছোট। ওরে তো বোন ছাড়া কিছু ভাবি না আমি।’
‘আফিয়ার বিয়ার সময় তোমার বাপ এক লাখ টাকা আনছে। এহনো দেয় নাই।’
‘আম্মা আমি মামুর সব টাকা ফেরত দিয়ে দিবো। একটু সময় দেন আমারে।’
‘আমার মা ম’রা ভাইঝিডারে বউ কইরা আনো। আমিও তোমার কাছে আবদার করলাম।’
মাকে বুঝাতে না পেরে এবার কেঁদেই দিলো মায়ান। ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,
‘আম্মা একটু বুঝো। ফিরিয়ে দিও না। আমার অভাবের কথা জেনেও পিছ পা হয়নি মেয়েটা। একটু রহম করো।’
আশানুরূপ উত্তর পেলো না সে। অসহায়ের মতো দু’পা জড়িয়ে ধরলো খায়রুল আলমের। তিনি তখনো নির্বাক। মাথা নিচু করে রইলেন। ছেলের চোখে চোখ রাখার সাহস পেলেন না।
‘নতুন দু’চালা ঘরটা তোলার সময়ও টেকা দিছে। আবার কইছে শিমুলরে কানের জিনিস দিবো। তোমার বাপের ওতো সমরথ নাই। আমি কইছি তার মাইয়ারে আমার পোলার বউ করুম। তুমি একটা চারকি পাইলে তারে আমার ঘরে আনুম।’
‘তোমার ছেলের চাওয়ার কোনো মূল্য নাই।’
‘তোমার আম্মার জবানের দাম নাই।’
চুপচাপ হয়ে গেলো মায়ান।বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে।
‘তোমার ছেলেও ওই মেয়েরে কথা দিছে আম্মা।’
‘সুইটিরে বিয়া না করলে আমি আমার ভাইয়ের সামনে যাইতে পারমু না।’
‘আমি মামুরে সব বুঝাইয়া বলবো। ভালো পাত্রের হাতে তুলে দিবো।’
‘যে ভাই আমার বিপদে পাশে দাঁড়াইছে। তার মাইয়ারে আমার ঘরের না করলে আমি গলায় দ’ড়ি দিমু।’
আকস্মিক মায়ের হৃদয় কাঁপানো কথায় পড়ে যেতে নিলো সে। মায়ের দিকে চেয়ে রইলো। এতোটা কঠিন আর রুষ্ট হতে আর আগে সে দেখেনি। চোখ বুঁজতেই মায়ের মৃ’ত মুখ চোখে ভাসলো। তড়িঘড়ি করে চোখ মেলে তাকায় সে। জন্মদাত্রীর মৃ’ত মুখ দেখার সাহস তার নেই।
‘আম্মা?’
‘ওই মাইয়ারে যদি তুমি আমারে না কইয়া বিয়া করো, আমি গলায় দ’ড়ি দিমু। আমি কইলাম সত্যই এই কাম করুম্’
ফিচেল হাসলো মায়ান।
‘আমি এতোটাও খারাপ নই আম্মা।’
‘আমাগোরে ঋণমুক্ত করা তোমার দায়িত্ব।’
মায়ান আবারও দিলারা বানুর পায়ের কাছে এসে বসল। হাত দুটো আঁকড়ে ধরলো।
‘আম্মা ঋণমুক্ত করবো তো। তোমরা সবাই তো আমার দায়িত্ব। সময় দেও। শুধু বাচ্চা মেয়েটাকে বিয়ে করতে বলো না।’
‘আমি যে জবান দিছি ওইডা রাখনও তোমার দায়িত্ব। আমারে মুনাফেক বানাইয়ো না।’
কাতর স্বরে দিলারা বেগম ডাকতেই তিনি বললেন,
‘গরীব মাইনষের পছন্দ হইলো টেকা। টেকা সুখ দেয়। আর কিছু না।’
_______________
বুকে এক আকাশ সম দুঃখ লুকিয়ে শিমুলের বিয়ের সমস্ত আয়োজন করেছিলো মায়ান। কাউকে এতটুকু পর্যন্ত বুঝতে দেয়নি।
শিমুলের বিদায়ের পরে যখন মেহমান আসতে আসতে কমতে শুরু করলো। বাড়ি ফাঁকা হতেই মায়ের পা ধরে বসে ছিলো মায়ান।
‘আম্মা আমার কষ্ট হচ্ছে। এতো বড় সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দিয়েন না। আপনি মামুরে বলেন না হয় আমি মামুরে বলি বুঝিয়ে। মামু বুঝবে।’
অনেক বুঝিয়েছিলো। তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন। ছেলের চোখের পানি দেখেও মন গলেনি।
ব্যর্থ হয়ে মাটির ঘরের পিছনে থাকা আম গাছটার আড়ালে গিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলো সে। মায়ের অবাধ্য হওয়ার সাহস তার নেই। অন্যদিকে পুষ্পিতা। একবার মনে হয়েছিল ম’রে গেলেই সব সমাধান হয়ে যাবে। পরক্ষণেই মনে পড়লো বাবার হাড়ভাংগা পরিশ্রমের কথা। ছোটবেলায় মায়ের বাড়ি বাড়ি ধানের কাজ করার কথা। দায়িত্ব এসে কাঁধে চেপেছে।
সবার থেকে নিজের কষ্টগুলোকে আড়াল করতে পারলেও শুধু পারেনি বৃষ্টির চোখ থেকে আড়াল করতে। শত যন্ত্রণার সাক্ষী ওই বাচ্চা মেয়েটা।
বয়সে ছোট হয়েও বড় বোনের মতো আদেশ করেছে,
‘তুমি ওই আপুকে বিয়ে করো ভাইয়া। বিয়ে করে সোজা বাড়ি চলে আসো। আম্মা কয়েকদিন রেগে থাকবে। দেখবে পরে সব ঠিক হয়ে।’
‘আম্মা উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবে। সহজ সরল মানুষটার অনেক রাগ।’
‘আরে মানুষ কত কথা বলে। এভাবে কষ্ট পেয়ো না। আমারও কষ্ট হয়।’
যদি সত্যি সত্যি গলায় দ’ড়ি দেয়?
___________________
চোখ মেলে তাকাল মায়ান। চোখ জোড়া টকটকে লাল । অতীতের কথাগুলো ভাবলে হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ হয়। অসহনীয় যন্ত্রণা হয় বুকে। তার মা বুঝেনি তার যন্ত্রণা।সেও তো কথা দিয়েছিল মেয়েটাকে। কথা ছিলো সারাজীবন একসাথে থাকবে। কথা রাখতে পারেনি। তবে কি সেও মুনাফিক? কতটা ভালো সে বাসতো মেয়েটাকে। মায়ের জন্য ছেড়ে দিয়েছিল নিজের ভালোবাসাকে।
‘ভেবেছিলাম খুশির খবরটা দেওয়ার পর আপনার কথা বললে তারা আমাকে ফিরিয়ে দিবে না। কিন্তু আমি জানতাম না বিচ্ছেদের সূচনা তখন থেকেই হবে। জানলে কখনোই বলতাম না। কখনো না।’
মোবাইল থেকে পুষ্পিতার একটা ছবি বের করলো।লাল শাড়ি পড়া। নিমেষহীন চেয়ে রইলো।
‘আপনাকে ছোঁয়ার আগে দায়িত্ব ছুঁয়ে দিলো নিবিড়ভাবে। দায়িত্বের বলিষ্ঠ হাতের আলিঙ্গন হতে আমি বের হতে পারিনি।’
#চলবে
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।