অদ্ভুতুড়ে পর্ব ৪

অদ্ভুতুড়ে
#পর্ব-৪
অনুর কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আমি মা’কে হেনার টাকা চুরির ব্যাপারটা বললাম শুধু। মা শুনে হেনার জামা কাপড়ের পোটলা খুঁজতে গেলেন। পোটলা খুঁজে ঘরের অনেক কিছুই পাওয়া গেল। রুবা আপুর কসমেটিক্স থেকে শুরু করে মায়ের পছন্দের টি সেট থেকে একটা কাপও পাওয়া গেল। মা সেটা নিয়ে রীতিমতো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু করলেন ঘরের মধ্যে। হেনা’কে দু’একটা চড় থাপ্পড় দিতেই হেনা সব টা স্বীকার করতে শুরু করলো।

আমি মোটামুটি শিওর হলাম অনুর বলা কথাগুলো সত্যি। এরপর মনে মনে অনুকে ডাকলাম কিন্তু অনু এলো না। বেশ কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পরও অনুর দেখা পেলাম না। আমার মন টা খারাপ হয়ে গেল। অনু কী তবে ফের বিপদের সময় দেখা দেবে!

বাড়িতে যতক্ষন সময় থাকি ততক্ষন পর্যন্ত আমার শুধু মনে হয় এই বুঝি অনু এলো কিন্তু অনুর আসার নাম গন্ধ নেই। নতুন ভাবীর সাথে আমার মোটামুটি ভালো ই সখ্যতা হলো। দেখলে হাসি বিনিময় করি। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে নতুন ভাবীর মনে কী চলে, হেনার মনে কী চলে, আর মা’য়ের মনে কী চলে নতুন ভাবী কে নিয়ে! এসব জানার জন্য আমি মরিয়া হয়ে উঠি। কিন্তু অনুর দেখা পাওয়া মুশকিল হয়ে গেল।

দিন দশেক পর এক দুপুরে খাওয়া শেষে ঘরে ফিরে দেখি অনু বসে আছে আমার চেয়ারে। আমি যতটা খুশি হলাম ততটা প্রকাশ করলাম না। আমি অনুকে দেখে কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
-আপনি এতোদিন কেন আসলেন না?

-আসার তো দরকার হয় নি।

-আমি আপনাকে কাজেই ডেকেছিলাম।

-আমার কাজ হলো তোমাকে আর তোমার আশেপাশের মানুষকে বিপদ থেকে বাঁচানো।

-আজ আবার কার বিপদ?

লুনার।

-লুনার কী হয়েছে?

-লুনা একটা হোটেলে গেছে ওই স্যারের সাথে। ওখানে ওর জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে।

-আমি কী করবো এখন?

-তুমি লুনাকে বাঁচাবে।

আমি বিস্মিত গলায় বললাম, আমি কীভাবে বাঁচাবো?

-তুমি লুনার বাবাকে নিয়ে ওই হোটেলে যাবে।

আমি অবাক হয়ে বললাম কী?

-হ্যাঁ। লুনা মেয়েটা ধুরন্ধর। এর বড় শিক্ষা হবে বাবা মায়ের সামনে আসল রুপ প্রকাশ করা।

আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
-আচ্ছা কিন্তু কীভাবে?

-আমিও যাব তোমার সাথে।

আমি তখন বললাম, আমার নিজের অনেক কিছু জানার আছে তোমার কাছে।

-আগে লুনার কাজ টা শেষ করো।

লুনার বাবার কাছে আমি গেলাম সন্ধ্যার দিকে। বই নেয়ার অজুহাতে লুনার খোঁজ করলাম। লুনার বাবা বলল লুনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না সকাল থেকে। সকালে ইউনিভার্সিটি যাওয়ার নাম করে সেই যে বেড়িয়েছে আর ফিরে আসে নি। আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম, লুনা তো ইউনিভার্সিটি যায় নি। বরং ওকে আশুলিয়ার দিকে যেতে দেখেছিলাম সকালে। লুনার বাবা আমার কথা বিশ্বাস করলেন। আর কিছু না জানতে চেয়ে আমাকে নিয়ে ছুটে চললেন আশুলিয়ার দিকে।

উত্তেজনায় আমার বুক দুরু দুরু করছে। আমি জানি এই নাটকের পরের অংশ কী হতে যাচ্ছে। অনুর কথামতো আশুলিয়ার এক স্বস্তা হোটেলে গিয়ে উপস্থিত হলাম। খোঁজ নিয়ে জানলাম লুনা ওই হোটেলে আসে নি। আমি বিস্মিত হলাম। লুনার বাবা আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। চোখ বন্ধ করে বার দু’য়েক অনুর নাম ধরে ডাকলাম। অনু ফিসফিস করে বলল,
-এই তো আমি আছি।

আমি মনে মনেই বললাম, এসব কী হচ্ছে? লুনা তো এখানে নেই।

অনু চাপা হাসি দিয়ে বলল, আশেপাশেই আছে। খুঁজে বের করো।

আমি লুনার বাবাকে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম।
লুনার বাবা চটে গেলেন আমার উপর। উনি মনে হয় সেন্সে ফিরে এলেন। বললেন, আমি আমার মেয়েকে এসব শিক্ষা দেয়নি। আমার মেয়ের নামে এসব বানিয়ে বানিয়ে বলছ লজ্জা করছে না!
ঠিক তখনই ফিসফিস কন্ঠে অনু বলল, ফাহিম যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই। আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখে নাও।

আমি আশেপাশে তাকিয়ে ভালো করে দেখলাম। হোটেলের কিছু দূরেই এক জায়গায় ভবন তৈরী হচ্ছে। আমি লুনার বাবাকে বললাম, আঙ্কেল আমরা ওইদিক টায় একটু দেখি। লুনার বাবা চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকালেও যেতে রাজী হলেন। ভবন টা হোটেল থেকে বেশ দূরে। আশেপাশে তেমন কোনো লোকালয় ও নেই। দোতলার অর্ধেক করা হয়েছে কেবল। একতলার ভেতরে ইট, বালু স্তুপ করে রাখা।
তার এক পাশে নারী শরীর দেখে আমি থমকে গেলাম। সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। কিছু বলার আগেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম।

—— ——— ——— ——— ————-

জ্ঞান ফিরতেই দেখলাম মা মাথার পাশে বসে ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদছে। আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম, মা লুনা?

মা সাপের মতো ফোস করে উঠে বলল, লুনা কী করেছিল তোর সাথে?

আমি অবাক গলায় বললাম, আমার সাথে কী করবে? মা শোনো লুনা মোটেও ভালো মেয়ে ছিলো না। ওর সাথে অনেকের প্রেম ছিলো।

মা সাথে সাথে আমাকে থাপ্পড় মেরে বলল, হারামজাদা লুনাকে কেন মেরেছিস বল!

আমি বিস্মিত গলায় বললাম, আমি লুনাকে কেন মারব!

মা আর কিছু বলতে পারলেন না। কাঁদতে লাগলেন শুধু। ভাইয়া বললেন,

-ফাহিম শোন লুনার লাশ পাওয়া গেছে সেটুকু তো তুই জানিস?

বিস্ময়ে আমি চোখে পলক ফেলতে ভুলে গেলাম। লুনা মরে গেছে বা যাবে এরকম কিছু তো অনু বলেনি। ও তো শুধু আমাকে বলেছিল লুনাকে বাঁচাতে হবে।

ভাইয়া আবারও বললেন,
-লুনার লাশ পাওয়া গেছে কোথায় জানিস? আশুলিয়ায় বাবা যে নতুন বাড়িটা বানাতে শুরু করেছেন সেখানে। লুনা সেখানে গেল কী করে? আর তুই বা জানলি কী করে?

আমি হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম। একটা কথাও বলতে পারলাম না। ভাইয়া গম্ভীর গলায় বললেন,
-দেখ ফাহিম এই প্রশ্নগুলো কিন্তু পুলিশ ও করবে তোকে। আমাকে সব সত্যি বল।

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, আমি কিছু জানিনা। অনু যা বলেছে তাই করেছি।

ভাইয়া ভ্রু কুচকে বলল, অনু কে?

মা’ও অবাক গলায় জানতে চাইলেন, এই অনুটা কে?

আমি সব খুলে বললাম। সব শুনে ভাইয়া রাগী গলায় বলল, এখনো তুই এসব ভুত, প্রেতের গল্প বলে যাবি?
আমি ভয়ে দিশেহারা হয়ে গেলাম। পাগলের মতো কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলাম, আমি কিছু করিনি। আমি কিছু জানি না।

লুনার বাবা পুলিশ কে আমার কথা বলেছেন। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসে অনেক কিছু জানতে চাইলেন। যার একটারও যথাযথ উত্তর দিতে পারিনি। পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে গেল। বাবা, মা দুজনেই অস্থির হয়ে গেল। বাবা পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না।

হাজতে বসে আমি হাটুতে মুখ গুজে কাঁদছিলাম তখনই অনু আমাকে বলল, ফাহিম কেঁদো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমি রেগে গিয়ে বললাম, সব তোমার জন্য হয়েছে।

অনুর হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। অনু বলল, সব কিছুই আগে থেকে ঠিক করা। আমার কিছু করার নেই।

-তোমার কথাতেই ফেঁসে গেলাম আমি। তুমি কেন বলোনি যে লুনা মরে গেছে?

-অনেক ব্যাপার আছে যেগুলো আগে থেকে আচ করা যায় না। লুনার ব্যাপার টা তেমন ছিলো।

-এখন আমাকে এখান থেকে বের করো প্লিজ।

-আচ্ছা কিন্তু তোমাকেও কথা দিতে হবে যে তুমি আমাকে সাহায্য করবে।

-করব।

-উঁহু ওভাবে না। শপথ করে বলো।

– শপথ করলাম।

-উঁহু তোমার মায়ের নামে শপথ করো।

-আচ্ছা শপথ করলাম।

-ঠিক আছে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here