অন্যরকম ভালোবাসা পর্ব -১১+১২

অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব১১
মৌমিতা_শবনাম

নিরব মনির সাথে কথা বলেছে কালকে একটা কাজ শেষ করেই মনি বাংলাদেশে ফিরবে। মনি এখন বাংলাদেশের বাহিরে গেছে একটা কাজে। নিরবের চিন্তা হচ্ছে কাল তো মনি বিয়ের আগে আসতে পারবে না তাহলে বিয়েটা আটকাবে কি করে। এটা নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে নিরব আবার বলে উঠে, –” কোনো ব্যাপার না হয়ে যাক বিয়ে আবার ডিভোর্স ও হয়ে যাবে। ”

নিরব রিক্সা নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিল সে। তন্নিকে পাবে এই আনন্দে তার নাচতে ইচ্ছে করছে। যখন সে তন্নিকে বিয়ে করে আনবে একটা বড় করে পার্টি দিবে।

———–
সকাল ১০ টা বাজে চারিদিকে সবাই ব্যস্ত। তন্নি নিজের রুমে একা বসে আছে। মনটা কেমন যেন করছে। কোনো ঝামেলা হবে না তো নিরবের সকল প্ল্যান জানার জন্য সে বৃষ্টিকে সহ্য করতো। কিন্তু নিরব কি করতে চলছে সেটাই তো বৃষ্টি জানে না। যা হবার হয়েছে সে তার নতুন জীবনে বৃষ্টি বা নিরবের কারো ছায়া পড়তে দিবো না।

এসব ভাবতে ভাবতে আবার কলটা বেজে ওঠে। তন্নি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি। বিরক্ত হয় সে আর কতো সহ্য করতে হবে এদের। ফোন রিসিভ করে কানে ধরে বলতে থাকে, –” প্লিজ তোর পায়ে পড়ি আমাকে আর কল দিস নাহ। তোরা দুজন আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দে।”

তখন ফোনের ওপাশ থেকে নিরব বলে ওঠে, –% থাকবে তো শান্তিতে তুমি আর আমি শান্তিতে থাকবো। আর এখন থেকে বৃষ্টি আর কল দিয়ে তোমায় বিরক্ত করবে নাহ। আমাকে ছেড়ে দিতে বলে জ্বালাতো অনেক তাই নাহ।”

তন্নি দাঁতে দাঁত চিপে বলল– ” তোর সাহস কি করে হলো আমায় কল দেওয়ার!”

নিরব বেহায়া হাসি দিয়ে বলে,–” আমি দেই নও তো বৃষ্টি দিয়েছিল আমি শুধু ওর কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে কথা বলছি সোনা।”

নিরবের কথায় কপাল কুচকে ফেলে। কান থেকে ফোনটা সরিয়ে এক আঁচড়ে ফোনটা ভেঙে ফেলে। কি চাই এই দুইজন কেন তার পিছু ছাড়ছে না। তখনই দরজা টেলে রুমে ঢুকেন তুষার সাহেব। তুষার সাহেবকে দেখে তন্নি নিজেকে কন্ট্রোল করে নেয়। তন্নি মুখে হাসি নিয়ে বলে, –” বাবা তুমি!”

তুষার সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,–” হ্যা আসলাম তোর সাথে গল্প করতে একটু।”

তন্নি তার বাবাকে বসার জায়গা করে দিয়ে তার পাশে সেও বসে। তুষার সাহেব তন্নির মাথায় হাত দিয়ে বলে,–” মা আমায় ক্ষমা করে দিস আমার ভুলের জন্য তুই এতো কষ্ট সহ্য করেছিস।”

তন্নি সাথে সাথে বলে,–” কি বলছো এসব বাবা তুমি কোনো ভুল করো নি তুমি তো আর জানতে না ও এমন হবে। ”

তুষার সাহেব মেয়েকে আরো কিছু বলতে যাবে তখন পার্লার থেকে লোক চলে আসে তাকে সাজাতে। তুষার সাহেব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১ টা বাজে। উনি মুচকি হেসে বলে, –” দেখ তো এখন কয়টা বেজে গেছে কিভাবে যে সময়টা চলে যাচ্ছে। ”

তন্নিও হালকা হাসলো। দুজনের চোখেই পানি চিকচিক করছে। তুষার সাহেব বেশিক্ষণ থাকলেন নাহ এখানে চলে গেলেন বেরিয়ে। এখানে থাকলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না।

———
নিরব বেরিয়ে যাচ্ছিল বাসা থেকে তখন বৃষ্টি তার সামনে এসে দাঁড়ায়। নিরব বিরক্ত নিয়ে তার দিকে তাকায়। বৃষ্টি আকুতি ভরা চোখ নিয়ে বলে,–” প্লিজ তোমার সাথে কিছু কথা আছে। ”

নিরব গম্ভীর গলায় বলে, –” আমার হাতে তোমার ফালতু কথা শোনার মতো সময় নেই।”

বৃষ্টি অসহায় চোখ করে তাকায়। নিরব তা পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিলেই বৃষ্টি ওর হাত ধরে বলে, –” প্লিজ এটা খুব দরকার বলা।”

নিরব হাত ঝাড়ি মেরে ফেলে দিয়ে বলে– ” রাতে এসে শুনবো।”

এই বলে বড় বড় পা ফেলে সে চলে যায়। বৃষ্টির খুব আফসোস হয় এখন। কেন যে সে তন্নির সংসারটা ভাঙতে গিয়েছিল এখন তো তার নিজের সংসারে ফাটল ধরেছে। এখন আর আফসোস করে কি লাভ কর্ম ফল তো পেতেই হবে।

————–
বিদায় শব্দটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। তন্নির বিদায় ঘনিয়ে এসেছে। তাকে যে এখন বাবার বাড়ি ছেড়ে রওনা দিতে হবে শ্বশুর বাড়ির পথে। বিয়েটা সুষ্ঠু ভাবেই সম্পুর্ন হয়েছে তাদের। তন্নির চোখে পানি জমেছে এখনই যেন টুপ করে পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে। তুষার সাহেব মেয়ের হাত রাদের হাতে সঁপে দিয়ে বলে– ” আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো ও খুব সহজ সরল।”

তুষার সাহেব নিশ্চিন্ত হলেন কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়েছে। তন্নির বিদায়ের পালা মিশমি আচল দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না করছেন। তুষার সাহেব নিজেকে শক্ত করে রেখেছেন। তন্নি কাঁদছে মা বাবাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।

অবশেষে তারা রওনা দিল রাদের বাসার উদ্দেশ্যে। তন্নি সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে তার কোলে গুটিশুটি মেরে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে রাইদা আর তার দুইপাশে র এক পাশে বসে আছে রাদ অপর পাশে রিধি। বাসায় পৌঁছাতে তাদের ৩০ মিনিটের মতো লাগে।

দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে রাদ আর তন্নি। রিধি ভিতরে গেছে বরণ ডালা আনতে। ৫ মিনিট পর রিধি বরণ ডালা এনে ওদের দুজনকে বরণ করে ভিতরে নিয়ে আসে।

———————
নিরব এয়ারপোর্টে বসে আছে মনির অপেক্ষায়। ১১:৩০ এ ফ্লাইট ল্যান্ড করবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১১:২৫ বাজে। নিরব বিরক্তির নি:শ্বাস ছাড়ে। ৫ মিনিট সময়ও এখন ৫ ঘন্টার সমান মনে হচ্ছে। তন্নি আর রাদের বিয়ে হয়ে গেছে মনে হতেই কপাল কুচকে ফেলে নিরব।

মনি মাত্রই ফ্লাইট থেকে নেমেছে। একটা লোককে পায়চারি করতে দেখে। পড়নে তার টি-শার্ট আর প্যান্ট। মনি ঐ লোকটার কাছে গিয়ে বলে,–” আপনি কি নিরব?”

মেয়েলি গলা পেয়ে পিছনে তাকায় নিরব। শর্ট ড্রেস পড়া চুলের কালার বাদামী পড়নে হাই হিল। নিরব বলল,–” হ্যা আমি নিরব।”

মনি হালকা হেসে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে– ” আমি মনি।”

নিরবও হাত মেলায়। মনির লাগেজ গুলো নিয়ে নিরব বলে,–” চলুন হোটেলে যাবেন। ”

মনি বলল,–” না না আগে চলুন রাদ আর তন্নির বিয়ে ভাঙতে হবে। ”

নিরব ত্যাড়া ভাবে বলে,–” ওহ তাই আপনি ওদের বিয়ে ভাঙবেন এই আশায় ওরা বিয়ে আটকিয়ে রেখে বসে আছে তাই নাহ?”

মনি বুঝতে না পেরে বলে,–” মানে?”

নিরব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে– ” ওদের বিয়ে হয়ে গেছে। ”

মনি চিৎকার দিয়ে বলে,–” হোয়াট তাহলে আমার এখানে এসে ফাইদা হলো কি তাহলে?”

নিরব বলল,–” আস্তে আমার কাছে প্ল্যান আছে চলুন হোটেলে ঐখানে বসেই বলবো সব।”

মনি আর কিছু বলল না নিরবের পিছু পিছু যেতে লাগলো। মনি ৩ বছর আগে রাদকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল তার নতুন বয়ফ্রেন্ড এর জন্য কিন্তু সেই বয়ফ্রেন্ড তার সাথে রুমডেট করার পর তাকে ছেড়ে চলে যায় পরে রাদের কাছে ফিরতে চাইলেও সে তাকে গ্রহণ করে নি। কয়েকদিন আগে একটা কাজে দেশের বাহিরে গেছে তো এর মাঝে এতো কিছু হয়ে গেছে।

——————–
রাদ আর তন্নি ছাদে দাড়িয়ে আছে। আজ তার মনে ভীষণ শান্তি লাগছে। রাদের বুকে মাথা রেখে দাড়িয়ে আছে তন্নি কেমন একটা যেন শান্তি লাগছে। তবে কি সে রাদকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।

এসব ভাবছিল তখন রাদ বলল,–” তুমি খুশি তো মিসেস তন্নি।”

তন্নি হালকা হেসে বলে, –” হুম অনেক খুশি।”

রাদ জিজ্ঞেস করল, –” ক্লান্ত লাগছে?”

তন্নি চোখ দুটো ছোট করে মাথাটা নাড়িয়ে বলে, –” একটু একটু।”

তন্নির এমন কথা বলার ধরণ দেখে আরেক দফা ফিদা হয়ে যায় রাদ। এই এক অন্যরকম অনুভূতি, অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। তন্নি আর রাদ দুজনই রুমে চলে আসে। তন্নি অস্বস্তি ফিল করছে দেখে রাদ বলে,–” নো প্রবলেম আমি সোফায় শুয়ে পড়ছি তুমি বিছানায় শুয়ে পড়ো কাল থেকে রাইদাও থাকবে তোমার সাথে।”

তন্নি কিছু বলল নাহ তার শরীর ভীষণ ক্লান্ত। চোখ দুটো বিশ্রাম চাচ্ছে। রাদ বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে। তন্নি হালকা ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম তার চোখে ভর করে। সে ঘুমে তলিয়ে যায়। তন্নি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রাদ উঠে এসে তন্নির পাশে বসে। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সে তন্নির দিকে। মনটা আজ ভীষণ শান্তি লাগছে ইচ্ছে করছে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে কিন্তু তন্নির মনে তো ওর জন্য কোনো ফিলিংস নেই তাই সে আনার গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে।
অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব ১২
মৌমিতা_শবনাম

বৃষ্টি নিরবের জন্য অপেক্ষা করছে রাত ১ টা বাজে তখন। নিরব একটু পর বাসায় আসে। নিরবকে দেখে খুশি হয়ে যায় বৃষ্টি। বৃষ্টি এখনও জেগে আছে দেখে বিরক্ত হয় নিরব। বৃষ্টি বলল,–” তুমি এসেছো নিরব!”

নিরব ত্যাড়া ভাবে বলল,–” হ্যা তো?”

নিরবের ত্যাড়া উত্তরে মন খারাপ হয়ে গেল বৃষ্টির। মাথা নিচু করে বলে– ” আসলে কিছু কথা ছিল। ”

নিরব বিরক্ত হয়ে বলল,–” বল।”

বৃষ্টি বলল,–” তুমি বাবা হতে চলেছো। ”

এই বলে বৃষ্টি অধীর আগ্রহে নিরবের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই বুঝি নিরব এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলবে,” বৃষ্টি জান আমার তুমি সত্যি বলছো কি আমাদের পিচ্চি আসতে চলছে! ”

কিন্তু এটা হলো না। হলো এটার বিপরীত টা শান্ত গলায় বলল নিরব,–” রেডি থেকো কাল এবরেশন করিয়ে আনবো।”

বৃষ্টি বলল,–” হোয়াট? ”

নিরব আবারও বলল,–” এবরেশন করিয়ে আনবো। ”

বৃষ্টি রেগে গেল। নিরবের কলার ধরে বলে– ” এবরেশন করাবো মানে?”

নিরব শান্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিল,–” এই বাচ্চা আমার চাই নাহ।”

বৃষ্টি কলারটা আরও চেপে ধরে বলে– ” আমাকে খেলনা মনে হয় তোমার তন্নিকেই যদি চাও তাহলে খনিকের জন্য আমাকে তোমার সাথে জড়ালে কেন? ”

নিরব এক ঝাড়া দিয়ে নিজের কলার থেকে বৃষ্টির হাতটা সরিয়ে ফেলে। বৃষ্টির গালে জোরে একটা চর মারে সেখান থেকে চলে যায় নিরব। বৃষ্টি সেখানেই বসে পড়ে। চিনিয়ে নেওয়া কোনো কিছুর স্থায়িত্বকাল বেশিদিন হয় নাহ তা সে বেশ বুঝতে পারছে। সে কি করবে বুঝতে পারছে না সে ত বাচ্চাটাকে বাচাতে চায়।
———-
সকাল ৭ টা বাজে তন্নি মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। রাদকে সোফায় শুয়ে থাকতে দেখে মায়া হয়। ঠিক কর শুতেও পারছে না বারবার পড়ে যেতে নিচ্ছে। তন্নি উঠে গিয়ে রাদকে ডেকে বলে, –” এই যে মিস্টার যান গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ুন। ”

রাদ ঘুম ঘুম ঢুলতে ঢুলতে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। তন্নি গিয়ে তার পাশে বসে। রাদ চোখ বন্ধ করে বলে,–” কিছু বলবে মিসেস তন্নি।”

তন্নি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে বলল,–” আসলে আজকে থেকে আপনি বিছানায় শুবেন। বিছানা তো অনেক বড় বড় আমরা তিনজন খুব সুন্দর হয়ে যাবে। ”

এতটুকু বলে তন্নি বোকা বোকা চোখ করে রাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাদ চোখ পিটপিট করে তন্নির মুখের অবস্থা দেখে ঠোঁট মেলিয়ে হেসে বলে, –” এরকম কিউট ফেইস করো না নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হয়।”

রাদের কথার মানে বুঝতে একটু সময় লাগে ততক্ষণে রাতে গভীর ঘুমে। রাদের কথার মানে বুঝতে পেরে মুখ দিয়ে একটা শব্দই বের হয় তা হলো অসভ্য।

তন্নি ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এসে দেখলো রিধি রান্না করছে আর রাইদা টিভি দেখছে আর খেলা করছে। তন্নি রাইদাকে আদর করে রিধির কাছে যায়। রিধি তন্নিকে দেখে হেসে বলে, –” গুড মর্নিং ভাবি।”

তন্নিও হালকা হেসে বলে, –” গুড মর্নিং। দাও আমি করছি তুমি রাইদার সাথে বসো গিয়ে। ”

রিধি বলল, –” না কোন সমস্যা নেই মিষ্টি ভাবি তুমি যাও আমার শেষ প্রায়। ”

তন্নি ধমকে বলল,–” চুপ মেয়ে যাও গিয়ে টিভি দেখো আমি করছি বাকি গুলো।”

ধমক খেয়ে রিধি আর কিছু বলে না গাল ফুলিয়ে গিয়ে টিভি দেখতে থাকে। রিধির গাল ফুলানো দেখে তন্নি হাসে।

তন্নি অনেক রকম খাবার তৈরি করে। রান্না করতে করতে ১০ টা বেজে যায়। রাইদার জন্য দুধ গরম করে রিধির হাতে দিয়ে আসে তন্নি। দুধ দেখে রাইদার হাজার বাহানা শুরু রিধি হাজার চেষ্টা করেও দুধ খাওয়াতে পারলো না। তন্নি এসে রিধির কাছ থেকে দুধের গ্লাস টা নিয়ে বলে,–” আমি খাওয়াচ্ছি।”

রিধি একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে– ” দেখো এই ত্যাড়া মেয়েকে খাওয়াতে পারো কিনা।”

তন্নি হালকা হেসে রাইদার কাছে গিয়ে বসল,–“রাইদা মনি কি দুধ খাবে নাহ?”

রাইদা নাক ছিটকে বলে, –” নাহ খাবে না।”

তন্নি মন খারাপ করে বলে, — ” মাম্মাম খাইয়ে দিলেও খাবে নাহ?”

রাইদা অসহায় ফেইস করে বলে, –” রাইদার দুধ একদম পছন্দ না।”

তন্নি বলল,–” তাহলে রাইদার কি পছন্দ?”

রাইদা লাফিয়ে বলে,–” চকলেট। ”

তন্নি উঠে দুধ আর চকলেট মিক্সড করে গরম করে আনলো। এবার রাইদা বাহানা করলো নাহ খেয়ে নিল। রাদ এতক্ষণ পিছনে দাড়িয়ে তন্নি আর রাইদার কাজ দেখছিল। ওদের কান্ডে রাদ হালকা হাসলো। তবে কি তার সুখের সংসার শুরু নাকি নতুন কোনো ঝড় আবার আসবে।

——————-
নিরব বৃষ্টিকে অনেকবার বলে গেছে রেডি হতে কিন্তু বৃষ্টি সেই একইভাবে বসে আছে। নিরব এবার এসে বৃষ্টিকে একইভাবে বসে থাকতে দেখে প্রচন্ড রেগে যায়। বৃষ্টির কাছে গিয়ে তার হাতে ধরে টেনে তুলে গালে থাপ্পড় মারে। বৃষ্টি ছিটকে গিয়ে বিছানায় পড়ে। নিরব আবার বৃষ্টির চুলের মুঠি ধরে তোলে। বৃষ্টি অস্পষ্ট সুরে বলে,—” নিরব আমি প্র্যাগনেন্ট।”

নিরব রাগে দাতে দাত চেপে বলে,–” হ তুই প্র্যাগনেন্ট এখন তুই যাবি আমার সাথে এবরেশন করাতে। ”

বৃষ্টি রেগে যায় চুল থেকে হাত ছাড়িয়ে জোরে থাপ্পড় মারে নিরবকে। নিরবকে থাপ্পড় মেরে বলে,–” ফাইজলামি পেয়েছিস এটা আমার বাচ্চা। তোকে পালতে হবে না আমি পালবো ওকে। ”

নিরব আবার বৃষ্টির চুলের মুঠি ধরে বলে– ” বাচ্চার মাধ্যমে আমার উপর অধিকার খাটাতি নাকি?”

বৃষ্টি নিরবের পায়ে পড়ে বলে, –” আমি কখনো কোনো দাবি নিয়ে আসবো না তোমার কাছে প্লিজ আমার সন্তানটাকে মেরো না।”

বৃষ্টির কথায় নিরব হেসে উঠে বলে, –” তোর মতো মেয়েকে বিশ্বাস করা যায় না যেই দশ বছরের বন্ধুত্বের সাথে বেইমানি করে সে আমার সাথে বেইমানি করবে না তার কি গ্যারেন্টি জলদি উঠ। উঠে রেডি হয়ে নে হাসপাতালে যাবো।”

বৃষ্টি বলে,–” আমি যাবো নাহ হাসপাতালে। ”

নিরব প্রচন্ড রেগে যায়। বৃষ্টিকে মারতে শুরু করে। তার একটা আঘাত অনেক জোরে এসে পেটে লাগে। বৃষ্টি চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। তার ব্লিডিং হচ্ছে। রক্ত দেখে নিরব থেমে যায় ভয়ে তার মাকে ডাকতে শুরু করে। রুনা ছেলের ডাকে জলদি আসে। বৃষ্টিকে দেখে বলে,–” হায়রে এটা কি করে হলো ওরে জলদি হাসপাতালে নিয়ে চল নয়তো তুই জেলে থাকবি।”

নিরব ভয়ে মা যা বলে তাই করে বৃষ্টিকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।

—————–
মনি হোটেলে নিরবের জন্য অপেক্ষা করছে। নিরব আসলে তাকে নিয়ে গিয়ে রাদ আর ওর বিয়ের ফেইক ছবি বানাতে হবে। মনি বিরক্ত হয়ে বলে, –” উফফ এই ছেলেটা এখনও আসছে না কেন?”

নিরব আসে ২ ঘন্টা পর। মনি নিরবকে দেখে রাগী গলায় বলে, –” কি সমস্যা এতো লেইট করলে যে?”

নিরবের শরীর ঘেমে একাকার। নিরব তাড়া দিয়ে বলে– ” একটু কাজ পড়ে গেছিলো ম্যাডাম চলুন জলদি।”

মনিও কথা বাড়ালো নাহ। নিরবের সাথে যেতে থাকলো। নিরব একটা স্টুডিও এর সামনে নামল গাড়ি থেকে। মনিও নামলো সাথে। স্টুডিও এর ভিতরে গিয়ে নিরব একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরল। ছেলেটার নাম আকাশ নিরবের বন্ধু। আকাশ বলল,–” কিরে কি মনে করে এখানে?”

নিরব বলল,–” তোকে একটা কাজ করতে হবে। ”

আকাশ বলল,–” কি কাজ বল?”

নিরব বলল,–” তোকে কিছু বিয়ের ফেইক ছবি বানাতে হবে। ”

তরপর নিরব আকাশকে সব বুঝিয়ে বলল। সব শুনে আকাশ বলল,–” আরেহ নো প্যারা সব হয়ে যাবে। ”

অতঃপর নিরব আর মনি একসাথে কিছু ছবি তুলে। বিভিন্ন এঙ্গেলের ছবি তুলে। মনি আকাশকে বলে,–” এডিট করা হয়েছে তা যেন বুঝা না যায়।”

আকাশ বলে,–” চিন্তা করবেন নাহ ম্যাডাম সব হয়ে যাবে। ”

মনি বলল,–” কবে পাবো?”

আকাশ বলল,–” কালকেই। ”

তারপর নিরব মনি কিছুক্ষণ আকাশের সাথে গল্প করে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। মনির মনে মহা আনন্দ রাদকে সে কখনো শান্তিতে থাকতে দিবে না।

চলবে
আমার হাত পুড়ে যাওয়ায় এর বেশি লিখতে পারলাম না। কেমন হয়েছে জানাবেন।

    চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here