#অপরাজিতা
#২৬তম_পর্ব_শেষ_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা
রাজিতা রিমির ঘরে ঢুকতেই রিমি বিছানা থেকে উঠে রাজিতাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। তারপর বলল,
–“রাজি! প্লিজ তুই আমাকে ক্ষমা করে দে। তুই ক্ষমা না করলে যে কেউ আমাকে ক্ষমা করবে না! অনুতাপের আগুনে যে আমি জ্বলে-পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি! আমি জানি তোর অভিশাপের কারণেই আমি এভাবে কষ্ট পাচ্ছি! তোর মতো একটা মেয়েকে কষ্ট দিয়ে আমি কি করে ভালো থাকতে পারি বল!”
রাজিতা ওকে শান্ত করে বিছানায় বসালো। তারপর নিজেও ওর পাশে বসে বলল,
–“আমি তোকে মাফ করে দিয়েছি। আর আমি তোকে অভিশাপ কেন দেবো! আমি তোকে কোনো অভিশাপ দেইনি। আমি তোকে অভিশাপ দিতে পারি বল? ”
–“আমি জানি, অভিশাপ দিতে হয়না৷ মন থেকে চলে আসে। আর আমার প্রতি তোর অভিশাপটাও তোর মন থেকেই চলে এসেছে! তুই আমাকে সত্যি ক্ষমা করে দিয়েছিসতো?”
–“হুম, আমি একদম মন থেকেই তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তোর এই গোমড়া মুখ যে আমি দেখতে পারছি না! এইবার একটু হাস!”
রিমি কান্না কিছুটা থামিয়ে সত্যিই একটু হাসলো। তারপর রাজিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“তোর থেকে আমি একটা কথা লুকিয়েছি। তোকে বলা উচিৎ ছিলো, কিন্তু বলতে সাহস পাইনি। কিন্তু আজ তোকে বলতেই হবে। কারণ এই বিপদ থেকে একমাত্র তুই পারিস আমাকে রক্ষা করতে! বল, আমাকে হেল্প করবি?”
–“আরে আগে বলবিতো কি হয়েছে? সবকিছু না জানলে হেল্প করবো কি করে বল? ”
তারপর রিমি তুহিনের সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা, নিয়নের সাথে তুহিনের বোনের ব্রেকাপ! সবটা খুলে বলল। রাজিতা সবটা শুনে যেন হাঁ হয়ে গিয়েছে। আনানের বলা কথাগুলো তখন রাজিতার মনে পড়লো যে, আনানও তো ওকে বলেছিলো যে, একমাত্র ওই পারবে নিয়নকে হেল্প করতে! কিন্তু কীভাবে! আর ওই বা কেন?
–“কিরে এইবার বল, কাল নিয়ন ভাইয়াকে ওই রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে তুই আমায় হেল্প করবিতো? আমিও জানতে চাই যে, তিন বছর আগে কি হয়েছিলো! যার শাস্তি আজ আমাকে পেতে হচ্ছে!”
রিমির কথা শুনে রাজিতা বলল,
–“সেটা না হয় আমি নিয়ন ভাইয়াকে রাজি করাবো। আচ্ছা তুই আমাকে একটা কথা বলতো, তুহিনের বোনের কি বিয়ে হয়ে গেছে? বা অন্যকোথাও রিলেশন আছে? না মানে আনান বলছিলো যে, উনি এখনো সিঙ্গেল থাকলে নাকি নিয়ন ভাইয়ার সাথে আবার মিল করিয়ে দেওয়া যাবে! কেননা নিয়ন ভাইয়া নাকি এখনো ওই মেয়েটাকেই ভালবাসে! আর নিয়ন ভাইয়া যদি এখনো ওই মেয়েটাকে ভালবাসে, তাহলে ব্রেকাপ কেন করেছিলো?”
–“তারমানে এটাতো নয় যে, ব্রেকাপ নিয়ন ভাইয়া নয়, ওই মেয়েটাই করবছিলো! তাহলেতো তুহিনের মুখের উপর জবাব দিয়ে দিতে পারবো! ও নিজের বোনের জন্য আমার ভালবাসা নিয়ে এভাবে কি করে খেলতে পারলো! আমার ভালবাসার কোনো মূল্য নেই ওর কাছে!”
–“আচ্ছা এসব নিয়ে তোকে আর ভাবতে হবে না। শুয়ে পড়। অনেক রাত হয়েছে৷ আর নিশ্চিতে ঘুমা, আমি কথা দিচ্ছি, কাল বিকেলে অবশ্যই নিয়ন ভাইয়াকে ওই রেস্টুরেন্টে পাঠিয়ে দিবো। আর হ্যাঁ, যদি আমার যাওয়ার দরকার হয় তবে আনানকে বলে আমি নিজেও যাবো। তুই এবার ঘুমা।”
রাজিতা ওর রুমে গিয়ে দেখলো আনান রুমের লাইট অফ করে দিয়ে শুয়ে পড়েছে। আনান ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে রাজিতা ধীরেধীরে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
–“এতক্ষণে আমার বউটার আমার কথা মনে পড়লো! আমিতো ভাবলাম যে, আজ হয়তো আমার বউটাকে হারিয়েই ফেললাম! তুমি পাশে না থাকলে কয়েক মিনিটও যেন কয়েক ঘন্টা মনে হয় এখন।”
রাজিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে কথাগুলো বললো আনান। আনানের ফিসফিসানি কথাগুলো শুনে রাজিতা ওর দিকে ঘুরতেই আনান ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলো। তারপর রাজিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“আমার ভালবাসার চিহ্ন কোথায়! তাড়াতাড়ি দাও! নইলে কিন্তু আজ আর ঘুমাতে দিবো না। কখন থেকে তোমার জন্য ওয়েট করছি! আর তোমার কোনো খবর-ই নেই!”
রাজিতাও আনানের কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বলল,
–“হয়েছে? এবার ঘুমাও৷ এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখলে আমি ঘুমাবো কেমনে! এতজোরে কেউ ধরে!”
–“আমার বউকে আমি যেভাবে খুশি ধরব! যেখানে খুশি ধরব! আমিতো ভেবে রেখেছি যে আজ রাতে তোমাকে ঘুমাতে দিবো না। তুমি আমাকে এতক্ষণ ওয়েট করিয়েছো! তাই আজ শাস্তিতো পেতেই হবে! আর শাস্তিটা কি হতে পারে তাতো তুমি ভালো করেই জানো!”
রাজিতা লজ্জা পাচ্ছে দেখে আনান আবার বলল,
–“তোমার লজ্জা পাওয়া দেখে মনে হচ্ছে যেন, আজকেই আমাদের বিয়ে হয়েছে! স্বামীকে এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে শুনি!”
–“আচ্ছা তুমি যে তখন বলছিলে যে, নিয়ন ভাইয়া আর উনার গার্লফ্রেন্ডকে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য আমার হেল্প দরকার! কেন বলোতো? আমি উনাদের কীভাবে হেল্প করতে পারি?”
আনান রাজিতার মুখটা নিজের দিকে আরো এগিয়ে নিয়ে তারপর কানের কাছে আবার মুখ নিয়ে বলল,
–“যা শোনার পরে শুনবে। এখন অন্যকারো কথা বলবে না। ওকে, শুধু আমি আর তুমি!এখন শুধু আমাদের কথা বলবে!”
তারপর দুজনে ডুব দিল ওদের ভালবাসার সাগরে! যেখান থেকে কেউ হয়তো আর ওদের খুঁজে পাবে না!
রাজিতা আনানের মুখে এটা শুনে অবাক হয়ে গেছে যে, নিয়ন আর ওর গার্লফ্রেন্ড তুবার মধ্যে ব্রেকাপের কারণ নাকি আর কেউ নয়! রাজিতা নিজে! রাজিতার জন্য নিয়ন ওর ছয় বছরের রিলেশনশিপ নষ্ট করে ফেলেছে! আর ও কিনা নিয়নকেই ভুল বুঝছিলো! তারমানে নিয়ন ঠিক! রিমিই ওর সাথে আনানের বিচ্ছেদ ঘটাতে চেয়েছিলো! তার শাস্তি অবশ্য ও অনেকটাই পেয়ে গেছে এই কয়দিনে! কিন্তু নিয়নকে শুধু-শুধু ভুল বুঝেছিলো রাজিতা আর আনান!
নিয়ন আর তুবা ক্লাসমেট ছিলো। কলেজ লাইফ থেকে দুজনের রিলেশন! তারপর দুজনে একই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়, যার ফলে ওদের রিলেশনশিপটা আরো গভীর হতে থাকে৷ তুবার একটা কমপ্লেইন ছিলো যে, নিয়ন কেন তুবাকে ওর পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়না! আর তাছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ন তুবাকে তেমন একটা সময়ও দিতে পারতো না! বাকি ফ্রি সময়টা রাজিতা আর রিমিকে নিয়েই কাটাতো। যা তুবার একদম পছন্দ ছিলো না। নিয়ন রাজিতার এত কেয়ার করে এটা যেন তুবার সহ্য হতো না!
তুবা একদিন রাগের বশে বলেই ফেলে যে, নিয়ন রাজিতার এত কেয়ার করে কারণ ও রাজিতাকেই বিয়ে করবে তাই! আর তুবাকে জাস্ট টাইম পাস করার জন্য রেখেছে! যাতে করে কলেজ আর ভার্সিটিতে সময়টা ভালোমতো কেটে যায়! আর এটাই ছিলো তুবার জীবনে করা সবচেয়ে বড় ভুল!
রাজিতাকে নিয়ন নিজের বোনের মতোই ভালবাসে! এটা ও তুবাকে অনেকবার বুঝিয়েছে যে, ওর কাছে রিমিও যা, রাজিতাও তাই! কিন্তু তারপরেও তুবা যখন ওকে আর রাজিতাকে নিয়ে কটু কথা বলে তখন নিয়ন আর রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারে না। তুবাকে একটা থাপ্পড় দিয়ে কিছু না বলেই ওখান থেকে চলে আসে।
আর তার কিছুদিন পরেই নিয়ন বিদেশে চলে যায়। এরমধ্যে তুবাও আর ওর সাথে যোগাযোগ করেনি! আর নিয়নও যোগাযোগ করেনি! ছোট একটা বিষয় নিয়ে রাগারাগি আর অভিমান দুজনের সম্পর্কটাকে এভাবেই শেষ করে দিয়েছে!
রাজিতা আর আনান সকালে ওর চাচার বাসা থেকে বের হলেও নিয়নকে রাজি করিয়ে এসেছে যে, বিকেলে ওদের সাথে রেস্টুরেন্টে যেন দেখা করে৷ ওর জন্য সারপ্রাইজ আছে! নিয়নও আনান আর রাজিতার কথা ফেলতে পারেনি। তাই রাজি হয়ে গেছে!
তুহিন ওর বোন তুবাকে নিয়ে এসেছে। রিমি, আনান আর রাজিতাও গিয়েছে। নিয়ন শুধু বাদ আছে। রিমিরা এক টেবিলে বসেছে, অন্যদিকে তুহিন আর তুবা একটা টেবিলে বসেছে। নিয়ন আর তুবার দেখা হওয়ার পর দুজনের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য সবার যেন তর সইছে না।
নিয়ন ঢুকেই আনান আর রাজিতাকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু তুবাকে দেখেই ওর মুখের ভাবভঙ্গী পরিবর্তন হয়ে গেলো। ও সোজা তুবাদের টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তুবাও নিয়নকে খেয়াল করলো। আর সাথে-সাথে উঠে দাঁড়ালো। তারপর দুজন একসাথে বলে উঠলো,
–“তুমি?”
ততক্ষণে তুহিন উঠে নিয়নকে বলতে লাগল,
–“আপনি কেন আমার বোনকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন? উত্তর দিন। আমার এর জবাব চাই! আপনি আমার বোনের ভালবাসাকে কেন অপমান করেছিলেন? কেন? তিনটা বছর! ”
তুবা একটা ধমক দিয়ে তুহিনকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
–“তুহিন! এসব কি ধরনের অভদ্রতা! আমরা একটা রেস্টুরেন্টে আছি! আর তুই ওর সাথে এমনভাবে কথা বলতে পারিস না।”
–“আপু তুমি এই ছেলেটার জন্য আমাকে কথা শুনাচ্ছো! যে তোমাকে এতদিন, এত কষ্ট দিলো! তার জন্য তুমি নিজের ভাইকে ধমক দিচ্ছো!”
নিয়ন আনানের দিকে তাকাতেই আনান ইশারায় বুঝিয়ে দিলো যে, ওরাই ওদের ডেকেছে। নিয়ন তখন তুবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“তোমার ভাইকে বলো নি কিছু! এতটা যখন বলেছো, এটাও বলে দিতে যে, আমি তোমার যোগ্য ছিলাম না বলে তুমিই আমার সাথে থাকতে চাওনি! তাহলে বেচারা এত কষ্ট পেতো না!.. আর হ্যাঁ, তুমি! শোনো, কোনোকিছু পুরোপুরি না জেনে কখনো কাউকে ব্লেইম দিতে নেই! এটা খুব বাজে একটা কাজ! আশা করি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছো!”
ওর কথা শুনে তুবা বলল,
–“ওতো ভুল কিছু বলেনি! তুমিইতো আমাকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলে! প্রথমে ক্যাম্পাস থেকে! তারপর দেশ থেকে!আর তারপর আমার জীবন থেকে! একটাবার আমার খোঁজ নেওয়ার ট্রাই করেছো? ছয় বছরের রিলেশন এত সহজে কি করে ভুলে গেলে তুমি! জাস্ট একটা মূহুর্তে তুমি সব তছনছ করে দিলে! তুমি আমাকে বুঝাতে! আমি বুঝতাম! কিন্তু তুমিতো আমাকে ছেড়েই চলে গেলে। কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত দিলে না। কেন এমন করলে?”
নিয়ন একটা চেয়ার টেনে বসতে-বসতে বলল,
–“বুঝাতাম? তোমাকে? আর কতবার বুঝাতাম বলো? একবার, দুইবার, তিনবার? অনেকবার তোমাকে বুঝিয়েছি যে, আমি আর রাজিতা শুধুই ভাইবোন! এছাড়া আমাদের মাঝে আর কোনো সম্পর্ক নেই! কিন্তু তারপরেও যদি তুমি আমার সাথে ওকে সন্দেহ করো,আমি সেটা কি করে মেনে নিতাম বলো! তারপরও তো দেশে অনেক কয়দিন-ই ছিলাম। কই তুমি একবার আমার খোঁজ নিয়েছিলে?”
–“কবে দেশে ফিরেছো? কেমন কাটলো বিদেশের জীবন! ওখানে নিশ্চয়ই কাউকে জুটিয়ে নিয়েছিলে টাইম পাস করার জন্য!”
–“তুমি কি বদলাবে না কখনো? ভালবাসার মানুষ কোনো জামা-কাপড় নয় যে, ইচ্ছেমতো বদলিয়ে ফেললাম! তোমার কি খবর? বিয়ে করেছো? হাজব্যান্ড কি করে?”
–“আমাকে তোমার কি মনে হয়? তুমি চলে গেলে আর আমি হাসতে-হাসতে অন্য একজনকে বিয়ে করে নিলাম! বিয়ে করলেই কি ভালবাসা হয়ে যায় বলো?”
–“তা কার অপেক্ষায় দিন গুনছো? কেউ আছে নাকি স্পেশাল! ”
ঠিক তখন পাশ থেকে রাজিতা উঠে এসে তুবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমি কি আপনাকে ভাবি ডাকতে পারি? নিয়ন ভাইয়ার বউকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো। যদিও আরো অনেক ইচ্ছে ছিলো, তবে আপাতত এটাই পূরণ করতে চাই।”
তখন তুবা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
–“রাজিতা? তাইনা? সরি! আমি তোমাকে নিয়ে শুধু-শুধু সন্দেহ করেছিলাম। আসলেই সন্দেহ মানুষের বিশ্বাসকে মূহুর্তের মধ্যে গুড়িয়ে দেয়! আর আমরা বোকা মানুষ সেটা বুঝতেও পারিনা। নষ্ট করে ফেলি তিলে-তিলে গড়ে তোলা সম্পর্ক গুলো! তোমার ভাই তার লাইফে আমার এন্ট্রি দিলে তবেই না তুমি আমাকে ভাবি বলবে!”
পাশ থেকে আনান বলল,
–“আমার মনে হয়না নিয়ন ভাইয়ার কোনো আপত্তি থাকতে পারে। সো, ডিসিশনটা আপনার!…..ওহ! আমি আনান, আপনার এই ননদিনীর… বুঝতেই পারছেন! আর বলতে হবেনা!”
নিয়ন আনান আর রাজিতাকে ধমক দিয়ে বলল,
–“রাজি! আনান! তোরা এসব কি শুরু করলি লোকজনের সামনে! আর তুবার সাথে তোর কি করে যোগাযোগ হলো রাজি? আর রিমি এখানে কি করছে? ওকে এখানে কে ডেকেছে?”
রিমি এতক্ষণ তুহিনের সাথে কথা বলছিলো। রিমি যাই বলে যাচ্ছে তুহিন চুপ করে শুনে যাচ্ছে। একটা কথাও বলছে না। কিইবা বলবে! ওর ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হলো! এখানে নিয়ন আর তুবার মাঝে শুধু একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিলো। কেউতো কাউকে ধোঁকা দেয়নি! তারমানে রিমির সাথে ও অন্যায় করেছে! অনেক বড় অন্যায়!
রাজিতা তখন নিয়ন আর তুবাকে তুহিন আর রিমির ব্যাপারে সবটা জানালো। নিয়ন ভীষণ রেগে গিয়ে তুহিনকে বলল,
–“তুমি সত্যটা না জেনে এতবড় একটা সিদ্ধান্ত কি করে নিলে! ভালবাসাটা কোনো খেলা নয়। সেটা বোঝার বয়স যে তোমার হয়নি তা কিন্তু নয়! তুমিতো শিক্ষিত একটা ছেলে, বুদ্ধিমান! তাহলে এমন একটা কাজ করার আগে দুবার ভাবলে না! ”
তুহিন মাথাটা নিচু করে রেখেছে৷ তারপর আমতা-আমতা করে বলল,
–“সরি আপু! সরি রিমি! আমি বুঝতে পারিনি এমন একটা বাজে আইডিয়া আমার মাথায় কি করে আসলো। তোমরা আমাকে ক্ষমা করবে কিনা জানিনা, তবে আমি নিজেই হয়তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।”
ওর কথা শুনে রিমি রেগে গিয়ে বলল,
–“ক্ষমা! তুমি ক্ষমার যোগ্যই নও! ক্ষমা চেয়ে তুমি আমাদের ছোট কেন করছো! আমিতো আমার সারাজীবনেও তোমাকে ক্ষমা করতে পারবো না। যে মানুষ ভালবাসার মর্যাদা দিতে জানে না তার কোনো ক্ষমা নেই। আর প্লিজ তুমি আমার সামনে থেকে চলে যাও! আমি আর কখনো তোমার মুখ দেখতে চাইনা।”
নিয়ন উঠে গিয়ে রিমিকে শান্ত করে বলল,
–“প্লিজ রিমি, শান্ত হ! মাথা ঠান্ডা করে তারপর কথা বল। রাগের বশে আমরা সবসময় ভুলভাল কথা বলে থাকি৷ একটু ভেবে দেখ, আসলে তুই কি চাস?”
রিমি শান্ত হয়ে বসলো। তারপর নিয়নকে বলল,
–“ভাইয়া তুমি তুবা আপুকেই বিয়ে করবে! কথা দাও! আনান ভাইয়া আমাদের সবটা জানিয়েছে, তুমি তুবা আপুকে কতটা ভালবাসো।”
তারপর রিমি তুবাকে লক্ষ্য করে বলল,
–“তুবা আপু, আপনি আমার ভাইটাকে গ্রহণ করবেনতো? আমার ভাইটা কিন্তু আপনার ভাইয়ের মতো কোনো অভিনেতা নয়! তাহলেতো আপনাকে তিন বছর আগেই কোনোভাবে না কোনোভাবে মানিয়ে নিতো! সে একজন খাঁটি মানুষ! ”
তুবা মুখে একরাশ হাসি নিয়ে বলল,
–“আমিতো তোমার ভাইকে ক্ষমা করে দিবো। কিন্তু আমার ভাই? তুমি তাকে ক্ষমা করবে না? সেও কিন্তু অতটা খারাপ নয়!”
রিমি তখন তুবাকে বলল,
–“সেইম ভুল আমি আর করতে চাইনা। জানি আমার কষ্ট হবে, তবুও আমার ডিসিশন নেওয়া শেষ! আপনি ভাইয়াকে তাড়াতাড়ি-ই বিয়ে করে নিন। তবে আমি আর তুহিনের সাথে আমার জীবনটাকে জড়াতে চাইনা। ও আপনাকে ভীষণ ভালবাসে! দেখা যাবে যে, ভাইয়ার সাথে আপনার কোনো ঝামেলা হলেই তার জের আমার উপর দিয়ে তুলবে!”
তুহিন পাশ থেকে বলে উঠল,
–“আমি কথা দিচ্ছি, আর এমনটা করবো না। প্লিজ রিমি, আমাকে ক্ষমা করে দাও? জাস্ট একটা সুযোগ দাও আমাকে! আমি তোমাকে নিরাশ করবো না। তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই চলব, প্লিজ। আমাকে ছেড়ে যেওনা!”
রিমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
–“কিছু ভুলের ক্ষমা হয়না তুহিন। আর আমি কোন মুখে তোমার সাথে থাকবো? তুমিতো আমাকে কখনো ভালই বাসোনি!…. তবে হ্যাঁ, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি। তবে আমার বাকি জীবনটা আমি তোমার সাথে কাটাতে পারবো না তুহিন! সরি…”
কথাগুলো বলেই রিমি কান্না করতে-করতে ওখান থেকে চলে গেলো। কিছু গল্প অপূর্ণতার মাঝেই পূর্ণতা খুঁজে পায়!
রিমির চলে যাওয়া দেখে আনান রাজিতার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
–“তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে নাতো? কথা দাও, আমাদের মাঝে যাই হয়ে যাক না কেন! যত ভুল বুঝাবুঝিই হোক না কেন! তুমি কখনো আমায় ছেড়ে যাবে না!”
রাজিতা আনানের হাতের উপর আরেক হাত রেখে হাসতে-হাসতে বলল,
–“বুদ্ধু! আমাদের মাঝে ছেড়ে যাওয়া নামে কোনো অপশন নেই! আমাদের দুজনের মাঝে শুধু একটাই অপশন আছে, থাকবে! আর সেটা হচ্ছে, সারাজীবন একসাথে থাকা।”
–“তোমার একটা নিকনেম দেওয়া উচিৎ। কি বলো? কি নাম দেওয়া যায়! রাজিতো অনেকেই ডাকে! এমন কোনো নাম দিবো যা শুধু আমিই ডাকবো!….’রাজ্য’ এই নামটাই তোমার জন্য ঠিক আছে। তুমি আমার রাজ্য….”
নামটা শুনেই রাজিতা আর আনান প্রাণখুলে হাসতে থাকে। যে হাসির সৌন্দর্য যে কেউ দেখলে মুগ্ধ হয়ে যাবে! তুহিন দাঁড়িয়ে রিমির চলে যাওয়া দেখছে। নিয়ন আর তুবা যেন চোখে-চোখে কথা বলে এতদিনের জমিয়ে রাখা অভিমানের জানান দিচ্ছে…..জীবনটা থেমে থাকবে না। হয়তো ওদের জীবনে আবার নেমে আসবে কালো কোনো আধার! আবার সেগুলো দূর হয়ে ফুটে উঠবে সুখের সূর্য! যা সব অমানিশা দূর করে ওদের জীবনটাকে ভরিয়ে দেবে আনন্দ ও খুশিতে!
সমাপ্ত…..
(গল্পটা শেষ করে দিলাম! জানিনা আপনাদের কেমন লেগেছে! আপনাদের ভালবাসা ছিলো জন্যই আমি হয়তো এতগুলো পর্ব লিখতে পারলাম। যারা পুরো গল্পটা পড়েছেন, সব মিলিয়ে কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না।)