#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৪১
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_____________
দুইদিন পর থেকে শুরু ~
“ এইটা কি? ” ভ্রুযুগল কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়ল বর্ষা।
‘ আইসক্রিম দেখতে পাচ্ছিস না? ’ অভ্র বলল।
বর্ষা খানিক রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল, ‘ তোমার হাতে যে ওটা আইসক্রিম সেটা আমি দেখতেই পাচ্ছি। আমি জিজ্ঞেস করেছি হাফ খাওয়া আইসক্রিম আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছো কেন? ’
অভ্র বর্ষার সামনে চেয়ার টেনে বসে পরল কিয়ৎক্ষণ পর বলল, ‘ কিছুক্ষণ আগে শুনিসনি দাদু কি বলল? ‘
‘ কি বলছে? ‘
অভ্র নিঃশ্বাস ফেলে বর্ষার কপালে দুই আঙুল দিয়ে টোকা দিলো। বর্ষা অস্ফুটস্বরে মুখ দিয়ে উচ্চারণ করল, ‘ আউচ’
পরক্ষণে অভ্র বলল, ‘ ভুলে গেছিস? কিছুক্ষণ আগে দাদু যে দাদার হাফ খাওয়া প্লেটে ভাত খাচ্ছিল তখন না তুই প্রশ্ন করেছিলি? দাদার খাওয়া টা কেনো খাচ্ছো? ‘
‘ হ্যাঁ করেছিলাম তো? ‘ চোখ জোড়া ছোটছোট করে তাকালো অভ্রর দিকে বর্ষা।
অভ্র কিছুটা নড়েচড়ে বসে আবারও বলল, ‘ তখন দাদু কি বলেছিলো? বলেছিলো তো, স্বামীর খাওয়া বা এ্যাঁটো’টা খেলে ভালোবাসা বাড়ে। ‘
‘ হ্যাঁ বলেছিলো তো? ‘
‘ তাই তুই এখন আমার খাওয়া আইসক্রিম খাবি তাহলে আমাদের ও ভালোবাসা বাড়বে। ’ অভ্র বলল।
বর্ষা অভ্রর কথা শুনে হা রয়ে গেলো। এক নজর আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘ ইয়াক ছিহহ। ‘
‘ ছিহ কি? আমি হলে তো ঠিকই খেতাম। তুই কেন খাবি না? ‘ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো অভ্র।
‘ কারণ তোমার ভালোবাসা বেশি। আমার কম তাই খাবো না। ‘
বলে উঠে দাঁড়ালো বর্ষা। অভ্র তার হাত ধরে নিজেও উঠে দাঁড়ালো পরক্ষণে তীরতীর করে বলতে লাগল, ‘ তাই তো তুই খাবি যাতে ভালোবাসা বাড়ে। ‘
‘ কিছুতেই না। অন্য কিছু হলে আমি খেতাম। কিন্তু আইসক্রিম? একটুও না সম্ভব-ই না। ‘
‘ কিন্তু কেনো? ‘ বাঁকা চোখে তাকিয়ে।
‘ কারণ তুমি এটায় ঠোঁট জিহবা দিয়ে খেয়েছো তাই। আমার ঘৃণ করে। ‘
‘ মানে? ‘
‘ তোমার মাথা মন্ডু ‘
বলে ছুটে পালালো বর্ষা অভ্রর সামনে থেকে। ওর যাওয়ার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আইসক্রিম খেয়ে যাচ্ছে অভ্র।
___________
দৌঁড় দিতে গিয়ে মাথা ঘুরে যায় বর্ষার। মাথায় হাত দিয়ে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে। গত কাল হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরেছে পুরোপুরি তেমন সুস্থ হয়নি৷ হুট করে দৌঁড় দেওয়ায় মাথা ঘুরে যায়। পেছন থেকে পুরুষালি শক্তপোক্ত দুই হাত বর্ষাকে কভার করে নিলো পাঁজাকোলে তুলে সে হাঁটতে লাগে। বর্ষা তার মুখটার দিকে তাকিয়ে পরক্ষণে দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। সে বর্ষার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, ‘ পরিপূর্ণ সুস্থ হওনি লক্ষী বউ। এভাবে ছোটাছুটি করলে কি চলবে? ‘
বর্ষা প্রত্যত্তরে কিছুই বলছে না। বউ কথাটি শুনে তার মুখ লাল হয়ে গেছে লজ্জায়। অভ্র বর্ষাকে নিয়ে সোজা বর্ষার রুমে চলে যায়। বিছানায় আধশোয়া করে বসিয়ে দেয়। অভ্র বর্ষার সামনে থেকে চলে যেতে নিলে বর্ষা বিছানা থেকে নামে। অভ্রকে বিস্মিত বরফের মতো করে দেওয়ার জন্য বর্ষার একটি কান্ডই যথেষ্ট হলো। দরজার সামনে আসতেই পেছন থেকে বর্ষা ওর দুই হাত দিয়ে অভ্র কে আঁকড়ে ধরল। বর্ষা হুট করে তাকে জড়িয়ে ধরবে সে ভাবেনি। বিস্মিত দাঁড়িয়ে রয় সে পেছন থেকে বর্ষা ফিসফিসে আওয়াজে বলতে লাগল, ‘ ভালোবাসি খুব ভালোবাসি। আমার থেকেও বেশি আমি তোমাকে ভালোবাসি। সেখানে একটা আইসক্রিম আমার ভালোবাসা বাড়াতে বা কমাতে পারবে না। ভালোবাসি কারণ জানি না, জানি শুধু ভালোবাসি। আর আমার ভালোবাসা দিনদিন তোমার প্রতি শুধু বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেথায় এক আইসক্রিম ফাটল ধরাতে পারবে না। ‘
অভ্র মুচকি হেসে বর্ষার হাত দু’টো ছাড়িয়ে বর্ষাকে তার সামনে দাঁড় করালো। বর্ষার কপালে অভ্র তার অষ্টজোড়া ছুঁইয়ে দিলো। বর্ষা সাথে সাথে চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলো।
কারো পায়ের আওয়াজ শুনে অভ্র বর্ষার সামনে থেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো পরক্ষণে বিদায় নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রুমের দিকে আসছে বর্ষার ছোট চাচা। অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় ভাস্তি’টাকে দেখতে আসতে পারেনি। আজ তারাতাড়ি বাড়ি ফিরেছেন তাই এখন দেখতে এসেছে। কিছুক্ষণ বসে কথাবার্তা বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায়।
মিনিট খানেক স্থির বসে রয় বর্ষা। পানি পিপাসা লাগায় বিছানা থেকে নিচে নামে। বিছানা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত টি-টেবিলের উপর এক পানির জগ ও গ্লাস রাখা রয়েছে। সেথায় অবস্থান করে বর্ষা। জগ থেকে পানি গ্লাসে ঢেলে পাশেই সিঙ্গেল সোফার উপর বসল। পানির গ্লাসে ঠোঁট জোড়া লাগিয়ে চুমুক দিতেই চোখ গিয়ে আঁটকে পরল খাটের নিচে এক কোণায় ফ্লোরে।
ভ্রুযুগল কুঁচকে কিয়ৎক্ষণ সন্ধিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে গ্লাসটা তার আগের জায়গায় রেখে উঠে দাঁড়ালো। হেঁটে গিয়ে বিছানার উপর একহাত রেখে হাঁটু গেঁড়ে ফ্লোরে বসলো। অন্য হাত দিয়ে ফ্লোরে পরে থাকা জিনিসটা হাতে তুলে নিলো। একটা ওয়ালেট, ওটা দেখে চিনতে দেরি হয়না বর্ষার। ওয়ালেট টা কার? কেননা এই ওয়ালেট সে অধিকাংশ সময় অভ্রর হাতে দেখেছে। ওয়ালেট হাতে বিছানার উপর বসল। পারমিশন ছাড়া কারো পার্সোনাল জিনিসে হাত দেওয়া উচিত নয়। তবুও বর্ষা ওয়ালেট টা খুললো। খোলার সঙ্গে সঙ্গে স্মিত বসে রয়। চোখ জোড়া ওয়ালেটে একটা মেয়ের ছবিতে গিয়ে বাঁধা পরল। এক মেয়ের শুভ্র সাদা শাড়ী পরা একটা ছবি। মুখে তার অমায়িক হাসি। এক কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে গালে হাত দিয়ে বসে আছে, দুই গালে ল্যাপ্টে রয়েছে রাজ্য জয়ের হাসি।
ছবিটা দেখতেই বিস্ময়ে ডুবে যায় বর্ষা। ছবিটা তার আজ থেকে দুই বছর আগের। সেই দিন ছিলো তার জন্মদিন বন্ধু বান্ধবীরা সকলে মিলে বার্থডে সেলেব্রেট করেছিলো সেখানে। তখনকার ছবি অভ্র কোথায় পেলো?
ভাবতে ভাবতে বর্ষার মাথায় এক পোকা কামড় বসালো তখন তার আরও একজনকে মনে পরলো যে সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলো সে আর কেউ নয় তিন্নি। বর্ষার আর বুঝতে দেরি হয় না। ছবিটা অভ্র তিন্নির কাছ থেকে নিয়েছে।
ওয়ালেট বিছানার উপর রেখে বাথরুমে চলে যায়। তখনই রুমে প্রবেশ করে অভ্র। রুমে যাওয়ার পর ওয়ালেট খুঁজে না পেয়ে আবারও এসেছে দেখতে কোথাও পরেছে। নিচে সব জায়গায় খুঁজেও পায়নি দ্বিধায় বর্ষার রুমে এসেছে। রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলো বিছানার উপর রাখা আছে। রুমে কোথাও বর্ষাকে না দেখতে পেয়ে ভেবে নেয় সে ওয়াশরুমে গেছে। তাই চটজলদি রুম থেকে বের হয়ে যায়।
______________________________
.
.
.
আর মাত্র তিনদিন পর আহিতা ও মুরাদের বিয়ে। দুইদিন বাদ গায়ে হলুদ। বিয়ে বলে কথা সকলের ব্যস্ততা প্রচুর। আদরের বান্ধবীর বিয়ে বলে তার সঙ্গীদের ও সখ আহ্লাদ কম নয়।
#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৪২
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_____________
“ ওই ছেড়ি ওই উঠছিস না কেন এখনো? সকাল নয়টা বেজে গেছে। সারারাত কি চুরি করছিস নাকি? তারাতাড়ি উঠতে বলছি লেট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু? ‘
কানের কাছে দাঁড়িয়ে লাগাতার চেচিয়ে যাচ্ছে সুমাইয়া (বর্ষার খালাতো বড় বোন) ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে বর্ষা বলল, ‘ ডাকতাছো কেন? যাও তো আমি ঘুমাবো। ‘
সুমাইয়া সুলতানা মায়া নাছোরবান্দা বর্ষার দুইহাত ধরে টেনে তুলে বিছানার উপর বসালো। বর্ষা ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে আবারও বিছানায় শুয়ে পরলো। সুমাইয়া বিরক্ত হয়ে রুমের ফ্যান অফ করে দেয়। দুই পাশের জানালা দুটোরই পর্দা সরিয়ে দিলো। বাহিরের রোদের তাপ রুমে প্রবেশ করছে এদিকে ফ্যানটাও বন্ধ। গরমের জন্য ঘামে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তবুও ছেঁচড়া মেয়ে চোখ খুলছে না৷ সুমাইয়া অনেক ডাকা ডাকি করার পরও বর্ষার ঘুম ভাঙলো না। আর ভাঙবেই কিভাবে? কথায় বলে না, যে ঘুমিয়ে থাকে তাকে জাগানো যায় কিন্তু যে জেগে থেকে ঘুমের ভান ধরে তাকে জাগানো সহজ কথা নয়।
বর্ষা ইচ্ছে করেই উঠছে না কেননা আজ সে তার বোনের সাথে গেলে তার হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যাথা হয়ে যাবে। তাছাড়া যা কিপ্টা মরে গেলেও কিচ্ছু খাওয়াবে না।
আলসেমি ঝেড়ে এক চোখ হালকা পিটপিট করে খুলে চারদিকে তাকালো। রুমে কাউকে দেখতে না পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে সুইচের কাছে চলে গেলো। ফ্যানের সুইচ অন করতে যাবে তখনই পেছন থেকে কে জেনো বর্ষাকে জড়িয়ে ধরলো। বর্ষা হতবিহ্বল হয়ে চেঁচাতে শুরু করল, ‘ এই কে কে? ‘
বর্ষা পেছনে ঘুরে তাকালো সুমাইয়া বর্ষার দিকে তাকিয়ে আহতকন্ঠে বলল,’ প্লিজ চল’না! আজ চার বছর পর বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাবো। এসএসসি পরীক্ষার পর আর কার সাথে দেখা হয়নি।
তুই সাথে চল প্লিজ মা বলছে একাডেমির ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিতে। আমি সে বাহানা দিয়েই যাচ্ছি। তাছাড়া আজ একাডেমি তে বড় উৎসব হচ্ছে অনেক কিছু উঠেছে চল না প্লিজ। ‘
বর্ষা এক ধ্যানে সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তখনই রুমে প্রবেশ করলো সুমাইয়ার একমাত্র সাপোর্টার বর্ষার আম্মু। রুমে এসেই বর্ষার চুলে ও মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ যা না মা, বড় বোন এত করে বলছে যা। ‘
ইচ্ছে না থাকলেও যেতে রাজি হলো বর্ষা। সুমাইয়া বলল, ‘ আন্টির একটা শাড়ি পর। ‘
বর্ষা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ শাড়ি কেন? ‘
‘ আমরা মেয়েরা সবাই শাড়ি পরে যাবো তাই তুই বাদ থাকবি কেন? ‘ সুমাইয়া বলল।
বর্ষা সে তার মা’র একটা কটন শাড়ি এনে পরে রেডি হলো। সুমাইয়া বর্ষার হাত ধরে টেনে রুম থেকে তারাহুরো করে বেরিয়ে গেলো। গেইটের সামনে যেতে সুমাইয়ার টানাটানির জন্য ভুল জুতা পরে ফেলে বর্ষা। সে তার জুতার বদলে মনোয়ারা বেগম অর্থাৎ বর্ষা সে তার দাদির জুতা পরে বেরিয়ে যায়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সায় উঠে বসলো দু’জনে। বর্ষা বিরক্তিতে কপালের চামড়া ভাজ ফেলে হাত কচলাচ্ছে। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সুমাইয়ার সে তার মতো ফোন স্ক্রল করছে।
একাডেমি তিন নাম্বার গেইটের সামনে এসে রিক্সা থেকে দু’জনে নামলো। ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে ঢুকলো। কথা মতো সবার আগে ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে আসলো সুমাইয়া। তারপর দু’জনে ভেতরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো৷ যত এগিয়ে যাচ্ছে তত জেনো মানুষের কোলাহল দ্বিগুণ বাড়ছে। সকলে রঙ বেরঙের শাড়ি থ্রিপিস পরে এসেছে ছেলেরা বেশির ভাগ পাঞ্জাবি পরা।
কিছুদূর সামনে যেতেই এক পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসলো সে উচ্চস্বরে বলল, ‘ ওই সুমাইয়া? ‘
মানুষের কোলাহলের কারণে প্রথম কয়েকবার ডাক কারো কান অব্ধি আসেনি। ছেলেটা দৌঁড়ে সুমাইয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে শানিত কন্ঠে বলল, ‘ কতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না নাকি? ‘
‘ সরি রে! শুনতে পাইনি। ‘ করুন কন্ঠে বলল সুমাইয়া।
ছেলেটার নজর হঠাৎ করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বর্ষার উপর পরলো। বাঁকা চোখে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে থেকে সুমাইয়ার হাত ধরে টেনে কিছুটা দূরে নিয়ে গেলো। বর্ষা আঁড়চোখে তাদের দুজনের দিকে একবার তাকায়।
ছেলেটা বিড়বিড় করে বলল, ‘ এইটা তোর বোন না? যার ছবি তুই তোর আইডিতে আপলোড করে ছিলি? ‘
সুমাইয়া মৃদু হেসে বলল, ‘ হুম! ‘
ছেলেটা সুমাইয়ার কাঁধের উপর হাত রেখে বলল, ‘ লাইন করিয়ে দে না দোস্ত। এতবছর ধরে এখনো সিঙ্গেল। বদলে যা খেতে চাইবি সব খাওয়াবো। ‘
সুমাইয়া রুবেলের হাত কাঁধের উপর থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল, ‘ পাগল হইছিস? ওকে একথা বললে ও বাড়িতে গিয়ে বলে দিবে। তুই যা তো যেখানে যাচ্ছিলি। বাই দ্য ওয়ে বাকিরা কোই? ‘
মনমরা হয়ে রুবেল বলল, ‘ ওই দিকে সোজা যেতে থাক। ‘
সুমাইয়া বর্ষার পাশে এসে বলল, ‘ চল সবাই ওইদিকে আছে। ‘
বর্ষা সুমাইয়ার উদ্দেশ্য বলল, ‘ ওইদিকে নিয়ে কি বললো? ‘
সুমাইয়া মুখ ফসকে বলে ফেললো, ‘ তোর সাথে লাইন করিয়ে দিতে বলছে। ‘
বর্ষা চোখজোড়া ছোট ছোট করে সুমাইয়ার দিকে তাকালো। সুমাইয়া জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘ সিরিয়াসলি নিস না প্লিজ। ‘
কিছুক্ষণ হাঁটার পর সবাইকে পেয়ে যায় ওদের। সুমাইয়া দৌঁড়ে গিয়ে তার মেয়ে ফ্রেন্ড গুলোকে জড়িয়ে ধরে। সকলে বর্ষার দিকে তাকালে সুমাইয়া তার সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে একটা ছেলে আছে কিছুটা মোটু নাম রিয়াদ সে বর্ষার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে। বর্ষা তাকালেই সে লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলছে। আশ্চর্য হচ্ছে বর্ষা তার বোনের সব বন্ধু গুলা কি একরকম নাকি? এর আগের রুবেলের কথাগুলো বর্ষা শুনেছে না শোনার মতো ভান ধরে দাঁড়িয়ে ছিল।
এখানে আরও কয়েকজন নেই তারা অন্য দিকে গিয়েছে তাদের খুঁজতে সবাই আবারও একসাথে হাঁটতে শুরু করলো। একাডেমির বড়বড় গজারি গাছপালার নিচ দিয়ে হাঁটছে সবাই। সুমাইয়া সে তো বর্ষাকে ভুলেই গেছে। সে তার মতো বান্ধবীদের সাথে গল্প করছে। আরও একটু এগিয়ে যেতে দেখা মিললো বাকিদের। সেখানে কয়েকজন ছেলে ও মেয়েরা একটা শপে দাঁড়িয়ে রয়েছে মেয়েরা চুরি দেখছে ছেলেগুলো পাশে দাঁড়িয়ে ফাজলামি করছে। সুমাইয়া ও সবাই সেখানে যেতেই জেনো বন্ধু বান্ধবীদের মাঝে হৈ হুল্লোড় শুরু হয়ে গেলো।
আগের ন্যায় বর্ষার সাথে বাকিদের এবারও পরিচয় করিয়ে দিলো। সকলে মিলে অপরদিকে হাঁটতে শুরু করলো। গজারি বনে, গজারি গাছ গুলোর মধ্য দিয়ে এক সরু রাস্তা। রাস্তার পাশেই মানুষদের বসার জন্য এক একটা রুমের মতো ঘর তৈরি করে রাখা রয়েছে। যার কোনো দরজা জানালা নাই শুধু রয়েছে মাটির টিনের চাল।
বর্ষা কিছুটা ফ্রি হয়ে সকলের সাথে কথা বার্তা বলছে৷ সুমাইয়া আপুর বন্ধু বান্ধবী গুলো সবাই খুব ভালো তারা ফ্রেন্ডলি কথা বলছে বর্ষা সাথে। অনেকটা ভেতরে চলে আসে সকলে। এদিকে সব বয়সের মানুষ হাঁটা চলা করছে। বর্ষা ঘন গজারি গাছের জঙ্গলের দিকে তাকালে দেখলো তিন থেকে চারটা শেয়াল খোলা মাঠ দিয়ে দৌঁড়ে যাচ্ছে। বর্ষা শেয়াল গুলো দেখার জন্য দাঁড়িয়ে পরল। পেছন থেকে ফিসফিসে আওয়াজে রিয়াদ বলল, ‘ শেয়ালে ভয় পাও না? ‘
বর্ষা চট করে পেছনে তাকালো। বর্ষা খেয়াল করলো রিয়াদ তার থেকে শুধু কিছু টা দূরে অবস্থান করছে। বর্ষা কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো। রিয়াদ দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল, ‘ আমি কিন্তু উত্তর টা এখনো পেলাম না। ‘
বর্ষা চোখ জোড়া কুঁচকে তেজি কন্ঠে বলল, ‘ না! ভয় পাই নাই। হইছে? ‘
রিয়াদ প্রত্যত্তরে কোনো কিছু না বলে হেসে ফেললো। বর্ষা পেছনে তাকিয়ে দেখলো সুমাইয়া ও বাকিরা অনেকটা এগিয়ে গেছে। আবারও পেছনে তাকালে দেখলো রিয়াদ নেই। বর্ষা শুকনো ঢোক গিলে দৌঁড় দিলো। কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকায় কিছুটা যেতেই জুতা ছিঁড়ে গেলো। কাঁদো কাঁদো ফেস বানিয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো সে। ছিঁড়া জুতা পরে আর কতদূর যাবে পা হিঁচড়ে। সুমাইয়া কি জেনো চিন্তা করে পেছনে ঘুরলো। বহুদূরে বর্ষাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে সুমাইয়া এগিয়ে গেলো। বর্ষার দুই চোখে পানি ছলছল করছে। সুমাইয়া সরু কন্ঠে জানতে চাইলো, ‘ কি হয়েছে? ‘
বর্ষা শাড়ি কিছুটা উঁচু তে তুললো জুতা একটা দেখিয়ে বললো, ‘ জুতা ছিঁড়ে গেছে। ‘
সুমাইয়া বুঝতে পারলো তার বোন ছিট কাঁদুনি এখুনি কেঁদে ফেলবে তাই সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ‘ কান্না করিস না কত মানুষ দেখছিস কি বলবে সবাই? চল আমরা বাসায় ফিরে যাই। ‘
এতক্ষণে বাকিরাও ওদের কাছে চলে আসে। তন্বী আপু জিজ্ঞেস করল, ‘ কি হয়েছে মায়া? ‘
সুমাইয়া আপু ফোঁস করে বলে উঠলো, ‘ জুতা ছিঁড়ে গেছে ওর। ‘
বর্ষা লজ্জা পেয়ে যায়। শুধু মেয়েরা থাকলে ঠিক ছিল কিন্তু সিনিয়র বড় ভাইয়া রাও তো আছেন ওদের সাথে। লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। মনে মনে নিজেকে কষতে লাগলো, ‘ কোন পাগলে ধরছিলো? যার জন্য অন্ধের মতো নিজের জুতা না পরে দাদীর জুতা পরে আসছি। আজ নিজের জুতা পরে আসলে হয়তো এমন দূর্ভোগে পরতো হতো না আমাকে। ‘
মনে মনে বলতে লাগলো। তাদের মধ্যে অন্য রকম ছিল তোমাল ভাইয়া। শুরু থেকে এই পর্যন্ত বর্ষার সাথে আগ বাড়িয়ে একটাও কথা বলেনি। কিন্তু যখন শুনলো জুতা ছিঁড়ে গেছে। সে মাথা নিচু করে সবার সামনে থেকে চলে যেতে লাগল। সুমাইয়া সবার উদ্দেশ্য বলল, ‘ আমরা এখন যাই। ‘
তোমাল ভাইয়া দূর থেকে চেচিয়ে বলল, ‘ কোণ্থাও যাবি না। কেন্টিনে যা সবাই মিলে আমি ওখানেই আসছি। ‘
তার কথা মতো সকলে কেন্টিনের দিকে রওনা হলো। এদিকে বর্ষা জুতার সাথে পা লাগিয়ে মাটি হিঁচড়ে হাঁটছে। ইচ্ছে করছে তার মাটির মধ্যে ঢুকে যেতে। সুমাইয়া কানের কাছে বিড়বিড় করে বলল, ‘ বেশি সমস্যা হলে জুতা খুলে ফেলে দে। খালি পায়ে হাঁট! দেখলি তো যেতে বারন করে দিল। ‘
বর্ষা কাঁদো কাঁদো ফেস বানিয়ে সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল, ‘ আজ কি একুশে ফেব্রুয়ারি যে আমি খালি পায়ে হাঁটবো? ‘
প্রতিত্তোরে খুব হাসি পেলেও হাসি চেপে রাখে সুমাইয়া। এরইমধ্যে রিয়াদ ও রুবেল কোথা থেকে জেনো এসে উদয় হয়। বর্ষা ধীর পায়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে কেননা তার জুতা ছিঁড়া। সেজন্য সকলের পিছনে পরে গেছে বাকিরা সবাই অনেকটা এগিয়ে গেছে। রিয়াদ ও রুবেল দৌঁড়ে বর্ষার কাছে আসলো। দুজনে দুইপাশ দিয়ে হাঁটছে আর নানান কথা জিজ্ঞেস করছে। এমনিতে জুতা ছিঁড়ে গেছে মাথা গরম অন্য দিকে দু’জন এক সাথে দুই পাশ দিয়ে বকবক করে মাথা খেয়ে ফেলছে।
কোনোমতে কষ্ট করে কেন্টিনের সামনে আসলো। সবাই কেন্টিনের ভেতরে চলে গেছে অলরেডি। বর্ষা এতদূর লেংড়া মানুষের মতো পা হিঁচড়ে এসে হাঁপিয়ে উঠেছে। ভেতরে যাওয়ার মতো শক্তি নেই আর তার মধ্যে। কেন্টিনের সামনে গাধা ফুলের গার্ডেন করা তার সামনে দুইজন বসতে পারবে একটা বেঞ্চ রয়েছে। বর্ষা সেখানে বসে রেস্ট নিতে লাগে। রিয়াদ ও রুবেল কেন্টিনের ভেতরে চলে যায়। রিয়াদ যাওয়ার পূর্বে বর্ষার দিকে এক নজর তাকায়।
কিছুক্ষণ পর কেন্টিনের ভেতর থেকে সুমাইয়া আপু বেরিয়ে আসলো। সে এসে বর্ষার পাশে বসলো কাঁধে হাত দিয়ে বলল, ‘ খারাপ লাগছে? ‘
বর্ষা করুন কন্ঠে বলল, ‘ পা ব্যাথা করছে। ‘
সুমাইয়া আপুর হাতে দুইটা মেরিন্ডার বোতল একটা বর্ষার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে খেতে বলল। বর্ষা মেরিন্ডা খায় না তাই খাবে না বলে দেয়। তখন সুমাইয়া বর্ষাকে বিস্মিত করে দিয়ে বলল, ‘ মেরিন্ডা এটা তোর জন্য রিয়াদ ভাইয়া পাঠিয়েছে প্লিজ নে। পরে না হয় আমাকে দিয়ে দিস। ‘
বর্ষা সুমাইয়ার কথা শুনে সামনে কেন্টিনের দিকে তাকালো ভেতর থেকে বাহিরে আসছে রিয়াদ ও রুবেল। একজন আরেকজনের কাঁধের উপর হাত দিয়ে। বর্ষা তার দিকে তাকিয়ে মেরিন্ডা টা হাতে নিলো। এখন সে যদি বোতল টা হাতে না নেয়। তাহলে তারা ভাবতে পারে সুমাইয়ার বোন বেয়াদব বা অহংকারী ভদ্রতা জানে না।
বেঞ্চের উপর থেকে উঠে কেন্টিনের পেছনের দিকটায় গেলো বর্ষা। সেখানে রয়েছে গোলাপ ফুলের বাগান। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুলগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করছে সে। হঠাৎ তার নামে ডাক পরলো। পেছন থেকে বেরিয়ে সামনে আসলো। সুমাইয়া তাকে ডেকে পাশে বসালো। শপিং ব্যাগ থেকে একজোড়া জুতা বের করে বর্ষার পায়ের কাছে রাখলো। বর্ষা জুতা জোড়া দেখে অবাক চোখে সুমাইয়ার দিকে তাকালো। সুমাইয়া মৃদু হেসে বলল, ‘ আমাদের সাথে ছিলো না সুন্দর লম্বা করে একটা ছেলে যে আমাদের ক্যান্টিনে আসতে বলেছে। ‘
বর্ষা উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ হ্যাঁ ‘
সুমাইয়া ক্ষীণকন্ঠে বলল, ‘ তোমাল ভাইয়া তোর জন্য জুতা জোড়া কিনে আনছে। নে এখন ছিঁড়া জুতা খুলে এটা পর। আর সে যখন কেন্টিনের ভেতর থেকে বের হবে তখন আমি বলার সাথে সাথে থ্যাঙ্কিউ জানাবি৷ ‘
বর্ষা হাফ ছেড়ে বাঁচলো ছিঁড়া জুতা খুলে ফেলে দিয়ে নতুন জুতা জোড়া পরে নিলো। কিছুক্ষণ পর তোমাল ভাইয়া ও তার সাথে আরেকজন ছেলে বের হলো। সুমাইয়া ইশারা করতেই বর্ষা তোমালের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে বলল, ‘ থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া। ‘
‘ থ্যাঙ্কিউ জানাতে হবে না। ‘
বলে সে সামনে এগিয়ে গেলো। বর্ষা মাথা নিচু করে মৃদু হাসলো। পাশ থেকে সুমাইয়া বলে উঠল, ‘ তোমাল ভাইয়া হিন্দু না হলে তোর সাথে লাইন করিয়ে দিতাম। ‘
সুমাইয়ার মুখে এমন কথা শুনে মাথা তুলে তার দিকে তাকালো। বর্ষার গলায় জেনো মাছের কাটা বিঁধেছে সুমাইয়ার একথা শোনা মাত্রই।
ভালো জুতা পরে তো আর হাঁটতে অসুবিধা হয় না। তাই মনের সুখে সারাদিন সকলের সাথে হাঁটাহাটি করে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরার জন্য একাডেমির তিন নাম্বার গেইটের সামনে আসলো সুমাইয়া ও বর্ষা৷ রাস্তায় কোনো রিক্সা দেখতে না পেয়ে হতাশাজনক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। পেছন থেকে পুরুষালি কন্ঠে কেউ বলল, ‘ রিক্সা তো নেই। আমাদের সাথে যাবি? ‘
পেছনে ঘুরে তাকিয়ে বর্ষা অবাক হলো সর্বপ্রথম রিয়াদ কে। বর্ষার দিকে তাকিয়ে হেসে যাচ্ছে। পাশে রয়েছে রুবেল তার পাশে তোমাল ভাইয়া এবং তার পাশে আরও দু’জন তাদের নাম জানি না। সুমাইয়া আপু হেসে বলল, ‘ চল গল্প করতে করতে যাওয়া যাক। ‘
বর্ষা সবার সামনে হেঁটে চলেছে বর্ষার দুই পাশে রিয়াদ ও রুবেল। পেছনে কিছুটা দূরত্বে সুমাইয়া তোমাল ভাইয়া ও বাকিরা গল্প করতে করতে আসছে।
বর্ষা ইতিমধ্যে আধপাগল হয়ে গেছে। একপাশে রিয়াদ তো আরেকপাশে রুবেল। দু’জনের বকবক শুনতে শুনতে মাথা ঘুরিয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে শফিপুর বাজারের রাস্তা পাড় হয়ে চলে যায় যমুনার গেইটের সামনে।
ওইদিকে সফিপুর বাজারের রাস্তার সামনে সুমাইয়া ও বাকিরা দাঁড়িয়ে বর্ষা, রিয়াদ ও রুবেল কে খুঁজতে লাগে।
বর্ষা খেয়াল করে সে হাঁটতে হাঁটতে যমুনার গেইটের সামনে চলে আসছে। বিরক্তিতে বলে উঠল, ‘ আপনাদের জন্য এতদূরে চলে আসছি৷ চলুন পেছনে। ‘
দু’জনে প্রথমে সরি বলে আবারও বকবক করা শুরু করলো।
সুমাইয়া ও বাকিদের সামনে আসতেই সুমাইয়া আপু শানিতকন্ঠে বলে উঠল, ‘ সফিপুর বাজার কোনটা ভুলে গেছিস নাকি? ওইদিকে চলে গেছিলি কেন? ‘
বর্ষা রাগী গলায় রিয়াদ ও রুবেল কে আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে বলল, ‘ সব উনাদের দোষ কানের কাছে বকবক করতে করতে আমার মাথা নষ্ট করে ফেলছে। তাই আমি রাস্তা খেয়াল করিনি। ‘
সুমাইয়া ও বাকিরা হাসতে শুরু করে। চলে আসার সময় সবার থেকে বিদায় নেয় সুমাইয়া। বর্ষা দ্বিতীয় বার আবারও তোমাল ভাইয়াকে ‘ ধন্যবাদ ‘ জানায়।
বাড়িতে ফিরে মাগরিবের আজানের সময়।
.
.
.
রাত তখন আটটা বাজে, জুতার আলনায় নতুন জুতা দেখে মনোয়ারা বেগম বললেন, ‘ এই জুতা কার? আর আমার জুতা কোই? ‘
হল রুমে বসে আছে বর্ষা ও বর্ষার আম্মো। বর্ষা চেঁচিয়ে বলল, ‘ জুতা আমার। ‘
মনোয়ারা বেগম হন্তদন্ত হয়ে এসে সোফার উপরে বসে বলল, ‘ জুতা কে কিনা দিছে? ‘
বর্ষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার জুতা ছিঁড়ার মর্মান্তিক ঘটনা টা উপলব্ধি করে তার দাদীর সামনে। সব কিছু শুনে মনোয়ারা বেগম বললেন, ‘ তা আমার জুতা ডা কোই? ‘
বর্ষা ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে সরু কন্ঠে বলল, ‘ তোমার জুতা ছিঁড়া গেছিলে তাই ফালাই দিয়া আসছি। ‘
মনোয়ারা বেগম হা হয়ে গেলেন অস্ফুটস্বরে বললেন, ‘ কিহহ? একাডেমি তে ফালাইয়া থুইয়া আসছিস? ‘
‘ ছিঁড়া জুতা ফালামু না তো কি করমু? ‘ বর্ষা ঠোঁট বাঁকা করে বলল।
‘ হাতে কইরা লইয়া আবি। ‘ মনোয়ারা বেগম বলল।
‘ আমার তো মান সম্মান নাই না? যে ছিঁড়া জুতা হাতে করে নিয়া আসবো? আজব ‘ বলে বর্ষা তাদের দুজনের সামনে থেকে উঠে অন্য পাশে গেলো।
বর্ষার দাদী মনোয়ারা বেগম বর্ষার মা’র দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ হুনছো’নি তোমার মাইয়ার কথা? আমার ভালা জুতা ডা নিয়া ছিঁড়া ফালাইয়া থুইয়া আইছে। ‘
বর্ষা চেঁচিয়ে বলল, ‘ মোটেও ওটা ভালো জুতা ছিলো না। আদা ম’রা একটা জুতা। কিছুক্ষণ হাঁটতেই ধম ত্যাগ করে ম’রে যায়। সকলের সামনে অপদস্ত করে আমাকে। ‘
মনোয়ারা বেগম রাগী গলায় বলল, ‘ এতই যহন খারাপ তাইলে পইরা গেছিলি কেন আমার জুতা? ‘
‘ ভুল হইছে আর জীবনেও পরতাম না তোমার জুতা শয়’তান বুড়ি। ‘
বলে রাগ দেখিয়ে হনহনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো বর্ষা।
চলবে?
]