#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৪৩
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা [লেখিকা]
_____________
ভালোবাসার মানুষটিকে চোখের সামনে এক মিনিটের জন্য না দেখলে জেনো ধম বন্ধ হয়ে আসে। আজ দুদিন ধরে অভ্র লাপাত্তা। যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিল, ‘ অপেক্ষা কোরো খুব তারাতাড়ি ফিরে আসবো। ‘
কোথায় যাচ্ছো, কেনো যাচ্ছো? জানতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যায়নি। শুধু বলেছিলো, ‘ অপেক্ষা কোরো। ‘
অপেক্ষা করতে করতে আজ দু’দিন পূর্ণ হলো। কিন্তু তার না এসেছে কল আর না এসেছে একটা মেসেজ। আমি কিন্তু থেমে থাকিনি। কল দিয়েছি বহু বার ফোন বন্ধ মেসেজ দিয়ে রেখেছি, ‘ মেসেজটা দেখা মাত্রই আমাকে কল করো। ‘
কিন্তু সে মেসেজটা দেখেনি তাই আর কলও করেনি। সারাদিনের ক্লান্তি ভোর করেছে। শরীর ঝিমিয়ে আসছে। চোখের পাতা দু’টো নুইয়ে পড়ছে বোঝাই যাচ্ছে এখন এক গভীর ঘুমের প্রয়োজন। বিছানার সাথে গা এলিয়ে দিয়ে ঘন্টা খানেক গড়াগড়ি করেছি। কিন্তু কোনো এক অজানা চিন্তা গ্রাস করেছে আমাকে, চোখ বন্ধ করলে ঘুম আসছে না।
মিনিট পাঁচেক হবে বারান্দায় এসে বসে আছি। শুধু মাত্র প্রিয় মানুষটির একটা খোঁজ পাওয়ার জন্য মন বেকুল হয়ে উঠেছে, সে কোথায় আছে? কেমন আছে? কি করছে? খেয়েছে কি না? নিজের যত্ন ঠিক মতো নিচ্ছে কি না? কবে ফিরবে? আধোও কোনো সমস্যায় পরেছে কি না? কোথায় চলে যায় মাঝেমধ্যে সকল কন্টাক্ট বন্ধ করে?
মনের মধ্যে তাকে নিয়ে হাজারও প্রশ্ন ছুটাছুটি করছে কিন্তু কোনো প্রশ্নের-ই উত্তর মিলছে না। মনের কোনো ভয়ের আশঙ্কা বাঁধে, তাহলে সে কি আমাকে ঠকাচ্ছে?
শেষ বারের মতো আরও একটি বার তার নাম্বারে ডায়াল করলাম। প্রতিবারের মতো এবারও জবাব আসলো, সরি নাম্বার’টি তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ইচ্ছে করছে এই অন্ধকার রাতে বের হয়ে ছুটে তার কাছে চলে যেতে। কিন্তু কোথায় যাবো? জানি না তো সে কোথায় আছে।
দেয়াল ঘড়িতে টুংটাং শব্দ হলো। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে মোবাইলের স্কিনে সময় দেখলাম। বারোটা বাজে, বারান্দার গ্রিল দিয়ে বাহিরে খানিক তাকিয়ে থেকে রুমে চলে আসলাম।
অস্তিত্ব হচ্ছে খুব কেনো জেনো বুকের বা পাশে হৃৎস্পন্দন খুব জোরে জোরে লাফালাফি করছে৷ মনে হচ্ছে আমার অভ্র ভালো নেই। আল্লাহ না করুক কোনো বিপদ হয়েছে তার। অস্তিত্ব কমানোর জন্য এই মধ্য রাতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম তোয়ালে নিয়ে। দশ মিনিট পর গোসল করে বের হলাম। ভেজা চুলের পানি মুছে কিছুক্ষণ ফ্যানের নিচে বসে চুল শুকাতে লাগলাম। কখন যে বিছানার উপর বসা থেকে শুয়ে ঘুমিয়ে পরেছি। ঠিক বলতে পারবো না।
★
বারান্দার দরজা রাতে খোলা রেখে ছিলাম বৈকি দরজা দিয়ে এক চিলতে রোদ রুমে প্রবেশ করলো। চিনচিন গরম পরেছে ফ্যানের বাতাস ও হার মানবে।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে আসলাম। বাথরুম থেকে বের হতেই চমকে উঠলাম। আমার রুমে বৃষ্টি, রিয়া ও রিমাকে দেখে ওরা রুমে একেক জন একেক জায়গায় বসে আছে। গালের ছিটেফোঁটা পানি তোয়ালে দিয়ে মুছে তোয়ালেটা চেয়ারের উপর রাখলাম। ওদের সামনে যেতেই ফোঁস করে রিয়া বলে উঠল, ‘ তোকে নাকি কোন ছেলে জুতা কিনে দিছে? ‘
আমি তো চরম লেভেলের অবাক হলাম। ওদের দিকে হতবিহ্বল হয়ে তাকালাম। পাশ থেকে বৃষ্টি আমার হাত ধরে ওর সামনে টেনে বসিয়ে বলল,’ ছেলেটা কেমন রে? সুন্দর তো? ”
বৃষ্টির কথা শুনে চোখজোড়া চরক গাছ রসগোল্লার মতো বড় বড় করে ওর দিকে তাকালাম। পাশ থেকে রিমা বৃষ্টির হাতের উপর চিমটি কেটে বলল, ‘ এইসব উল্টা পাল্টা কি প্রশ্ন করছিস? ‘
আমি রিমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালাম। রিমা আমার কাঁধের উপর হাত রেখে বলল, ‘ কাল কি কি হয়েছিল একটু আমাদেরও বল প্লিজ। ‘
আর কি বলতে শুরু করলাম, দশ মিনিট পর আমার বলা মাত্র শেষ হয়েছে আর ওরা একে অপরের উপরে হাসতে হাসতে উপচে পরছে। আমার মাত্রারিতিক্ত রাগ হলো তাই ওদের রুমে রেখেই বারান্দায় চলে আসলাম। আমার পেছন পেছন ওরা তিনজনও আসলো। তিনজন একসাথে আমাকে জড়িয়ে ধরলো রাগ অভিমান নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। সামনে থেকে রিয়া বলল, ‘ ভাবলাম আমরা চারজন আজকে একসাথে একটু নাস্তা করবো। সেজন্য খাবার তোর রুমে নিয়ে আসছি। চল গিয়ে খাই পেটের মধ্যে ইঁদুর ছানা লাফালাফি করছে। ‘
বর্ষা শব্দ করে হেসে ফেললো। চারজনে একসাথে রুমে এসে খেতে শুরু করলো।
বৃষ্টি খেতে খেতেই বর্ষার উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ বর্ষ্যু একটা মজার কথা কি শুনবি? ‘
বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ হুহহ? বল। ‘
বৃষ্টি এক নিঃশ্বাসে বলতে শুরু করল, ‘ তুই তো অভ্র ভাইয়াকে ভালোবাসিস তাহলে তোর আর ভাইয়ার বিয়ে হলে তো তুই আমাদের ভাবি হয়ে যাবি। তাইনা বল? ‘
বৃষ্টির কথায় লজিক আছে কিন্তু আমি স্তব্ধ স্থির ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে অবাক করে দিয়ে রিয়া বলল, ‘ তখন তোকে আমরা কি বলবো বর্ষ্যু আপু নাকি ভাবি? ‘
রিয়ার কথায় জেনো রুমের মধ্যে হাসির ঢোল পরলো। তিনজনের হাসির শব্দ মাইক ফেইল। আমি ওদের উদ্দেশ্য কিছু বলতে যাবো তখন দরজার সামনে থেকে কে জেনো বলল, ‘ কে কার ভাবি হবে? ‘
কথা অনুসরণ করে সকলে দরজার দিকে তাকালাম। একটা খেলনা পিস্তল আমাদের দিকে তাক করে দাঁড়িয়ে আছে আদিল। ধীর পায়ে হেঁটে আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে রসহ্যভেদ করা গোয়েন্দাদের মতো বলল, ‘ কেমন জেনো রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছি। কি চলছে তোমাদের চার জনের পেটের মধ্যে কে কার ভাবি হবে হুহহহ আর ভাই টা কে? তোমরা চারজনে মুখে কুলু পেতে আছো কেন? বলছো না কেন কিছু কি লুকাচ্ছো আমার থেকে? আমি গোয়েন্দা আদিল আমার থেকে লুকানো এত সহজ নয়। মাটির তল থেকে সত্য খুঁজে বের করে আনি। ‘
ওর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকালাম আমরা চারজনে। সিক্সে পড়ুয়া পিচ্কু পোলায় বলে কি না মাটির তল থেকে সত্য বের করে আনে। রাগান্বিত কন্ঠে ধমক দিয়ে বললাম, ‘ তুই তোর আলতো ফালতু কথা নিয়ে আমার রুম থেকে যাবি নাকি দিবো ডাক নাহিদ ভাইয়াকে? ‘
আদিল এই বাড়ির মধ্যে যমের থেকেও যদি বেশি কাউকে ভয় পায় তাহলে সে হচ্ছে নাহিদ ভাইয়া। ইতস্তত হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় আদিল বলল, ‘ বোইন আমার হাত পা দুটো আল্লাহ ছোলামতে রেখেছেন। আমি একাই যেতে পারি কাউকে এসে আমাকে নিয়ে যেতে হবে না। আর রইলো কথা রহস্য ভেদের তো দেখিস, আমি এই আমি গোয়েন্দা আদিল একদিন ঠিকই তোমাদের চারজনের পেটে পেটে যে শয়তানি কু বুদ্ধি গুনা রয়েছে প্রমাণ সহ হাতে নাতে বের করে আনবো। ‘
বিছানা থেকে লামিয়ে নামলাম তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললাম, ‘ তবে রে আজকে হচ্ছে তোর। ‘
আমার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকালো আদিল পরক্ষণে চেচিয়ে ‘ বাবা গো ‘ বলে দৌঁড়ে রুম থেকে পালালো।
ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চারজনে হাসতে শুরু করলাম।
তখন পেছন থেকে রিয়া বলল, ‘ আমাদের কিন্তু শপিংমল যেতে হবে। আহিতার হলুদের আর মাত্র দুই দিন বাকি আছে। শপিং করতে হবে তো নাকি? ‘
★
ঘন্টা খানিক পর বর্ষা ছুটে গেলো ওর বাবার কাছে, মিস্টার সাগর খানের মুখের পানে একহাত বাড়িয়ে দিয়ে বলতে লাগল, ‘ শপিংয়ে যাবো দশ বিশ হাজার টাকা দাও৷ ‘
দশ বিশ হাজার টাকা শুনে হা হয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন অস্ফুটস্বরে তিনি বলে উঠলেন, ‘ বান্ধবীর বিয়ের জন্য মার্কেট করতে যাচ্ছো নাকি নিজের বিয়ের জন্য? ‘
বর্ষা আহ্লাদী কন্ঠে বলল, ‘ নিজের বিয়ের জন্য হলে তো লক্ষ লক্ষ টাকা চাইতাম। বান্ধবীর বিয়ে বলেই তো হাজার চাইছি। ‘
বলেই ঠোঁটের কোণে এক মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে তুললো। বর্ষার এই হাসির দিকে তাকালে জেনো বর্ষার বাবা সর্গ সুখ খুঁজে পান। বাবা’রা হয়তো এমনই হয় সন্তানের সুখেই উনারা সুখী।
পেছন থেকে শানিতকন্ঠে বলল, ‘ ওরে টাকা দিলে আমারও দেওয়া লাগবো। ‘
ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বর্ষা বলল, ‘ তুই টাকা দিয়া কি করবি? ‘
ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট দেখিয়ে অনিক বলল, ‘ তোরে কইতে হইবো নাকি? তোরে টাকা দিলে বাস আমারও দিতে হইবো। ‘
অনিক হচ্ছে বর্ষার ভাই বর্ষার থেকে দুই বছরের ছোটো। পুরো নাম আল-আমিন খান অনিক। বর্ষা ওরা দুই ভাই এক বোন। বর্ষা বড়, অনিক ও আমির হামজা ছোট। আমির হামজার বর্তমান বয়স তিন বছর কিন্তু সে-ও টাকার দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। কাউকে টাকা দিতে দেখলেই বলবে, ‘ আমালেও দেও। ‘
সাগর খান বাধ্য হয়ে ছেলেকে আগে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দিলো। অনিক বলেছিলো, ‘ ওকে যত দিবা আমাকেও তত দিতে হইবো নাহলে নিবো না। ‘
মিস্টার সাগর খান চালাকি করে বললেন, ‘ ওরে তো পাঁচ হাজার দিবো তাই তুমিও পাঁচ নাও। ‘
পাঁচ কথা টা শুনে উদাসীন মনে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অনিক যেতেই আমাকে অবাক করে দিয়ে বাবা আমার হাতে টাকা দিয়ে বললেন, ‘ মেয়েরা যা চায় বাবাদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকলে তা দিতে হয়। কারণ মেয়েরা সারাজীবন বাবার কাছে থাকে না। আর আমি জানি আমার মেয়ে ফাউল খরচ করে না। যা ইচ্ছে কিনে নিয়ে সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে এসো। আর যদি লেইট হয় তাহলে কল দিয়ো আমি নিয়ে আসবো। কেমন? ‘
বর্ষা ইমোশনাল হয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো বিড়বিড় করে বলল, ‘ আব্বু তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। ‘
মিস্টার সাগর বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘ আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি। ‘
______________
শপিংমলে এসেও শান্তি নেই চারজনের অদ্ভুত সব কাজের জন্য শপের ম্যানেজার বাধ্য হয়ে চারজনকে শপ থেকে বের করে দিলো। এখন কি গন্ডগোল করেছে এই গন্ডগোল বাহিনী সেটা না হয় পরের পর্বে বলবো। হিহিহি……..
#অবন্তর_আসক্তি [৪৪]
#Sharmin_Akter_Borsha [লেখিকা]
_____________
‘ এই নীল ও সাদা রঙের মিশ্রণে লেহেঙ্গা টা আমি নিবো। ‘
দুই হাতে লেহেঙ্গা উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে বলল বর্ষা। পেছন থেকে থাবা মেরে লেহেঙ্গা টা নিয়ে নিলো বৃষ্টি একনজর দেখে সে-ও বলল, ‘ বেশ সুন্দর আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এটা আমি নিবো তুই তোর জন্য অন্য একটা দেখ। ‘
বৃষ্টির হাত থেকে ‘ছ’ মেরে নিয়ে নিলো রিমা আর বলতে লাগল, ‘ না! এটা আমি নেবো। ‘
রিমার হাত থেকে এবারে নিলো রিয়া, বেচারি কিছু বলার আগেই ওর হাত থেকে লেহেঙ্গা টা বর্ষা নিয়ে নেয়। এবং সকলের দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলল, ‘ আমি দেখেছি আগে তাই আমিই নিবো। ‘
বাকিরা কম নয়, লেহেঙ্গা ধরে টানাটানি করছে আর এক জন বলছে, ‘ আমি নিবো’ তো আরেকজন বলছে, ‘ না আমি নিবো ‘……….
পনেরো দশ মিনিট এভাবেই চলল, দূর থেকে লক্ষ্য করল ম্যানেজার। তিনি এগিয়ে এসে মাত্রারিতিক্ত রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, ‘ আপনারা এভাবে টানাটানি করলে তো এটা ছিঁড়ে যাবে৷ রাখুন এটা ডেস্কের উপরে, তাছাড়া এটার বিল পেমেন্ট হয়েগেছে কিছুক্ষণের মধ্যে ডেলিভারি দেওয়া হবে। ডেলিভারির পূর্বে আপনারা চারজন কাপড়টা নষ্ট করে ফেললে আমরা কাস্টমারের কাছে মুখ দেখাবো কি করে? ‘
বর্ষা অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে শালিনকন্ঠে বলল, ‘ দুঃখিত আঙ্কেল! আমি জানতাম না যে এটা অলরেডি সেল হয়ে গেছে। আপনি আমাকে সেম কালার ও ডিজাইনের আরও একটা লেহেঙ্গা দেখাবেন প্লিজ। আসলে এই কালার ও ডিজাইন টা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ‘
ম্যানেজার আফসোসের সাথে বললেন, ‘ সরি! এটার স্টক একটাই ছিলো। আপনি অন্য কিছু দেখতে পারেন। ‘
তখন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গজগজ করতে করতে বলল রিমা, ‘ আর নেই মানে এত বড় শপে সেম ডিজাইনের লেহেঙ্গা নেই মসকরা করছেন? ‘
‘ আমাদের সেম চাই মানে চাই ‘ বলল বৃষ্টি।
‘ জানি না কোথা থেকে এনে দিবেন। শুধু জানি এনে দিবেন আর নয়তো আমরা এখান থেকে যাবো না। ‘ বলল রিয়া।
ম্যানেজার তাদের তিনজনের সাথে তর্কে পেরে উঠছে না। তাই বাধ্য হয়ে গার্ডকে ডেকে পাঠালেন। চারজনকে শপ থেকে বের করে দিতে। বর্ষা চারজনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ বলছে যখন নেই। তাহলে এখন এত ঝামেলা পাকাচ্ছিস কেন? চল এখান থেকে। ‘
বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো বর্ষা। বিরক্তিকর নিঃশ্বাস ফেলে বাকি রাও তার পিছু পিছু বের হলো।
চার ঘন্টা মার্কেট ঘুরে বর্ষার কিছুই পছন্দ হলো না। ওর মন তো পরে আছে সেই নীল সাদা লেহেঙ্গার কাছে৷
বাকিরা টুকটাক মার্কেট করলেও বর্ষা করেনি। এতে বাকিদের মন খারাপ হয় ঢের। তারাও কিছু কিনতে চায়নি কিন্তু বর্ষা বলেছে সে পরে কিনবে কিন্তু কিনেনি।
এক হতাশাজনক দীর্ঘশ্বাস ফেলে সকলে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে আসলো।
হল রুমেই বসে ছিলো বাড়ির সকলে ওদের চারজনকে আসতে দেখে উনারা ওদের নিজেদের কাছে ডাকলেন ও কি কি কিনেছে সেটাই দেখতে চাইলো। ওরা তিনজন উনাদের কাছে চলে যায়, ও সব শপিং দেখাতে লাগে। বর্ষা যেহেতু কিছু কেনেনি তাই সে সোজা তার রুমে চলে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার নেমে আসবে পৃথিবীর বুকে। মাগরিবের আযানের প্রায় দশ বিশ মিনিট আগেই ফিরেছে ওরা। রুমে ঢুকতে দেখলো রুম পুরো অন্ধকারে আচ্ছন্ন। রুমের দরজা চাপানো ছিলো, জানালা বন্ধ লাইট নিভানো তাই রুম অন্ধকার হয়ে আছে।
অন্ধকারে অন্ধের মতো হেঁটে লাইট অন করে পেছনে তাকাতেই বিস্মিত হয়ে যায় বর্ষা। শুকনো ঢোক গিলে সামনে এগিয়ে যায় সে। বিছানার উপর পা তুলে বসলো। একটা বড় পার্সেল রাখা আছে ও তার উপরে একটা চিরকুট একটা কস্টিপ দিয়ে লাগানো।
অভ্র বাড়িতে নেই তাহলে এই গিফট কে রাখলো তার রুমে? ভাবতে ভাবতে চিরকুটটা হাতে নিয়ে খুলে পড়তে শুরু করলো, লেখা-
“ মনেরই অজান্তে ভালোবেসেছি তোমাকে! সেই তখন থেকে যখন তোমাকে জানতাম না। তুমি কে চিনতাম ও না। তোমার-ই অগোচরে তোমাকে ভালোবেসেছি৷ সে ভালোবাসার গভীরে ডুবুরি হয়ে ডুব সাঁতার কেটেছি বহুবার। তখন তুমিও অজ্ঞ ছিলে, কেউ একজন আছে যে তোমাকে গভীরের থেকেও গভীর ভাবে ভালোবাসে। আমার আজও মনে আছে সে দিনের কথা যখন তোমাকে প্রথম দেখি। তারপর থেকে পাগল হয়ে তোমাকে খুঁজেছি। কোথাও পাইনি। যখন পেলাম তখন তোমাকে জানাতে ভয় হলো। কিভাবে জানাবো তুমি বিষয় টা কিভাবে নিবে? তাই বলতাম না৷ কিন্তু যখন তুমি আমারই সামনে খিলখিল করে হেসে উঠতে। আমি অগোচরে দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম। তোমার চোখে শুধু আমি আমার প্রতিবিম্ব দেখতে চাইতাম। দিন শেষে চাইতাম তুমি হ্যাঁ তুমি এই তুমি মানুষটা একান্তই আমার হও। ভেবেছিলাম তোমাকে বুঝি হারিয়ে ফেলবো কিন্তু ভাগ্য ক্রমে আল্লাহ তোমাকে আমার কপালে লিখে দিলেন। তোমারই অজান্তে আমরা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। তোমার সকল চাওয়া পাওয়া ভালোলাগা মন্দ লাগা সে থেকে আমি আমার সাথে জুড়ে নিলাম। কয়েকদিন দূরে থাকি বলে কিভাবে ভাবতে পারো আমি অন্য কারোর জন্য তোমাকে ঠকাচ্ছি? যাগ্গে সেসব কথা বলেছিলাম, অপেক্ষা কোরো। অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়। তোমার জন্য মিষ্টি তো আনতে পারিনি। তবে একেবারে খালি হাতেও আসিনি। পার্সেল টা খুলে দেখো আমার শুভ্র পরীর জন্য সামান্য একটা উপহার। যদি পছন্দ হয় তাহলে ছুটে এসো ছাঁদে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি আমি সে বহু কাল থেকে। ”
ছলছল করছে বর্ষার চোখ জোড়া সত্যিই তো সে কিভাবে ভাবলো অভ্র তাকে ঠকাচ্ছে তাছাড়া অভ্রই বা কিভাবে জানলো বর্ষা একথা বলেছে? রুমে বা বারান্দায় কোথাও আবার সে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখেনি তো সে? সব থেকে বড় কথা অভ্র বাড়ি ফিরে এসেছে।
গিফটের কাগজ খুলে বর্ষার চোখ জোড়া চরক গাছ। বক্সের মধ্যে সেই নীল সাদা লেহেঙ্গা যেটা সে পছন্দ করেছিলো। মানে তখন যে ম্যানেজার বলেছিলো এটা অলরেডি সেল হয়ে গেছে তারমানে তখন অভ্রই এটা কিনেছিলো ওর জন্য? অভ্র ওখানে ছিলো বলেই বর্ষা যখন ওই শপে প্রবেশ করেছিলো তখন তার বুকের বা পাশে হৃৎস্পন্দনের শব্দ তীব্র হয়েছিল।
বর্ষা লেহেঙ্গা বুকের মধ্যে ঝাপ্টে ধরলো কার্নিশ বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো। লেহেঙ্গা আগের ন্যায় বাক্সে রেখে দিয়ে চিঠি হাতে ছুটলো বর্ষা।
সিঁড়ি দিয়ে উঠে ছাঁদে যেতেই দেখলো। অভ্র ছাদের এক কোণায় উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা ছুট্টে গিয়ে পেছন থেকে ঝাপ্টে ধরলো তাকে।
অভ্র বর্ষার হাতের উপর নিজের হাত রেখে ঠোঁটের কোণে মৃদু হেসে ক্ষীণকন্ঠে বলল, ‘ কাঁদছো কেনো? এইতো এসে পরেছি। ‘
বর্ষা জড়ানো কন্ঠে বলল, ‘ জানো কত মিস করেছি? ‘
অভ্র বর্ষার হাত দু’টো ছাড়িয়ে নিজে বর্ষার মুখো ঘুরে দাঁড়ালো। বর্ষার দুইগালে তার দুইহাত দিয়ে আলতো চাপ দিয়ে বলল, ‘ মিস কি তুমি একাই করেছো আমি করিনি? ‘
চলবে?
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]
চলবে?
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]