#অবন্তর_আসক্তি [৪৫]
#Sharmin_Akter_Borsha [লেখিকা]
____________
“ ও আল্লাহ, এত ঝাল কে রান্না করছে এই তরকারি? ”
ঝালে মুখ দিয়ে হা হু করতে করতে বলল অভ্র। সামনে থেকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো রিমার আম্মু পরক্ষণে তিনি বললেন, ‘ বর্ষা রান্না করছে কেনো বেশি ঝাল হইছে নাকি? ’
অভ্র বিরক্তিকর দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল, “ মে’রে ফেলবি নাকি? এত ঝাল দিছিস কেন? ”
কোনো কিছু না বলেই বর্ষা মুখ ভার করে ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে চলে যায়।
মাগরিবের আযান দিতেই বর্ষাভ্র ছাঁদ থেকে নিচে চলে আসে। বর্ষা নামাজ পরে রান্না করার জন্য কিচেনে চলে যায়। এতদিন পর সে বাড়িতে ফিরেছে এ আনন্দে তার প্রিয় কিছু রান্না করবে এ চিন্তা করেই রান্না করতে আসে। বর্ষা রান্না করবে শুনে সকলে চমকে যায়। কেননা যাকে হাজার ডেকেও রান্না ঘরে আনা যায় না। সে আজ নিজে থেকে এসে বলছে রান্না করবে।
গরুর গোশত অভ্রর বেশ পছন্দ বর্ষা সেটাই রান্না করবে চিন্তা করে। ফ্রিজ থেকে গোশত বের করে ভিজিয়ে রাখে। অন্য দিকে পেঁয়াজ কাটতে বসে৷ গোশত ভিজতে প্রায় ত্রিশ মিনিটের মতো সময় লাগে। ভালো করে ধুয়ে রান্না বসিয়ে দেয় বর্ষা। গোশতের অনুমানে সব মসলা দেয়। এদিকে বর্ষার মাথা থেকে বেরিয়ে যায় অভ্র ঝাল খেতে পারে না। খুব সামান্য ঝাল খেতে পারে অতিরিক্ত ঝাল খেলে সে ঝালে ঝালে লাল হয়ে যায়। অভ্র দেখতে বেশ ফর্সা তাই একটু ঝাল খেতে হাঁপাতে হাঁপাতে শরীর লাল হয়ে যায়।
রান্না শেষে রুমে চলে আসে বর্ষা। রান্না করার জন্য চুলার গাছে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ঘামে শরীর চিপচিপে হয়ে গেছে। তাই রুমে এসেই ফ্রেশ হতে বাথরুমে চলে যায়।
রাতে সকলে একসাথে খেতে বসে। গরুর গোশত অভ্রর পছন্দ আর সে গোশত দেখে খুশিও হয়। রিয়ার আম্মু ও রিমার আম্মু টেবিলে সকলের খাবার বেড়ে দিচ্ছে। বর্ষার আম্মু ও বৃষ্টির আম্মু কিচেন থেকে খাবার বাটিতে বেড়ে নিয়ে আসছে। তাছাড়া বাদ বাকি সকলে খেতে বসে পরেছে।
অভ্র এক লোকমা খাবার মুখে দিতেই চেঁচিয়ে উঠে। বিষয়টা বর্ষার মোটেও ভালো লাগেনি। সে কত আহ্লাদ ও ভালোবাসা নিয়ে অভ্রর জন্য রান্না করল আর সে খেতে অব্ধি পাচ্ছে না শুধু ঝাল বেশি বলে।
এক আকাশ অভিমান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে আছে বর্ষা। আকাশে আজ তাঁরা নেই ঘন কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে তাঁরা গুলো। বিষন্নতায় উদাসীন মনে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে বর্ষা। সে তখন থেকে হাতে গুনা প্রায় দু-ঘন্টা হবে বর্ষা ছাঁদে এসে বসে আছে। এখানেই ভালো লাগছে ঠান্ডা শীতল বাতাসে গা এলিয়ে দিয়েছে সে। চোখ জোড়া বন্ধ করে সে বাতাস অনুভব করছে বর্ষা। হঠাৎ পুরুষালী দু’টি হাত পেছন থেকে বর্ষাকে আঁকড়ে ধরলো।
আচমকা চোখ খুলে বর্ষা পেছনে ঘুরতে চাইলো কিন্তু পারলো না। সে তাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যার জন্য বর্ষা নড়তে পারছে না। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, ‘ এত ঝাল দিয়ে কেউ রান্না করে? ‘
কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিরবতা পালন করে বর্ষা মলিনকন্ঠে বলল, ‘ সরি! আমি বুঝতে পারিনি এত ঝাল হয়ে যাবে। আসলে আমি ‘
বর্ষাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অভ্র বর্ষার ঠোঁট জোড়ার উপর নিজের শাহাদাত আঙুল রেখে নেশালো কন্ঠে বলল, ‘ আমি জানি তুমি আমার জন্য রান্না করেছো। তরকারিতে ঝাল হয়েছে ঠিকই কিন্তু তার মধ্যে তো তোমার হাতের ছোঁয়া রয়েছে তোমার ভালোবাসার মিশ্রণ রয়েছে। শুধু একটু ঝাল হয়েছে বলে কি আমি খাবো না ভাবছো? ‘
বর্ষা দুইহাত দিয়ে অভ্র’র হাত ঠোঁটের উপর থেকে সরিয়ে ধাতস্থ কন্ঠ বলল, ‘ মানে তুমি ঝাল তরকারি খেয়েছো? ‘
অভ্র মলিনকন্ঠে বলল, ‘ হুমম। ঝালে আমার মুখ জ্বলছে এখন একটু মিষ্টি প্রয়োজন। ‘
বর্ষা কপালে ভাজ ফেলে ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘ বাড়িতে মিষ্টি নেই। ‘
অভ্র ওর একহাত দিয়ে বর্ষার গাল চেপে ধরে আবারও নেশালো কন্ঠে বলল, ‘ এইতো তোমার কাছেই আছে মিষ্টি! ’
বর্ষা বোকা বোকা চাহনি ফেলে অভ্রর উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ মানে? ’
‘ মানে হচ্ছে, আমি এখন আমার বউয়ের কাছ থেকে মিষ্টি খাবো৷ ’ বলল অভ্র।
‘ আমার কাছে মিষ্টি নেই ’
বর্ষার বলতে দেরি হলো কিন্তু অভ্রর দুষ্টামি করতে দেরি হয়নি। এক হাত দিয়ে বর্ষার কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো। গাল থেকে হাত ঘাড়ের পেছনে চুলের মধ্যে ঢুকালো। পরক্ষণে অভ্র ওর ঠোঁট জোড়া বর্ষার ঠোঁট জোড়ার সাথে মিশিয়ে দিলো। বর্ষার অষ্টদ্বয় নিজের দখলে নিয়ে নিলো অভ্র। বর্ষা আচমকিৎ চমকে গিয়ে চোখ জোড়া বড়বড় করে ফেললো। সে ভাবতেও পারেনি অভ্র এমন কিছু করবে।
আকাশে হঠাৎ করে বিকট শব্দে বজ্রপাত হলো। বর্ষা ভয় পেয়ে অভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। অভ্র আরও শক্ত করে বর্ষাকে নিজের আষ্টেপৃষ্টের সাথে জড়িয়ে নিলো। কয়েকবার বজ্রপাত হওয়ার পরপরই মুসুল দ্বারায় বৃষ্টি শুরু হলো। অভ্র বুঝতে পারছে বর্ষা ঝিমিয়ে যাচ্ছে। অভ্র বর্ষার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিয়ে কিছুটা আলগা হয়ে দাঁড়ালো। অভ্র খেয়াল করলো বর্ষা ঘুমিয়ে গেছে।
বর্ষাকে সোজা করে দাঁড় করালো। বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা পানি বর্ষার মুখের উপরে পরছে। আলতো হাতে মুখের উপর থেকে জল গুলো মুছে দিয়ে ক্ষীণকন্ঠে বলল, ‘ এটা কি হলো শুভ্র পরী হুহহ? রোমান্টিক একটা মোমেন্টে এসে তুমি ঘুমিয়ে পরলে? ’
কিয়ৎক্ষণ পর অভ্রর মাথায় আসলো বৃষ্টি পরছে হয়তো সে জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে বর্ষা। তাই তারাহুরো করে ওকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে ছাঁদ থেকে বেরিয়ে পরলো। রুমে এসে বর্ষাকে বিছানার উপর শুইয়ে দেয়। কপালে আলতো চুমু একে দিয়ে বর্ষার আম্মুকে ডাকতে লাগলো। বর্ষার আম্মু সহ আরও কয়েকজন রুমে আসলো। অভ্র তাদের উদ্দেশ্য বলল, ‘ ছাঁদে বসে বসে ভিজছিলো আর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। তুমি ওর ভিজা জামাকাপড় গুলো পাল্টে দাও। ‘
বলে অভ্র রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিজের রুমে চলে আসল। রুমের বড় আয়নার সামনে দাঁড়াতে ওর নজর বন্ধি হলো ওরই ঠোঁট জোড়ার উপরে। একটু কেটে গেছে এবং সেখান থেকে রক্তর ফোঁটা বের হচ্ছে। অভ্র শুকনো ঢোক গিললো কপালে হাত দিয়ে বিছানার উপর ধপ করে বসে পরলো। বাকিরা তার কাটা ঠোঁট দেখেনি তো? এটাই এখন তার দুশ্চিন্তার মারাত্মক কারণ।
বৃষ্টি তে ভেজার জন্য বর্ষার আর রাতে জ্ঞান ফিরে আসেনি। অভ্র মাঝরাতে দেখতে আসে বর্ষাকে। ওর শরীর প্রচন্ড ঠান্ডা বলে বর্ষার আম্মু আজ রাতে ওর রুমেই থাকে। মেয়ের শরীর খারাপ থাকলে মা’য়ের কি আর রাতে ঘুম হয়। অভ্র বর্ষার মাথার কাছে ঘন্টা খানেক বসে রয়। অভ্র আসায় বর্ষার আম্মু খাটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরেন।
অভ্র ফোনে মেসেজে কারো সাথে কনটাক্ট করছে তখন তার কানে ভেসে আসলো। বর্ষা ঘুমের ঘোরে বারবার বিড়বিড় করে ‘অভ্র’ বলে যাচ্ছে। ঠোঁটের কোণে তৃপ্তিময় হাসি ফুটিয়ে তুলে বর্ষার কপালে চুমু একে দিলো বর্ষাভ্রের অভ্র। বর্ষার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে শক্ত করে ধরে বসে রইলো।
পরদিন সকালে ~
#অবন্তর_আসক্তি [৪৬]
#Sharmin_Akter_Borsha [লেখিকা]
______________
সকাল সকাল বলা নেই কওয়া নেই অচেনা একটা মেয়ে বাড়ির ভেতরে এসে হট্ট গোল পাকিয়ে চলছে। একটা মেয়ের সাথে বাড়ির এত গুলো মহিলা কথায় পেরে উঠছে না। সকলের সাথে মেয়েটার এক প্রকার তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গেছে।
কানের কাছে কে জেনো এসে ‘ বর্ষা ‘ বলে চিৎকার দিয়ে উঠল। ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো বর্ষা। ঘুম ঘুম চোখে সামনে তাকিয়ে দেখলো রিমা বসে আছে।
গম্ভীর কণ্ঠে বর্ষা বলল, ‘ সমস্যা কি? এভাবে চিৎকার করলি কেন? আর একটু হলেই তো কানের পর্দা ফেটে বয়রা হয়ে যেতাম। ‘
রিমা শানিতকন্ঠে বলল, ‘ বাড়িতে সকাল সকাল একটা মেয়ের আবির্ভাব ঘটেছে আর সে নিচে এসেই একটা হট্টগোল পাকিয়ে তুলেছে। এদিকে তুই পরে পরে ঘুমাচ্ছিস। চল নিচে দেখবি চল। ‘
মেয়েটাকে একনজর দেখার জন্য না চাইতেও যেতেই হলো বর্ষাকে। নিচে এসে দেখলো সত্যি একটা মেয়ে কাকের মতো কা কা করছে। বর্ষা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে একটা মেয়ে ও ছয়টা মহিলার ঝগড়া দেখতে লাগলো। খালি মুখে ঝগড়াটা তেমন ঝমছিলো না। ডাইনিং টেবিলের উপর ফলমূল রাখা আছে। বর্ষা সেখান থেকে একটা আপেল তুলে নেয়। চোখ তুলে বাড়ির পূর্ব দিকে তাকাতে দেখলো বৃষ্টি, রিয়া, তিন্নী ওরা ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা ও তাদের পাশে গিয়ে পাশ কেটে দাঁড়ালো। হাতের মধ্যে আপেল নিয়ে খেলা করতে লাগলো। পরক্ষণে আপেলের গায়ে এক কামড় বসিয়ে দিলো বর্ষা। গালের মধ্যে আপেল একবার এদিক তো আরেকবার সেদিকে চাবাতে চাবাতে প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ মেয়েটা কে? আর আমাদের বাড়িতে কেনো আসছে? ’
বর্ষার কথার প্রত্যত্তরে তিন্নি বলল, ‘ মেয়েটার নাম হিয়া। ‘
বর্ষা কপালের চামড়া ভাজ ফেলে চোখ দু’টো ছোট ছোট করে তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ মিস হিয়া আমাদের বাড়িতে কেন আসছে কাকে চাই তার? ‘
নির্মূলকন্ঠে বৃষ্টি বলল, ‘ অভ্র ভাইয়াকে চাই তার। ‘
বৃষ্টির কথা বর্ষার কান অব্ধি আসতেই চক্ষু জোড়া কপালে উঠে গেলো ওর বড়বড় চোখ করে বৃষ্টির দিকে তাকালো। হাত থেকে আপেলটা মাটিতে পরে গেছে সেই তখনই বৃষ্টির কথা শুনে। তিন্নি সহ বাকিরাও মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ হুম একদম সত্যি। ‘
বর্ষা রাগে চোয়াল শক্ত করে বলল, ‘ আজ এই হিয়া ফিয়ার বারোটা বাজিয়ে ফেলবো কত্তো বড় সাহস অভ্র ভাইয়ার জন্য আমাদের বাড়িতে আসছে এই মেয়ে একে তো আমি.. ‘
বলেই সামনে তাকাতেই দেখলো অভ্র হিয়ার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। সকলের সামনে গিয়ে অভ্র শানিতকন্ঠে বলল, ‘ হিয়া বাহিরে যাও ‘
মেয়েটা আর কিছু না বলে সে বাধ্য মেয়ের মতো বাহিরে চলে গেলো। অভ্র হিয়ার হয়ে সকলের থেকে ক্ষমা চাইলো তারপর সেও বেরিয়ে গেলো। বর্ষার মাথার উপর দিয়ে গেলো শুরু থেকে এই পর্যন্ত ঘটনা সবটা। এক ধ্যানে অভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। অভ্র চোখের আড়াল হতেই বর্ষা নিজের সজ্ঞেনে ফিরে আসলো। এক দৌঁড়ে বাড়ির বাহিরে চলে আসলো। অভ্র আর হিয়া দু’জনে গাড়িতে উঠে ওরই সামনে দিয়ে চলে গেলো। মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল বর্ষা অস্ফুটস্বরে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো, ‘ কে এই হিয়া? তুমি কি সত্যিই ঠকাচ্ছো আমায় অভ্র? ’
.
.
.
চক্ষু জোড়া বেকুল হয়ে তাকিয়ে রয়েছে রাস্তার দিকে ভারী নিঃশ্বাস ফেলছে বারবার। সেই সকালে বের হয়েছে বিকেল হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আসার খবর নেই। সকাল থেকে এপর্যন্ত হিসাব ছাড়া কল দিয়েছে বর্ষা। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও ফোন বন্ধ। বর্ষার মাথায় গুনেপোকা’রা কামড়ে যাচ্ছে, তার মস্তিক তাকে বলছে, ‘ অভ্র যেই সময়টা ওই হিয়া নামে মেয়েটার কাছে থাকে তখনই হয়তো সে ফোন বন্ধ করে রাখে। তাহলে কি যখনই তার ফোন বন্ধ থাকে তখন সে ওই মেয়েটার কাছে থাকে? কি সম্পর্ক তাদের দু’জনের মধ্যে? তাহলে কি আমার চিন্তা ভাবনাই সত্যি? ‘
কড়া রোদ্দুরে অহেতুক বারান্দায় বসে রয়েছে সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। চিনচিন গরম পরেছে কিন্তু বর্ষার তাতে কেনো হেলদোল নেই। মনে হচ্ছে বাহিরে সীল দ্বারায় বৃষ্টি হচ্ছে আর সে বসে বসে উপভোগ করছে। কিন্তু নয়, হচ্ছে তার উল্টো।
গুরুগম্ভীর কন্ঠে পেছন থেকে কেউ বলল, ‘ এই কড়া রোদে তুমি বারান্দায় বসে আছো কেনো? ‘
মাথা পেছনে ঘুরিয়ে বর্ষা ওর আম্মুকে দেখে বলল, ‘ ভালো লাগছে না আম্মু! ‘
বর্ষার মা বর্ষাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘ কি হয়েছে আমার মেয়ের তার ভালো লাগছে না কেনো শুনি? ‘
বর্ষা ধাতস্থ কন্ঠে বলল, ‘ কিছু হয়নি আম্মু এমনি। তা তুমি কেন আসতে গেলে? আমাকে ডাক দিলে তো আমিই যেতাম তোমার কাছে। ‘
বর্ষা মা বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ এই নিয়ে চার থেকে পাঁচ বার আওয়াজ দিয়েছি কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিজেই দেখতে আসলাম। ‘
বর্ষা ক্ষীণকন্ঠে বলল, ‘ সরি আম্মু আমি শুনতে পাইনি। ‘
‘ কোনো ব্যাপার না চলো কিছু খাবে এমনিতেও দুপুরে ঠিক মতো খাওনি। তুমি তো জানো তোমার শরীর খুব দূর্বল আর এখন তোমার পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। নয়তো আগামীকাল আহিতার হলুদে গেলে তো দূর্বলতার জন্য মাথা ঘুরে পরে যাবে। ‘
প্রত্যত্তরে বর্ষা তেমন কিছুই বললো না শুধু বলল, ‘ ইচ্ছে করছে না। ‘
বর্ষাকে জোরপূর্বক রুমে নিয়ে আসলো ওর মা। রুমে এনে হালকা কিছু নাস্তা খাইয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন।
বর্ষা বিছানার উপর বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগল। হঠাৎ তার মনে হলো দরজার সামনে পর্দার আড়ালে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মোবাইল টা বিছানার উপর রেখে এগিয়ে গেলো সেথায়। দুই হাতে পর্দা মুঠি বন্ধ করে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে হামজা (বর্ষার ছোট ভাই) বর্ষা তাকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। কিয়ৎক্ষণ তার কিউট ফেসের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘ আমির হামজা হঠাৎ আমার দুয়ারে? ‘
বাচ্চা ছেলে কিছু না বুঝলেও ধীরকন্ঠে বলল, ‘ আমার নাম আমির না আমার নাম হামজা হামজা! ‘
বর্ষা হামজার থুতনিতে হাত রেখে বলল, ‘ আচ্ছা হামজা! তা এখানে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন? মোবাইলে কার্টুন দেখবা? ‘
হামজা ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ নাহ! ‘
বর্ষা চোখ জোড়া ছোটছোট করে বলল, ‘ তো? ‘
হামজা পর্দা দিয়ে মুখ ঢেকে বলল, ‘ আইসক্রিম খাবো। ‘
বর্ষা শব্দ করে হেসে দেয় কেননা হামজা দেখতে পুরো বর্ষার কপি। আবার সে তারই স্বভাবে বড় হচ্ছে এজন্য বর্ষার প্রায়ই তার বাবা মা ও বাকিদের কাছ থেকে শুনতে হয়, ‘ বাড়িতে একটা বর্ষা কি কম ছিল? হামজা পুরো বর্ষার মতো পাজি হয়েছে ছোট বেলায় বর্ষা তো এমনই ছিল। ‘
বর্ষার বাবা তাদেরকে সাই দিয়ে বলেন, ‘ বর্ষার থেকেও বেশি পাজি ও তেরা হইছে হামজা বর্ষাকেও হার মানিয়ে ফেলেছে। ‘
দাঁতে দাঁত চেপে সব কিছু শুনেও না শোনার মতো বসে থাকে বর্ষা। মাঝেমধ্যে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে হামজার দিকে ওর জন্যই তো কথা শুনতে হয়।
বর্ষা হামজাকে পর্দার আড়াল থেকে বের করে কোলে তুলে নিলো। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে চেঁচিয়ে ওদের মা’য়ের উদ্দেশ্য বলল,’ আম্মু আমি হামজা কে নিয়ে দোকানে যাচ্ছি। ‘
দোকান থেকে একটা আইসক্রিম কিনে হামজার হাতে দিলো। হামজা বর্ষার উদ্দেশ্য বলল, ‘ খুলে দাও, আমি খুলতে পারি না। ‘
বর্ষা উপরের কাগজ খুলে দিলে হামজা খেতে শুরু করল। বর্ষা হামজার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ মজা? ‘
হামজা হাসতে হাসতে বলল, ‘ হুম মজা, থ্যাঙ্কিউ ভেলি মাছ ‘
বর্ষা হামজার কথা শুনে শব্দ করে হাসতে শুরু করলো। পরক্ষণে হাসি থামিয়ে বলল, ‘ এইসব উল্টা পাল্টা ইংলিশ কোত্থেকে শিখছো? ‘
হামজা আইসক্রিম খেতে খেতে বলল, ‘ টিভি থেকে ‘
★
বন্ধ দরজার অপারে দাঁড়িয়ে রাগী গলায় চেঁচিয়ে বলল, ‘ ভুলে যেও না হিয়া তুমি কে? তোমাকে আমি আমার ফ্লাটে এনে রেখেছি তার কারণ তোমার বাবা। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি উনার জীবন ত্যাগ করেছিলেন। মৃত্যুর সময় তাকে আমি কথা দিয়েছিলাম তোমার সব দায়িত্ব আমার। তাই বলে এটা নয় তুমি আমার বাড়িতে গিয়ে সকলের সাথে বেয়াদবি করবে। নেক্সট টাইম আমি এসব সহ্য করবো না। তুমি শুধু মাত্র আমার কর্তব্য আর কিছু না। আমার পার্সোনাল লাইফে দখল দিলে ভালো হবে না তোমার জন্য সেটা আশা করি খুব ভালো করে জানো। পরবর্তী তে সাবধানে থেকো লাস্ট ওয়ার্নিং দিলাম। ভুল করেও যদি আবার ভুল করো তোমাকে মে’রে ফেলতে আমি দু’বার ভাববো না মনে রেখো। আমার লাইফে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমার ফ্যামিলি এবং তারপরে গুরুত্বপূর্ণ বাকি সব কিছু। মাইন্ড ইট ‘
বলে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো অভ্র দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কেঁদে উঠলো হিয়া। আজ একমাস ধরে হিয়া অভ্রর কাছে আশ্রিত হয়ে আছে। হিয়া নিজেরই অজান্তে অভ্রকে ভালোবেসে ফেলেছে সেটা কি অভ্র বুঝে না? নাকি বুঝেও তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে?
.
.
.
রাত প্রায় এগারো টা বাজে সকলে প্রায় অর্ধেক ঘুমিয়ে গেছে। বর্ষা এখনো ঘুমায়নি রুমের লাইট জ্বালিয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছে। পড়ায় কোনো মন নেই তার রাত পোহালে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান সেদিকেও কোনো খেয়াল নেই বর্ষার। তার সমস্ত চিন্তা ভাবনা জুড়ে শুধু অভ্র বিরাজ মান।
হঠাৎ কানে গাড়ির হনের শব্দ ভেসে আসলো। পড়ার টেবিল থেকে উঠে দৌঁড়ে বারান্দায় চলে গেলো বর্ষা। যা ভেবে ছিলো তাই অভ্রর গাড়ি মানে ও ফিরে আসছে। বারান্দা থেকে রুমে চলে আসলো ওড়না গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বের হলো ততক্ষণে অভ্র বাড়ির ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি অব্ধি চলে আসছে। বর্ষাকে সিঁড়ির উপর দেখে কিছুক্ষণ স্তব্ধ দাঁড়িয়ে থেকে নিচ থেকে উপরে উঠে আসে। বর্ষাকে তোয়াক্কা না করে অভ্র পাশ কাটিয়ে তার রুমের দিকে চলে গেলো। বর্ষা ও কম নয় সে-ও অভ্রর পেছন পেছন ছুটলো।
অভ্র রুমে ঢুকে শার্টের বোতাম খুলতে যাবে তখন রুমে প্রবেশ করলো বর্ষা। রাগী গলায় বলে উঠল, ‘ হিয়া কে? ‘
ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে পেছনে ঘুরে তাকালো অভ্র। বর্ষা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রুমের লাইট অন বলে অভ্র বর্ষার চোখ জোড়া স্পষ্ট দেখতে পেলো। চক্ষু জোড়া লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে ইচ্ছে মতো কেঁদেছে। শার্টের বোতাম একটা একটা করে খুলে বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলল শার্ট টা। অভ্রর কান্ড দেখে বর্ষার চোখ জোড়া চরক গাছ। সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকালো। অভ্র এক’পা দু’পা করে সামনে এগিয়ে এসে বর্ষার হাত ধরে নেয়। বর্ষা মাথা তুলে অভ্রর দিকে তাকানোর পরপরই অভ্র বর্ষাকে টেনে রুমের মধ্যে নিয়ে এসে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। অভ্র ওর অন্য হাত বর্ষার থুতনিতে রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,’ are you jealous? ‘
বর্ষা অভ্রর চিবুকে হাত রেখে সজোরে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল, ‘ মোটেও না। ‘
অভ্র বর্ষার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। বর্ষা রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল। পেছন থেকে আবারও অভ্র বর্ষার হাত ধরে ফেলে টান দিয়ে নিজের উন্মুক্ত বুকের আষ্টেপৃষ্টের সাথে জড়িয়ে ধরলো। বর্ষা ছোটবার জন্য নড়াচড়া করতে লাগল। অভ্র শক্ত করে বর্ষার হাত জোড়া ধরে বর্ষার ঠোঁট জোড়ার সাথে নিজের ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে দিলো। বর্ষা শুরুতে ছুটবার চেষ্টা করলেও কিয়ৎক্ষণ পর স্তব্ধ দাঁড়িয়ে পরে। মিনিট পাঁচেক পর অভ্র বর্ষাকে ছেড়ে দেয়। বর্ষার বন্ধ চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে থেকে সশব্দে হেসে উঠল অভ্র। পিটপিট করে অভ্র দিকে চোখ মেলে তাকালো বর্ষা।
বর্ষা অভ্রর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, “ অসভ্য? ”
দুই হাত পেছনে নিয়ে বর্ষার দিকে কিছুটা ঝুঁকে ডেভিল হাসি দিয়ে অভ্র বলল, ‘ এবার বলো তুমি আমার কে? ’
বর্ষা ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে অভ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। অভ্র বর্ষার হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে এক নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘ আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো তুমি আমার কে? সেখানে অন্য কাউকে নিয়ে তুমি আমাকে সন্দেহ করে কান্নায় বুক ভাসাচ্ছো? কেনো শুভ্র পরী? তুমি তো জানো আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো নারীর স্থান নেই আমার জীবনে। ’
বর্ষা শানিতকন্ঠে বলল, ‘ আমার প্রশ্নের উত্তর এটা নয়৷ হিয়া কে? ’
অভ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফের বলল, ‘ সময় হলে জানতে পারবে। ‘
বর্ষা রাগে অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে নিজের সামনে থেকে ফ্লোরে ফালিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে অভ্রর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
ফ্লোরের উপর দুই হাত দু’দিকে রেখেই বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো অভ্র।
রুমের মধ্যে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয় বর্ষা। মাত্রারিতিক্ত রাগ ও ক্ষোভে ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেরই ছিঁড়ে ফেলতে। রাগে বিড়বিড় করে বলল, “ অসভ্য লুচু একটা আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো আমার ঠোঁট জোড়া ইয়াক ছিহহ খাচ্চোর ”
বলতে বলতে রুমের লাইট অফ করে বিছানায় কাঁথা মুড়ো দিয়ে শুয়ে পরলো বর্ষাভ্র দুজনে দুই রুমে।
চলবে?
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]
চলবে?
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]