#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান(ফারিয়া_আলম_মিম)
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_১
দরজার সামনে দুহাতে দুটো ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিপা। দুহাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে লাগলো সে।
রহিম চাচা রিপার এক পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।
চাচার দিকে মুখটা ঘুরিয়ে বললো তুমি কাঁদছো কেনো??
-“আমি তো মরে যাচ্ছিনা চাচা। শুধুমাত্র নিজের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে ওর কাছে যাচ্ছি। এছাড়া আমার যে আর কোন রাস্তা খোলা নেই চাচা।
-“মা রে আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস। আমার জন্যই আজ তোর এই অবস্থা। তোর মা বাবা যদি জানতে পারে তুই অশান্তিতে আছিস তাহলে তারা আর বাঁচবেনা। এমনিতেই তোর বাবা হার্টের রোগী। এসব কথা শুনলে সহ্য করতে পারবেনা। আমার নিজেরই কষ্ট হচ্ছে।
বুঝিনি ইমরান এতটা খারাপ বের হবে। জানতাম ইমরান একটু আড্ডা দেয়,,মাঝে মাঝে ড্রিংকস করে কিন্তু তোকে যে হত্যার চেষ্টা করবে সেটা কল্পনা ও করতে পারিনি।
-“হ্যাঁ চাচা আমি ও বুঝতে পারিনি ও এমনটা করবে। শুধুমাত্র বাবা মায়ের মুখের দিকে চেয়ে কিছু করছিনা।
কবে জানি শুনবে এত কিছু সহ্য করতে না পেরে আমি নিজেই বিদায় নিয়েছি।
রহিম চাচা রিপার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে রাস্তার সামনে যেতে লাগলো। তার পিছু পিছু রিপা ও যাচ্ছে।
গলির সামনেই সিএনজি দাঁড়িয়ে আছে। রহিম চাচা সিএনজি টা ভাড়া করে রিপাকে বসিয়ে দিলো। তারপরে রিপার হাত দুটো ধরে বললো,,,মা রে তুই তো আবার ও জেনে শুনে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাচ্ছিস। কিন্তু মা ইমরানের কাছ থেকে যতটা পারিস সাবধানে থাকবি।
-“আচ্ছা চাচা।
চাচার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ইমরানের বাসার উদ্দেশ্যে সিএনজিতে বসে রওনা দিলো রিপা। মুখটা মলিন হয়ে আছে। হাজারো কষ্ট মনের ভিতরে গেঁথে আছে।
রিপার বুকটা ধুক ধুক করছে। বাসায় গেলে না জানি কত মার খেতে হয়। ইমরানের তো কোন ঠিক নেই যখন মাথা ঠান্ডা থাকবে তখন এসে ভালোবাসতে থাকবে। আর পানের থেকে চুন খসলেই মার শুরু করবে।
ডান হাতের ক্ষতটা ভালো করে সারেনি এখন ও।
মনের পরে গেলো সেই রাতের কথা,,,
সেদিন রাতে শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছিল মনে চাচ্ছিলো না উঠে বসতে। ইমরান অফিস থেকে রাতে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আমার কাছে বসলো।
মাথার চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছিলো। আমি বুঝতে পেরেছিলাম ইমরান এখন কী ইশারা করছে। কিন্তু আমার শরীর এতটাই খারাপ লাগছিল আমি ইমরানকে পাত্তা দেইনি। ইমরান আর ভালো মন্দ কোন কথা না বলেই
রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
শোয়া থেকে আস্তে আস্তে পা বাড়িয়ে ড্রইং রুমে গেলাম।
ইমরান সোফার উপরে মাথায় হাত দিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে আছে।
বুঝতে পারলাম হয়তো রাগ করেছে। তবু ও রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করলাম। ওর মাথার পাশে গিয়ে বসলাম। তারপরে ইমরানের মাথাটা রিপা কোলের উপরে নিয়ে হাত দিয়ে চুলগুলো আলতো করে টানতে লাগলো। ইমরান চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
-“এই তোমার কী শরীর খারাপ??
-“গম্ভির গলায় বললো,,না।
-“তাহলে এভাবে মুখ ভার করে বসে আছো যে??
-“রিপা আমাকে কী তোমার পছন্দ না??
-“একথা বলছো কেনো ইমরান???
-“সরাসরি বলো রিপা।
-“কী যে বলোনা। তুমি আমার স্বামী তোমাকে পছন্দ না করার কী আছে???
-“তাহলে আমি তোমার কাছে গেলাম কিন্তু তুমি আমাকে এ্যভোয়েড করছো যে??
-“এটা কেনো বলছো তুমি?? আমার শরীরটা তেমন ভালোনা। তাই আজকে মন চাইছিল না।
-“আমি তোমার স্বামী তোমার প্রতি আমার সমস্ত অধিকার আছে। আমি তোমাকে তখন জোর করতে পারতাম কিন্তু করিনি। আমি কষ্ট পাবো সেটা কী তুমি চাও??
-“না ইমারান চাইনা। কিন্তু আজকের দিনটা বাদ দিলে হয়না?? তুমি ও যেমন আমার স্বামী আমি ও তেমনি তোমার স্ত্রী তাহলে আমার দিকটা ও একটু বিবেচনা করো।
ইমরান কোন উত্তর না দিয়ে মুখটা অন্য দিকে ঘুরালো।
-“রিপার মনের ভিতরে খচখচানি শুরু হয়ে গেলো। ইমরানের মুড অফ বলে।
-“ইমরান চা খাবে??
-“হ্যাঁ খাবো যদি ভালো করে মসলা দিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে দাও।
রিপা খুশি মনে রান্না ঘরে গিয়ে গ্যাস ধরিয়ে তাতে চায়ের পানি বসিয়ে দিয়ে একে একে সব মসলা দিয়ে গরম গরম এক কাপ চা করলো। তারপর মগ ভর্তি করে ইমরানের জন্য চা নিয়ে আসলো।
মগটা ইমরানের দিকে বাড়িয়ে দিলো। রিপার হাত থেকে চায়ের মগটা নিয়ে মুখ তুলতেই অকককক থুথুথু এটা কী চা বানিয়েছো নাকি শরবত??
তোমার মা কী তোমায় কিছু শিখায়নি বলেই গরম চা ভর্তি মগটা রিপার গায়ে ছুরে মারলো।
আউচচচচচচ করে চিৎকার দিয়ে উঠলো রিপা। চায়ের মগটা গিয়ে রিপার হাতের উপরে পড়লো। পুরো জ্বলছে ডান হাতটা। চোখ দিয়ে টলটল করে পানি পরছে রিপার। ইমরান রুমে থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো।
রিপা কৈকৈকৈ মাছের মতো যন্ত্রণায় ছটফট করছে।
দ্রুত গিয়ে ফ্রিজ খু্লে ডিম ভেঙে তার সাদা অংশটা পোড়া জায়গায় লাগিয়ে দিলো। কিন্তু তবুও জ্বলছে হাত। ব্যাথাটা পুরো কলিজা পর্যন্ত ছুয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ পরে হাতের উপরে বড় বড় ফোসকা পড়ে গেলো। রিপার ফর্সা হাতটা কালচে হয়ে গেলো।
রিপা উঠে গিয়ে বিছানার এক কোণে পা দুটো মেলে দিয়ে বসে পড়লো। ভাবছে মাত্র ১ মাস হলো ইমরানের সাথে ওর বিয়ে হলো। এর ভিতরেই ইমরানের অত্যাচার শুরু হয়ে গেলো। দিনদিন ওর অত্যাচারের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে একমাত্র আল্লাহই ভালো জানে।।
ইমরানের মা কিছুদিনের জন্য দেশের বাড়িতে গিয়েছে আর তার ছেলে সেই সুযোগে রিপার উপরে অত্যাচার করছে।
রিপা ফ্লোরেই শুয়ে পড়েছে।
গভীর রাতে,,,,,
রিপার কারো স্পর্শে ঘুম ভেঙে যায় কিন্তু চোখ মেলে তাকায়নি। পরে বুঝুতে পারলো কে যেনো তার বুকের উপরে হাত রেখেছে। আচমকাই লাফিয়ে উঠে চোখ মেলে তাকিয়ে ইমরানকে দেখে হতবাক হয়ে যায়।
একি তুমি???
-“ইমরান কোন কথা বলছেনা। রিপার পোড়া হাতটা তুলে তাতে চুমো দিতে লাগলো।
উঁহু ব্যাথা লাগছে তো।
-“স্যরি জান। আসলে আমি বুঝতে পারিনি। ক্ষমা করে দাও আমাকে।
রিপা নিশ্চুপ।
ইমরানের হাত রিপার পিঠ পর্যন্ত চলে এসেছে। আস্তে আস্তে কোমড়ে হাত দিয়ে উপরের দিকে তুলতে নিলে রিপা ওর হাতটা আটকে দিলো।
ইমরান আরো পাগলের মতো করে রিপাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার উপরে শুয়ে দিয়ে পশুর মতো রিপাকে ভোগ করে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
রিপার শরীর এমনিতেই খারাপ লাগছিল তার উপরে হাতটা পুড়ে গেলো। এখন আবার স্বামীর কাছে…😭😭
পরেরদিন খুব সকালে চাচার বাসায় চলে গেলো ইমরানকে না বলে।
২ দিন পরে আজকে ফিরে যাচ্ছে ইমরানের কাছে।
দরজায় কলিং বেল বাজতেই ইমরান দরজাটা খুলে দিলো।
রিপাকে দেখেই রাগি লুকে তাকিয়ে একটানে রিপাকে বুকের সাথে জাপটে ধরে বললো,,,তুমি কোথায় চলে গিয়েছে সব জায়গায় খুঁজেছি তোমাকে। এতদিন পরে আসার সময় হলো।
-“স্যরি ইমরান। আসলে চাচার শরীরটা হঠ্যাৎ করে খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তাই তাকে দেখতে গিয়েছিলাম।
-“আচ্ছা। আর কখন ও এমন করবেনা।
তোমাকে ছাড়া আমার এক মূহুর্ত ও ভালো লাগেনা। ২ টা দিন কীভাবে কাটিয়েছি আল্লাহই জানে।
রিপা জোরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে ঘরে ঢুকলো। যে ইমরান তাকে কিছু বলেনি বলে।
চলবে………