অস্পষ্ট সে পর্ব ৩

গল্পঃ #অস্পষ্ট_সে (৩য় পর্ব)
লেখায়ঃ #তাজরীন_খন্দকার

যেটা শুনার জন্য চিত্রা তখন প্রস্তুত ছিল না।
দ্বীপ বললো..
আপনাকে কালকে একজন ফোন করে বিয়েটা ভেঙে দিতে বলেছিলো,কিন্তু আপনি তাও বিয়েটা কেন করলেন?

চিত্রা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো, সেই অবস্থাতাতেই সে দাঁড়িয়ে গেলো,তার আর বসা হলোনা। এমনিতেই হাজার ভয় ভীতি তাকে তাড়া করছে। এর মধ্যে দ্বীপের মুখে আজকেই এই ধরনের কথায় বুঝে গেলো তার কপালে এই সংসার করা হবে না হয়তো।
চিত্রার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দ্বীপ কিছুটা এগিয়ে এসে আবারও ধমকিয়ে বলে উঠলো..
___ এই আপনি কি কথা শুনতে পাননি? কেন করলেন বিয়েটা?

চিত্রা এবার বলেই ফেললো..
___ আমার তো বিয়ে করতে কোনো সমস্যা ছিলোনা, সমস্যা ছিল আপনার। তাহলে আপনি কেন বিয়েটা ভাঙলেন না? আর একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হয়ে কি করে বিয়ে ভাঙবো? তারপর তার কি পরিণতি হবে জানা আছে আপনার? এমন নির্বোধের মতো কথা আপনার মতো শিক্ষিত মানুষের মুখে কিভাবে মানায় বলেন তো?

এইটুকু বলেই চিত্রা থেমে গেলো, সে নিজেও জানেনা কিভাবে এতো কথা একনাগাড়ে বলে ফেললো। তার বুক ধুকধুক করছে। সে জানেনা এরপর দ্বীপ কেমন ব্যবহার করবে!

প্রায় কিছুক্ষণ নীরবতায় কাটলো, চিত্রা এখনো দ্বীপের দিকে তাকায়নি। দুজনের সেই নীরবতার মধ্যে হঠাৎ দ্বীপ হুহু করে হেসে উঠলো।
চিত্রার বুকের কম্পনটা যেন আরো বেড়ে যাচ্ছে। ওমন পাগলের মতো হাসছে কেন দ্বীপ এটা ভেবে!

কতক্ষণ একা একা হাসতে হাসতে যখন দ্বীপ ক্লান্ত, তখন আস্তে আস্তে বললো..
___চিত্রা তুমি বসো।

দ্বীপের মুখে চিত্রার নাম আবার তুমি করে সম্বোধনে চিত্রা আরো অবাক হলো। কিন্তু সে বসতে চাচ্ছেনা। বসলেই দ্বীপের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসতে হবে।
কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকতেও তার বড্ড খারাপ লাগছে, সে মুখ অন্যদিক করার চেষ্টা করলো এবং ইচ্ছে করেই ঘোমটা টেনে স্থির হয়ে বসলেও এক হাত আরেক হাতের উপর রেখে নাড়াচাড়া করছিলো।
চিত্রার এসব বিষয় দ্বীপ খেয়াল করছিলো, তারপর আশ্বস্ত ভঙ্গিতে বললো..
___চিত্রা আমাকে ভয় পেতে হবে না। আমি বুঝতে পারছি তোমার এমন অস্থিরতার কারণ!

বলেই দ্বীপ তার পরনের ভারী পাঞ্জাবী খুলে সেটাকে পাশের আলনার উপর রাখতে রাখতে আবার বললো,
___ আর শুনো বিয়েটা আমার ইচ্ছেতেই হয়েছে।
আমি খুশি মনে তোমাকে পছন্দ করেই বিয়ে করেছি,নাহলে কারো শক্তি ছিল না আমাকে বিয়ে করানোর!

এটা শুনে চিত্রা ঠোঁটে একটা হাসি টানিয়ে চোখ তুলে তাকালো, এতক্ষণ সে একবারের জন্যও দ্বীপের দিকে তাকায়নি। এই মূহুর্তে তাকিয়ে ভীষণ লজ্জায় আবারো চোখ বন্ধ করে ফেললো। কারণ দ্বীপ হাঁটু পর্যন্ত একটা প্যান্ট পরে আছে সাথে খালি গা।
চিত্রা নিজের চোখকে মনে মনে বকা দিতে লাগলো।
ধুর এই মূহুর্তে তার তাকানো উচিত হয়নি।
তবে এই এতক্ষণের সেইম ধুকধুকানিটাই অল্প সময়ে ভিন্ন একটা রূপ নিয়েছে। এমনটা চিত্রা এর আগে কখনোই ফিল করেনি!

এদিকে দ্বীপ চিত্রাকে পেরিয়ে হুড়মুড় করে মোবাইল হাতে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। চিত্রা সেখান থেকে উঠে দাঁড়ালো। আস্তে আস্তে বা পাশে ড্রেসিংয়ের দিকে যাচ্ছে তখনি দ্বীপ মোবাইলটা সরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললো..
___হেই সমস্যা কোনো? কোথায় যাচ্ছো?

চিত্রা থতমত খেয়ে জবাব দিলো

___চুলের উপর এতো আবর্জনা আর এসব গয়না না ছাড়িয়ে ঘুমাবো কিভাবে?

___ ওহহ ওকে।

চিত্রা আয়নার সামনে গিয়ে ঘোমটা সরালো, এবং সেটা খুলে পাশে রাখলো।
চুলের দিকে তাকিয়ে তার মাথা পুরো নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এগুলো কিভাবে খুলবে আল্লাহ। এতোগুলো ক্লিপ লাগিয়েছে। দুই একটা কোনো রকম খুললো,শেষ পর্যন্ত একেকটার সাথে চুল ছিড়ে আসা শুরু করছে।
দাঁত খিঁচিয়ে চোখ বন্ধ করে খুলতে লাগলো,
হঠাৎ করে মাথায় হাতের উপর কারো হাতের স্পর্শে চিত্রা চোখ খুলে আয়নায় দেখলো দ্বীপ পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। চিত্রা নিজের হাতটা নামিয়ে ফেললো।
দ্বীপ আয়নার মধ্যে চিত্রার চোখে চোখ রেখে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো..
___ কার জন্য সেজেছিলে?

চিত্রা কিছু বলছেনা,আবার দ্বীপের চোখ থেকে চোখ নামাতেও পারছেনা। উত্তরটা দ্বীপ জানে, কারণ বিয়েরদিন বউয়েরা তো তাদের বরের জন্যই সাজে!
কিন্তু দ্বীপের এতটা কাছে এসে এভাবে বলা এবং তার প্রতিটা নিঃশ্বাস মূহুর্তেই চিত্রাকে অন্যরকম করে দিচ্ছিলো। চিত্রার ঠোঁট কাঁপছে, চোখের মধ্যে কোনো কারণে ছাড়াই পানি চিকচিক করছে।

দ্বীপ খুব সতর্কতার সঙ্গে দুটো ক্লিপ খুলে চোখ বাঁকিয়ে বললো.
___যার জন্য সাজলে সে ভালো করে দেখার আগেই লুকিয়ে সব বদলে ফেলা হচ্ছিলো তাইনা?

___ আপনি তো দেখেছেন, কতো ছবি তুলা হয়েছে আপনার সাথে !

দ্বীপ চোখ ভ্রু ভাঁজ করে উত্তর দিলো..
___ এতো এতো মানুষের সামনে দেখাকে দেখা বলে? তাকাতেই তো পারিনি ভালো করে।

চিত্রা আলতো হাসি মাখিয়ে অস্ফুটে বলল..
___তাহলে এখন দেখেন!

বলেই সে নিজের দুইহাতে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেললো..

দ্বীপ তখনি তার দুইহাতে চিত্রার হাত সরালো, দেখলো চিত্রা চোখ বন্ধ করে আছে, সেও লাজুক হাসিতে বলল..
___ ঢেকে ফেললে কিভাবে দেখবো! এ বাবা এতো লজ্জা আমার বউটার!

আর ঠিক সেসময় দ্বীপের ফোনে রিংটোন বেজে ওঠলো,দ্বীপ সাথে সাথে চিত্রাকে ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো..
চিত্রাও পেছনে ফিরে দ্বীপের দিকে তাকালো, ওপাশ কি বলছে চিত্রা না শুনলেও দ্বীপের কথা শুনতে পাচ্ছে,দ্বীপ বলতেছে..
___ শুনো আমি এখনো আমার বউকে দেখিইনি৷ আমি এখন বারান্দায়, তুমি বিশ্বাস না করলে কি করবো বলো? আর মেয়েটা তো আস্ত বজ্জাত, তুমি না করা সত্ত্বেও বিয়েটা করলো। এর জন্য তো নিশ্চয়ই ভুগবে!

দ্বীপের এসব কথা শুনে চিত্রা হাঁ হয়ে রইলো, এখনি না দ্বীপ তার কাছে এসে কি সব দৃশ্য দেখালো। আর এখনি এসব কি বলতেছে!
এ কেমন গোলকধাঁধা, তাকে নিজ মুখে বলেছে দ্বীপ নিজের পছন্দে তাকে বিয়ে করেছে আর এখন কিনা তার সেই প্রেমিকাকে বলতেছে তার বউ ফাজিল!
এই মানুষটার আচরণ এতো অস্পষ্ট কি করে হতে পারে?
কি আছে এর পেছনে?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here