#আকাশে_তারার_মেলা
#লেখিকাঃআসরিফা_ সুলতানা_জেবা
#পর্ব -৪
এক গাদা বই দেখে জ্বর জ্বর ভাব চলে এসেছে তুলির। সোফায় বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ইনশিতা ও আমরিনের সাথে। নতুন বই দেখে আমরিন তো মহা খুশি। কিন্তু বেচারী তুলির অবস্থা বেহাল। তুলির দিক তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে ইনশিতা ও আমরিন। সায়েরা বেগম যে সেই কখন ওদের জন্য কফি পাঠিয়েছে সেই খেয়াল ও নেই কারো। কেউ মাথায় হাত দিয়ে রাখতে ব্যস্ত তো কেউ ব্যস্ত অবলোকন করতে।
একটু আগেই আদ্র বই গুলো এনেছে। ড্রইং রুমের টেবিলে সার্ভেন্ট কে বই গুলো রাখার ইশারা করে তুলির মুখের দিকে এক পলক চেয়ে চলে গেল উপরে। তুলি তো বই দেখেই অজ্ঞান অজ্ঞান অবস্থা আদ্রর দিকে তাকানোর ও আর সুযোগ পায় নি। সায়েরা বেগম পাশে এসে বসল। হাসি মুখে বলে উঠল,
–“বাহ্! আদ্র দেখছি তোদের বই ও নিয়ে এসেছে। ভালোই হলো। এখন থেকেই পড়া শুরু করে দে দু’জন। ভালো জিপিএ পেতে হবে কিন্তু। ”
সায়েরা বেগমের কথা হয়তো কারোই কর্ণগোচর হয় নি। সবার দিকে চেয়ে তার চোখ গেল তুলির উপর। নিজের দুই মেয়ে কে ধমকে উঠলেন তিনি।
–“কফি না খেয়ে ঠান্ডা করে ফেললি। আর বোকার মতো বসে আছিস কেন দু’জন? তোদের কে কি এখন সেরা বোকার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে যে এমন ভান ধরে বসে আছিস?”
মায়ের ধমকে ভরকে গেল ইনশিতা ও আমরিন। মুচকি হেসে বলল,,
–“তোমার বোনের মেয়ের মাথায় হাত কেন আম্মু? দেখো না ছোট্ট তুলি কি চিন্তিত! ”
ইনশিতার কথা শুনে ঠিক হয়ে বসল তুলি। সায়েরা বেগম তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,,
–“কি হয়েছে মা? তুই কি কোনো কারণে চিন্তিত? ”
–” হুম খালা মণি। আমি বায়োলজির ব্যাপারে খুবই চিন্তিত। দেখো না তোমার ছেলে কতগুলো বই নিয়ে এসেছে। এতগুলোই কি পড়তে হবে? আর বায়োলজি দুইটা পার্ট!”
বিষন্ন স্বরে কথাটা বলে উঠল তুলি। তুলির কথা শুনে ইনশিতা ও আমরিন জোরে হেসে দিল। মানুষ ম্যাথ, ইংরেজি, ফিজিক্সে দুর্বল হয় কিন্তু তুলির শেষ পর্যন্ত বায়োলজি তে ভীতি। ইনশিতা হেসে বলে উঠল,,
–“সমস্যা নেই তুলি। ভাইয়া খুব ভালো বায়োলজি পড়ায়। তোকে বরং ভাইয়া পড়িয়ে দিবে।”
মেয়ের দিকে চাইলেন সায়েরা বেগম। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,,
–“আদ্র তো সারাদিন হসপিটালে থেকে রাতে খুব টায়ার্ড থাকে। তার চেয়ে বরং ভালো হবে আদ্রর ফ্রেন্ড সিয়াম কে আমি বলব তুলি কে পড়াতে। শুনেছি সিয়াম ও খুব ভালো পড়ায়।”
আমরিন ও বলে উঠল,,,
–“ঠিক বলেছ আম্মু। আমিও পড়ব সিয়াম ভাইয়ার কাছে। ”
–“ঠিক আছে। তোরা বস। আমি আবার কফি করে আনছি।”
তুলির বিষন্ন মন খুশিতে ভরে গিয়েছিল আদ্রর কাছে পড়তে পারবে শুনে। কিন্তু এখন আরো বেশি বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে তুলি কে অন্য কারো কাছে পড়তে হবে ভেবে। তুলি নিজেই ঠাওর করতে পারছে না আসলে তুলির মন কি চায়। আদ্র নামটা শুনলেও প্রশান্তি বয়ে যায় হৃদয় জুড়ে। উপর থেকে সব কথাই শুনল আদ্র। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে চলে গেল রুমে।
আজ খাবার টেবিলে আদ্র কে দেখতে পায় নি তুলি। আদ্র নাকি খাবে না বলে জানিয়েছে। সন্ধ্যার পর একবার ও দেখা মিলে নি আদ্রর। চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। তুলির চোখে এক ফোঁটা ও ঘুম নেই। আদ্র কে দেখতে না পেয়ে ছটফট করছে তার মন। অন্য এক কারণে ও মনে ছেয়ে আছে অমানিশা। আহান ফোন দিয়েছিল আজ অনেক বার। কিন্তু ফোন রিসিভ করে নি তুলি। কেন করবে? সে তো চায় না কোনো পিছুটান। আহানের প্রতি কৃতজ্ঞ ও তুলি কারণ বিয়েটা না ভাঙলে হয়তো কখনও এখানে আসা হতো না তুলির। আর না কখনও আদ্র নামক মানুষটার সাথে দেখা হতো। তবে আহান তো একবার হলেও ঝুমুর কথা বলতে পারত তুলিকে। এই একটা গোপন সত্যই তুলি কে কষ্ট দিচ্ছে। বার বার বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছে ছোট্ট মন টা। বেলকনিতে এসে দাঁড়াল তুলি। হঠাৎ চোখ গেল পাশের বেলকনিতে। খুবই কাছাকাছি বেলকনি টা। অন্ধকারে কারো বসে থাকার উপস্থিতি বুঝা যাচ্ছে। হাতে জলন্ত সিগারেট। ভ্রু কুঁচকে তাকাল তুলি। কিছু টা কাছে যেতেই নিজের বারান্দার ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় মানুষ টা কে চিনতে একটু হয় ভুল হয় নি তুলির। গলা শুকিয়ে গেল তুলির। শুকনো কন্ঠে আলতো স্বরে ডেকে উঠল,,
–“আদ্র”
ডেকে নিজের মুখে নিজেই চেপে ধরল খুব জোরে। কি হচ্ছে তার এসব? ইদানীং সে আদ্র কে নাম ধরেই সম্বোধন করছে। না চাইতে ও মুখ দিয়ে শুধু এটাই চলে আসছে। তুলির মিষ্টি স্বর কানে এসে বাজতেই হাতের সিগারেট টা ফেলে দিল আদ্র। উঠে দাড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইল তুলির দিকে। হুট করেই লাফ দিয়ে উপস্থিত হল তুলির একদম কাছে। কেঁপে উঠল তুলি। বারান্দা দুটো প্রায় কাছাকাছি ও খোলামেলা। যে কেউ অনাসয়ে আসা যাওয়া করতে পারবে একটি থেকে অপরটি তে। নিজের এতো কাছে আদ্রর উপস্থিতি যেন তুলির শরীরে অজস্র শিহরণ জাগিয়ে তুলল। আস্তে আস্তে এক কদম এক কদম করে পিছিয়ে দেয়ালে গিয়ে ঠেকল তুলি। সম্মোহিত চাহনি নিয়ে আদ্র দেয়ালে এক হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে পড়ল তুলির দিকে। হাতুড়ি পিটা শব্দ শুরু হল তুলির হৃদপিণ্ডে। সেই সাথে হৃদয়ে শীতল স্রোত অনুভব করল আদ্র। তুলির দিকে ঝুঁকে চেয়ে রইল এক দৃষ্টিতে। সম্মুখে থাকা মেয়েটার হৃৎস্পন্দন স্পষ্ট তার কানে এসে বাজছে। শ্যামবতী কন্যার মুখশ্রী তে চোখ বুলাল আদ্র। কম্পনরত ঠোঁটের উপর গিয়ে নজর ঠেকল তার। বুকে শুরু হল ভয়ানক ঝড়। সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিল সে।
“কোনো ক্রমেই ভুল করা যাবে না আদ্র। মেয়েটা এখনো ছোট। তার অবুঝ মনের সুযোগ তুই নিতে পারিস না। কন্ট্রোল কর নিজেকে৷ ”
মনে মনে কথাটা বলেই তুলির উপর থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল আদ্র। তুলি এখনও দেয়ালের সাথে মিশে আছে। বুকে ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে অনবরত। চোখ দুটো বুঁজে নিয়েছে সেই কখন। তুলির কপালে আসা চুলগুলো কানের পিছনে পরম যত্নে গুঁজে দিল আদ্র। অস্পষ্ট, ঘোর লাগা গলায় বলে উঠল,,
—“সবসময় আদ্র ডাকটাই যেন তোমার মুখে থাকে তুলি। আদ্র ব্যতীত যেন আর কোনো ডাকই এতো মধুর ভাবে না আসে তোমার কন্ঠ থেকে। নয়তো তোমায় বোবা হয়ে থাকতে হবে চিরকাল। ”
চোখ মেলে আদ্রর উজ্জ্বল ফর্সা চেহারায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তুলি। ডাগরডাগর আঁখি দু’টো তে বিরাজ করছে মুগ্ধতা। আদ্রর প্রতি মুগ্ধতা! আদ্রর চোখ দুটো তে অদ্ভুত এক নেশা। প্রচন্ড বেগে বুকটা ধুক করে উঠল তুলির। তড়িঘড়ি করে মুখ ফিরিয়ে নিতেই আলতো হেসে বলে উঠল আদ্র,,
—” মানুষ কে মারাত্মক নেশায় ডুবিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে চলবে? শাস্তি তো পেতেই হবে তুলা!”
চমকাল তুলি। কিছুই বুঝতে পারল না। আমতা আমতা করে প্রশ্ন করল,,
–“কেমন শাস্তি?”
জবাব দিল না আদ্র। তুলির ডান হাত টা টেনে কামড় বসিয়ে দিল আঙুলে। ব্যাথায় চিল্লাতে নিলে সেকেন্ডেই তুলির মুখে হাত চেপে ধরল আদ্র। তুলির চোখের চাহনিতে নিজের চোখ জোড়া রেখে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠল,,
–“আর কখনও ওড়না ছাড়া যেন বেলকনিতে না দেখি। আশা করি কামড় টা তোমায় স্মরণ করিয়ে দিবে।”
কথাটা শেষ করেই আদ্র চোখের পলকে তুলি কে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল নিজের বেলকনিতে। থমকে রইল তুলি। ওড়না রুমে রয়ে গেছে খেয়ালই ছিল না তার। হুঁশ আসতেই দৌড়ে গিয়ে ওড়না নিয়ে এল রুম থেকে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রর দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বলল,,,
–“সিগারেট খেলে ফুসফুসের ক্ষতি হয়, ক্যান্সার হয় আপনি কি ডাক্তার হয়ে এটা জানেন না ডাক্তার সাহেব?”
—” ক্যান্সার হলে তো মরে যেতাম। কিন্তু আমি তো এর চেয়ে ও মারাত্মক ব্যাধি তে আক্রান্ত যা ঘুমোতে ও দেয় না শান্তির নিঃশ্বাস ও ফেলতে দেয় না।”
ধীর স্বরে কথা গুলো বলে রুমের দিকে পা বাড়াল আদ্র। কন্ঠে কেমন যেন বিষাদ মিশে ছিল। তুলি দু-চোখ ছোট করে তাকাল।
” আদ্রর কথাগুলোর মাঝে এতো রহস্য কেন? ওনি কি সহজ ভাষায় কথা বলতে পারেন না?আমার মস্তিষ্ক তো ওনার কথা ধারণ করতে পারে না। এখনই মিষ্টি স্বর তো এখনই আবার গম্ভীরতা। হঠাৎ দূরে যায় আবার হঠাৎ কাছে এসে আমার হৃদপিণ্ডের চলাচল প্রায় থামিয়ে দেয়। অদ্ভুত আপনি আদ্র! ”
আদ্রর যাওয়ার পানে চেয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল তুলি।
—————
কলেজে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে প্রায় পনেরো দিনের মতো হয়েছে। এই পনেরো দিনে তুলি ও আমরিন নতুন নতুন বান্ধবী ও জুটিয়ে ফেলেছে। তুলি ও আমরিনের মাঝে সময়ের স্রোতে গড়ে উঠেছে গভীর বন্ধুত্ব। গত তিনদিন ধরে আমরিন কে ওদের ক্লাসের একটা ছেলে ফেইসবুকে প্রেম নিবেদন করছে। ছেলেটা দেখতে খারাপ না। কিন্তু তুলির কথা হলো ছেলেদের ফাঁদে কিছুতেই পা দেওয়া যাবে না। আজকাল তলে তলে একাধিক প্রেম করে আবার সুন্দরী মেয়ে দেখলেই প্রেমের প্রস্তাব দিতে শুরু করে। ছেলেটা ক্লাসে ঢুকতেই আমরিন ইশারা করে দেখাল তুলি কে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি হাসল তুলি। আমরিনের দিকে চেয়ে বলল,,,
–“তাহলে পরীক্ষা করে দেখা যাক?”
আমরিন ও দুষ্ট হেসে বলল,,
–“অবশ্যই। ”
‘আমার তোমাকে খুব ভালো লাগে। তোমার কাছে আমাকে কেমন লাগে? যদি ভালো লাগে তবে কলেজ ছুটির পর কলেজের পিছনের গোলাপ গাছ থেকে একটা কালো গোলাপ এনে আমায় দিও। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।’
একটা কাগজে সুন্দর করে বাক্য গুলো লিখে কাগজ টা মুড়ে ছুঁড়ে মারল ছেলেটার দিকে। একটু পিছনের দিকে বসায় কারোই চোখে পড়ে নি তুলির এই কান্ড টা। কাগজ টা গিয়ে ছেলেটার গায়ে পড়ল। ফিরে তাকাতেই চোখ পিটপিট করে চাইল তুলি। সাথে সাথেই ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে হেসে কাগজ টা পকেটে ঢুকিয়ে নিল। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আমরিন।তুলির হাত চেপে ধরতেই তুলি গলা ঝেড়ে বলে উঠল,,
–দেখলি তো কেমন ছেলে?তুই যে পাশে আছিস তাও তো তোয়াক্কা করে নি। তার জন্যই পরীক্ষা টা করা। শালা, অসভ্য পোলা। হেতেরে তো আমি ছাড়মু না। একবার ছুটি হোক কলেজ টা। জুতো পিটা করমু ফাজিল পোলা রে।
তুলির কাধে মাথা হেলিয়ে আমরিন ঠোঁট ভেঙে বলল,,
–ঠিক বলেছিস দোস্ত। অসভ্য পোলার প্রেমে যদি আমি ডুবে যেতাম তাহলে আমার সর্বনাশ হয়ে যেত। ভয়ংকর সর্বনাশ। এই পোলারে তুই আর আমি মিলে আজকে উচিত শিক্ষা দিমু।
______
গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে আদ্র। কালো শার্ট, চোখে সানগ্লাস। অস্থির এক লুক নিয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে ফেসবুক স্ক্রল করতে মগ্ন। কিছু মেয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে। চোখ মোবাইলে নিবদ্ধ থাকলেও কারো কারো নজর যে নিজের উপর তা ঠিকি অনুধাবন করতে সক্ষম আদ্র। মুচকি হেসে মোবাইল টা পকেটে ঢুকিয়ে নিল। আমরিন ও তুলির অপেক্ষায় ছিল এতোক্ষণ। এদিক দিয়েই বাসায় যাবে তাই ভাবছিল তুলি ও আমরিন কে সাথে নিয়ে যাবে। তিন তিনটা দিন তুলি কে দেখে নি তার আঁখি দুটো। সেমিনার থেকে ফিরে সোজা কলেজের সামনেই হাজির। তৃষ্ণার্ত চোখ দুটো সামনের দিকে তাক করতেই চড়চড় করে রক্ত উঠে গেল আদ্রর মাথায়। চোখ দুটো তীব্র লাল হয়ে এল। হাত মুঠ করে নিজের চুল গুলো টেনে গাড়িতে খুব জোরে ঘুষি বসিয়ে দিল। এমন কান্ড দেখে ঘাবড়ে গেল মেয়েগুলো। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে সরে গেল সেখান থেকে।
ক্লাসের সেই ছেলেটা সত্যি সত্যিই গোলাপ নিয়ে হাজির আমরিন ও তুলির সামনে। গোলাপ টা তুলির দিকে বাড়িয়ে রেখেছে পাঁচ মিনিট যাবত। মুখ চেপে হাসছে তুলি। চোখ কটমট করে রাগী কন্ঠে বলে উঠল আমরিন,,
–এই ছেলে তোমার লজ্জা করে না? আমাকে প্রপোজ করে আবার আমার বেস্টি কেই ফুল দিচ্ছ।
একটু হাসল ছেলেটা। এক হাত দিয়ে মাথা চুলকে বলল,,
–লজ্জা কিসের? তুমি আর তোমার বেস্টি তো একই। একজন আমার গার্লফ্রেন্ড হলেই হয়।
ধপ করে জ্বলে উঠল আমরিন। পায়ের জুতো খুলে ছেলেটা কে মারতে নিলে তুলি বাঁধা দিয়ে বলে উঠল,,,
–দোস্ত আমি কখনও কালো গোলাপ দেখি নি রে। বেচারা কতো কষ্ট করে চুরি করে গোলাপ টা এনেছে। এই ছেলে গোলাপ দিয়ে দাও আমায়। তারপর খাও আমরিনের জুতোপেটা।হেব্বি মজা কিন্তু! এই আমরিন কষিয়ে দিস।
ছু মেরে গোলাপ টা হাতে নিতে না নিতেই তুলি ছিটকে পড়ল মাটিতে। তুলি কে পড়তে দেখে আতঙ্কিত নয়নে চাইল আমরিন ও ছেলেটা। মাথা তুলে ভাইয়ের লাল বর্ণের চোখ দেখে পিলে চমকে উঠল আমরিনের। থরথর করে কাঁপতে লাগল সে। জুতাও হাত থেকে পড়ে গেছে। ছেলেটা সেই কখনই প্রগাঢ়পাড়। তুলির দিকে দৃষ্টি রেখেই আদ্র আমরিনের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,,,
–গাড়িতে গিয়ে বস।
অসহায় চোখে তুলির দিকে চেয়ে ভোঁ দৌড় মারল আমরিন। বিস্ময়ে অভিভূত তুলি। চোখে অজস্র ভয়। এক হাঁটু গেড়ে তুলির কাছে বসল আদ্র। হাত বাড়িয়ে তুলির লাল হয়ে যাওয়া গাল টায় স্পর্শ করল। জ্বলে উঠল গাল টা। চোখ ছাপিয়ে নেমে এল জল। দাঁড়িয়ে পড়ল আদ্র। রাগ টা বজায় রেখে বলে উঠল,,,
–উঠে দাঁড়া।
তুলি কোনো রেসপন্স করল না। থাপ্পড় টা এতোটাই জোরে লেগেছে যে কানটা ও ঝিম ধরে আছে। তুলির সাহস দেখে মেজাজ প্রচন্ড গরম হয়ে গেল আদ্রর।
–আমি কি বলেছি তোর কানে ঢুকে নাই? সাহস বেড়ে গেছে তাই না? হাত পা কেটে ফেলব তোর। উঠে দাঁড়া বলছি,,,,,!
আদ্রর উচ্চস্বরে ধমকে কেঁপে উঠল তুলি। বহু কষ্টে উঠে দাঁড়াতেই হাতের কনুই ধরে টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে এল আদ্র।চোয়াল শক্ত করে বলে উঠল,,,
–আজ তোকে কালো গোলাপ পিষে খাওয়াবো। কালো গোলাপের শখ আজীবনের জন্য মিটিয়ে দিব।
#আকাশে_তারার_মেলা
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব -৫
তুলি কে টানতে টানতে বাসায় এনে ড্রইং রুমের সোফায় বসাল আদ্র। মাথা নিচু করে বসে রইল তুলি। তুলির পাশে দাড়িয়ে আমরিন ভিতু চোখে চেয়ে আছে ভাইয়ের দিক। সামনের সোফাতে বসে আদ্র ও মাথা নিচু করে নিজের রাগ দমানোর চেষ্টায়। সারা রাস্তায় একটা শব্দ করে ও নি। এমনকি তুলির দিকে ফিরেও তাকায় নি। তুলি কে এভাবে টেনে আনতে দেখতে পেয়ে সায়েরা বেগম ও ইনশিতা দৌড়ে এল ড্রইং রুমে। দুজনেই বাহিরে বাগানের সাইডে বসে কথা বলছিলেন। একজন সার্ভেন্ট তড়িঘড়ি করে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসল আদ্রর জন্য। পানির গ্লাস টা শেষ করে মায়ের দিকে তাকাল আদ্র। ছেলের নীলাভ চোখের মণি লাল বর্ণের দেখতেই বুক টা ধুক করে উঠল সায়েরা বেগমের। তুলিও মাথা নিচু করে আছে। আমরিন ও কেমন ঠকঠক করে কাঁপছে। সবকিছু খুব এলোমেলো মনে হচ্ছে ওনার কাছে। আতঙ্কিত স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়লেন আমরিনের দিকে,,
–“কি হয়েছে আমরিন?”
আমরিন কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কিছু বলতে নিবে তার আগেই হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিল আদ্র। তুলির নতজানু মুখের দিকে এক পলক চেয়ে তাচ্ছিল্যের সহিত বলে উঠল,,,
–“তোমার বোনের মেয়ের খবর রাখো আম্মু? পড়াশোনা না করে ফুর্তি করে বেড়ায়।আজ,,
মাথা তুলে আদ্রর দিকে চাইল তুলি। কলিজা মুচড়ে উঠল তার। আদ্র সব বলে দিবে নাতো? বললে সায়েরা বেগম হয়ত কষ্ট পাবেন। কিভাবে মুখ দেখাবে তুলি মায়ের মতো মানুষ টা কে যে তাকে নতুন ভাবে বাঁচার একটা রাস্তা দেখিয়েছে?
–“আজ ওদের ক্লাস টিচারের সাথে দেখা হয়েছিল। তুলি নাকি একদমই পড়াশোনা করে না। কোনো পড়া ও পারে না।তাই ওকে আজ থেকে আমি পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি মা। ”
অপলকভাবে চেয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠল আদ্র।
চমকাল তুলি ও আমরিন। ড্যাবড্যাব চোখে দু’জনেই চাইল আদ্রর দিকে। আদ্র সায়েরা বেগম কে সত্য টা বললেন না দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ল দু’জনেই। সায়েরা বেগম ফুঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে ছেলের দিকে তাকালেন। সোফায় বসতে বসতে বললেন,,,
–“আমি তো ভাবলাম তুলি কি না কি করেছে যার কারণে তুই রেগে গেছিস। যাক আল্লাহ বাচিয়েছে নাহলে তোর যা রাগ আমার তুলি মা টা কে তো মেরেই ফেলতি তোকে রাগানোর অপরাধে।”
তুলির দিকে তাকিয়ে আবারও বলে উঠলেন,,
–“এই তুলি মাথা নত করে বসে আছিস কেন?”
ভড়কে গেল তুলি। মাথা তুললে তো সায়েরা বেগমের চোখ সবার আগেই গালের উপর গিয়ে পড়বে। গাড়ির আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে গাল টা তে পাঁচ আঙুলের ছাপ দৃশ্যমান।
–“আসলে খালামণি মাথা টা খুব ব্যাথা করছে। সোজা হয়ে বসলে ব্যাথা ভীষণ বেড়ে যায়। তাই নত হয়ে বসে আছি। ”
সিরিয়াস মোমেন্টে তুলির অদ্ভুত কথা শুনে মনে মনে ভীষণ হাসি পেল আমরিনের। মুখ চেপে কোনোমতে আঁটকে রাখল হাসি টা। আদ্র এখনও ভাবলেশহীন ভাবে তুলির দিকে তাকিয়ে যা তুলিকে আরও অস্বস্তিে ফেলে দিচ্ছে। তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন সায়েরা বেগম। পরম মমতা পেয়ে আবেশে চোখ বুঁজে এল তুলির।
–“ঠিক আছে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আমি খাবার রুমেই পাঠিয়ে দিব।”
মাথা নেড়ে বহু কষ্টে সিঁড়ি বেয়ে উঠে রুমে আসল তুলি। পা দুটো ও চলছিল না। মনে হচ্ছিল কেউ বোধহয় শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিল। দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল ধপ করে। বালিশে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠল। এতোক্ষণ কান্না গুলো আঁটকে রেখেছিল খুবই কষ্টে। বদ্ধ রুমে দেখার মতো কেউ নেই তাই ফুপিয়ে কেঁদে উঠল তুলি। মন টা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না আজকের কান্ড টা। গালটা ও জ্বলছে ভীষণ। এক ঝাঁক অভিমান এসে বাসা বেঁধেছে মন মাঝারে। ফুপাতে ফুপাতে বলে উঠল,,
–“আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করব না আদ্র ভাই। এতো নিষ্ঠুর আপনি! অসভ্য, পাষাণ লোক। আমি আর কোনোদিন ও কথা বলব না আপনার সাথে। চলে যাব আমি এখান থেকে। থাকব না আর এখানে।”
–“কোথায় যাবে?”
ভরাট কন্ঠস্বর কানে এসে ধাক্কা খেল তুলির। সে কি ভুল শুনেছে? কন্ঠ টা আদ্রর কন্ঠ ছিল না? পরক্ষণেই মনে হল বদ্ধ রুমে আদ্র কিভাবে আসবে? তাই কোনোদিকে না তাকিয়ে আবারও বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল। পাশে কারো শুয়ার শব্দ পেতেই কান্না থেমে গেল তুলির। ভয়ে কেঁপে উঠল মন। কোনো ভূত নেই তো রুমে? প্রশ্ন টা মনে জাগতেই শঙ্কিত চোখে ধীরে ধীরে পাশ ফিরে দেখল। হুঁশ উড়ে গেল তুলির। লাফ দিয়ে উঠে বসল বিছানায়। তুলির চেহারার দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকাল আদ্র। মাথার নিচে দু হাত রেখে আরেকটু আরাম করে শুয়ে পড়ল যেন চমকানোর মতো কিছুই হয় নি। অবাক হলো তুলি। বারান্দার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারল আদ্র কিভাবে এসেছে।
–“বললে নাতো কোথায় যাবে?”(হেসে)
আদ্রর হাসিতে গা জ্বলে উঠল তুলির।
“এভাবে মেরে আবার হাসা হচ্ছে। একদম কথা বলবি না তুলি এমন খারাপ মানুষের সাথে।ওনি তো ডাক্তার না আস্ত বড় এক কসাই।”
তুলি উঠে পড়ল বিছানা থেকে। আদ্র ও তুলির সাথে উঠে পড়ল। তুলি যে অভিমানে কথা বলছে না তা ঠিকি বুঝতে পেরেছে আদ্রর মন। কাভার্ড থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল তুলি। সাথে সাথেই টান পড়ল হাতে।থমকে গেল তুলি। যা-ই হয়ে যাক আজ মুখ দিয়ে কোনো শব্দ ও বের করবে না তুলি। হাত মুচড়াতে লাগল তুলি ছোটার জন্য। আদ্রর বলিষ্ঠ হাতের শক্তির কাছে তুলির মতো দুর্বল মানবীর পেরে উঠা সহজ না। তবুও তার নিছক চেষ্টা। মুচকি হাসল আদ্র। হাত টা টান দিতেই তুলির পিঠ এসে ঠেকল আদ্রর বুকে। শরীরের সর্বাঙ্গ শিথিল হয়ে এল তুলির। পা দুটো ও ভেঙে ভেঙে আসছে। নিজের শরীরে সবটুকু ভর ছেড়ে দিল আদ্রর বুকে। ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠল আদ্রর। কোলে তুলে নিল তুলি কে। আচমকা নিজেকে শূন্যে অনুভব করতেই ভয়ার্ত চোখে তাকাল তুলি। হাত থেকে কাপড় গুলো পড়ে গেল মেঝেতে। আদ্রের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছু সময়। বুকের দ্রিমদ্রিম শব্দ সময়ের সাথে বেড়েই চলেছে। এ কেমন অনুভূতি জন্মাচ্ছে তুলির মনে? কোথায় গেল জেদ,অভিমান? মনের আনাচে-কানাচে শুধু হিম বাতাস বয়ে চলেছে। তুলি কে খাটে বসিয়ে দিল আদ্র। চেয়ার টেনে নিজে বসল তুলির সম্মুখে। পাশের টেবিলের উপর রাখা বরফের বাটি থেকে বরফের টুকরো নিয়ে তুলির গালে ছোঁয়াতেই আহ্ করে উঠল তুলি। চোখ মুখ খিঁচে সরিয়ে নিল কিছুটা দূরে। সূক্ষ্ম নিঃশব্দ নিশ্বাস ফেলল আদ্র। মৃদু সুরে বলে উঠল,,,
–“গালটা খুব জ্বলছে তাই না তুলা? ইশ! থাপ্পড় টা খুব জোরেই লেগে গেছে। রাগ উঠলে কেন যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। তোমার কি দরকার ছিল ঐ ছেলের কাছ থেকে গোলাপ নেওয়ার? বয়স একটুখানি অথচ এখনই প্রেম করতে মাঠে নেমে পড়েছে। ”
নিষ্পলক চোখে চেয়ে রইল তুলি। আদ্রর খোঁচা মারা কথা গিয়ে চাপা পড়ে থাকা রাগ টা বেড়ে হয়ে গেল পাহাড়সম। করে বসল এক দুঃসাহসিক কান্ড। আদ্রর কলার দু হাতে খামচে ধরল শক্ত করে । অভিমান, রাগে এক নাগাড়ে চিতকার করে বলে উঠল,,,
—“আপনার সাহস কিভাবে হয় আমাকে মারার? কে আপনি আমাকে থাপ্পড় মারার? কি অধিকার আছে আপনার আমার উপর? সম্পর্কে খালাতো ভাই হন তাই যথাযথ সম্মান করি। তারজন্য এই না যে বিনা দোষে আপনি আমাকে মারবেন। ফুল নিয়েছি আরো নিব। আমার ইচ্ছে হলে আমি প্রেম করে বেড়াব।”
কথাগুলো বলে আবারও কান্নায় ফুপাতে লাগল তুলি। দৃষ্টি আদ্রর দিকে স্থির করতেই শিউরে উঠল সে। আদ্রর মুখের ভঙিমা বুঝা বড় দায়। চেহারায় ও নেই রাগের কোনো প্রতিফলন। তুলির দিকে চেয়ে আছে নিষ্পলক। নীলাভ চোখ জোড়ায় অজস্র মায়া ভাসমান। ধুকধুক করছে তুলির বুকটা। সে যে কত্ত বড় সাহস দেখিয়ে ফেলেছে বুঝতে পেরেই ধীরে ধীরে হাত ছাড়িয়ে আনতে লাগল আদ্রর কলার থেকে। কিন্তু আনতে চেয়ে ও পারে নি। কলারে দু-হাত রেখেই চেপে ধরল আদ্র। আচমকাই চোখে ফুটে উঠল রাগের ছাপ। ভীত চোখ তাকাল তুলি।প্রাণটা বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। আদ্রর কলার ধরা তার একদম ঠিক হয় নি। রাগের বশে কি করে বসলাম? মনে মনে প্রশ্ন টা আওড়াল তুলি।চোয়াল শক্ত করে তুলির দিকে আরেকটু ঝুঁকে পড়ল আদ্র।দু’জনের নাক ছুঁই ছুঁই। আদ্রর গরম নিশ্বাস আবেগের তুমুল বর্ষণ করছে তুলির ভীতি মনে।আদ্র নামক মানুষটা তার হৃদয়ের স্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনুভূতি গুলো চিতকার করে কিশোরী মন টা তে জানান দিচ্ছে,,, –“তুই প্রেমে পড়ে যাচ্ছিস তুলি। প্রেমের বর্ষণ হচ্ছে তোর হৃদয়ে। ”
নিজেকে পাগল পাগল লাগছে তুলির। আদ্রর এতো টা নিকটে আসা নিতে পারছে না সে। মুখ বাম দিকে ফিরিয়ে নিতেই শক খেল তুলি। কি হল এটা? হৃদয়ের গহীনে অদ্ভুত ভাবে বিচরণ করতে লাগল এক নতুন অনুভূতি। কল্পনা ও করে নি তুলি এমন কিছু হবে। নিজের ডান গালে আপনা আপনি হাত চলে গেল তার। এলোমেলো হয়ে গেল মন। নড়ে উঠল ভিতর টা। জীবনে প্রথম, প্রথম বার কোনো পুরুষের এমন স্পর্শ। আদ্রর দিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাল তুলি। নিজের গালে আদ্রর ঠোঁটের স্পর্শ ভাবতেই তুলি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বারবার। সটানভাবে বসে আছে আদ্র। মুচকি হেসে তুলির দিকে তাকিয়ে বলল,,
–“আশা করি আর কিছুই বলতে হবে না। অধিকার থাকুক আর না থাকুক এ জীবনে তোমার বোধহয় আর প্রেম করা হবে না। নেক্সট টাইম কলারে হাত দেওয়ার আগে ভেবে নিবে আমি তোমার চেয়ে কতটা বড়। এখনো আদবকায়দা শিখা বাকি। আমি তোমার চেয়ে কতটুকু বড় জানো তো?”
তুলি এখনও নিস্তব্ধ। হাতটা ও গালে চেপে রেখেছে। নিজ চক্ষু তে বিশ্বাস করতে পারছে না তার সাথে এক শিহরিত ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেছে। মনের মাঝে হাজারো অনূভুতি নিয়ে নিশ্চুপ ভাবে তাকিয়ে আদ্রর দিকে। হালকা হাসল আদ্র। এ হাসির রেখা তুলির হৃদয়ের গহীনে আঘাত হানল তীব্রভাবে।
–“কি হল জবাব দাও?”
— “সসসাত বছরের বড় হবেন।”
আমতাআমতা করে বলল তুলি। আদ্র সম্পর্কে বিশেষ জানা নেই তার। বুঝ হওয়ার পর কখনোই আদ্র কে দেখে নি সে। মায়ের কাছ থেকে শুনেছে একটু একটু। আগ্রহ না থাকায় খুব বেশি জানা হয় নি তার। খুব বেশি বললে ভুল হবে তার পুকুরে পড়ে যাওয়ার ঘটনা বাদে আর কিছুই কখনো জানতে পারে নি তুলি। মৃদু হাসল আদ্র। শীতল কন্ঠে বলল,,,
–“আমি তোমার চেয়ে দশ বছরের বড় তুলি।”
প্রচন্ড অবাক হল তুলি। বিস্ফোরিত চোখে চাইল আদ্রর দিকে। আদ্র কে দেখে তার মনেই হয় নি এতো বড় হবে নিজের থেকে। দেখলেই মনে হয় যেন চব্বিশ কিংবা পঁচিশ বছরের এক সুদর্শন যুবক। মনে মনে ভীষণ লজ্জিত হচ্ছে তুলি। কম হোক আর বেশি হোক তার একদমই কলারে হাত দেওয়া উচিত হয় নি।
–“ক্ষমা করবেন। আসলে আমি,,, ”
থামিয়ে দিল আদ্র। শান্ত কন্ঠে বলল,,,
–“আমার কাছে তুমি কখনো ও ক্ষমা চাইবে না তুলি। পেইন কিলার রেখে গিয়েছি খেয়ে নিও।”
কথাটা বলেই বারান্দা দিয়ে চলে গেল আদ্র। তুলি এখনও বিস্ময়ে থ মেরে রইল। আদ্রর কথার পেচ,,কাজগুলো কেন ধারণ করতে পারে না তুলির মস্তিষ্ক? আচ্ছা আদ্র ভাইয়া কি আমায় পছন্দ করেন?–বিড়বিড় করে আনমনে বলে উঠল তুলি।
____________
রাত নয়টা বাজে,,
আদ্র হসপিটালের একটা জরুরি কাজ করছে বসে বসে। দরজায় টোকা পড়তেই বিরক্ত বোধ হল আদ্রর। চোখ ফিরিয়ে দরজার কাছে বোন কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্তিমাখা চোখ দুটো শান্ত হয়ে এল। আলতো হেসে বলল,,
–আয় আমরিন।
ভীতু মন দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে এসে বিছানায় বসল আমরিন।মন উশখুশ করছে বিকালের সত্য টা বলার জন্য যে তুলির কোনো দোষ ছিল না।
—কিছু বলবি?
—হুম ভাইয়া।
–কি বলবি একটু তাড়াতাড়ি বল।
–আসলে ভাইয়া তুলির কোনো দোষ ছিল না। আমিই তুলি কে এসব করতে বলেছি।
একে একে সব খুলে বলল আমরিন। দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছাড়ল আদ্র। কান্নারত আমরিন কে বুকে টেনে নিয়ে বলল,,
–তুলির দোষ ছিল তোর ও ছিল আমরিন। তোদের উচিত হয় নি এমনটা করার। এর বিপরীত ও হতে পারত তোদের সাথে।ছেলেটা তোদের ক্ষতি ও করতে পারত। দুষ্টমির ছলে ও এমনটা করা ঠিক হয় নি।
–আমাকে ক্ষমা করে দাও ভাইয়া।
–দিব তবে একটা শর্ত আছে।
মাথা তুলে আদ্রর দিকে তাকাল আমরিন। অস্ফুটস্বরে জিজ্ঞেস করল,,
–কি শর্ত ভাইয়া?
আদ্র উঠে গিয়ে দরজা টা চাপিয়ে আসল। বলা তো যায় না কে শুনে নেয়। তারপর আমরিন এক এক করে বুঝিয়ে বলল সব। অতিশয় অবাক হল আমরিন। মনে মনে ভাইয়ের জন্য খুশি হলেও একটা সত্যি যে লুকিয়ে থাকবে না। আজ না হোক কাল তো তুলি জেনেই যাবে। বাবা জানতে পারলে বাড়িতে তুফান হবে। আর আদ্রই বা কিভাবে ম্যানেজ করবে? পারবে তার ভাইয়ের কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই। আল্লাহ চাইলে হয়তো তার ভাইয়ের খুশি গুলো কেউই কেঁড়ে নিতে পারবে না। এখন বাকি টা নির্ভর করছে তুলির উপর।হাসি মুখে সম্মতি জানাল আমরিন। জবাবে বোনের মাথায় হাত বুলাল আদ্র।
ইনশিতার রুমে বসে আড্ডা দিতে দিতে এগারো টা বেজে গেছে। এখন না ঘুমোলে সকালে ঠিক সময় আর উঠা হবে না। পায়ের গতি বাড়িয়ে রুমের কাছে এল তুলি। দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই প্রথমে নজর গেল টেবিলের উপর। একগুচ্ছ কালো গোলাপ খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা টেবিলে যা দেখে মাথা ঘুরে গেল তুলির। বিকালের কথা মনে হতেই ভয় আরো চেপে ধরল গভীর ভাবে।ভীতি, শঙ্কায় মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলে পিছন থেকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল কেউ। তুলির ঝাপ্সা চোখে দৃশ্যমান হল আদ্রর ভয়ার্ত চেহারা। সাথে সাথেই বিড়বিড় করে বলে উঠল,,,
–“আমি কালো গোলাপ খাব না আদ্র।”
চলবে,,,
(