#আকাশে_তারার_মেলা ✨
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব -৬
চারদিকে নিস্তব্ধতা। নেই কোনো নিশাচর প্রাণীর ডাক বা কোনো শব্দের উৎস।সারা ঘরময় ছড়িয়ে আছে নিস্তব্ধ অনুভূতি। শ্যামবর্ণা কন্যা ডুবে আছে গোলাপের নেশায়। অজস্র আবেগের, অনুভূতির সঞ্চার হচ্ছে তুলির হৃদয়ে। কালো গোলাপ গুলোর কাছে নাক নিয়ে নিঃশ্বাস টেনে নিচ্ছে তুলি। ক্রমশই ভারী হয়ে আসছে তার নিঃশ্বাস। বুকের মাঝে অজানা অনুভূতি ঝড় তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মনের মাঝে ক্ষণে ক্ষণে উঠছে উত্তাল ঢেউ। ভাবতেই শিহরিত হচ্ছে আবার লাজুক লাজুক হাসি ও হাসছে যে আদ্র ওর জন্য কালো গোলাপ এনেছে। খানিক সময় আগেও কতো ভয় পাচ্ছিল। অথচ এখন অনুভূতির স্রোতে ভেসে যেতে ব্যস্ত।
তখন চোখ খুলে দেখল আদ্র হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চেয়ে আছে এক ধ্যানে। নীল বর্ণী চোখ দুটো টকটকে লাল। চেহারায় অস্থিরতার ছাপ। চুলগুলো ও কেমন এলোমেলো হয়ে আছে। আদ্রর এই অস্থির চেহারা তুলির হৃদপিণ্ডে এক শীতল অনুভূতির জন্ম দিল।বুকটা ও দরফর করতে লাগল প্রচন্ড গতিতে।এমন লাগছে কেন আদ্র কে? প্রশ্ন টা মনে রেখেই উঠে বসতে নিলে নড়েচড়ে উঠল আদ্র। তুলি কে বসিয়ে দিয়ে নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ তুলির হাত টা আলতো করে চুমু খেল। শিউরে উঠল তুলি। এসির ঠান্ডায় ও কপালে জড়ো হল বিন্দু বিন্দু ঘাম। আবার মনের আষ্টেপৃষ্টে বয়ে যেতে লাগল প্রশান্তির বাতাস। আচ্ছা প্রেমে পড়লে কি এমনটাই হয়? তবে কি আমি প্রেমে পরে গেছি নাকি এটা নিতান্তই আবেগ? মন পাঁজরে প্রশ্ন টা সৃষ্ট হতেই আদ্রর দিকে তাকাল তুলি। মলিন কন্ঠে বলে উঠল আদ্র,,,
–এভাবে সামান্য কারণে ভয় পেয়ে কেউ বেহুশ হয়ে যায়?তুমি জানো কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি?মুহুর্তেই মনে হচ্ছিল কে যেন আমার কলিজা ছিঁড়ে নেওয়ার চেষ্টায় উঠে পড়ে লেগেছিল।
অতিশয় বিস্ময়ে জড়ীভূত হয়ে পড়ল তুলি। আদ্রর কথার জবাবে কি বলবে জানা নেই তার৷ সে তো অনুভূতির সাথে যুদ্ধে নেমেছে। যেই যুদ্ধে মস্তিষ্কের চেয়ে মনে সঞ্চারিত অনুভূতি গুলো জয়ী হচ্ছে বার বার। হৃদপিন্ডের উঠানামা অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। আদ্রর কথার মায়ায়, অস্থির চোখের মায়ায় ডুবে যাচ্ছে তুলি। কেমন নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে তুলির মাঝে। আদ্রর স্পর্শ যেন তার জন্য কারেন্টের ঝটকার মতো। ঝটপট হাত টা সরিয়ে নিল তুলি। ভীষণ হতভম্ব সে। সামান্য জ্ঞান হারাতেই কি তার জন্য আদ্রের এমন অবস্থা? সত্যি কি তাই? নিজের মাঝে যেন নিজেকেই হারিয়ে ফেলছে তুলি। নিমিষেই অস্তিত্বে মিশে গেল আদ্র আহনাফ নামক মানুষটা। দু চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল আদ্র। টেবিল থেকে কালো গোলাপ নিয়ে একটা গোলাপ গেঁথে দিল তুলির কানের পিঠে। চমকাল তুলি। হতবিহ্বল চোখে তাকাল আদ্রর মুখের দিকে। আদ্রর ঠোঁটের কোণে প্রস্ফুটিত এক হাসি। আচমকাই তুলির মনে হল তার হৃদয় অন্য কারো দখলে চলে যাচ্ছে। পরক্ষণেই আবার মনে হল তার মনের গহীনে তো আদ্রর জন্য তীব্র আর্তনাদ । দখল করে নিতে চাই আদ্র কে। প্রেমের বর্ষণে ভিজতে চায় আদ্রর সাথে।
–গোলাপ গুলো তোমার জন্য ছিল। আমি এতোটাও খারাপ না যে তোমায় গোলাপ খাওয়াবো। আমাদের বাসায় পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার আছে এবং আমার যা স্যালারি তাতে তোমাকে খাওয়ানোর সাধ্য ও আছে। সো তোমার গোলাপ খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই তুলা।
মৃদু স্বরে কথাটা বলল আদ্র। গোলাপ গুলো বাড়িয়ে দিল তুলির দিকে। আদ্রর নেশাময় চাহনি তে নিজের চক্ষু জোড়া আবদ্ধ রেখে ফুল গুলো হাতে নিয়ে নিল তুলি। আদ্রর ঠোঁটের হাসি টা আরেকটু প্রস্ফুটিত হল। আর একটু ও দেরি না করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। হয়তো এতো সময় অব্দি নিজেকে সামলে রাখা টাই কঠিন হয়ে পড়েছিল।
দু চোখে ঘুম নেই তুলির। নয়া নয়া প্রেমে পড়লে বুঝি এমনই হয়? আদ্রর স্পর্শ, আদ্রর মায়ায় জড়ানো সেই নীলাভ চোখ কল্পসা করতে মগ্ন কল্পনাবিলাসী তুলি। শুয়া থেকে উঠে বসল তুলি। গোলাপ গুলো বুকে জড়িয়ে বলে উঠল,,,
–আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি আদ্র। আপনার জন্য জমায়িত অনুভূতি গুলো আমায় অসহনীয় পীড়া দিচ্ছে। ঘুমোতে পর্যন্ত দিচ্ছে না।হৃদয়টা কেঁপে উঠছে বার বার। আচ্ছা এটা কে কি প্রেম বলে নাকি ভালোবাসা? প্রেম আর ভালোবাসা কি এক? আমি একদমই বুঝতে পারছি না আদ্র। তবে এতটুকুই ঠাওর করতে পারছি আমি আবেগের বশীভূত নয় আমি আপনাতে মত্ত হয়ে পড়েছি। আপনি আমায় ভালোবাসেন তো আদ্র?আপনার জীবনে অন্য কোনো নারী নেই তো?
কথাগুলো মিনমিন করে বলতে বলতে গোলাপ গুলো বুকে জড়িয়েই শুয়ে পড়ল তুলি।আজ হয়তো প্রশান্তির ঘুম হবে।
আদ্র রুমে আসতেই দেখতে পেল সায়েরা বেগম বসে আছেন। তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল আদ্র। এখন মা কি বলবেন ভালো করেই জানা আছে তার। নিঃশব্দে রুমে ঢুকল সে। বিছানায় বসতেই সায়েরা বেগম বলে উঠলেন,,,
–তুলির রুমে ছিলি তাই না?
–থাকলে?
ছেলের ভাবলেশহীন জবাবে প্রচন্ড পরিমাণে অবাক হলেন সায়েরা বেগম। কঠোর গলায় বলে উঠলেন,,
—তুই কি নিজের দেওয়া কথা ভুলে যাচ্ছিস আদ্র? তুলি এ বাড়িতে কেন আছে জানিস তো? ওরাও ব্যাক করছে আদ্র। তোর বাবা যদি এমন কিছু টের পান তাহলে তুলি কে আর এ বাড়িতে রাখবে না। তুই কি এমনটাই চাচ্ছিস?তুই কিন্তু কথা দিয়েছিলি তুলিকে নিয়ে আসলে তুই,,,
সায়েরা বেগমের কথাটা শেষ করতে দিল না আদ্র। পুরো উপেক্ষা করে পা বাড়াল ওয়াশরুমে। ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে গায়ের গেঞ্জি টা খুলে ছুঁড়ে মারল ফ্লোরে। নিজের হাত মুষ্টি করে লাগাতার ঘুষি মারতে লাগল দেয়ালে। সায়েরা বেগমের বুক চিরে একটা উত্তপ্ত শ্বাস বেড়িয়ে এল। তিনি ভালো করেই জানতেন আদ্র কোনো কথা বলতে রাজি হবে না। নিরুপায় তিনি। ভয় হচ্ছে বাবা ও ছেলের মাঝে দূরত্ব আরো বেড়ে যাবে নাতো!!!!!
_______
কাছের মসজিদ থেকে আযানের শব্দ ভেসে আসছে তুলির কানে। হুড়মুড়িয়ে উঠল তুলি। আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়াল বিছানা থেকে। অযু করে এসে নামাজ আদায় করে নিল। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে কিছুটা পরিপাটি করে নিল। অদ্ভুত এক ইচ্ছে জেগেছে তার মনে। আদ্রর ঘুমন্ত স্নিগ্ধ ভরা চেহারা দেখার ইচ্ছে। আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বলে উঠল,,,
–তুই তো আদ্র ভাইয়ার সঙ্গে একদম বেমানান তুলি। ওনি কতো সুন্দর, চোখ গুলো কেমন নেশাময়। অবশ্য তোর চোখ গুলো ও মায়ার অধিকারী। কিন্তু আদ্র! আদ্র একটু না অনেক বেশিই সুন্দর। বয়স সাতাশ অথচ এখনও চোখে মুখে তরুণের ছাপ।
বারান্দায় এসে আদ্রর রুমের বারান্দায় উঁকি মারল তুলি। খুশিতে লাফিয়ে উঠল সাথে সাথেই। কারণ আদ্রর বেলকনির দরজা মেলা। তুলি কে আর পায় কে! লাফ দিয়ে আদ্রর বারান্দায় উপস্থিত হল মুহুর্তেই। পা টিপে টিপে শব্দহীন রুমে প্রবেশ করল । আবছা আবছা অন্ধকার রুম টা তে। আদ্র থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে খালি গায়ে উপুড় হয়ে ঘুমোচ্ছে। সারা রুম শীতল হয়ে আছে। লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল তুলির গাল দুটো। সংকোচ এসে ঝেকে ধরল প্রচুর পরিমাণে। দৃঢ় পায়ে এগিয়ে গিয়ে আদ্রর মাথার কাছের খালি জায়গা টায় বসল।আদ্রর ঘুমন্ত মুখ দেখে এক মুঠো শান্তি ছুঁয়ে গেল হৃদপিণ্ডে। বেহায়া মন চেয়ে বসল আদ্র কে একটু! শুধু একটু পরিমাণ ছুঁয়ে দিতে। মন কে সায় দিয়ে কাঁপা কাঁপা হস্তে আদ্রর কপালে পরে থাকা চুল গুলো ছুঁয়ে দিল তুলি। হাতে চাপ অনুভব করতেই চোখ বড় বড় করে তাকাল তুলি। শ্বাস ভারী হয়ে আসতে লাগল ক্রমাগত। চোর ধরা পড়লে যেমনটা হয় ঠিক তেমন অবস্থা তুলির। নিজের কপালে তুলির হাত টা চেপে ধরে সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আদ্র। চোখ জোড়া ভীষণ লাল। হাসফাস করতে লাগল তুলি। এভাবে ধরা পড়ে যাবে ভাবে নি সে। সব দোষ বেহায়া মনের। কি জবাব দিবে এখন আদ্র কে সেটা ভেবে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।
–কি হল হাত বুলিয়ে দাও।
আদ্রর কোমল স্বরে এমন বাক্য শুনে দেহে প্রাণ ফিরে পেল তুলি। খানিক বাদেই বাক্য টা ভালো করে কর্ণপাত হতেই অভিভূত হয়ে তাকিয়ে রইল আদ্রর দিকে। আদ্রর ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি। হাসি টা খুবই মুগ্ধময়। সব ভয় দূর হয়ে গেল তুলির। কোমল মনটা ও নুইয়ে পড়ছে লজ্জায়। আদ্র কোনো প্রশ্ন করল না অথবা খারাপ কিছু ভাবল না সেটাই অবাক হওয়ার মূখ্য বিষয় তুলির নিকট। হাত বুলিয়ে দিতে নিলে হাতটা আবারও চেপে ধরল আদ্র। নিজে উঠে বসল। আদ্রর বুকের লোমশ অংশ দেখে লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিল তুলি। তুলির লজ্জিত মুখ যেন খুব করে টানছে আদ্র কে। পাশ থেকে গেঞ্জি টা নিয়ে পড়ে তুলিকে বলে উঠল,,,
–আমার দিকে তাকাও তুলি।
তুলি তবুও ফিরতে রাজি নয়। ধমকে উঠল আদ্র। আদ্রর ধমকে তাড়াতাড়ি করে ফিরে চাইল তুলি।
–পা উঠিয়ে বসো খাটে।
আদ্রর দিকে বিস্মিত নয়নে চেয়ে জড়তা-সংকোচ কাটিয়ে পা উঠিয়ে বসল তুলি। হঠাৎ নিজের কোলে আদ্রর মাথা অনুভব করতেই শরীরের প্রত্যেক টা পশম শিউরে উঠল। ইচ্ছে জাগল আদ্র কে অনুভূতি মিশিয়ে বলতে–“আপনি হুটহাট কাছে আসবেন না আদ্র। প্রচন্ড ভাবে কেঁপে উঠে আমার হৃদপিন্ড। লজ্জা শরম উচ্ছন্ন করে আপনার বুকে মিশে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে জাগে।”
—বারান্দা টপকে আসতে গেলে কেন তুলি? যদি পড়ে যেতে?আর কখনও এমনটা করবে না প্লিজ।
আদ্রর কথার পৃষ্ঠে কিছু বলার শক্তি টুকু ও যেন হারিয়ে ফেলছে তুলি। নিজের অজান্তেই হাত বুলাতে লাগল আদ্রর চুলে। পরম আবেশে দু-চোখ বুঁজে ঘুমের দেশে পাড়ি দিল আদ্র। রাত টুকু কেটেছে তার নিদ্রাহীন। ভোরের দিকে লেগেছিল চোখ দুটো তখনই এক অন্যরকম সুবাস নিয়ে রুমে প্রবেশ করল তুলি। তুলি তাকিয়ে দেখল গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে আদ্র। দীর্ঘ! দীর্ঘ একটা শ্বাস ছাড়ল তুলি। এখন সে পুরো নিশ্চিত আদ্র ঘুমিয়ে পড়েছে। মুচকি হেসে টুপ করে চুমু খেয়ে নিল আদ্রর কপালে। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে দিতে লাগল নিজের নরম হাতের পরশ। সাথে সাথেই চোখের কোণে জমে থাকা এক ফোঁটা অশ্রু বৃষ্টির ন্যায় টুপ করে পড়ল আদ্রর চোখে। নড়ে উঠল আদ্র। এই অশ্রু টা তুলির কষ্টের অশ্রু নয়। এটা তো আনন্দের অশ্রু। আকস্মিক তুলি ঝুঁকে পড়ল আদ্রর মুখের একদম সন্নিকটে। চোখ বুঝে ফেলল সাথে সাথেই। আদ্র গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,,,
–চোখ খুল।
আস্তে আস্তে করে চোখ খুলল তুলি। দুরুদুরু বুক নিয়ে আদ্রর দিকে চেয়ে রইল। তুলিকে ছেড়ে দিয়ে উঠে পড়ল আদ্র। গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল,,,
–কাঁদছিলে কেন?
–কাঁদছিলাম না। এমনিতে চোখে হঠাৎ পানি চলে আসল।
হাসল আদ্র। দৃঢ় কন্ঠে বলল,,
–উল্টো পাল্টা বকার অভ্যেস কি আজীবন থাকবে?
–আমি কখন উল্টো পাল্টা বকলাম?
তুলির সাহস যেন হুট করে বেড়ে গেল। তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আদ্র বলে উঠল,,,
–তাই নাকি?আপনি উল্টো পাল্টা বকেন না কুমিল্লার তুলা?
–একদমই না।
কথাটা বলেই উঠে পড়ল তুলি। মুখের উপর আচড়ে পড়ছিল আদ্রর অসীম অনুভূতি মিশ্রিত ভারী নিঃশ্বাস যা তুলি কে গ্রাস করে নিচ্ছিল। আদ্রর মাদকতায় হারিয়ে যেতে বাধ্য করছিল। ছোট্ট হৃদপিণ্ডের দ্রুত উঠা নামা প্রক্রিয়া অস্বাভাবিক করে তুলছিল তুলি কে।এক দৌড়ে চলে গেল বারান্দায়। অবাক হল আদ্র। পিছু পিছু গেল তুলির। নিজেকে সামলে একটু আওয়াজ করে তুলি হেসে বলল,,,
–আমি উল্টো পাল্টা বকলে দোষ অথচ আপনি যে হুটহাট করে কসাই হয়ে যান।
চোখ গরম করে চাইল আদ্র। তুলি বুঝে গেছে রক্ষে নেই। লাফ দিয়ে নিজের বেলকনিতে যেতে নিলে আদ্র আঁতকে উঠল।
–এই তুলি পড়ে যাবা।
–কিছু হবে না ডাক্তার সাহেব। এতটুকু জায়গা লাফ দেওয়া আমার জন্য ছোট্ট খাট্টো ব্যাপার।
আদ্র নরম স্বরে ধীর কন্ঠে বলল,,,–“তোমার প্রাণটা আমার জন্য নিজের প্রাণের চেয়ে ও অধিক মূল্যবান। ”
রুমে আসতেই মেসেজ টোন ভেসে আসল আদ্রর কানে। মোবাইল টা হাতে নিয়ে মেসেজ টা ওপেন করতেই ঠোঁটে ফুটে উঠল রহস্যময় হাসি।
____
ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করছে সবাই। আদ্রর বাবা বিজনেস রিলেটেড কিছু কাজে দেশের বাহিরে গিয়েছেন। নিরবতা ভেঙে আমরিন সাহস জুগিয়ে বলে উঠল,,,
–আম্মু আমাদের কলেজ থেকে ট্যুরে নিবে দুই দিন পর।
খাওয়া বাদ দিয়ে মাথা তুলে চাইল তুলি। কই সে তো শুনে নি এমন কিছু? বেশ জোরেই বলল,,
–কই আমি তো এমন কিছু শুনি নি আমরিন।
এই ভয়টাই পাচ্ছিল আমরিন। যার জন্য এতোকিছু সেই পুরো প্ল্যানে জল ঢেলে দিতে প্রস্তুত। সন্দেহের চোখে মেয়ের দিকে চাইলেন সায়েরা বেগম। ঢকঢক করে পানি খেয়ে তুলির দিকে চেয়ে শুকনো হাসি হাসল আমরিন।
–তুলি তুই তখন ক্লাসে মনোযোগ দিস নি নাহলে তো স্যারের কথা গুলো শুনতে পেতি। থাক আমি তো শুনলাম। আমি শুনলে যেই তুই শুনলে তো একই কথা তাই না?
বিমূঢ় স্থির হয়ে বসে রইল তুলি। সায়েরা বেগম খেতে খেতে বললেন,,,
–ঠিক আছে দু জনেই চলে যাস। তুলির ও ভালো লাগবে ঘুরে আসলে।
তীব্র আনন্দ নিয়ে মা কে মিষ্টি হাসি উপহার দিল আমরিন। তুলি ভ্রু কুঁচকে মিনমিন করে উচ্চারিত করল,,,
“আমরিন তুই একটা ডাহা মিথ্যুক। ”
#আকাশে_তারার_মেলা
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব -৭
মৃদু মৃদু হাওয়া বয়ে যাচ্ছে চারদিকে। একটু একটু ঠান্ডার সমারোহ। বাতাসে তুলির খোলা চুল উপচে পড়ছে কপালে। বার বার কানের পিঠে গুঁজে দিচ্ছে তুলি। একদমই বিরক্ত লাগছে না তার। এমন নির্মল প্রশান্তির হাওয়া মন ছুঁয়ে গেলে বিরক্তি আপনা আপনি পালিয়ে যেতে বাধ্য। গলায় জড়ানো কালো ওড়না টা একটু টেনে নিল। পাশে আমরিন হাঁটছে। কলেজ থেকে ট্যুরে যে যাবে না এটা পুরো নিশ্চিত তুলি। কিন্তু এই সন্ধ্যায় রেইল স্টেশন কেন এসেছে তা বুঝতে পারছে না তুলি। বহুবার প্রশ্ন করে ও কোনো উত্তর মেলে নি আমরিনের কাছ থেকে। ড্রাইভার কলেজ গেইটে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। অন্য একটা গাড়ি আসতেই আমরিন তুলি কে নিয়ে ট্রেন স্টেশন চলে আসল। তুলির প্রশ্ন কানে ঢুকলেও সে যেন মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে। হাত ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল সাতটা বেজে ৩০ মিনিট। দ্রুত পা চালিয়ে তুলি কে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল আমরিন। হাতে তার ট্রলি ব্যাগ। তুলি ভ্রু কুঁচকে আমরিনের দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না।
কিছুটা দূরে তিনটা ছেলে ও দুটো মেয়ে কে দেখে আমরিনের মুখে হাসি ফুটল। পায়ের গতি বাড়িয়ে ওদের নিকটে এসে দাঁড়াল। তুলিও পিছন পিছন এল। আমরিন কে দেখে নিবিড় হালকা হাসল। ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করল,,
–আসতে সমস্যা হয় নি তো?
–একদমই না ভাইয়া। কেমন আছেন আপনারা সবাই?
নিবিড়, অন্তু,রিমি,পায়েল,সাগর সবাই হেসে একসাথে বলে উঠল,,,
–আলহামদুলিল্লাহ!
—ট্রেন কখন আসবে?
–আরো আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।
তুলি কাউকে চিনে না তাই মুখ কাচুমাচু করে এক পাশে দাঁড়িয়ে রইল। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছে ছেলেমেয়ে গুলো আমরিনের পূর্ব পরিচিত। তুলিকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তুলির হাত টা ধরে সামনে আনল আমরিন। সবার উদ্দেশ্যে বলল,,
–ওর নাম ইশতাক তুলি। আমার কাজিন।
মুখ তুলে সবার দিকে এক নজর চাইল তুলি। সবার মুখে প্রস্ফুটিত হাসি। ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছে তুলি। স্টেশনে মানুষের সমাগম বেড়ে গেছে। গরম পড়ছে অনেক। নীরবতা ভেঙে পায়েল এগিয়ে এসে তুলির হাত টা ধরে বলল,,
–মাশাল্লাহ! তুলি তুমি তো তোমার নামের মতোই ভীষণ কিউট। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা আদ্রর বন্ধুমহল। খুব খুব কাছের বন্ধু।
অতিশয় বিস্ময় নিয়ে তাকাল তুলি। আদ্রর ফ্রেন্ড। তাহলে তুলি কেন এখানে এসেছে? আমরিন ওনাদের কাছে কেন নিয়ে আসল?আদ্র কোথায়? শত শত প্রশ্নের ভিড় তুলির মনে। পায়েল আবারও হেসে বলে উঠল,,,
–জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন। ছোট্ট মস্তিষ্কে এতো চাপ দিও না তুলি। জাস্ট এতটুকু জেনে রাখো আমরা সবাই সিলেট যাচ্ছি।
অবাক হল তুলি। আমরিনের হাত চেপে ধরতেই চোখের ইশারায় বুঝাল সব সত্যি। আমরিনের উপর অগাধ বিশ্বাস আছে তার। আর আদ্রর বন্ধুদের সন্দেহ করার কিছুই নেই। নিঃসন্দেহে আদ্র বন্ধু নির্বাচনে সচেতন। নিবিড় কে হাতিরঝিলে দেখেছিল আদ্রর সাথে। ট্রেন জার্নি করবে ভাবতেই তুলির মনে হাজারো খুশি বাসা বাঁধতে লাগল। ট্রেনে আজ প্রথম বার চড়বে তুলি। তুলির আবেগি মন অপেক্ষায় আছে ট্রেনের এবং খুব করে চাইছে মনে সদ্য প্রেমের জন্ম দেওয়া মানুষ টা কে। খানিক বাদেই স্টেশনে ট্রেন ঢুকতে দেখতে পেল তুলি। উচ্ছ্বসিত হওয়ার বদলে মনটা ছেয়ে গেল অন্ধকারে। ভেবেছিল আদ্র আসবে। নিবিড় তাড়া দিতেই সবাই উঠে দাঁড়াল। আমরিনের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিল নিবিড়। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,
–উঠতে পারবে তো?
নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে আমরিন জবাব দিল,,
–পারবো।
তবুও যেন নিবিড়ের মন মানল না। আমরিনের এক হাত শক্ত করে মুঠোয় পুরে নিল নিজের এক হাতে। এতো গরমের মাঝে ও শীতল অনুভব করতে লাগল আমরিন। নিবিড়ের দিকে তাকাতেই দেখল অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। তুলি পাশে দাড়িয়ে ভাবছে এতো ভিড়ের মাঝে কিভাবে উঠবে সে ট্রেনে। ট্রেনে উঠার অভিজ্ঞতা তো তার নেই। ট্রেন থামতেই ভিড় যেন আরো বেড়ে গেল। মানুষ যেন প্রতিযোগিতায় লেগে পড়ল কার আগে কে উঠবে।ধাক্কা খেয়ে তুলি পড়ে যেতে নিলে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল কেউ। চোখের পলকে মিশিয়ে নিল একদম নিজের সাথে। সাগর তুলি কে উঠতে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছিল। কিন্তু তুলির বাহুতে হাত রাখা মানুষ টা কে দেখে আর নামল না ট্রেন থেকে। ভয়ে আঁতকে আছে তুলি। চোখ বুঁজে থরথর করে কাঁপছে। কোমরে চাপ অনুভব করতেই চোখ মেলে দেখার আগেই আঁকড়ে ধরে কেউ ট্রেনে উঠিয়ে দিল তাকে। দৃশ্যমান হল আদ্রর সুদর্শন চেহারা টা। নিমিষেই শুরু হল বুকের ভিতরে কাঁপুনি। আদ্র ও ঝটপট করে উঠে পড়ল ট্রেনে। তুলি এখনও তাকিয়ে ভ্যাবলাকান্তের মতো। নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না আদ্র এসেছে। তীর্যক চাহনি নিক্ষেপ করল আদ্র। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
–এখানে দাড়িয়ে থাকলে ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিব।
আদ্রর কথায় হুঁশ ফিরে এল তুলির। এই লোক কেন সবসময় হুমকি দেয়?কথাটা ভেবে একটা নিশ্বাস ছাড়ল। যা বুঝার বুঝে গেল। তবে প্রশ্ন জাগছে সায়েরা বেগম কে মিথ্যে বলে দুই ভাই -বোন এমন প্ল্যান কেন করল। ট্রেন চলতে শুরু করেছে। বার বার বেসামাল হয়ে পড়ছে তুলি। কোমল কন্ঠে আদ্রর উদ্দেশ্যে বলল,,
–আমি ট্রেনে কখনও চড়ি নি। আমি কি নিজের হাতটা আপনার বাহুতে রেখে সামনের দিকে এগোতে পারি?
তীক্ষ্ণ নজরে চাইল আদ্র। ভয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল তুলি। সাথে সাথেই নিজের কোমরে স্পর্শ পেতেই মনে জড়ো হল লজ্জা। আদ্র কোমরে হাত দিয়ে নিজের একদম কাছে টেনে নিল তুলি কে। সবার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই মিটমিট করে হাসতে লাগল। আমরিন দেখেও না দেখার ভান করে বাহিরে তাকিয়ে রইল। তুলি আদ্রর হাত সরাতে নিলে আরো চেপে ধরল আদ্র। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তুলির। আদ্রর থেকে ছাড়া পেতেই জানালার পাশের সিটে বসে পড়ল অনাসয়ে। একটু হেসে আদ্র ও বসে পড়ল তুলির পাশে। ইতিমধ্যে ট্রেন ভীষণ গতিতে ছুটে চলেছে। বাতাসের দাপটে তুলির খোলা চুল আদ্রর মুখে আছড়ে পড়ছে। সিটে মাথা এলিয়ে আদ্র তুলির শ্যাম্পু করা চুলের সুবাসে হারিয়ে যাচ্ছে। তুলির কানে ভেসে আসছে একের পর এক হাসির শোরগোল। হঠাৎ অন্তু বলে উঠল,,,
–“শোন শোন আমার জীবনের এক বিশেষ অর্থাৎ সেরা মুহুর্তের কথা শুনাতে যাচ্ছি তোদের। ”
পায়েল বলে উঠল,,–“আর কতো শুনাবি সেই বিশেষ কাহিনী?”
গলা ঝেড়ে অন্তু বলে উঠল,,,
–তুলি ও আমরিন তো শুনে নি। আমি ওদের শুনাবো। পুরো বন্ধুমহলের কাছে তুই আমার ইজ্জতের রফাদফা করেছিস। কিন্তু তুই যে কত্ত খারাপ সেটা শুনাতে হবে না?
চোখ কটমট করে তাকাল পায়েল। নিবিড়, সাগর ও রিমি কানে হেডফোন গুঁজে নিল। দু জনের জগড়া শুরু হয়ে যাবে এখন। অন্তু পায়েলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
–এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। শুনো আমরিন,,,
–“গত মাসের কথা। ইহা খুবই এক লজ্জাকর পরিস্থিতি ছিল। সকাল সকাল মা বলল অন্তু আজ কিন্তু পাত্রী দেখতে যাব। তাড়াতাড়ি উঠ। অবশ্য তখন বারোটা বাজে। তবুও তা আমার জন্য সকাল ছিল। মায়ের টানা হেচড়ায় কোনো রকমে রেডি হয়ে গেলাম পাত্রী দেখতে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও। পাত্রী দেখতে সেই ছিল। পুরোই পাগল করা রূপ তাহার। বয়স হইয়া গেছে সাতাশ। এমন সুন্দর বউ পাইলে বুড়ো থেকে আমি হইয়া যামু সতেরো বছরের যুবক। আহা মনে মনে তো আমার লাড্ডু ফুটতেছিল। যখন আমাগো আলাদা কথা কইতে দিল তখন আমি তো মেয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকাই ছিলাম প্রেমের ভাষায় মুগ্ধকর বলা যায়। পাত্রী আমার একটু কাছে মুখ আনতেই আমি তো শেষ। মেয়ে এতো এডভান্স। নিজেও মুখ টা এগিয়ে নিতেই মেয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল,,,–“বুইড়া দাদা আপনার অফিস খোলা। নেক্সট টাইম অফিস বন্ধ করে পাত্রী দেখতে যাবেন।”
অন্তুর কথা শুনে ফিক করে হেসে দিল সবাই। তাল মিলিয়ে হাসতে লাগল অন্তুও। হাসতে হাসতে বলল,,
–“সেই মেয়েটা আর কেউ না আমাদের পায়েল ম্যাডাম ছিল। এই মেয়ের চোখ যে এতো খারাপ এটা সেদিনই বুঝতে পেরেছি।”
–“তোর মতো হারামি পোলার কাছে যে আমি বিয়ে বসছি এটাই অনেক। তুই তো এখনও শর্ট প্যান্ট পড়ে বাহিরে চলে যাস। লোকে দেখলে দোষ নেই। আর আমি সত্যি বললে দোষ! হুহ্!”
–“হাসবেন্ড কে তুই করে বলছিস?ক্লাসমেইট বিয়ে করে কপাল টাই পুড়ল আমার। গুন্ডি মেয়ে একটা!”
ওদের কথা শুনে তুলি হাসতে হাসতে ঢলে পড়ল আদ্রর উপর। কি লাগাম ছাড়া কথা বার্তা! তুলির পেট ফেটে হাসি আসছে। চোখ রাঙিয়ে তাকাল আদ্র। সাথে সাথে গায়েব হয়ে গেল তুলির হাসি টা। তুলির কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে দুষ্ট স্বরে আদ্র বলল,,,,
—ওড়না সরে গিয়ে তোমার ওই জায়গার তিল টা দেখা যাচ্ছে তুলা। ওড়না সামলে রাখো। ড্রেস টা একটু বেশিই ঢিলে। যখন তখন হেলে পড়ো না।
পিলে চমকে উঠল তুলির। আদ্রর মুখে এতো ভয়ংকর এক বাক্য শুনে চুপসে গেল তুলি। ওড়না পেঁচিয়ে দূরে সরে বসল আদ্রর থেকে। কানে বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বাক্য টা। ছি! আদ্রর নজর এতো খারাপ! কথাটা মনে না রেখে কিশোরী তুলি আদ্রর সাথে কিছু টা ঘেঁষে বসল। চোখ ছোট ছোট করে তাকাল আদ্র। তুলি ফিসফিস করে বলল,,
–ছি! আপনার নজর এতো খারাপ! আমি আগেই শুনেছি ডাক্তার রা লুচু হয়। আপনি তার প্রমাণ আদ্র ভাই।
চোখ কপালে তুলে আদ্র চাপা স্বরে বলল,,
–আমি কি তোমায় কামড় দিয়েছে? নাকি চুমু খেয়েছি? অথবা এটা ও বলতে পারি বিয়ের আগে তোমার সাথে ফুলশয্যা করেছি?
আদ্রর লাগামহীন কথা তুলির রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ জাগিয়ে দিল। দমে গেল তুলি। আদ্র যে কতো বড় অসভ্য, বেহায়া লোক বুঝা হয়ে গেছে তার। দূরত্ব রেখে বসতে নিলে সবার অগোচরে তুলি কে নিজের কাছে টেনে গলায় কামড় বসিয়ে দিল আদ্র। তুলি লজ্জায় চুপ হয়ে গেল। চোখ বড় বড় করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে রইল। লাইট গুলো নিভিয়ে দিয়েছে কিছু সময় আগে। বাহিরের চা্ঁদের আলোয় আদ্রর চেহারাটা স্পষ্ট। তুলি যেন আর নিজের মাঝে নেই। কি করল এটা আদ্র? এখন হার্ট এট্যাক হলে তার দায় কি আদ্র নিবে? অপলক চোখে তাকিয়ে থেকে তুলির হাত টা চেপে ধরে আবারও আদ্র মুখ ডুবাল তুলির গলায়। ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে সরে এল অতি সন্তর্পণে। বন্ধ চোখ দুটো ধপ করে মেলে আদ্রর জ্যাকেট টা খামচে ধরল তুলি। ছলছল চোখ নিয়ে শুকিয়ে যাওয়া গলায় প্রশ্ন করল,,
–“কি করলেন এটা আদ্র?”
মুখের হাসির রেখা টা দীর্ঘ করে আদ্র একটু নত হয়ে জবাব দিল,,
–“অসভ্য বলার জন্য পারফেক্ট কারণ খুঁজে দিয়েছি।”
কম্পনরত হৃদপিণ্ড নিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে তুলি বলে উঠল,,
–“সত্যিই আপনি অনেক অসভ্য আদ্র।”
–“শুধু তোমার জন্য। ”
মুচকি হেসে বলল আদ্র। তুলি ডুবে গেল আদ্রর নেশায়। তার অযাচিত মন বলে উঠল-“কোথায় ছিল এতোদিন এতো আবেগ? এতো মাদকতা! এতো মোহনীয় প্রেমময় দৃষ্টি! নিজেকে সামলে রাখা যে প্রচন্ড কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আজ যে তুলি আদ্রর এক অন্যরকম রূপের সাথে পরিচিত হল। যেই রূপের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করে আদ্র কে অসভ্য খেতাব দেওয়া যায়। আদ্রর জ্যাকেট আরেকটু শক্ত করে খামচে ধরল তুলি। সবার দিকে একনজর তাকিয়ে আদ্র নিচু গলায় বলল,,
–“জ্যাকেট টা ছিড়ে ফেলবে নাকি তুলা রানী?এভাবে ধরে রাখলে সহ্যের সীমা যে অতিক্রম হয়ে যাবে। হৃদপিণ্ডে যে প্রলয় হবে। ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ের দায় কি তুমি নিবে?”
তুলির দৃষ্টি এখনও আদ্রর চোখে। আদ্রর সারা মুখে চোখ বুলাতেই দ্রুত গতিতে স্পন্দিত হতে লাগল হৃদপিণ্ড। আদ্রর আকস্মিক হামলাতে তুলি জমে বরফ হয়ে গেল। হাত পা ঠান্ডা হয়ে অসার হয়ে পড়ল। আচমকা আদ্রর বুকে মুখ লুকাল সে। হকচকিয়ে গেল আদ্র। থমকে গেল মুহুর্তের জন্য। পিঠে হাত রেখে ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,
–“কি হয়েছে তুলি?”
–“আমার হার্টের চিকিৎসা করে দেন ডাক্তার মহাশয়।”
আদ্রর বুকে মুখ ঘষে নিজের অজান্তেই কথাটা বলে বসল তুলি। বুকে ঝড় শুরু হল আদ্রর। নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে জরিয়ে নিল তুলি কে।মাথায় আদ্রর স্পর্শ পেতেই রাজ্যের ঘুম ভর করল তুলির দু চোখে। ভালোবাসার মানুষের বুকে ঘুমানোর সাধ্য কয়জনের হয়। তুলির হয়েছে সেই সুযোগ অজান্তেই। আদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বাহিরে। ছোট্ট তুলি তার মনে দহন সৃষ্টি করছে । এতো বছরের জীবনে মনের দিক থেকে কঠোর হওয়া আদ্র কে বাধ্য করছে কোমল হতে। সতেরো বছরের কিশোরী কন্যা যে সাতাশ বছরের যুবক কে এলোমেলো করে দিচ্ছে, প্রতি মুহুর্তে অস্বাভাবিক করে তুলছে তা যদি মেয়েটা বুঝতে পারত তবে হয়তো লজ্জায় লুকিয়ে যেত তার ভিতরকার সত্তা।
______
আজকের চাঁদ টা খুবই নজরকাড়া। চাদেঁর ঝলমলে আলোয় সবকিছু স্পষ্ট। চোখে চশমা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য অবলোকন করছে আমরিন। একবার যদি সম্মুখে দৃষ্টি পাত করত তবে চোখ বাঁধা পড়ত কারো চোখের মায়ায়। সবাই বেঘোরে ঘুমোলেও ঘুম নেই আদ্র, নিবিড় ও আমরিনের চোখে। আদ্র ব্যস্ত তার বুকে ঘুমিয়ে থাকা মেয়ে টা কে সামলে রাখতে। নিবিড় সে তো চাঁদের ঝলমলে আলোয় আমরিনের মায়ায় জড়াচ্ছে শতবার। দু বছর ধরে ভালোবাসে আমরিন কে। হাঁটুর বয়সী মেয়েটা কে মনের কথা বলতে গেলেও বুক কাপে তার। বলবে বলবে বলেও বলা হয় নি কোনোদিন। হঠাৎ আমরিনের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি দেখে বুকটা ধুক করে উঠল নিবিড়ের। দৃষ্টি সরিয়ে নিল সে। পাশের সিটে তাকাতেই দেখতে পেল আদ্রর বুকে ঘুমন্ত তুলি কে। জিহ্বায় কামড় দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল নিবিড়। যেদিকেই তাকায় সেদিকেই সর্বনাশ। এখন তো তার মনে হচ্ছে প্রেয়সীর মাঝে হারিয়ে যাওয়ার সর্বনাশ টাই বড্ড শ্রেয়। এক চিলতে হাসি আর অসম্ভব ভালো লাগা নিয়ে আমরিন আঁড়চোখে নিবিড়ের দিকে চাইল। মনে মনে বলে উঠল,,,
—“এতো টাও বোকা আমি নয় নিবিড় ভাই। ডুবে ডুবে যে জল খাচ্ছেন তা দিব্যি টের পাচ্ছি।”
ফোনটা বেজে উঠল আদ্রর। পিনপিনে নিরবতায় ফোন বাজার ঝংকার শব্দে অনেকেই কেঁপে উঠল। আবারও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। এক হাত তুলির পিঠ থেকে উঠিয়ে কোনো রকমে ফোন টা পকেট থেকে বের করল আদ্র। স্ক্রিনে চাইতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তার। ইচ্ছে করল মোবাইল টা জানালা দিয়ে ফেলে দিতে। গম্ভীর স্বরে হ্যালো বলতেই কিছু একটা শুনে মেজাজ চওড়া হয়ে গেল আদ্রর। চোয়াল শক্ত করে ধীর কন্ঠে বলে উঠল,,,
–সবকিছুর একটা লিমিটেশন আছে। নিজের সীমাবদ্ধতায় থাকো। নয়তো আমার চেয়ে খারাপ তোমার জন্য কেউ হবে না। আগে অধিকার পাওয়ার যোগ্যতা রাখো তারপর নাহয় হস্তক্ষেপ করো।
চলবে,,,,
)