#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১৪
ফুয়াদ নাহিদকে উদ্দেশ্য করে বললো,বিথী। আর কিছু বলার আগেই, নাহিদ বলে, ওই অপয়া মেয়ের নাম আনবি না মুখে। ওই অভিশপ্ত কালো অতীতকে পা দিয়ে পিশে ফেল।
পেছন থেকে বিথী বলে,চাইলেই কি সব পিশে ফেলা যায়?
ফুয়াদের কপালে রাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ফুয়াদ কড়া কন্ঠে বলল, সামান্য একজন আয়া হয়ে অনুমতি ছাড়া আমাদের কেবিনে কোন সাহসে আসলেন?
– ফুয়াদ আমাকে চিনতে পারোনি!আমি বিথী।
– এই মূহুর্তে এখান থেকে বের হয়ে যান। আপনি কে? সেটা শোনার সময় আমার নেই।
বিথী আর কিছু বলবে তার আগেই ফুয়াদ বলে,একটা শব্দ ও আমি শুনতে চাইনা। এখন থেকে না গেলে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।
বিথী বের হয়ে আসলো কেবিন থেকে। নিজের চোখের পানি মুছে বলে,এ আমি কোন ফুয়াদকে দেখছি! যেই ফুয়াদ ছিলো নম্র আর বিনয়ী। সে আজ আমাকে অপমান করলো!
নাহিদ ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে বলে,তুই একটা সঠিক কাজ করেছিস। তবে এই মেয়ে এখানে কি করে!
– ও নাকি এখানের নতুন বুয়া।
– আমি কি কথা বলে ওর চাকরি বাতিল করাবো?
– নাহহহ সেটা করলে সাবার মনে প্রশ্ন জাগবে আমাদের সাথে সাধারণ একজন আয়ার কি শত্রুতা। ওকে ওর মত থাকতে দে।
-কিন্তু ওর চেহারা প্রতিদিন দেখবি কি ভাবে? সহ্য করতে পারবি তো?
– আমরা যা পিছু ফেলে আসি শত চেষ্টা করেও সেই জিনিসকে আর খুঁজে পাইনা। হারিয়ে যায়। আর যদিও কখনো খুঁজে পেয়েও যাই। তবে সেটা আর আগের মত থাকেনা। নষ্ট হয়ে যায়। আর জেনে বুঝে সেই জিনিসকে আপন করা মানে, পঁচা সমুকে পা’ কা/ টা। আর আমি তো এতোটাও বোকা নই। ওকে আবার সুযোগ দেবো আমার জীবনে এখন কোন দুঃখ নেই অশান্তি নেই। ভালো আছি আমি।
নাহিদ আর ফুয়াদ দু’জনেই বেরিয়ে আসলো হসপিটাল থেকে। নাহিদ বলল,চল আজ রিকশা নিয়ে বাসায় যাই।
– এই দুপুরে রিকশা!
– তপ্ত রোদে রিকশায় ঘুরে মনের দহন ঝলসে দেবো।
ফুয়াদ হেসে বলে,আমার মনে কোন কারণে দহন নেই। জানিনা কেন তবে এটা সত্যি। বিথীকে দেখার পর রাগ লেগেছে। কিন্তু আর কোন অনূভুতি আসেনি।
– সব আমার নতুন ভাবির জাদু।
ফুয়াদ হেসে বলে তাও ভুল বলিসনি। একটা তাঁড় ছিঁড়া মেয়ে পেয়েছি।ওর কান্ড দেখলে আমার প্রচুর হাসি পায়। আমার হাঁটুর বয়সি মেয়ে সে বলে, আমার উপর সব রকম অধিকার তার আছে। আমি চাইলেও আছে, না চাইলেও আছে।
রিকশা থেকে নেমে বাসায় ঢুকবে তার আগেই দেখা হলো বিথীর সাথে। ফুয়াদের বাসার মেইন গেটের বাহিরে বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে আছে।
ফুয়াদ পকেটে থেকে হাজার টাকার নোট বেড় করে বিথীর দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে,ভিক্ষা করার জন্য আর কোন জায়গা পেলেন না?
বিথী ফুয়াদের পা জড়িয়ে ধরে বলে,প্লিজ ফুয়াদ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার ভুল হয়েছে। আমি তোমার কাছে আর একটা সুযোগ চাই।
ফুয়াদ উত্তর না দিয়ে নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে চলে আসলো। আসার সময় দারোয়ানকে বলে আসলো যাতে বিথীকে ঢুকতে না দেয়া হয়।
ফুয়াদ এসেই নিজের রুমে চলে গেলো শার্টের বাটন খুলে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
হুর রুমেই ছিলো সেও ফুয়াদের পাশে বসে নিজের ওড়নার আঁচল দিয়ে ফুয়াদের ঘাম গুলো মুছে দিতে লাগলো।
ফুয়াদ চোখ বন্ধ রেখেই হুরের হাত ধরে বলে, তোমার সাহসতো কম না তুমি আমার রুম পর্যন্ত চলে এসেছো। কথাটা বলেই চোখ খুলে দেখে হুর। হুরের চোখে পানি টলমল করছে। যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে।
ফুয়াদ বললে,তুমি!
– কেন আপনার কাছে অন্য কারো আসার কথা ছিলো নাকি? আমি ছাড়া আপনার আর কেউ থাকতে পারেনা। বলুন আপনি কাকে ভেবেছিলেন?
ফুয়াদ হেসে বলে,শেওরা গাছের পেত্নী ভেবেছিলাম। এখন দেখি আমার সামনে হুর পরি বসে আছে। যার চোখ থেকে হুটহাট বৃষ্টি বর্ষণ হয়।
-একদম কথা ঘোরাবেন না। বলেন আপনার মনে কে ছিলে।
– যে ছিলো সে ম/রে গেছে। আর যে থাকবে সে একটু একটু করে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করছে।
– আপনি কি জানেননা।আপনার জন্য আমি ছাড়া অন্য সব মহিলা হারাম। প্রয়োজন ছাড়া তাদের সাথে কথা বলাও গুনাহ। আর তাকালে তো চোখের জিনা হবে।
– এসব কি বলছো। আমি কখন অন্য মেয়েদের দিকে তাকালাম!
– না তাকালে তো ভালো।আর তাকাবেনও না। আপনার তাকাতে ইচ্ছে করলে আমাকে দেখবেন। যে রকম ভাবে দেখতে চান ওই রকম ভাবেই দেখবেন। কিন্তু ওই দৃষ্টি শুধু আমার জন্য অন্য কারো জন্য না।
ফুয়াদ হুরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,সব বুঝলাম কিন্তু তোমার চোখ দিয়ে এই পানিগুলো বের করো কি ভাবে!এগুলো ফেক, নাকি রিয়েল?
হুর ফুয়াদকে জড়িয়ে দরে কেঁদে কেঁদে বলে,দেখুন ছোট বেলা থেকে আমি বাব, মায়ের বাজে সম্পর্ক দেখেছি। আমার মায়ের চোখের পানি দেখেছি।আমার আপুকে ভালোবেসে বিয়ে করার পরেও অত্যাচারিত নিপিড়ীত হতে দেখেছি। অনেক ঝড় ঝাপটা পার করে,আপনার মতো একজনকে পেয়েছি।আপনি আমাকে ঠকালে আমার জীবনে শান্তি বলতে আর কিছুই থাকবে না। একটা মেয়ে শ্বশুর বাড়ির সবার আবাদর পূরণ করে, সবার মন জুগিয়ে চলে শুধু মাত্র তার হ্যাসবেন্ডের জন্য। সেই মানুষটাই যদি দিনশেষে তাকে মূল্য না দেয়! তাহলে সব কিছু খেই হারিয়ে ফেলে। আপনার বাড়িতে সবাই আপনার আপনজন কিন্তু এই বাড়িতে আপনি শুধুমাত্র আমার আপনজন। আপনি ব্যথা পেলে যতজন কষ্ট পাবে। তার এক ভাগো আমি ব্যাথা পেলে পাবে না। তারপরেও শুধু স্বামী নামক একটা মানুষের জন্য আমরা সবাইকে নিজের করে নেই। তাই দয়া করে আমাকে ঠকাবেন না।
পৃথিবীতে সবচেয়ে অসহায় নারী সে, যার স্বামী তাকে মূল্যায়ন করে না। আমি আপনার কাছে মূল্যবান। তাহলে সবার কাছেই মুল্যবান।বিয়ের পরে একটা মেয়ের স্বামী খারাপ হলে তার জীবনে আর সুখ থাকে না।
ফুয়াদ হুরের পিঠে হাত রেখে হুরকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। কিছু সময় পর ধীর কন্ঠে বলল,আজ এই মূহুর্তে থেকে তুমি আমার কাছে মহা মূল্যবান। আমার জীবনসঙ্গিনী আমার কষ্টের ভাগিদার।
এভাবেই অনেকটা সময় পার করলো দু’জনে। ফুয়াদ হুরকে নিজের একদম কাছে বসিয়ে বলে,দেখো আমি তোমাকে এসব বলতে চাইনি। তবে আজ বলতে হবে।কারণ এখন থেকে আমরা একে অপরের পরিপূরক হতে চাই?
তুমি তো জানোই আমার বিয়ে হয়েছিল। নুরের মা চলে গেছে। নুরের মা আমার প্রথম স্ত্রী, আমার প্রথম অনূভুতি। তবে তাকে আমি আগলে রাখতে পারিনি। সে উড়ে চলে গেছে। তার সাথে আমার অফিসিয়ালি ডিভোর্স হয়ে গেছে ।
হুর বলল,ডিভোর্স হওয়ার কারণে তার আর আপনার মধ্যে এখন আর কোন সম্পর্ক নেই। এখন সে আপনার জন্য অন্য মেয়েদের মত। যদি ডিভোর্স না হতো তাহলে সে এখনো আপনার স্ত্রী থাকতো। কিন্তু ডিভোর্স হওয়ার কারণে তার আর কোন অস্তিত্ব আপনার লাইফে বিদ্যমান নেই। আর আপনার মনে যদি তার অস্তিত্ব থাকে!তাহলে হুর আপনার মন থেকে তা মুছে দেবে।
ফুয়াদ হেসে বলে,এই হুর পরির সাথে আমার আগে কেন দেখা হলো না।
______________________________________________
বিথীর মা বিথীকে বলছে,এসব তোর কর্মের ফল।একটা নিষ্পাপ মেয়েকে মৃ/ত্যু/র মুখে ঠেলে দিয়ে যার জন্য সব ছেড়েছিস। আজ সেই তোকে ছেড়ে চলে গেছে।তুই কি ভেবেছিলি তোকে দেখেই ফুয়াদ গলে যাবে! এতো সহজ না জীবনটা। একটা ছেলে সব মেনে নিতে পারে,কিন্তু তার স্ত্রীর দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও সেটা মেনে নিতে পারেনা। সেখানে তোর সারা শরীরে অন্য পুরুষের স্পর্শ। তোকে দেখলে ওর ঘৃণা হবে এটাই স্বাভাবিক। আর হ্যাঁ ওর পিছু নিবি না। ছেলেটা আমার সুখে আছে। ওকে সুখে থাকতে দে।ওর সুখে নজর দিসনা। উল্টো তুই নিজেই জ্বলে যাবি।
বিথী রাগে ফুঁসছে।কিছুতেই ফুয়াদের হাসি মাখা চেহারা মেনে নিতে পারছে না। যে ছেলে বিথী অন্ত প্রাণ ছিলো সে কি ভাবে তাকে ভুলতে পারে!
#চলবে
গল্পটা প্রায় শেষের দিকে। আর মাত্র দু’তিন পর্ব হবে হয়তো। ভুলত্রুটিগুলো মার্জিত ভাবে ধরিয়ে দেবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰