#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১৫
এতো সুন্দর মূহুর্তে আদিয়ার কথটা বলতে ইচ্ছে করছিলো না হুরের। হুর ফুয়াদের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। হুর কোমল কন্ঠে বললো,আসুন আমরা দু’রাকাআত নফল নামাজ পড়ি।
ফুয়াদ বলল,কিসের নামাজ?
– আল্লাহ তায়ালার কাছে আপনাকে পাওয়ার খুশিতে দু’রাকাআত শুকরিয়ার নামাজ।
– এর কি কোন নিয়ম টিয়ম আছে?
– না এর কোন বাধ্যকতা নেই তবে নফল ইবাদত তো করাই যায়।আমাদের নতুন জীবনটা না হয় নামাজ দিয়ে শুরুহোক।
ফুয়াদ হুরকে কোলে তুলে নিলো ওয়াশরুম দুজনেই ওজু করলে।
রুমে এসে হুর নিজের আঁচল ফুয়াদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, এই নিন আপনার ব্যক্তিগত তোয়ালে।
ফুয়াদ মুচকি হেসে হুরের ওড়নার আঁচলে নিজের হাত মুখ মুছে নিয়ে বলে,তুমি সব সময় এমন থাকবে নাকি কখনো পাল্টে যাবে?
আজকে এই সুন্দর মূহুর্তে এসব কথা একদম মুখে আনবেন না। আল্লাহ তায়ালা হুরের দেহে যতখন প্রাণ রাখবেন। ততক্ষণ হুর শুধু আপনার। আমার কথায় বিশ্বাস রাখুন আর আল্লাহ তায়ালার উপরে ভরসা রাখুন।
– হুর যাদের বাড়ি ঘর নদীর ভাঙেন চলে যায়। তারা দ্বিতীয় বার ঘর বাঁধতে ভয় পায়।তাদের মনে হয় আমার সখের ঘর আবার না চলে যায় নদীর তলদেশে।আমিও এক ঘর ভাঙা মানুষ, তাই ভয় হয় নতুন করে ঘর বাঁধতে।
– ইনশা আল্লাহ আমি আপনার ভয় দূর করে দেবো।শুধু আপনি আমার পাশে থাকুন। একটু ভালোবাসা শাসন দিয়ে আমাকে আগলে রাখুন।
ফুয়াদ নিজের বক্ষে হুরকে আবার আগলে নিয়ে বলে,আমার সবটা দিয়ে তোমাকে আগলে রাখবো। তুমি শুধু শেষ অব্দি থেকে যাও।
হুরও দু’হাতে ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে বলে,একজন স্ত্রীর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান তার স্বামীর বক্ষ। সেখানে যখন ঠাই দিয়েছেন। কখনো আপনাকে আশাহত করবো না।
– তোমার সাথে আমার আগে কেন দেখা হলো না হুর?
– আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। তখন হয়তো আপনি আমাকে বিয়ে করতেন না।এখন বাদ দিন এসব কথা আপনি পাঞ্জাবি পড়ুন। আমি জায়নামাজ নিয়ে আসছি।
হুর চলে যেতেই ফুয়াদ নিজেই নিজেকে বলে,তোকে এটা করতেই হবে।দ্বিতীয় বার ভুল করা যাবে না।বিথী নামক কালো অধ্যায়ের কোন জায়গা নেই তোর জীবনে। এখন এ জীবনে শুধু হুর হবে তোর #আধার_রাতের_আলো
হুর জায়নামাজ নিয়ে আসার সময় খেয়াল করলো নুরকে কেউ কিছু বলছে,মেয়েটার কোলে আর ও একটা বাবু।নুর দ্রুত নিচে চলে আসলো। হুরকে দেখেই নুর কেঁদে দিয়ে বলে,ভালো মা কমাকে এই বাজে মায়ের হাত থেকে বাঁচাও।হুর বললো,প্লিজ আমার মেয়েটাকে ছেড়েদিন। আপনার কিছু বলার থাকলে আমাকে বলুন।
– তুই কে তোকে কেন বলবো, আমার মেয়েকে নিজের মেয়ে বলে আমার স্বামীকে নিজের স্বামী করে নিয়েছিস। বেহায়া মেয়ে।
– আপনি যা খুশি বলুন আগে আমার মেয়েটাকে ছাড়ুন। হুর নুরের হাত ছাড়িয়ে নিতেই নুর হুরকে জড়িয়ে ধরে বলে,ভালো মা আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায়ও যাবো না।
হুর নুরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,আমার জান বাচ্চাটা আমাকে ছেড়ে কেন যাবে।তুমি তো আমার সাহসি মেয়ে।যাওতো মা নিজের রুমে যাও।আর তোমার ফুপিকে বলো নিচে আসতে।
নুর দৌড়ে চলে গেলো,
বিথী হুরের সামনে এসে বলে,তোকে তো আমি পরে দেখে নেবো আগে আমার মেয়েটাকে হাতে আনি। বলেই সামনে পা বাড়ায়। হুর বিথী পথ আটকে দাঁড়িয়ে বলে,আমার পরিবার আমার সংসাসার,আমার মেয়ে সেখানে অন্য কারো ছাঁয়াও আমি সহ্য করবো না।
বিথী রাগ দেখিয়ে বলে,আমার রাস্তা থেকে সরে দাঁড়া।
– আপনার রাস্তা আপনার উল্টো দিকে সামনের দিকের রাস্তাটা আমার। আর ডিভোর্সের পর সে আপনার হ্যাসবেন্ড নেই। আর রইলো নূর যাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। তার অধিকার আর আপনার নেই। আপনি আসতে পারেন।
বিথী রাগে হুরের গালে চড় দেবে ঠিক সেই মূহুর্তে আদিয়া বিথীর হাত ধরে বলে,সাহস কম দেখা বিথী এটা তোর বাড়ি না। আমাদের বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাদের বাড়ির বউদের গায়ে হাত দেয়া এতো সহজ নয়।
ফুয়াদ ভাবছে মেয়েটা কোথায় গেলো জায়নামাজ আনতে দশ মিনিট হয়ে যাচ্ছে এখনো আসছে না কেন? রুম থেকে বের হয়ে নুরের রুমে আসলো। নুর জানালা ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। ফুয়াদ বলল,নুর।
নুর ফিরে তাকালো। নুরের চোখে জল দেখে দ্রুত নূরকে কোলে তুলে বুকের সাথে আগলে নিয়ে বলে,তুমি ঠিক আছো তো? কি হয়েছে মা।
বাবাই বাজে মা বলেছে আমাকে নিয়ে যাবে।কথাটা বলেই নুর ফুপিয়ে উঠলো,
ফুয়াদ নূরের কপালে চুমু দিয়ে বলে, কেউ তোমাকে নিতে পারবে না। তোমার বাবাই আছে তো।
– নিয়ে যাবে ওই বাজে মা, ভালো মাকে বকে দিচ্ছে।
-কোথায় তোমার ভালো মা?
– নিচে।
– তুমি রুমেই থাকো মা। আর হ্যাঁ, একদম কাঁদবে না। তোমার বাবাই থাকতে তোমার চোখে যেনো একটুও পানি না আসে।নুরের কপালে চুমু দিয়ে নুরকে রেখে দ্রুত নিচে আসলো।
বিথী ফুয়াদকে দেখেই ন্যাকা কান্না জুড়ে দিলো। বিলাপ করে বলতে লাগলো, আমি মানছি আমি ভুল করেছি। তাই বলে কি নিজের মেয়েকে দেখতেও পারবো না। আমি কি এখানে থাকতে এসেছি চলেই যাবো শুধু একবার দেখতে দাও আমার মেয়েটাকে। শতহোক মেয়েটাকে তো দশমাস গর্ভে আমিই ধারণ করেছি।
হুর আর আদিয়া পুরোই বোকা বনে গেলো। আদিয়া বলে, আবার কি নাটক শুরু করলে? তোমার কোন নাটকেই কাজ হবে না।
– এভাবে কেন বলছো,আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।আমার ভুলে আজ আমার দুধের শিশুটা পিতৃহারা। সব আমার কর্মের ফল।
ফুয়াদ এসে বলে,আপনার এসব সংলাপ সিনেমার ডিরেক্টরকে শুনালে কোন রোল পেয়ে যাবেন। এখানে কাজের কাজ কিছুই হবে না।
বিথী হুট করে ফুয়াদে এক হাতে জড়িয়ে ধরে। হুর সাথে সাথে বিথীকে সরিয়ে দিয়ে বলে,যা বলার আমার স্বামী থেকে দশ হাত দূর দাঁড়িয়ে বলুন। একদম ওকে টাচ করবেন না।
বিথী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে, ওর সারা শরীরে আমার স্পর্শ লেগে আছে। সেগুলো কি করে মুছবে?
হুর বলে, লেগেছিলো কিন্তু এখন নেই। এখন তার শরীরে প্রতিটি স্থানে আমার স্পর্শ তার হৃদয়ে আমার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা তোমার স্পর্শ মুছে দিয়েছে।
ফুয়াদ হুরের মাথাটা নিজের বুকে চেপে রেখে বলে,আমার বিবিজান প্লিজ শান্ত হোন এসব পঁচা সামুকে আপনি পা কা/টতে নামবেননা। আমি আপনার মানে শুধুই আপনার।
বিথী অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফুয়াদের দিকে আজ হুরের পরিবর্তে তার থাকার কথা ছিলো। একটা ভুল সব শেষ করে দিয়েছে।
হুর ফুয়াদের হাত ধরে বলে,আপনার আদেশ আমার মাথার উপরে। আপনি যা চাইবেননা তা আমি কখনো করবো না। জানেন একদিন হুজুর ক্লাসে বলেছিল স্ত্রীর দ্বায়িত্ব হলে স্বামীর আদেশ, নিষেধ মেনে চলা। তার কথার উপরে কথা না বলা।তাহলে সেই সংসারে সয়তান প্রবেশ করতে পারেনা। আর আমাদের সম্পর্ক পবিত্র ও হলাল। সেখানে আমি সয়তান প্রবেশ করতে দেবোও না।
বিথী এবার উপায় না পেয়ে আম্মি আম্মি বলে, চিৎকার করতে লাগলো।
আদিয়া বলল,সে কোনদিন তোমার ডাকে সাড়া দেবেনা। তার চেয়ে যে ভাবে এসেছো। সে ভাবেই চলে যাও। শুধু শুধু তোমাকে টানাহেঁচড়া করে বেড় করতে চাইছি না।
বিথী নিরুপায় হয়ে চলে গেলো।
ফুয়াদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ভাগ্য বড়ই নিষ্ঠুর।
হুর বলে,নিজের কর্মের ফলকে ভাগ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে কি হবে? কথায় তো আছেই যেমন কর্ম তেমন ফল।ঘরে স্বামী সন্তান থাকতেও দিনের পর দিন অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক রেখে যে অন্যায় সে করেছে। তার শাস্তি তাকে তো ভোগ করতেই হতো। নিজের জন্ম দেয়া মেয়েকে ঘুমের ঔষধ খেয়ে যে মা তার সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে আরেকজনের হাত ধরে চলে যেতে পারে।সে তো কখনো মা হতেই পারে না!
ফুয়াদ নিরবে চলে গেলো উপরে। শতহোক প্রথম অনূভুতি তো বিথীই ছিলো।
হুরও পিছু পিছু গেলো। পেছন থেকে ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
#চলবে