#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১৮
হুর কিচেনে সকালের নাস্তা বানাচ্ছে আর ভাবছে, সুন্দর মুহূর্ত গুলো যদি বাক্স বন্দী করে রাখা যেতো তাবে ভালোই হতো।এই মুহূর্তগুলো ভেবে অনায়াসে মন ভালে হয়ে যাবে।ভালোবাসি বলে দেয়ার চেয়ে সামনের মানুষটার কাজে কর্মে প্রাকাশিত ভালোবাসাটা বুঝে নেয়াটা বেশি আনন্দের। আজকাল তো আই লাভ ইউ শব্দটা সস্তা হয়ে গেছে। খুব সহজেই বলে দেয়া যায়। তবে সেই ভালোবাসা অনূভুতি হীন। কেউ ইংরেজিতে আই লাভ ইউ বলার চেয়ে বাংলাতে আমি তোমাকে ভালোবাসি বলার মধ্যে মনে হয়,আবেগ অনূভুতি বেশি থাকে। কি আদুরে লাগে। চুলায় রান্না রেখে হুরের মন ভাবনার জগতে ঘুরপাক খাচ্ছে। ফুয়াদ এসে দ্রুত গ্যাস অফ করে বলে,বিবিজান আপনার ধ্যান আজকাল কোথায় থাকে? এক্ষুনি চা পরে যেতো সব।
হুর ফুয়াদের কথা শুনে ফুয়াদের৷ দিকে তাকিয়ে বলে,আপনি থাকতে তো কিছুই হবে না ডাক্টার সাহেব।ফুয়াদের গলা দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,আচ্ছা ডাক্টার সাহেব তুমি আমাাকে এতোকিছু বললে,এতো ভালোবাসলে, কিন্তু আমাকে ভালোবাসি বললে না কেন?
ফুয়াদ হুরের গাল টেনে বলে,একরাতে স্বামীর ভালোবাসায় পাগল হয়ে গেলে হুর পরি! কি আবল তাবল বলে যাচ্ছ?এটা কিচেন যখন তখন কেউ চলে আসবে। ছাড়ো আমাকে।
– উঁহু ছাড়বো না। ছাড়লে যদি পালিয়ে যাও। তখন আমি তোমাকে কোথায় খুঁজবো?
– আমি কোথাও পালাবো!তুমি নাস্তা বানানো শেষ করে আসো তারপর তোমার কথার উত্তর দিচ্ছি।
– ভীতু ডাক্টার বউকে ভালোবাসি বলতে ভয় পায়।ফুয়াদের গলা ছেড়ে দিয়ে বলে,যাও লাগবে না তোমার৷ ভালোবাসি বলা।
ফুয়াদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো হুরের দিকে মেয়েটার কি হলো হঠাৎ?
– এভাবে তাকিয়ে থাকার দরকার নেই আমার নজর লেগে যাবে। আমি জানি আমি সুন্দর তাই বলে নজর দেবেন ডাক্টার সাহেব?
ফুয়াদ রান্নাঘর থেকে বের হয়ে হল রুমে এসে বসলো কি হলো হুরের। আচ্ছা ওকে আমি ভালোবাসি বলিনি ঘটা করে তাই কি রাগ করেছে!মেয়েরা এতো অদ্ভুত হয় কেনো? এতো ভালোবাসলাম আর সে কিনা ভালোবাসি বলিনি সেখানে আটকে আছে!
ফুয়াদ কিচেন থেকে বের হতেই হুর মুচকি হাসলো। যাক ভালোই জব্দ করতে পেরেছি।
নাস্তা রেডি করে সকলকে নাস্তা দিলো। নুরকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে নুর হুরকে বললো,ভালো মা আজকে তোমাকে লাল টমেটো লাগছে।সুইট সুইট টমেটো।
সিঁদুর লাল শাড়ী সোনালী পাড়। হাতে স্বর্ণের বালা, কানে ঝুমাকো কানের দুল,গলায় তিন লেয়ারের একটা স্বর্নের চেইন। হাতে আংটি। যেনো হুরের রুপ উপচে পরছে।
আদিয়া বলল,ভাবি আজকে তো আমার ভাইয়ের নজর তোমার উপর থেকে সরবেই না।এদিকে আসো নজর টিকা লাগিয়ে দেই।হুর লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখলো।
আদিয়া সুর তুলে বলে লাজে রাঙা হলো রাঙা বউ গো।
ফুয়াদ প্লেট নিয়ে উপরে চলে আসলো।আলো বেগম হেসে বলে,ছেলেটাকে আমার লজ্জা না দিলেও পারতি।
নুর খিলখিল করে হেসে বলে,লজ্জা তো মেয়েরা পাবে। বাবাই তো ছেলে তার আবার কিসের লজ্জা।হুর নুরের গাল টেনে বলে, পাকা বুড়ি একদম।তোমাকে এসব কে বলেছে হু। এখন যাও উপরে যেয়ে রেস্ট করো আজ তো স্কুলে অফ ডে।
নুর চলে গেলো। হুর খেতে বসবে তার আগেই আলো বেগম বলে,নাস্তার প্লেট নিয়ে উপরে চলে যা। দু’জনে এক সাথে নাস্তা কর।
হুর কিছু বলবে তার আগেই আদিয়া বলে,আর কোন কথা না। সোজা উপরে চলে যাও ভাবি জি।
আদিয়া চলে আসলো রুমে। ফুয়াদ খাবার রেখে কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।
হুর এসে ফুয়াদের পাশে বসে পরোটা ছিড়ে ফুয়াদের মুখের সামনে ধরে বলে,হা করো তো। ফুয়াদ একবার হুরের দিকে তাকিয়ে হা করলো। হুর ফুয়াদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলে,তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি কেন বলোতো?
-ভালোবেসে
– এহহহহ আসছে ভালোবেসে। শুনে রাখো ডাক্টার মেয়েরা যখন এক্সট্রা ভালোবাসা দেখায় তখন বুঝে নিতে হয় সে কিছু চায়।
– ওহহহ তার মানে আমার বিবিজান কিছু চাইবে!তা কি আর্জি বলে ফেলুন বান্দা আপনার খেদমতে হাজির।
– আগে খেয়ে নাও পরে বলছি।
ফুয়াদও নিজের প্লেট থেকে খাবার তুলে নিয়ে হুরের মুখে তুলে দিলো। দু’জনে এক সাথে খাবার শেষ করলো।
হুর নিজের শাড়ীর আঁচল দিয়ে ফুয়াদের মুখ মুছে দিলো। ফুয়াদ হুরের শাড়ির আঁচল ধরে বলে,আমার আবার প্রেম প্রেম পাচ্ছে। কেমন মনে হচ্ছে সেই নবীন প্রেম জেগে উঠেছি। সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছে।আচ্ছা হুর পরি এ স্বপ্ন কখনো ভেঙে যাবে না তো?
হুর ফুয়াদের টি-শার্টের বাটনে হাত রেখে বলে,এটা বাস্তব আর আপনার হুর পরি স্বপ্নের মতোই আপনার বাস্তবে বিচরণ করবে। ফুয়াদ হুরকে ঘুরিয়ে হুরের কাঁধে মাথা রেখে দু’হাতে হুরের কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে,বিবিজান আমার তো আজ হসপিটালে যেতে ইচ্ছে করছে না। ঘরে এতো সুন্দর হুর পরি রেখে হসপিটালে মন বসবে না। আমাকে তো তোমার ভালোবাসার জালে বন্দী করে ফেলেছো।
– পাগলামি কথা রাখো আর রেডি হয়ে চলে যাও। তোমার হুর পরি তোমার অপেক্ষায় থাকবে।আর হ্যা আমার কথাটা আমি চিঠিতে লিখে তোমার বুক পকেটে রেখে দিয়েছি। পড়ে নিও।এবার ছাড়ো। উঁহু আগে বলো,এই আপনি তুমি মিলিয়ে বলার কারণ কি?
– ভাল্লাগে তাই বলি। তোমার সমস্যা।
ফুয়াদ হুরের চুলগুলো ঘাড় থেকে সরিয়ে বলে, আচ্ছা হুর তোমার চুল এতো ছোট কেন?
– আপনার কি আমার চুল পছন্দ না?
ফুয়াদ হুরের ঘাড়ে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে,সেটা কখন বললাম। তোমার চুল সুন্দর তবে আর একটু বড় হলে আরো ভালো লাগতো।
হুর ফুয়াদের কাছ থেকে সরে বলে,আপনিও দেখতে সুন্দর তবে আর একটু ফর্সা হলে আরো ভালো লাগতো।
ফুয়াদ শব্দ করে হেসে বলে,বাহহ তুমি তো দারুণ। এবার মনে হচ্ছে আমি কখনো বোরিং হবো না। এদিকে আসো তো বিবিজান।
হুর আস্তে করে এসে দাঁড়ালো ফুয়াদ হুরের চুলগুলো নাড়িয়ে বলে,তোমার এই ছোট চুলেও তোমাকে পরি লাগছে।এতোটুকু কথায় গাল ফোলাতে হবে না।হুরের কপালে চুমু দিয়ে বলে, এবার তাহলে আমি হসপিটালে যাই তুমি থাকো। হুর ফুয়াদ কে ইশারা করে নিচু হতে বললো।
ফুয়াদ হুরের কোমড় ধরে তাকে উঁচু করে ধরলো। হুর ফুয়াদের কপালে ভালোবাসা এঁকে দিয়ে বলে,এবার আমাকে ছাড়ুন আর রেডি হোন।
______________________________________________
নাহিদ দাঁড়িয়ে আছে মর্গের সামনে। নাহিদএকজন ডাক্তার কতশত লাশ দেখেছে সে। আজ বুকের ভেতর কেমন যেনো করছে।হ্যাঁ এটা ঠিক মাহতাব সাহেবের চরিত্র ভালো ছিলো না। কিন্তু নাহিদ ছোট থাকতে নাহিদকে সেই কোলে পিটে করে মানুষ করেছে। দু’দিন বাবার কোন খোঁজ না পেয়ে থানায় মিসিং ডায়েরি করে। সেখান থেকেই আজ কল আসে। নিজের ফোনটা বের করে প্রথমেই কল করে ফুয়াদকে। ফুয়াদ রিসিভ করতেই নাহিদ ফুয়াদকে সবটা বলে, ফুয়াদ বলে আমি এক্ষুনি আসছি।
একজন লাশের মুখের উপর থেকে সাদা কাপড় সরিয়ে দিলো। নিজের বাবার লাশ চিনতে নাহিদের এক মিনিটও সময় লাগলো না। নাহিদ বললো ওনার সব ডিটেইলস আমাকে দিন। একজন বললো,উনি পরশু রাতে এক্সিডেন করছেন। আর স্পটেই ডেড হয় ওনার। সম্ভবত ওনারা কোনে বার থেকে নে’শা করে বের হয়েছিলো। ফুয়াদও ততক্ষণে চলে আসে। নাহিদ আর ফুয়াদ মিলে মাহতাব সাহেবের শেষ বিদায়ের ব্যবস্থা করে। নাহিদ ভেতরে ভেঙে পরলেও বাহিরে তা বোঝার সাধ্য নেই। যতই নিকৃষ্ট হোক বাবা তো বাবাই।
আজিমপুর কবরস্থানে কবর দিয়ে এসে নাহিদ একটা নদীর পারে বসে আছে। ফুয়াদ নাহিদের পাশে বসে নাহিদের কাঁধে হাত রেখে বলে,আমরা বুঝ হওয়ার পর থেকেই জানি একদিন আমাদের চলে যেতে হবে।এটাই প্রকৃতির নিয়ম। মন খারাপ করিস না। বরং আঙ্কেলের আত্মার মাগফিরাত কামনা কর।
নাহিদ ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। ফুয়াদ নাহিদকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
আদিয়া নাহিদের বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিচলিত হলো এটা ভেবে নাহিদের এখন কি অবস্থা। সেই কখন থেকে কল করেই যাচ্ছে সুইচ অফ আসছে বারবার।
আদিয়া, আলো বেগম আর হুর এক সাথেই বসে আছে এমন সময় বর্ষা একটা কাগজ হাতে তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে….
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰