#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২৮(অন্তিম পর্ব)
#Raiha_Zubair_Ripte
কানাডার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে ত্রিশে পা দেওয়া নারী। হাতে তার কফি। কফি থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে, সেই কফির মগে চুমুক দিয়ে কফি খাচ্ছে আর বাহিরের প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছে। শীতের মাস,শীত টা এবার ভালোই পড়েছে কানাডায় অন্যান্য বছরের চেয়ে। গায়ের শাল টা আরো জড়িয়ে নিয়ে চোখের চশমা টা ঠিক করে নিলো মেয়েটি। রোদের দেখা নেই আকাশে। তার উপর বইছে ঠান্ডা হাওয়া। এই শীতে আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হলো না বেলকনিতে। অগ্যতা কফির মগ নিয়ে বেলকনি থেকে রুমে চলে আসলো। বিছানার দিকে তাকাতেই ছয় মাসের মেয়ের দিকে চোখ যায় এনার। বাবা মেয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। শান এক হাত দিয়ে আগলে রেখেছে মেয়েকে। স্মিত হাসলো এনা। কফি টা শেষ করে কফির মগ টা টি-টেবিলের উপর রেখে এগিয়ে গেলো বিছানার দিকে। মেয়ের কাছে গিয়ে কপালে চুমু খেলো একটা। আর তখনই দরজা ফাঁক করে রুমে ঢুকে চার বছরে আইয়াজ। হেনা আর আরহামের ছেলে। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে হেঁটে এনার সামনে দাঁড়ায়। এনা সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আইয়াজ একবার ছয় মাসের বাবুর দিকে তাকিয়ে দু হাত পেছনে নিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,
” মিম্মি তোমার মেয়ে উঠে নি এখনো?
এনা আইয়াজ কে কোলে তুলে গালে চুমু খেয়ে বলে,,
” না বাবাই তোমার বোন এখনো ঘুম থেকে উঠে নি।
সহসা এনার কোল থেকে নেমে যায় আইয়াজ ভ্রু কুঁচকে বলে,,
” বোন না বোন না বউ বলো বউ। আমার পুতুল বউ।
এনা আইয়াজের মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো নাড়িয়ে বলে,,
” এহহ বললেই হলো নাকি তোমার কাছে আমার মেয়ে বিয়ে দিবো না।
আইয়াজ মাথা থেকে এনার হাত সরিয়ে বলে,,
” দিবে না বিয়ে পুতুল বউকে আমার সাথে?
” না।
” সত্যি?
” হ্যাঁ সত্যি।
আইয়াজ সোজা বিছানায় গিয়ে আনিশার উপর থেকে চাদর সরিয়ে কোলে তুলে নেয়। সাথে সাথে কেঁদে দেয় আনিশা। দৌড়ে মেয়েকে ধরে এনা।
” বাবাই হচ্ছে কি আনিশা তো ঘুমিয়েছে কোলে নিয়েছো কেনো? এখন যে কেঁদে দিলো।
মেয়ের কান্নার আওয়াজ শুনে শানের ঘুম ছুটে যায়।
” তোমার মেয়েকে আমি ধরলেই শুধু ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দেয়। আমি কি তোমার মেয়েকে ব্যাথা দেই বলো আনিশার পাপা।
শান দু দিকে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ আইয়াজ আনিশা কে ব্যাথা দেয় না। আইয়াজ দু হাত বাড়িয়ে আইয়াজ কে কাছে টানে। আইয়াজ শানের কোলে চড়ে বসে।
” এতো সকাল সকাল আমার চ্যাম্পের ঘুম ভেঙে গেছে কেনো? দেখছো না বাহিরে কি শীত।
আইয়াজের পূর্ণ দৃষ্টি আনিশার দিকে।
” ঘুম আর আসলো না গো আনিশার পাপা। আনিশাকে জড়িয়ে ঘুমু দিবো আমি। মিম্মি ধরতে দেয় না আনিশা কে। দেখছো ধরতে না ধরতেই নিয়ে গেলো আবার।
” তুমি ঘুমু দিবে চ্যাম্প?
” হ্যাঁ তুমি আমি আর আনিশা।
” কিন্তু বাবু তো ঘুম থেকে উঠে গেছে। তুমি উঠিয়ে ফেলছো।
” তোমার মেয়ে কেনো ঘুমাবে বলো আমি তো ঘুমাই নি। পঁ’চা মেয়ে একটা।
” বাবু তো সারারাত ঘুমোয় নি চ্যাম্প,তোমার মিম্মি কে জ্বা’লিয়েছে খুব। ভোরের দিকে ঘুমিয়েছিল। চলো তুমি আর আমি ঘুম দেই।
” নো আনিশার পাপা। আমি ঘুমু দিবো না। মিম্মি পুতুল কে আমার কাছে দাও ট্রাস্ট মি কাঁদাবো না।
” সত্যি কাঁদাবে না বাবাই কথা দাও মিম্মি কে।
” সত্যি কাঁদাবো না। তোমার মেয়েকে আমি কখনো কাঁদাই না মিম্মি। তোমার মেয়ে একা একাই শুধু কাঁদে আর মাম্মামের হাতে বকা খাওয়ায় খুব দুষ্টু।
এনা হেঁসে ফেলে। মেয়েকে বুকের দুধ খাইয়ে মধ্যে খানে শুইয়ে দেয়। আইয়াজ আনিশার পাশে শুয়ে গালে চুমু খায় সাথে সাথে আবার কেঁদে দেয় আনিশা। আইয়াজ এনার দিকে তাকিয়ে বলে,,
” দেখলে মিম্মি আদর করেছি তাও কাঁদছে পুতুল বউ কেনো? আমাকে একটু ও ভালোবাসে না তোমার মেয়ে। আমি আর আসবো না তোমার মেয়ের কাছে ভালোও বাসবো না।
কথাটা বলে রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আইয়াজ। এনা তপ্ত শ্বাস ফেলে। অনেক সাধনার পর বিয়ের ছয় বছরের মাথায় তাদের কোল জুড়ে আসে আনিশা। শানের শারীরিক কিছু সমস্যার জন্য এতোদিন চেষ্টা করেও মা বা হতে পারে নি তারা। ফাইনালি এবার তারা পেরেছে অনেক ডক্টর দেখিয়ে তাদের পরামর্শ নিয়ে।
আনিশা পৃথিবীতে আসার পর থেকেই আইয়াজ এমন করে। যখন এনা প্রেগন্যান্ট ছিলো তখন আইয়াজ এনার সাথে সাথে থাকতো। মিম্মির অসুবিধা হচ্ছে কি হচ্ছে না সব দেখতো। যেদিন আনিশা পৃথিবীতে আসলো সেদিন আইয়াজ আনিশা কে কোলে নিয়ে আর কাউকেই কোলে দিবে না। তার পুতুল বউকে শুধু সে কোলে নিবে। সেদিন সবাই তার পুতুল বউ ডাক টা শুনে অবাক হয়। এই টুকু ছেলের মুখে এমন কথা শুনে।
সবাই কতো করে বলে আনিশা তোমার বউ না বোন হয় বোন। সে মানতে নারাজ।
————
পুরো বাড়ি ছোটাছুটি করছে হেনা। ছেলে তার খাবে না। আরহাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মা ছেলের কান্ড দেখছে আর হাসছে। হেনা এবার কেঁদেই দিবে এমন অবস্থা ছেলেটা সবসময় জ্বালায় তাকে। একটা কথাও শুনে না। হনহন করে সোফায় বসে ভাতের প্লেট টা শব্দ করে সামনে রেখে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,,
” হাসছেন আপনি আপনার ছেলে একমুহূর্তের জন্য ও শান্তি দেয় না আমায়। আধঘন্টা ধরে খুশামুদী করছি খাবে না সে রাগ করেছে। কেনো জানেন?
আরহাম দু দিকে মাথা নাড়ায়। সে জানে না।
হেনা সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,
” আনিশা তাকে ভালোবাসে না তাই খাবে না। এটা কোনো কথা বলুন তো? ঐ টুকু বাচ্চা মেয়ে কি কিছু বুঝে?
আরহাম ছেলের কাছে যায়। ছেলেকে নিয়ে পাশে বসিয়ে বলে,,
” কি হয়েছে আইয়াজ খাচ্ছো না কেনো?
আইয়াজ আরহাম কে জড়িয়ে ধরে বলে,,
” পাপা আনিশা আমায় ভালোবাসে না একটু ও ভালেবাসে না। সহ্যই করতে পারে না আমায়। আদর করলেও কাঁদে ধরলেও কাঁদে।
আইয়াজ ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,
” এই ব্যাপারের জন্য আমার আইয়াজ খাচ্ছে না। পাপা আছে না প্রবলেম সল্ভ করার জন্য। আমি আনিশা কে তোমার কাছে নিয়ে আসবো।
আইয়াজ মাথা তুলে তাকায়। উৎফুল্ল হয়ে বলে,,
” সত্যি পাপা তুমি আনিশা কে আমায় এনে দিবে?
” হ্যাঁ তবে শর্ত আছে।
” কি শর্ত?
” মাম্মামের আনা খাবার টা খেয়ে ফেলতে হবে।
” ঠিক আছে আমি খাবো তুমি পুতুল বউকে আনো।
আরহাম বসা থেকে উঠে সিঁড়ি বেয়ে শানের ঘরের দিকে যায়। শান বসে আছে বিছানায় মেয়েকে নিয়ে। আরহাম ঘরে ঢুকে বলে,,
” ব্রো তোর মেয়ে তো আমার ছেলের মাথা পুরোপুরি খেয়ে ফেলছে। সে তার পুতুল বউকে ছাড়া ভাত খাবে না,পুতুল বউ ছাড়া ঘুমোবে না,পুতুল বউ ছাড়া তার ভালো লাগে না। এখন বলছে আনিশা তাকে ভালো কেনো বাসে না তাই ভাত খাবে না। দে আনিশা কে দে আমার কাছে আমার ছেলের জন্য আনিশাকে আমাদের চাই।
শান মেয়েকে আরহামের কোলে দেয়। আরহাম আনিশাকে নিয়ে নিচে নেমে আসে। আইয়াজ আনিশাকে দেখে দৌড়ে পাপার কাছে আসে। আরহাম হাত দিয়ে বারন করে আনিশা তার কোলেই থাকবে। আইয়াজ মন খারাপ করে। গিয়ে সোফায় বসে। হেনা খাবার খাইয়ে দেয়।
আব্রাহাম আর মারুয়া বাহির থেকে আসে। এই শীতের মধ্যে হাটাহাটি করতে গিয়েছিলো দু’জনে। আব্রাহাম সোফায় বসতে বসতে বলে,,
” কি হয়েছে দাদু ভাই মন খারাপ কেনো?
আইয়াজ কথা বলে না। হেনা বিরক্ত হয় ছেলের প্রতি। কেনো যে বাচ্চা কাচ্চা নিলো এখন রাগ লাগছে। এই ছেলে তার জান একদম তেজপাতা বানায় ফেললো।
” আপনার নাতি এই বয়সে পেকে গেছে। আনিশা ছাড়া তার চলে না। সাইকো হচ্ছে দিনকে দিন। আরে বাবা আনিশা কি কিছু বুঝে সে কাঁদলে মনে করে আইয়াজ, আনিশা তাকে ভালোবাসে না। মানে এই টুকু বয়সে এ ছেলে এসব ভালোবাসার কি বুঝে।
” আহ রাগ করছো কেনো বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে।
” যদি ঠিক না হয় তখন বাবা? আনিশাকে কোনো ছেলে ধরলে রেগে ফায়ার হয়ে যায়। আর কথায় কথায় ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেয়। সেদিনই তো শাম্স এসেছিলো আনিশা কে দেখতে আপনার ফ্রেন্ডের ছেলের ছেলে। সে কেনো আনিশাকে কোলে নিলো কেনো চুমু খেলো এ নিয়ে সারাটা দিন রেগে রইলো।
” দাদু ভাই এদিকে আসো তো তুমি।
আইয়াজ এসে আব্রাহামের কোলে বসলো।
” তুমি আনিশা কে ভালোবাসো?
আইয়াজ মাথা নাড়ায় হ্যাঁ ভালোবাসে।
” বিয়ে করবে?
” হ্যাঁ।
” তাহলে দাদু ভাই তোমাকে শান্ত থাকতে হবে আনিশা তোমারই থাকবে তুমি মাম্মামের সব কথা শুনবে।
” আচ্ছা।
” গুড বয়।
এনা ডাইনিং টেবিলে খাবার সার্ভ করতে করতে বলে,
” হয়েছে এখন খেতে আসুন সবাই। বেলা তো কম হলে না। আইয়াজ বাবা যাও খেলো তুমি। আর আরহাম আনিশা কে আমার কাছে দাও।
আরহাম আনিশা কে এনার কোলে দিয়ে খাবার টেবিলে বসে পড়ে। এনা আনিশা কে নিয়ে উপরে চলে যায়। শান ল্যাপটে মুখ গুঁজে আছে। বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে এনা।
” সারাদিন কি শুধু ল্যাপটপে মুখ গুঁজেই রাখবেন? খাওয়া দাওয়া করবেন না। নিচে গিয়ে খেয়ে আসুন।
শান ল্যাপটপে মুখ রেখেই বলে,,
” আচ্ছা বলো তো আমাদের বিয়ে কয় বছর হলো?
” হঠাৎ এ প্রশ্ন কেনো?
” বলোই না।
” ছয় বছর তিন মাস।
শান ল্যাপটপ টা সামনে থেকে সরিয়ে আনিশা কে কোলে নিয়ে বেলকনিতে যায়। পেছন থেকে এনা বলে,,
” আরে এই ঠান্ডায় আনিশাকে বেলকনিতে নিচ্ছেন কেনো ঠান্ডা লাগবে তো।
” উহু লাগবে না ঠান্ডা। তুমি ও আসো।
এনা বেলকনিতে গিয়ে শানের পাশে দাঁড়ায়। শান এক হাত দিয়ে এনার হাতের উল্টো পিঠে চুমু খায়।
” দেখতে দেখতে আমাদের সংসার জীবনের ছয় বছর তিন মাস হয়ে গেলো। সেই সাথে আমাদের প্রিন্সেসের ছয় মাস বয়স। আরেক প্রিন্সেসের ১৩ বছর হলো।
” হুমম আ্যাঞ্জেলেকা এখন আর আসে না আমাদের কাছে।
” হুমম মা এখনো মেনে নিতে পারে নি তোমায়। হয়তো আর পারবেও না। শুনলাম হ্যাভেন এখন বিজনেস শুরু করেছে। প্রায় দেখা হয় তার সাথে। কথা বার্তা বলে খানিক সময়।
” সুখে থাকুক তারা। এটাই চাই আমাদের ভুলে।
” হুমম।
******-**
বোর্ডেন্স পার্কের পাশ দিয়ে হেঁটে চলছে এক রমণী তার প্রিয়তমের হাত ধরে। শীতকালে বোর্ডেন্স পার্ক হয়ে ওঠে চিরশুভ্র। শীতকালীন সময়ে এই পার্ক জনমানব শূন্য থাকে সবসময়। হাতে গুনা দু একজন আছে এই পার্কে। আজা রমণীর বিয়ের এক বছর পূর্ণ হলো। সকালে আব্দার করেছিল প্রিয়তমের সাথে কিছুক্ষণ একান্তো সময় কাটাবে। তাই তার প্রিয়তম তাকে নিয়ে এসেছে এই পার্কে। হাঁটার গতি থামিয়ে দিলো প্রিয়তম রমণী অবাক হয়ে তাকালো তার দিকে। প্রিয়তমের দৃষ্টি অনুসরণ করেই সামনে তাকিয়ে দেখলো। প্রিয়তমের ভালেবাসার মানুষটা আসছে সাথে রয়েছে বছর দুয়েকের এক বাচ্চা ছেলে। থমকে গেলো আরাভ। সহসা হাত ছেড়ে দিলো মুনিয়া। হেফজিবা স্মিত হাসলো। ছেলেকে নিয়ে এসেছিলো একান্তে সময় কাটাতে কিন্তু এখানে যে তাদের দেখবে আশা করে নি।
মুনিয়ার ছেড়ে দেওয়া হাত ধরে নিলো আরাভ। আবার হাঁটা ধরলো। হেফজিবার সামনে এসে দাঁড়ালো।
” কেমন আছো হেফজিবা।
” ভালো তোমরা?
মুনিয়ার ইতস্তবোধ করলো আরাভের থেকে হাত ছাড়িয়ে বলে,,
” আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি আপনি আসুন।
কথাটা বলে আরাভ কে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মুনিয়া চলে আসে। মুনিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে আরাভ। স্মিত হাসে হেনা।
” আমাকে হয়তো তোমার বউয়ের পছন্দ নয় তাই না!
” কে-ই বা তার স্বামীর প্রাক্তন ভালোবাসা কে পছন্দ করে বলো?
” তা ঠিক।
” এই বুঝি তোমার ছেলে। তা স্বামী কোথায় তোমার?কানাডায় আসলে কবে?
” হুমম আমার ছেলে। স্বামী আসে নি। আসলে ছুটিতে এসেছি আমি ওর অফিস ছুটি দেয় নি। আর এসেছি সাপ্তাহ খানেক হবে। এই তো পাঁচ দিন পর আবার ব্যাক করবো।
” ওহ্হ আচ্ছা ভালো থেকো আসি।
” তুমি ও।
আরাভ মাথা নাড়ায়। প্রস্থান করে জায়গা। আরাভের যাওয়ার পানে চায় হেফজিবা। সোজা হয়ে আবার সামনে তাকায়। ছেলেকে নিয়ে একটা বেঞ্চে বসে।
আরাভ গাড়িতে এসে দেখে মুনিয়া মন মরা হয়ে বসে আছে।
” রাগ করেছো?
মুনিয়া ভরকে যায়।
” না রাগ করি নি।
” তাহলে চলে আসলে যে?
” না এমনও আপনাদের মাঝে থেকে আমি কি করতাম তাই চলে এসেছি।
” আমরা তেমন কোনো কথা বলি নি যে তোমার চলে আসতে হতো।
” এখনো হেফজিবা আপু কে ভালোবাসেন?
” সত্যি বলবো?
” হুমম।
” কষ্ট পাবে?
” না।
” ফাস্ট ভালোবাসা ভুলা কি এতোই সহজ বলো? হেফজিবার প্রতি সফ্ট কর্ণার এখনো আছে হয়তো সময়ের ব্যাবধানে সেটাও আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাবে। তাই বলে ভেবো না তোমায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবো! তুমি হচ্ছো আমার এলোমেলো জীবনের পথপ্রদর্শক যাকে সারাজীবন চলতে হলে আমার লাগবেই। পথপ্রদর্শক ছাড়া আমার সামনে আগানো খুবই কষ্টসাধ্য।
মুনিয়া হাসে। আরাভ গাড়ি স্টার্ট দেয়। এক বছরে হয়েছে তারা বিয়ে করেছে। সেদিন বাংলাদেশে হেফজিবার সাথে কথা বলার পর সে তার মায়ের রুমে যায়। মায়ের থেকে সময় নেয়, মুনিয়াকে বোঝার ও মুনিয়ার ও তাকে বোঝার। আরাভের মা রাজি হয়। সেই বোঝাবুঝি করতে করতে তাদের চার বছর লেগে গেছে। মাঝ রাস্তায় এসে গাড়ি থামায় আরাভ গাড়ি থেকে নেমে চকলেট আর আইসক্রিম নিয়ে আসে। একটা আইসক্রিম মুনিয়ার হাতে দেয়। আর বাকি গুলো ফারাহ্-র মেয়ে ফারিয়ার জন্য নেয়,বয়স ছয় হয়েছে । আজ ঘুরতে নিয়ে আসে নি দেখে খুব খেঁপে আছে ফারিয়া।
মুনিয়া আইসক্রিম খেতে থাকে। আরাভ গাড়ি চালায়। দৃষ্টি তারা সামনে রেখে মনে মনে বলে,,
” একটা সময় আমাদেরও ছিল হেফজিবা
এখন তুমি ভিনদেশী এক তারা,
শেষ হয়েছে পুরোনো সব খাতা
ইচ্ছেগুলোই এখন আবেগ হারা। ভালো থাকো স্বামী সন্তান নিয়ে সেই দোয়াই করি।
********
” মাম্মা মাম খাবো?
হেফজিবা ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ছেলে এরিক কে খাওয়ায়। ছেলে পানি খেয়ে মাঠে বসে খেলা করতে থাকে। আজ সতেরো মাস হলো এরিক তার কাছে। দত্তক নিয়েছে। কানাডার সব পরিচিত মনে করে হেফজিবা বিয়ে করছে আর এরিক তার নিজের সন্তান। আদৌতে তা না। হেফজিবা বিয়ে করে নি। নিজের একাকিত্ব কাটাতে এরিক কে দত্তক নিয়েছে। এরিকের মা বাবা কেউই বেঁচে নেই। গাড়ি এক্সি”ডেন্ট করে মা’রা গেছে। এরিক হেফজিবারই এক কলিগের ছেলে।
বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ায় হেফজিবা। সবুজ মাঠের দিকে দৃষ্টি।
” স্বপ্ন সে তো সত্যি হওয়ার নয় তবুও আপনার তরে রোজ চেয়ে থাকি আমি। ভালোবেসে ভুল করেছি যা কখনো ক্ষমার যোগ্য নয়। আপনার ভালবাসায় এতটা বিষন্ন হয়ে আজ করি হাহাকার।জীবনে অনেক কিছু না পাওয়ার থাকে তবে সবচেয়ে কষ্টের হল ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়া। সমস্ত কষ্ট বিসর্জন দেওয়া গেলেও ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে যে কষ্ট এই কষ্ট কখনো বিসর্জন দেওয়া যায় না। স্মৃতির গভীরে সারা জীবন রয়ে যায়। আপনি আমার দীর্ঘশ্বাস ই রয়ে গেলেন আরাভ।
আপনাকে না পাওয়ার ইচ্ছা আজ মরে গেছে আরাভ,
তাই তো আমি স্বপ্ন দেখি নতুন জীবনের সম্ভাবনা।
আপনাকে ভালবেসে যে কষ্ট পেয়েছি,
তাতে আমার শিক্ষা হয়ে গেছে।
আমি এখন বাঁচতে চাই।
এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায়।
আমি রাত্রি জেগে থাকি
ফেরি করা গল্প শুনবো বলে..
আপনি ভিন দেশী এক তারা
আমার প্রেমের বাউন্ডুলে।
কথাটা মনের ভেতর আউড়ে হেফজিবা ছেলের হাত ধরে আবার হাঁটতে থাকে। ছেলেকে নিয়ে প্রতিনিয়ত হাঁটতে ই হবে থেমে থাকলে চলে যাবে না। থেমে গেলে জীবনের গোলোক ধাঁধায় আবার আটকা পড়ে যাবে। ছোট্ট ছেলেটি মায়ের পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটছে। থেকে থেকে আগপাছ ও হয়ে যাচ্ছে। হেফজিবা কোলে তুলে নেয় ছেলেকে। চুমু খায় ছেলের মাথায়। আবার ফিরতে হবে ব্যাস্ত জীবনে,ব্যাস্ত শহরে, ছেলেকে নিয়ে। যেখানে পুরোনো অতীত পিছুটান নেই। ভালো থাকুক সবাই।
#সমাপ্ত
(