#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*আয়াদ তার মাকে জিজ্ঞেস করলো
— মা বাড়িতে এতো লোকজন কেনো?
আয়াদের কথার বিপরীতে আয়াদের মা বেশ শান্ত গলায় জবাব দিলো
— অর্শিকে দেখতে ও বাড়ি থেকে লোক আসছে।
— ও বাড়ি থেকে মানে? আমায় তো কিছুই জানানো হয় নাই।
কথাটা ভিশন বিক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল আয়াদ।
— আরে তোকে তো বলাই হয়নি তোর বাবা অর্শির জন্য একটা ছেলেকে পছন্দ করেছে। আর অর্শির ও সেই ছেলেকে ভিশন পছন্দ হয়েছে। ছেলেটা ইন্সপেক্টর। ভালো সমন্ধ তাই আর বিলম্ব করি নাই আমরা। আজ পাকা দেখার হবে কাল বিয়ে।
— ওহহ।
আয়াদের মা কথা টা শেষ করে চলে যায়। আয়াদ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। অর্শির বিয়ে হয়ে যাবে! কথাটা মানতে ভিশন কষ্ট হচ্ছে আয়াদের। আয়াদ নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। চোখ জোড়া ছলছল হয়ে এলো তার। আয়াদ সোফার উপর বসে আপন মনে বলতে লাগলো “পুলিশ ইন্সপেক্টর ছেলেকে পছন্দ হয়ে গেলো তোর? আচ্ছা তুই কি একটুও বুঝতে পারিস নাই আমি তোকে ভালোবাসি? আমার সবটা জুরে শুধু তোর বসবাস? আচ্ছা আমি সারা দিন ঝগড়া করি ঠিক আছে। কিন্তু তোর চোখে আমার খারাপ দিক টাই পরলো! আমার মধ্যে যে তোর জন্য এক হৃদয় ভালোবাসা রয়েছে তা কি তোর চোখে পরেনি? হয়তো পরেনি। কারন আমার ভালোবাসা টা অপ্রকাশিত। কিন্তু আমি বার বার তোর কাছে নিজের ভালোবাসা তুলে ধরেছি। বোঝাতে চেয়েছি তোকে আমি ভালোবাসি অর্শি। কিন্তু আফসোস তুই তা বুঝতে পারলি না। ইচ্ছে করলে বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে পারি কিন্তু বিয়ে ভাঙ্গলে কি তোকে পাবো? উহু কখনও না। তুই রাজি আছিস মানে বিয়েটা হবে। আমি বাধা দিবো না আর। তোকে অন্য কারোর পাশে সহ্য করার ক্ষমতা না থাকাটা আমার ব্যর্থতা। তার জন্য তুই দায়ী না”।
কথাটা শেষ করতেই আয়াদের চোখ বেয়ে বেদনার নোনা জল গড়িয়ে পরতে লাগলো। ভালোবাসা বুঝি এমনি হয়। প্রিয়জনের গুরুত্ব ততক্ষণ বোঝা যায় না। যতক্ষণ না সেই প্রিয়জন অপরিচিত হয়ে যায়। কিছু অনুভূতি কখনও প্রকাশ করতে নেই। কিছু ভালোবাসা বেঁচে রয় মনের কোনে। আয়াদ ড্রিংক করছে আর সিগারেট ফুকছে নিজের রুমে বসে। মা বাবা দুবার করে ডাকতে আসলেও আয়াদ নিজের রুমে থেকে বের হয়নি।
— মা আয়াদ ভাইয়া কে দেখছি না যে? উনি কি বাড়িতে নেই?
কান্না ভেজা কন্ঠে অর্শি মাকে জিজ্ঞেস করলো কথাটা। মা মৃদু কন্ঠে জবাব দিলো
— হুম আছে তো নিজের রুমে। তুই ভাবিস না ও চলে আসবে।
— হুম।
মা অর্শিকে রুমে রেখে চলে যায়। অর্শি বিছানায় বসে আছে। চোখ থেকে ঝরছে জল। মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে বারংবার আয়াদ ভাইয়া কি এই বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে পারে না? সে কি একটা বার সবার সামনে এসে বলতে পারে না “আমি অর্শিকে ভালোবাসি। ওকে বিয়ে করতে চাই”। হয়তো পারে না। তাই তো আজ নিরব উনি। আমি অন্য কারোর সাথে কথা বললে ওনার সমস্যা হয়। কিন্তু সারা জীবনের জন্য অন্য কারোর হয়ে গেলে সেটাতে সমস্যা হয় না। আর হবেই বা কি করে? ওনার তো অনেকে আছে। উনি ঠিক তাদের নিয়ে ভালো থাকবে। আমার ভালো থাকাটা ভাবতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।
অর্শি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। একজন নারী যখন নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে অন্য কাউকে নিজের জীবনে নিয়ে আসে বা অন্য কারোর হয়ে যায়। তখন আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজটা ঐ মেয়েটাকে না না কথা বলে দোষারোপ করে। নারী জানি ছলনাময়ী বা প্রতারক নয়। তাদের একটাই দোষ বুক ফেটে যাবে তবে মুখটা খুলবে না কখনও। পুরুষের থেকে একজন নারী কয়েক গুন বেশি ভালোবাসার ক্ষমতা রাখে। কথাটা বিশ্বাস হলো না? তবে নিজের মা এর দিকে দৃষ্টিপাত করুন। দেখে নিন আপনার সামনেই প্রমান আছে।
— আয়াদ অর্শিকে ও বাড়ির লোকরা দেখতে আসলো কিন্তু তুই নিজের রুমের মধ্যে বসে ছিলি কেনো?
আয়াদের বাবা ভিশন কর্কশ কন্ঠে কথাটা আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল। আয়াদ সোফার উপর চোখ জোড়া বন্ধ করে বসে আছে। তার বাবার কথাটা শেষ হতেই আয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তার বাবার সামনে থেকে নিজের মুখটা একটু আড়াল করে বেসুরো গলায় বলতে লাগলো
— ওর বিয়ের কথা হচ্ছে সেখানে আমার কি কাজ? আমি একটু বিজি ছিলাম কাজে। তাই আরকি যেতে পারিনি।
আয়াদের কথাটা তার বাবার মনকে শান্ত করতে পারলো না। উনি আরো রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো
— কি এমন কাজ তোর? আমার মেয়ের বিয়ের কথা চলছে সেখানে আসতে পারলি না। জানিস সবাই তোর কথা জিজ্ঞেস করছে আমায়। এতোটা অভদ্র কি করে হলি তুই? বল উত্তর দে।
বাবার কথা শেষ হবার পূর্বেই আয়াদ তার বাবাকে অবাক করে দিলো। আয়াদ তার বাবার চোখের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আয়াদের ফর্শা উজ্জ্বল বর্ণের মুখটা লাল হয়ে আছে। চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে রক্ত বেরিয়ে যাবে। আয়াদের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে মাটিতে পরলো। আয়াদ ভারী কন্ঠস্বর নিয়ে তার বাবার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো
— কি হয়েছে? আমি ওখানে যাই নি আর যাবো ও না কখনও। ওর বিয়ে হচ্ছে হোক। অর্শির বিয়ে নিয়ে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে আপসেট আছি বাবা। সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে এতো রাগ দেখানোর কিছু নেই বাবা। প্লিজ! আমাকে একটু একা থাকতে দাও তোমরা। আমার কিছু ভালো লাগছে না। প্লিজ! পা ধরি তোমাদের একটু একা থাকতে দাও আমায়।
আয়াদের ক্ষতবিক্ষত কন্ঠস্বর জানান দিচ্ছে তার মনের অবস্থা। আয়াদের বাবা বুঝতে পারছে না আয়াদের আচরন এমন বদলে গেলো কি করে? উনি বুঝতে পারছেন না আয়াদের কি হয়েছে? যার জন্য আয়াদ একাকীত্ব প্রত্যাশা করছে। বাবা আয়াদের দিকে এক দৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে থাকার পরে আয়াদের রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়।
* রাতের দিকে খাবার টেবিলে বসে আছে আয়াদের বাবা। ওনার পাশে বসে আছেন মা। অর্শি আর আয়াদ কেউ খাবার খেতে আসে নাই এখনও। বাবা মা দুজনেই একদম নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।
— মা খাবার খাচ্ছো না যে?
মা এর পিছন থেকে কিছুটা মলিন কন্ঠ নিয়ে কথাটা বলল অর্শি। অর্শির কথাটা শুনে মা একটু কেঁপে উঠল। উনি আনমনে বলে উঠলেন
— হ্যাঁ, খাচ্ছি।
অর্শি বাবা ও মাকে খাবার বেড়ে দিয়ে আয়াদের রুমের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো
— মা আয়াদ ভাইয়া খাবার খেতে আসেনি?
— উহু। ওর কিছু ব্যক্তিগত কারনে একটু একা থাকতে চায়। জানিস অর্শি আজ তোর আয়াদ ভাইয়া প্রথম তোর বাবার মুখের উপর চেঁচিয়ে কথা বলেছে। হয়তো কোনো পাপ করেছি আমরা। তা না হলে এমন অবাধ্য সন্তান আমাদের হতো না।
মা এর কথাটা শুনে অর্শি বেশ অবাক হয়ে যায়। আয়াদ সবার সাথে রুডলি বিহ্যাভ করে ঠিক আছে। কিন্তু সেই ছোট বেলা থেকে আজ পর্যন্ত অর্শি কখনও আয়াদকে তার বাবা মা এর মুখের উপর কথা বলতে দেখে নাই। মা বাবা যাই বলে আয়াদ তাই মেনে নেয়। কিন্তু এই সব আজ কি শুনছে সে? আয়াদ ভাইয়া ও আসরে ও আসলো না! কি হয়েছে তার? জানতে হবে। আর যদি আমার কারনে আয়াদ ভাইয়া এসব করে থাকে তবে তার থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। আমি চাই না আয়াদ ভাইয়া মা বাবার সাথে কোনো ধরনের বাজে ব্যবহার করে তাদের মনে কষ্ট দিক।
* খাবার খাওয়া শেষ হলে অর্শি নিজের রুমে চলে যায়। বাবা মা খাবার শেষ করে অনেক আগেই নিজেদের রুমে চলে গেছে। অর্শি সোফায় বসে ভাবছে “আয়াদের সামনে গিয়ে সে কি বলবে? কিভাবে জিজ্ঞাসা করবে যে আয়াদ এমনটা কেনো করেছে? আয়াদ আবার তাকে অন্য কিছু ভাববে না তো”? এই সব ভাবনার মাঝেই মনে পরে গেলো তার। মা হবে পরে দেখা যাবে। এখন আয়াদ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হবে আমায়।
অর্শি নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আয়াদের রুমের দিকে চলে যায়। এই প্রথমবার অর্শির বুকের মধ্যে অদ্ভুত এক ভয় কাজ করছে। হাত পা অবশ হয়ে আসছে তার। কিন্তু না। অর্শিকে জানতেই হবে সবটা। অর্শি আয়াদের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করলো।
— আয়াদ ভাইয়া আমি অর্শি। ভিতরে আসতে পারি?
দরজার ওপারে থেকে একটা তাচ্ছিল্য কর কন্ঠেস্বর ভেসে এলো। আয়াদ বলছে
— এতো বড় ব্যক্তিত্ব এখন ও হয়ে যাইনি মে আমার রুমে কাউকে আসার জন্য পারমিশন নিতে হবে।
আয়াদের কথাটা শেষ হতেই অর্শি দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেললো। দরজা খুলতেই অর্শি দেখতে পেলো আয়াদ সোফায় বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। অর্শি আয়াদের দিকে একটা রাগি লুক নিয়ে বলতে লাগলো
— এই আপনি সিগারেট খাচ্ছেন কেনো? আর তোর কত বড় সাহস আমার বাবার উপর চিৎকার করে কথা বলিস। তোকে জন্ম দিয়ে তারা পাপ করেছে? কেনো করছিস এসব? কি চাস তুই? আমি তো চলে যাচ্ছি কাল তোদের বাড়ি থেকে সারা জীবনের জন্য। আর আসবো না কখনও তোকে জ্বালাতে। আর কখনও এই মুখ দেখতে পাবি না তুই। ঝগড়া হবে না, আমাকে কারো সাথে কথা বলতে দেখবি না। আমি আর তোকে অপমান করবো না। প্লিজ আমার অনুরোধ মা বাবাকে কষ্ট দিস না আয়াদ। প্লিজ!
অর্শির কথাটা শেষ হতেই আয়াদ সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলো। অর্শি কান্না করছে। আয়াদ সিগারেটটা ফেলে দিয়ে মাথাটা নিচু করে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— কথা দিলাম আর কখনও এই সিগারেট আমার হাতে উঠবে না। আর মা বাবাকে আঘাত করেও কথা বলবো না। কিন্তু আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তোকে। কি দিবি তো?
অর্শি একটু অবাক হয়ে যায় আয়াদের কথায়। কি প্রশ্ন করতে চায় আয়াদ? অর্শি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই আয়াদ অর্শিকে দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। অর্শি একটু অবাক ও ভীত হয়ে আমতো আমতো করতে লাগলো। আয়াদ অর্শির কাছে এসে অর্শিকে অবাক করে দিয়ে অর্শির………………………..
#চলবে……………………..
(