ফুল দিয়ে সজ্জিত রুমে বসে আছে মারু। প্রায় চার ঘন্টা যাবত বসে আছে। এখনও বর আসার খবর নেই। শাশুড়ী মায়ের কড়া নির্দেশ বর না আসা পর্যন্ত শাড়ি গহনা কিচ্ছু খোলা যাবে না। মারু এবার মাথা তুলে চারদিকে তাকিয়ে দেখছে। ভালোই সুন্দর সাজিয়েছে।
ঘড়ির কাটায় তিনটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। বিরক্ত লাগছে মারুর। আস্তে করে বেড থেকে নেমে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় মারু।
“আচ্ছা আমার,বর আসবে তো? উনি এসে কি করবে? আমায় বকবে? চিৎকার চেচামেচি করবে না কি আমার সাথে
মারুর ভাবনায় বেঘাত ঘটে দরজা খোলার শব্দে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে একজন চাঁপ দাঁড়িওয়ালা সুদর্শন পুরুষ এগিয়ে আসছে। লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে মদ খেয়েছে । লোকটা মারুর সামনে গিয়ে ঢুলুঢুলু পায়ে দাঁড়ায়। মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। মারু নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাচ্ছে।
এই মুহুর্তে মারুর কি করা উচিৎ তা মারুর জানা নেই। এখান থেকে সরে যাবে না কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে এটাই ভাবছে মারু।
লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে তার দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।
” আআআআপপ
মারু কথা শেষ করার আগেই লোকটা পরে যায়। মারু ধরতে গিয়ে মারুও লোকটার ওপর পরে যায়। আসলে মারুর যে শক্তি এতে এরকম একটা সুঠাম দেহের মানুষকে ধরে রাখা সম্ভব না।
লোকটা সাদা শার্ট পরেছিলো আর মারুর মুখ পরে লোকটার বুকে তো শার্টে লিপস্টিক লেগে যায়।
মারু উঠে ওনাকে ডাকে
“এই যে শুনছেন ভালো করে শোন
লোকটা তো নাক ডাকা শুরু করে দিছে।
” কি মানুষরে বাবা। পরেই ঘুম। দুই মিনিটও তো হয় নাই। মাতালদের অবস্থা এমনই থাকে। কপাল পোরা হলো আমার।
মারু মনে মনে কথাগুলো বলে সোফায় শুয়ে পরে। প্রচুর ক্লান্ত থাকায় একটুতেই ঘুমিয়ে পরে।
খুব ভোরে ঠুসঠাস শব্দে মারুর ঘুমের বারোটা বাজে। তাকিয়ে দেখে মারুর বর লাগেজ গোছাচ্ছে। মারু সোফায় বসে গালে হাত দিয়ে দিখছে। আসলে উনি করতে চাইছেন কি?
“আমাকে কি বাড়ি পাঠিয়ে দেবে? রাখবে না আর এখানে? ভালোই হয়েছে? ইচ্ছে করছে ধন্যবাদ দিতে।
লোকটা মারুর দিকে একবার তাকিয়ে আবার কাজে মন দেয়। মারু ভাবছে এই হয়ত বলবে যান রেডি হয়ে আসেন। কিন্তু তা বলছে না।
” কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?
লোকটার এমন প্রশ্নে মারু অবাক হয়
“ইন্টার ফাস্ট
” গুড
মারুর সামনে এসে
“মন দিয়ে লেখাপড়া করো। ফিউচার উজ্জ্বল হবে৷। তোমার বোনের থেকে শুনেছিলাম তুমি খুব ভালো স্টুডেন্ট। কালকের কথা ভুলে যাও। আমি ঢাকা ফিরে যাচ্ছি। আমি এখানে থাকলে কেউ তোমাকে বাড়ি যেতে দেবে না। তাই যাচ্ছি। তোমার বোন বলতো তোমার বাবার না,কি ড্রিম তুমি অনেক বড় ব্যাংকার হবে।বাবার স্বপ্ন পূরণ করো। স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পরে আমাকে মিষ্টি খাওয়াবা কিন্তু। আসি টেক কেয়ার
লোকটা যেতে নেয় মারু পেছন ডাকে
” বলছিলাম
“ভুলেও আমার সাথে অধিকার দেখাতে আসবে না। কেনো বিয়ে করলেন? বিয়ে করে কেনো চলে যাচ্ছেন? এমন মেলোড্রামা একদম নয়। আমার মনে হয়েছে তোমার এতে কোনো দোষ নেই তাই তোমাকে এতোখন উপদেশ দিলাম। নাহলে চাপকে গাল লাল করে দিতাম।
লোকটা হনহনিয়ে চলে যায়।
” আজিব তো জাস্ট বলতে চেয়েছিলাম শার্ট চেঞ্জ করে নিতে। এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো আমি ওনাকে ভালোটালো বাশি। ডিজগাস্টিং।
কাল রাতে বাড়ি থেকে আনা একটা সুতি সালোয়ার কামিজ পরে বের হয় মারু। এবাড়ির কিচ্ছু চেনে না জানে না। রুম থেকে বের হয়ে দেখে শাশুড়ী এদিকে আসছে
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি
শাশুড়ী মুচকি হেসে বলে
” ওয়ালাইকুম আসসালামু
“কিচেনটা কোন দিকে বলে দিলে আমি রান্না করতাম।
” না না নতুন বউ তোমাকে রান্না করতে হবে না।
“আমি রান্না করি প্লিজ।
শাশুড়ী মারুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” পান্ত চলে গেছে এতে মন খারাপ করো না। বিকেলে তোমার শশুরমশাই তোমাকে দিয়ে আসবে। বুঝতেই তো পারছো কি রকম সিসুয়েশনে বিয়ে টা হলো।
“ইটস ওকে আন্টি।
” উনি চলে গেছে এতে তো আমি বেঁচে গেছি। এবার ভালোই ভালোই আমি বাড়ি যেতে পারলে বাঁচি।
মারু কিচেনে চলে যায়। আলুর দম আর লুচি রানায়। রান্নাটা মারু বরাবরই ভালো করে।
খাবার টেবিলে শশুর শাশুড়ী ননদ আর দাদিমা এইকয়জন ই মারুর শশুর বাড়ির লোক। খেতে খেতে শশুর বলে
“ওদের বউ ভাতের কি করবো
” স
নেমন্তন্ন দের ফোন করে আসতে মানা,কর। যার বউভাত সেই চলে গেছে। শুধু শুধু লোক হাসনোর কোনো মানে হয় না। দাদীমা বলে।
“মা ঠিক বলেছে। তোমার ছেলের সব কিছুতেই বারাবাড়ি। তুমি এখন গিয়ে মারুকে ঢাকাতে দিয়ে আসো৷ শাশুড়ী বলে
” যদি আবার ওকে বের করে দেয়। শশুর মশায় চিন্তিত হয়ে বলে।
“মুখের কথায় বের করে দেবে না কি? তিশা তুমিও যাও মারুর সাথে। বাবা চলে আসবে তুমি আর মারু থাকবে। শাশুড়ী কিছুটা রেগে বলে
” তাহলে তো খুব ভালো হয়। রাতে আমি আর মারু গল্প করবো। তিশা খুশি হয়ে বলে।
“একদম না রাতে মারু পান্তর রুমে ঘুমবে
” মা
“কোনো কথা নয়। খাওয়া শেষ করে ব্যাগ গোছাও। শাশুড়ীর ধমকে তিশা চুপ হয়ে যায়।
” আন্টি না গেলে হয় না। মারু নিচের দিকে তাকিয়ে মিনতির সুরে বলে।
“নাহহহ না গেলে হয় না। যেতে হবে
পান্ত একজন ডাক্তার। হাসপাতালে আসার পরে সবাই পান্তর দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ মিট মিট করে হাসছে। বেপারটা বিরক্ত লাগছে পান্তর। নিজের কেবিনে গিয়ে বসে।
” আমি কি জোকার যে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আশ্চর্য
“এভাবে আসলে তো সবাই হাসবেই
কোনো মেয়ের কন্ঠ পেয়ে পান্ত দরজার দিকে তাকায়। পান্তর বেষ্টফ্রেন্ড সুমা বলে কথাটা। সুমা মুচকি হেসে পান্তর কাছে আসে
” এবার তুইও হাসসিস
“মানলাম নতুন বিয়ে করেছিস। বউকে ভালোবেসেছিস। তাই বলে এইভাবেই চলে আসলি। একবার তো আয়নায় নিজেকে দেখে নিতে পারতিস
” হয়েছে টা কি বলবি তো
“তোর শার্টে লিপস্টিক লেগে আছে।
সুমা মিটিমিটি হেসে বলে।
পান্ত শার্টের দিকে তাকায়
” ওহহহহ শিট
পান্ত টেবিলে একটা ঘুসি মেরে বলে
“কুল পান্ত। এতো রাগ দেখাচ্ছিস কেনো? হাসপাতালের সবাই জানে দ্যা গ্রেট পান্ত চৌধুরী মাটির মানুষ। তার মধ্যে না কোনো রাগ আছে আর না কোনো তেজ। তো এখন যদি রাগ দেখাস তোর সম্মানের বারোটা বাজবে।
” আমাকে একটা শার্ট কালেক্ট করে দিতে পারবি
“যদি বউয়ের সাথে মিট করিয়ে দিস তো ভেবে দেখবো
” সুমা আমার রাগ বাড়িয়ে দিস না
“ওকে ওকে কুল ডাউন আমি দেখছি
সুমা বেরিয়ে যায়। পান্ত নিজের চুল নিজে টানছে। রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে
মারু অনিচ্ছা সত্ত্বেও লাগেজ গোছাচ্ছে। মারুর ফোন বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনে রাফিন নামটা ভেসে উঠেছে সাথে মারু আর রাফিনের হাসিমাখা একটা পিক। মারু মুচকি হেসে ফোন রিসিভ করে
” মারু আমি কি শুনছি এসব? তুমি বিয়ে করেছো মানে কি? তিন বছরের রিলেশন আমাদের। তুমি অন্য কাউকে কি করে বিয়ে করতে পারো। এন্সার মি
মারু কিছু বলবে তার আগেই শাশুড়ীর কন্ঠ শুনে
“মারু আর কতোখন লাগবে।
” রাফিন পরে কথা বলছি
মারু ফোন কেটে লাগেজ নিয়ে বের হয়। শশুর আর তিশা দাঁড়িয়ে আছে।
“সাবধানে যাবে। পৌঁছে ফোন করবে।
শাশুড়ীর থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বেরিয়ে পরে।
পান্তর বাবা তিশা ওরা খুব এক্সাইটেড কারণ এই প্রথম ওরা পান্তর ফ্লাইটে যাচ্ছে। আগে কখনো আসে নি। আসে নি বললে ভুল হবে পান্ত আনে নি। সুমার কাছ থেকে এড্রেস নিয়ে ওরা বাড়িটার কাছে চলে আসে।
ফ্লাইট তালা দেওয়া। শশুড়মশাই পান্তকে ফোন করে। দুইবার ফোন বাজার পরে পান্ত ফোন রিসিভ করে। শশুরমশাই তাকে বাড়ি আসতে বলে। পান্ত বলেছে দশ মিনিটে আসছে। এখন ওরা পান্তর ফ্লাইটের সামনে গালে হাত দিয়ে বসে আছে পান্ত আসার অপেক্ষায়।
#আমার হৃদয়ে তুমি
#পর্বঃ১
#Tanisha Sultana (Writer)