আমার হৃদয়ে তুমি পর্ব ৭

#আমার হৃদয়ে তুমি
#পর্বঃ৭
#Tanisha Sultana (Writer)

মারুফার শশুর এসেছে পান্ত আর মারুফাকে নিতে। কোনো খাবার নেই। মারু তো রান্না করে নি। শশুরমশাই কে বসিয়ে রেখে মারু রান্না করতে যায়। চটপট রান্না শেরে শশুরকে খেতে দেয়।
“তুমি খাবে না
” পান্ত আসুক তারপর খাবো
“তাহলে আমিও পরে খাবো
” আপনি খান না বাবা
“পান্তকে কল করেছিলাম এখুনি চলে আসবে। লান্সটা এক সাথেই করি
মারু আর কিছু বলে না। শশুরের সাথে টুকটাক গল্প করতে থাকে।

পান্ত আসে এক সাথে লান্স করে ওরা বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে। পান্ত ডাইভ করছে মারু পাশে বসে আছে। শশুর মশাই ঘুমিয়ে পরেছে।
” আমাকে একটা সুযোগ দেবেন পান্ত
অকুতি ভরা কন্ঠে বলে মারু। পান্ত হো হো করে হাসে। হাসি থামিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
“তুমি আমাকে আগের দিন গুলো ফিরিয়ে দিতে পারবে মারু। ছয় বছর আমি ফেমেলির থেকে দুরে থেকেছি। মদ আর সিগারেটে আমার ভেতরটা পুরে গেছে মারু এই পোরা কখন সারবে না। যেদিন আমার সব যন্ত্রনা দুর হয়ে যাবে আমার হ্মত গুলো সেরে যাবে সেদিন তোমায় একটা সুযোগ দেবো।
মারু চুপ হয়ে যায়। পান্ত মনে মনে বলে
” #আমার হৃদয়ে তুমি আছো মারু।তোমাকে হৃদয় থেকে সরানোর স্পর্ধা আমার নেই৷ কিন্ত তোমাকে সুযোগ দিতে পারবো না কারণ তুমি বিষাক্ত সাপ। যখন তখন ছোবল মারতে পারো।
মারু মনে মনে বলে
“আমি জানি আমি হ্মমার যোগ্য না। কিন্তু তবুও আমি চেষ্টা করবো তোমার মনে জায়গা করে নেওয়ার। আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার সব কষ্ট মুছে দেবো

সন্ধার আগেই ওরা বাড়ি পৌঁছে যায়। মারুকে মারুর নানী শাশুড়ী মামি শাশুড়ী আর নিজের শাশুড়ী ওনারা ঝেকে ধরেছে খুশির খবর করে দিবি এটা বলে। মারু খুব অস্বস্তিতে পরেছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। তখন কোথা থেকে পান্ত এসে বলে
” খুব তারাতাড়ি তোমরা খুশির খবর পেয়ে যাবে। এখন আমার বউকে ছাড়ো
পান্ত কোনোরকম সবাই কে বুঝিয়ে মারুকে রুমে নিয়ে যায়। মারু তো মনে মনে খুব খুশি। পান্ত মারুকে রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দেয়

“কি বলেছিলাম আমি?
রক্তচক্ষুে বলে পান্ত। মারু ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।
“আআআআআমমমমি
” সাট আপ
পান্ত মারুর চুলের মুঠি ধরে বলে
“বলেছিলাম না প্রেমিকের সাথে যা কথা বলার কাল সারাদিন বলতে। তারপরও কেনো ও ফোন দিলো বল। মাএ তিনটা দিন চেয়েছিলাম তোর কাছে তাও দিতে পারছিস না।
মারু ব্যাথায় কাঁদছে। পান্ত আরও একটু শক্ত করে ধরে
” আআমার খুব লাগছে
“লাগছে তাই না। আমারও লেগেছিলো।এক বছর ছিলাম হাসপাতালে। আর এখনও লাগে যখন তোর প্রেমেক তোকে ফোন দেয় বা আমার সামনে আসে তখন আমার এখানটাই (বুকের বা পাশ দেখিয়ে) চিনচিন ব্যাথা করে। তোর ইচ্ছে করে না ভালো হতে? করে না ইচ্ছে
পান্ত মারুফাকে ছেড়ে দেয়। মারু বসে পরে।

পান্ত বেলকনিতে গিয়ে সিগারেট ধরায়। একটার পরে একটা সিগারেট শেষ করছে। মারুফা আস্তে করে এসে পান্তর পাশে দাঁড়ায়। তারপর মাথা নিচু করে বলে
” খাবেন না
“আমার খাবারটা রুমে নিয়ে এসো কেউ আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে আমি কাজ করছি
” আচ্ছা
মারু যেতে নেয়
“দাঁড়াও
মারু দাঁড়িয়ে যায়। পান্ত মারুর সামনে যায়। ঘোমটা টেনে দেয়
” এবার যাও
মারু চলে যায়। পান্ত সিগারেট ফেলে দেয়। ইদানীং সিগারেট খেতেও বিরক্ত লাগে পান্তর।

কিছুখন পরে মারু খাবার নিয়ে রুমে আসে। পান্ত কুলি করে এসে খাবারের ওপর থেকে ঢাকনা সরায়। দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুজনের খাবার এনেছে।
“আমার সাথে এক সাথে খেতে চাও
মারু মাথা নিচু করে বলে
” হুম
“কিন্তু আমি চায় না। আমার খাওয়া হয়ে গেলে তুমি খেয়ে নিও
পান্ত খেতে শুরু করে। মারু তাকিয়ে আছে। পান্ত খাওয়া থামিয়ে বলো
” এতে তো আবার বিষ মেশাও নি
মারুর এবার কান্না পায়। ওখান থেকে চলে যায়। পান্ত খেতে থাকে। পান্ত আসলে মারুকে ওখান থেকে সরানোর জন্যই এই কথা বলেছে।

বেলকনিতে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মারু। অনেকখন হলো মারু এখানে এসেছে। পান্তর কোনো খবর নেই। হয়ত খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। হঠাৎ মারুর ঘারে গরম নিশ্বাস পরে। মারু বুঝতে পারে পান্ত দাঁড়িয়ে আছে৷ তাও মারুর খুব কাছে৷ তবুও মারু পেছন ঘোরে না। মারু ভাবে হয়ত পান্ত বলবে
“মারু খেয়ে নাও
কিন্তু মারুকে ভুল প্রমাণ করে পান্ত মারুকে কোলে তুলে নেয়। পান্তর চোখের দিকে তাকিয়ে মারু বুঝতে পারে পান্ত হুঁশে নেই। তবুও মারু বাধা দেয় না। পান্ত হয়ত ভুল করেই মারুকে ভালোবাসছে কিন্তু মারুর কাছে এই ভালোবাসায় যথেষ্ট। আর কি চায়?

সকালে পান্ত চোখ খুলে দেখে মারু চুল মুছছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আর মুচকি হাসছে। পান্ত সিগারেট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। তিশা মারুকে ডাকতে আসে।
” ভাবি আজ আমার গায়ে হলুদ আর তুমি এখনো রুমে বসে আছো। চলো পার্লারে যাবো
“তিশা বলছিলাম কি আমি জাবো না
” জাবো না মানে কি? যেতে হবে। তোমার শাড়ি গহনা সব আমি আর মা মিলে কিনেছি। চলো
“তোমার ভাইয়াকে বলো
” ভাইয়া ভাইয়া
পান্ত সিগারেট ফেলে আসে
“কি হয়েছে
” ভাবি যেতে চাইছে না তুমি যেতে বলো
“আমি কি বলবো
” আমি জানি তুমি বললে যাবে।
“ইচ্ছে হলে যাক
তিশা টেনেটুনে মারুকে নিয়ে যায়।

পার্লার থেকে সেজে বের হয়ে দেখে রাফিন দাঁড়িয়ে আছে। মারু আর তিশার সামনে যায় রাফিন
” মারু তোমার সাথে কথা আছে।
“ভাবি কে ও
পান্ত ওদের নিতে এসেছিলো। দেখে মারু আর তিশার সামনে রাফিন দাঁড়িয়ে আছে।
” তিশা গাড়িতে ওঠ
“ভাবি চলো তো
তিশা মারুকে নিয়ে গাড়িতে বসে। মারুর তো ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। না জানি পান্ত আজ কি করবে। পান্ত ডাইভ করছে। তিশা আর মারু পেছনে বসেছে। তিশা এটা সেটা নানা কথা বলছে আর মারু পান্তর দিকে তাকিয়ে আছে।

তিশা আর মারুকে নামিয়ে পান্ত কোথাও চলে যায়। পুরো অনুষ্ঠানে মারু পান্তকে খুঁজে কিন্তু দেখানেই। অনুষ্ঠান শেষ হয় রাত এগারোটায় বারোটার মধ্যে সবাই শুয়ে পরে। মারু রুমের মধ্যে পায়চারি করছে।
” কোথায় গেলো মানুষটা? আসছে না কেনো? আল্লাহ আমার পান্তকে আমার কাছে এনে দাও প্লিজ
দরজা খোলার শব্দে মারু দৌড়ে দরজার কাছে যায়। আজ পান্ত মদ খাই নি।
“আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?
পান্ত কিছু না বলে লাইট বন্ধ করে পান্তর পাশে শুয়ে পরে।
” আপনি আমাকে মারুন বকুন তবুও প্লিজ আমার সাথে কথা বলুন
“মারু মনে আছে তুমি যখন আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলে আমিও তোমায় বলেছিলাম তুমি আমায় মারো বকো তবুও প্লিজ আমার সাথে কথা বলো। তুমি কি বলেছিলে তুমি কুকুরদের সাথে কথা বলো না। আমি তোমায় কুকুরের সাথে তুলনা করবো না তবে এটুকু বলবো একটু ফিল করো তখনকার কষ্টটা।

পান্ত পাশ ফিরে শুয়। মারু পান্তর গায়ে হাত দিতে গিয়েও দেয় না। মারুর কোনো অধিকার নেই। পান্তর বিয়ে করা বউ হয়েও একটা পর মানুষের মতো হয়ে গেছে। এটাই জীবন। ” তুমি যাকে যতটা দেবে তার কাছ থেকে ঠিক ততোটাই পাবে” সেটা ভালোবাসাই হোক বা অবহেলা।

“আমাকে কি একটাবার হ্মমা করা যায় না পান্ত। কথা দিচ্ছি তোমার বিশ্বাস ভাঙবো না। তুমি যা বলবে তাই শুনবো৷ আমি তোমার সাথে থাকতে চায়। তোমার ভালো হওয়ার কারণ হতে চায়। আমি অন্যায় করেছি। তুমি আমায় শাস্তি দাও মারো কাটো তবুও তোমার সাথে থাকতে চায়। তোমার ভালোবাসার মারু হতে চায়

পান্ত খিলখিল করে হাসে। তারপর মারুর দিকে ঘুরে বলে
” ছলনাময়ীরা কখনো ভালো হতে পারে না। তারা কারো ভালো হওয়ার কারণ হতে পারে না। তারা খারাপ তাদের সংস্পর্শে যে আসবে সেও খারাপ হয়ে যাবে। যেমন আমি হয়েছি। আর আমি কখনো ভালো হতে চায় ও। পান্ত খারাপ খারাপ ই থাকবে। আর পান্ত কোনোদিনও মারুফাকে হ্মমা করবে না। তুমি যদি মরেও যাও তোমার কবরের ওপর লিখে দেবো বেইমানের কবর। আরে বেইমানিটা তোমার রক্তে মিশে গেছে তুমি কি করে কথা দাও। আবার ঠকাতে চাও নাকি মরতে মরতে বেঁচে গেছি বলে আবার মারতে চাও।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here