#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১০
মাঝরাতে আশ্বিন বাসায় ফিরে আসতেই অধরা দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেয়। আশ্বিন ম্লান চোখে একবার অধরার দিকে তাকিয়ে,
— ” এখনো জেগে আছো তুমি? দাদি ঘুমিয়েছে? ”
— অধরা দরজা বন্ধ করে, ” দাদি বুড়ি অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আপনার জন্য অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করেছিলো। ”
— একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ” ওহ আচ্ছা। ”
কথাটা বলেই আশ্বিন নিজের রুমে চলে আসে। অধরাও আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে আসে।
🌻🌻
আশ্বিন ফ্রেশ হয়ে রুমে প্রবেশ করতেই দেখে অধরা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশ্বিন শান্ত হয়ে সোফায় বসে,
— ” অধরা, খাবার গুলো নিয়ে যাও। আমি এখন খাবো না। ”
অধরা এসে আশ্বিনের পাশে বসে খাবার মাখিয়ে আশ্বিনের মুখের সামনে ধরে চোখ দিয়ে ইশারা করে খেতে বলে।
আশ্বিন অধরার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে খেতে শুরু করে।
— ” আশ্বিন, আপনি টেনশন করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। ”
— ” হুম।
আসলে, খুব যত্ন করে ফ্যাক্টরী গুলোকে এতোটা দূর এনেছিলাম। আর হঠাত করেই এমন…।
তাও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে কেউ আহত হননি। জানি ক্ষতি একটু হয়েছে। কিন্তু ইনশাআল্লাহ আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আর, আশ্বিন চৌধুরী এতো অল্পতেই ভেঙে পড়ার মতো ছেলে না। ”
— অধরা মুচকি হেসে, ” হুমম।
আচ্ছা, আগুন কিভাবে লেগেছে? কিছু কি জানতে পেরেছেন? ”
— ” জানি না। হয়তো শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। এখনো সঠিক ভাবে কিছুই জানতে পারিনি, তবে জেনে যাবো। ”
— ” ওহ আচ্ছা। ”
অধরা কথাটা বলে মনে মনে কিছু একটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
আশ্বিন খাওয়া শেষ করে অধরার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। অধরা মুচকি হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আশ্বিন চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসি দিয়ে অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর মনে মনে…
🎶 বলো আমায় কখনো ছেড়ে যাবে না
এই হাত দুটি আলাদা করে দিবে না।
না না, আমি কোন কিছু চাই না
তুমি হলে আমার আর কিছু লাগে না।
আমি তোমায় ছাড়া আর কিছু বুঝি না
আমি তোমায় ছাড়া ভাবতে পারিনা।
আমি তোমার ছাড়া আর কিছু বুঝি না,
আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারিনা। 🎶
অধরা মুচকি হেসে আশ্বিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মনে মনে…
— ” আশ্বিন ভয় নেই। কাউকেই আমি আপনার ক্ষতি করতে দিবো না।
আমি আপনার সকল বিপদের ঢাল। আমিও দেখে নিবো শাহিন হাসাদ কিভাবে আপনার ক্ষতি করে। ”
🌻সকালে🌻
আশ্বিন অফিসে চলে যাওয়ার পর অধরা লুকিয়ে এসে আশ্বিনের পুরোনো সকল ফাইলগুলো চেক করতে শুরু করে।
প্রতিটি ফাইল চেক করে কোথাও না কোথাও একটা গন্ডগোল লাগছে তার কাছে।
হঠাত জনির কল আসায়। অধরা কল রিসিভ করে…
— ” হ্যা। জনি ভাইয়া…। ”
— ” ছোটমনি, তুমি যে সব তথ্য জানতে বলেছিলে সেসব তথ্য সম্পূর্ণ না জানতে পারলেও অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। ”
— ” গুড। তাহলে কিছুক্ষণ পর কলেজের সামনের ক্যাফেতে দেখা করুন ভাইয়া। ”
— ” ঠিক আছে ছোট মনি। ”
অধরা কথাটা বলেই জলদি রেডি হয়ে দাদির কাছে বিদায় নিয়ে চলে আসে।
🌻🌻
অধরা আর জনি মুখোমুখি বসে আছে। জনি কিছু ফাইল অধরার সামনে রেখে…
— ” দেখুন ছোট মনি, শাহিন হাসাদের বিজনেসের পুরনো কিছু ফাইল।
এখানে স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে, শাহিন হাসাদ আর আকাশ চৌধুরী মানে আশ্বিনের বাবা। দুজন নতুন বিজনেস ম্যান হিসেবে নিজেদের বিভিন্ন ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু আকাশ চৌধুরী কোন এক ভাবে একটু এগিয়ে যেতেই দেখো, হঠাত করেই আকাশ চৌধুরীর ফ্যাক্টরীতে আগুন। যেমনটা এখন আশ্বিনের সাথে হয়েছে।
এমন অনেক ভাবে শাহিন গোপনে চৌধুরী বিজনেসে নিজের প্রভাব ফেলতে চেয়েছে। ”
অধরা একে একে সকল ফাইল চেক করে। কিছু একটা ভেবে….
— ” আচ্ছা ভাইয়া, শাহিন আর আকাশ চৌধুরীর মাঝে কি কোন পুরনো শত্রুতা ছিলো? ”
— জনি কিছুক্ষণ ভেবে, ” এমন কিছু তো আমি শুনতে পারিনি। ”
— অধরা কিছু একটা ভেবে, ” আমার মনে হয় কোনো এক অজানা কারণ ঠিকই আছে।
দেখুন, শাহিন কিভাবে একে একে আমাদের বিজনেসের ঝামেলা তৈরি করেছে। আর নিজে বিজনেসে টপ হয়েছে।
যদি বিষয়টা শুধু বিজনেসের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতো থাকলে কেনো উনি অনুরিমা মামুনিকে বিয়ে করেছেন? এর কি কারন থাকতে পারে? ”
— জনি কিছু একটা ভেবে, ” হয়তো আকাশ চৌধুরীকে অপমান করতে চেয়েছিলো। তাই হয়তো…। ”
— ” তাহলে নতুন করে আশ্বিনের সাথে কিসের শত্রুতা?
ভাইয়া, আমি শাহিন হাসাদকে নিয়ে আরো স্টং ইনফরমেশন চাই। শাহিন হাসাদ কি করে, কার সাথে মিট করে সব ইনফরমেশন আমার চাই। ”
— ” ঠিক আছে ছোট মনি। ”
— ” হুম। ”
🌻কলেজ শেষে🌻
কলেজ শেষে অধরা আর তিশা একসাথে বের হতেই হঠাত সাহিল তাদের সামনে আসে। অধরা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে…
— ” আপনি এখানে? ”
— সাহিল একটা বাঁকা হাসি দিয়ে, ” আসলে সামনে দিয়েই যাচ্ছিলাম। তোমাকে দেখে ভাবলাম খোঁজ খবর নিয়ে যাই।
কাল তো নিউজে দেখলাম আশ্বিনের ফ্যাক্টরীতে আগুন, দেখে খুব খারাপ লাগলো। আফটার অল ভাই হয় আমার। ”
— অধরা মুচকি হেসে, ” চিন্তা করবেন না ভাইয়া। আশ্বিন অনেক স্টং, এতো সহজে ভেঙে পড়ার মতো ছেলে আশ্বিন না।
আর তার থেকেও বড় কথা হলো, আশ্বিনের সব পরিস্থিতিতে তার সাপোর্ট তো আমি। আমি আশ্বিনকে কোন ভাবেই ভেঙে পড়তে দিবো না। ”
— ” হুম গুড। বাসায় যাচ্ছো নাকি? ”
— একটু বিরক্ত হয়ে, ” জি। ”
— ” গ্রেট। চলো তোমাকে ড্রপ করে দেই। ”
— অধরা মুচকি হেসে, ” ধন্যবাদ ভাইয়া। কিন্তু আশ্বিন আমার জন্য তার গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। ওই যে।
আমি তাহলে যাই, শাহিন আঙ্কেল আর মামুনিকে আমার সালাম দিবেন। আল্লাহ হাফেজ। ”
কথাটা বলেই অধরা সেখান থেকে দ্রুত চলে আসে। এদিকে সাহিল অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে…
— ” তোমাকে ইনপ্রেইস করা যতোটা সহজ ভেবেছিলাম, আসলে এতোটা সহজও না। আবার কঠিনও না। কারণ সাহিল যেটা চায় সে তা আদায় করেই ছাড়বে। ”
কথাটা বলেই সাহিল বাকা হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।
🌻🌻
অনুরিমা রুমে বসে বসে আশ্বিনের কথা ভেবে যাচ্ছে। ছেলের এতো বড় এক বিপদে মা হিসেবে সে তার পাশে নেই।
কথাগুলো মনে হতেই চোখ ভিজে যাচ্ছে তার।
— ” আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা। আমি কখনো তোমার মা হতে পারিনি। জানি না এটাকে আমার কি বলা উচিত?
আমার খারাপ ভাগ্য নাকি আমার অযোগ্যতা। তবে, আমার ভুলেই তোমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
আমি বারবার চেষ্টা করেও কিছুই ঠিক করতে পারছি না।
আল্লাহ আমাকে সাহায্য করুন। ”
কথাগুলো ভেবে চোখের পানি মুছে ফেলে অনুরিমা।
🌻🌻
অধরা দাদির পাশে বসে একমনে সকালের কথাগুলো ভাবছে। কোনভাবেই সে বুঝতে পারছে না শাহিন হাসাদের এই পরিবারের সাথে কিসের শত্রুতা। হঠাত দাদির কথায় তার হুশ ফিরে…
— ” আশ্বিন তার উপর দিয়ে কিছুদিন যাবত অনেক ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় তোর আশ্বিনকে একটু সময় দেওয়া উচিত। কাল তো শুক্রবারহ তোরা কোথাও ঘুরতে যা।
আমি নাহয় আজ আশ্বিনকে বলে রাখবো। ”
অধরা কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দেয়।
—চলবে❤