#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২৫
আশ্বিন অধরাকে নিয়ে একটা রিসোর্টে আসে। অধরার চোখ বন্ধ থাকায় সে চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে। আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাঁটতে শুরু করে।
— ” আশ্বিন, কোথায় যাচ্ছি আমরা? ”
— আশ্বিন সামনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে, ” এখনি দেখতে পারবে। ”
আশ্বিন কথাটা বলেই অধরার চোখ থেকে রুমাল খুলে ফেলে। অধরা চোখ পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে হা হয়ে যায়।
পুরো রিসোর্ট সুন্দর করে ডেকরেসন করা হয়েছে একদম অধরার মনের মতো করে। সে অবাক হয়ে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
— অধরা অবাক হয়ে, ” এসব….!
আপনি কিভাবে জানলেন, এসব আমার ড্রিম ছিল। ”
আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে,
— ” তুমি কি ভেবেছিলে? শুধুমাত্র তুমিই জনিকে দিয়ে আমার সম্পর্কে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করেছো? আমি কিছু করিনি..? ”
অধরা কথাটা শুনে অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে আশ্বিনের দিকে ফিরে তাকায়। আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়।
—————-
আশ্বিন অধরার হাত ধরে বসে আছে। আশেপাশে কেউ নেই। নিরিবিলি পরিবেশে রাতের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে তারা। অধরা মুহূর্তটা খুব বেশি উপভোগ করছে।
— ” আচ্ছা, হঠাত করেই আমরা এখানে ঘুরতে আসলাম কেনো? ”
— আশ্বিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে, ” কেনো মানে?
এই প্রথম ইতালিতে এসেছি নিজের বউকে নিয়ে। তো ঘুরবো না? ”
— ” কিন্তু আশ্বিন, আমরা তো এখানে নানাভাইকে…। ”
— আশ্বিন অধরাকে থামিয়ে দিয়ে, ” উফ অধরা। এসব কথা এখন বাদ। কিছুটা সময় এসব চিন্তা থেকে দূরে থাকতে চাই।
আর নানাভাইকে তো আমরা খুঁজে পেয়েছি। তাই এখন এসব কথা বলবে না, বুঝেছো? ”
— অধরা ড্যাবড্যাব করে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” হুম ঠিক আছে। ”
অধরাকে এভাবে তাকাতে দেখে আশ্বিন ফিক করে হেসে ওঠে। তারপর দুহাত দিয়ে অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, চোখ বন্ধ করে অধরার গালে নাক ঘষে ঘোর লাগা কণ্ঠে,
— ” অধরা, চলো কোন একদিন দুজন মিলে দূর কোথাও ঘুরে আসি।
তুমি সেদিন লাল শাড়ি, লাল চুরি আর কপালে ছোট্ট লাল টিপ পড়ে আমার কাছে আসবে।
আমি তখন মুচকি হেসে তোমার জন্য লুকিয়ে রাখা সেই বেলী ফুলের গাজরা তোমার খোঁপায় বেঁধে দিবো।
তারপর তোমার হাত ধরে একসাথে হেঁটে যাবো।
আমাদের গন্তব্য হবে এমন, যেখানে লোকসংখ্যা হবে ক্ষীণ।
যেখানে থাকবে না কেউ আমাদের কষ্ট দিতে।
থাকবে না কোন সমালোচনার ঢেউ, কেউ আর বলবে না আমায় একা। কারণ তুমি থাকবে আমার সাথে।
আমরা দুজন মিলে সাজাবো আমাদের গল্প। আশ্বিন আর অধরার গল্প। ”
আশ্বিন কথাগুলো বলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখে অধরাও চোখ বন্ধ করে তার কথাগুলো শুনছে। সে মুচকি হেসে অধরার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে দূরে সরে আসে। পরক্ষণে অধরা চোখ মেলে একনজর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।
— আশ্বিন আশেপাশে তাকিয়ে, ” জায়গাটা খুব সুন্দর। তাই না? ”
— অধরা হালকা হেসে, ” হুম খুব সুন্দর।
আপনাকে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে। ”
— আশ্বিন আড়চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে, ” খুশি তো হবোই। আমার কিউট মায়াবী পিচ্চি বউটাকে সাথে নিয়ে এতো সুন্দর একটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছি। সেই সাথে রোমান্টিক একটা ভাব। ”
অধরা আশ্বিনের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আবার অন্যদিকে ফিরে একটা লাজুক হাসি দেয়। আশ্বিনের বলা কথায় ইতোমধ্যে তার গালে রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে।
— আশ্বিন অধরার কান্ড দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে, ” চলো। ”
— অধরা অবাক হয়ে, ” কোথায়? ”
অধরার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে আশ্বিন অধরার হাত ধরে একটা ছাউনিতে নিয়ে আসে। ছাউনিটা পুরো ক্যান্ডেল আর ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো আর মাঝখানে একটা টেবিল।
অধরা অবাক হয়ে সব দেখছে। আশ্বিন অধরাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে একটা প্লেট এনে,
— ” তোমার ফেভারিট নুডলস। আমি নিজে রান্না করছি, যদিও ভালো রান্না পারি না। তবুও আশা করি এতোটাও বাজে হবে না। ”
আশ্বিনের কথায় অধরা শক খেয়ে বোকার মত তার দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে নুডলস মুখে নিয়ে,
— ” নুডলসটা খুব মজা হয়েছে আশ্বিন। আর এই ডেকরেসন জাস্ট ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আপনাকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ। ”
অধরার কথা শুনে আশ্বিন মুচকি হাসি দেয়। অধরাও মুচকি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকায়।
🌻দুদিন পর🌻
শাহিন তার লোকদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝামেলা করছে তখন সাহিল রুমে এসে,
— ” কি হয়েছে ড্যাড? এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? ”
— শাহিন চেয়ারে বসে, ” সবগুলো ডাফরকে রেখেছি আমার কাছে। এতোদিন হয়ে গেলো আশ্বিন ইতালিতে আছে। অথচ তার খবর আমি সেদিন জানতে পারলাম। আর এখন তারা কি করছে, কার সাথে মিটিং করছে কোন তথ্যই আমি জানতে পারছি না। ”
— ” ড্যাড, তোমার কি মনে হয় আশ্বিন সেখানে কেনো যেতে পারে? ”
— শাহিন শান্ত হয়ে বসে, ” জানি না আমি। নিশ্চয়ই তারা গোপন কোন কান্ড করছে। কিন্তু আমাকে তো সবটা জানতেই হবে। ”
— ” তুমি চিন্তা করো না ড্যাড। আমি দেখছি বিষয়টা। ”
সাহিল কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শাহিন মাথায় হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে।
🌻🌻
সকাল থেকেই অধরা, দাদি আর আশ্বিন ফিরে যাওয়ার জন্য গোছগাছ করছে। অধরা দাদীর সাথে গল্প করছে। আর আশ্বিন নানাভাইকে নিয়ে বাইরে এসে।
— ” নানাভাই, তোমাকে আর সেই গ্রামে ফিরে যেতে হবে না। এখানে আমি একটা বাসা নিয়েছি, তুমি সেখানেই থাকবে।
আমার গার্ডরা চব্বিশ ঘণ্টাই তোমাকে দেখে রাখবে, ভয় নেই।
একটা নম্বর দিচ্ছি তোমাকে, এই নম্বরেই আমাকে কল দিবে। আর তোমার কোন প্রয়োজন হলে আমাকে অবশ্যই বলবে। অহেতু বাহিরে যাবে না। বুঝতে পেরেছো? ”
— ” হুমমম বুঝতে পেরেছি। একদমে এতো কথা বলে ফেলেছে। আমাকে নিয়ে এতো ভাবিস না। আমি ঠিক থাকবো।
আমি দুদিনে তোকে যা যা বললাম, সেই অনুযায়ী কাজ করে যাবি। আর দরকার হলেই আমাকে কল দিবি। ”
— ” ঠিক আছে। নিজের খেয়াল রেখো। ”
আশ্বিন কথাটা বলে নানাভাইকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিয়ে অধরা আর দাদিকে নিয়ে চলে আসে।
🌻🌻
আশ্বিন অফিসে আসতেই দেখে অর্ণব বসে আছে।
— অর্ণব আশ্বিনকে দেখে মুচকি হেসে, ” কি খবর আশ্বিন? এতোদিন পর তাহলে ফিরলে। তো বল, কি খবর? নানাভাইকে খুঁজে পেয়েছিস? ”
আশ্বিন চেয়ারে বসে মুচকি হেসে অর্ণবকে সবকিছু খুলে বলে। অর্ণব সবটা শোনার পর,
— ” এখন নানাভাই তোকে কি করতে বলেছেন? ”
— ” আমাকে শাহিনের বিজনেসের কিছু দুর্বলতা দেখিয়েছে। বলেছে এভাবে কাজ করলে আমি সহজেই শাহিনকে টেক অভার করতে পারবো। ”
— ” তাহলে তো খুবই ভালো হয়েছে। নানাভাই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, উনার উপদেশ মতো চললে ইনশাল্লাহ আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো। ”
— ” হুম ইনশাল্লাহ। আর একটা খবর আছে। ইতালিতে বিজনেস ডিলটাও আমরা পেয়ে গিয়েছি। ”
— ” গ্রেইট। যাক ইতালি যাওয়াটা তাহলে স্বার্থক হয়েছে।
ওহ, আমি তো তোকে বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম। মিস্টার জামাল শেখের ছোট মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে সকলকে কাল রাতে ডিনারে ইনভাইট করেছে। তোর কার্ডটাও আমার কাছেই দিয়েছে।
আশ্বিন এটাই সুযোগ জামাল শেখের সাথে বিজনেস পার্টনার করা। এটা কিন্তু আমাদের প্লাস পয়েন্ট হবে। ”
— ” তুই ঠিক বলেছিস অর্ণব। এখন ছোট ছোট সুযোগও আমাদের কাজে লাগবে।
বাই দ্য ওয়ে, তোকে অনেক ধন্যবাদ। এভাবে আমার হেল্প করার জন্য। ”
অর্ণব আশ্বিনের কথা শুনে মুচকি হেসে আশ্বিনের কাধে হাত রাখে। আশ্বিন মুচকি হেসে গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করে।#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২৬
🌻পরদিন🌻
শাহিন রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো তখন সাহিল রুমে এসে,
— ” ড্যাড, শুনেছো তুমি? আশ্বিনরা কাল দেশে ফিরে এসেছে। ”
— শাহিন ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে, ” কখন এসেছে? আর তাদের সাথে কি আর কেউ ছিল? ”
— ” কাল সকালেই ফিরে এসেছে। সাথে তো অধরা, তার দাদি ছাড়া আর কেউ ছিলো না।
আরো শুনেছি, তারা নাকি আজ রাতে মিস্টার জামালের মেয়ের বার্থডে ফাংশনেও আসবে। ”
— শাহিন তাচ্ছিল্য করে, ” হুহহহ। বেশ আনন্দেই আছে মনে হচ্ছে।
ভালো। তাদের খুশি বেশি দিন স্থায়ী থাকতে দিবো না। কিছু একটা তো করাই উচিত। ”
— সাহিল কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” কি করবে তুমি? ”
— ” দেখা যাক, কি করতে পারি। ”
কথাটা বলেই একটা বাঁকা হাসি দেয় শাহিন। সাহিল একটু দূরে দাঁড়িয়ে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
🌻🌻
অধরা অনেকক্ষণ ধরে রেডি হয়ে বসে আছে অথচ আশ্বিনের অফিস থেকে ফিরে আসার কোন নামই নেই।
অধরা রাগে গজগজ করতে করতে দাদির রুমে এসে ধপ করে দাদির পাশে বসে,
— ” উফ অসহ্য! সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি।
বলি কি, আসতে যখন এতো দেরি হবে তাহলে আমাকে বারবার ফোন করে রেডি হয়ে থাকতে বললো কেনো? আজব পাবলিক! ”
— দাদি মুচকি হেসে, ” আশ্বিন হয়তো ভেবেছিলো তোর রেডি হতে অনেক টাইম লাগবে। তাই আগে থেকেই বলে রেখেছিলো। ”
দাদির কথা শুনে অধরা গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আশ্বিনের প্রতি অনেক বেশি রাগ হচ্ছে তার।
——————-
কিছুক্ষণ পর আশ্বিন এসে অধরাকে নিয়ে ফাংশনের জন্য রওনা দেয়। গাড়িতে উঠে অধরা আশ্বিনের থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। আশ্বিন কয়েকবার আড়চোখে তাকিয়ে বিষয়টা লক্ষ্য করলেও, কিছু বলেনি সে।
ফাংশনে প্রবেশ করতেই মিস্টার এবং মিসেস জামাল তাদের স্বাগত জানাতে আসে। জামাল আশ্বিনকে জড়িয়ে ধরে,
— ” আরে আশ্বিন চৌধুরী। আপনি এসেছেন, আমরা খুব খুশি হয়েছি। ”
আশ্বিন মুচকি হেসে উনার সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে চলে যায়। আর অধরা মিসেস জামালের সাথে উনার মেয়ের কাছে চলে আসে।
আশ্বিন জামালের সাথে কথা বলছিলো তখন অর্ণব তার পাশ এসে দাঁড়ালো। আশ্বিন অর্ণবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
— অর্ণব আশ্বিনের কাধে হাত রেখে, ” কিরে, আসতে এতো দেরি হলো কেনো? ”
— আশ্বিন রহস্যজনক হাসি দিয়ে, ” একটা ডিল কনফার্ম করে এসেছি। তোকে পরে সব খুলে বলবো। ”
— ” হুম, ঠিক আছে।
বাই দ্য ওয়ে, আমার ছোট্ট বোনটা কোথায়? ”
আশ্বিন ইশারা দিয়ে অধরাকে দেখিয়ে দিতেই অর্ণব মুচকি হেসে সেখানে চলে যায়। আশ্বিন সেদিকে একনজর তাকিয়ে চলে আসতে নিতেই দেখে শাহিন তার দিকে এগিয়ে আসছে।
— শাহিন বাঁকা হাসি দিয়ে, ” কি খবর আশ্বিন? দিনকাল কেমন যাচ্ছে? ”
— আশ্বিন নিজের রাগকে শান্ত রেখে, ” হুম, আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। ”
— ” হুমম। শুনেছি কিছুদিন আগে অধরাকে নিয়ে ইতালি ঘুরতে গিয়েছিলে। অবশ্য নতুন বিয়ে, এখনি তো ঘুরাঘুরি করবে। তাই নয় কি? ”
— আশ্বিন মুচকি হেসে, ” হ্যা সেটাই।
বাই দ্য ওয়ে, মনে হচ্ছে আমার সম্পর্কে অনেক খোঁজ খবর রাখা হয়েছে। ”
— শাহিন হাসতে হাসতে, ” কথায় আছে না, খবর বাতাসে উড়ে। শুনেছি কোন এক ভাবে।
আর, তোমাকে এতোদিন ধরে কোন মিটিংয়ে উপস্থিত না দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম। ”
— আশ্বিন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে, ” ঠিক বলেছেন।
কোন কথাই বেশিদিন গোপন থাকে না। সত্য যতো দেরিতেই হোক, একদিন না একদিন প্রকাশ পেয়েই যায়। ”
আশ্বিন কথাটা বলে মুচকি হাসি দেয়। পক্ষান্তরে শাহিন কথাটা শুনে চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে থেকে পরমুহূর্তে আবার মুচকি হাসি দেয়।
— আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” শুনেছি এ.আর কম্পানির সাথে আপনার বিজনেস ডিল বাতিল হয়ে গিয়েছে…।
হঠাত কি এমন হলো যে ডিল বাতিল করতে হলো? ”
— শাহিন একটা ভাব নিয়ে, ” আমি ইচ্ছে করেই ডিলটা বাদ দিয়েছি।
জানোই তো, আমার কাছে প্রতিনিয়ত নতুন সব বিজনেস ডিল আসে। আমি তাদের একজনের কাছে ভালো অফার পেয়েছি তাই এ.আর কম্পানির সাথে ডিল বাদ দিয়েছি। ”
— ” ওহ আচ্ছা। ”
— শাহিন বাঁকা চোখে তাকিয়ে, ” কিন্তু তুমি এই কথা কিভাবে জানলে? এটা তো তোমার জানার কথা না। ”
— আশ্বিন মুচকি হেসে, ” জেনেছি।
কারণ আজ বিকেলেই এ.আর কম্পানি আমার সাথে তাদের বিজনেস অফার নিয়ে এসেছিলো। তাদের কাছেই শুনেছি, আপনার জন্য নাকি কম্পানির অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তাই তারা ডিল বাতিল করে আমাকে অফার দিয়েছেন।
যাই হোক, একদিনে দুটো গুড নিউজ। প্রথমত মিস্টার জামালের সাথে আজ থেকে নতুন প্রোজেক্ট শুরু করেছি আর এ.আর কম্পানিও এসেছেন তাদের সাথে বিজনেস করতে। ”
— শাহিন কিছুক্ষণ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে, ” গুড। তোমাকে অনেক অভিনন্দন। ”
— ” ধন্যবাদ। ”
কথাটা বলে আশ্বিন মুচকি হেসে সেখানে থেকে চলে আসে। শাহিন হাত শক্ত করে ধরে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
আশ্বিন অধরাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার কাছে এসে,
— ” কি হয়েছে? এভাবে মুখ ফুলিয়ে রেখেছো কেনো? ”
— অধরা বাঁকা চোখে তাকিয়ে, ” কারণ, আমি আপনার উপর রেগে আছি। ”
আশ্বিন অধরার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে অধরাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এসে অধরাকে জড়িয়ে ধরে।
আচমকা কেউ এমন করায় অধরা চমকে উঠে নিচে তাকিয়ে দেখে একটা ছোট্ট বাবু তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছে। অধরাও মুচকি হেসে বাবুকে কোলে তুলে নেয়।
আশ্বিন অধরার কোলে কিউট একটা পিচ্চি দেখে মুচকি হেসে আলতো করে বাবুর গালে হাত বুলিয়ে দেয়।
এদিকে,
দূর থেকে অনুরিমা অধরা আর আশ্বিনের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে।
কি সুন্দর লাগছে তাদের দুজনকে একসাথে।
ভাগ্য তাকেও একটা সুযোগ দিয়েছিলো অথচ সে নিজ ভুলে তা হারিয়েছে।
কথাটা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনুরিমা।
অধরা বাবুকে কোলে নিয়ে তার সাথে কথা বলছে আর আশ্বিন মুচকি হেসে তাদের কার্যকলাপ দেখছে। হঠাত বাচ্চাটার মা তাদের কাছে এসে মুচকি হেসে,
— ” আমি দুঃখিত। মেয়েটা অনেক দুষ্টু হয়ে গিয়েছে, হুট করেই দৌড়ে চলে যায়। অনেক বিরক্ত করেছে তাই না? ”
— অধরা বাবুটার কপালে চুমু খেয়ে, ” আরে না না। অনেক লক্ষী একটা মেয়ে। আমার তো তার সঙ্গে গল্প করতে ভালোই লাগছিলো। ”
— বাবুর মা মুচকি হেসে, ” আপনার স্বামী? ”
অধরা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়।
— ” মাশাল্লাহ, আপনাদের দুজনকে কিন্তু একসাথে খুব মানিয়েছে।
ইনশাল্লাহ খুব শীঘ্রই আপনাদের কোল জুড়েও যেনো একটা ছোট্ট পরী আসে। অনেক দোয়া রইল। ”
কথাটা বলে তিনি মুচকি হেসে বাবুকে নিয়ে চলে যায়।
অধরা এতোক্ষণ চুপচাপ উনার কথাগুলো শুনছিলো। তিনি চলে যেতেই একবার আড়চোখে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আশ্বিন ধীরে ধীরে অধরার কানের কাছে মুখ এনে,
— ” উনি কিন্তু ঠিকই বলেছেন। এমন একটা ছোট্ট পরী আমাদের কাছে থাকলে কিন্তু মন্দ হয় না। ”
আশ্বিনের কথা শুনে মুহূর্তেই অধরার গাল রক্তিম বর্ণ ধারণ করে।
আশ্বিন অধরার অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে ওঠে তা দেখে অধরা আশ্বিনকে হাতের দিয়ে আলতো করে খোঁচা দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
আর আশ্বিন অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।
🌻🌻
শাহিন রেগে নিজের রুমে প্রবেশ করে পায়চারি করতে থাকে। সাহিল তার রুমের পাশ কেটে যাওয়ার সময় শাহিনকে এভাবে দেখে রুমে ঢুকে,
— ” কি হয়েছে ড্যাড? ”
— ” আশ্বিন নিজেকে অনেক চালাক মনে করছে। খুব সুন্দর ভাবে আমার বিজনেসের ডাউন করানোর চেষ্টা করছে। ”
— ” মানে? ঠিক বুঝলাম না। আবার কি করেছে সে? ”
— ” আমার বিজনেস ডিলারের সাথে সে ডিল করছে। আমাকে টেক ওভার করতে চাইছে।
বাট তার এই আশাকে আমি বাস্তবে রুপে নিতে দিবো না। তার চাল তার উপরেই প্রোয়গ করবো।
সে যা চায়, তাই হবে। দ্যা গেইম ইজ বিগেইন নাও। ”
কথাটা বলে একটা বাঁকা হাসি দেয় শাহিন।
—চলবে❤
((( আসসালামুআলাইকুম।
সবাইকে নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা❤ Happy new year.)))
—চলবে❤