আমি সেই তনু পর্ব -০৪

#আমি_সেই_তনু
#চতুর্থ_পর্ব
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস

আকাশ তনু কে বুকে জড়িয়ে নিলো, তনু যেনো ঠান্ডা থেকে রেহাই পেলো কিন্তু কেমন শিহরণ তনু কে স্পর্শ করলো……
আকাশ তনুকে জড়িয়ে ধরে কেমন যেনো নিজের মধ্যে নেই, কই আগে তো কত তনুকে কোলে নিয়ে ঘুরেছে এমন তো লাগে নি?
তনু বুঝতে পেরে চেষ্টা করছে তনুকে ছড়িয়ে নিতে কিন্তু আর পারছে না ততক্ষনে তনু আকাশের বহু বন্ধনে আবদ্ধ। তনু চোখ বন্ধ করে আছে, আকাশ তনুর ঠোঁটে আকাশের ঠোঁটের পরশ একে দিচ্ছে, তনু কিভাবে যেনো সব শক্তি হারিয়ে ফেলছে…..

হঠাৎ গাড়ি গতি কমে যাওয়ায় তনুর ঠোঁট কেটে গেলো, রক্ত পড়ছে, আকাশ হঠাৎ নিজের হুস এ ফিরে আসে ।তনুকে ছেড়ে দেয় পরক্ষণে আকাশ লক্ষ করল তনু কাদঁছে… কী বলবে আকাশ তনুকে? কী উত্তর আছে তার কাছে?
আকাশ: sorry তনু! মাথা নিচু করে।
তনু কিছু বলছে না পাথরের মূর্তির মত বসে আছে।
একসময় গাড়ি এসে গন্তব্যে থামলো…
তনু আর আকাশ নামলো,তনুর গায়ে আকাশের কোট…
সুনসান নিস্তব্ধতা; তনু এইবার মুখ খুললো…. এটা কি করলেন আকাশ ভাইয়া? খুব কষ্ট হচ্ছে! বড়ো খালামনি কে কি করে মুখ দেখাবো?
আকাশ দেখলো তনুর ঠোঁট দিয়ে রক্ত পড়ছে এখনও, আকাশ তনুর কাছে গিয়ে হাত দিয়ে রক্ত মোছার বৃথা চেষ্টা করলো।
তনু ব্যাথা পেয়ে আতকে উঠলো! খুব ব্যাথা পেয়েছিস? মলিন দৃষ্টি তে (আকাশ)
তনু কিছু বললো না, শুধু চোখ গুলো সম্ভাসিত হচ্ছে করুন ইলশেগুঁড়ি তে!
আকাশ ঘরে আয় ওষুধ লাগিয়ে দিবো।
অতঃপর দুজনের ঘরে প্রবেশ….
রোহিত আর লতিফা দাড়িয়ে আছে, তনু মাথা নিচু করে আকাশের পেছন পেছন ঘরে ঢুকলো ।
লতিফা : কিরে আকাশ! তোর কি জ্ঞান বুদ্ধি নেই? কথায় ছিলি এত রাত পর্যন্ত!?
আকাশ: মা গাড়িটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় আটকে গেছিলাম।
রোহিত লক্ষ করল কিরে তোর ঠোঁট কাটলো কিভাবে মা?
আমতা আমতা করে, পড়ে গিয়েছিলাম আঙ্কেল। বলে ই তনু নিজ ঘরে প্রবেশ করলো।
আকাশ ও চুপ চাপ চলে গেলো….
লতিফা: এই আকাশ টা এতো খাম খেয়ালই হয়েছে না, রোহিত যেনো কিছু একটা বুঝতে পেরেছে।
শুয়ে শুয়ে আকাশ ভাবছে, তনুর কি খুব কষ্ট হচ্ছে? কী করছে তনু এখন… ভাবতে ভাবতে আকাশ তনুর ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
তনু আয়নায় নিজেকে দেখে চোখ বেয়ে পানি পড়ছে, কেনো করলো এমন আকাশ ভাইয়া? সে কি আমায় ভালোবাসে? নাকি সুযোগ খুচ্ছে!?
ভাবনার ঘোর ভেঙে দেখলো আকাশ আসছে চোখ মুছে ঘোমটা টেনে বসে পড়লো।
আকাশ: ঘুমাস নি?
তনু: মাথা নাড়ল, ঘুম পাচ্ছে না।
তনুর চুল গুলো এখনও ভেজা, ঠোঁটে রক্ত শুকিয়েছে, কেমন যেনো ফ্যাকাসে বর্ণ হয়ে গেছে তনুর চেহারায়।
আকাশ কিছু না বলে, অ্যান্টিসেপটিক হতে নিয়ে তনুর পাশে বসলো, সযত্নে তনুর ঠোঁটে অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে দিচ্ছে। তনু খুব ভীতু তাই আকাশ ভাইয়া কে কিছু বলার সাহস নেই, তনু চোখ বন্ধ করে আছে। তনু ব্যাথা অনুভব করায় মৃদু করে বললো আহ লাগছে!
আকাশ: ব্যাথা করছে?
তনু মাথা নাড়ল।
আকাশ ওষুধ লাগিয়ে দিয়ে বললো ঠিক হয়ে যাবে।
আকাশ বিদায় নিল….

পরদিন সকালে আকাশ ছাদ এ দাড়িয়ে আনমনে আকাশ দেখছে….
রোহিত: কিরে বেটা এত নিরবে দাড়িয়ে কি ভাবছিস?
আকাশ: কিছু না বাবা।
রোহিত: আকাশ এর পিঠে চাপ্পর মেরে, আরে তোর বয়স আমিও পার করেছি, বুঝি আমি বলে হা হা করে হেসে উঠলো রোহিত।
আকাশ: বিস্ময় বাবার দিকে তাকালো!?
রোহিত: কাল তাহলে ভালো সময় পার করেছিস তনুর সাথে?
আকাশ: মৃদু লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকালো।
রোহিত: তনু আমার মেয়ের মতো, ভীষণ মিষ্টি মেয়ে।
আকাশ: বাবা তনু হয়তো আমায় ক্ষমা করবে না, বলে মাথা নিচু করলো আকাশ!
রোহিত: আচ্ছা, তাহলে দেখি তোর গেলে থাপ্পড়ের দাগ কোথায়?
আকাশ: বিস্ময় এর চোখ দিয়ে তাকালো রোহিত এর দিকে!?
রোহিত: my son বিজনেস এ তুই টপার হলে ও মেয়েদের মন বোঝায় ভীষণ কাঁচা, বলে ই হাসলো রোহিত। আবার বলতে শুরু করলো, যা ই হয়েছে যদি তনু তোকে পছন্দ না করতো তাহলে এতক্ষনে তোর মুখে থাপ্পড়ের লাল দাগ থাকতো, তাই যেহেতু নেই তারমানে তুই 80% সফল ।
আকাশ: মুচকি হাসলো, বাবা তুমি পারো ও বটে
রোহিত: আচ্ছা আসি, best of luck my son
আকাশ: মৃদু হাসলো।

সকালে তনুর ভীষণ জর! লতিফা তনুর জর মাপছে আর বক বক করছে, কতবার বলেছি বৃষ্টি তে ভিজবি না , কোনো কথা ই শুনিস না !
আকাশ আজ সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে , নিজের মুখ টা আর তনু কে দেখাবেনা তাই।

আকাশ অফিস এ ঢুকে লক্ষ করলো মেয়ে গুলো আজ সব সেজেগুজে এসেছে,প্রীতি শাড়ী পড়েছে। আকাশ বুঝতে পেরে মনে মনে হেসে নিল ।
আকাশ ফাইল চেক করছে প্রীতি পোশাকের ডিজাইন দেখাচ্ছে, আকাশ কাজে মণ দিয়েছে… প্রীতি ইনিয়ে বিনিয়ে আকাশের অ্যাটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু বরাবর ব্যার্থ হচ্ছে।

আকাশ আজ সাদা শার্ট আর কালো সুট পরে এসেছে অফিস এ, এমন সুন্দর পুরুষ কে সবাই ই নিজের করে পাওয়ার সপ্ন দেখে, তাইতো প্রীতি চাইছে আকাশ যেনো তার হয়। যে করে ই হোক আকাশ কে তার করে নিতে ই হবে …

সারাদিন কাজের ক্লান্তি শেষ এ আকাশ রাতে বাসায় ফিরেছে, ফ্রেশ হয়ে আকাশ কে খেতে দিচ্ছে তার মা।
আকাশ: মা তনু কোথায়?
লতিফা: তনুর জর এসেছে আমি খাইয়ে দিয়েছি।
আকাশ: তনুর জর এসেছে!? আমাকে কেনো জানানো হয় নি মা? ডক্টর দেখিয়েছো?
লতিফা: তুই তো বেস্ত হয়ে বেরিয়ে গেলি তাই আর কিছু বলি নি, ডক্টর ওষুধ দিয়ে গেছে এখন অনেক টা সুস্থ।
আকাশ: আচ্ছা।
খাওয়া শেষ করে আকাশ তনুর ঘরে গেলো, খাটে অর্ধেক শুয়ে আর অর্ধেক বসে আছে।
আকাশ কে দেখে তনু উঠে বসার চেষ্টা করলো…
আকাশ গিয়ে তনু কে উঠতে বাধা দিলো, শুয়ে থাক তুই অসুস্থ, (আকাশ)
তনু মাথা নিচু করে আছে
আকাশ: তনু im sorry কাল রাতে…..
তনু: it’s okay ভাইয়া, বলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
আকাশের হঠাৎ তার বাবার সকালে বলে যাওয়ার কথা গুলো মনে পড়লো… (তুমি মেয়েদের মণ বোঝো না একদম my son) আকাশ মনে মনে মুচকি হাসলো ।
তার মানে কি তনুও আমাকে ভালোবাসে? ধুর এসব কি ভাবছি , তনু একটা বাচ্চা মেয়ে , এসব কিছু না ও শুধু আবেগে ভাসছে (মনে মনে)
আকাশ: এখন কেমন লাগছে?
তনু : একটু ভালো।
আকাশ: নিজের খেয়াল রাখতে পারিস না, সব সময় বাচ্চা দের মত করিস কেনো?
তনু: আপনি ই ত কাল রাতে… বলে তনু মাথা নিচু করল।
আকাশ: মুচকি হেসে…. আচ্ছা বুঝলাম সব দোষ আমার । এখন ঘুমা লক্ষ্মী মেয়ে এর মত আমি আসি।
তনু: আকাশ ভাইয়া?
আকাশ: পেছন ফিরলো…
তনু: প্রীতি আপু কিন্তু অনেক সুন্দর…
তনুর কথা শুনে আকাশ অবাক হলো, প্রীতি কে তনু কিভাবে চিনলো!?
তনু: খালামনি আপনার সাথে প্রীতি আপুর বিয়ে দিবে ভাবছে…. তার ফোনে প্রীতি আপুর ছবি দেখলাম, বলে থামলো তনু।

প্রীতি আগেও এই বাড়িতে এসেছে, রোহিত এর বন্ধুর মেয়ে হওয়ার জন্য আকাশ বিদেশ থাকতে মাঝে মাঝে আসতো, তনু স্কুল এ থাকায় এখনও প্রীতি কে সামনা সামনি দেখে নি তনু।

আকাশ তনুর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো! তনুর মুখ টা মলিন দেখাচ্ছে, এটা কি শরীরে অসুখ এর জন্য নাকে মনে মেঘ জমেছে তাই? আকাশের বোধগম্য হলো না।
এতো রাতে মা কে বিরক্ত করবে না, তাই আর কিছু বললো না সোজা রুম এ চলে গেলো।

পরদিন সকালে, কলিংবেল এর আওয়াজ…
লতিফা: এত সকালে কে এলো বলতে বলতে দরজা খুললো… দরজার ওপাশে রনি দাড়িয়ে আছে! এতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে এই মানুষ টার সাথে যে দেখা হবে ভেবে নি লতিফা!

রনি: আমি আমার মেয়ে কে নিয়ে যেতে এসেছি….

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here