আরশিকথা -১৩
জুবায়ের চলে যাওয়ার সময় প্রভা দীপ্রকে ডাকল। দীপ্রর সাথে হ্যান্ডশেক করে জুবায়ের চলে যেতেই৷ শুভ্র এসে ওদের সাথেই বসল।
প্রভা খুব অবাক হলো, কারণ এতদিন শুভ্র কখনো দীপ্রর সামনে প্রভার সাথে খুব একট কথাও বলেনি।
সুপ্রভা বলল, আমি এখন উঠব দীপ্র।
শুভ্র বলল, বসো, তোমার তো কিছু খাওয়া হয় নি।
সুপ্রভা বলল, বাসায় গিয়ে খাব৷
দীপ্র বলল, কিছু একটা খেয়ে যাই?
-না রে, এখন আর কিছুই খাব না। উঠছি।
দীপ্র বলল, আমি দিয়ে আসি, একটু ওয়েট কর।
না৷ তুই থাক এখানে, আমি চলে যাব।
বলে সুপ্রভা উঠল।
শুভ্র বলল, দীপ্র তুই বস৷ তোর সাথে আমার কথা আছে। প্রভা চলে যাক।
দীপ্র একটু অবাক হলো, ভাইয়ার আজ কি হলো।
প্রভা সত্যিই চলে গেল। শুভ্র একটা লাইটার বের করে একটা সিগারেট জ্বালাতে গেলেই, ওয়েটার এসে বলল, স্যার, নন স্মোকিং জোন। প্লিজ, স্মোকিং জোন ব্যবহাী করুন!
শুভ্র সিগারেট নিভিয়ে ফেলল।
ভাইয়া কিছু হয়েছে?
শুভ্র এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বলল, না কিছু না।
ওর ভেতরের অস্থিরতা একা একা আর নিতে পারছে না। প্রভা জিদ করছে এখন, এখনো প্রভা শুধুই শুভ্রকে ভালোবাসে।
জুবায়ের বেশ রাতের দিকে ফোন করল সুপ্রভাকে।
কি করছ? ব্যস্ত?
না না, একদম না। বলুন।
তুমি করে বলা যায় না?
যাবে না কেন? একটু সময় লাগবে…..
এক কথা দুই কথায় আলাপ জমল যখন, শুভ্র প্রভাকে ফোন করল। কল ওয়েটিং!
প্রায় আধঘন্টার মধ্যেও প্রভা জুবায়েরের ফোনটা রাখল না। শুভ্র অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছিল।
শেষে শুভ্র বের হয়ে প্রভার আন্টির বাসার সামনে চলে এলো৷ প্রভা যখন ফোন রাখল, দেখল৷ ৪১ টা মিসড কল।
প্রভা ব্যাক করতেই, শুভ্র বলল, গল্প শেষ হলো?
শুভ্র, আপনি আমাকে এভাবে বলতে পারেন না!
আমি সব পারি প্রভা!
হ্যা, সেটা তো দেখেছি আমি।
প্রভা, তুমি জুবায়েরের সাথে আর কথ বলবে না, একবারো না।
একশ বার বলব, হাজার বার বলব। এখনি আবার ফোন করব!
একবার বারান্দায় আসবে, আমি তোমাদের বাসার সামনে।
মানে?
প্রভা ঘড়ি দেখল, সোয়া একটা বাজে।
সোয়া একটার সময় আপনি এখানে কি করছেন?
বাইরে আসতে পারবে?
না।
আমি অপেক্ষা করছি, বারান্দায় এসো। এসো প্লিজ।
প্রভা বারান্দায় গিয়ে দেখল৷ শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে, সেই চিরচেনা ভঙ্গিতে। প্রভার মনে হলো, এক ছুটে শুভ্রর কাছে চলে যায়, কিন্তু কখনোই এই আবেগকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না।
প্রভা বলল, আপনি চলে যান এখন।
না, এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি। আগে তুমি বলো, তুমি বিয়ে করবে না।
শুভ্র, আপনি এখন যেটা করছেন, সেটা টিনএজার ছেলেরা করে। আমার মনে হয় আপনার বয়স এখন ত্রিশের কাছে, তাই না? এসব দেখে ভুলে যাওয়ার মত প্রভা এখন বেঁচে নেই৷ রাখছি।
কাল দেখা করো৷ কোথাও বসে একটু কথা বলি।
আপনার সাথে আমার কথা শেষ হয়ে গেছে।
কিচ্ছু শেষ হয়নি প্রভা!
প্রভা একটু হেসে বলল, এতদিন কোথায় ছিল আপনার এই এটিচুড!
শুভ্র বলল,দ্বিধা ছিল৷ কিন্তু তুমি যখন আমাকে চুমু খেয়েছ, দ্বিধা কেটে গেছে। তুমি এখনো আমাকেই ভালোবাসো।
প্রভা বলল৷ ইমোশনাল হয়ে ছিলাম৷ এখন আর সেই ইমোশন নেই। শুভ্র, আমি জুবায়েরকে বিয়ে করব। ওকে যখন চুমু খাব, তখন আগের চুমুটা আর মনে থাকবে না। আপনি আর আমাকে ফোন না করলেই ভালো হয়।
তুমি একশজনকে চুমু খেলেও আমাকে ভুলতে পারবে না। আমিও পারিনি। যত মেয়েকে চুমু খেয়েছি, প্রতিনার তোমার কথা মনে হয়েছে।
আপনি কতজনকে চুমু খেয়েছেন?
মনে নেই, গুণে বলতে হবে।
ভালো, আপনি কাউন্ট করেন। আপনার এক্সদের তালিকায় প্রভাও ছিল। এখন আর নেই। ব্যস, এই তো!
প্রভা কখনো আমার এক্স ছিল না। শুরু থেকে আজ অবধি প্রভা শুধুই শুভ্রর।
প্রভা বলল, শুভ্র, এই ড্রামা কতক্ষণ চলবে?
শুভ্র রেগে ফোনটা কেটে দিলো। একটু পরে আবার ফোন করল, প্রভা রিসিভ করল না। ফোন এয়ারপ্লেন মোডে দিয়ে শুয়ে পড়ল, মায়া কাটাতে হবে!
শুভ্র গেল না, ওখানেই গাড়িতে বসে থাকল।
প্রভার ঘুম ভাঙল সাড়ে ছয়টায়। কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে, মনে হচ্ছে শুভ্র আছে আসেপাশেই। কৌতূহল বশত বারান্দায় গিয়ে দেখল, শুভ্রর গাড়িটা বাসার সামনেই, মানে কি, সারা রাত এখানেই ছিল নাকি!
প্রভা আলুথালু বেশেই বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
চলবে
শানজানা আলম
বইটই এ্যাপে পড়ুন আমার নতুন ই বুক ” আজ ভেজাব চোখ সমুদ্র জলে “, অদিতি, নোমান আর সৌরভের গল্প।